সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫১

নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে এমন ব্যক্তিদের যিহোবা রক্ষা করেন

নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে এমন ব্যক্তিদের যিহোবা রক্ষা করেন

“সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন।”—গীত. ৩৪:১৮.

গান সংখ্যা ৫১ আমরা যিহোবাতে আসক্ত

সারাংশ *

১-২. এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

কখনো কখনো আমরা হয়তো এই বাস্তব বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করি যে, আমাদের জীবন সংক্ষিপ্ত এবং “উদ্বেগে পরিপূর্ণ।” (ইয়োব ১৪:১) তাই, স্বাভাবিকভাবেই আমরা মাঝে মাঝে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি। প্রাচীন কালে যিহোবার অনেক দাস একইরকম বোধ করেছিলেন। কেউ কেউ এমনকী মারাও যেতে চেয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৯:২-৪; ইয়োব ৩:১-৩, ১১; ৭:১৫, ১৬) কিন্তু, যিহোবা—যে-ঈশ্বরের উপর তারা নির্ভর করত—সবসময় তাদের সান্ত্বনা জুগিয়েছিলেন এবং তাদের শক্তিশালী করেছিলেন। তাদের বিবরণ আমাদের সান্ত্বনা ও নির্দেশনার জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।—রোমীয় ১৫:৪.

এই প্রবন্ধে আমরা যিহোবার এমন কয়েক জন দাস সম্বন্ধে বিবেচনা করব, যারা সেইসমস্ত পরীক্ষা ভোগ করেছিলেন, যেগুলোর কারণে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। এরা হলেন যাকোবের ছেলে যোষেফ, বিধবা নয়মী ও তার বউমা রূৎ, একজন লেবীয়—যিনি ৭৩ গীত লিখেছেন—এবং প্রেরিত পিতর। কীভাবে যিহোবা তাদের শক্তিশালী করেছিলেন? আর তাদের উদাহরণ থেকে ব্যক্তিগতভাবে আমরা কোন শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের আশ্বাস দেয়, “সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী” এবং তিনি “চূর্ণমনাদের” বা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে, এমন ব্যক্তিদের “পরিত্রাণ করেন” বা রক্ষা করেন।—গীত. ৩৪:১৮.

যোষেফ নিষ্ঠুর অবিচার ভোগ করেছিলেন

৩-৪. যোষেফ যখন তরুণবয়সি ছিলেন, তখন তার প্রতি কী ঘটেছিল?

যোষেফের বয়স সেইসময় ১৭ বছর ছিল, যখন ঈশ্বর তাকে দুটো স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। এই স্বপ্নগুলো ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, একদিন যোষেফ পরিবারের মধ্যে সম্মানজনক পদ লাভ করবেন। (আদি. ৩৭:৫-১০) কিন্তু, সেই স্বপ্নগুলো দেখার অল্পসময়ের মধ্যেই যোষেফের জীবন পুরোপুরি পালটে গিয়েছিল। তাকে সম্মান দেখানো তো দূরের কথা, তার ভাইয়েরা তাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। পরে তিনি পোটীফর নামে একজন মিশরীয় কর্মকর্তার বাড়িতে দাস হয়ে উঠেছিলেন। (আদি. ৩৭:২১-২৮) অল্পসময়ের মধ্যেই তিনি তার বাবার প্রিয় ছেলে থেকে মিশরে এমন একজন ব্যক্তির নীচু দাসে পরিণত হয়েছিলেন, যিনি যিহোবাকে জানতেন না।—আদি. ৩৯:১.

পরবর্তী সময়ে যোষেফের পরিস্থিতি এমনকী আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। পোটীফরের স্ত্রী যোষেফের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করার মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিলেন। পোটীফর এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই যোষেফকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিলেন এবং সেখানে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। (আদি. ৩৯:১৪-২০; গীত. ১০৫:১৭, ১৮) তরুণবয়সি যোষেফের বিরুদ্ধে যখন ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন, তা একটু কল্পনা করুন। আর সেই অভিযোগ যিহোবার নামের উপর যে-নিন্দা নিয়ে এসেছিল, তা ভেবে দেখুন। নিশ্চিতভাবেই, যোষেফের নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ার কারণ ছিল!

৫. কীভাবে যোষেফ নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে উঠেছিলেন?

যোষেফ যখন একজন দাস ছিলেন এবং কারাগারে ছিলেন, তখন তার পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কী তাকে এক উত্তম দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল? তিনি যে-বিষয়গুলো আর করতে পারবেন না, সেগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে তিনি মনোযোগ দিয়ে সেই কাজ করেছিলেন, যা করার দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছিল। সর্বোপরি, যোষেফ তার জীবনে যিহোবাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে স্থান দিয়েছিলেন। এর ফলে, যিহোবা যোষেফের সমস্ত কাজে আশীর্বাদ করেছিলেন।—আদি. ৩৯:২১-২৩.

৬. কীভাবে যোষেফ হয়তো তার স্বপ্নগুলোর মাধ্যমে উৎসাহ লাভ করেছিলেন?

এ ছাড়া, যোষেফ হয়তো সেই স্বপ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে উৎসাহ লাভ করেছিলেন, যেগুলো আগে যিহোবা তাকে দেখিয়েছিলেন। এই স্বপ্নগুলো ইঙ্গিত দিয়েছিল, তিনি তার পরিবারকে আবারও দেখতে পাবেন এবং তার পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আর এমনটাই ঘটেছিল। যোষেফের বয়স যখন ৩৭ বছর, তখন তার স্বপ্নগুলো চমৎকার উপায়ে পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল!—আদি. ৩৭:৭, ৯, ১০; ৪২:৬, ৯.

৭. প্রথম পিতর ৫:১০ পদ অনুযায়ী কী আমাদের পরীক্ষা সহ্য করতে সাহায্য করবে?

আমাদের জন্য শিক্ষা। যোষেফের কাহিনি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই জগৎ নিষ্ঠুর এবং লোকেরা আমাদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করবে। এমনকী একজন সহবিশ্বাসীও আমাদের কষ্ট দিতে পারেন। কিন্তু, আমরা যদি যিহোবাকে আমাদের শৈল বা উচ্চদুর্গ হিসেবে দেখি, তা হলে আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ব না অথবা তাঁর সেবা করা বন্ধ করে দেব না। (গীত. ৬২:৬, ৭; পড়ুন, ১ পিতর ৫:১০.) এ ছাড়া, মনে করে দেখুন, সেইসময় যোষেফের বয়স প্রায় ১৭ বছর ছিল, যখন যিহোবা তাকে সেই স্বপ্নগুলো দেখিয়েছিলেন। স্পষ্টতই, তাঁর তরুণবয়সি দাসদের উপরও যিহোবার আস্থা রয়েছে। বর্তমানে, যোষেফের মতো অনেক তরুণবয়সি ব্যক্তি রয়েছে। তাদেরও যিহোবার উপর বিশ্বাস রয়েছে। তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে এমনকী অন্যায্যভাবে কারাগারে বন্দি করা হয়েছে, কারণ তারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের আনুগত্যের ব্যাপারে আপোশ করেনি।—গীত. ১১০:৩.

দু-জন নারী দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন

৮. নয়মী ও রূতের প্রতি কী ঘটেছিল?

দুর্ভিক্ষের কারণে নয়মী এবং তার পরিবার যিহূদায় তাদের বাড়ি ত্যাগ করে মোয়াব দেশে বিদেশি হিসেবে বসবাস করতে শুরু করেন। সেখানে নয়মীর স্বামী ইলীমেলক মারা যান আর নয়মী তার দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। পরে, তার দুই ছেলে দু-জন মোয়াবীয় নারী, রূৎ ও অর্পাকে বিয়ে করেন। প্রায় দশ বছর পর, নয়মীর ছেলেরাও মারা যান আর তাদের ঘরে কোনো সন্তান ছিল না। (রূৎ. ১:১-৫) একটু কল্পনা করুন, সেই তিন জন নারী দুঃখার্ত হয়ে কতটা ভেঙে পড়েছিলেন! অবশ্য, রূৎ ও অর্পা পুনরায় বিয়ে করতে পারতেন। কিন্তু, কে বৃদ্ধা নয়মীর যত্ন নেবে? নয়মী এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন যে, একসময় তিনি বলেছিলেন: “আমাকে নয়মী [মনোরমা] বলিও না, বরং মারা [তিক্তা] বলিয়া ডাক, কেননা সর্ব্বশক্তিমান আমার প্রতি অতিশয় তিক্ত ব্যবহার করিয়াছেন।” এই সমস্ত দুঃখজনক ঘটনার পর, নয়মী বেথলেহেমে (বৈৎলেহম) ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আর রূৎ তার সঙ্গে যান।—রূৎ. ১:৭, ১৮-২০

নয়মী ও রূৎকে ঈশ্বর এই প্রমাণ দিয়েছিলেন যে, নিরুৎসাহিতা ও দুঃখ কাটিয়ে ওঠার জন্য তিনি তাঁর উপাসকদের সাহায্য করতে পারেন। তিনি কি আপনাকেও সাহায্য করতে পারেন? (৮-১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৯. রূতের বিবরণ ১:১৬, ১৭, ২২ পদ অনুযায়ী রূৎ কীভাবে নয়মীকে উৎসাহিত করেছিলেন?

কী নয়মীকে সাহায্য করেছিল? সেটা ছিল অনুগত প্রেম। উদাহরণ স্বরূপ, নয়মীর সঙ্গে থাকার মাধ্যমে রূৎ তার প্রতি অনুগত প্রেম দেখিয়েছিলেন। (পড়ুন, রূতের বিবরণ ১:১৬, ১৭, ২২.) বেথলেহেমে রূৎ নিজের ও নয়মীর জন্য শস্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। এর ফলে, যুবতী রূৎ শীঘ্রই সুনাম অর্জন করেছিলেন।—রূৎ. ৩:১১; ৪:১৫.

১০. যিহোবা কোন কোন উপায়ে নয়মী ও রূতের মতো অভাবী ব্যক্তিদের প্রতি প্রেম দেখিয়েছিলেন?

১০ যিহোবা ইজরায়েলের লোকদের এমন একটা আইন দিয়েছিলেন, যেটার মাধ্যমে অভাবী ব্যক্তিদের প্রতি, যেমন নয়মী ও রূতের প্রতি তাঁর সমবেদনা প্রকাশ পেয়েছিল। তিনি তাঁর লোকদের বলেছিলেন, তারা যখন শস্য কাটবে, তখন জমির কিনারার শস্য না কেটে তা যেন দরিদ্রদের সংগ্রহের জন্য রেখে দেয়। (লেবীয়. ১৯:৯, ১০) তাই, নয়মী ও রূৎকে খাবারের জন্য ভিক্ষা করতে হয়নি। তারা মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে খাবার লাভ করতে পারতেন।

১১-১২. বোয়স কীভাবে নয়মী ও রূৎকে আনন্দিত করেছিলেন?

১১ রূৎ যে-মালিকের জমিতে শস্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন একজন ধনী ব্যক্তি আর তার নাম হল বোয়স। নয়মীর প্রতি রূতের আনুগত্য ও প্রেম দেখে তিনি এতটাই অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি নয়মীর পরিবারের জমি পুনরায় কিনে নিয়েছিলেন এবং রূৎকে তার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। (রূৎ. ৪:৯-১৩) সেই দম্পতির একটি ছেলে হয়েছিল, যার নাম হল ওবেদ; পরে তিনি রাজা দায়ূদের ঠাকুরদাদা হয়েছিলেন।—রূৎ. ৪:১৭.

১২ একটু কল্পনা করুন, নয়মী যখন ছোট্ট ওবেদকে কোলে নিয়েছিলেন এবং হৃদয় উজাড় করে যিহোবাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন, তখন তিনি কতটা আনন্দিত হয়েছিলেন! কিন্তু, নয়মী ও রূতের জন্য আরও উত্তম কিছু অপেক্ষা করছে। পুনরুত্থানের সময় তারা জানতে পারবেন যে, ওবেদ প্রতিজ্ঞাত মশীহ, যিশু খ্রিস্টের একজন পূর্বপুরুষ ছিলেন! 

১৩. নয়মী ও রূতের বিবরণ থেকে আমরা কোন মূল্যবান শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি?

১৩ আমাদের জন্য শিক্ষা। আমাদের যখন বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তখন আমরা হয়তো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি। আমরা হয়তো মনে করতে পারি, আমাদের সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান নেই। এই সময়গুলোতে, আমাদের স্বর্গীয় পিতার উপর পুরোপুরি নির্ভর করা এবং আমাদের সহউপাসকদের নিকটে থাকা উচিত। অবশ্য, যিহোবা হয়তো আমাদের সমস্যাগুলো দূর করে দেন না। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি নয়মীর স্বামীকে এবং তার ছেলেদের ফিরিয়ে দেননি। তবে, তিনি আমাদের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবেন, হতে পারে আমাদের প্রতি করা আমাদের ভাই-বোনদের সদয় কাজগুলোর মাধ্যমে।—হিতো. ১৭:১৭.

একজন লেবীয় যিহোবার সেবা করা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন

যিহোবার সেবা করত না এমন ব্যক্তিদের সাফল্য দেখে ৭৩ গীতের রচয়িতা যিহোবার সেবা করা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এমনটা আমাদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে (১৪-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. কেন একজন লেবীয় অত্যন্ত নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন?

১৪ তিয়াত্তর গীতের রচয়িতা ছিলেন একজন লেবীয়। এই কারণে যিহোবার উপাসনার স্থানে সেবা করার বিশেষ সুযোগ তার ছিল। তা সত্ত্বেও, তার জীবনের একটা পর্যায়ে তিনি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। কেন? তিনি দুষ্ট ও গর্বিত ব্যক্তিদের দেখে ঈর্ষা করতে শুরু করেছিলেন, তবে এর কারণ এই নয় যে, তিনি তাদের মতো মন্দ কাজ করতে চেয়েছিলেন, বরং তাদের দেখে মনে হয়েছিল যে, তারা তার চেয়ে আরও উত্তম এক জীবন উপভোগ করছে। (গীত. ৭৩:২-৯, ১১-১৪) তাদের সমস্ত কিছু, যেমন ধনসম্পদ এবং এক উত্তম জীবন ছিল বলে মনে হয়েছিল। এ ছাড়া, মনে হয়েছিল, তাদের জীবনে কোনো উদ্‌বিগ্নতা নেই। তাদের সাফল্য দেখে গীতরচক এতটাই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি বলেছিলেন: “নিশ্চয় আমি বৃথাই চিত্ত পরিষ্কার করিয়াছি, নির্দ্দোষতায় হস্ত প্রক্ষালন করিয়াছি।” স্পষ্টতই, তিনি যিহোবার উপাসনা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পরিচালিত হতে পারতেন।

১৫. গীতসংহিতা ৭৩:১৬-১৯, ২২-২৫ পদ অনুযায়ী কীভাবে সেই লেবীয় নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে উঠেছিলেন, যিনি এই গীত রচনা করেছেন?

১৫ গীতসংহিতা ৭৩:১৬-১৯, ২২-২৫ পদ পড়ুন। সেই লেবীয় ‘ঈশ্বরের ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিয়াছিলেন।’ সেখানে তিনি হয়তো সহউপাসকদের মাঝে তার পরিস্থিতি নিয়ে শান্তভাবে, স্পষ্টভাবে ও প্রার্থনাপূর্বক চিন্তা করতে পেরেছিলেন। এর ফলে, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি বোকার মতো চিন্তা করছেন আর তিনি এমন একটা বিপদজনক পথের দিকে যাচ্ছেন, যেটার কারণে তিনি যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারেন। তিনি এও বুঝতে পেরেছিলেন, দুষ্ট ব্যক্তিরা ‘পিচ্ছিল স্থানে’ রয়েছে এবং তারা ‘ত্রাসে নিঃশেষে সংহার’ হবে। সেই লেবীয় গীতরচককে ঈর্ষা ও নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে দেখতে হয়েছিল। তা করার মাধ্যমে তিনি পুনরায় শান্তি ফিরে পেয়েছিলেন এবং আনন্দিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “পৃথিবীতেও [সদাপ্রভু] ভিন্ন আর কিছুতে আমার প্রীতি নাই।”

১৬. একজন লেবীয়ের কাছ থেকে আমরা কোন শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি?

১৬ আমাদের জন্য শিক্ষা। আসুন, আমরা যেন কখনো সেই দুষ্ট লোকদের দেখে ঈর্ষা না করি, যাদের এক উত্তম জীবন রয়েছে বলে মনে হয়। তাদের সুখ বাহ্যিক ও ক্ষণস্থায়ী; তাদের কোনো স্থায়ী ভবিষ্যৎ নেই। (উপ. ৮:১২, ১৩) আমরা যদি তাদের দেখে ঈর্ষা করি, তা হলে আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ব আর এমনকী যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হারিয়ে ফেলব। তাই, আপনি যদি সেই লেবীয়ের মতো অনুভব করতে শুরু করেন, তা হলে তিনি যা করেছিলেন, তা করুন। যিহোবার প্রেমপূর্ণ পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দিন এবং যিহোবার ইচ্ছা পালন করে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করুন। আপনি যখন যিহোবাকে অন্য সমস্ত কিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসবেন, তখন আপনি প্রকৃত সুখ খুঁজে পাবেন। আর আপনি ‘প্রকৃত জীবনের’ পথে থাকবেন।—১ তীম. ৬:১৯.

পিতর নিজের দুর্বলতার কারণে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন

পিতর কীভাবে নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে উঠে ঈশ্বরের সেবার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন, তা নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে আমরা নিজেরা সাহায্য লাভ করতে এবং সেইসঙ্গে অন্যদের সাহায্য করতে পারব (১৭-১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. কোন কোন কারণে পিতর নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন?

১৭ প্রেরিত পিতর একজন উদ্যোগী ব্যক্তি ছিলেন; কিন্তু কখনো কখনো তিনি চিন্তা না করেই কথা বলতেন অথবা কাজ করতেন আর এরপর সেই কথা অথবা কাজের জন্য অনুশোচনা করতেন। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু যখন তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন যে, তিনি কষ্ট ভোগ করবেন এবং মারা যাবেন, তখন পিতর তাকে তিরস্কার করে বলেছিলেন: “আপনার প্রতি কখনোই এমনটা ঘটবে না।” (মথি ১৬:২১-২৩) সেইসময় যিশু পিতরকে সংশোধন করেছিলেন। একদল লোক যখন যিশুকে গ্রেপ্তার করতে এসেছিল, তখন পিতর চিন্তা না করেই কাজ করেছিলেন, তিনি মহাযাজকের একজন দাসের কান কেটে ফেলেছিলেন। (যোহন ১৮:১০, ১১) আবারও যিশু সেই প্রেরিতকে সংশোধন করেছিলেন। এ ছাড়া, পিতর গর্ব করে বলেছিলেন যে, খ্রিস্টের প্রতি যা ঘটবে, তাতে অন্য প্রেরিতেরা বিশ্বাস হারালেও, তিনি কখনো হারাবেন না! (মথি ২৬:৩৩) কিন্তু, পিতর নিজেকে যতটা দৃঢ় বলে মনে করেছিলেন, ততটা দৃঢ় ছিলেন না। সেই রাতেই পিতর খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন এবং যিশুকে তিন বার অস্বীকার করেছিলেন। অত্যন্ত নিরুৎসাহিত হয়ে পিতর ‘বাইরে চলে গিয়েছিলেন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।’ (মথি ২৬:৬৯-৭৫) তিনি নিশ্চয়ই চিন্তা করেছিলেন, যিশু আর কোনো দিন তাকে ক্ষমা করবেন না।

১৮. যিশু কীভাবে পিতরকে নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন?

১৮ তবে, পিতর এতটাই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েননি যে, তিনি যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেই ভুলের পর তিনি অন্য প্রেরিতদের সঙ্গে যিহোবার সেবা চালিয়ে গিয়েছিলেন। (যোহন ২১:১-৩; প্রেরিত ১:১৫, ১৬) কী তাকে পুনরায় ভালো বোধ করতে এবং উত্তম চিন্তা করতে সাহায্য করেছিল? একটা বিষয় হল, এর আগে যিশু প্রার্থনা করেছিলেন যেন পিতরের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে না পড়ে আর যিশু পিতরকে উৎসাহিত করেছিলেন, যেন তিনি অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসার পর তার ভাইদের শক্তিশালী করেন। যিহোবা এই আন্তরিক প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, যিশু ব্যক্তিগতভাবে পিতরকে দেখা দিয়েছিলেন, নিঃসন্দেহে তাকে উৎসাহিত করেছিলেন। (লূক ২২:৩২; ২৪:৩৩, ৩৪; ১ করি. ১৫:৫) এ ছাড়া, প্রেরিতেরা সারারাত মাছ ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর, যিশু সমস্ত প্রেরিতকে দেখা দিয়েছিলেন। সেই সময়, যিশু পিতরকে এই বিষয়টা প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছিলেন যে, পিতর তাকে কতটা ভালোবাসেন। যিশু তাঁর প্রিয় বন্ধুকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং তাকে আস্থা সহকারে আরও কাজ দিয়েছিলেন।—যোহন ২১:১৫-১৭.

১৯. আমরা যখন পাপ করি, তখন যিহোবা আমাদের সম্বন্ধে কেমন চিন্তা করেন, সেই বিষয়ে গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪ পদ আমাদের কী জানায়?

১৯ আমাদের জন্য শিক্ষা। পিতরের সঙ্গে যিশুর আচরণ দেখায় যে, যিশু অনেক করুণাময়, ঠিক যেমন তাঁর পিতা করুণাময়। তাই, আমরা যখন ভুল করি, তখন আমাদের এইরকম চিন্তা করা উচিত নয় যে, যিহোবা কখনো আমাদের ক্ষমা করবেন না। আমাদের মনে রাখতে হবে, শয়তান চায় যেন আমরা এইরকম চিন্তা করি। এর পরিবর্তে, যিহোবা আমাদের কতটা ভালোবাসেন আর তিনি যে আমাদের সীমাবদ্ধতা বোঝেন এবং আমাদের ক্ষমা করতে চান, তা নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে চিন্তা করতে হবে। আর অন্যেরা যখন এমন কিছু করে, যেটার কারণে আমরা কষ্ট পাই, তখন আসুন আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪.

২০. পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

২০ যোষেফ, নয়মী ও রূৎ, একজন লেবীয় ও পিতরের উদাহরণ আমাদের এই আশ্বাস দেয়, “সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী।” (গীত. ৩৪:১৮) তিনি আমাদের উপর পরীক্ষা ঘটতে দেন, যার ফলে আমরা কখনো কখনো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি। তবে, আমরা যখন যিহোবার সাহায্যে পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করি, তখন আমাদের বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়। (১ পিতর ১:৬, ৭) পরের প্রবন্ধে আমরা এই বিষয়ে আরও দেখব যে, কীভাবে যিহোবা তাঁর সেই অনুগত ব্যক্তিদের সাহায্য করেন, যারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে আর তা হতে পারে তাদের অসিদ্ধতা অথবা বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির কারণে।

গান সংখ্যা ২৩ যিহোবা, মোদের বল

^ অনু. 5 যোষেফ, নয়মী ও রূৎ, একজন লেবীয় এবং প্রেরিত পিতর এমন পরীক্ষাগুলো ভোগ করেছিলেন, যেগুলোর কারণে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। এই প্রবন্ধে আমরা দেখব যে, কীভাবে যিহোবা তাদের সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এবং তাদের শক্তিশালী করেছিলেন। এ ছাড়া, আমরা বিবেচনা করব যে, তাদের উদাহরণ থেকে এবং সেইসঙ্গে ঈশ্বর তাদের প্রতি যেভাবে সমবেদনা দেখিয়েছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

^ অনু. 56 ছবি সম্বন্ধে: নয়মী, রূৎ ও অর্পা তাদের বিবাহসাথির মৃত্যুর কারণে দুঃখিত ও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, রূৎ, নয়মী ও বোয়স ওবেদের জন্মের কারণে আনন্দ করেছিলেন।