সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এই জগৎ কি সত্যিই শেষ হয়ে যাবে?

এই জগৎ কি সত্যিই শেষ হয়ে যাবে?

আপনি হয়তো ইতিমধ্যেই জানেন যে, বাইবেল জগতের শেষ সম্বন্ধে বলে। (১ যোহন ২:১৭) তবে এর মানে কি এই যে, পৃথিবী থেকে মানবজাতির অস্তিত্বই মুছে যাবে? আর এই পৃথিবী এক জনশূন্য ও নির্জন ভূমিতে পরিণত হবে অথবা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে?

এই দুই প্রশ্নেরই বাইবেলভিত্তিক উত্তর হল, না!

কী শেষ হবে না?

মানবজাতির শেষ হবে না

বাইবেল যা বলে: ঈশ্বর “পৃথিবীকে . . . অনর্থক সৃষ্টি না করিয়া বাসস্থানার্থে নির্ম্মাণ করিয়াছেন।”—যিশাইয় ৪৫:১৮.

পৃথিবীর শেষ হবে না

বাইবেল যা বলে: “এক পুরুষ চলিয়া যায়, আর এক পুরুষ আইসে; কিন্তু পৃথিবী নিত্যস্থায়ী।”—উপদেশক ১:৪.

এর অর্থ: বাইবেল অনুযায়ী এই পৃথিবী কখনোই ধ্বংস হবে না আর মানুষ এখানে সবসময় বাস করবে। তাহলে এই জগতের শেষ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে?

চিন্তা করুন: নোহের দিনে যা ঘটেছিল, সেটার সঙ্গে বাইবেল এই জগতের শেষকে তুলনা করে। সেই সময়ে পৃথিবী “দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ” ছিল। (আদিপুস্তক ৬:১৩) কিন্তু, নোহ একজন ভালো ব্যক্তি ছিলেন এবং ঈশ্বরের কথা অনুযায়ী চলতেন। তাই, ঈশ্বর নোহ ও তার পরিবারকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন আর মন্দ লোকদের জলপ্লাবনের দ্বারা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। সেই ঘটনাকে ইঙ্গিত করে বাইবেল বলে: “সেই সময়কার জগৎ জলপ্লাবনে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।” (২ পিতর ৩:৬) তাহলে কী ধ্বংস করা হয়েছিল? পৃথিবীতে থাকা মন্দ লোকদের ধ্বংস করা হয়েছিল, পৃথিবীকে নয়। তাই বাইবেল যখন এই জগতের শেষ সম্বন্ধে বলে, তখন এটি এই পৃথিবী ধ্বংস করাকে বোঝায় না। এর পরিবর্তে, এটি শুধুমাত্র পৃথিবীতে থাকা মন্দ লোকদের আর তাদের মন্দ কাজের শেষকে বোঝায়।

কী শেষ হবে?

সমস্যার ও মন্দতার শেষ হবে

বাইবেল যা বলে: “আর ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, তুমি তাহার স্থান তত্ত্ব করিবে, কিন্তু সে আর নাই। কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” —গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১.

এর অর্থ: নোহের দিনের জলপ্লাবন চিরকালের জন্য মন্দতা দূর করেনি। জলপ্লাবনের পর লোকেরা আবারও মন্দ হয়ে পড়ে এবং অন্যদের জীবন কঠিন করে তোলে। কিন্তু ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন, শীঘ্রই তিনি চিরকালের জন্য সমস্ত দুষ্টতার শেষ আনবেন। কারণ বাইবেল বলে: “দুষ্ট লোক আর নাই।” হ্যাঁ, তিনি তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে দুষ্টতার শেষ আনবেন। এটা হল এমন এক সরকার, যা স্বর্গ থেকে সারা পৃথিবীতে বসবাসরত ধার্মিক লোকদের উপর শাসন করবে।

চিন্তা করুন: এখন যারা পৃথিবীতে শাসন করছে, তারা কি ঈশ্বরের রাজ্যের শাসন মেনে নেবে? বাইবেল বলে, না, তারা তা মেনে নেবে না। এর পরিবর্তে, তারা এর বিরোধিতা করবে। কতই-না মূর্খতাপূর্ণ এক কাজ! (গীতসংহিতা ২:২) সেই সময় ঈশ্বরের রাজ্য কী করবে? এটা সমস্ত মানবসরকার দূর করে দেবে এবং “আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” (দানিয়েল ২:৪৪) কিন্তু, কেন মানবসরকারকে দূর করার প্রয়োজন রয়েছে?

একমাত্র সমাধান—মানবশাসনের শেষ

বাইবেল যা বলে: “মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।”—যিরমিয় ১০:২৩.

এর অর্থ: মানুষ মানুষের উপরে শাসন করবে, এই উদ্দেশ্য নিয়ে ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেননি। এইজন্যই মানুষ কর্তৃত্ব করার ক্ষেত্রে সফল হয় না এবং নিজেদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে না।

চিন্তা করুন: ব্রিটানিকা একাডেমিয়া নামক এক ইংরেজি উৎস বলে যে, কোনো সরকারই “দরিদ্রতা, খাবারের অভাব, রোগব্যাধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ এবং অশান্তি শেষ করতে পারছে” বলে মনে হয় না। এটি এও বলে: “কেউ কেউ . . . মনে করে যে, শুধুমাত্র একটা বিশ্বব্যাপী সরকারই এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে পারবে।” কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত সরকার একজোট হলেও, তারা সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে না কারণ ত্রুটিপূর্ণ মানুষ এগুলোকে পরিচালনা দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে ঈশ্বরের রাজ্যই হল একমাত্র সমাধান। এটা হল এমন এক সরকার, যেটার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান আসবে।

তাই বাইবেল অনুযায়ী, এই জগতের শেষ বলতে বর্তমান মন্দতার শেষকে বোঝায়। আর তা নিয়ে ভালো লোকদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং তাদের জন্য এটা আসলে একটা ভালো সংবাদ কারণ এখনকার মন্দ ও ছন্নছাড়া জগতের জায়গায় ঈশ্বরের চমৎকার নতুন জগৎ আসবে!

এই সবকিছু কখন ঘটবে? পরবর্তী প্রবন্ধে বাইবেল থেকে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে।