সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২০

বর্তমানে “উত্তর দেশের রাজা” কে?

বর্তমানে “উত্তর দেশের রাজা” কে?

“তাহার শেষকাল উপস্থিত হইবে, কেহ তাহার সাহায্য করিবে না।”—দানি. ১১:৪৫.

গান সংখ্যা ৪৩ জেগে থাকো, নিশ্চল হও, বলবান হও

সারাংশ *

১-২. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?

আমাদের কাছে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এই বিষয়ে আরও বেশি প্রমাণ রয়েছে যে, আমরা এই বিধিব্যবস্থার শেষকালে বাস করছি। শীঘ্রই যিহোবা ও যিশু খ্রিস্ট সেইসমস্ত সরকারকে ধ্বংস করে দেবেন, যেগুলো রাজ্যের বিরোধিতা করে। সেই সময় না আসা পর্যন্ত উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা একে অপরের বিরুদ্ধে এবং ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করবে।

এই প্রবন্ধে আমরা দানিয়েল ১১:৪০–১২:১ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে বিবেচনা করব। আমরা শিখব, বর্তমানে উত্তর দেশের রাজা কে এবং আলোচনা করব যে, কেন আমরা আস্থার সঙ্গে ভবিষ্যতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হতে পারি।

উত্তর দেশের এক নতুন রাজা

৩-৪. বর্তমানে উত্তর দেশের রাজা কে? ব্যাখ্যা করুন।

উনিশ-শো একানব্বই সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সেই বৃহৎ এলাকার যিহোবার লোকেরা “অল্প সাহায্য” লাভ করে অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য স্বাধীনতা উপভোগ করে। (দানি. ১১:৩৪) এর ফলে, তারা খোলাখুলিভাবে প্রচার করতে পারে এবং শীঘ্রই সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে থাকা দেশগুলোয় প্রকাশকের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু, কয়েক বছর পর রাশিয়া এবং তার সহযোগীরা উত্তর দেশের রাজা হয়ে ওঠে। আগের প্রবন্ধে যেমন বলা হয়েছিল, উত্তর দেশের রাজা অথবা দক্ষিণ দেশের রাজা হয়ে ওঠার জন্য একটা সরকারকে অবশ্যই তিনটে চাহিদা পূরণ করতে হবে। তাকে অবশ্যই (১) ঈশ্বরের লোকেদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে হবে, (২) কাজের মাধ্যমে দেখাতে হবে যে, সে ঈশ্বর ও তাঁর লোকেদের শত্রু এবং (৩) বিরোধী রাজার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

কেন আমরা বর্তমানে রাশিয়া এবং তার সহযোগীদের উত্তর দেশের রাজা বলতে পারি, তা লক্ষ করুন। (১) তারা ঈশ্বরের লোকেদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। যেমন, তারা প্রচার কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং তাদের অধীনস্থ এলাকায় থাকা আমাদের হাজার হাজার ভাই-বোনের উপর তাড়না নিয়ে এসেছে। (২) এই কাজগুলো দেখায় যে, তারা যিহোবা এবং তাঁর লোকেদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছে। (৩) তারা দক্ষিণ দেশের রাজার অর্থাৎ অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আসুন আমরা লক্ষ করি যে, কীভাবে রাশিয়া এবং তার সহযোগীরা উত্তর দেশের রাজার ভূমিকা পালন করেছে।

উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা একে অপরের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করে

৫. দানিয়েল ১১:৪০-৪৩ পদ কীসের বিষয়ে আমাদের জানায়?

দানিয়েল ১১:৪০-৪৩ পদ পড়ুন। ভবিষ্যদ্‌বাণীর এই অংশ শেষকালের বিষয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়। এটা ব্যাখ্যা করে যে, উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা কীভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে। দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী শেষকালে দক্ষিণ দেশের রাজা উত্তর দেশের রাজাকে “ঢুসাইবে।”—দানি. ১১:৪০.

৬. দুই জন রাজা যে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে, সেটার কোন কোন প্রমাণ রয়েছে?

উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে কারণ তারা প্রত্যেকেই বিশ্বের উপর রাজত্ব করতে চায়। উদাহরণ স্বরূপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার সহযোগীরা যখন ইউরোপের বেশিরভাগ এলাকার উপর রাজত্ব করতে শুরু করেছিল, তখন কী হয়েছিল, তা বিবেচনা করুন। দক্ষিণ দেশের রাজা অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে মিলে উত্তর দেশের রাজার বিরুদ্ধে একদল সৈন্য একত্রিত করেছিল, যা ন্যাটো [নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশন] নামে পরিচিত। এ ছাড়া, উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজা সবচেয়ে শক্তিশালী সৈন্য গঠন করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। তারা আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় হওয়া যুদ্ধে একে অপরের শত্রুদের সমর্থন করার মাধ্যমেও একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া এবং তার সহযোগীরা সারা পৃথিবীতে তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে। এ ছাড়া, তারা দক্ষিণ দেশের রাজার বিরুদ্ধে সাইবার যুদ্ধেও অংশ নিয়েছে। এই রাজারা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকে যে, তাদের দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তাদের বিরোধী রাজা ক্ষতিকর কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করেছে। আর দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী উত্তর দেশের রাজা ঈশ্বরের লোকেদের উপর ক্রমাগত আক্রমণ করে যাবে।—দানি. ১১:৪১.

উত্তর দেশের রাজা ‘রত্নস্বরূপ দেশে’ প্রবেশ করে

৭. ‘রত্নস্বরূপ দেশ’ কী?

দানিয়েল ১১:৪১ পদ বলে, উত্তর দেশের রাজা ‘রত্নস্বরূপ দেশে’ প্রবেশ করবে। সেই দেশ কী? প্রাচীন কালে, আক্ষরিক ইস্রায়েল দেশকে ‘সর্ব্ব দেশের ভূষণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হত। (যিহি. ২০:৬) তবে, যে-বিষয়টা সেই দেশকে বিশেষভাবে মূল্যবান করে তুলেছিল, সেটা হল সেখানে লোকেরা যিহোবার উপাসনা করত। ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট জায়গাকে আর ‘রত্নস্বরূপ দেশ’ বলা যেতে পারে না। এই ব্যাখ্যা যুক্তিসংগত কারণ বর্তমানে যিহোবার লোকেরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে। তাই, বর্তমানে ‘রত্নস্বরূপ দেশ’ হল যিহোবার লোকেদের কার্যকলাপ আর এর অন্তর্ভুক্ত হল সভা ও ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে যিহোবার উপাসনা করা।

৮. কীভাবে উত্তর দেশের রাজা ‘রত্নস্বরূপ দেশে’ প্রবেশ করেছে?

শেষকালে উত্তর দেশের রাজা বার বার ‘রত্নস্বরূপ দেশে’ প্রবেশ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, নাতসি জার্মানি যখন উত্তর দেশের রাজার ভূমিকা পালন করেছিল, বিশেষভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে, তখন সেই রাজা ঈশ্বরের লোকেদের উপর তাড়না নিয়ে আসার এবং তাদের হত্যা করার মাধ্যমে ‘রত্নস্বরূপ দেশে’ প্রবেশ করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন উত্তর দেশের রাজার ভূমিকা পালন করেছিল, তখন সেই রাজা ঈশ্বরের লোকেদের উপর তাড়না নিয়ে আসার এবং তাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে নির্বাসনে পাঠানোর মাধ্যমে ‘রত্নস্বরূপ দেশে’ প্রবেশ করেছিল।

৯. সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কীভাবে রাশিয়া এবং তার সহযোগীরা ‘রত্নস্বরূপ দেশে’ প্রবেশ করেছে?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া এবং তার সহযোগীরাও ‘রত্নস্বরূপ দেশে’ প্রবেশ করেছে। কীভাবে? ২০১৭ সালে, বর্তমানের উত্তর দেশের রাজা যিহোবার লোকেদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং আমাদের কোনো কোনো ভাই-বোনকে কারাবদ্ধ করেছে। এই রাজা আমাদের প্রকাশনাদির উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যার মধ্যে নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেল রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই রাজা রাশিয়ায় অবস্থিত আমাদের শাখা অফিস আর সেইসঙ্গে কিংডম হল ও সম্মেলন হলগুলোও বাজেয়াপ্ত করেছে। এই কাজের পর ২০১৮ সালে পরিচালকগোষ্ঠী রাশিয়া এবং তার সহযোগীদের উত্তর দেশের রাজা হিসেবে শনাক্ত করেছে। তবে, যিহোবার লোকেরা কোনো সরকারের সঙ্গে লড়াই করে না অথবা সরকার পরিবর্তন করার চেষ্টা করে না আর তা এমনকী তারা সরকারের কাছ থেকে তাড়িত হওয়া সত্ত্বেও। এর পরিবর্তে, তারা বাইবেলের পরামর্শ অনুসরণ করে “উচ্চপদস্থ সকলের” জন্য প্রার্থনা করে, বিশেষভাবে যখন সেই উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, যা উপাসনা করার স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করতে পারে।—১ তীম. ২:১, ২.

উত্তর দেশের রাজা কি দক্ষিণ দেশের রাজাকে পরাজিত করবে?

১০. উত্তর দেশের রাজা কি দক্ষিণ দেশের রাজাকে পরাজিত করবে? ব্যাখ্যা করুন।

১০ দানিয়েল ১১:৪০-৪৫ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্‌বাণী মূলত উত্তর দেশের রাজার কার্যকলাপ সম্বন্ধে উল্লেখ করে। এর অর্থ কি এই যে, এই রাজা দক্ষিণ দেশের রাজাকে পরাজিত করবে? না। কারণ দক্ষিণ দেশের রাজা ‘জীবিত’ থাকতে থাকতেই যিহোবা ও যিশু সমস্ত মানবসরকারকে আরমাগিদোনের যুদ্ধে ধ্বংস করবেন। (প্রকা. ১৯:২০) কেন আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি? দানিয়েল ও প্রকাশিত বাক্য বইয়ে প্রাপ্ত ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো কী ইঙ্গিত দেয়, তা বিবেচনা করুন।

ঈশ্বরের রাজ্যকে একটা পাথরের সঙ্গে এবং মানব সরকারগুলোকে একটা প্রকাণ্ড প্রতিমার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আরমাগিদোনের যুদ্ধে ঈশ্বরের রাজ্য মানব সরকারগুলোকে ধ্বংস করবে (অনুচ্ছেদ ১১ দেখুন)

১১. দানিয়েল ২:৪৩-৪৫ পদের অর্থ কী? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১১ দানিয়েল ২:৪৩-৪৫ পদ পড়ুন। ভাববাদী দানিয়েল একের-পর-এক বিশ্বশক্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন, যারা ঈশ্বরের লোকেদের প্রভাবিত করেছে। এই বিশ্বশক্তিগুলো সম্বন্ধে একটা প্রকাণ্ড ধাতব প্রতিমার বিভিন্ন অংশের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। লৌহ ও মৃত্তিকার দ্বারা নির্মিত প্রতিমার চরণ সেই বিশ্বশক্তিগুলোর শেষ শক্তিকে অর্থাৎ অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে। দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণী ইঙ্গিত দেয় যে, অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির শাসনকালেই ঈশ্বরের রাজ্য মানবসরকারগুলোর উপর আঘাত নিয়ে আসবে এবং সেগুলোকে ধ্বংস করবে।

১২. পশুর সপ্তম মস্তক কী চিত্রিত করে এবং এটা জানা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১২ প্রেরিত যোহনও একের-পর-এক বিশ্বশক্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা করেন, যারা যিহোবার লোকেদের প্রভাবিত করেছে। যোহন এই সরকারগুলোকে সপ্ত মস্তকবিশিষ্ট পশু হিসেবে চিত্রিত করেন। সেই পশুর সপ্তম মস্তক অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে। এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই মস্তকের পর আর কোনো মস্তক নেই। সেই পশুর সপ্তম মস্তকের শাসনকালেই খ্রিস্ট এবং তাঁর স্বর্গীয়বাহিনী এই মস্তককে পশুর বাকি অংশের সঙ্গে ধ্বংস করবেন। *প্রকা. ১৩:১, ২; ১৭:১৩, ১৪.

নিকট ভবিষ্যতে উত্তর দেশের রাজা কী করবে?

১৩-১৪. ‘মাগোগ দেশীয় গোগ’ কে এবং কোন কারণে সে ঈশ্বরের লোকেদের উপর আক্রমণ করবে?

১৩ যিহিষ্কেলের দ্বারা লিখিত ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদের জানায় যে, উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজার ধ্বংসের আগে হয়তো কী ঘটবে। এমনটা মনে হয়, যিহিষ্কেল ৩৮:১০-২৩; দানিয়েল ২:৪৩-৪৫; ১১:৪৪–১২:১ এবং প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৩-১৬, ২১ পদে প্রাপ্ত ভবিষ্যদ্‌বাণী একই বিষয়ে ব্যাখ্যা করে। আর যদি তা সত্য হয়, তা হলে আমরা মনে করি এই বিষয়গুলো ঘটবে।

১৪ মহাক্লেশ শুরু হওয়ার কিছু সময় পর ‘জগৎ সমুদয় রাজারা’ সমস্ত জাতির জোট গঠন করবে। (প্রকা. ১৬:১৩, ১৪; ১৯:১৯) বাইবেল সমস্ত জাতির এই জোটকে ‘মাগোগ দেশীয় গোগ’ বলে। (যিহি. ৩৮:২) সমস্ত জাতির এই জোট ঈশ্বরের সমস্ত লোকের উপর আক্রমণ করবে এবং তাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। কোন কারণে সমস্ত জাতির জোট আক্রমণ করবে? এই সময় সম্বন্ধে একটা ভবিষ্যদ্‌বাণীতে প্রেরিত যোহন বলেছিলেন, ঈশ্বরের শত্রুদের উপর বড়ো বড়ো শিলা বর্ষণ হবে। এই শিলা বর্ষণ হয়তো বিচারের কড়া বার্তাকে চিত্রিত করে, যা যিহোবার লোকেরা ঘোষণা করবে। হতে পারে, এই বার্তার কারণে মাগোগ দেশীয় গোগ রেগে গিয়ে ঈশ্বরের লোকেদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তাদের উপর আক্রমণ করবে।—প্রকা. ১৬:২১.

১৫-১৬. (ক) দানিয়েল ১১:৪৪, ৪৫ পদে কোন ঘটনাগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে? (খ) উত্তর দেশের রাজা এবং মাগোগ দেশীয় গোগের অন্তর্ভুক্ত বাকি জাতিগুলোর প্রতি কী ঘটবে?

১৫ বিচারের কড়া বার্তা এবং ঈশ্বরের শত্রুদের শেষ আক্রমণ হয়তো একই ঘটনাকে নির্দেশ করে, যা দানিয়েল ১১:৪৪, ৪৫ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে। (পড়ুন।) দানিয়েল বলেন, “পূর্ব্ব ও উত্তর দেশ হইতে আগত সংবাদ” শুনে উত্তর দেশের রাজা বিহ্বল বা ব্যাকুল হবে এবং সে “মহাক্রোধে” বের হবে। উত্তর দেশের রাজা ‘অনেককে নিঃশেষে বিনষ্ট করিবার’ পরিকল্পনা করে। “অনেককে” বলতে এখানে হয়তো যিহোবার লোকেদের নির্দেশ করা হয়েছে। এখানে দানিয়েল হয়তো ঈশ্বরের সমস্ত লোকের উপরে আক্রমণ করার বিষয়ে এবং তাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য যে-চেষ্টা করা হবে, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। *

১৬ উত্তর দেশের রাজা ও সেইসঙ্গে অন্যান্য সরকার যখন ঈশ্বরের লোকেদের উপর আক্রমণ করবে, তখন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর খুবই রেগে যাবেন আর তারপর আরমাগিদোনের যুদ্ধ শুরু হবে। (প্রকা. ১৬:১৪, ১৬) সেই সময়ে উত্তর দেশের রাজা এবং মাগোগ দেশীয় গোগের অন্তর্ভুক্ত বাকি জাতিগুলোকে ধ্বংস করা হবে, “কেহ তাহার সাহায্য” করবে না।—দানি. ১১:৪৫.

আরমাগিদোনের যুদ্ধে যিশু খ্রিস্ট এবং তাঁর স্বর্গীয়বাহিনী শয়তানের দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করবে এবং ঈশ্বরের লোকেদের উদ্ধার করবে (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. দানিয়েল ১২:১ পদে উল্লেখিত “মহান্‌ অধ্যক্ষ” মীখায়েল কে এবং তিনি বর্তমানে কী করছেন আর ভবিষ্যতে কী করবেন?

১৭ দানিয়েলের বিবরণে লিপিবদ্ধ ঠিক তার পরের পদ এই বিষয়ে আরও তথ্য প্রদান করে যে, উত্তর দেশের রাজা এবং সহযোগীদের কীভাবে ধ্বংস করা হবে আর কীভাবে আমরা রক্ষা পাব। (পড়ুন, দানিয়েল ১২:১.) এই পদের অর্থ কী? আমাদের শাসনরত রাজা খ্রিস্ট যিশুর আরেকটা নাম হল মীখায়েল। ১৯১৪ সালে যখন ঈশ্বরের রাজ্য স্বর্গে স্থাপিত হয়েছিল, তখন থেকে যিশু ঈশ্বরের লোকেদের “পক্ষে দাঁড়াইয়া” আছেন। নিকট ভবিষ্যতে আরমাগিদোনের যুদ্ধে তিনি “উঠিয়া দাঁড়াইবেন” বা তাঁর শত্রুদের ধ্বংস করবেন। সেই যুদ্ধ হবে শেষ ঘটনা, যেটাকে দানিয়েল ইতিহাসের সবচেয়ে “সঙ্কটের কাল” বলে উল্লেখ করেছেন। প্রকাশিত বাক্য বইয়ে লিপিবদ্ধ যোহনের ভবিষ্যদ্‌বাণী আরমাগিদোনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগের সময়কে ‘মহাক্লেশ’ বলে উল্লেখ করেছে।—প্রকা. ৬:২; ৭:১৪.

আপনার নাম কি “পুস্তকে লিখিত” হবে?

১৮. কেন আমরা শান্ত থাকতে পারি, তা ভবিষ্যতে যা-ই ঘটুক না কেন?

১৮ দানিয়েল ও যোহন উভয়েই এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছেন যে, যিহোবা ও যিশু মহাক্লেশের সময়ে তাঁদের দাসদের রক্ষা করবেন। তাই, ভবিষ্যতে যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা শান্ত থাকতে পারি। দানিয়েল বলেছিলেন, রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হবে সেই ব্যক্তিরা, যাদের নাম “পুস্তকে লিখিত” রয়েছে। (দানি. ১২:১) সেই পুস্তকে যাতে আমাদের নাম লেখা থাকে, সেইজন্য আমাদের কী করতে হবে? আমাদের অবশ্যই এই বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ দিতে হবে যে, ঈশ্বরের মেষশাবক অর্থাৎ যিশুর উপর আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। (যোহন ১:২৯) ঈশ্বরের কাছে আমাদের জীবন উৎসর্গ করতে এবং বাপ্তিস্ম নিতে হবে। (১ পিতর ৩:২১) আর আমাদের অবশ্যই যিহোবা সম্বন্ধে শেখার জন্য অন্যদের সাহায্য করার মাধ্যমে ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করতে হবে।

১৯. আমাদের এখন কী করা উচিত এবং কেন?

১৯ এখনই সেই সময়, যখন যিহোবা এবং তাঁর অনুগত দাসদের নিয়ে গঠিত সংগঠনের প্রতি আমাদের আস্থা গড়ে তুলতে হবে। এখনই সেই সময়, যখন আমাদের ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করতে হবে। আমরা যদি তা করি, তা হলে ঈশ্বরের রাজ্য যখন উত্তর দেশের রাজা এবং দক্ষিণ দেশের রাজাকে ধ্বংস করবে, তখন আমরা রক্ষা পাব।

গান সংখ্যা ১৩২ বিজয় সংগীত

^ অনু. 5 বর্তমানে, “উত্তর দেশের রাজা” কে এবং কীভাবে তাকে ধ্বংস করা হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পারে এবং আমরা নিকট ভবিষ্যতে যে-পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হতে চলেছি, সেগুলোর উদ্দেশে প্রস্তুত হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে।

^ অনু. 12 দানিয়েল ২:৩৬-৪৫ এবং প্রকাশিত বাক্য ১৩:১, ২ পদ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনার জন্য ২০১২ সালের ১৫ জুন প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৭-১৯ পৃষ্ঠা দেখুন।