সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৩

“তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক”

“তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক”

“হে সদাপ্রভু, তোমার নাম অনন্তকালস্থায়ী।”—গীত. ১৩৫:১৩.

গান সংখ্যা ৯ আমাদের ঈশ্বর যিহোবার প্রশংসা করো!

সারাংশ *

১-২. যিহোবার সাক্ষিদের কাছে কোন বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ?

বর্তমানে, আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়গুলোর মুখোমুখি হচ্ছি আর সেগুলো হল ঈশ্বরের শাসন করার অধিকার এবং তাঁর নামের পবিত্রীকরণ। যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসি। কিন্তু, ঈশ্বরের শাসন করার অধিকার এবং তাঁর নামের পবিত্রীকরণ কি আলাদা আলাদা বিচার্য বিষয়? না।

আমরা সবাই এটা জানি যে, ঈশ্বরের নামের উপর যে-অপবাদ এসেছে, সেটাকে অবশ্যই দূর করতে হবে। আমরা এও শিখেছি যে, যিহোবার শাসন করার অধিকার বা তাঁর শাসন করার পদ্ধতিকে অবশ্যই সর্বোত্তম বলে প্রমাণিত হতে হবে। তাই, এই বিচার্য বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।

৩. যিহোবার নামের সঙ্গে কী জড়িত?

সত্যি বলতে কী, ‘যিহোবা’ * নামের সঙ্গে আমাদের ঈশ্বর সম্বন্ধে সমস্ত কিছু জড়িত রয়েছে, যার মধ্যে তাঁর শাসন করার পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাই, আমরা যখন বলি যিহোবার নামের উপর আসা সমস্ত অপবাদ দূর করা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়, তখন আমরা এও বলছি যে, যিহোবার শাসন করার পদ্ধতিকে অবশ্যই সর্বোত্তম বলে প্রমাণিত হতে হবে। যিহোবা সর্বশক্তিমান শাসক হিসেবে যেভাবে শাসন করেন, সেটার সঙ্গে তাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত।—“ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়ের সঙ্গে কী কী জড়িয়ে রয়েছে?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

৪. গীতসংহিতা ১৩৫:১৩ পদ কীভাবে ঈশ্বরের নাম সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে এবং এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে বিবেচনা করব?

যিহোবা, এই নামটা হল অদ্বিতীয়। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৩৫:১৩.) কেন ঈশ্বরের নাম এতটা গুরুত্বপূর্ণ? কীভাবে প্রথম বার ঈশ্বরের নামের উপর অপবাদ নিয়ে আসা হয়েছিল? কীভাবে ঈশ্বর তাঁর নাম পবিত্রীকৃত করবেন? আর কীভাবে আমরা তাঁর নামের পক্ষসমর্থন করতে পারি? আসুন, আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে বিবেচনা করি।

একটা নামের গুরুত্ব

৫. ঈশ্বরের নামকে পবিত্রীকৃত করার বিষয়ে কোনো কোনো ব্যক্তি হয়তো কী ভাবতে পারে?

“তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” (মথি ৬:৯) এই বিষয়টাকেই যিশু প্রার্থনায় অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। কিন্তু, যিশুর এই কথাগুলোর অর্থ কী? কোনো কিছুকে পবিত্রীকৃত করার অর্থ হল সেটাকে শুচি অথবা শুদ্ধ করে তোলা। কোনো কোনো ব্যক্তি হয়তো ভাবতে পারে, ‘যিহোবার নাম কি ইতিমধ্যেই পবিত্র, শুদ্ধ ও শুচি নয়?’ এর উত্তর পাওয়ার জন্য আমাদের জানতে হবে, একটা নামের সঙ্গে কী জড়িত রয়েছে।

৬. কী একটা নামকে মূল্যবান করে তোলে?

একটা নাম শুধুমাত্র ডাকার অথবা কাগজে লেখার জন্য ব্যবহার করা হয় না। লক্ষ করুন বাইবেল কী বলে: “প্রচুর ধন অপেক্ষা সুখ্যাতি” বা সুনাম “বরণীয়।” (হিতো. ২২:১; উপ. ৭:১) কেন একটা নামের এতটা মূল্য রয়েছে? কারণ এর সঙ্গে একজন ব্যক্তির মানসম্মান জড়িত অর্থাৎ অন্যেরা যখন সেই ব্যক্তির নাম শোনে, তখন তারা তার সম্বন্ধে কী চিন্তা করে। তাই, একটা নাম যেভাবে লেখা হয় অথবা যেভাবে উচ্চারণ করা হয়, সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আসলে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল অন্যেরা যখন সেই নাম দেখে অথবা শোনে, তখন তারা সেই ব্যক্তি সম্বন্ধে কী চিন্তা করে।

৭. অন্যেরা যাতে ঈশ্বরের বিষয়ে খারাপ কথা চিন্তা করে, সেইজন্য লোকেরা কী করে?

লোকেরা যখন যিহোবা সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলে, তখন তারা চেষ্টা করে যেন অন্যেরা যিহোবার বিষয়ে খারাপ কথা চিন্তা করে। তারা যখন এমনটা করে, তখন তারা তাঁর সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করে। প্রথম বার এদন উদ্যানে কোনো ব্যক্তি ঈশ্বর সম্বন্ধে খারাপ কিছু বলেছিল এবং লোকেদেরকেও ঈশ্বর সম্বন্ধে খারাপ কথা চিন্তা করতে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছিল। আসুন আমরা বিবেচনা করি, যেভাবে সেই ঘটনাটা ঘটেছিল, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

যেভাবে প্রথম বার যিহোবার নামের উপর অপবাদ নিয়ে আসা হয়েছিল

৮. আদম ও হবা কী জানতেন এবং কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

আদম ও হবা জানতেন যে, ঈশ্বরের নাম হল যিহোবা আর তারা তাঁর সম্বন্ধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতেন। উদাহরণ স্বরূপ, তারা জানতেন যে, তিনি হলেন তাদের সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ তিনি তাদের জীবন দিয়েছেন, থাকার জন্য সুন্দর জায়গা দিয়েছেন এবং উপযুক্ত সাথি দিয়েছেন। (আদি. ১:২৬-২৮; ২:১৮) কিন্তু, তারা কি সেই সমস্ত কিছু নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করবেন, যেগুলো যিহোবা তাদের জন্য করেছিলেন? তারা কি যিহোবার প্রতি তাদের প্রেম ও উপলব্ধিবোধ ক্রমাগত বৃদ্ধি করবেন? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সেই সময়ে স্পষ্ট হয়েছিল, যখন ঈশ্বরের শত্রু তাদের উপর পরীক্ষা নিয়ে এসেছিল।

৯. আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭ এবং ৩:১-৫ পদ অনুযায়ী যিহোবা প্রথম মানব দম্পতিকে কী বলেছিলেন এবং কীভাবে শয়তান সত্যকে বিকৃত করেছিল?

আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭ এবং ৩:১-৫ পদ পড়ুন। শয়তান একটা সাপকে ব্যবহার করে কথা বলার মাধ্যমে হবাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল: “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” শয়তানের এই প্রশ্নের মধ্যে ঈশ্বর সম্বন্ধে একটা মিথ্যা কথা লুকিয়ে ছিল এবং হবা ঈশ্বর সম্বন্ধে নেতিবাচক চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু, ঈশ্বর আসলে তাদের বলেছিলেন যে, তারা কেবলমাত্র একটা গাছ ছাড়া সব গাছের ফল খেতে পারেন। আদম ও হবা বিভিন্ন ধরনের গাছের ফল খেতে পারতেন। (আদি. ২:৯) যিহোবা সত্যিই একজন উদার ঈশ্বর। কিন্তু, ঈশ্বর আদম ও হবাকে নির্দিষ্ট একটা গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। তাই, শয়তানের এই প্রশ্নটা সত্যকে বিকৃত করেছিল। শয়তান বিষয়টাকে এমনভাবে তুলে ধরেছিল যেন ঈশ্বর একজন উদার ব্যক্তি নন। হবা হয়তো চিন্তা করেছিলেন, ‘ঈশ্বর কি আমাকে কোনো ভালো বিষয় থেকে বঞ্চিত করছেন?’

১০. কীভাবে শয়তান সরাসরি ঈশ্বরের নামের উপর অপবাদ নিয়ে এসেছিল এবং এর পরিণতি কী হয়েছিল?

১০ হবা তখনও যিহোবাকে নিজের শাসক হিসেবে দেখেছিলেন। ঈশ্বর স্পষ্টভাবে যা বলেছিলেন, তা হবা শয়তানকে জানিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে, সেই গাছটা এমনকী তাদের স্পর্শও করা উচিত নয়। তিনি ঈশ্বরের এই সতর্কবাণী সম্বন্ধে জানতেন যে, তিনি যদি ঈশ্বরের অবাধ্য হন, তা হলে তিনি মারা যাবেন। কিন্তু, শয়তান বলেছিল: “কোন ক্রমে মরিবে না।” (আদি. ৩:২-৪) শয়তান কেবলমাত্র এটাই বলেনি যে, যিহোবা মিথ্যা কথা বলেছেন। হবার কাছে যিহোবাকে মিথ্যাবাদী বলার মাধ্যমে সে সরাসরি তাঁর নামের উপর অপবাদ নিয়ে এসেছিল আর শয়তান এভাবে দিয়াবল অর্থাৎ অপবাদক হয়ে উঠেছিল। হবা সম্পূর্ণরূপে প্রবঞ্চিতা হয়েছিলেন; তিনি শয়তানকে বিশ্বাস করেছিলেন। (১ তীম. ২:১৪) তিনি যিহোবার চেয়ে শয়তানের উপর বেশি আস্থা রেখেছিলেন। এই বিষয়টা হবাকে সহজেই সবচেয়ে খারাপ সিদ্ধান্ত নিতে পরিচালিত করেছিল। তিনি যিহোবার অবাধ্য হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যিহোবা তাকে যে-ফলটা খেতে নিষেধ করেছিলেন, তিনি সেটা খেতে শুরু করেছিলেন। পরে, ফলের বাকি অংশ আদমকে দিয়েছিলেন।—আদি. ৩:৬.

১১. আমাদের আদি পিতা-মাতা কী করতে পারতেন কিন্তু তারা কী করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?

১১ একটু থেমে চিন্তা করুন, শয়তানকে হবার কী বলা উচিত ছিল। কল্পনা করুন, তিনি হয়তো এইরকম বলতে পারতেন: “তুমি কে, আমি তোমাকে চিনি না কিন্তু আমি আমার পিতা যিহোবাকে চিনি এবং তাঁকে ভালোবাসি আর তাঁর উপর আমার আস্থা রয়েছে। তিনি আমাকে ও আমার স্বামীকে সমস্ত কিছু দিয়েছেন। তোমাকে সাহস কে দিয়েছে, যিহোবা সম্বন্ধে খারাপ কথা বলার? এখান থেকে চলে যাও!” যিহোবা তাঁর প্রিয় মেয়েকে তাঁর হয়ে কথা বলতে দেখে কতই-না খুশি হতেন! (হিতো. ২৭:১১) কিন্তু, হবা যিহোবার প্রতি অনুগত প্রেম দেখাননি, এমনকী আদমও তা দেখাননি। যিহোবার প্রতি এই ধরনের প্রেমের অভাব থাকায় আদম ও হবা সেইসময়ে ঈশ্বরের নামের পক্ষসমর্থন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, যখন সেই নামের উপর অপবাদ নিয়ে আসা হয়েছিল।

১২. কীভাবে শয়তান হবার মনে সন্দেহের বীজ বপন করেছিল এবং আদম ও হবা কী করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?

১২ আমরা যেমন দেখেছি, শয়তান হবার মনে সন্দেহের বীজ বপন করার চেষ্টা করেছিল। শয়তান হবাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, যিহোবা একজন উত্তম পিতা নন আর এভাবে সে যিহোবার সুনাম নষ্ট করতে শুরু করেছিল। এরপর, আদম ও হবা যিহোবার নামের উপর আসা অপবাদকে দূর করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তারা সহজেই শয়তানের কথা শুনতে এবং যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পরিচালিত হয়েছিলেন। বর্তমানে, শয়তান একই রকমের চাতুরী ব্যবহার করে। সে যিহোবার নামের উপর অপবাদ নিয়ে আসার মাধ্যমে তাঁর সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করে। যে-লোকেরা শয়তানের মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করে, তার সহজেই যিহোবার ন্যায্য শাসন প্রত্যাখ্যান করার জন্য প্ররোচিত হয়।

যিহোবা তাঁর নামকে পবিত্রীকৃত করেন

১৩. কীভাবে যিহিষ্কেল ৩৬:২৩ পদ বাইবেলের মূল বার্তাকে তুলে ধরে?

১৩ যিহোবা কি এইরকম অপবাদের বিরুদ্ধে কোনো কিছু না করে, তা চুপচাপ মেনে নেন? না, তিনি তা করেন না! সমগ্র বাইবেল এটা দেখায় যে, এদন উদ্যানে যিহোবার বিরুদ্ধে বলা কথাগুলো ভুল বলে প্রমাণিত করার জন্য তিনি কী কী করেছেন। (আদি. ৩:১৫) সত্যি বলতে কী, আমরা হয়তো বাইবেলের মূল বার্তাকে এভাবে সংক্ষেপে বলতে পারি: যিহোবা তাঁর পুত্রের দ্বারা শাসিত রাজ্যের মাধ্যমে তাঁর নাম পবিত্রীকৃত করেন এবং পৃথিবীতে ধার্মিকতা ও শান্তি পুনর্স্থাপন করেন। বাইবেলে সেই তথ্যগুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কীভাবে যিহোবা তাঁর নামকে পবিত্রীকৃত করেন।—পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৬:২৩.

১৪. এদনে বিদ্রোহের প্রতি যিহোবা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, সেটা কীভাবে তাঁর নামকে পবিত্রীকৃত করেছিল?

১৪ যিহোবা যাতে তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করতে না পারেন, সেইজন্য শয়তান যথাসাধ্য করেছে। কিন্তু, শয়তান বার বার ব্যর্থ হয়েছে। বাইবেলের বিবরণ দেখায় যে, কীভাবে যিহোবা পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং এটি প্রমাণ করে, যিহোবা ঈশ্বরের মতো কোনো ব্যক্তি নেই। সত্যি, শয়তানের বিদ্রোহ এবং তার সমর্থনকারীদের কারণে যিহোবা অনেক দুঃখিত হয়েছেন। (গীত. ৭৮:৪০) তারপরও, তিনি প্রজ্ঞা, ধৈর্য ও ন্যায়ের সঙ্গে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোকাবিলা করেছেন। এ ছাড়া, তিনি অগণিত উপায়ে তাঁর অসীম শক্তি প্রদর্শন করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল তিনি তাঁর সমস্ত কাজে প্রেম দেখিয়েছেন। (১ যোহন ৪:৮) যিহোবা কখনো তাঁর নাম পবিত্রীকৃত করার কাজ বন্ধ করেননি।

শয়তান হবাকে যিহোবা সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলেছিল এবং শত শত বছর ধরে দিয়াবল ঈশ্বরের উপর অপবাদ নিয়ে আসছে (৯-১০, ১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৫. কীভাবে শয়তান আজও ঈশ্বরের নামের উপর অপবাদ নিয়ে আসে এবং এর পরিণতি কী হয়?

১৫ শয়তান আজও ঈশ্বরের নামের উপর অপবাদ দিচ্ছে। ঈশ্বর যে শক্তিশালী, ন্যায়পরায়ণ, বিজ্ঞ ও প্রেমময়, সেই বিষয়ে সে লোকেদের মনে সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে তাদের বোকা বানাচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ, শয়তান লোকেদের এটা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে, যিহোবা সৃষ্টিকর্তা নন। আর ঈশ্বর যে অস্তিত্বে রয়েছেন, লোকেরা যদি এটা মেনেও নেয়, তারপরও শয়তান তাদের এটা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে যে, ঈশ্বরের মানগুলো অন্যায্য এবং আমাদের পদে পদে বাধা দেয়। সে এমনকী লোকেদের শিক্ষা দেয়, যিহোবা হলেন এমন একজন নিষ্ঠুর ও নির্মম ব্যক্তি, যিনি লোকেদের অগ্নিময় নরকে পুড়িয়ে যাতনা দেন। তারা যখন এই ধরনের মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করে, তখন তারা খুব সম্ভবত পরবর্তী পদক্ষেপটা নিতে পরিচালিত হয় অর্থাৎ তারা যিহোবার ন্যায্য শাসনকে প্রত্যাখ্যান করে। যিহোবা শয়তানকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস না করা পর্যন্ত শয়তান ক্রমাগত যিহোবার বিরুদ্ধে অপবাদ নিয়ে আসবে এবং আপনাকেও প্ররোচিত করার চেষ্টা করবে যেন আপনিও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন। সে কি সফল হবে?

বিচার্য বিষয়ে আপনার ভূমিকা

১৬. আপনি এমন কী করতে পারেন, যা আদম ও হবা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?

১৬ যিহোবা অসিদ্ধ মানুষদের তাঁর নাম পবিত্রীকৃত করার কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেন। তাই, আদম ও হবা যা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, আপনি তা করতে পারেন। আমরা এমন এক জগতে বাস করি, যে-জগতের লোকেরা যিহোবার নামের উপর অপবাদ ও নিন্দা নিয়ে আসে। তারপরও আপনার কাছে সত্যের পক্ষ সমর্থন করার এবং এই বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ রয়েছে যে, যিহোবা হলেন পবিত্র, ন্যায্য, উত্তম ও প্রেমময়। (যিশা. ২৯:২৩) আপনি তাঁর শাসনকে সমর্থন করতে পারেন। আপনি লোকেদের এটা বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারেন যে, একমাত্র যিহোবার শাসনই সম্পূর্ণরূপে ন্যায্য, একমাত্র এটাই সমস্ত সৃষ্টির উপর শান্তি ও আনন্দ নিয়ে আসবে।—গীত. ৩৭:৯, ৩৭; ১৪৬:৫, ৬, ১০.

১৭. কীভাবে যিশু তাঁর পিতার নাম সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন?

১৭ আমরা যখন যিহোবার নামের পক্ষসমর্থন করি, তখন আমরা যিশু খ্রিস্টের উদাহরণ অনুসরণ করি। (যোহন ১৭:২৬) যিশু তাঁর পিতার নাম সম্বন্ধে লোকেদের জানানোর জন্য কেবলমাত্র সেটা ব্যবহারই করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি তাঁর পিতার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধেও শিক্ষা দিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু সেই ফরীশীদের ভুল বলে প্রমাণিত করেছিলেন, যারা যিহোবাকে এমন একজন রূঢ়, কঠোর ও করুণাহীন ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছিল, যাঁর নিকটবর্তী হওয়া সম্ভব নয়। যিশু লোকেদের এটা দেখতে সাহায্য করেছিলেন যে, তাঁর পিতা হলেন একজন যুক্তিবাদী, ধৈর্যশীল, প্রেমময় ও ক্ষমাবান ব্যক্তি। এ ছাড়া, যিশু তাঁর দৈনন্দিন জীবনে তাঁর পিতার গুণাবলি নিখুঁতভাবে অনুকরণ করার মাধ্যমেও লোকেদের যিহোবাকে দেখতে সাহায্য করেছিলেন।—যোহন ১৪:৯.

১৮. কীভাবে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে বলা মিথ্যা কথা ও অপবাদগুলো দূর করতে পারি?

১৮ আমরা যিহোবা সম্বন্ধে যা-কিছু জানি, যিশুর মতো আমরাও সেগুলো অন্যদের জানাতে পারি অর্থাৎ যিহোবা যে একজন প্রেমময় ও সদয় ঈশ্বর, তা অন্যদের শেখাতে পারি। আমরা যখন এমনটা করি, তখন আমরা যিহোবা সম্বন্ধে বলা মিথ্যা কথা ও অপবাদগুলো দূর করি। আমরা যিহোবার নামকে পবিত্রীকৃত করি অর্থাৎ লোকেদের হৃদয়ে ও মনে তাঁর নাম পবিত্রীকৃত করি। এ ছাড়া, আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি। আমরা অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তা করা সম্ভব। (ইফি. ৫:১, ২) আমরা যখন আমাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে লোকেদের দেখাই যে, যিহোবা আসলে কেমন, তখন আমরা তাঁর নামকে পবিত্রীকৃত করার কাজে সাহায্য করি। আমরা লোকেদের ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য জানতে সাহায্য করার মাধ্যমে যিহোবার নামকে পবিত্রীকৃত করি। এ ছাড়া, আমরা এটা প্রমাণ করি যে, অসিদ্ধ মানুষেরাও “সিদ্ধতা [“বিশ্বস্ততা,” NW]” বজায় রাখতে পারে।—ইয়োব ২৭:৫.

আমরা আমাদের বাইবেল ছাত্রদের সাহায্য করতে চাই, যাতে তারা যিহোবার সদয় ও প্রেমময় ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে জানতে পারে (১৮-১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৯. আমাদের শিক্ষাদানের প্রধান উদ্দেশ্য যা হওয়া উচিত, তা যিশাইয় ৬৩:৭ পদ কীভাবে আমাদের দেখতে সাহায্য করে?

১৯ আমরা আরেকটা যে-মূল্যবান শিক্ষা কাজে লাগাতে পারি, তা নিয়ে বিবেচনা করুন। আমরা যখন অন্যদের বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিই, তখন আমরা এই বিষয়টার উপর জোর দিই যে, যিহোবার নিখিল বিশ্বের উপর শাসন করার অধিকার রয়েছে আর এই বিষয়টাই সঠিক। তবে, ঈশ্বরের আইন সম্বন্ধে লোকেদের শিক্ষা দেওয়া যদিও গুরুত্বপূর্ণ, তারপরও আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল অন্যদের সাহায্য করা, যাতে তারা আমাদের পিতা যিহোবাকে ভালোবাসতে এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকতে পারে। এমনটা করার জন্য আমাদের যিহোবার হৃদয়গ্রাহী গুণগুলো সম্বন্ধে তুলে ধরতে হবে এবং যিহোবা আসলে কেমন ব্যক্তি, সেই বিষয়টার উপর জোর দিতে হবে। (পড়ুন, যিশাইয় ৬৩:৭.) আমরা যখন এভাবে শিক্ষা দেব, তখন আমরা অন্যদের যিহোবাকে ভালোবাসতে এবং তাঁর বাধ্য হতে সাহায্য করব আর এর ফলে তারা নিজেরাই যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে চাইবে।

২০. পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?

২০ আমাদের আচরণ ও শিক্ষা যে লোকেদের যিহোবার নাম সম্বন্ধে সঠিকভাবে চিন্তা করতে এবং তাঁর নিকটবর্তী হতে সাহায্য করবে, সেটা আমরা কীভাবে নিশ্চিত করতে পারি? পরবর্তী প্রবন্ধে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।

গান সংখ্যা ১ যিহোবার গুণাবলি

^ অনু. 5 মানুষ ও স্বর্গদূতেরা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়ের মুখোমুখি হচ্ছে? কী এই বিচার্য বিষয়টাকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে এবং এর সঙ্গে আমরা কীভাবে জড়িত? এই প্রশ্নগুলো এবং এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর বোঝা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।

^ অনু. 3 এই প্রবন্ধে এবং পরবর্তী প্রবন্ধে যে-শাস্ত্রপদগুলোতে সদাপ্রভু শব্দটা এসেছে, সেখানে মূল ভাষার বাইবেল অনুযায়ী যিহোবা শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে।

^ অনু. 62 ছবি সম্বন্ধে: দিয়াবল হবাকে বলেছিল যে, ঈশ্বর একজন মিথ্যাবাদী। আর এভাবে সে ঈশ্বরের নামের উপর অপবাদ নিয়ে এসেছিল। শত শত বছর ধরে, শয়তান বিভিন্ন মিথ্যা ধারণা তুলে ধরেছে, যেমন সে শিখিয়েছে, ঈশ্বর হলেন নিষ্ঠুর এবং তিনি মানুষ সৃষ্টি করেননি।

^ অনু. 64 ছবি সম্বন্ধে: বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার সময় একজন ভাই ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বের উপর জোর দিচ্ছেন।