সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৯

কারা শেষকালে “উত্তর দেশের রাজা” হয়ে ওঠে?

কারা শেষকালে “উত্তর দেশের রাজা” হয়ে ওঠে?

“শেষকালে দক্ষিণ দেশের রাজা তাহাকে [উত্তর দেশের রাজাকে] ঢুসাইবে।”—দানি. ১১:৪০.

গান সংখ্যা ৪৯ যিহোবা মোদের আশ্রয়

সারাংশ *

১. বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদের কী জানতে সাহায্য করে?

নিকট ভবিষ্যতে যিহোবার লোকেদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে? আমরা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে পারি। বাইবেল জানায় যে, শীঘ্রই কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করবে। বাইবেলে এমন একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী রয়েছে, যেটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী সরকারগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী করবে। এই ভবিষ্যদ্‌বাণী দানিয়েল ১১ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই অধ্যায়ে দুই জন রাজার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে, যারা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে আর এই রাজারা উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা নামে পরিচিত। এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর বেশিরভাগ অংশ ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই, আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর বাকি অংশটুকুও পরিপূর্ণ হবে।

২. আদিপুস্তক ৩:১৫ এবং প্রকাশিত বাক্য ১১:৭; ১২:১৭ পদে বলা কোন গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো মনে রেখে আমাদের দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী অধ্যয়ন করতে হবে?

দানিয়েল ১১ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণীর অর্থ বোঝার জন্য আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এটা একমাত্র সেই শাসক ও সরকারগুলোকে নির্দেশ করে, যারা ঈশ্বরের লোকেদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল। বিশ্বের জনসংখ্যার তুলনায় ঈশ্বরের দাসদের সংখ্যা খুবই কম। তারপরও, কেন ঈশ্বরের দাসেরা এই সরকারগুলোর লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে? কারণ শয়তান এবং তার সমস্ত বিধিব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য হল সেই ব্যক্তিদের নির্মূল করা, যারা যিহোবা ও যিশুর সেবা করে। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩:১৫ এবং প্রকাশিত বাক্য ১১:৭; ১২:১৭.) এ ছাড়া, দানিয়েলের দ্বারা লিখিত ভবিষ্যদ্‌বাণীকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যের অন্যান্য ভবিষ্যদ্‌বাণীর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। সত্যি বলতে কী, আমরা একমাত্র তখনই দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর সঠিক বোধগম্যতা লাভ করতে পারব, যখন আমরা এটাকে শাস্ত্রের অন্যান্য অংশের সঙ্গে তুলনা করব।

৩. এই প্রবন্ধে এবং পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

এখন আমরা দানিয়েল ১১:২৫-৩৯ পদ নিয়ে পরীক্ষা করব। আমরা দেখব যে, ১৮৭০ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কারা উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা ছিল এবং আমরা এও দেখব যে, এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর কিছু অংশের বোধগম্যতায় রদবদল করা কেন যুক্তিযুক্ত। পরের প্রবন্ধে আমরা দানিয়েল ১১:৪০–১২:১ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে আলোচনা করব। আর সেইসঙ্গে ১৯৯১ সাল থেকে আরমাগিদোনের যুদ্ধের সময় পর্যন্ত দানিয়েল পুস্তকের এই অংশের ভবিষ্যদ্‌বাণী যা বলে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট বোধগম্যতা লাভ করব। এই দুটো প্রবন্ধ নিয়ে অধ্যয়ন করার সময়ে “শেষকালে দুই জন রাজা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে” শিরোনামের তালিকা নিয়ে বিবেচনা করা সাহায্যকারী হবে। তবে, প্রথমে আমাদের জানতে হবে যে, এই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা দুই জন রাজা কারা।

কীভাবে আমরা জানতে পারি, উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা কারা?

৪. উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা সম্বন্ধে জানার জন্য কোন তিনটে বিষয় আমাদের সাহায্য করে?

অতীতে উত্তর ইস্রায়েলের শাসককে “উত্তর দেশের রাজা” বলা হতো এবং দক্ষিণ ইস্রায়েলের শাসককে “দক্ষিণ দেশের রাজা” বলা হতো। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ একজন স্বর্গদূত দানিয়েলকে বলেছিলেন: “তোমার জাতির প্রতি যাহা ঘটিবে, তাহা আমি তোমাকে [ঈশ্বরের লোককে] বুঝাইয়া দিতে আসিয়াছি।” (দানি. ১০:১৪) ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর আগে পর্যন্ত কেবল ইস্রায়েল জাতিই ঈশ্বরের লোক ছিল। কিন্তু, সেই দিন থেকে যিহোবা এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, তিনি যিশুর বিশ্বস্ত শিষ্যদের তাঁর লোক হিসেবে দেখেন। তাই, দানিয়েল ১১ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণীর বেশিরভাগ অংশে ইস্রায়েল জাতির বিষয়ে নয় বরং খ্রিস্টের অনুসারীদের বিষয়ে বলা হয়েছে। (প্রেরিত ২:১-৪; রোমীয় ৯:৬-৮; গালা. ৬:১৫, ১৬) আর সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজার পরিচয় পরিবর্তিত হয়। কিন্তু, এই সমস্ত শাসকের মধ্যে কিছু বিষয়ের মিল ছিল। প্রথমত, রাজারা ঈশ্বরের লোকেদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল। দ্বিতীয়ত, তারা ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে আচরণ করার সময়ে দেখিয়েছিল যে, তারা সত্য ঈশ্বর যিহোবাকে ঘৃণা করে। আর তৃতীয়ত, সেই দুই জন রাজা আধিপত্য বিস্তার করার জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।

৫. এক-শো খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উত্তর দেশের এবং দক্ষিণ দেশের কি কোনো রাজা ছিল? ব্যাখ্যা করুন।

এক-শো খ্রিস্টাব্দের কিছু সময় পরে প্রকৃত খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে অনেক মিথ্যা খ্রিস্টান আসতে শুরু করে। তারা মিথ্যা ধর্মের শিক্ষা প্রদান করতে এবং ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত সত্য গুপ্ত করতে শুরু করে। সেই সময় থেকে শুরু করে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিক পর্যন্ত পৃথিবীতে ঈশ্বরের দাসদের কোনো সংগঠিত দল ছিল না। মিথ্যা খ্রিস্টানদের সংখ্যা শ্যামাঘাসের মতো বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর এই কারণে সত্য খ্রিস্টানদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। (মথি ১৩:৩৬-৪৩) কেন এটা জানা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? কারণ এটা দেখায় যে, ১০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত থাকা রাজা অথবা সরকারগুলো উত্তর দেশের রাজা অথবা দক্ষিণ দেশের রাজা হতে পারে না। সেই সময়ে ঈশ্বরের লোকেদের কোনো সংগঠিত দল ছিল না, যাদের উপর তারা আক্রমণ করতে পারত। * তবে, আমরা আশা করতে পারি যে, ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের অল্পসময় পর থেকেই উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা পুনরায় আবির্ভূত হবে। কীভাবে আমরা তা জানতে পারি?

৬. ঈশ্বরের লোকেরা পুনরায় কখন একটা দল হিসেবে সংগঠিত হতে শুরু করেছিল? ব্যাখ্যা করুন।

আঠারো-শো সত্তর খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ঈশ্বরের লোকেরা একটা দল হিসেবে সংগঠিত হতে শুরু করে। এটা ছিল সেই বছর, যখন ভাই চার্লস্‌ টি. রাসেল এবং তার সহযোগীরা বাইবেল অধ্যয়নের ক্লাস শুরু করেন। ভাই রাসেল এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত দূত হিসেবে কাজ করেন, যারা মশীহ রাজ্য স্থাপিত হওয়ার আগে ‘পথ প্রস্তুত’ করেছিলেন। (মালাখি ৩:১) পুনরায় সঠিক উপায়ে যিহোবার উপাসনা করার জন্য একটা দল সংগঠিত হয়! সেই সময়ে কি এমন কোনো সরকার ছিল, যেটা ঈশ্বরের দাসদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারত? পরবর্তী তথ্যগুলো নিয়ে বিবেচনা করুন।

দক্ষিণ দেশের রাজা কে?

৭. উনিশ-শো সতেরো সাল পর্যন্ত দক্ষিণ দেশের রাজা কে ছিল?

আঠারো-শো সত্তর সালের মধ্যে ব্রিটেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সাম্রাজ্য হয়ে ওঠে এবং পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সৈন্য গঠন করে। দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী একটা ক্ষুদ্র শৃঙ্গের বিষয়ে উল্লেখ করে, যেটা বাকি তিনটে শৃঙ্গকে পরাজিত করে। সেই ক্ষুদ্র শৃঙ্গ ব্রিটেনকে এবং বাকি শৃঙ্গগুলো ফ্রান্স, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসকে চিত্রিত করে। (দানি. ৭:৭, ৮) আর ব্রিটেন ১৯১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ দেশের রাজা ছিল। সেই একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হয়ে ওঠে এবং ব্রিটেনের সঙ্গে একত্রে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে শুরু করে।

৮. শেষকালজুড়ে কে দক্ষিণ দেশের রাজার ভূমিকা পালন করে?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন একত্রে মিলে যুদ্ধে অংশ নেয় এবং তারা অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সেই সময়ে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র (যা আগে ব্রিটেনের অধীনে ছিল) একত্রে মিলে অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি হয়ে ওঠে। দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী এই রাজা “অতি পরাক্রান্ত বিস্তর সৈন্য” গঠন করে। (দানি. ১১:২৫) শেষকালজুড়ে অ্যাংলো-আমেরিকার এই জোট দক্ষিণ দেশের রাজার ভূমিকা পালন করে। * তবে, কে উত্তর দেশের রাজা হয়ে ওঠে?

উত্তর দেশের রাজা কে?

৯. কখন উত্তর দেশের রাজা পুনরায় আবির্ভূত হয়েছিল এবং দানিয়েল ১১:২৫ পদ কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?

আঠারো-শো একাত্তর সালে ভাই রাসেল এবং তার সহযোগীরা বাইবেল অধ্যয়নের দল গড়ে তোলার পর উত্তর দেশের রাজা পুনরায় আবির্ভূত হয়েছিল। সেই বছরে অটো ফন্‌ বিসমার্ক নামে একজন ব্যক্তি বেশ কিছু এলাকাকে একত্রিত করেছিলেন এবং সেগুলো মিলে একটা শক্তিশালী দেশ হয়ে উঠেছিল, যেটার নাম হল জার্মানি। ভিল্‌হেল্ম ১ম এই নতুন দেশের শাসক হন এবং তিনি বিসমার্ককে সরকারের প্রধান আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত করেন। * সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু দেশ ও দ্বীপের উপর জার্মানি কর্তৃত্ব করতে শুরু করে এবং ব্রিটেনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠার চেষ্টা করে। (পড়ুন, দানিয়েল ১১:২৫.) জার্মানি এক শক্তিশালী সৈন্য ও সেইসঙ্গে বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড়ো নৌবাহিনী গঠন করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানি এই সৈন্যকে ব্যবহার করেই তার শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।

১০. দানিয়েল ১১:২৫খ, ২৬ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?

১০ দানিয়েল এও ভবিষ্যদ্‌বাণী করেন যে, জার্মানি এবং তার সৈন্যের প্রতি কী ঘটবে। ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী উত্তর দেশের রাজা “স্থির থাকিবে না।” কেন? “কেননা তাহারা তাহার বিরুদ্ধে নানা কৌশল কল্পনা করিবে। যাহারা তাহার আহারীয় দ্রব্যের ভাগী, তাহারাই তাহাকে বিনষ্ট করিবে।” (দানি. ১১:২৫খ, ২৬ক) দানিয়েলের সময়ে যারা “রাজার আহারীয় দ্রব্য” খেত, তাদের মধ্যে “রাজার নিকটে” থাকা আধিকারিকরা থাকত। (দানি. ১:৫) এই ভবিষ্যদ্‌বাণী কাদের নির্দেশ করে? এটা জার্মানির সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের অর্থাৎ সেনা প্রধানদের এবং সেনাবাহিনীর উপদেষ্টাদের নির্দেশ করে, যারা রাজার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করত। এই ক্ষমতাশালী লোকেদের কাজের কারণে রাজা তার ক্ষমতা হারাতে শুরু করেন এবং জার্মানিতে এক নতুন সরকার গঠিত হয়। * ভবিষ্যদ্‌বাণীতে কেবল সরকারের পতন সম্বন্ধেই বলা হয়নি কিন্তু সেইসঙ্গে দক্ষিণ দেশের রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করার ফলাফল সম্বন্ধেও বলা হয়েছিল। উত্তর দেশের রাজার বিষয়ে এই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা হয়েছিল: “উহার সৈন্য আপ্লাবন করিবে; এবং অনেকে নিহত হইয়া পড়িবে।” (দানি. ১১:২৬খ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই ভবিষ্যদ্‌বাণী নিখুঁতভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল। জার্মানির সৈন্যকে পরাজিত করা হয়েছিল এবং অনেক লোককে হত্যা করা হয়েছিল। ইতিহাসে সেটাই ছিল প্রথম যুদ্ধ, যেখানে এত লোক নিহত হয়েছিল।

১১. উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা কী করেছিল?

১১ দানিয়েল ১১:২৭, ২৮ পদ এমন কিছু বিষয় সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে, যেগুলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ঘটেছিল। ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা হয়েছিল যে, উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা “এক মেজে বসিয়া মিথ্যাকথা কহিবে।” এ ছাড়া, ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা হয়েছিল যে, উত্তর দেশের রাজা “অনেক সম্পত্তি” সঞ্চয় করে রাখবে। আর ঠিক তা-ই হয়েছিল। জার্মানি ও ব্রিটেন একে অপরকে বলেছিল যে, তারা শান্তি চায় কিন্তু ১৯১৪ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন সেই কথাগুলো মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছিল। আর ১৯১৪ সালের মধ্যে জার্মানি বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী দেশ হয়ে উঠেছিল। তারপর, দানিয়েল ১১:২৯ ও ৩০ পদের প্রথম অংশের ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল। জার্মানি দক্ষিণ দেশের রাজার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল কিন্তু জয়ী হতে পারেনি।

রাজারা ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে লড়াই করে

১২. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা কী করেছিল?

১২ উনিশ-শো চোদ্দো সাল থেকে এই দুই জন রাজা একে অপরের বিরুদ্ধে এবং ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই চলেছে এবং সেটা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ঈশ্বরের দাসেরা যখন যুদ্ধে অংশ নেওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন জার্মান ও ব্রিটিশ সরকার, উভয়েই ঈশ্বরের দাসদের উপরে তাড়না নিয়ে এসেছিল। আর সেই সময়ে যারা প্রচার কাজে নেতৃত্ব নিচ্ছিল, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কারাগারে বন্দি করেছিল। তাড়নার বিষয়ে প্রকাশিত বাক্য ১১:৭-১০ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণী এভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল।

১৩. উনিশ-শো ত্রিশের দশকে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন উত্তর দেশের রাজা কী করেছিল?

১৩ এরপর, ১৯৩০-এর দশকে এবং বিশেষভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন উত্তর দেশের রাজা ঈশ্বরের লোকেদের উপর নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ করেছিল। নাতসিরা যখন জার্মানির উপর কর্তৃত্ব করতে শুরু করেছিল, তখন হিটলার এবং তার অনুসারীরা ঈশ্বরের লোকেদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। উত্তর দেশের রাজা প্রায় ১,৫০০ জন যিহোবার লোককে হত্যা করেছিল এবং হাজার হাজার যিহোবার লোককে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়েছিল। এই ঘটনাগুলো সম্বন্ধে দানিয়েল আগেই ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। উত্তর দেশের রাজা প্রচার কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আর এভাবে সে ‘ধর্ম্মধাম অশুচি’ করেছিল ও সেইসঙ্গে “নিত্য নৈবেদ্য নিবৃত্ত” করেছিল। (দানি. ১১:৩০খ, ৩১ক) জার্মানির নেতা হিটলার এমনকী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি জার্মানি থেকে ঈশ্বরের লোকেদের নির্মূল করে দেবেন।

উত্তর দেশের এক নতুন রাজা

১৪. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কে উত্তর দেশের রাজা হয়ে ওঠে? ব্যাখ্যা করুন।

১৪ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তর দেশের রাজা হয়ে ওঠে। জার্মানি এক সময়ে যে-বৃহৎ এলাকায় শাসন করত, তার উপর সোভিয়েত ইউনিয়ন শাসন করতে শুরু করে। নাতসি সরকারের মতোই সোভিয়েত ইউনিয়নও সেই ব্যক্তিদের উপর তাড়না নিয়ে আসে, যারা সত্য ঈশ্বরের উপাসনাকে জীবনের প্রথম স্থানে রাখে।

১৫. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর উত্তর দেশের রাজা কী করে?

১৫ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার অল্পসময় পরেই উত্তর দেশের নতুন রাজা অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়ন ঈশ্বরের লোকেদের উপর আক্রমণ করে। ঈশ্বরের লোকেদের উপর এই আক্রমণকে প্রকাশিত বাক্য ১২:১৫-১৭ পদ ‘নদীর’ সঙ্গে তুলনা করে। এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর সঙ্গে মিল রেখে উত্তর দেশের রাজা আমাদের প্রচার কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং হাজার হাজার যিহোবার লোককে সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে পাঠায়। তাই, শেষকাল শুরু হওয়ার সময় থেকেই উত্তর দেশের রাজা ক্রমাগত ঈশ্বরের লোকেদের উপর তাড়না নিয়ে এসেছে এবং সেটা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তবে, সে কখনোই ঈশ্বরের লোকেদের কাজকে থামাতে পারেনি। *

১৬. কীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন দানিয়েল ১১:৩৭-৩৯ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ করেছিল?

১৬ দানিয়েল ১১:৩৭-৩৯ পদ পড়ুন। এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতা স্বরূপ, উত্তর দেশের রাজা ‘আপন পিতৃপুরুষদের দেবগণকে মানে নাই।’ কীভাবে? সোভিয়েত ইউনিয়ন ধর্মকে উচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল আর এই কারণে সে প্রথাগত ধর্মীয় সংগঠনগুলোর ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সোভিয়েত সরকার ১৯১৮ সালের শুরু থেকেই এই আদেশ জারি করেছিল যেন স্কুলগুলো তাদের ছাত্রদের শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বর বলে কেউ নেই। কীভাবে এই উত্তর দেশের রাজা ‘দুর্গ-দেবের সম্মান করিয়াছিল’? সেভিয়েত ইউনিয়ন সৈন্য গঠন করার এবং হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছিল, যাতে সে তার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারে। এক সময়ে উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা, উভয়েই কোটি কোটি ব্যক্তিকে হত্যা করার মতো শক্তিশালী হাতিয়ার গড়ে তুলেছিল!

দুই শত্রু একত্রে কাজ করে

১৭. “ধ্বংসকারী ঘৃণার্হ বস্তু” কী?

১৭ উত্তর দেশের রাজা দক্ষিণ দেশের রাজার সঙ্গে মিলে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিল। তারা ‘ধ্বংসকারী ঘৃণার্হ বস্তু স্থাপন করিয়াছিল।’ (দানি. ১১:৩১) সেই “ঘৃণার্হ বস্তু” হল জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘ (ইউনাইটেড নেশন্‌স)।

১৮. কেন ইউনাইটেড নেশন্‌সকে “ঘৃণার্হ বস্তু” বলা হয়েছে?

১৮ ইউনাইটেড নেশন্‌সকে “ঘৃণার্হ বস্তু” বলা হয়েছে কারণ এটা এমন কিছু করার দাবি করে, যেটা একমাত্র ঈশ্বরের রাজ্য করতে পারে আর সেটা হল বিশ্বশান্তি নিয়ে আসা। আর ভবিষ্যদ্‌বাণীতে ঘৃণার্হ বস্তুকে “ধ্বংসকারী” বলা হয়েছে কারণ ইউনাইটেড নেশন্‌স সমস্ত মিথ্যা ধর্ম ধ্বংস করায় এক মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।—“শেষকালে দুই জন রাজা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে” শিরোনামের তালিকাটা দেখুন।

কেন আমাদের এই ইতিহাস জানতে হবে?

১৯-২০. (ক) কেন আমাদের এই ইতিহাস জানতে হবে? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে কোন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে?

১৯ আমাদের এই ইতিহাস জানতে হবে কারণ এটা প্রমাণ করে যে, ১৮৭০-রের দশক থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা সম্বন্ধে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই, আমরা এই আস্থা রাখতে পারি যে, ভবিষ্যদ্‌বাণীর বাকি অংশও পরিপূর্ণ হবে।

২০ উনিশ-শো একানব্বই সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছে। তাহলে, কে বর্তমানে উত্তর দেশের রাজার ভূমিকা পালন করছে? পরবর্তী প্রবন্ধে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।

গান সংখ্যা ২৪ পুরস্কারে তোমার চোখ রাখো!

^ অনু. 5 “উত্তর দেশের রাজা” এবং “দক্ষিণ দেশের রাজা” সম্বন্ধে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী যে ক্রমাগত পরিপূর্ণ হচ্ছে, আমরা সেটার প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি। কীভাবে আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি? আর কেন আমাদের এই ভবিষ্যদ্‌বাণী সম্বন্ধে ভালোভাবে বুঝতে হবে?

^ অনু. 5 আমরা রোমীয় সম্রাট অরেলিয়ানকে (২৭০-২৭৫ খ্রিস্টাব্দ) “উত্তর দেশের রাজা” অথবা রানি জেনোবিয়াকে (২৬৭-২৭২ খ্রিস্টাব্দ) “দক্ষিণ দেশের রাজা” আর বলব না কারণ সেই সময়ে সঠিক উপায়ে যিহোবার উপাসনা করার মতো কোনো সংগঠিত দল ছিল না। এটা একটা নতুন বোধগম্যতা, যা দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে মনোযোগ দিন! (ইংরেজি) বইয়ের ১৩১৪ অধ্যায়ে প্রকাশিত বোধগম্যতাকে পরিবর্তন করে।

^ অনু. 9 জার্মানির শাসক ভিল্‌হেল্ম ২য় ১৮৯০ সালে বিসমার্ককে ক্ষমতাচ্যুত করেন।

^ অনু. 10 তারা এমন কিছু করেছিল, যার ফলে সরকার দ্রুত ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, তারা রাজাকে সমর্থন করা ছেড়ে দিয়েছিল, যুদ্ধের গোপন তথ্য প্রকাশ করে দিয়েছিল এবং রাজাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।

^ অনু. 15 দানিয়েল ১১:৩৪ পদ যেমন ইঙ্গিত দেয়, অল্প সময়ের জন্য উত্তর দেশের রাজা খ্রিস্টানদের উপর তাড়না নিয়ে আসা বন্ধ করে দেবে। উদাহরণ স্বরূপ, ১৯৯১ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছিল, তখন এই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল।