সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৩

যিহোবা তাঁর সংগঠনকে নির্দেশনা দিচ্ছেন

যিহোবা তাঁর সংগঠনকে নির্দেশনা দিচ্ছেন

“‘পরাক্রম দ্বারা নয়, বল দ্বারাও নয়, কিন্তু আমার আত্মা দ্বারা,’ ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।”—সখ. ৪:৬.

গান সংখ্যা ৩১ যিহোবার সাক্ষি মোরা!

সারাংশ *

১. বাপ্তাইজিত খ্রিস্টানদের অবশ্যই ক্রমাগত কী করতে হবে?

আপনি কি বাপ্তাইজিত? যদি হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি জনসাধারণ্যে যিহোবার প্রতি নিজের বিশ্বাস এবং তাঁর সংগঠনের * সঙ্গে সেবা করার বিষয়ে ইচ্ছুক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। আর এখন আপনাকে অবশ্যই যিহোবার প্রতি আপনার বিশ্বাসকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে হবে। যিহোবা যে বর্তমানে তাঁর সংগঠনকে ব্যবহার করছেন, সেই বিষয়ে আপনার আস্থাকেও ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে হবে।

২-৩. কীভাবে যিহোবা বর্তমানে তাঁর সংগঠনকে নির্দেশনা দেন? কিছু উদাহরণ দিন।

বর্তমানে যিহোবা যেভাবে তাঁর সংগঠনকে নির্দেশনা দেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিত্ব, উদ্দেশ্য ও মানকে প্রতিফলিত করে। আসুন, আমরা যিহোবার তিনটে গুণ নিয়ে বিবেচনা করি, যেগুলো তাঁর সংগঠনে আমরা লক্ষ করতে পারি।

প্রথমত, “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” ইজি-টু-রিড ভারশন] করেন না।” (প্রেরিত ১০:৩৪) প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই যিহোবা তাঁর পুত্রকে “সকলের নিমিত্ত মুক্তির মূল্যরূপে” প্রদান করেছিলেন। (১ তীম. ২:৬; যোহন ৩:১৬) যিহোবা তাঁর লোকেদের ব্যবহার করে সেইসমস্ত ব্যক্তির কাছে সুসমাচার প্রচার করেন, যারা তা শুনতে চায়। এভাবে তিনি যতটা সম্ভব বেশি লোককে সাহায্য করেন, যাতে তারা মুক্তির মূল্যের দ্বারা উপকৃত হয়। দ্বিতীয়ত, যিহোবা হলেন শৃঙ্খলা ও শান্তির ঈশ্বর। (১ করি. ১৪:৩৩, ৪০) তাই, আমরা আশা করতে পারি যে, তাঁর উপাসকরা একটা দল হিসেবে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে তাঁর সেবা করবে। তৃতীয়ত, যিহোবা শিক্ষা দিতে ভালোবাসেন। (যিশা. ৩০:২০, ২১) তাই, তাঁর সংগঠন তাঁর বাক্য সম্বন্ধে মণ্ডলীতে এবং জনসাধারণের পরিচর্যায়, উভয় জায়গাতেই অন্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে। কীভাবে প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা যিহোবার ব্যক্তিত্বের এই তিনটে দিককে অনুকরণ করেছিল? কীভাবে আমাদের দিনের ভাই-বোনেরা যিহোবার এই তিনটে গুণ অনুকরণ করে? আর বর্তমানে যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সেবা করার সময়ে কীভাবে পবিত্র আত্মা আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করেন না

৪. প্রেরিত ১:৮ পদে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, যিশু তাঁর অনুসারীদের কী করার আদেশ দিয়েছিলেন এবং তারা কোন সাহায্য লাভ করবে?

প্রথম শতাব্দীতে। যিশু যে-বার্তা প্রচার করেছিলেন, সেটা সমগ্র মানবজাতিকে আশা প্রদান করেছিল। (লূক ৪:৪৩) যিশু সাক্ষ্য দেওয়ার যে-কাজ শুরু করেছিলেন, সেই বিষয়ে তিনি তাঁর অনুসারীদের আদেশ দিয়ে বলেছিলেন যেন তারা ক্রমাগত সেই কাজ করে, যাতে তারা “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” সাক্ষ্য দান করতে পারে। (পড়ুন, প্রেরিত ১:৮.) এটা ঠিক যে, তারা নিজেদের ক্ষমতায় সেই কাজ সম্পন্ন করতে পারত না। তাদের পবিত্র আত্মার প্রয়োজন হতো, এটা এমন এক “সহায়,” যেটার বিষয়ে যিশু তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।—যোহন ১৪:২৬; সখ. ৪:৬.

৫-৬. কোন কোন উপায়ে পবিত্র আত্মা যিশুর অনুসারীদের সাহায্য করেছিল?

যিশুর অনুসারীরা ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্মা লাভ করেছিল। আত্মার সাহায্যে তারা সঙ্গেসঙ্গে প্রচার করতে শুরু করেছিল এবং অল্পসময়ের মধ্যেই হাজার হাজার ব্যক্তি সুসমাচার গ্রহণ করেছিল। (প্রেরিত ২:৪১; ৪:৪) যখন বিরোধিতা দেখা দিয়েছিল, তখন শিষ্যরা ভয়ের কাছে নতিস্বীকার করেনি বরং তারা যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিল। প্রার্থনায় তারা বলেছিল: “তোমার এই দাসদিগকে সম্পূর্ণ সাহসের সহিত তোমার বাক্য বলিবার ক্ষমতা দেও।” তারপর, তারা পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়েছিল এবং ক্রমাগত “সাহসপূর্ব্বক ঈশ্বরের বাক্য বলিতে থাকিলেন।”—প্রেরিত ৪:১৮-২০, ২৯, ৩১.

যিশুর শিষ্যরা অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতারও মুখোমুখি হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, সেই সময়ে পবিত্র শাস্ত্রের অনেক বেশি প্রতিলিপি প্রাপ্তিসাধ্য ছিল না। বর্তমানে, বাইবেলকে বোঝার জন্য বিভিন্ন সাহিত্যাদি রয়েছে কিন্তু সেই সময়ে শিষ্যদের কাছে এই ধরনের কোনো সাহিত্যও ছিল না। আর সেইসঙ্গে শিষ্যদের এমন ব্যক্তিদের কাছে প্রচার করতে হতো, যারা বিভিন্ন ভাষায় কথা বলত। এই সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা সত্ত্বেও সেই উদ্যোগী শিষ্যরা এমন কিছু করেছিল, যেটা করা অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে তারা “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে” প্রচার করেছিল।—কল. ১:৬, ২৩.

৭. এক-শো বছরেরও বেশি সময় আগে কীভাবে যিহোবার দাসেরা এটা জানতে পেরেছিল যে, ঈশ্বর তাদের কাছ থেকে কী আশা করেন এবং কীভাবে তারা সাড়া দিয়েছিল?

আধুনিক সময়ে। যিহোবা ক্রমাগত তাঁর লোকেদের নির্দেশনা ও শক্তি প্রদান করেন। তাঁর নির্দেশনার বেশিরভাগটাই আসে তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য বাইবেল থেকে। সেটি থেকে আমরা যিশুর পরিচর্যা এবং তাঁর এই আদেশ সম্বন্ধে জানতে পাই যে, তাঁর অনুসারীরা ক্রমাগত সেই কাজ করবে, যে-কাজ তিনি শুরু করেছিলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) ১৮৮১ সালের জুলাই মাসের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় বলা হয়েছিল: “যিহোবা আমাদের মানুষের দ্বারা গৌরবান্বিত হওয়ার অথবা ধনী হওয়ার জন্য বাছাই করেননি বরং আমাদের কাছে যা-কিছু আছে, সেগুলো ব্যবহার করে সুসমাচার প্রচার করার জন্য বাছাই করেছেন।” ১৯১৯ সালে প্রকাশিত যাদেরকে আস্থা সহকারে এই কাজ দেওয়া হয়েছে (ইংরেজি) শিরোনামের একটা পুস্তিকায় বলা হয়েছিল: “কাজটা অনেক বিশাল বলে মনে হয় কিন্তু এটা প্রভুর কাজ এবং তাঁর শক্তির মাধ্যমেই আমরা তা সম্পাদন করতে পারব।” হ্যাঁ, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মতোই এই ভাইয়েরা রাজ্যের কাজের জন্য সাহসের সঙ্গে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিল। তাদের এই বিষয়ে আস্থা ছিল যে, পবিত্র আত্মা তাদের সমস্ত ধরনের লোকের কাছে প্রচার করতে সাহায্য করবে। বর্তমানে আমাদেরও এই একই আস্থা রয়েছে।

যিহোবার সংগঠন সুসমাচার জানানোর জন্য সবচেয়ে উত্তম হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করে (৮-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৮-৯. প্রচার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যিহোবার সংগঠন কোন কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে?

যিহোবার সংগঠন সুসমাচার জানানোর জন্য সবচেয়ে উত্তম হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করে। এই হাতিয়ারগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল ছাপানো প্রকাশনাদি, “ফটো-ড্রামা অভ্‌ ক্রিয়েশন,” ফোনোগ্রাফ, সাউন্ড কার, রেডিও ব্রডকাস্ট আর কম্পিউটার ও ইন্টারনেট। এ ছাড়া, ঈশ্বরের সংগঠন ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো অনুবাদের কাজ করছে! কেন? যাতে সমস্ত ধরনের লোক নিজেদের মাতৃভাষায় সুসমাচার শুনতে পারে। যিহোবা পক্ষপাতিত্ব করেন না; তিনি ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, ‘প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও প্রজাবৃন্দের’ কাছে সুসমাচার ঘোষণা করা হবে। (প্রকা. ১৪:৬, ৭) তিনি চান যেন প্রত্যেকে রাজ্যের বার্তা শোনার সুযোগ পায়।

সেই ব্যক্তিদের কাছে সুসমাচার জানানোর বিষয়ে কী বলা যায়, যারা কড়া নিরাপত্তাযুক্ত অ্যাপার্টমেন্টে বাস করে? এই ধরনের লোকেদের কাছে পৌঁছানোর জন্য যিহোবার সংগঠন বিভিন্ন ধরনের জনসাধারণ্যে সাক্ষ্যদানের ব্যবস্থা করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, ২০০১ সালে পরিচালকগোষ্ঠী ফ্রান্সে সাহিত্যাদির ট্রলি এবং অন্যান্য প্রদর্শনী ব্যবহার করার অনুমতি দেয় এবং পরবর্তী সময়ে অন্যান্য জায়গাতেও এই অনুমতি দেওয়া হয়। এর ফলাফল ইতিবাচক হয়। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির এক ব্যস্ততম এলাকায় একটা নতুন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যে ১,০২,১২৯টা বই এবং ৬৮,৯১১টা পত্রিকা অর্পণ করা হয়েছিল। আর ৪,৭০১ জন ব্যক্তি বাইবেল অধ্যয়ন করার অনুরোধ জানিয়েছিল! স্পষ্টতই, পবিত্র আত্মা এই কাজে সমর্থন জোগাচ্ছিল। তাই, পরিচালকগোষ্ঠী বিশ্বব্যাপী সাহিত্যাদি প্রদর্শন করে প্রচার করার অনুমতি দিয়েছিল।

১০. পরিচর্যায় উন্নতি করার জন্য আমরা কী করতে পারি?

১০ আপনি যা করতে পারেন। যিহোবা খ্রিস্টীয় সভার মাধ্যমে যে-প্রশিক্ষণ প্রদান করেন, সেটা থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করুন। আপনার ক্ষেত্রের পরিচর্যা দলের সঙ্গে নিয়মিতভাবে প্রচার করুন। আপনার দলের ভাই-বোনেরা আপনাকে আরও ভালো প্রচারক ও শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য সাহায্য করতে পারবে এবং তাদের উত্তম উদাহরণের মাধ্যমে উৎসাহিত করতে পারবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও ক্রমাগত প্রচার করুন। এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা নিজেদের ক্ষমতায় নয় বরং পবিত্র আত্মার সাহায্যে ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পাদন করি। (সখ. ৪:৬) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, ঈশ্বর আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করবেন কারণ আমরা তাঁর কাজ করছি।

যিহোবা হলেন শৃঙ্খলা ও শান্তির ঈশ্বর

১১. কীভাবে প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠী ঈশ্বরের লোকেদের মাঝে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একতাবদ্ধভাবে কাজ করেছিল?

১১ প্রথম শতাব্দীতে। যিরূশালেমের পরিচালকগোষ্ঠী ঈশ্বরের লোকেদের মাঝে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একতাবদ্ধভাবে কাজ করেছিল। (প্রেরিত ২:৪২) উদাহরণ স্বরূপ, ৪৯ খ্রিস্টাব্দে যখন ত্বকচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়টা উত্থাপিত হয়েছিল, তখন পরিচালকগোষ্ঠী পবিত্র আত্মার নির্দেশনায় এই বিষয়টা নিয়ে বিবেচনা করেছিল। মণ্ডলী যদি এই বিষয়টা নিয়ে বিভক্ত হয়ে থাকত, তা হলে প্রচার কাজ বাধাগ্রস্ত হতো। যিহুদি হওয়া সত্ত্বেও প্রেরিতরা ও বয়স্ক ভাইয়েরা যিহুদি প্রথার দ্বারা প্রভাবিত হননি অথবা সেই ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত হননি, যারা ত্বকচ্ছেদ করানোর পক্ষে জোরালো মতামত তুলে ধরেছিল। এর পরিবর্তে, পরিচালকগোষ্ঠীর ভাইয়েরা ঈশ্বরের বাক্য এবং তাঁর আত্মার দ্বারা নির্দেশিত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৫:১, ২, ৫-২০, ২৮) এর ফল কী হয়েছিল? যিহোবা তাদের সিদ্ধান্তের উপর আশীর্বাদ করেছিলেন, মণ্ডলীতে শান্তি ও একতা বজায় ছিল এবং প্রচার কাজ এগিয়ে গিয়েছিল।—প্রেরিত ১৫:৩০, ৩১; ১৬:৪, ৫.

১২. কী দেখায় যে, আজও যিহোবার সংগঠনে শান্তি ও শৃঙ্খলা রয়েছে?

১২ আধুনিক সময়ে। যিহোবার সংগঠন যিহোবার লোকেদের মাঝে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কাজ করে এসেছে। ১৮৯৫ সালের জায়ন্স ওয়াচটাওয়ার অ্যান্ড হেরাল্ড অভ্‌ ক্রাইস্টস প্রেজেন্স-এর ১৫ নভেম্বর সংখ্যার পত্রিকায় ১ করিন্থীয় ১৪:৪০ পদের উপর ভিত্তি করে ‘শিষ্ট ও সুনিয়মিত’ শিরোনামের একটা ইংরেজি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। সেই প্রবন্ধে বলা হয়েছিল: “শৃঙ্খলার বিষয়ে প্রেরিতরা প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীগুলোকে অনেক কিছু লিখেছিলেন। . . . ‘পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল।’ তাই, সেগুলো ভালোভাবে অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” (রোমীয় ১৫:৪) হ্যাঁ, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সেই শান্তি ও শৃঙ্খলা আজও যিহোবার সংগঠনে লক্ষ করা যায়। উদাহরণ স্বরূপ: আপনি অন্য কোনো মণ্ডলীতে গিয়ে অথবা এমনকী অন্য কোনো দেশে গিয়ে প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নে যোগ দিলেও আপনি এটা জানেন যে, কীভাবে অধ্যয়ন পরিচালনা করা হবে এবং কোন প্রবন্ধ বিবেচনা করা হবে। আর এর ফলে আপনার মনেই হবে না যে, আপনি কোনো অপরিচিত জায়গায় এসেছেন! একমাত্র ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার মাধ্যমেই এই একতা সম্ভবপর হয়েছে!—সফ. ৩:৯.

১৩. যাকোব ৩:১৭ পদ অনুযায়ী আমরা নিজেদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?

১৩ আপনি যা করতে পারেন। যিহোবা চান যেন তাঁর লোকেরা ‘শান্তির যোগবন্ধনে আত্মার ঐক্য রক্ষা করে।’ (ইফি. ৪:১-৩) তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি মণ্ডলীতে শান্তি ও একতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখি? যে-ভাইয়েরা নেতৃত্ব নেয়, আমি কি তাদের বাধ্য হই? অন্যেরা কি আমার উপর নির্ভর করতে পারে, বিশেষভাবে মণ্ডলীতে আমার যদি কোনো দায়িত্ব থাকে? আমি কি সময়ানুবর্তী, অন্যদের সাহায্য করি এবং অন্যদের সেবা করতে ইচ্ছুক?’ (পড়ুন, যাকোব ৩:১৭.) আপনি যদি এই ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে কোনো একটাতে উন্নতি করার মতো জায়গা খুঁজে পান, তা হলে পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করুন। আপনি আপনার ব্যক্তিত্ব ও কাজকে যতবেশি এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ দেবেন, ততবেশি আপনার ভাই-বোনেরা আপনাকে ভালোবাসবে এবং মূল্যবান হিসেবে দেখবে।

যিহোবা আমাদের শিক্ষিত ও সুসজ্জিত করেন

১৪. কলসীয় ১:৯, ১০ পদ অনুযায়ী কীভাবে যিহোবা প্রথম শতাব্দীতে তাঁর লোকেদের শিক্ষিত করেছিলেন?

১৪ প্রথম শতাব্দীতে। যিহোবা তাঁর লোকেদের শিক্ষা দিতে ভালোবাসেন। (গীত. ৩২:৮) তিনি চান যেন তারা তাঁকে জানে, তাঁকে ভালোবাসে এবং তাঁর প্রিয় সন্তান হিসেবে চিরকাল বেঁচে থাকে। তাঁর জোগানো শিক্ষা ছাড়া এগুলোর একটাও সম্ভব নয়। (যোহন ১৭:৩) যিহোবা তাঁর লোকেদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে ব্যবহার করেছিলেন। (পড়ুন, কলসীয় ১:৯, ১০.) যিশু যে-পবিত্র আত্মা বা ‘সহায়ের’ বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেই পবিত্র আত্মা এক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। (যোহন ১৪:১৬) পবিত্র আত্মা শিষ্যদের ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে আরও বেশি অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে সাহায্য করেছিল এবং তাদের এমন অনেক বিষয় স্মরণ করতে সাহায্য করেছিল, যেগুলো যিশু বলেছিলেন ও করেছিলেন, যেমনটা সুসমাচারের বইগুলোতে পরবর্তী সময়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। এই জ্ঞান প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের বিশ্বাসকে আর সেইসঙ্গে ঈশ্বর, তাঁর পুত্র এবং অন্যদের প্রতি তাদের ভালোবাসার বন্ধনকে শক্তিশালী করেছিল।

১৫. কোন কোন উপায়ে আপনি যিহোবাকে যিশাইয় ২:২, ৩ পদে লিপিবদ্ধ প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করতে দেখেছেন?

১৫ আধুনিক সময়ে। যিহোবা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, “শেষকালে” সমস্ত জাতি থেকে লোকেরা তাঁর পথ সম্বন্ধে নির্দেশনা লাভ করার জন্য তাঁর রূপক পর্বতে একত্রিত হবে। (পড়ুন, যিশাইয় ২:২, ৩.) আমরা এই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হতে দেখছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, যেকোনো ধরনের মিথ্যা উপাসনার চেয়ে সত্য উপাসনা অনেক উত্তম। আর যিহোবা যে-পরিমাণে আধ্যাত্মিক ভোজের ব্যবস্থা করছেন, সেটার কোনো তুলনাই হয় না! (যিশা. ২৫:৬) যিহোবা ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে আমাদের কেবলমাত্র প্রচুর পরিমাণে আধ্যাত্মিক খাদ্যই প্রদান করছেন না কিন্তু সেইসঙ্গে বিভিন্ন প্রবন্ধ, বক্তৃতা, কার্টুন ও ভিডিওর মাধ্যমে সেই খাদ্যে বৈচিত্রও প্রদান করছেন। (মথি ২৪:৪৫) আমরা ইয়োবের বন্ধু ইলীহূর মতো অনুভব করি, যিনি উপযুক্তভাবেই বলেছিলেন: ‘ঈশ্বরের ন্যায় কে শিক্ষা দিতে পারে?’—ইয়োব ৩৬:২২.

আপনাকে সত্যের বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে এবং তা জীবনে প্রয়োগ করতে হবে (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৬. আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করার জন্য আপনি কী করতে পারেন?

১৬ আপনি যা করতে পারেন। আপনি ঈশ্বরের বাক্য থেকে যা-কিছু পড়েন ও অধ্যয়ন করেন, ঈশ্বরের আত্মা আপনাকে সেগুলো কাজে লাগাতে সাহায্য করবে। গীতরচকের মতো প্রার্থনা করুন: “হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে শিক্ষা দেও, আমি তোমার সত্যে চলিব; তোমার নাম ভয় করিতে আমার চিত্তকে একাগ্র কর।” (গীত. ৮৬:১১) তাই, যিহোবা তাঁর বাক্য ও সংগঠনের মাধ্যমে যে-আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রদান করেন, তা ক্রমাগত গ্রহণ করুন। এটা ঠিক যে, আপনার লক্ষ্য কেবলমাত্র জ্ঞান লাভ করা নয়। আপনাকে সত্যের বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে এবং তা জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। যিহোবার পবিত্র আত্মা আপনাকে তা করতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, আপনি আপনার ভাই-বোনদের উৎসাহিত করতে চাইবেন। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) কেন? কারণ তারা হল আপনার আধ্যাত্মিক পরিবার। খ্রিস্টীয় সভায় হৃদয় থেকে মন্তব্য করার জন্য ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করুন এবং সভায় কোনো কার্যভার পেলে তা পালন করার জন্য যথাসাধ্য করুন। এভাবে আপনি যিহোবা ও তাঁর পুত্রকে দেখাবেন যে, আপনি তাঁদের মূল্যবান “মেষগণকে” ভালোবাসেন।—যোহন ২১:১৫-১৭.

১৭. কোন কোন উপায়ে আপনি দেখাতে পারেন যে, আপনি যিহোবার সংগঠনকে বিশ্বস্তভাবে সমর্থন করছেন?

১৭ শীঘ্রই পৃথিবীতে কেবলমাত্র ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা পরিচালিত সংগঠনই অবশিষ্ট থাকবে। তাই, যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে উদ্যোগ সহকারে কাজ করুন। যাদের সঙ্গে আপনার দেখা হয়, তাদের সকলের কাছে সুসমাচার জানানোর মাধ্যমে সকলের প্রতি প্রেম দেখান, ঠিক যেমনটা ঈশ্বর দেখিয়ে থাকেন। ঈশ্বর শান্তি ও শৃঙ্খলাকে ভালোবাসেন; মণ্ডলীতে একতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ঈশ্বরের এই ভালোবাসাকে অনুকরণ করুন। আর যিহোবা যে-আধ্যাত্মিক ভোজের ব্যবস্থা করছেন, সেটাকে পূর্ণরূপে কাজে লাগানোর মাধ্যমে আপনার মহান শিক্ষকের কথা শুনুন। এমনটা করলে, শয়তানের জগতের ধ্বংসের সময়ে আপনি আতঙ্কিত হবেন না। এর পরিবর্তে, আপনি আস্থার সঙ্গে সেই ব্যক্তিদের মাঝে দাঁড়াতে পারবেন, যারা অনুগতভাবে যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সেবা করছে।

গান সংখ্যা ২৩ যিহোবা, মোদের বল

^ অনু. 5 যিহোবা যে বর্তমানে তাঁর সংগঠনকে নির্দেশনা দিচ্ছেন, সেই বিষয়ে আপনি কি নিশ্চিত? এই প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করব যে, কীভাবে যিহোবা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং কীভাবে তিনি বর্তমানেও ক্রমাগত তাঁর লোকেদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।

^ অনু. 1 এই অভিব্যক্তির অর্থ: যিহোবার বিশ্বব্যাপী সংগঠনের স্বর্গীয় অংশ এবং পার্থিব অংশ রয়েছে। এই প্রবন্ধে “সংগঠন” শব্দের দ্বারা পার্থিব অংশকে নির্দেশ করা হয়েছে।

^ অনু. 52 ছবি সম্বন্ধে: একজন অগ্রগামী বোন ভিডিওতে দেখছেন যে, কয়েক জন ভাই-বোন এমন এলাকায় সেবা করছেন, যেখানে বেশি প্রকাশকের প্রয়োজন রয়েছে। তাদের দেখে বোন নিজেও লক্ষ্য স্থাপন করেন যে, তিনিও যেখানে বেশি প্রকাশকের প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করবেন। পরিশেষে বোন সেই লক্ষ্য অর্জন করেন।