সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৮

খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে প্রেম ও ন্যায়বিচার

খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে প্রেম ও ন্যায়বিচার

“তোমরা পরস্পর এক জন অন্যের ভার বহন কর; এই রূপে খ্রীষ্টের ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে পালন কর।”—গালা. ৬:২.

গান সংখ্যা ২ ধন্যবাদ, যিহোবা

সারাংশ *

১. আমরা কোন দুটো বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

যিহোবা ঈশ্বর প্রথম থেকেই তাঁর উপাসকদের ভালোবেসে এসেছেন এবং ভবিষ্যতেও ভালোবাসবেন। আর তিনি ন্যায়বিচারও ভালোবাসেন। (গীত. ৩৩:৫) তাই আমরা দুটো বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি: (১) তাঁর দাসদের উপর যখন অন্যায্য আচরণ করা হয়, তখন যিহোবা কষ্ট পান। (২) তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, তাঁর লোকেদের উপর চিরকাল ধরে অন্যায্য আচরণ করা হবে না আর অন্যায়কারীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। এই ধারাবাহিক প্রবন্ধের * প্রথম প্রবন্ধে আমরা শিখেছি, ঈশ্বর মোশির মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়দের যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, সেটার ভিত্তি ছিল প্রেম। এটা সকলের প্রতি ন্যায়বিচার দেখাতে উৎসাহিত করেছিল, এর অন্তর্ভুক্ত নিজেদের রক্ষা করতে অসমর্থ ব্যক্তিরাও। (দ্বিতীয়. ১০:১৮) সেই ব্যবস্থা দেখায় যে, যিহোবা তাঁর উপাসকদের জন্য কতটা গভীরভাবে চিন্তা করেন।

২. আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর বিবেচনা করব?

তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী গঠিত হওয়ার পর মোশির ব্যবস্থা শেষ হয়ে গিয়েছিল। এর অর্থ কি এই যে, খ্রিস্টানরা প্রেম ও ন্যায়বিচারের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হবে না? না! খ্রিস্টানদের এক নতুন ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছিল। এই প্রবন্ধে আমরা প্রথমে আলোচনা করব, এই নতুন ব্যবস্থা কী। তারপর আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিবেচনা করব: কেন আমরা বলতে পারি, এই নতুন ব্যবস্থার ভিত্তি হল প্রেম? কেন আমরা বলতে পারি, এটা ন্যায়বিচার করতে উৎসাহিত করে? এই ব্যবস্থা অনুযায়ী যাদের কর্তৃত্ব রয়েছে, তাদের কীভাবে অন্যদের প্রতি আচরণ করা উচিত?

“খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” কী?

৩. গালাতীয় ৬:২ পদে যেমনটা বলা হয়েছে, ‘খ্রীষ্টের ব্যবস্থার’ অন্তর্ভুক্ত কী?

গালাতীয় ৬:২ পদ পড়ুন। খ্রিস্টানরা ‘খ্রীষ্টের ব্যবস্থার’ অধীনে রয়েছে। যিশু তাঁর অনুসারীদের জন্য ব্যবস্থার বা আইনের তালিকা লিখে দেননি বরং তাদের জীবনযাপন করার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা, আজ্ঞা ও নীতি দিয়েছিলেন। ‘খ্রীষ্টের ব্যবস্থার’ অন্তর্ভুক্ত হল যিশুর শেখানো সমস্ত বিষয়। এই ব্যবস্থাকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য পরবর্তী বিষয়গুলো বিবেচনা করুন।

৪-৫. যিশু কোন কোন উপায়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং কখন শিক্ষা দিয়েছিলেন?

যিশু কোন কোন উপায়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন? প্রথমে, তিনি তাঁর কথার মাধ্যমে লোকেদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁর কথায় ক্ষমতা ছিল কারণ তিনি ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য জানিয়েছিলেন, জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং ঈশ্বরের রাজ্যকে মানুষের সমস্ত দুঃখকষ্টের সমাধান হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। (লূক ২৪:১৯) এ ছাড়া, যিশু নিজের উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন, সেটার মাধ্যমে তাঁর অনুসারীদের দেখিয়েছিলেন যে, তাদের কীভাবে জীবনযাপন করা উচিত।—যোহন ১৩:১৫.

যিশু কখন শিক্ষা দিয়েছিলেন? তিনি তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। (মথি ৪:২৩) এ ছাড়া, তিনি পুনরুত্থিত হওয়ার অল্পসময় পরই তাঁর অনুসারীদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি একদল শিষ্যের সামনে, হতে পারে ৫০০ জনেরও বেশি শিষ্যের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং তাদের ‘শিষ্য করিবার’ আজ্ঞা দিয়েছিলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০; ১ করি. ১৫:৬) যিশু স্বর্গে ফিরে যাওয়ার পরও মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে ক্রমাগত তাঁর শিষ্যদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, প্রায় ৯৬ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্ট প্রেরিত যোহনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তিনি অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উৎসাহ ও পরামর্শ দেন।—কল. ১:১৮; প্রকা. ১:১.

৬-৭. (ক) যিশুর শিক্ষাগুলো কোথায় লেখা আছে? (খ) কীভাবে আমরা খ্রিস্টের ব্যবস্থার বাধ্য হই?

যিশুর শিক্ষাগুলো কোথায় লেখা আছে? যিশু পৃথিবীতে থাকাকালীন কথা ও কাজের মাধ্যমে যা-কিছু শিখিয়েছিলেন, সেগুলোর অনেক কিছুই চারটে সুসমাচারের বইয়ে লেখা আছে। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের বাকি অংশগুলোও যিশুর চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে আমাদের শিখতে সাহায্য করে কারণ লোকেরা পবিত্র আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সেগুলো লিখেছিলেন এবং তাদের “খ্রীষ্টের মন” ছিল। —১ করি. ২:১৬.

শিক্ষা: যিশুর শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে সাহায্য করে। তাই, আমরা বাড়িতে, স্কুলে অথবা কাজের জায়গায় কিংবা মণ্ডলীতে যা-কিছু করি, খ্রিস্টের ব্যবস্থা সেই সমস্ত কিছুকে প্রভাবিত করে। আমরা খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র পড়ার এবং সেটি নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে এই ব্যবস্থা সম্বন্ধে শিখতে পারি। আমরা বাইবেলের এই বইগুলোতে পাওয়া বিভিন্ন নির্দেশনা, আজ্ঞা ও নীতি অনুযায়ী জীবনযাপন করার মাধ্যমে খ্রিস্টের ব্যবস্থার বাধ্য হই। আমরা যখন খ্রিস্টের ব্যবস্থার বাধ্য হই, তখন আমরা আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর যিহোবার বাধ্য হই, যিনি হলেন যিশুর সমস্ত শিক্ষার উৎস।—যোহন ৮:২৮.

ব্যবস্থার ভিত্তি হল প্রেম

৮. খ্রিস্টের ব্যবস্থার ভিত্তি কী?

ঠিক যেমন এক দৃঢ় ভিত্তির উপরে স্থাপিত একটা মজবুত বাড়িতে বসবাসকারী ব্যক্তিরা সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করে, তেমনই এক দৃঢ় ভিত্তির উপরে স্থাপিত একটা উত্তম ব্যবস্থা অনুযায়ী যারা জীবনযাপন করে, তারা সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করে। খ্রিস্টের ব্যবস্থা যথাসম্ভব সবচেয়ে উত্তম ভিত্তির উপর গড়ে উঠেছে, আর সেটা হল প্রেম। কেন আমরা তা বলতে পারি?

আমরা যখন অন্যদের প্রতি প্রেমের সঙ্গে আচরণ করি, তখন আমরা “খ্রিস্টের ব্যবস্থা” পালন করি (৯-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৯-১০. কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, যিশু প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং কীভাবে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে পারি?

প্রথমত, যিশু প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সমস্ত কাজ করেছিলেন। করুণা বা কোমল সমবেদনা হল প্রেমেরই এক প্রকাশ। করুণার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যিশু জনতাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন, অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন, ক্ষুধার্তদের খাইয়েছিলেন এবং মৃতদের জীবিত করেছিলেন। (মথি ১৪:১৪; ১৫:৩২-৩৮; মার্ক ৬:৩৪; লূক ৭:১১-১৫) যদিও এই সমস্ত কিছু করার জন্য তাঁকে অনেক সময় ও শক্তি ব্যয় করতে হয়েছিল, কিন্তু তারপরও যিশু ইচ্ছুক মনে নিজের চেয়ে অন্যদের প্রয়োজনের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-উপায়ে যিশু প্রেম দেখিয়েছিলেন, সেটা হল অন্যদের জন্য নিজের জীবন দেওয়ার মাধ্যমে।—যোহন ১৫:১৩.

১০ শিক্ষা: আমরা নিজেদের চেয়ে অন্যদের প্রয়োজনের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে যিশুকে অনুকরণ করতে পারি। এ ছাড়া, আমরা আমাদের এলাকার লোকেদের প্রতি কোমল সমবেদনা গড়ে তোলার মাধ্যমে তাঁকে অনুকরণ করতে পারি। এই সমবেদনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা যখন সুসমাচার প্রচার করি এবং সেই সম্বন্ধে শিক্ষা দিই, তখন আমরা খ্রিস্টের ব্যবস্থার বাধ্য হই।

১১-১২. (ক) কী দেখায় যে, যিহোবা আমাদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন? (খ) কীভাবে আমরা যিহোবার প্রেমকে অনুকরণ করতে পারি?

১১ দ্বিতীয়ত, যিশু তাঁর পিতার প্রেমকে প্রকাশ করেছিলেন। যিশু পরিচর্যার সময়ে তাঁর শিক্ষার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবা তাঁর উপাসকদের জন্য কতটা গভীরভাবে চিন্তা করেন। যেমন তিনি তাঁর অনুসারীদের শিখিয়েছিলেন: আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের প্রত্যেককেই মূল্যবান হিসেবে দেখেন। (মথি ১০:৩১) যিহোবা হৃদয় থেকে চান যেন তাঁর হারানো মেষেরা মন ফেরায় বা অনুতপ্ত হয় এবং মণ্ডলীতে ফিরে আসে। (লূক ১৫:৭, ১০) যিহোবা আমাদের জন্য মুক্তির মূল্য হিসেবে তাঁর পুত্রকে বলিদান দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের প্রতি তাঁর প্রেমের প্রমাণ দিয়েছেন।—যোহন ৩:১৬.

১২ শিক্ষা: কীভাবে আমরা যিহোবার প্রেমকে অনুকরণ করতে পারি? (ইফি. ৫:১, ২) আমরা আমাদের প্রত্যেক ভাই-বোনকে মূল্যবান হিসেবে দেখি এবং কোনো ‘হারাণ মেষ’ যখন যিহোবার কাছে ফিরে আসে, তখন আমরা আনন্দের সঙ্গে তাকে গ্রহণ করি। (গীত. ১১৯:১৭৬) আমরা আমাদের ভাই-বোনদের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, যেমন তাদের প্রয়োজনের সময়ে সাহায্য করার মাধ্যমে প্রমাণ করি যে, আমরা তাদের ভালোবাসি। (১ যোহন ৩:১৭) আমরা যখন প্রেম দেখিয়ে অন্যদের সঙ্গে আচরণ করি, তখন আমরা খ্রিস্টের ব্যবস্থার বাধ্য হই।

১৩-১৪. (ক) যোহন ১৩:৩৪, ৩৫ পদ অনুযায়ী যিশু তাঁর অনুসারীদের কী দেখানোর আজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং কেন এটাকে এক নতুন আজ্ঞা বলা হয়? (খ) কীভাবে আমরা নতুন আজ্ঞা পালন করি?

১৩ তৃতীয়ত, যিশু তাঁর অনুসারীদের আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখানোর আজ্ঞা দিয়েছিলেন। (পড়ুন, যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.) যিশুর এই আজ্ঞা নতুন ছিল কারণ এই আজ্ঞা অনুযায়ী এমন উপায়ে প্রেম দেখাতে হতো, যেটা ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থা অনুযায়ী দেখানোর প্রয়োজন ছিল না। যিশু যেমন আমাদের ভালোবাসেন, তেমনই আমাদেরও সহবিশ্বাসীদের ভালোবাসতে হবে। এর জন্য আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখানোর প্রয়োজন রয়েছে। * আমাদের নিজেদের চেয়ে আমাদের ভাই-বোনদের আরও বেশি ভালোবাসা উচিত। আমাদের ভালোবাসা এতটা গভীর হওয়া উচিত যেন আমরা তাদের জন্য নিজেদের জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকি, ঠিক যেমনটা যিশু দিয়েছিলেন।

১৪ শিক্ষা: কীভাবে আমরা নতুন আজ্ঞা পালন করি? সহজভাবে বললে, আমাদের ভাই-বোনদের জন্য ত্যাগস্বীকার করার মাধ্যমে। আমরা তাদের এতটাই ভালোবাসি যে, আমরা তাদের উদ্দেশে বড়ো বড়ো ত্যাগস্বীকার করার জন্য প্রস্তুত থাকি, যেমন তাদের রক্ষা করার জন্য আমরা নিজেদের জীবন দিতেও পিছপা হই না। তবে আমরা ছোটো ছোটো বিষয়েও ত্যাগস্বীকার করি। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যখন কোনো বয়স্ক ভাই অথবা বোনকে সভায় যেতে সাহায্য করার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা করি অথবা আমাদের সহবিশ্বাসীদের খুশি করার জন্য নিজেদের পছন্দের বিষয়গুলো ইচ্ছুক মনে ত্যাগ করি কিংবা কাজের জায়গায় ছুটি নিয়ে ত্রাণ কাজে সাহায্য করি, তখন আমরা খ্রিস্টের ব্যবস্থা পালন করি। এ ছাড়া, আমরা আমাদের মণ্ডলীকে এমন এক স্থানে পরিণত করতে সাহায্য করি, যেখানে প্রত্যেকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করে।

ব্যবস্থা ন্যায়বিচার করতে উৎসাহিত করে

১৫-১৭. (ক) কীভাবে যিশুর কাজ তাঁর ন্যায়বিচারবোধকে প্রকাশ করে? (খ) কীভাবে আমরা যিশুকে অনুকরণ করতে পারি?

১৫ বাইবেলে ব্যবহৃত “ন্যায়বিচার” শব্দের অর্থ হল ঈশ্বর যেটাকে সঠিক বলেন, সেটা করা এবং পক্ষপাতহীনভাবে তা করা। কেন আমরা বলতে পারি যে, খ্রিস্টের ব্যবস্থা ন্যায়বিচার করতে উৎসাহিত করে?

যিশু সম্মানের সঙ্গে এবং সদয়ভাবে মহিলাদের প্রতি আচরণ করেছিলেন, যার অন্তর্ভুক্ত সেই মহিলারাও ছিল, যাদের অন্যেরা নীচু চোখে দেখত (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৬ প্রথমত, যিশুর কাজ কীভাবে তাঁর ন্যায়বিচারবোধকে প্রকাশ করে, তা বিবেচনা করুন। তাঁর দিনে যিহুদি ধর্মীয় নেতারা ন-যিহুদিদের ঘৃণা করত, সাধারণ যিহুদিদের থেকে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করত এবং মহিলাদের প্রতি কোনো সম্মান দেখাত না। কিন্তু, যিশু সবার সঙ্গে ন্যায়বিচার ও পক্ষপাতহীন মনোভাব দেখিয়ে আচরণ করেছিলেন। ন-যিহুদি ব্যক্তিরা যখন তাঁর উপর বিশ্বাস দেখিয়েছিল, তখন তিনি তাদের প্রত্যাখ্যান করেননি। (মথি ৮:৫-১০, ১৩) তিনি ভেদাভেদের মনোভাব না দেখিয়ে সমস্ত ব্যক্তির কাছে প্রচার করেছিলেন, তা তারা ধনী অথবা দরিদ্র, যে-ই হোক না কেন। (মথি ১১:৫; লূক ১৯:২, ৯) তিনি মহিলাদের সঙ্গে কখনো রূঢ় আচরণ করেননি অথবা তাদের কটূক্তি করেননি। এর বিপরীতে, তিনি সম্মানের সঙ্গে এবং সদয়ভাবে মহিলাদের প্রতি আচরণ করেছিলেন, যার অন্তর্ভুক্ত সেই মহিলারাও ছিল, যাদের অন্যেরা নীচু চোখে দেখত।—লূক ৭:৩৭-৩৯, ৪৪-৫০.

১৭ শিক্ষা: অন্যদের সামাজিক অথবা ধর্মীয় পটভূমি যাই হোক না কেন, আমরা পক্ষপাতহীনভাবে তাদের সঙ্গে আচরণ করার মাধ্যমে এবং শুনতে চায় এমন সমস্ত ব্যক্তির কাছে প্রচার করার মাধ্যমে যিশুকে অনুকরণ করতে পারি। খ্রিস্টান পুরুষরা মহিলাদের সঙ্গে সম্মান দেখিয়ে আচরণ করার মাধ্যমে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করে। আমরা যখন তা করি, তখন আমরা খ্রিস্টের ব্যবস্থা পালন করি।

১৮-১৯. যিশু ন্যায়বিচার সম্বন্ধে কী শিখিয়েছিলেন এবং তিনি যা শিখিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা কোন শিক্ষাগুলো লাভ করি?

১৮ দ্বিতীয়ত, যিশু ন্যায়বিচার সম্বন্ধে যা শিখিয়েছিলেন, তা বিবেচনা করুন। তিনি বিভিন্ন নীতি সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন, যেগুলো তাঁর অনুসারীদের অন্যদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করতে সাহায্য করবে। উদাহরণ স্বরূপ, সুবর্ণ নিয়ম সম্বন্ধে চিন্তা করুন। (মথি ৭:১২) আমরা সবাই ন্যায্য আচরণ লাভ করতে চাই। তাই, আমাদের অন্যদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা উচিত। আমরা যদি তা করি, তা হলে তারাও আমাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করার জন্য অনুপ্রাণিত হবে। কিন্তু, আমাদের সঙ্গে যদি অন্যায্য আচরণ করা হয়, তা হলে? যিশু তাঁর অনুসারীদের এই আস্থা রাখতে শিখিয়েছিলেন যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের ‘পক্ষে অন্যায়ের প্রতীকার করিবেন, যাহারা দিবারাত্র তাঁহার কাছে রোদন করে।’ (লূক ১৮:৬, ৭) এই কথাগুলো হল একটা প্রতিজ্ঞা। এই শেষকালে আমরা যে-পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি, সেই বিষয়ে আমাদের ন্যায়বিচারের ঈশ্বর অবগত আছেন এবং তিনি তাঁর নিরূপিত সময়ে আমাদের জন্য ন্যায়বিচার করবেন।—২ থিষল. ১:৬.

১৯ শিক্ষা: আমরা যখন যিশুর শেখানো নীতিগুলো কাজে লাগাব, তখন আমরা অন্যদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করব। আর আমরা যদি শয়তানের জগতে অবিচারের শিকার হই, তা হলে আমরা এটা জেনে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি যে, যিহোবা অবশ্যই আমাদের জন্য ন্যায়বিচার করবেন।

কর্তৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের কীভাবে অন্যদের প্রতি আচরণ করা উচিত?

২০-২১. (ক) কর্তৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের কীভাবে অন্যদের প্রতি আচরণ করা উচিত? (খ) কীভাবে একজন স্বামী আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখাতে পারেন এবং কীভাবে সন্তানদের সঙ্গে একজন বাবার আচরণ করা উচিত?

২০ খ্রিস্টের ব্যবস্থা অনুযায়ী কর্তৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের কীভাবে অন্যদের প্রতি আচরণ করা উচিত? যেহেতু ব্যবস্থার ভিত্তি হল প্রেম, তাই কর্তৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা যেন অবশ্যই তাদের যত্নাধীনে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান ও প্রেম দেখিয়ে আচরণ করে। তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, খ্রিস্ট চান যেন আমরা আমাদের সমস্ত কাজে প্রেম দেখাই।

২১ পরিবারে। একজন স্বামীকে তাঁর স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে, “যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর প্রতি করিতেছেন।” (ইফি. ৫:২৫, ২৮, ২৯) একজন স্বামীকে অবশ্যই নিজের চেয়ে তার স্ত্রীর প্রয়োজন ও আগ্রহের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে খ্রিস্টের আত্মত্যাগমূলক প্রেমকে অনুকরণ করতে হবে। কোনো কোনো পুরুষ এই ধরনের প্রেম দেখানোকে কঠিন বলে মনে করে। এর কারণ হতে পারে, তারা এমন পরিবারে বড়ো হয়ে ওঠেনি, যেখানে অন্যদের সঙ্গে ন্যায্য ও প্রেমময় আচরণ করাকে মূল্য দেওয়া হয়। তাদের জন্য খারাপ অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা কঠিন হতে পারে কিন্তু তাদের অবশ্যই সেগুলো পরিবর্তন করতে হবে, যাতে তারা খ্রিস্টের ব্যবস্থা পালন করতে পারে। একজন স্বামী যখন আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখান, তখন তিনি তার স্ত্রীর সম্মান অর্জন করেন। একজন বাবা যদি তার সন্তানদের সত্যিই ভালোবাসেন, তা হলে তিনি কখনোই কথা অথবা কাজের মাধ্যমে তাদের দুঃখ দেবেন না। (ইফি. ৪:৩১) এর পরিবর্তে, তিনি এমনভাবে তার প্রেম ও অনুমোদন প্রকাশ করেন, যাতে সন্তানরা সুরক্ষিত ও নিরাপদ বোধ করে। এইরকম একজন বাবা তার সন্তানদের প্রেম ও আস্থা অর্জন করেন।

২২. প্রথম পিতর ৫:১-৩ পদ অনুযায়ী ‘মেষেরা’ কার সম্পত্তি এবং তাদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা উচিত?

২২ মণ্ডলীতে। প্রাচীনরা যেন অবশ্যই এটা মনে রাখেন যে, ‘মেষেরা’ তাদের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। (যোহন ১০:১৬; পড়ুন, ১ পিতর ৫:১-৩.) ‘ঈশ্বরের পাল,’ “ঈশ্বরের অভিমতে” ও ‘নিরূপিত অধিকার,’ এই অভিব্যক্তিগুলো প্রাচীনদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মেষেরা আসলে যিহোবার সম্পত্তি। তিনি চান যেন তাঁর মেষদের প্রতি প্রেম ও কোমলতা দেখিয়ে আচরণ করা হয়। (১ থিষল. ২:৭, ৮) প্রাচীনরা যখন প্রেমের সঙ্গে পালক হিসেবে তাদের কার্যভার পালন করেন, তখন তারা যিহোবার অনুমোদন লাভ করেন। এ ছাড়া, এই প্রাচীনরা তাদের ভাই-বোনদের কাছ থেকে প্রেম ও সম্মান লাভ করেন।

২৩-২৪. (ক) গুরুতর পাপ সংক্রান্ত কোনো বিষয় দেখা দিলে প্রাচীনরা কোন ভূমিকা পালন করেন? (খ) এই ধরনের বিষয় বিচার করার সময়ে প্রাচীনরা কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করেন?

২৩ গুরুতর পাপ সংক্রান্ত কোনো বিষয় দেখা দিলে প্রাচীনরা কোন ভূমিকা পালন করেন? তাদের ভূমিকা সেই বিচারকর্তা ও প্রাচীনদের থেকে আলাদা, যারা ইস্রায়েল জাতিকে দেওয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থার অধীনে ছিলেন। সেই ব্যবস্থা অনুযায়ী, নিযুক্ত পুরুষরা কেবল যিহোবার উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলাগুলোর বিচার করতেন, যেগুলো যিহোবার উপাসনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত ছিল না। কিন্তু, খ্রিস্টের ব্যবস্থা অনুযায়ী প্রাচীনদের ভূমিকা হল কেবল অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত সেই বিষয়গুলোর বিচার করা, যেগুলো যিহোবার উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তারা এটা উপলব্ধি করেন যে, ঈশ্বর সরকারি কর্তৃপক্ষদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলাগুলোর বিচার করার অধিকার দিয়েছেন। এর অন্তর্ভুক্ত হল বিভিন্ন শাস্তি দেওয়ার অধিকার যেমন, জরিমানা করা অথবা কারাদণ্ড দেওয়া।—রোমীয় ১৩:১-৪.

২৪ মণ্ডলীর কোনো সদস্য যদি গুরুতর পাপ করেন, তা হলে প্রাচীনরা কীভাবে তাদের ভূমিকা পালন করেন? তারা বিষয়টা বিবেচনা করার জন্য শাস্ত্র ব্যবহার করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন। তারা এটা স্মরণে রাখেন, খ্রিস্টের ব্যবস্থার ভিত্তি হল প্রেম। প্রাচীনরা প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই বিষয়টা বিবেচনা করেন: অন্যায়ের শিকার হয়েছেন, মণ্ডলীর এমন কোনো ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য কী করা যেতে পারে? প্রাচীনরা প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যায়কারী ব্যক্তি সম্বন্ধে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করেন: তিনি কি অনুতপ্ত? যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ককে পুনর্স্থাপন করার জন্য আমরা কি তাকে সাহায্য করতে পারি?

২৫. পরের প্রবন্ধে কোন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে?

২৫ খ্রিস্টের ব্যবস্থার অধীনে থাকতে পেরে আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ! আমরা সবাই যখন এটা পালন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, তখন আমরা আমাদের মণ্ডলীকে এমন একটা জায়গা করে তুলি, যেখানে প্রত্যেকে ভালোবাসা ও সুরক্ষা অনুভব করে এবং বুঝতে পারে যে, তাদের মূল্যবান বলে গণ্য করা হয়। তবে আমরা ভুলে যেতে চাই না, বর্তমান জগতে ‘দুষ্ট লোকেরা উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর’ হচ্ছে। (২ তীম. ৩:১৩) তাই, আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। শিশু যৌন নিপীড়ন ঘটলে কীভাবে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী ঈশ্বরের ন্যায়বিচারকে প্রতিফলিত করতে পারে? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।

গান সংখ্যা ৫ খ্রিস্ট, আমাদের আদর্শ

^ অনু. 5 এই প্রবন্ধ ও সেইসঙ্গে পরবর্তী দুটো প্রবন্ধ হল একটা ধারাবাহিক প্রবন্ধের অংশ, যেটা আলোচনা করে যে, কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা হলেন প্রেম ও ন্যায়বিচারের ঈশ্বর। তিনি চান যেন তাঁর লোকেরা ন্যায়বিচার লাভ করে আর এই মন্দ জগতে যারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়, তাদের তিনি সান্ত্বনা প্রদান করেন।

^ অনু. 1 ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় “প্রাচীন ইস্রায়েলে প্রেম ও ন্যায়বিচার” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

^ অনু. 13 এর অর্থ কী? এক আত্মত্যাগমূলক প্রেম আমাদের অনুপ্রাণিত করে যেন আমরা নিজেদের চেয়ে অন্যদের প্রয়োজন ও আগ্রহের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিই। আমরা অন্যদের সাহায্য করার অথবা তাদের উপকারের জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করতে অথবা কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত হতেও ইচ্ছুক থাকি।

^ অনু. 61 ছবি সম্বন্ধে: যিশু একজন বিধবাকে লক্ষ করেন, যার একমাত্র ছেলে মারা গিয়েছে। করুণার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যিশু সেই ছেলেটিকে পুনরুত্থিত করেন।

^ অনু. 63 ছবি সম্বন্ধে: শিমোন নামে একজন ফরীশীর বাড়িতে যিশু খাবার খেতে গিয়েছেন। একজন মহিলা, সম্ভবত একজন বেশ্যা, সবেমাত্র তার চোখের জলে যিশুর পা ধুয়েছেন, চুল দিয়ে পা মুছেছেন এবং পায়ে কিছুটা তেল ঢেলেছেন। শিমোন সেই মহিলার কাজে অসন্তুষ্ট হয়েছেন কিন্তু যিশু সেই মহিলার পক্ষ সমর্থন করছেন।