সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৬

আমাদের পিতা যিহোবা আমাদের খুব ভালোবাসেন

আমাদের পিতা যিহোবা আমাদের খুব ভালোবাসেন

“অতএব তোমরা এই মত প্রার্থনা করিও; হে আমাদের . . . পিতঃ।”—মথি ৬:৯.

গান সংখ্যা ৮৯ যিহোবার আন্তরিক অনুরোধ: “বৎস, জ্ঞানবান হও”

সারাংশ *

১. পারস্যের রাজার সঙ্গে কথা বলার জন্য কী করতে হতো?

কল্পনা করুন, আপনি আজ থেকে প্রায় ২,৫০০ বছর আগে পারস্যে রয়েছেন। আপনি একটা বিষয় নিয়ে দেশের রাজার সঙ্গে কথা বলতে চান আর তাই আপনি শূশন নগরে গিয়েছেন, যেখানে রাজা বাস করেন। কিন্তু, রাজার সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রথমে আপনাকে তার অনুমতি নিতে হবে। বিনা অনুমতিতে আপনি যদি তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন, তা হলে আপনাকে হত্যা করা হতে পারে!​—ইষ্টের ৪:১১.

২. যিহোবার সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে আমরা কেমন অনুভব করি বলে তিনি চান?

আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ যে, যিহোবা পারস্যের রাজার মতো নন! যিহোবা যেকোনো মানবশাসকের তুলনায় অনেক অনেক গুণ শ্রেষ্ঠ কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা যেকোনো সময়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি। তিনি চান যেন আমরা নির্দ্বিধায় তাঁর সঙ্গে কথা বলি। উদাহরণ স্বরূপ, সৃষ্টিকর্তা, সর্বশক্তিমান ও সার্বভৌম প্রভুর মতো হৃদয়গ্রাহী উপাধিগুলো থাকা সত্ত্বেও যিহোবা চান যেন আমরা তাঁকে ভালোবেসে “পিতঃ” বলে ডাকি। (মথি ৬:৯) যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর নিকটবর্তী হই আর এটা আমাদের অনেক আনন্দিত করে।

৩. কেন আমরা যিহোবাকে “পিতঃ” বলে ডাকতে পারি এবং এই প্রবন্ধে কী নিয়ে আলোচনা করা হবে?

যিহোবা হলেন আমাদের জীবনের উনুই বা উৎস আর তাই তাঁকে “পিতঃ” বলে ডাকার উপযুক্ত কারণ রয়েছে। (গীত. ৩৬:৯) যেহেতু তিনি আমাদের পিতা, তাই আমাদের তাঁর বাধ্য হতে হবে। যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করলে আমরা ভবিষ্যতে চমৎকার আশীর্বাদগুলো লাভ করব। (ইব্রীয় ১২:৯) এই আশীর্বাদগুলোর মধ্যে একটা হল অনন্তজীবন, হোক তা স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে। এ ছাড়া, আমরা এখনই বিভিন্ন উপকার লাভ করতে পারি। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে, কীভাবে যিহোবা বর্তমানে একজন প্রেমময় পিতা হিসেবে কাজ করেন এবং কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, ভবিষ্যতে তিনি কখনো আমাদের পরিত্যাগ করবেন না। কিন্তু, প্রথমে আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি, আমাদের স্বর্গীয় পিতা যে আমাদের খুব ভালোবাসেন ও যত্ন নেন, সেই বিষয়ে কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি।

যিহোবা হলেন প্রেমময় ও যত্নশীল পিতা

বাবা ও তার সন্তানের পিছনে আঁকা যিহোবার হাত আমাদের দেখায় যে, যিহোবা কীভাবে আমাদের যত্ন নেন।(৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৪. কেন কেউ কেউ যিহোবাকে তাদের পিতা হিসেবে দেখাকে কঠিন বলে মনে করে?

আপনি কি ঈশ্বরকে আপনার পিতা হিসেবে দেখাকে কঠিন বলে মনে করেন? যিহোবা অনেক মহান হওয়ায় কেউ কেউ হয়তো মনে করে যে, যিহোবা তাদের গুরুত্ব দেন না। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যে ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে তাদের জন্য চিন্তা করেন, সেই বিষয়ে তারা সন্দেহ করে থাকে। কিন্তু, আমাদের প্রেমময় পিতা চান না যে, আমরা এইরকম অনুভব করি। তিনি আমাদের জীবন দিয়েছেন এবং তিনি চান যেন আমরা তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখি। এই সত্যটা তুলে ধরার পর প্রেরিত পৌল আথীনীতে (এথেন্সে) তার শ্রোতাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন, যিহোবা “আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” (প্রেরিত ১৭:২৪-২৯) ঠিক যেমন একটি ছোটো বাচ্চা মন খুলে তার প্রেমময় ও যত্নশীল বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে, ঈশ্বর চান যেন আমরা প্রত্যেকে তেমনই বোধ করি।

৫. একজন খ্রিস্টান বোনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখি?

অন্যেরা হয়তো যিহোবাকে তাদের পিতা হিসেবে দেখাকে কঠিন বলে মনে করে কারণ তাদের মানবপিতা তাদের প্রতি খুব সামান্যই ভালোবাসা ও দয়া দেখিয়েছেন অথবা একেবারেই দেখাননি। একজন খ্রিস্টান বোনের মন্তব্য বিবেচনা করুন। তিনি বলেন: ‘বাবা আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করতেন। আমি যখন বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলাম, তখন স্বর্গীয় পিতার নিকটবর্তী হওয়া আমার জন্য কঠিন ছিল। কিন্তু, যিহোবাকে জানার পর সব কিছু পালটে গিয়েছিল।’ আপনারও কি এই ধরনের অনুভূতি রয়েছে? যদি রয়েছে, তা হলে নিরুৎসাহিত হবেন না। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনিও এটা অনুভব করবেন, যিহোবা হলেন সবচেয়ে ভালো পিতা।

৬. মথি ১১:২৭ পদ অনুযায়ী কীভাবে যিহোবা তাঁকে একজন প্রেমময় পিতা হিসেবে দেখার জন্য আমাদের সাহায্য করেছেন?

যিহোবা যিশুর কথা ও কাজগুলো বাইবেলে লিপিবদ্ধ করিয়েছেন আর এভাবে তিনি আমাদের দেখতে সাহায্য করেছেন যে, তিনি হলেন একজন প্রেমময় পিতা। (পড়ুন, মথি ১১:২৭.) যিশু তাঁর পিতার ব্যক্তিত্বকে এতটাই নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন যে, তিনি বলতে পেরেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৯) একজন পিতা হিসেবে যিহোবা যে-ভূমিকা পালন করেন, যিশু প্রায়ই সেই বিষয়ে বলতেন। শুধুমাত্র চারটে সুসমাচার পুস্তকেই যিশু বার বার যিহোবাকে “পিতঃ” বলে সম্বোধন করেছেন। কেন যিশু বার বার যিহোবা সম্বন্ধে বলেছিলেন? একটা কারণ হল যাতে লোকেরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে যে, যিহোবা হলেন একজন প্রেমময় পিতা।—যোহন ১৭:২৫, ২৬.

৭. যিহোবা যেভাবে তাঁর পুত্রের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখি?

যিহোবা তাঁর পুত্র যিশুর সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখি, তা নিয়ে বিবেচনা করুন। যিহোবা সবসময় যিশুর প্রার্থনা শুনতেন। তিনি কেবল যিশুর প্রার্থনা শুনতেনই না কিন্তু সেইসঙ্গে উত্তরও দিতেন। (যোহন ১১:৪১, ৪২) যিশু বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন আর সবসময়ই তিনি তাঁর পিতার ভালোবাসা ও সমর্থন লাভ করেছিলেন।—লূক ২২:৪২, ৪৩.

৮. কোন কোন উপায়ে যিহোবা যিশুর যত্ন নিয়েছিলেন?

যিশু যখন বলেছিলেন, “পিতা হেতু আমি জীবিত আছি,” তখন তিনি এটা স্বীকার করেছিলেন যে, তাঁর পিতা হলেন তাঁর জীবনের উৎস ও রক্ষাকর্তা। (যোহন ৬:৫৭) যিশু তাঁর পিতার উপর সম্পূর্ণরূপে আস্থা রেখেছিলেন এবং যিহোবা তাঁকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়েছিলেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যিহোবা যিশুকে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিলেন।—মথি ৪:৪.

৯. যিহোবা কীভাবে যিশুর প্রেমময় ও যত্নশীল পিতা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন?

একজন প্রেমময় পিতা হিসেবে যিহোবা এই বিষয়ে খেয়াল রেখেছিলেন যেন যিশু এটা জানতে পারেন যে, যিহোবা তাঁকে সমর্থন জোগাচ্ছেন। (মথি ২৬:৫৩; যোহন ৮:১৬) যদিও যিহোবা যিশুকে সমস্ত ক্ষতি থেকে রক্ষা করেননি কিন্তু তিনি তাঁকে পরীক্ষার সময়ে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছিলেন। যিশু নিশ্চিত ছিলেন, তিনি যেকোনো কষ্টই ভোগ করুন না কেন, সেটা ক্ষণস্থায়ী। (ইব্রীয় ১২:২) যিহোবা যিশুর কথা শোনার, তাঁর প্রয়োজন মেটানোর, তাঁকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার এবং সমর্থন জোগানোর মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁকে ভালোবাসেন। (যোহন ৫:২০; ৮:২৮) এখন আসুন আমরা লক্ষ করি যে, কীভাবে আমাদের স্বর্গীয় পিতা একইভাবে আমাদের যত্ন নেন।

যেভাবে আমাদের প্রেমময় পিতা আমাদের যত্ন নেন

একজন প্রেমময় মানবপিতা তার সন্তানদের (১) কথা শোনেন, (২) প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো দেন, (৩) প্রশিক্ষণ দেন এবং (৪) সুরক্ষিত রাখেন। আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতাও একইভাবে আমাদের যত্ন নেন (১০-১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১০. গীতসংহিতা ৬৬:১৯, ২০ পদ অনুযায়ী কীভাবে যিহোবা দেখান যে, তিনি আমাদের ভালোবাসেন?

১০ যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শোনেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৬৬:১৯, ২০.) তিনি আমাদের প্রার্থনা করার উপর কোনো সীমা আরোপ করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি আমাদের বার বার প্রার্থনা করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেন। (১ থিষল. ৫:১৭) আমরা যেকোনো সময়ে আমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারি আর তা আমরা যেখানেই থাকি না কেন। তিনি কখনো এতটা ব্যস্ত হয়ে যান না যে, আমাদের কথা শোনার মতো তাঁর কাছে সময় থাকে না; এর পরিবর্তে তিনি মন দিয়ে আমাদের প্রার্থনা শোনেন। আমরা যখন এটা উপলব্ধি করি যে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শোনেন, তখন আমরা তাঁর নিকটবর্তী হই। গীতরচক বলেছিলেন, “আমি সদাপ্রভুকে প্রেম করি, কারণ তিনি শুনেন আমার রব।”—গীত. ১১৬:১.

১১. কীভাবে যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন?

১১ আমাদের পিতা কেবল আমাদের প্রার্থনা শোনেনই না কিন্তু সেইসঙ্গে উত্তরও দেন। প্রেরিত যোহন আমাদের আশ্বস্ত করেন: “আমরা . . . যদি [ঈশ্বরের] ইচ্ছানুসারে কিছু যাচ্ঞা করি, তবে তিনি আমাদের যাচ্ঞা শুনেন।” (১ যোহন ৫:১৪, ১৫) অবশ্য, আমরা যেভাবে আশা করি, সেভাবে যিহোবা হয়তো আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন না। তিনি জানেন যে, আমাদের জন্য কোনটা সর্বোত্তম হবে আর তাই আমরা যা চাই, তা তিনি কখনো কখনো প্রদান করেন না অথবা তিনি চান যেন আমরা অপেক্ষা করি।—২ করি. ১২:৭-৯.

১২-১৩. কোন কোন উপায়ে যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রদান করেন?

১২ আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রদান করেন। যিহোবা বাবাদের জন্য উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন। (১ তীম. ৫:৮) তিনি তাঁর সন্তানদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রদান করেন। তিনি চান না যেন আমরা খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন হই। (মথি ৬:৩২, ৩৩; ৭:১১) এ ছাড়া, প্রেমময় পিতা হিসেবে যিহোবা এই বিষয়ে খেয়াল রাখেন যেন ভবিষ্যতে আমরা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো লাভ করি।

১৩ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল যিহোবা তাঁর সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রদান করেন। তিনি তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে তাঁর নিজের, তাঁর উদ্দেশ্য, জীবনের অর্থ এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সত্য প্রকাশ করেছেন। তিনি আমাদের বাবা-মা অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে ব্যবহার করে তাঁর সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করেছেন। আর তিনি মণ্ডলীর প্রেমময় প্রাচীনদের এবং অন্যান্য পরিপক্ব ভাই-বোনের সদয় সাহায্যের মাধ্যমে ক্রমাগত তাঁর সঙ্গে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমাদের সাহায্য করেন। এ ছাড়া, যিহোবা আমাদের মণ্ডলীর সভার মাধ্যমে নির্দেশনা প্রদান করেন, যেখানে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে একত্রে শিক্ষা লাভ করি। এই সমস্ত ও সেইসঙ্গে আরও অন্যান্য উপায়ে যিহোবা আমাদের সবার প্রতি একজন প্রেমময় পিতার মতো আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন।—গীত. ৩২:৮.

১৪. কেন ও কীভাবে যিহোবা আমাদের প্রশিক্ষণ দেন?

১৪ যিহোবা আমাদের প্রশিক্ষণ দেন। যিশুর মতো আমরা সিদ্ধ নই। তাই, আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময়ে আমাদের প্রেমময় পিতা প্রয়োজনে আমাদের শাসন করেন। তাঁর বাক্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: “প্রভু [ঈশ্বর] যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাসন করেন।” (ইব্রীয় ১২:৬, ৭) যিহোবা অনেক উপায়ে আমাদের শাসন করেন। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা তাঁর বাক্য থেকে যা পড়ি অথবা সভায় যা শুনি, সেগুলো হয়তো আমাদের সংশোধন করতে পারে। অথবা প্রাচীনরা আমাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করতে পারেন। যিহোবা যেভাবেই আমাদের শাসন করুন না কেন, আমরা যেন মনে রাখি, তিনি আমাদের ভালোবাসেন বলেই তা করেন।—যির. ৩০:১১.

১৫. কোন কোন উপায়ে যিহোবা আমাদের সুরক্ষিত রাখেন?

১৫ যিহোবা আমাদের পরীক্ষার সময়ে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেন। ঠিক যেমন এক মানবপিতা তার সন্তানদের কঠিন সময়ে সাহায্য করেন, একইভাবে আমাদের স্বর্গীয় পিতাও আমাদের পরীক্ষার সময়ে সাহায্য করেন। তিনি আমাদের পবিত্র আত্মা প্রদান করেন আর এই আত্মা আমাদের সেইসমস্ত বিষয় থেকে সুরক্ষিত রাখে, যেগুলো হয়তো তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। (লূক ১১:১৩) যিহোবা আমাদের আবেগগতভাবেও সুরক্ষিত রাখেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি আমাদের এক চমৎকার আশা প্রদান করেন। আর ভবিষ্যতের প্রতি সেই আশা আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে। এই বিষয়টা নিয়ে বিবেচনা করুন: আমাদের প্রতি যত খারাপ বিষয়ই ঘটুক না কেন, আমাদের স্বর্গীয় পিতা সেইসমস্ত ক্ষত সারিয়ে তুলবেন, যেগুলো আমরা ভোগ করছি। আমরা যে-পরীক্ষারই মুখোমুখি হই না কেন, তা ক্ষণস্থায়ী কিন্তু যিহোবা যে-আশীর্বাদ প্রদান করেন, তা চিরস্থায়ী।—২ করি. ৪:১৬-১৮.

আমাদের পিতা কখনো আমাদের পরিত্যাগ করবেন না

১৬. আদম তার প্রেমময় পিতার অবাধ্য হওয়ায় কী হয়েছিল?

১৬ আদম অবাধ্য হওয়ার পর যিহোবা যা করেছিলেন, সেটা নিয়ে আমরা যখন চিন্তা করি, তখন আমাদের প্রতি যিহোবার ভালোবাসার প্রমাণ লক্ষ করতে পারি। আদম তার স্বর্গীয় পিতার অবাধ্য হওয়ায় যিহোবার সুখী পরিবারে থাকার সুযোগ হারিয়েছিলেন এবং তার বংশধরদের জন্যও সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। (রোমীয় ৫:১২; ৭:১৪) কিন্তু, যিহোবা আদমের বংশধরদের সাহায্য করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

১৭. আদমের বিদ্রোহের পর যিহোবা সঙ্গেসঙ্গে কী করেছিলেন?

১৭ যিহোবা আদমকে শাস্তি দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি তার বংশধরদের সাহায্য করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তিনি সঙ্গেসঙ্গে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, বাধ্য মানুষদের তাঁর পরিবারে ফিরিয়ে আনা হবে। (আদি. ৩:১৫; রোমীয় ৮:২০, ২১) যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্র যিশুর মাধ্যমে মুক্তির মূল্যের যে-ব্যবস্থা করেছেন, সেটার ভিত্তিতে তিনি এটা সম্ভবপর করেছেন। যিহোবা আমাদের জন্য তাঁর পুত্রকে দান করার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, তিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন।—যোহন ৩:১৬.

হতে পারে, আমরা যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছি। কিন্তু, আমরা যদি অনুতপ্ত হয়ে থাকি, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, আমাদের প্রেমময় পিতা আমাদের গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত ও ইচ্ছুক রয়েছেন (১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮. কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর সন্তান হই আর তা এমনকী তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া সত্ত্বেও?

১৮ আমরা যদিও অসিদ্ধ, তারপরও যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর পরিবারের সদস্য হই আর তিনি কখনো আমাদের বোঝা হিসেবে দেখেন না। আমরা হয়তো হতাশ হয়ে যেতে পারি অথবা তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারি কিন্তু যিহোবা সবসময় এটা আশা করেন, আমরা একদিন তাঁর কাছে ফিরে আসব। অপব্যয়ী পুত্রের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবা তাঁর সন্তানদের কতটা ভালোবাসেন। (লূক ১৫:১১-৩২) সেই দৃষ্টান্তে বাবা কখনো এই আশা ছেড়ে দেননি যে, তার ছেলে একদিন ফিরে আসবে। আর সেই ছেলে যখন ফিরে এসেছিল, তখন বাবা উৎসুকভাবে তাকে গ্রহণ করেছিলেন। হতে পারে, আমরা যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছি। কিন্তু, আমরা যদি অনুতপ্ত হয়ে থাকি, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, আমাদের প্রেমময় পিতা আমাদের গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত ও ইচ্ছুক রয়েছেন।

১৯. কীভাবে যিহোবা আদমের করা ক্ষতি পূরণ করে দেবেন?

১৯ আমাদের পিতা যিহোবা আদমের করা সমস্ত ক্ষতি পূরণ করে দেবেন। আদমের বিদ্রোহের পর যিহোবা মানবজাতির মধ্যে থেকে ১,৪৪,০০০ ব্যক্তিকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যারা স্বর্গে তাঁর পুত্রের সঙ্গে রাজা ও যাজক হিসেবে সেবা করবে। নতুন জগতে যিশু এবং সেই সহ-শাসকরা বাধ্য মানুষদের সিদ্ধতায় পৌঁছাতে সাহায্য করবেন। বাধ্যতার চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঈশ্বর তাদের অনন্তজীবন প্রদান করবেন। আমাদের পিতা যখন দেখবেন যে, পৃথিবী তাঁর সিদ্ধ ছেলে-মেয়েদের দ্বারা ভরে গিয়েছে, তখন তিনি খুব আনন্দিত হবেন। সেটা কতই-না রোমাঞ্চকর এক সময় হবে!

২০. কোন কোন উপায়ে যিহোবা দেখিয়েছেন, তিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন এবং পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

২০ যিহোবা দেখিয়েছেন যে, তিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন। তিনি হলেন এক আদর্শ পিতা। তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন এবং আমাদের প্রয়োজনীয় বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো প্রদান করেন। তিনি আমাদের প্রশিক্ষণ দেন এবং সমর্থন করেন। এ ছাড়া, তিনি ভবিষ্যতে আমাদের জন্য চমৎকার বিষয়গুলো সম্পাদন করবেন। আমাদের পিতা যে আমাদের ভালোবাসেন ও যত্ন নেন, সেই বিষয়ে জানা আমাদের আনন্দিত করে। পরবর্তী প্রবন্ধে, সেই উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা তাঁর সন্তান হিসেবে তাঁর ভালোবাসার প্রতি সাড়া দিতে পারি।

গান সংখ্যা ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম

^ অনু. 5 বেশিরভাগ সময়ে আমরা যিহোবাকে আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে দেখে থাকি। তবে, তাঁকে একজন প্রেমময় ও যত্নশীল পিতা হিসেবে দেখার উত্তম কারণগুলো আমাদের কাছে রয়েছে। এই প্রবন্ধে সেই কারণগুলো নিয়ে বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, আমরা শিখব যে, কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা কখনো আমাদের পরিত্যাগ করবেন না।

^ অনু. 59 ছবি সম্বন্ধে: চারটে দৃশ্যের প্রতিটাতেই একজন বাবা এবং তার সন্তান সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করা হয়েছে: একজন বাবা মন দিয়ে তার ছেলের কথা শুনছেন, একজন বাবা তার মেয়েকে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো দিচ্ছেন, একজন বাবা তার ছেলেকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং একজন বাবা তার ছেলেকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। এই চারটে দৃশ্যের পিছনে আঁকা যিহোবার হাত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, যিহোবাও একইভাবে আমাদের যত্ন নেন।