সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা বিচার করবেন না

বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা বিচার করবেন না

“দৃশ্য মতে বিচার করিও না, কিন্তু ন্যায্য বিচার কর।”—যোহন ৭:২৪.

গান সংখ্যা: ৫৪, ৪৩

১. যিশাইয় যিশু সম্বন্ধে কোন ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন এবং কেন এটা আমাদের উৎসাহিত করে?

যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে বলা যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদের উৎসাহিত করে ও আশা প্রদান করে। যিশাইয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, যিশু “চক্ষুর দৃষ্টি অনুসারে বিচার করিবেন না, কর্ণের শ্রবণানুসারে নিষ্পত্তি করিবেন না” কিন্তু এর পরিবর্তে, তিনি “ধর্ম্মশীলতায় দীনহীনদের বিচার করিবেন।” (যিশা. ১১:৩, ৪) কেন এটা আমাদের উৎসাহিত করে? কারণ আমরা ভেদাভেদের মনোভাবে পরিপূর্ণ এক জগতে বাস করি এবং লোকেরা যা দেখতে পায়, সেটার উপর ভিত্তি করেই একে অন্যের বিচার করে। আমাদের সত্যিই সিদ্ধ বিচারক যিশুর প্রয়োজন রয়েছে, যিনি কখনো আমাদের বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা বিচার করবেন না!

২. যিশু আমাদের কী করার আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

প্রতিদিন, আমরা নিজেদের মনে অন্যদের সম্বন্ধে কোনো-না-কোনো ধারণা গড়ে তুলি। কিন্তু আমরা যেহেতু যিশুর মতো সিদ্ধ নই, তাই আমাদের এই ধারণাগুলোও নিখুঁত হয় না। আমরা যা দেখি, সেটার দ্বারা খুব সহজেই প্রভাবিত হই। কিন্তু, যিশু আজ্ঞা দিয়েছিলেন: “দৃশ্য মতে” অর্থাৎ বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা “বিচার করিও না, কিন্তু ন্যায্য বিচার কর।” (যোহন ৭:২৪) তাই, যিশু চান যেন আমরা তাঁর মতো হই এবং অন্যদের বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা বিচার না করি। এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো অন্যদের সম্বন্ধে আমাদের ধারণার উপর প্রভাব ফেলতে পারে: একজন ব্যক্তির বর্ণ অথবা জাতি, তার আর্থিক অবস্থা এবং তার বয়স। প্রতিটা ক্ষেত্রে আমরা শিখব যে, কীভাবে আমরা যিশুর বাধ্য হতে পারি এবং অন্যদের বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা বিচার করা এড়িয়ে চলতে পারি।

বর্ণ অথবা জাতির দ্বারা বিচার করবেন না

৩, ৪. (ক) কেন পিতর পরজাতীয়দের সম্বন্ধে তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) যিহোবা পিতরকে কোন নতুন সত্য সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন?

একটু কল্পনা করুন, প্রেরিত পিতর সেইসময় কেমন অনুভব করেছিলেন, যখন তাকে কৈসরিয়াতে কর্ণীলিয় নামে একজন পরজাতীয়ের বাড়িতে যেতে বলা হয়েছিল! (প্রেরিত ১০:১৭-২৯) ছোটোবেলা থেকেই পিতর এই বিষয়টা বিশ্বাস করেছিলেন যে, পরজাতীয়রা হল অশুচি। কিন্তু, সম্প্রতি ঘটা কিছু বিষয় তাকে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা দর্শন পেয়েছিলেন। (প্রেরিত ১০:৯-১৬) সেই দর্শনে পিতর দেখেছিলেন, স্বর্গ থেকে একটা চাদরের মতো কিছু নেমে আসছে আর সেটার মধ্যে এমন পশুগুলো রয়েছে, যেগুলোকে অশুচি বলে মনে করা হতো। এরপর, তিনি এই বাণী শুনেছিলেন: “উঠ, পিতর, বধ করিয়া ভোজন কর।” পিতর দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারপর, তিনি এই বাণী শুনেছিলেন: “ঈশ্বর যাহা শুচি করিয়াছেন, তুমি তাহা অপবিত্র বলিও না।” সেই দর্শন দেখার পর পিতর বুঝতে পারেননি যে, সেই বাণী তাকে কী বলতে চাইছিল। ঠিক তখনই, কর্ণীলিয়ের কাছ থেকে কয়েক জন বার্তাবাহক এসেছিল। পবিত্র আত্মা পিতরকে কর্ণীলিয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য নির্দেশিত করেছিল আর তাই, তিনি সেই বার্তাবাহকদের সঙ্গে গিয়েছিলেন।

পিতর যদি “দৃশ্য মতে” অর্থাৎ বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা বিচার করতেন, তা হলে তিনি কোনোদিনও কর্ণীলিয়ের বাড়িতে যেতেন না। যিহুদিরা কখনো পরজাতীয়দের বাড়িতে যেত না। তা হলে, কেন পিতর একজন পরজাতীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন? যদিও তার মনে পরজাতীয়দের বিরুদ্ধে ভেদাভেদের মনোভাব ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি যে-দর্শন দেখেছিলেন এবং পবিত্র আত্মার কাছ থেকে যে-নির্দেশনা পেয়েছিলেন, সেগুলো তার চিন্তাধারাকে পরিবর্তন করেছিল। পিতর কর্ণীলিয়ের কথা শোনার পর বলেছিলেন: “আমি সত্যই বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” ইজি-টু-রিড ভারশন] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) এই নতুন বোধগম্যতা পিতরের জন্য বেশ রোমাঞ্চকর ছিল আর এটা পরে সমস্ত খ্রিস্টানকে প্রভাবিত করেছিল। কীভাবে?

৫. (ক) যিহোবা সমস্ত খ্রিস্টানকে কোন বিষয়টা বোঝাতে চান? (খ) যদিও আমরা সত্য সম্বন্ধে জানি, তারপরও আমাদের মনে কোন অনুভূতি থাকতে পারে?

যিহোবা পিতরকে ব্যবহার করে সমস্ত খ্রিস্টানকে এটা বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, তিনি পক্ষপাতিত্ব করেন না। যিহোবার কাছে এই বিষয়টা কোনো গুরুত্ব রাখে না যে, আমরা কোন বর্ণ, জাতি, উপজাতি অথবা ভাষার লোক। আমরা যতদিন ঈশ্বরকে ভয় করব এবং ধর্মাচরণ অর্থাৎ যা সঠিক, তা করব, ততদিন তিনি আমাদের গ্রাহ্য করবেন। (গালা. ৩:২৬-২৮; প্রকা. ৭:৯, ১০) আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই এটা জানেন। কিন্তু, যদি এমনটা হয় যে, আপনি এমন একটা দেশ কিংবা পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছেন, যেখানে ভেদাভেদের মনোভাব পোষণ করা খুবই সাধারণ এক বিষয়, তা হলে? যদিও আপনি হয়তো নিজেকে পক্ষপাতহীন বলে মনে করেন, তারপরও এমনটা কি হতে পারে যে, আপনার মনে এখনও কিছু ভেদাভেদের অনুভূতি রয়েছে? যদিও পিতর অন্যদের এটা বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না, তারপরও পিতর নিজে ভেদাভেদের মনোভাব দেখিয়েছিলেন। (গালা. ২:১১-১৪) তাই, কীভাবে আমরা যিশুর বাধ্য হতে পারি এবং অন্যদের বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা বিচার করা বন্ধ করতে পারি?

৬. (ক) কী আমাদের মন থেকে ভেদাভেদের মনোভাব দূর করার জন্য সাহায্য করতে পারে? (খ) একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইয়ের লেখা রিপোর্ট তার সম্বন্ধে কী প্রকাশ করেছিল?

আমাদের মনে কোনো ভেদাভেদের অনুভূতি আছে কি না, তা জানার জন্য আমাদের নিজেদের পরীক্ষা করতে হবে। আমরা ঈশ্বরের বাক্য থেকে যা শিখি, সেটার সঙ্গে নিজেদের মনোভাবের তুলনা করতে হবে। (গীত. ১১৯:১০৫) এ ছাড়া, আমরা কোনো বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতে পারি যে, তিনি আমাদের মধ্যে এমন কোনো ভেদাভেদের মনোভাব লক্ষ করেছেন কি না, যেটা আমরা নিজেরা দেখতে পারিনি। (গালা. ২:১১, ১৪) এই অনুভূতিগুলো হয়তো আমাদের মনে এতটাই দৃঢ়ভাবে গেঁথে গিয়েছে যে, আমরা বুঝতেই পারি না, আমাদের মধ্যে ভেদাভেদের মনোভাব রয়েছে! একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইয়ের ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। তিনি এক দম্পতির বিষয়ে একটা রিপোর্ট লিখেছিলেন, যারা পূর্ণসময়ের সেবায় কঠোর পরিশ্রম করছিলেন। সেই স্বামী এমন এক সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন, যেটাকে অনেকে নিম্নশ্রেণির সম্প্রদায় হিসেবে দেখত। সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাই ওই স্বামীর বিষয়ে অনেক ভালো বিষয় লিখেছিলেন কিন্তু তিনি এটাও যুক্ত করেছিলেন: “যদিও ভাই [এই জাতির] লোক, তারপরও তার অভ্যাস ও জীবনযাপনের ধরন অন্যদের এটা বুঝতে সাহায্য করে যে, [এই সম্প্রদায়ের] লোক হওয়ার অর্থ এই নয় যে, এর লোকেরা নোংরা ও নিম্নস্তরের জীবনযাপন করবে, যেটা সাধারণত [এই] জাতির লোকেরা করে থাকে।” আমাদের জন্য শিক্ষাটা কী? যিহোবার সংগঠনে আমাদের যত দায়িত্বই থাকুক না কেন, আমাদের অবশ্যই নিজেদের পরীক্ষা করতে হবে এবং সাহায্য গ্রহণ করতে হবে, যাতে আমরা আমাদের মধ্যে থেকে যাওয়া যেকোনো ভেদাভেদের অনুভূতিকে শনাক্ত করতে পারি। আমরা আর কী করতে পারি?

৭. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা “আমাদের হৃদয় প্রশস্ত” করেছি?

আমরা যদি “আমাদের হৃদয় প্রশস্ত” করে থাকি, তা হলে আমরা হৃদয় থেকে ভেদাভেদের মনোভাব সরিয়ে দিয়ে সেটাকে ভালোবাসার মনোভাব দিয়ে পরিপূর্ণ করব। (২ করি. ৬:১১-১৩) আপনি কি কেবল আপনার বর্ণ, জাতি, উপজাতি অথবা ভাষার লোকের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন? যদি করেন, তা হলে অন্যদের সঙ্গেও সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। আপনি বিভিন্ন পটভূমির ভাই-বোনদের আপনার সঙ্গে পরিচর্যায় কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। অথবা আপনি তাদের আপনার বাড়িতে খাবারের জন্য অথবা মেলামেশা করার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। (প্রেরিত ১৬:১৪, ১৫) একসময়, আপনার হৃদয় ভালোবাসার মনোভাবের দ্বারা এতটাই পূর্ণ হয়ে যাবে যে, সেখানে ভেদাভেদের মনোভাবের জন্য কোনো জায়গাই থাকবে না। এখন আসুন, আমরা আরেকটা ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করি, যেটাতে আমরা হয়তো “দৃশ্য মতে” অর্থাৎ বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা বিচার করতে পারি।

ধনসম্পদ অথবা দরিদ্রতার দ্বারা বিচার করবেন না

৮. ধনসম্পদ অথবা দরিদ্রতা যেভাবে অন্যদের সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রভাব ফেলতে পারে, সেই বিষয়ে লেবীয় পুস্তক ১৯:১৫ পদ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

অন্যেরা কতটা ধনী অথবা দরিদ্র, সেটার দ্বারা তাদের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাবিত হতে পারে। লেবীয় পুস্তক ১৯:১৫ পদ বলে: “তুমি দরিদ্রের মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” ইজি-টু-রিড ভারশন] করিও না, ও ধনবানের সমাদর করিও না; তুমি ধার্ম্মিকতায় স্বজাতীয়ের বিচার নিষ্পন্ন করিও।” কীভাবে একজন ব্যক্তির ধনসম্পদ অথবা দরিদ্রতা তার সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রভাব ফেলতে পারে?

৯. শলোমন কোন করুণ সত্যটা লিপিবদ্ধ করেছিলেন আর এটা আমাদের কী শেখায়?

শলোমন এই করুণ সত্যটা লিপিবদ্ধ করার জন্য ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “দরিদ্র আপন প্রতিবাসীরও ঘৃণিত, কিন্তু ধনবানের অনেক বন্ধু আছে।” (হিতো. ১৪:২০) এই নীতিবাক্য আমাদের কী শেখায়? আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমরা হয়তো দরিদ্র ভাইদের সঙ্গে নয় বরং ধনী ভাইদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইব। লোকেদের কাছে থাকা বস্তুগত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তাদের বিচার করা কেন অত্যন্ত বিপদজনক?

১০. যাকোব কোন সমস্যার বিষয়ে খ্রিস্টানদের সতর্ক করেছিলেন?

১০ আমরা যদি ভাইদের ধনসম্পদ কিংবা দরিদ্রতার উপর ভিত্তি করে তাদের বিচার করি, তা হলে আমরা মণ্ডলীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারি। প্রথম শতাব্দীর কিছু মণ্ডলীতে এমনটা ঘটেছিল আর তাই, যাকোব এই বিষয়ে সেই খ্রিস্টানদের সতর্ক করেছিলেন। (পড়ুন, যাকোব ২:১-৪.) * আমরা আমাদের মণ্ডলীতে বিভেদ থাকতে দিতে পারি না। তা হলে, কীভাবে আমরা লোকেদের আর্থিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে তাদের বিচার করা এড়িয়ে চলতে পারি?

১১. বস্তুগত বিষয়গুলো কি যিহোবার সঙ্গে একজন ব্যক্তির বন্ধুত্বের উপর প্রভাব ফেলে? ব্যাখ্যা করুন।

১১ আমাদের অবশ্যই আমাদের ভাইদের যিহোবার মতো করে দেখতে হবে। একজন ব্যক্তি যে ধনী কিংবা দরিদ্র হওয়ার কারণে যিহোবার কাছে মূল্যবান হন, এমন নয়। আমাদের কাছে কত টাকাপয়সা কিংবা কত বস্তুগত বিষয় রয়েছে, সেটার এবং যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের মধ্যে কোনো সম্পর্কই নেই। এটা ঠিক, যিশু বলেছিলেন: “ধনবানের পক্ষে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করা দুষ্কর” হবে, তবে তিনি বলেননি যে, এমনটা করা একেবারে অসম্ভব হবে। (মথি ১৯:২৩) যিশু এও বলেছিলেন: “ধন্য দীনহীনেরা, কারণ ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদেরই।” (লূক ৬:২০) কিন্তু এর অর্থ এই ছিল না যে, সমস্ত দীনহীন বা দরিদ্র ব্যক্তি যিশুর কথা শুনবে এবং বিশেষ আশীর্বাদগুলো লাভ করবে। এমন অনেক দরিদ্র লোক ছিল, যারা যিশুকে অনুসরণ করেনি। সত্য বিষয়টা হল, আমরা একজন ব্যক্তির বস্তুগত বিষয়ের দ্বারা যিহোবার সঙ্গে তার বন্ধুত্বের বিচার করতে পারি না।

১২. ধনী ও দরিদ্র, এই উভয় ধরনের লোককে শাস্ত্র কী শেখায়?

১২ যিহোবার লোকেদের মধ্যে ধনী ও দরিদ্র, উভয় ধরনের ভাই-বোনেরা রয়েছে। কিন্তু, তারা সবাই যিহোবাকে ভালোবাসে এবং একাগ্র হৃদয়ে তাঁর সেবা করে। শাস্ত্র ধনী লোকেদের ‘ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু . . . ঈশ্বরেরই উপরে প্রত্যাশা রাখিতে’ বলে। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯.) এ ছাড়া, ঈশ্বরের বাক্য যিহোবার সমস্ত দাসকে অর্থাৎ ধনী ও দরিদ্র, উভয়কেই সতর্ক করে যে, টাকাপয়সার প্রতি আসক্তি খুব বিপদজনক এক বিষয়। (১ তীম. ৬:৯, ১০) আমরা যখন আমাদের ভাইদের যিহোবার মতো করে দেখব, তখন আমরা তাদের যা রয়েছে কিংবা যা নেই, সেটার দ্বারা তাদের বিচার করব না। কিন্তু, একজন ব্যক্তির বয়সের বিষয়ে কী বলা যায়? সেটার দ্বারা অন্যদের বিচার করা কি ঠিক?

বয়সের দ্বারা বিচার করবেন না

১৩. বয়স্ক ব্যক্তিদের সম্মান দেখানোর বিষয়ে বাইবেল আমাদের কী শেখায়?

১৩ বাইবেল প্রায়ই বলে যে, আমাদের অবশ্যই বয়স্ক ব্যক্তিদের সম্মান করতে হবে। লেবীয় পুস্তক ১৯:৩২ পদ বলে: “তুমি পক্বকেশ প্রাচীনের সম্মুখে উঠিয়া দাঁড়াইবে, বৃদ্ধ লোককে সমাদর করিবে, ও আপন ঈশ্বরের প্রতি ভয় রাখিবে।” হিতোপদেশ ১৬:৩১ পদ আমাদের বলে: “পক্ব কেশ শোভার মুকুট; তাহা ধার্ম্মিকতার পথে পাওয়া যায়।” পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন যেন তিনি কোনো প্রাচীন বা বয়স্ক ব্যক্তিকে তিরস্কার না করেন বরং তাদের নিজের বাবার মতো করে দেখেন। (১ তীম. ৫:১, ২) যদিও তীমথিয়ের এই বয়স্ক ভাইদের নির্দেশনা দেওয়ার মতো নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষমতা ছিল, তারপরও তার সবসময় সমবেদনা ও সম্মান দেখানোর প্রয়োজন ছিল।

১৪. কখন আমাদের হয়তো এমন কোনো ব্যক্তিকে সংশোধন করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে, যিনি আমাদের চেয়ে বয়সে বড়ো?

১৪ তবে, কোনো বয়স্ক ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করেন অথবা এমন কোনো বিষয়কে তুলে ধরেন, যেটা যিহোবাকে খুশি করে না, তা হলে? যিহোবা এমন কাউকে রেহাই দেবেন না, যিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করেন আর সেটা এমনকী তখনও, যদি সেই ব্যক্তি বয়স্ক ও সম্মাননীয় হয়ে থাকেন। লক্ষ করুন, যিহিষ্কেল ৯:৫, ৬ পদে কী বলা হয়েছে: “পরে আমি শুনিলাম, তিনি অবশিষ্ট লোকদিগকে এই আজ্ঞা দিলেন, তোমরা নগর দিয়া ইহার পশ্চাতে পশ্চাতে যাও, এবং আঘাত কর, . . . বৃদ্ধ, যুবক, কুমারী, শিশু ও স্ত্রীলোকদিগকে নিঃশেষে বধ কর।” একইরকম একটা ধারণা যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীতেও উল্লেখ করা হয়েছে। (যিশা. ৬৫:২০) তাই, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, আমরা যেন অনেক দিনের বৃদ্ধ যিহোবাকে সম্মান করি। (দানি. ৭:৯, ১০, ১৩, ১৪) তাঁর প্রতি সম্মান আমাদের প্রয়োজনীয় সাহস জোগাবে, যাতে আমরা এমন কোনো ব্যক্তিকে সংশোধন করতে পারি, যার সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে, তা তার বয়স যা-ই হোক না কেন।—গালা. ৬:১.

আপনি কি তুলনামূলকভাবে অল্পবয়সি ভাইদের প্রতি সম্মান দেখান? (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. তুলনামূলকভাবে অল্পবয়সি ভাইদের সম্মান দেখানোর বিষয়ে আমরা প্রেরিত পৌলের কাছ থেকে কী শিখি?

১৫ একজন ভাই যদি যুবকবয়সি হন, তা হলে? এর মানে কি এই যে, তিনি সম্মান পাওয়ার যোগ্য নন? না, এমনটা নয়। পৌল তীমথিয়ের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “তোমার যৌবন কাহাকেও তুচ্ছ করিতে দিও না; কিন্তু বাক্যে, আচার ব্যবহারে, প্রেমে, বিশ্বাসে, ও শুদ্ধতায় বিশ্বাসিগণের আদর্শ হও।” (১ তীম. ৪:১২) পৌল যখন এই কথাগুলো লিখেছিলেন, তখন তীমথিয়ের বয়স সম্ভবত প্রায় ৩০ বছর ছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও, পৌল তাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো দিয়েছিলেন। শিক্ষাটা কী? আমাদের তুলনামূলকভাবে অল্পবয়সি ভাইদের তাদের বয়সের দ্বারা বিচার করা উচিত নয়। চিন্তা করুন, যিশু মাত্র ৩৩ বছর বয়সের মধ্যেই কত কিছু সম্পাদন করেছিলেন!

১৬, ১৭. (ক) একজন ভাই পরিচারক দাস কিংবা প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য যোগ্য কি না, এই বিষয়ে প্রাচীনরা কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন? (খ) কীভাবে ব্যক্তিগত ধারণাগুলো অথবা স্থানীয় প্রথাগুলো শাস্ত্রের বিপরীতে যেতে পারে?

১৬ কোনো কোনো সংস্কৃতিতে লোকেরা তুলনামূলকভাবে অল্পবয়সি পুরুষদের সম্মান করে না। ফল স্বরূপ, একজন যুবক ভাইয়ের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, কোনো কোনো প্রাচীন হয়তো তাকে পরিচারক দাস কিংবা প্রাচীন হিসেবে সেবা করার জন্য সুপারিশ করেন না। কিন্তু, বাইবেল কখনো বলে না যে, একজন ভাইকে পরিচারক দাস কিংবা প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করার আগে তাকে একটা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছাতে হবে। (১ তীম. ৩:১-১০, ১২, ১৩; তীত ১:৫-৯) একজন প্রাচীন যদি নিজের সংস্কৃতির কারণে এই বিষয়ে কোনো নিয়ম স্থির করেন, তা হলে তিনি আসলে ঈশ্বরের বাক্য অনুসরণ করছেন না। প্রাচীনদের নিজস্ব ধারণার কিংবা স্থানীয় প্রথার উপর ভিত্তি করে নয় বরং ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে তুলনামূলকভাবে অল্পবয়সি পুরুষদের বিচার করা উচিত।—২ তীম. ৩:১৬, ১৭.

১৭ প্রাচীনরা যদি ভাইদের পরিচারক দাস কিংবা প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করার বিষয়ে বাইবেলের মানদণ্ড অনুসরণ না করেন, তা হলে তারা যোগ্যতাসম্পন্ন ভাইদের নিযুক্তিতে বাধা দিতে পারেন। একটা দেশে একজন পরিচারক দাস গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলোকে খুব ভালোভাবে পালন করতেন আর প্রাচীনরাও এই বিষয়ে একমত হয়েছিলেন যে, তিনি প্রাচীন হিসেবে সেবা করার বিষয়ে বাইবেলে প্রাপ্ত যোগ্যতাগুলো অর্জন করেছেন। কিন্তু, কয়েক জন বয়স্ক প্রাচীন বলেছিলেন যে, সেই ভাইকে দেখে এমনটা মনে হয় না, তার প্রাচীন হওয়ার মতো বয়স হয়েছে আর তাই, তারা তার বিষয়ে সুপারিশ করেননি। দুঃখের বিষয় হল, সেই ভাইকে নিযুক্ত করা হয়নি আর এর একমাত্র কারণ ছিল তার বাহ্যিক বিষয়গুলোর প্রতি প্রাচীনদের দৃষ্টিভঙ্গি। আর এমনটা মনে হয়, এই ধরনের চিন্তাভাবনা বিশ্বের অনেক অংশে খুবই প্রচলিত। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যেন নিজস্ব ধারণার কিংবা স্থানীয় প্রথার উপর নয় বরং বাইবেলের উপর নির্ভর করি। তা হলে, আমরা যিশুর বাধ্য হতে পারব এবং অন্যদের বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা তাদের বিচার করা বন্ধ করতে পারব।

ন্যায্য বিচার করুন

১৮, ১৯. কী আমাদের ভাইদের যিহোবার মতো করে দেখতে সাহায্য করবে?

১৮ আমরা অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও যিহোবার মতো করে পক্ষপাতহীনভাবে অন্যদের দেখার বিষয়টা শিখতে পারি। (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) তাই, আমাদের সবসময় ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত অনুস্মারকগুলোর প্রতি অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। আমরা যখন সেগুলো কাজে লাগাই, তখন আমরা যিশুর এই আজ্ঞা পালন করি: “দৃশ্য মতে” অর্থাৎ বাহ্যিক বিষয়গুলোর দ্বারা “বিচার করিও না।”—যোহন ৭:২৪.

১৯ শীঘ্রই, আমাদের রাজা যিশু খ্রিস্ট সমস্ত লোকের বিচার করবেন। তিনি যা দেখেন কিংবা শোনেন, সেটার উপর ভিত্তি করে নয় বরং ঈশ্বরের ধার্মিক মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে বিচার করবেন। (যিশা. ১১:৩, ৪) আমরা সেই অপূর্ব সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি!

^ অনু. 10 যাকোব ২:১ (ইজি-টু-রিড ভারশন): “আমার ভাই ও বোনেরা, তোমরা আমাদের মহিমাময় প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে বিশ্বাসী, সুতরাং তোমরা পক্ষপাতিত্ব কোর না।”