সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৯

পুনরুত্থান—এক নিশ্চিত প্রত্যাশা!

পুনরুত্থান—এক নিশ্চিত প্রত্যাশা!

“আমিও ঈশ্বরের উপর এই প্রত্যাশা করি যে, . . . পুনরুত্থান হবে।”—প্রেরিত ২৪:১৫.

গান সংখ্যা ১৯ পরমদেশ সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা

সারাংশ *

১-২. সত্য উপাসকদের কোন চমৎকার প্রত্যাশা রয়েছে?

প্রত্যাশা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারো কারো প্রত্যাশা হল, বিয়েকে সফল করা, স্বাস্থ্যবান সন্তান গড়ে তোলা অথবা কোনো গুরুতর অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়া। খ্রিস্টান হিসেবে আমরাও হয়তো একইরকম বিষয়ের আশা করি। তবে, আমরা যে-প্রত্যাশাকে সবচেয়ে মূল্যবান বলে মনে করি, তা এগুলোর চেয়ে আরও বেশি কিছু; এর অন্তর্ভুক্ত আমাদের নিজেদের অনন্ত ভবিষ্যৎ আর সেইসঙ্গে আমাদের সেই প্রিয়জনদের ভবিষ্যৎ, যারা মারা গিয়েছে।

প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “আমিও ঈশ্বরের উপর এই প্রত্যাশা করি যে, ধার্মিক ও অধার্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) পৌলই প্রথম ব্যক্তি ছিলেন না, যিনি পুনরুত্থানের প্রত্যাশার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। কুলপতি ইয়োবও এই প্রত্যাশার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, ঈশ্বর তাকে স্মরণ করবেন এবং তাকে পুনরায় জীবিত করবেন।—ইয়োব ১৪:৭-১০, ১২-১৫.

৩. কেন আমরা ১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায় থেকে উপকার লাভ করতে পারি?

“মৃতদের পুনরুত্থান” হল সমস্ত খ্রিস্টীয় শিক্ষার “ভিত্তির” অথবা “প্রথমে আমরা যে-বিষয়গুলো শিখেছি, সেগুলোর” অংশ। (ইব্রীয় ৬:১, পাদ., ) পুনরুত্থান সম্বন্ধে পৌলের আলোচনা ১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি যা লিখেছিলেন, তা নিশ্চিতভাবেই প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিল। আর এই অধ্যায় আমাদেরও উৎসাহিত করতে পারে এবং দীর্ঘসময় ধরে আমরা যে-প্রত্যাশার জন্য অপেক্ষা করে আছি, সেটাকে আরও দৃঢ় করতে পারে।

৪. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমাদের মৃত প্রিয়জনেরা পুনরুত্থিত হবে?

যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থান আমাদের এই নিশ্চয়তা দেয়, আমাদের মৃত প্রিয়জনদের পুনরুত্থান হবে। এটা “সেই সুসমাচারের” অংশ ছিল, যা প্রেরিত পৌল করিন্থীয়দের কাছে ঘোষণা করেছিলেন। (১ করি. ১৫:১, ২) সত্যি বলতে কী, তিনি বলেছিলেন যে, একজন খ্রিস্টানের যদি সেই পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাসের অভাব থাকে, তা হলে তার বিশ্বাস বৃথা হয়ে যাবে। (১ করি. ১৫:১৭) যিশুর পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস আমাদের খ্রিস্টীয় প্রত্যাশার মূল বিষয়।

৫-৬. প্রথম করিন্থীয় ১৫:৩, ৪ পদ আমাদের জন্য কোন অর্থ রাখে?

পুনরুত্থানের বিষয়ে পৌলের আলোচনার শুরুর দিকে তিনি তিনটে সত্য তুলে ধরেছিলেন। সেগুলো হল, (১) “আমাদের পাপের জন্য খ্রিস্ট মৃত্যুবরণ করেছেন।” (২) তাঁকে “কবর দেওয়া হয়েছিল।” (৩) “শাস্ত্র অনুসারে তৃতীয় দিনে তাঁকে আবার ওঠানো হয়েছে।”—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৩, ৪.

যিশুর মৃত্যু, কবর ও পুনরুত্থান আমাদের জন্য কোন অর্থ রাখে? ভাববাদী যিশাইয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, মশীহকে “জীবিতদের দেশ হইতে উচ্ছিন্ন” করা হবে এবং “দুষ্টগণের সহিত তাঁহার কবর নিরূপণ” করা হবে। কিন্তু, আরও কিছু জড়িত রয়েছে। যিশাইয় এও বলেছিলেন যে, মশীহ “অনেকের পাপভার” তুলে নেবেন। যিশু মুক্তির মূল্য জোগানোর মাধ্যমে তা করেছিলেন। (যিশা. ৫৩:৮, ৯, ১২; মথি ২০:২৮; রোমীয় ৫:৮) তাই, যিশুর মৃত্যু, কবর ও পুনরুত্থান আমাদের পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্ত হওয়ার এবং মৃত প্রিয়জনদের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার যে-প্রত্যাশা রয়েছে, সেটার জন্য এক দৃঢ় ভিত্তি জোগায়।

অনেক সাক্ষির কাছ থেকে পাওয়া প্রমাণ

৭-৮. কী খ্রিস্টানদের এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে সাহায্য করে যে, যিশুকে পুনরুত্থিত করা হয়েছে?

পুনরুত্থান যে ঘটবে, সেটা বিশ্বাস করার জন্য প্রথমে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে, যিশু খ্রিস্টকে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল। কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা যিশুকে পুনরুত্থিত করেছিলেন?

এমন অনেক চাক্ষুষ সাক্ষি ছিল, যারা প্রমাণ দিয়েছিল যে, যিশুকে পুনরুত্থিত করা হয়েছে। (১ করি. ১৫:৫-৭) পৌলের তালিকায় প্রথম যে-সাক্ষির বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, তিনি হলেন প্রেরিত পিতর (কৈফা)। শিষ্যদের একটা দলও বলেছিল যে, পিতর পুনরুত্থিত যিশুকে দেখেছেন। (লূক ২৪:৩৩, ৩৪) এ ছাড়া, ‘সেই ১২ জন’ অর্থাৎ প্রেরিতেরাও যিশুকে তাঁর পুনরুত্থানের পর দেখেছিলেন। এরপর, খ্রিস্ট “একই সময়ে ৫০০ জনেরও বেশি শিষ্যকে দেখা” দিয়েছিলেন আর তা সম্ভবত গালীলের সেই আনন্দপূর্ণ সময়ে, যে-বিষয়ে মথি ২৮:১৬-২০ পদে উল্লেখ করা আছে। এ ছাড়া, যিশু “যাকোবকে,” স্পষ্টতই তাঁর সৎভাইকে ‘দেখা দিয়েছিলেন,’ যিনি আগে বিশ্বাস করেননি যে, যিশুই মশীহ। (যোহন ৭:৫) পুনরুত্থিত যিশুকে দেখার পর, যাকোব তা বিশ্বাস করেছিলেন। আগ্রহের বিষয় হল, প্রায় ৫৫ খ্রিস্টাব্দে পৌল যখন এই চিঠি লিখেছিলেন, তখন পুনরুত্থানের চাক্ষুষ সাক্ষিদের মধ্যে অনেকে জীবিত ছিল। তাই কেউ যদি সেই বিষয়ে সন্দেহ করত, তা হলে সে সেই চাক্ষুষ সাক্ষিদের অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য সাক্ষিদের সঙ্গে কথা বলতে পারত।

৯. প্রেরিত ৯:৩-৫ পদে কী বলা আছে, যা দেখায় যে, পৌল এই বিষয়ে আরও প্রমাণ দিতে পারেন, যিশুকে পুনরুত্থিত করা হয়েছে?

পরে যিশু পৌলকে দেখা দিয়েছিলেন। (১ করি. ১৫:৮) পৌল (শৌল) যখন দামাস্কের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি পুনরুত্থিত যিশুর কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলেন এবং তাঁকে স্বর্গীয় প্রতাপে দেখতে পেয়েছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ৯:৩-৫.) পৌলের প্রতি যা ঘটেছিল, তা এই বিষয়ে আরও প্রমাণ দিয়েছিল যে, যিশুর পুনরুত্থান কোনো অবাস্তব কাহিনি ছিল না।—প্রেরিত ২৬:১২-১৫.

১০. যিশুকে যে পুনরুত্থিত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে পৌলের বিশ্বাস তাকে কী করতে অনুপ্রাণিত করেছিল?

১০ পৌলের সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশেষভাবে কারো কারো জন্য অনেক আগ্রহজনক ছিল কারণ তিনি একসময় খ্রিস্টানদের তাড়না করতেন। পরবর্তী সময়ে পৌল যখন বিশ্বাস করেছিলেন যে, যিশুকে পুনরুত্থিত করা হয়েছে, তখন অন্যেরাও যাতে সেই সত্য বিশ্বাস করে, সেইজন্য তিনি কঠোর প্রচেষ্টা করেছিলেন। যিশু যে মারা গিয়ে পুনরুত্থিত হয়েছেন, সেই সত্য সম্বন্ধে প্রচার করতে গিয়ে তিনি প্রহার সহ্য করেছিলেন, কারাগারে গিয়েছিলেন এবং জাহাজডুবির শিকার হয়েছিলেন। (১ করি. ১৫:৯-১১; ২ করি. ১১:২৩-২৭) যিশুকে যে পুনরুত্থিত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে পৌল এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, তিনি তার এই বিশ্বাস সম্বন্ধে প্রচার করার কারণে মারা যেতেও ইচ্ছুক ছিলেন। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কাছ থেকে পাওয়া প্রমাণ কি আপনাকেও এটা বিশ্বাস করতে সাহায্য করে না যে, যিশুকে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল? আর এটা কি পুনরুত্থানের উপর আপনার বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে না?

ভুল দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে সংশোধন করা

১১. কেন করিন্থের কোনো কোনো খ্রিস্টানের হয়তো পুনরুত্থান সম্বন্ধে ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল?

১১ গ্রিক নগর করিন্থে বসবাসরত কোনো কোনো খ্রিস্টানের পুনরুত্থান সম্বন্ধে এতটাই ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যে, কেউ কেউ এমনকী বলত, “মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থান হবে না।” কেন? (১ করি. ১৫:১২) আরেকটা গ্রিক নগর এথেন্সের দার্শনিকেরা যিশুর পুনরুত্থান নিয়ে উপহাস করত। এইরকম চিন্তাধারা করিন্থের কারো কারো উপর, এমনকী খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর উপর প্রভাব ফেলেছিল। (প্রেরিত ১৭:১৮, ৩১, ৩২) আবার অন্যেরা হয়তো পুনরুত্থানের বিষয়টাকে রূপক অর্থে নিয়েছিল অর্থাৎ একজন ব্যক্তি একসময় পাপের কারণে “মৃত” ছিলেন কিন্তু খ্রিস্টান হওয়ার মাধ্যমে “জীবিত” হয়েছেন। পুনরুত্থান সম্বন্ধে ভুল দৃষ্টিভঙ্গির কারণ যা-ই হোক না কেন, পুনরুত্থানকে অস্বীকার করার অর্থ ছিল, তাদের বিশ্বাস বৃথা। ঈশ্বর যদি যিশুকে পুনরুত্থিত না করতেন, তা হলে তো কোনো মুক্তির মূল্য দেওয়া হতো না আর সকলে পাপীই থাকত। তাই, যারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করেছিল, তাদের কোনো প্রকৃত আশা ছিল না।—১ করি. ১৫:১৩-১৯; ইব্রীয় ৯:১২, ১৪.

১২. প্রথম পিতর ৩:১৮, ২২ পদের সঙ্গে মিল রেখে কীভাবে যিশুর পুনরুত্থান, আগে যে-পুনরুত্থানগুলো হয়েছিল, সেগুলোর চেয়ে আলাদা ছিল?

১২ পৌল ব্যক্তিগতভাবে জানতেন, “খ্রিস্টকে পুনরুত্থিত করা” হয়েছিল। যিশুর পুনরুত্থান, আগে যে-পুনরুত্থানগুলো হয়েছিল, সেগুলোর চেয়ে অনেক শ্রেষ্ঠ ছিল কারণ যে-লোকদের পুনরুত্থিত করা হয়েছিল, তারা আবার মারা গিয়েছিল। পৌল বলেছিলেন, যিশুকে “প্রথম ফল হিসেবে . . . সেই ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্রথমে পুনরুত্থিত করা হয়েছে, যারা মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়েছে।” কোন অর্থে যিশুর পুনরুত্থান প্রথম ছিল? তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যাঁকে একজন আত্মিক ব্যক্তি হিসেবে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল এবং মানবজাতির মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি স্বর্গে গিয়েছিলেন।—১ করি. ১৫:২০; প্রেরিত ২৬:২৩; পড়ুন, ১ পিতর ৩:১৮, ২২.

যাদের “জীবিত করা হবে”

১৩. আদম ও যিশুর মধ্যে পৌল কোন পার্থক্য তুলে ধরেছিলেন?

১৩ কীভাবে এক জন ব্যক্তির মৃত্যু লক্ষ লক্ষ লোকের জন্য জীবন নিয়ে আসতে পারে? পৌল এই প্রশ্নের যুক্তিসংগত উত্তর দিয়েছিলেন। আদম মানবজাতির উপর যা নিয়ে এসেছিলেন এবং খ্রিস্টের মাধ্যমে যা সম্ভবপর হয়েছে, সেটার মধ্যে পৌল পার্থক্য তুলে ধরেছিলেন। আদমের বিষয়ে পৌল লিখেছিলেন: “একজন মানুষের মধ্য দিয়ে মৃত্যু এসেছে।” আদম যখন পাপ করেছিলেন, তখন তিনি নিজের জন্য এবং তার বংশধরদের জন্য মৃত্যু নিয়ে এসেছিলেন। আমরা এখনও তার অবাধ্যতার দুঃখজনক পরিণতি ভোগ করছি। ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পুনরুত্থিত করার কারণে যা সম্ভবপর হয়েছে, সেটার চেয়ে কতই-না ভিন্ন এক পরিণতি! “মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থানও একজন মানুষের” অর্থাৎ যিশুর “মধ্য দিয়ে হবে।” পৌল যুক্তি করেছিলেন, “ঠিক যেমন আদমের মাধ্যমে সকলে মারা যায়, তেমনই খ্রিস্টের মাধ্যমে সকলকে জীবিত করা হবে।”—১ করি. ১৫:২১, ২২.

১৪. আদমকে কি পুনরুত্থিত করা হবে? ব্যাখ্যা করুন।

১৪ পৌল যখন বলেছিলেন, “আদমের মাধ্যমে সকলে মারা যায়,” তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? পৌল আদমের বংশধরদের বিষয়ে বলছিলেন, যারা আদমের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাপ ও অসিদ্ধতা পেয়েছে আর তাই মারা যায়। (রোমীয় ৫:১২) আদম সেই ব্যক্তিদের মধ্যে নেই, যাদের “জীবিত করা হবে।” আদম খ্রিস্টের মুক্তির মূল্য থেকে উপকার লাভ করবেন না কারণ তিনি এমন একজন সিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিলেন। আদমের পরিণতি সেই ব্যক্তিদের মতোই, “মনুষ্যপুত্র” যাদের “ছাগ” হিসেবে বিচার করবেন অর্থাৎ তারা “অনন্তমৃত্যু ভোগ করবে।”—মথি ২৫:৩১-৩৩, ৪৬; ইব্রীয় ৫:৯.

স্বর্গে পুনরুত্থিত করা হয়েছে, এমন অনেকের মধ্যে যিশুই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি (১৫-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৫. সেই ‘সকলের’ অন্তর্ভুক্ত কারা, যাদের “জীবিত করা হবে”?

১৫ লক্ষ করুন, পৌল বলেছিলেন, “খ্রিস্টের মাধ্যমে সকলকে জীবিত করা হবে।” (১ করি. ১৫:২২) পৌল করিন্থের সেই অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে চিঠি লিখেছিলেন, যাদের স্বর্গে পুনরুত্থিত করা হবে। “খ্রিস্টের সঙ্গে এক হওয়ার জন্য ঈশ্বর” সেই খ্রিস্টানদের “পৃথক করেছেন এবং পবিত্র ব্যক্তি হওয়ার জন্য আহ্বান করেছেন।” আর পৌল সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে উল্লেখ করেছেন, “যারা খ্রিস্টের শিষ্য হিসেবে মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়েছে।” (১ করি. ১:২; ১৫:১৮; ২ করি. ৫:১৭) আরেকটা চিঠিতে পৌল লিখেছিলেন, যারা “[যিশুর] মতো মৃত্যুতে তাঁর সঙ্গে একতাবদ্ধ” হয়েছে, তারা “তাঁর মতো পুনরুত্থানেও তাঁর সঙ্গে একতাবদ্ধ” হবে। (রোমীয় ৬:৩-৫) যিশুকে একজন আত্মিক ব্যক্তি হিসেবে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল এবং তিনি স্বর্গে গিয়েছেন। আর খ্রিস্টের এমন সমস্ত শিষ্যের প্রতি একই বিষয় ঘটবে, যারা পবিত্র শক্তির দ্বারা অভিষিক্ত।

১৬. সেইসময় পৌল কী বুঝিয়েছিলেন, যখন তিনি যিশুকে “প্রথম ফল” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন?

১৬ পৌল লিখেছিলেন যে, খ্রিস্টকে “প্রথম ফল হিসেবে . . . সেই ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্রথমে” পুনরুত্থিত করা হয়েছে, “যারা মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়েছে।” মনে রাখবেন, অন্যদের, যেমন লাসারকে পৃথিবীতে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল, কিন্তু যিশুই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যাঁকে আত্মিক ব্যক্তি হিসেবে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল এবং যিনি অনন্তজীবন লাভ করেছিলেন। তাঁকে শস্যের সেই প্রথম ফলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা ইজরায়েলীয়েরা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করত। আর যিশুকে “প্রথম ফল” হিসেবে উল্লেখ করার মাধ্যমে পৌল বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, যিশুর পরে অন্যদেরও স্বর্গে পুনরুত্থিত করা হবে। প্রেরিতেরা এবং পবিত্র শক্তির দ্বারা অভিষিক্ত খ্রিস্টের অন্য শিষ্যেরা যিশুর পরে পুনরুত্থিত হবে। পরিশেষে তাদেরও যিশুর মতোই স্বর্গে পুনরুত্থিত করা হবে।

১৭. পবিত্র শক্তির দ্বারা অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা কখন তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করবে?

১৭ পৌল যখন করিন্থীয়দের উদ্দেশে চিঠি লিখেছিলেন, তখন খ্রিস্টের সেই শিষ্যদের স্বর্গীয় পুনরুত্থান শুরু হয়নি, যাদের পবিত্র শক্তির দ্বারা অভিষিক্ত করা হয়েছিল। এর পরিবর্তে, পৌল ভবিষ্যতের এক সময়কে নির্দেশ করেছিলেন: “প্রত্যেককে তাদের পালা অনুযায়ী জীবিত করা হবে: প্রথমে খ্রিস্ট। এরপর সেই ব্যক্তিরা, যারা খ্রিস্টের লোক। খ্রিস্টের উপস্থিতির সময় এই ব্যক্তিদের জীবিত করা হবে।” (১ করি. ১৫:২৩; ১ থিষল. ৪:১৫, ১৬) বর্তমানে আমরা ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত খ্রিস্টের “উপস্থিতির সময়” বাস করছি। হ্যাঁ, পবিত্র শক্তির দ্বারা অভিষিক্ত যে-খ্রিস্টানেরা মারা গিয়েছে, তাদের ও প্রেরিতদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করার এবং “[যিশুর] মতো পুনরুত্থানেও তাঁর সঙ্গে একতাবদ্ধ” হওয়ার জন্য সেই উপস্থিতির সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

আপনার এক নিশ্চিত প্রত্যাশা রয়েছে!

১৮. (ক) কেন আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, স্বর্গীয় পুনরুত্থানের পরে আরেক ধরনের পুনরুত্থান ঘটবে? (খ) ১ করিন্থীয় ১৫:২৪-২৬ পদে যেমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, স্বর্গে কী হবে?

১৮ বাইবেল বলে, পৌল এবং অন্য যে-ব্যক্তিরা স্বর্গে যাবেন, তারা ‘প্রথম পুনরুত্থানের’ অংশী হবেন। (ফিলি. ৩:১১) এটা কি ইঙ্গিত দেয় না যে, আরেক ধরনের পুনরুত্থান ঘটবে? এই বিষয়টা ইয়োব নিজের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যা বলেছিলেন, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (ইয়োব ১৪:১৫) “যারা খ্রিস্টের লোক,” তারা “খ্রিস্টের উপস্থিতির সময়” যিশুর সঙ্গে স্বর্গে থাকবে, যখন তিনি সমস্ত সরকার এবং সমস্ত কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা শেষ করে দেবেন। এমনকী “শেষ শত্রু যে মৃত্যু,” সেটাকেও ধ্বংস করে দেওয়া হবে। নিশ্চিতভাবেই সেই সমস্ত ব্যক্তি আর কখনো মারা যাবে না, যাদের স্বর্গে পুনরুত্থিত করা হবে। কিন্তু, সেই সমস্ত অনুগত খ্রিস্টানের বিষয়ে কী বলা যায়, যাদের স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে বাস করার আশা নেই?—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:২৪-২৬.

১৯. যাদের পার্থিব আশা রয়েছে, তারা কী প্রত্যাশা করতে পারে?

১৯ যাদের পার্থিব আশা রয়েছে, তারা কী প্রত্যাশা করতে পারে? তারা পৌলের এই কথাগুলো থেকে প্রত্যাশা লাভ করতে পারে: “আমিও ঈশ্বরের উপর এই প্রত্যাশা করি যে, ধার্মিক ও অধার্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) স্পষ্টতই, কোনো অধার্মিক ব্যক্তি স্বর্গে প্রবেশ করতে পারে না, তাই এই কথাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, ভবিষ্যতে পৃথিবীতে পুনরুত্থান ঘটবে।

আমরা যদি পুনরুত্থানে বিশ্বাস করি, তা হলে আমরা এক সুখী ভবিষ্যতের জন্য প্রতীক্ষা করতে পারব (২০ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

২০. কীভাবে আপনার প্রত্যাশা আরও দৃঢ় হয়েছে?

২০ কোনো সন্দেহ নেই, “পুনরুত্থান হবে”! যাদের পৃথিবীতে পুনরুত্থিত করা হবে, তাদের পৃথিবীতেই চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা থাকবে। আপনি এই প্রতিজ্ঞার উপর আস্থা রাখতে পারেন। এই প্রত্যাশা আপনাকে সেই প্রিয়জনদের বিষয়ে সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে, যারা মারা গিয়েছে। তাদের সেই সময়ে পুনরুত্থিত করা হবে, যখন খ্রিস্ট ও অন্যেরা “১,০০০ বছর ধরে . . . রাজত্ব” করবেন। (প্রকা. ২০:৬) আপনিও এই নিশ্চিত প্রত্যাশা রাখতে পারেন যে, আপনি যদি হাজার বছরের রাজত্ব শুরু হওয়ার আগে মারাও যান, আপনাকে পুনরুত্থিত করা হবে। এই “আশা আমাদের হতাশার দিকে পরিচালিত করে না।” (রোমীয় ৫:৫) এটা এখন আপনাকে দৃঢ় থাকার জন্য সাহায্য করতে এবং যিহোবার সেবায় আপনার আনন্দকে বৃদ্ধি করতে পারে। কিন্তু, ১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায় থেকে আমরা আরও কিছু শিখতে পারি, যেগুলো নিয়ে পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।

গান সংখ্যা ১২ অনন্তজীবনের প্রতিজ্ঞা

^ অনু. 5 প্রথম করিন্থীয় ১৫ অধ্যায় পুনরুত্থানের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। কেন এই শিক্ষা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন আমরা এই আস্থা রাখতে পারি যে, যিশুকে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল? এই প্রবন্ধে পুনরুত্থান সম্বন্ধে এই প্রশ্নগুলোর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।

^ অনু. 56 ছবি সম্বন্ধে: যিশুই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যাঁকে স্বর্গে তুলে নেওয়া হয়েছে। (প্রেরিত ১:৯) যিশুর সঙ্গে যে-শিষ্যেরা স্বর্গে যোগ দেবেন, তাদের মধ্যে কয়েক জন হলেন থোমা, যাকোব, লুদিয়া, যোহন, মরিয়ম ও পৌল।

^ অনু. 58 ছবি সম্বন্ধে: একজন ভাই তার প্রিয় স্ত্রীকে হারিয়েছেন, যার সঙ্গে তিনি দীর্ঘসময় ধরে সেবা করেছেন। তার এই আস্থা রয়েছে যে, তার স্ত্রীকে পুনরুত্থিত করা হবে আর তিনি অনুগতভাবে যিহোবার সেবা করে যাচ্ছেন।