সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৯

“যখন আমি দুর্ব্বল, তখনই বলবান্‌”

“যখন আমি দুর্ব্বল, তখনই বলবান্‌”

“খ্রীষ্টের নিমিত্ত নানা দুর্ব্বলতা, অপমান, অনাটন, তাড়না, সঙ্কট ঘটিলে আমি প্রীত হই।”—২ করি. ১২:১০.

গান সংখ্যা ৬০ তিনি তোমায় সবল করবেন

সারাংশ *

১. প্রেরিত পৌল খোলাখুলিভাবে কী স্বীকার করেছিলেন?

প্রেরিত পৌল খোলাখুলিভাবে এটা স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি কখনো কখনো নিজেকে দুর্বল বলে মনে করতেন। তিনি স্বীকার করেছিলেন, তার শরীর “ক্ষীণ” বা দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল, যা-সঠিক, তা করার জন্য তাকে লড়াই করতে হচ্ছিল এবং তিনি যেভাবে আশা করেছিলেন, যিহোবা সেভাবে সবসময় তার প্রার্থনার উত্তর দিচ্ছিলেন না। (২ করি. ৪:১৬; ১২:৭-৯; রোমীয় ৭:২১-২৩) এ ছাড়া, পৌল এটা স্বীকার করেছিলেন যে, তার বিরোধীরা তাকে দুর্বল হিসেবে দেখে। * কিন্তু, তিনি অন্যদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অথবা ব্যক্তিগত দুর্বলতার কারণে নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করেননি।—২ করি. ১০:১০-১২, ১৭, ১৮.

২. দ্বিতীয় করিন্থীয় ১২:৯, ১০ পদ অনুযায়ী পৌল কোন মূল্যবান শিক্ষা লাভ করেছিলেন?

প্রেরিত পৌল একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করেছিলেন আর সেটা হল একজন ব্যক্তি নিজেকে দুর্বল বলে মনে করলেও, তিনি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১২:৯, ১০.) যিহোবা পৌলকে বলেছিলেন, তাঁর শক্তি “দুর্ব্বলতায় সিদ্ধি পায়” অর্থাৎ পৌলের যে-পরিমাণ শক্তির অভাব ছিল, তা যিহোবা পূরণ করবেন। প্রথমে আসুন আমরা দেখি যে, বিরোধীরা যখন আমাদের অপমান করে, তখন কেন আমাদের হতাশ হওয়া উচিত নয়।

‘অপমান ঘটিলে প্রীত হউন’

৩. কেন আমরা অপমানিত হলে আনন্দিত হতে পারি?

আমরা কেউই অপমানিত হতে পছন্দ করি না। তবে, আমাদের শত্রুরা যদি আমাদের অপমানিত করে এবং আমরা যদি তাদের কথা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করি, তা হলে আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে যেতে পারি। (হিতো. ২৪:১০) বিরোধীরা যখন আমাদের অপমান করে, তখন আমাদের সেটাকে কীভাবে দেখা উচিত? পৌলের মতো আমরাও ‘অপমান ঘটিলে প্রীত’ বা আনন্দিত ‘হইতে’ পারি। (২ করি. ১২:১০) কেন? কারণ বিরোধিতা ও অপমান ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা খ্রিস্টের প্রকৃত শিষ্য। (১ পিতর ৪:১৪) যিশু বলেছিলেন, তাঁর অনুসারীরা তাড়িত হবে। (যোহন ১৫:১৮-২০) তাঁর কথাগুলো প্রথম শতাব্দীতে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। সেই সময়ে যারা গ্রিক সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, তারা খ্রিস্টানদের বোকা ও দুর্বল ব্যক্তি হিসেবে দেখেছিল। আর যিহুদিরা খ্রিস্টানদের “অশিক্ষিত সামান্য লোক” হিসেবে দেখেছিল, যেভাবে তারা প্রেরিত পিতর ও যোহনকে দেখত। (প্রেরিত ৪:১৩) খ্রিস্টানদের দেখে দুর্বল বলে মনে হতো; তাদের কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা অথবা সেনাবাহিনী ছিল না আর লোকেরা তাদের সম্মান করত না।

৪. বিরোধীদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি প্রাথমিক খ্রিস্টানরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

বিরোধীদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সেই প্রাথমিক খ্রিস্টানরা কি হাল ছেড়ে দিয়েছিল? না। উদাহরণ স্বরূপ, প্রেরিত পিতর ও যোহন যিশুকে অনুসরণ করার এবং তাঁর শিক্ষাগুলো অন্যদের শেখানোর কারণে তাড়িত হওয়াকে সম্মানের এক বিষয় হিসেবে দেখেছিলেন। (প্রেরিত ৪:১৮-২১; ৫:২৭-২৯, ৪০-৪২) শিষ্যদের কাছে লজ্জিত হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। যদিও সমাজের লোকেরা সেই প্রাথমিক খ্রিস্টানদের প্রতি সম্মান দেখায়নি, তারপরও খ্রিস্টানরা অন্যদের সাহায্য করার জন্য অনেক কিছু করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, সেই খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা অনুপ্রাণিত হয়ে বইগুলো লিখেছিল, সেগুলো লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে ক্রমাগত সাহায্য ও আশা প্রদান করেছে। আর তারা যে-রাজ্যের বিষয়ে ঘোষণা করেছিল, সেটা বর্তমানে স্বর্গে শাসন করছে এবং শীঘ্রই সমস্ত মানবজাতির উপর শাসন করবে। (মথি ২৪:১৪) সেই খ্রিস্টানদের উপর যে-শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকার তাড়না নিয়ে এসেছিল, সেই সরকার ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গিয়েছে কিন্তু সেই অনুগত খ্রিস্টানরা বর্তমানে স্বর্গে শাসন করছে। যদিও সেই বিরোধীরা মারা গিয়েছে, কিন্তু তাদের যদি কখনো পুনরুত্থিত করা হয়, তা হলে তাদের সেই খ্রিস্টানদের দ্বারা শাসিত সরকারের বশীভূত হতে হবে, যাদের তারা ঘৃণা করত।—প্রকা. ৫:১০.

৫. যোহন ১৫:১৯ পদ অনুযায়ী কেন যিহোবার লোকেদের নীচু চোখে দেখা হয়?

যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আজও আমাদের কখনো কখনো নীচু চোখে দেখা হয় এবং বোকা ও দুর্বল বলে উপহাস করা হয়। কেন? কারণ আমরা আমাদের চারপাশের লোকেদের মতো মনোভাব পোষণ করি না। আমরা নম্রতা, মৃদুতা ও বাধ্যতা দেখানোর চেষ্টা করি। অন্যদিকে এই জগৎ গর্বিত, উদ্ধত ও বিদ্রোহী লোকেদের প্রশংসা করে। এ ছাড়া, আমরা রাজনীতিতে অংশ নিই না এবং আমরা কোনো দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দিই না। আমরা আজকের জগতের লোকেদের চেয়ে আলাদা, তাই তারা অন্যদের তুলনায় আমাদের নিকৃষ্ট বলে মনে করে।—পড়ুন, যোহন ১৫:১৯; রোমীয় ১২:২.

৬. যিহোবা তাঁর লোকেদের কোন বড়ো বড়ো কাজ করার জন্য সাহায্য করছেন?

জগতের লোকেরা যদিও আমাদের দুর্বল বলে মনে করে, কিন্তু যিহোবা আমাদের বড়ো বড়ো কাজ করার জন্য ব্যবহার করছেন। তিনি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো প্রচার অভিযান সম্পাদন করছেন। বর্তমানে তাঁর দাসেরা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অনুবাদিত ও বিতরিত পত্রিকা প্রকাশ করছে এবং বাইবেল ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে জীবনে উন্নতি করতে সাহায্য করছে। যিহোবা এটাকে সম্ভবপর করে তুলেছেন। তিনি এই বৃহৎ কাজ সম্পাদন করার জন্য এমন একদল লোককে ব্যবহার করছেন, যাদেরকে জগতের লোকেরা দুর্বল হিসেবে দেখে থাকে। কিন্তু, ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? যিহোবা কি আমাদের শক্তিশালী হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারেন? যদি পারেন, তা হলে তাঁর কাছ থেকে সাহায্য লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে? এখন আসুন, আমরা প্রেরিত পৌলের উদাহরণ থেকে যে-তিনটে নির্দিষ্ট বিষয় শিখতে পারি, সেগুলো নিয়ে বিবেচনা করি।

আপনার নিজের ক্ষমতার উপর নির্ভর করবেন না

৭. পৌলের উদাহরণ থেকে আমরা একটা কোন শিক্ষা লাভ করি?

আমরা পৌলের উদাহরণ থেকে একটা যে-শিক্ষা লাভ করতে পারি, সেটা হল: যিহোবার সেবা করার সময়ে আমরা যেন নিজেদের ক্ষমতা অথবা যোগ্যতার উপর নির্ভর না করি। মানব দৃষ্টিকোণ থেকে পৌলের কাছে গর্বিত হওয়ার এবং নিজের উপর নির্ভর করার মতো কারণ ছিল। তিনি রোমীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী তার্ষ নগরে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন। তার্ষ এক সমৃদ্ধিশালী নগর ছিল এবং সেখানে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। পৌল উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলেন। তিনি গমলীয়েলের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেছিলেন, যিনি সেই সময়ের সবচেয়ে সম্মাননীয় যিহুদি নেতাদের মধ্যে একজন ছিলেন। (প্রেরিত ৫:৩৪; ২২:৩) আর পৌল একসময়ে যিহুদি সমাজে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি . . . আমার স্বজাতীয় সমবয়স্ক অনেক লোক অপেক্ষা যিহূদী-ধর্ম্মে উত্তর উত্তর অগ্রসর হইতেছিলাম।” (গালা. ১:১৩, ১৪; প্রেরিত ২৬:৪) কিন্তু, পৌল নিজের উপর নির্ভর করেননি।

পৌল খ্রিস্টকে অনুসরণ করার বিশেষ সুযোগের তুলনায় যে-বিষয়গুলোর দ্বারা জগতের দৃষ্টিতে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে পারতেন, সেগুলোকে “মলবৎ” হিসেবে দেখেছিলেন (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৮. ফিলিপীয় ৩:৮ পদ অনুযায়ী পৌল যে-বিষয়গুলোকে পরিত্যাগ করেছিলেন, সেগুলোকে কীভাবে দেখেছিলেন এবং কেন তিনি ‘দুর্ব্বলতায় প্রীত’ হয়েছিলেন?

পৌল আনন্দের সঙ্গে সেই সমস্ত কিছু পরিত্যাগ করেছিলেন, যেগুলো জগতের দৃষ্টিতে তাকে ক্ষমতাশালী করে তুলেছিল। তিনি এটা উপলব্ধি করেছিলেন যে, এই বিষয়গুলো আসলে ‘মলবতের’ মতো ছিল। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৩:৮.) খ্রিস্টের অনুসারী হয়ে ওঠার কারণে পৌলকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তার নিজের জাতির লোকেরাই তাকে ঘৃণা করেছিল। (প্রেরিত ২৩:১২-১৪) আর তিনি একজন রোমীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও রোমীয়রা তাকে মারধর করেছিল এবং কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল। (প্রেরিত ১৬:১৯-২৪, ৩৭) এ ছাড়া, পৌল এটা উপলব্ধি করেছিলেন যে, তিনি অসিদ্ধ এবং যা সঠিক, তা করা তার জন্য অনেক কঠিন ছিল। (রোমীয় ৭:২১-২৫) কিন্তু, তিনি তার বিরোধীদের অথবা নিজের ভুলগুলোর কারণে খ্রিস্টকে অনুসরণ করা বন্ধ করার পরিবর্তে, ‘দুর্ব্বলতায় প্রীত’ বা আনন্দিত হয়েছিলেন। কেন? কারণ তিনি যখন দুর্বল ছিলেন, তখন তিনি ঈশ্বরের শক্তিকে নিজের জীবনে কাজ করতে দেখেছিলেন।—২ করি. ৪:৭; ১২:১০.

৯. যে-বিষয়গুলোর কারণে আমরা নিজেদের দুর্বল বলে মনে করি, সেগুলোকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

আমরা যদি যিহোবার কাছে থেকে শক্তি লাভ করতে চাই, তা হলে আমরা যেন নিজেদের শারীরিক ক্ষমতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সাংস্কৃতিক পটভূমি অথবা ধনসম্পদের উপর নির্ভর না করি। এই বিষয়গুলোর জন্য আমরা যিহোবার কাছে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠি না। সত্যি বলতে কী, ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে “মাংস অনুসারে জ্ঞানবান্‌ অনেক নাই, পরাক্রমী অনেক নাই, উচ্চ পদস্থ অনেক নাই।” এর পরিবর্তে, যিহোবা তাঁর কাজে ব্যবহার করার জন্য “জগতের দুর্ব্বল বিষয় সকল” বাছাই করেন। (১ করি. ১:২৬, ২৭) তাই, এই অনুচ্ছেদের শুরুতে উল্লেখিত বিষয়গুলো যদি আপনার কাছে না থাকে, তারপরও আপনি যিহোবার সেবা করতে পারেন। আপনি নিজের পরিস্থিতিকে এক ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারেন। কীভাবে আপনি তা করতে পারেন? মনে রাখবেন, আপনার কাছে যখন সেই বিষয়গুলো থাকে না, যেগুলো জগতের দৃষ্টিতে একজন ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে, তখন আপনি দেখতে পাবেন যে, কীভাবে যিহোবা আপনাকে শক্তি প্রদান করছেন। উদাহরণ স্বরূপ, লোকেরা যখন আপনার বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করে আর আপনি ভয় পেয়ে যান, তখন আপনি নিজের বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলার জন্য সাহস চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। (ইফি. ৬:১৯, ২০) আপনি যদি কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগের সঙ্গে লড়াই করছেন, তা হলে যিহোবার কাছে শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করুন, যাতে আপনি তাঁর সেবায় যতটা সম্ভব ব্যস্ত থাকতে পারেন। প্রতি বার আপনি যখন দেখবেন যে, কীভাবে যিহোবা আপনাকে সাহায্য করছেন, তখন আপনার বিশ্বাস আরও বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবেন।

বাইবেলে পাওয়া উদাহরণগুলো থেকে শিখুন

১০. কেন আমাদের বাইবেলে বর্ণিত বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের উদাহরণ নিয়ে অধ্যয়ন করা উচিত, যাদের মধ্যে কারো কারো সম্বন্ধে ইব্রীয় ১১:৩২-৩৪ পদে উল্লেখ করা হয়েছে?

১০ পৌল পবিত্র শাস্ত্রের একজন উত্তম ছাত্র ছিলেন। তিনি অনেক কিছু জানতেন কিন্তু তারপরও তিনি ঈশ্বরের বাক্যে লিপিবদ্ধ ব্যক্তিদের উদাহরণ থেকে বিভিন্ন বিষয় শিখেছিলেন। ইব্রীয় খ্রিস্টানদের উদ্দেশে চিঠি লেখার সময়ে পৌল তাদের সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের উদাহরণগুলো নিয়ে চিন্তা করতে বলেছিলেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৩২-৩৪.) সেই ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করুন আর তিনি হলেন রাজা দায়ূদ। তাকে কেবল নিজের শত্রুদের কাছ থেকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তার প্রাক্তন বন্ধুদের কাছ থেকেও বিরোধিতা সহ্য করতে হয়েছিল। আমরা যখন দায়ূদের উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করব, তখন আমরা এটা বুঝতে পারব যে, কেন দায়ূদের বিষয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে পৌল হয়তো সাহায্য লাভ করেছিলেন।

দায়ূদ যদিও অল্পবয়সি ছিলেন এবং গলিয়াতের তুলনায় শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন, তারপরও তিনি গলিয়াতের সঙ্গে লড়াই করতে ভয় পাননি। দায়ূদ যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন কারণ তিনি জানতেন, গলিয়াৎকে পরাজিত করার ক্ষমতা যিহোবা তাকে দেবেন এবং তিনি তা দিয়েছিলেন (অনুচ্ছেদ ১১ দেখুন)

১১. কেন দায়ূদকে দেখে দুর্বল বলে মনে হয়েছিল? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১১ শারীরিকভাবে বলিষ্ঠ যোদ্ধা গলিয়াৎ দায়ূদকে দুর্বল হিসেবে দেখেছিলেন। তিনি দায়ূদকে দেখে “তুচ্ছজ্ঞান” করেছিলেন। শত হলেও গলিয়াৎ আকারে বড়ো, অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত এবং যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষিত ছিলেন। অন্যদিকে, দায়ূদ কেবলমাত্র একজন অনভিজ্ঞ বালক ছিলেন, যাকে দেখে মনে হয়েছিল, তিনি যুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট সুসজ্জিত নন। কিন্তু, দায়ূদ দুর্বল নয় বরং শক্তিশালী ছিলেন। তিনি শক্তির জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন এবং তার শত্রুকে পরাজিত করেছিলেন।—১ শমূ. ১৭:৪১-৪৫, ৫০.

১২. দায়ূদকে আরেকটা কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল?

১২ দায়ূদকে আরেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যেটার কারণে তিনি নিজেকে দুর্বল ও ক্ষমতাহীন বলে মনে করতে পারতেন। দায়ূদ অনুগতভাবে শৌলের সেবা করেছিলেন, যাকে যিহোবা ইস্রায়েলের উপর রাজা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। রাজা শৌল প্রথম প্রথম দায়ূদকে সম্মান করতেন। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে শৌল গর্বের কারণে দায়ূদের প্রতি হিংসা করতে শুরু করেছিলেন। শৌল দায়ূদের সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেছিলেন আর তিনি এমনকী দায়ূদকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন।—১ শমূ. ১৮:৬-৯, ২৯; ১৯:৯-১১.

১৩. রাজা শৌলের কাছ থেকে অবিচার ভোগ করা সত্ত্বেও দায়ূদ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

১৩ রাজা শৌলের কাছ থেকে অবিচার ভোগ করা সত্ত্বেও দায়ূদ ক্রমাগত যিহোবার মনোনীত রাজার প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। (১ শমূ. ২৪:৬) শৌলের করা মন্দ কাজগুলোর জন্য দায়ূদ যিহোবাকে দোষ দেননি। এর পরিবর্তে, তিনি সেই কঠিন পরীক্ষার সময়ে ধৈর্য ধরার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি চেয়ে যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন।—গীত. ১৮:১, শীর্ষলিখন

১৪. প্রেরিত পৌল দায়ূদের মতো কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন?

১৪ প্রেরিত পৌল দায়ূদের মতো একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। পৌলের শত্রুরা তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। তার দিনের অনেক বিশিষ্ট নেতা তাকে ঘৃণা করত। প্রায়ই তারা তাকে মারধর করত এবং কারাগারে বন্দি করে রাখত। দায়ূদের মতো পৌলও তার বন্ধুদের কাছ থেকে খারাপ আচরণের শিকার হয়েছিলেন। এমনকী খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কোনো কোনো ব্যক্তি তার বিরোধিতা করেছিল। (২ করি. ১২:১১; ফিলি. ৩:১৮) কিন্তু, পৌল তার সমস্ত বিরোধীকে পরাজিত করেছিলেন। কীভাবে? বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ক্রমাগত প্রচার করে গিয়েছিলেন। তিনি তার ভাই-বোনদের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে গিয়েছিলেন, এমনকী যদিও তারা তাকে হতাশ করেছিল। আর সবচেয়ে বড়ো বিষয়টা হল তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। (২ তীম. ৪:৮) তিনি নিজের ক্ষমতার উপর নির্ভর করার কারণে নয় বরং যিহোবার উপর নির্ভর করার কারণে এই সমস্ত কিছু সম্পাদন করতে পেরেছিলেন।

যারা আপনার খ্রিস্টীয় বিশ্বাস সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, তাদের সঙ্গে সম্মান সহকারে এবং সদয়ভাবে যুক্তি করার চেষ্টা করুন (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৫. আপনার লক্ষ্য কী এবং কীভাবে আপনি তা অর্জন করতে পারেন?

১৫ আপনাকে কি সহপাঠী, সহকর্মী অথবা পরিবারের ন-সাক্ষি সদস্যদের কাছ থেকে অপমান সহ্য করতে অথবা তাড়নার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়? মণ্ডলীর কোনো ব্যক্তি কি কখনো আপনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে? আপনি যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে হ্যাঁ বলেন, তা হলে দায়ূদ ও পৌলের উদাহরণ স্মরণ করুন। আপনি ক্রমাগত “উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয়” করতে পারেন। (রোমীয় ১২:২১) লোকেরা যখন আমাদের বিরোধিতা করে, তখন আমরা তাদের সঙ্গে আক্ষরিকভাবে লড়াই করি না, ঠিক যেমন দায়ূদ গলিয়াতের সঙ্গে করেছিলেন। এর পরিবর্তে, যিহোবা ও বাইবেল সম্বন্ধে লোকেদের জানতে সাহায্য করার মাধ্যমে আমরা মন্দকে পরাজিত করি আর এটাই হল আমাদের লক্ষ্য। আপনি লোকেদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বাইবেলের উপর নির্ভর করার, যারা আপনার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে, তাদের সঙ্গে সম্মান সহকারে এবং সদয়ভাবে আচরণ করার আর সেইসঙ্গে সবার জন্য, এমনকী আপনার শত্রুদের জন্য ভালো কাজ করার মাধ্যমে আপনি এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন।—মথি ৫:৪৪; ১ পিতর ৩:১৫-১৭.

অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করুন

১৬-১৭. পৌল কোন বিষয়টা কোনোদিনও ভুলে যাননি?

১৬ খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে ওঠার আগে প্রেরিত পৌল একজন রূঢ় যুবক ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি যিশুর অনুসারীদের উপর তাড়না নিয়ে আসতেন। (প্রেরিত ৭:৫৮; ১ তীম. ১:১৩) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে তাড়নার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যিশু নিজে পৌলকে থামিয়েছিলেন, যিনি সেইসময়ে শৌল নামে পরিচিত ছিলেন। যিশু স্বর্গ থেকে পৌলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তাকে অন্ধ করে দিয়েছিলেন। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য পৌলকে বাধ্য হয়ে সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করতে হয়েছিল, যাদের উপর তিনি তাড়না নিয়ে এসেছিলেন। তিনি নম্রতার সঙ্গে অননিয় নামে খ্রিস্টের একজন শিষ্যের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন, যিনি তাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করেছিলেন।—প্রেরিত ৯:৩-৯, ১৭, ১৮.

১৭ পৌল পরবর্তী সময়ে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে একজন সুপরিচিত ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন। তবে, যিশু তাকে দম্মেশকের পথে যে-শিক্ষা প্রদান করেছিলেন, তা তিনি কোনোদিনও ভুলে যাননি। পৌল নম্রতা বজায় রেখেছিলেন এবং ইচ্ছুক মনে তার ভাই-বোনদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন। তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তারা তার জন্য “সান্ত্বনাজনক [“শক্তিবর্ধক,” পাদটীকা, NW]” ছিল।—কল. ৪:১০, ১১.

১৮. কেন আমরা কখনো কখনো অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করতে চাই না?

১৮ পৌলের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা যখন যিহোবার লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করেছিলাম, তখন আমরা নিজেদের আধ্যাত্মিক শিশু বলে মনে করতাম এবং এটা উপলব্ধি করতাম যে, আমাদের অনেক কিছু শিখতে হবে। আর তাই আমরা হয়তো উৎসুক মনে অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করতাম। (১ করি. ৩:১, ২) কিন্তু, এখন আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা যদি অনেক বছর ধরে যিহোবার সেবা করে এসে থাকি এবং অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকি, তা হলে আমরা হয়তো অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত না-ও হতে পারি, বিশেষভাবে সেই সাহায্য যদি এমন কোনো ব্যক্তি আমাদের প্রদান করেন, যিনি আমাদের মতো দীর্ঘসময় ধরে সত্যে নেই। তবে, যিহোবা সাধারণত আমাদের ভাই-বোনদের ব্যবহার করেই আমাদের শক্তিশালী করেন। (রোমীয় ১:১১, ১২) তাই, আমরা যদি যিহোবার কাছ থেকে শক্তি লাভ করতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই আমাদের ভাই-বোনদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করতে হবে।

১৯. কেন পৌল সফল হয়েছিলেন?

১৯ পৌল একজন খ্রিস্টান হয়ে ওঠার পর অনেক চমৎকার বিষয় সম্পাদন করেছিলেন। কেন? কারণ তিনি এটা শিখেছিলেন যে, সাফল্য একজন ব্যক্তির শারীরিক ক্ষমতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধনসম্পদ অথবা সামাজিক পটভূমির উপর নির্ভর করে না বরং এটা নম্রতা এবং যিহোবার উপর আস্থা রাখার উপর নির্ভর করে। আমরা সবাই যেন (১) যিহোবার উপর নির্ভর করার, (২) বাইবেলের উদাহরণগুলো থেকে শেখার এবং (৩) সহবিশ্বাসীদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করার দ্বারা পৌলকে অনুকরণ করি। আমরা নিজেদের যত দুর্বল বলেই মনে করি না কেন, আমরা যদি এই পদক্ষেপগুলো নিই, তা হলে যিহোবা আমাদের শক্তিশালী করবেন!

গান সংখ্যা ১৭ হে সাক্ষিরা, এগিয়ে চলো!

^ অনু. 5 এই প্রবন্ধে আমরা প্রেরিত পৌলের উদাহরণ নিয়ে পরীক্ষা করব। আমরা দেখব যে, আমরা যদি নম্র হই, তা হলে যিহোবা আমাদের উপহাস সহ্য করার এবং দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করবেন।

^ অনু. 1 এই অভিব্যক্তির অর্থ: আমরা হয়তো একাধিক কারণে নিজেদের দুর্বল বলে মনে করতে পারি। যেমন আমাদের অসিদ্ধতা, আর্থিক সমস্যা, অসুস্থতা অথবা খুব বেশি শিক্ষিত না হওয়ার কারণে আমরা এমনটা মনে করতে পারি। এর পাশাপাশি, আমাদের শত্রুরা মৌখিক অথবা শারীরিকভাবে আক্রমণ করার মাধ্যমে আমাদের দুর্বল অনুভব করানোর চেষ্টা করতে পারে।

^ অনু. 57 ছবি সম্বন্ধে: পৌল যখন খ্রিস্টের বিষয়ে প্রচার করতে শুরু করেছিলেন, তখন তিনি সেইসমস্ত বিষয় পরিত্যাগ করেছিলেন, যেগুলো একজন ফরীশী হিসেবে তার কাছে ছিল। এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, জাগতিক গুটানো পুস্তক এবং শাস্ত্র রাখার একটা পাত্র।

^ অনু. 61 ছবি সম্বন্ধে: একজন ভাইকে তার সহকর্মীরা একটা জন্মদিনের পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করছে।