সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৩

পুনরুত্থান ঈশ্বরের প্রেম, প্রজ্ঞা ও ধৈর্যকে প্রকাশ করে

পুনরুত্থান ঈশ্বরের প্রেম, প্রজ্ঞা ও ধৈর্যকে প্রকাশ করে

“পুনরুত্থান হইবে।”—প্রেরিত ২৪:১৫.

গান সংখ্যা ১২ অনন্তজীবনের প্রতিজ্ঞা

সারাংশ *

১. কেন যিহোবা জীবন সৃষ্টি করেছিলেন?

একটা সময় ছিল, যখন যিহোবা একা ছিলেন। কিন্তু, তিনি একাকিত্ব বোধ করতেন না। কারণ তিনি সমস্ত দিক দিয়ে পরিপূর্ণ ছিলেন। তারপরও, তিনি চেয়েছিলেন যেন অন্যেরা জীবন উপভোগ করে। প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সৃষ্টি করতে শুরু করেন।—গীত. ৩৬:৯; ১ যোহন ৪:১৯.

২. যিহোবা যেভাবে অন্যান্য বিষয় সৃষ্টি করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে যিশু ও স্বর্গদূতেরা কেমন অনুভব করেছিলেন?

প্রথমে, যিহোবা একজন সহকর্মীকে অর্থাৎ তাঁর পুত্র যিশুকে সৃষ্টি করেছিলেন। তারপর, সেই পুত্রের মাধ্যমে তিনি ‘সকলই সৃষ্টি’ করেছেন, যার অন্তর্ভুক্ত হল বুদ্ধিবিশিষ্ট লক্ষ লক্ষ আত্মিক প্রাণী। (কল. ১:১৬) যিশু তাঁর পিতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত ছিলেন। (হিতো. ৮:৩০) আর ঈশ্বরের আত্মিক পুত্ররাও আনন্দিত ছিল। যিহোবা ও তাঁর দক্ষ কর্মী যিশু যখন স্বর্গ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন, তখন সেই আত্মিক পুত্ররা তা দেখেছিল। সেই স্বর্গদূতেরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? তারা ঈশ্বরের গৌরব করেছিল এবং ঈশ্বর যখন অন্যান্য বিষয় সৃষ্টি করেছিলেন, বিশেষভাবে মানুষকে, তখন তারা ক্রমাগত যিহোবার গৌরব করেছিল। (ইয়োব ৩৮:৭; হিতো. ৮:৩১) এই সমস্ত সৃষ্টি যিহোবার প্রেম ও প্রজ্ঞাকে প্রকাশ করে।—গীত. ১০৪:২৪; রোমীয় ১:২০.

৩. প্রথম করিন্থীয় ১৫:২১, ২২ পদ যেমন ইঙ্গিত দেয়, যিশুর মাধ্যমে জোগানো মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ফলে কী সম্ভবপর হয়েছে?

যিহোবা চেয়েছিলেন যেন তাঁর সৃষ্ট এই অপূর্ব পৃথিবীতে মানবপরিবার অনন্তজীবন উপভোগ করে। কিন্তু, আদম ও হবা যখন তাদের প্রেমময় পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন, তখন পৃথিবীতে পাপ ও মৃত্যুর কালো ছায়া নেমে এসেছিল। (রোমীয় ৫:১২) যিহোবা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি দ্রুত এই বিষয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে, কীভাবে তিনি মানবজাতিকে উদ্ধার করবেন। (আদি. ৩:১৫) যিহোবা নিজের পুত্র যিশুর মাধ্যমে মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে আদম ও হবার সন্তানরা পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারে। এভাবে তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁর সেবা করা এবং অনন্তজীবন লাভ করার বিষয়টা বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে পেরেছিলেন।—যোহন ৩:১৬; রোমীয় ৬:২৩; পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:২১, ২২.

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে বিবেচনা করব?

মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করার বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা একাধিক প্রশ্নের জন্ম দেয়। উদাহরণ স্বরূপ, সম্ভবত কীভাবে পুনরুত্থান করা হবে? আমাদের মৃত প্রিয়জনদের যখন পুনরুত্থিত করা হবে, তখন আমরা কি তাদের চিনতে পারব? কোন কোন উপায়ে পুনরুত্থান আমাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসবে? আর পুনরুত্থানের বিষয়ে ধ্যান করা কীভাবে যিহোবার প্রেম, প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে বৃদ্ধি করতে পারে? আসুন, আমরা এই প্রশ্নগুলো নিয়ে একটা একটা করে বিবেচনা করি।

সম্ভবত কীভাবে পুনরুত্থান করা হবে?

৫. কেন এটা বিশ্বাস করা যুক্তিযুক্ত যে, লোকেদের সুসংগঠিতভাবে এবং ধাপে ধাপে পুনরুত্থিত করা হবে?

যিহোবা যখন তাঁর পুত্রের মাধ্যমে অগণিত লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত করবেন, তখন আমরা এটা আশা করতে পারি যে, তাদের সবাইকে একই সময়ে পুনরুত্থিত করা হবে না। কেন? কারণ হঠাৎ করে একসঙ্গে অনেক ব্যক্তিকে পৃথিবীতে পুনরুত্থিত করা হলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। আর যিহোবা কখনো বিশৃঙ্খলভাবে কিছু করেন না। তিনি জানেন যে, সুসংগঠিতভাবে সব কিছু করতে হবে, যাতে লোকেরা শান্তিতে থাকতে পারে। (১ করি. ১৪:৩৩) যিহোবা ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করার আগে ধাপে ধাপে পৃথিবীকে প্রস্তুত করার সময়ে বিজ্ঞতা ও ধৈর্য সহকারে যিশুর সঙ্গে কাজ করেছিলেন। একইভাবে, হাজার বছরের রাজত্ব চলাকালীন পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের স্বাগত জানানোর জন্য পৃথিবীকে প্রস্তুত করার সময়ে অর্থাৎ তাদের জন্য গৃহ, খাদ্য, বস্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো প্রস্তুত করার সময়ে আরমাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যিশু যখন কাজ করবেন, তখন তিনি এই গুণগুলো প্রদর্শন করবেন।

আরমাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের ঈশ্বরের রাজ্য এবং যিহোবার ধার্মিক চাহিদা সম্বন্ধে শিক্ষা দেবে (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৬. প্রেরিত ২৪:১৫ পদ অনুযায়ী যিহোবার দ্বারা পুনরুত্থিত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কারা থাকবে?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, আরমাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ঈশ্বরের রাজ্য এবং তাঁর ধার্মিক মান সম্বন্ধে পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের শেখাতে হবে। কেন? কারণ যারা পুনরুত্থিত হবে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই “অধার্ম্মিক” থাকবে। (পড়ুন, প্রেরিত ২৪:১৫.) খ্রিস্টের দ্বারা জোগানো মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য তাদের অনেক পরিবর্তন করতে হবে। লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শেখানোর কাজের বিষয়ে একটু চিন্তা করুন, যারা যিহোবা সম্বন্ধে কিছুই জানে না। সেই ব্যক্তিরা কি আলাদা আলাদাভাবে শিক্ষা লাভ করার সুযোগ পাবে, যেভাবে বর্তমানে বাইবেল ছাত্ররা আমাদের কাছ থেকে সত্য শিখে থাকে? সেই নতুন ব্যক্তিদের কি বিভিন্ন মণ্ডলীতে কার্যভার দেওয়া হবে এবং সেখানে তাদের অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত করা হবে, যাতে তারা তাদের পরে পুনরুত্থিত হওয়া ব্যক্তিদের শিক্ষা দিতে পারে? একমাত্র সময়ই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারে। তবে, আমরা এটা জানি যে, খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের শেষে, “পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশা. ১১:৯) সেই হাজার বছর কতই-না ব্যস্ততা ও আনন্দের মধ্যে কাটবে!

৭. পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের শিক্ষা দেওয়ার সময়ে কেন ঈশ্বরের লোকেরা একে অপরের অনুভূতি বুঝবে?

খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্ব চলাকালীন যিহোবার সমস্ত পার্থিব সন্তানকেই বিভিন্ন পরিবর্তন করতে হবে, যাতে তারা তাঁকে খুশি করতে পারে। তাই, পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের পাপপূর্ণ প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য সাহায্য করার সময়ে তারা সবাই প্রকৃত অর্থে একে অপরের অনুভূতি বুঝবে। (১ পিতর ৩:৮) কোনো সন্দেহ নেই, পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা যিহোবার সেই নম্র লোকেদের দ্বারা আকৃষ্ট হবে, যারা নিজেরাও “আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন” করার জন্য কাজ করবে।—ফিলি. ২:১২.

আমরা কি পুনরুত্থিত হওয়া ব্যক্তিদের চিনতে পারব?

৮. কেন এমনটা ধরে নেওয়া যুক্তিযুক্ত যে, পুনরুত্থিত হওয়া ব্যক্তিদের তাদের প্রিয়জনরা চিনতে পারবে?

একাধিক কারণে আমরা এটা ধরে নিতে পারি যে, পুনরুত্থিত হওয়া ব্যক্তিদের তাদের প্রিয়জনরা চিনতে পারবে। উদাহরণ স্বরূপ, অতীতের পুনরুত্থানের ঘটনাগুলো দেখে মনে হয় যে, যিহোবা লোকেদের এমনভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবেন, যাতে তারা মৃত্যুর ঠিক আগে যেমন দেখতে ছিল, যেভাবে কথা বলত এবং যেভাবে চিন্তা করত, সেগুলো একই থাকে। মনে করে দেখুন, যিশু মৃত্যুকে ঘুমের সঙ্গে এবং পুনরুত্থানকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। (মথি ৯:১৮, ২৪; যোহন ১১:১১-১৩) লোকেরা যখন ঘুম থেকে জেগে ওঠে, তখন তাদের রূপ, কথা বলার ধরণ এবং স্মৃতিশক্তি পরিবর্তিত হয় না, সেগুলো একই থাকে। লাসারের উদাহরণ বিবেচনা করুন। তিনি চার দিন মৃত অবস্থায় ছিলেন এবং তার দেহ ক্ষয় পেতে শুরু করেছিল। তবে, যিশু যখন তাকে পুনরুত্থিত করেছিলেন, তখন মরিয়ম ও মার্থা সঙ্গেসঙ্গে তাকে চিনতে পেরেছিলেন এবং নিশ্চিতভাবেই লাসারও তাদের চিনতে পেরেছিলেন।—যোহন ১১:৩৮-৪৪; ১২:১, ২.

৯. কেন পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা এক সিদ্ধ মন ও দেহ নিয়ে জীবনে উত্থিত হবে না?

যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, খ্রিস্টের শাসনাধীনে থাকা কোনো ব্যক্তিই বলবে না, “আমি পীড়িত।” (যিশা. ৩৩:২৪; রোমীয় ৬:৭) তাই, মৃত ব্যক্তিদের পুনরায় সৃষ্টি করার সময়ে তাদের এক উত্তম স্বাস্থ্য দিয়ে উত্থিত করা হবে। তবে, তারা সঙ্গেসঙ্গে সিদ্ধ হয়ে যাবে না। কারণ এমনটা হলে তাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবরা তাদের হয়তো চিনতে পারবে না। এমনটা মনে হয় যে, খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্ব চলাকালীন মানবজাতি ধীরে ধীরে সিদ্ধতায় পৌঁছাবে। আর হাজার বছরের রাজত্ব শেষ হওয়ার পরই যিশু তাঁর পিতার কাছে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেবেন। রাজ্য যিহোবার ইচ্ছানুযায়ী সমস্ত কিছু সম্পাদন করবে, যার অন্তর্ভুক্ত হল মানবজাতিকে সিদ্ধতায় পৌঁছানো।—১ করি. ১৫:২৪-২৮; প্রকা. ২০:১-৩.

কোন কোন উপায়ে পুনরুত্থান আমাদের জন্য আনন্দ নিয়ে আসবে?

১০. পুনরুত্থান কীভাবে আপনাকে প্রভাবিত করবে?

১০ আপনি যখন আবারও আপনার প্রিয়জনের সঙ্গে মিলিত হবেন, তখন আপনার কেমন লাগবে? সেই সময়ে আনন্দে আপনি কি হাসবেন, না কাঁদবেন? আপনি কি আনন্দে যিহোবার প্রশংসায় গান গাইবেন? একটা বিষয় নিশ্চিত, পুনরুত্থানের চমৎকার পুরস্কারের জন্য আপনার যত্নশীল স্বর্গীয় পিতা এবং তাঁর নিঃস্বার্থপর পুত্রের প্রতি আপনার ভালোবাসা আরও গভীর হবে।

১১. যোহন ৫:২৮, ২৯ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলো যেমন দেখায়, যারা ঈশ্বরের ধার্মিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করবে, তারা কী লাভ করবে?

১১ পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা যখন তাদের পুরাতন মনুষ্য বা ব্যক্তিত্ব ত্যাগ করবে এবং ঈশ্বরের ধার্মিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করবে, তখন তারা কতটা আনন্দিত হবে, সেই বিষয়টা একটু কল্পনা করুন। যারা এই পরিবর্তনগুলো করবে, তারা পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ লাভ করবে। অন্যদিকে, যে-ব্যক্তিরা পরমদেশে থাকার জন্য নিজেদের জীবনে পরিবর্তন করাকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং সেখানকার শান্তি ভঙ্গ করবে, যিহোবা তাদের আর সেখানে থাকার সুযোগ দেবেন না।—যিশা. ৬৫:২০; পড়ুন, যোহন ৫:২৮, ২৯.

১২. কোন উপায়ে পৃথিবীর সবাই যিহোবার কাছ থেকে আশীর্বাদ লাভ করবে?

১২ ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে তাঁর উপাসকরা হিতোপদেশ ১০:২২ পদে বলা এই কথাগুলোর সত্যতা দেখতে পাবে: “সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে, এবং তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না।” যিহোবার আত্মা যখন তাঁর লোকেদের উপর কাজ করবে, তখন তারা আধ্যাত্মিকভাবে ধনী হয়ে উঠবে অর্থাৎ তারা আরও বেশি খ্রিস্টের মতো হয়ে উঠবে এবং ধীরে ধীরে সিদ্ধতার দিকে এগিয়ে যাবে। (যোহন ১৩:১৫-১৭; ইফি. ৪:২৩, ২৪) প্রতিদিন তারা আরও বেশি স্বাস্থ্যবান এবং আরও ভালো ব্যক্তি হয়ে উঠবে। সেই সময়ে জীবন কতই-না আনন্দের হবে! (ইয়োব ৩৩:২৫) তবে, পুনরুত্থানের বিষয়ে ধ্যান করা কীভাবে বর্তমানে আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

যিহোবার প্রেমের প্রতি উপলব্ধি দেখান

১৩. গীতসংহিতা ১৩৯:১-৪ পদ অনুযায়ী পুনরুত্থান কীভাবে আমাদের দেখায় যে, যিহোবা আমাদের সম্বন্ধে কতটা ভালোভাবে জানেন?

১৩ আগে আমরা যেমন আলোচনা করেছি, যিহোবা যখন লোকেদের পুনরুত্থিত করবেন, তখন তিনি তাদের পূর্বের স্মৃতিশক্তি ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো ফিরিয়ে দেবেন, যাতে তাদের ব্যক্তিত্ব একইরকম থাকে। এর অর্থ কী, তা একটু চিন্তা করুন। যিহোবা আপনাকে এতটাই ভালোবাসেন যে, তিনি আপনার সমস্ত চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, কথাবার্তা ও কাজের নথি রাখছেন। কেন? কারণ আপনাকে পুনরুত্থিত করতে হলে যাতে তিনি সহজেই আপনার স্মৃতিশক্তি, মনোভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে দিতে পারেন। ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে আমাদের প্রতি যিহোবা কতটা আগ্রহী, সেই বিষয়ে রাজা দায়ূদ অবগত ছিলেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৩৯:১-৪.) আমরা যখন এটা উপলব্ধি করি যে, যিহোবা কতটা ভালোভাবে আমাদের সম্বন্ধে জানেন, তখন আমরা কেমন অনুভব করি?

১৪. যিহোবা আমাদের কতটা ভালোভাবে জানেন, তা নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে কীভাবে আমাদের প্রভাবিত হওয়া উচিত?

১৪ আমরা যখন এই বিষয়টা নিয়ে ধ্যান করি যে, যিহোবা আমাদের কতটা ভালোভাবে জানেন, তখন আমাদের উদ্‌বিগ্ন হওয়া উচিত নয়। কেন? মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন। তিনি আমাদের প্রত্যেককে মূল্যবান হিসেবে দেখেন। তিনি খুব ভালোভাবে আমাদের জীবনের সেইসমস্ত ঘটনা স্মরণে রাখেন, যে-ঘটনাগুলো আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। এটা আমাদের কতই-না আশ্বস্ত করে! আমরা যেন কখনোই নিজেদের একা বলে মনে না করি। প্রতিদিনের প্রতিটা মুহূর্তে যিহোবা ঠিক আমাদের পাশে রয়েছেন এবং আমাদের সাহায্য করার সুযোগ খুঁজছেন।—২ বংশা. ১৬:৯.

যিহোবার প্রজ্ঞার প্রতি উপলব্ধি দেখান

১৫. কীভাবে পুনরুত্থান যিহোবার প্রজ্ঞার প্রমাণ দেয়?

১৫ মৃত্যুর হুমকি হল এক শক্তিশালী হাতিয়ার। শয়তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যক্তিরা এই হাতিয়ারকে কাজে লাগিয়ে জোর করে লোকেদের দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করানোর অথবা জেনে-শুনে মন্দ কাজ করানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, এই হাতিয়ার আমাদের পরাজিত করতে পারে না। আমরা জানি যে, আমাদের শত্রুরা এমনকী আমাদের মেরে ফেললেও যিহোবা আমাদের পুনরুত্থিত করবেন। (প্রকা. ২:১০) আমরা নিশ্চিত যে, তারা যা-ই করুক না কেন, যিহোবার সেবা করা থেকে আমাদের বিরত করতে পারবে না। (রোমীয় ৮:৩৫-৩৯) পুনরুত্থানের আশা প্রদান করার মাধ্যমে যিহোবা কতই-না উল্লেখযোগ্য উপায়ে প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন! এই কারণে শয়তানের সমর্থকরা যদি আমাদের দিয়ে তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করানোর জন্য মৃত্যুর হুমকিও দেয়, তারপরও আমরা ভয় পাই না। এর বিপরীতে, এই আশা যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার বিষয়ে আমাদের সাহসকে আরও বেশি শক্তিশালী করে।

যিহোবা যে আমাদের বস্তুগত প্রয়োজনগুলোর যত্ন নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমাদের সিদ্ধান্তগুলো কি দেখায় যে, তাঁর সেই প্রতিজ্ঞার উপর আমাদের আস্থা রয়েছে? (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৬. আপনাকে নিজেকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে হবে এবং আপনার উত্তরগুলো কীভাবে এটা দেখার জন্য সাহায্য করতে পারে যে, যিহোবার উপর আপনার কতটা আস্থা রয়েছে?

১৬ যিহোবাকে যে-ব্যক্তিরা ঘৃণা করে, তারা যদি আপনাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়, তা হলে আপনি কি পুনরুত্থানের বিষয়ে যিহোবার প্রতিজ্ঞার উপর আস্থা রাখবেন? কীভাবে আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন যে, সেই সময়ে আপনি যিহোবার উপর আস্থা রাখবেন? একটা উপায় হল নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা, ‘প্রতিদিন আমি যে-ছোটোখাটো সিদ্ধান্তগুলো নিই, সেগুলো কি প্রমাণ করে যে, যিহোবার উপর আমার আস্থা রয়েছে?’ (লূক ১৬:১০) আরেকটা যে-প্রশ্ন আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি, সেটা হল, ‘ঈশ্বরের রাজ্যকে জীবনের প্রথম স্থানে রাখলে তিনি যে আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমার জীবনধারা কি প্রমাণ করে যে, সেই প্রতিজ্ঞার উপর আমার আস্থা রয়েছে?’ (মথি ৬:৩১-৩৩) এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে আপনি যদি হ্যাঁ বলেন, তা হলে আপনি এটা প্রমাণ করবেন যে, যিহোবার উপর আপনার আস্থা রয়েছে এবং আপনার জীবনে আসা যেকোনো পরীক্ষার জন্য আপনি প্রস্তুত থাকবেন।—হিতো. ৩:৫, ৬.

যিহোবার ধৈর্যের প্রতি উপলব্ধি দেখান

১৭. (ক) কীভাবে পুনরুত্থান দেখায় যে, যিহোবা ধৈর্য ধরে রয়েছেন? (খ) কীভাবে আমরা যিহোবার ধৈর্যের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি?

১৭ যিহোবা এই পুরোনো বিধিব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসার দিন ও সময় ঠিক করে রেখেছেন। (মথি ২৪:৩৬) তিনি এই ক্ষেত্রে ধৈর্য হারিয়ে ফেলবেন না এবং নিরূপিত সময়ের আগেই ধ্বংস নিয়ে আসবেন না। তিনি মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করার বিষয়ে ‘মমতা করেন [‘আকুল আকাঙ্ক্ষী,’ NW],’ কিন্তু তারপরও তিনি ধৈর্য ধরে রয়েছেন। (ইয়োব ১৪:১৪, ১৫) তিনি মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করার বিষয়ে উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন। (যোহন ৫:২৮) যিহোবার ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা দেখানোর বিষয়ে আমাদের কাছে উত্তম কারণ রয়েছে। একটু চিন্তা করুন: যিহোবার ধৈর্যের কারণে অনেকে, এমনকী আমরাও “মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে” পাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। (২ পিতর ৩:৯) যিহোবা চান যেন যতটা সম্ভব বেশি লোক অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ পায়। তাই আসুন, আমরা যেন তাঁর ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা দেখাই। কীভাবে আমরা তা দেখাতে পারি? “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত [“সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন,” NW]” ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য নিজেদের সর্বোত্তমটা করার এবং তাদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখানোর ও সেইসঙ্গে তাঁকে সেবা করার জন্য সাহায্য করার মাধ্যমে আমরা তা দেখাতে পারি। (প্রেরিত ১৩:৪৮) আমরা যদি এমনটা করি, তা হলে তারাও আমাদের মতোই যিহোবার ধৈর্য থেকে উপকার লাভ করবে।

১৮. কেন আমাদের অন্যদের সঙ্গে ধৈর্য ধরে আচরণ করা উচিত?

১৮ যিহোবা হাজার বছর শেষ হওয়ার আগে আমাদের কাছ থেকে সিদ্ধতা আশা করবেন না। এর পরিবর্তে, তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবেন। সেই সময় না আসা পর্যন্ত তিনি আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করার জন্য ইচ্ছুক। তাই নিশ্চিতভাবেই, অন্যদের মধ্যে ভালো বিষয়গুলো দেখার এবং তাদের সঙ্গে ধৈর্য ধরে আচরণ করার উত্তম কারণ আমাদের কাছে রয়েছে। একজন বোনের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যার স্বামী মাঝে মাঝে চরম উদ্‌বিগ্নতায় ভুগতে শুরু করেছিলেন এবং সভায় যোগ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “এটা আমার জন্য খুবই কঠিন এক সময় ছিল। আমাদের পরিবারের সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল।” এই সমস্ত কিছু সত্ত্বেও সেই বোন প্রেমের সঙ্গে ধৈর্য ধরে তার স্বামীর যত্ন নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন এবং কখনো হাল ছেড়ে দেননি। যিহোবার মতো তিনি তার স্বামীর ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমার স্বামীর মধ্যে বিভিন্ন চমৎকার গুণ রয়েছে আর ও সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য নিজের সর্বোত্তমটা করার চেষ্টা করছে এবং ধীরে ধীরে নিজের উদ্‌বিগ্নতা কাটিয়ে উঠছে।” আমাদের পরিবার অথবা মণ্ডলীর সেই ব্যক্তিদের প্রতি ধৈর্য ধরা কতই-না গুরুত্বপূর্ণ, যারা কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য চেষ্টা করছে!

১৯. আমাদের কী করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?

১৯ পৃথিবীকে যখন সৃষ্টি করা হয়েছিল, তখন যিশু ও স্বর্গদূতেরা আনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু কল্পনা করুন, তারা যখন পুরো পৃথিবীতে এমন সিদ্ধ লোকেদের দেখবে, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে এবং তাঁর সেবা করে, তখন তারা কতটা আনন্দিত হবে। কল্পনা করুন, খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করার জন্য পৃথিবী থেকে যে-ব্যক্তিদের স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তারা যখন তাদের কাজের দ্বারা মানবজাতিকে উপকৃত হতে দেখবে, তখন তারা কতটা আনন্দিত হবে। (প্রকা. ৪:৪, ৯-১১; ৫:৯, ১০) আর কল্পনা করুন সেই সময়ে জীবন কেমন হবে, যখন আপনি আর দুঃখের জন্য নয় বরং আনন্দে কাঁদবেন এবং অসুস্থতা, দুঃখকষ্ট ও মৃত্যু চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে। (প্রকা. ২১:৪) সেই সময় না আসা পর্যন্ত আপনি যেন আপনার প্রেমময়, বিজ্ঞ ও ধৈর্যশীল পিতাকে অনুকরণ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হন। আপনি যদি এমনটা করেন, তা হলে আপনি আপনার আনন্দ বজায় রাখতে পারবেন, তা আপনি যে-পরীক্ষারই মুখোমুখি হন না কেন। (যাকোব ১:২-৪) যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার জন্য আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ হতে পারি, “পুনরুত্থান হইবে”!—প্রেরিত ২৪:১৫.

গান সংখ্যা ১ যিহোবার গুণাবলি

^ অনু. 5 যিহোবা হলেন একজন প্রেমময়, বিজ্ঞ ও ধৈর্যশীল পিতা। তিনি যেভাবে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করার বিষয়ে তিনি যে-ব্যবস্থা করেছেন, সেটার মধ্যে আমরা তাঁর এই গুণগুলো দেখতে পাই। এই প্রবন্ধে পুনরুত্থান সম্বন্ধে এমন কিছু প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলোর উত্তর হয়তো আমরা জানতে চাই। এ ছাড়া, এই প্রবন্ধে এই বিষয়টার উপর জোর দেওয়া হবে যে, যিহোবা যেভাবে প্রেম, প্রজ্ঞা ও ধৈর্য প্রদর্শন করেছেন, কীভাবে আমরা সেটার প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি।

^ অনু. 59 ছবি সম্বন্ধে: একজন ব্যক্তিকে খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে পুনরুত্থিত করা হয়েছে, যিনি শত শত বছর আগে মারা গিয়েছিলেন। আরমাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত একজন ভাই আনন্দের সঙ্গে সেই পুনরুত্থিত ব্যক্তিকে শেখাচ্ছেন যে, খ্রিস্টের দ্বারা জোগানো মুক্তির মূল্য থেকে উপকার লাভ করার জন্য তাকে কী করতে হবে।

^ অনু. 61 ছবি সম্বন্ধে: একজন ভাই তার কাজের জায়গায় মালিককে বলছেন যে, তিনি সপ্তাহের কিছু কিছু দিনে ওভারটাইম করতে পারবেন না। তিনি ব্যাখ্যা করে বলছেন যে, সেই দিনগুলোয় কাজের শেষে তিনি যিহোবার উপাসনা করার জন্য সময় আলাদা করে রেখেছেন। তবে, অন্যান্য সময়ে কোনো জরুরি কাজে যদি তার প্রয়োজন হয়, তা হলে তিনি ওভারটাইম করতে চান।