সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২

‘যিশু যাকে ভালোবাসতেন, সেই শিষ্যের’ কাছ থেকে শিক্ষা

‘যিশু যাকে ভালোবাসতেন, সেই শিষ্যের’ কাছ থেকে শিক্ষা

“এসো আমরা পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখিয়ে চলি, কারণ প্রেম ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে।”—১ যোহন ৪:৭.

গান সংখ্যা ৩ “ঈশ্বর প্রেম”

সারাংশ *

১. ঈশ্বরের প্রেমের কারণে আমরা কেমন অনুভব করি?

প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন, “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) এই সহজসরল বিবৃতি আমাদের একটা মৌলিক সত্য সম্বন্ধে মনে করিয়ে দেয়: ঈশ্বর, যিনি জীবনের উৎস, তিনি প্রেমেরও উৎস। যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন! তাঁর প্রেমের কারণে আমরা সুরক্ষা, আনন্দ ও পরিতৃপ্তি অনুভব করি।

২. মথি ২২:৩৭-৪০ পদ অনুযায়ী দুটো সর্বমহৎ আজ্ঞা কী আর কেন আমাদের পক্ষে হয়তো দ্বিতীয় আজ্ঞার বাধ্য হওয়া কঠিন হতে পারে?

খ্রিস্টানদের জন্য প্রেম দেখানোটা বেছে নেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। এটা হল একটা আজ্ঞা। (পড়ুন, মথি ২২:৩৭-৪০.) আমরা যখন যিহোবা সম্বন্ধে ভালোভাবে জানি, তখন আমাদের পক্ষে হয়তো প্রথম আজ্ঞার বাধ্য হওয়া সহজ হয়ে ওঠে। কেন? কারণ যিহোবা হলেন সিদ্ধ; তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন এবং আমাদের সঙ্গে সদয়ভাবে আচরণ করেন। কিন্তু, আমাদের পক্ষে হয়তো দ্বিতীয় আজ্ঞার বাধ্য হওয়া কঠিন হতে পারে। কেন? কারণ আমাদের ভাই-বোনেরা—আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীদের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা—হল অসিদ্ধ। তাই, কখনো কখনো তারা হয়তো এমন কিছু বলে অথবা করে, যেটার ফলে আমাদের মনে হয়, আমাদের প্রতি চিন্তা অথবা দয়া দেখানো হয়নি। যিহোবা জানতেন, আমরা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হব আর তাই তিনি বাইবেলের কয়েক জন লেখককে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট পরামর্শ লিপিবদ্ধ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন যে, কেন এবং কীভাবে আমাদের পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখানো উচিত। আর সেই লেখকদের মধ্যে একজন হলেন যোহন।—১ যোহন ৩:১১, ১২.

৩. যোহন কোন বিষয়টার উপর জোর দিয়েছিলেন?

যোহন তার লেখায় এই বিষয়টার উপর জোর দিয়েছিলেন যে, খ্রিস্টানদের অবশ্যই প্রেম দেখাতে হবে। আসলে, “প্রেম” বা “ভালোবাসা” হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দটা অন্য তিন জন সুসমাচার লেখক মিলে যত বার ব্যবহার করেছেন, যিশুর জীবনী সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে যোহন তার চেয়েও বেশি বার তা ব্যবহার করেছেন। যোহন যখন তার সুসমাচারের বিবরণ আর সেইসঙ্গে তিনটে চিঠি লিখেছিলেন, তখন তার বয়স প্রায় এক-শো বছর ছিল। ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত সেই লেখাগুলো প্রকাশ করে যে, একজন খ্রিস্টানের সমস্ত কাজ যেন প্রেমের দ্বারা পরিচালিত হয়। (১ যোহন ৪:১০, ১১) তবে, এই বিষয়টা শেখার জন্য যোহনের সময় লেগেছিল।

৪. যোহন কি সবসময় অন্যদের প্রতি প্রেম দেখিয়েছিলেন?

যোহন যখন যুবক ছিলেন, তখন তিনি সবসময় প্রেম দেখাননি। উদাহরণ স্বরূপ, একবার যিশু এবং তাঁর শিষ্যেরা শমরিয়ার মধ্য দিয়ে জেরুসালেমে যাচ্ছিলেন। শমরীয়দের একটা গ্রামের লোকেরা তাদের প্রতি আতিথেয়তা দেখাতে অস্বীকার করেছিল। যোহন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি স্বর্গ থেকে আগুন নামিয়ে সেই গ্রামের সমস্ত লোককে ধ্বংস করে দেওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন! (লূক ৯:৫২-৫৬) আরেক বার, যোহন তার সহপ্রেরিতদের প্রতি প্রেম দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি এবং তার ভাই যাকোব তাদের মাকে দিয়ে যিশুর কাছে অনুরোধ করিয়েছিলেন যেন ঈশ্বরের রাজ্যে তাদের এক বিশেষ বা গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়। যাকোব ও যোহন কী করেছেন, তা যখন অন্য প্রেরিতেরা জানতে পেরেছিলেন, তখন তারা প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন! (মথি ২০:২০, ২১, ২৪) যা-ই হোক না কেন, যোহনের এই সমস্ত ভুল সত্ত্বেও যিশু তাকে ভালোবেসেছিলেন।—যোহন ২১:৭.

৫. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে পরীক্ষা করব?

এই প্রবন্ধে আমরা যোহনের উদাহরণ নিয়ে এবং প্রেম সম্বন্ধে লেখা তার কিছু বিষয় নিয়ে পরীক্ষা করব। এগুলো নিয়ে পরীক্ষা করার সময়ে আমরা শিখব যে, কীভাবে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি। এ ছাড়া, আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় সম্বন্ধে শিখব, যে-উপায়ে পরিবারের একজন মস্তক এটা প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি তার পরিবারকে ভালোবাসেন।

প্রেম কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়

যিহোবা আমাদের জন্য তাঁর পুত্রকে মৃত্যুবরণ করতে পৃথিবীতে পাঠানোর মাধ্যমে আমাদের প্রতি তাঁর প্রেমের প্রমাণ দিয়েছেন (৬-৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৬. কীভাবে যিহোবা আমাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন?

আমরা প্রায়ই চিন্তা করি, প্রেম হল এক উষ্ণ অনুভূতি, যা সদয় কথাবার্তার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। কিন্তু, প্রকৃত প্রেমের পিছনে কাজও জড়িত রয়েছে। (তুলনা করুন, যাকোব ২:১৭, ২৬.) উদাহরণ স্বরূপ, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন। (১ যোহন ৪:১৯) আর তিনি তাঁর ভালোবাসা বাইবেলে লিপিবদ্ধ চমৎকার শব্দগুলোর মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। (গীত. ২৫:১০; রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) তবে ঈশ্বর যে আমাদের ভালোবাসেন, সেটা আমরা কেবল তাঁর কথার মাধ্যমেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর কাজের মাধ্যমেও জানতে পারি। যোহন লিখেছেন: “আমাদের প্রতি ঈশ্বরের প্রেম এভাবে প্রকাশিত হয়েছে যে, ঈশ্বর তাঁর একজাত পুত্রকে জগতে পাঠিয়েছিলেন, যেন আমরা তাঁর মাধ্যমে জীবন লাভ করতে পারি।” (১ যোহন ৪:৯) যিহোবা আমাদের জন্য তাঁর প্রিয় পুত্রকে কষ্ট ভোগ করতে এবং মৃত্যুবরণ করতে দিয়েছিলেন। (যোহন ৩:১৬) এই বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ রয়েছে, যিহোবা আমাদের প্রকৃতই ভালোবাসেন?

৭. যিশু আমাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রমাণ দেওয়ার জন্য কী করেছেন?

যিশু তাঁর শিষ্যদের এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদের ভালোবাসেন। (যোহন ১৩:১; ১৫:১৫) তিনি যে তাদের ও আমাদের কতটা ভালোবাসেন, সেটার প্রমাণ তিনি কেবল তাঁর কথার মাধ্যমেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর কাজের মাধ্যমেও দিয়েছেন। যিশু বলেছেন, “কেউ যদি বন্ধুদের জন্য নিজের জীবন দান করে, তবে এর চেয়ে মহৎ প্রেম আর নেই।” (যোহন ১৫:১৩) যিহোবা ও যিশু আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলো নিয়ে আমরা যখন চিন্তা করি, তখন আমরা কী করার জন্য অনুপ্রাণিত হই?

৮. প্রথম যোহন ৩:১৮ পদ অনুযায়ী আমাদের কী করা উচিত?

আমরা যিহোবা ও যিশুর বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ দিই যে, আমরা তাদের ভালোবাসি। (যোহন ১৪:১৫; ১ যোহন ৫:৩) আর যিশু নির্দিষ্টভাবে আমাদের আজ্ঞা দিয়েছেন যেন আমরা পরস্পরকে প্রেম করি। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) আমরা যে আমাদের ভাই-বোনদের প্রেম করি, তা কেবল আমাদের কথাবার্তার মাধ্যমেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের কাজের মাধ্যমেও প্রকাশ করতে হবে। (পড়ুন, ১ যোহন ৩:১৮.) আমরা যে তাদের প্রেম করি, তা প্রমাণ করার জন্য আমরা নির্দিষ্টভাবে কী করতে পারি?

আপনার ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখান

৯. প্রেম যোহনকে কী করতে অনুপ্রাণিত করেছিল?

যোহন চাইলে তার বাবার সঙ্গে থেকে তাদের পারিবারিক মাছের ব্যাবসায় অংশ নিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারতেন। কিন্তু তা করার পরিবর্তে, তিনি তার বাকি জীবন যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে সত্য শেখার ব্যাপারে অন্যদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। যোহন যে-জীবন বেছে নিয়েছিলেন, সেটা সহজ ছিল না। তিনি তাড়না ভোগ করেছিলেন আর প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে তার বৃদ্ধ বয়সে তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। (প্রেরিত ৩:১; ৪:১-৩; ৫:১৮; প্রকা. ১:৯) এমনকী তিনি যখন যিশুর বিষয়ে প্রচার করার জন্য কারাগারে ছিলেন, তখনও তিনি প্রমাণ দিয়েছিলেন যে, অন্যদের জন্য তিনি চিন্তা করেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি যখন পাট্‌ম দ্বীপে ছিলেন, তখন তিনি প্রকাশিত বাক্য বইটা লিখেছেন এবং সেটা বিভিন্ন মণ্ডলীতে পাঠিয়েছেন, যাতে তারা সেই বিষয়গুলো সম্বন্ধে জানতে পারে, “যেগুলো শীঘ্রই ঘটবে।” (প্রকা. ১:১) এরপর, যোহন সম্ভবত পাট্‌ম দ্বীপ থেকে ছাড়া পাওয়ার পর যিশুর জীবন ও পরিচর্যা সম্বন্ধে তার সুসমাচারের বইটা লিখেছেন। এ ছাড়া, তিনি তার ভাই-বোনদের উৎসাহিত ও শক্তিশালী করার জন্য তিনটে চিঠি লিখেছেন। কীভাবে আপনি যোহনের আত্মত্যাগমূলক জীবনধারা অনুকরণ করতে পারেন?

১০. কীভাবে আপনি এটা প্রমাণ করতে পারেন যে, আপনি লোকদের ভালোবাসেন?

১০ আপনি আপনার জীবনকে যেভাবে ব্যবহার করা বেছে নেন, সেটার মাধ্যমে আপনি প্রমাণ করতে পারেন যে, আপনি লোকদের ভালোবাসেন। শয়তানের জগৎ চায় যেন আপনি আপনার সমস্ত সময় ও শক্তি নিজের জন্য ব্যয় করেন, অর্থ উপার্জন করার অথবা নাম কামানোর চেষ্টা করেন। এর বিপরীতে, সারা পৃথিবীর আত্মত্যাগী খ্রিস্টানেরা সুসমাচার প্রচার করার এবং লোকদের যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করার জন্য যতটা সম্ভব সময় ব্যয় করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনকী পূর্ণসময় প্রচার করার এবং শিক্ষা দেওয়ার কাজ করে।

আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের ভাই-বোনদের ও পরিবারের প্রতি আমাদের প্রেমের প্রমাণ দিই (১১, ১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১১. কীভাবে অনেক বিশ্বস্ত প্রকাশক এটা প্রমাণ করে যে, তারা যিহোবা এবং তাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসে?

১১ অনেক অনুগত খ্রিস্টানকে পূর্ণসময় চাকরি করতে হয়, যাতে তারা নিজেদের ও সেইসঙ্গে তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাতে পারেন। তা সত্ত্বেও, এই বিশ্বস্ত প্রকাশকেরা নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী বিভিন্ন উপায়ে ঈশ্বরের সংগঠনকে সাহায্য করে। উদাহরণ স্বরূপ, কেউ কেউ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে ত্রাণ কাজে সাহায্য করে, আবার অন্যেরা নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করে আর প্রত্যেকেরই বিশ্বব্যাপী কাজের জন্য দান দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তারা এগুলো করে কারণ তারা ঈশ্বরকে ও সহমানবদের ভালোবাসে। প্রতি সপ্তাহে আমরা মণ্ডলীর সভায় যোগ দিয়ে এবং তাতে অংশ নিয়ে এটা প্রমাণ করি যে, আমরা আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসি। যদিও আমরা হয়তো ক্লান্ত থাকি, তারপরও আমরা এই সভাগুলোতে উপস্থিত হই। যদিও আমাদের হয়তো কিছুটা ভয় লাগে, তারপরও আমরা মন্তব্য করি। আর যদিও আমাদের সবার নিজ নিজ সমস্যা রয়েছে, তারপরও আমরা সভার আগে ও পরে অন্যদের উৎসাহিত করি। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আমাদের সহপ্রকাশকেরা যে-কাজগুলো করে থাকে, সেগুলোর জন্য আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ!

১২. আরেকটা কোন উপায়ে যোহন তার ভাই-বোনদের প্রতি তার প্রেমের প্রমাণ দিয়েছিলেন?

১২ যোহন কেবল তার ভাই-বোনদের প্রশংসা করার মাধ্যমেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমেও তাদের প্রতি প্রেমের প্রমাণ দিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, যোহন তার চিঠিগুলোতে তার ভাই-বোনদের বিশ্বাস এবং উত্তম কাজগুলোর জন্য তাদের প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু, তিনি পাপ সম্বন্ধে তাদের সরাসরি পরামর্শও দিয়েছিলেন। (১ যোহন ১:৮–২:১, ১৩, ১৪) একইভাবে, আমাদের ভাই-বোনেরা যে-ভালো বিষয়গুলো করে, সেগুলোর জন্য আমাদেরও তাদের প্রশংসা করতে হবে। কিন্তু, আমরা যদি কাউকে কোনো মন্দ মনোভাব অথবা অভ্যাস গড়ে তুলতে দেখি, তা হলে তাকে কৌশলতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে আমরা প্রেম দেখাতে পারি। একজন বন্ধুকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য সাহসের প্রয়োজন কিন্তু বাইবেল বলে যে, প্রকৃত বন্ধুরা একে অন্যকে পরামর্শ দেয়।—হিতো. ২৭:১৭.

১৩. আমাদের কী করা এড়িয়ে চলা উচিত?

১৩ কখনো কখনো আমরা যা না করি, সেটার মাধ্যমে আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের প্রেমের প্রমাণ দিই। উদাহরণ স্বরূপ, তারা যা বলে, সেটার দ্বারা আমরা সহজেই বিরক্ত হই না। একটা ঘটনা সম্বন্ধে বিবেচনা করুন, যা পৃথিবীতে যিশুর জীবনের শেষের দিকে ঘটেছিল। তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন যে, জীবন লাভ করার জন্য তাদের তাঁর মাংস ও রক্ত খেতে হবে। (যোহন ৬:৫৩-৫৭) শিষ্যদের মধ্যে অনেকে এই কথা সহ্য করতে পারেনি আর তাই তারা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল—তবে তাঁর প্রকৃত বন্ধুরা তা করেননি, যাদের মধ্যে যোহনও ছিলেন। তারা অনুগতভাবে তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তারা যিশুর এই কথা বুঝতে পারেননি আর তা শুনে তারা হয়তো অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তবে, যিশুর অনুগত বন্ধুরা এইরকম চিন্তা করেননি যে, তিনি যা বলেছেন, তা মিথ্যা। আর তারা তাঁর কথা শুনে বিরক্তও হননি। এর পরিবর্তে, তারা তাঁকে বিশ্বাস করেছিলেন কারণ তারা জানতেন, তিনি সত্য কথা বলেন। (যোহন ৬:৬০, ৬৬-৬৯) এটা কতই-না গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের বন্ধুরা যা বলে, সেটার কারণে যেন আমরা সহজেই বিরক্ত না হই! এর পরিবর্তে, তারা কী বোঝাতে চাইছে, সেই সম্বন্ধে আমরা যেন তাদের ব্যাখ্যা করার সুযোগ দিই।—হিতো. ১৮:১৩; উপ. ৭:৯.

১৪. কেন আমাদের ভাই-বোনদের কখনো ঘৃণা করা উচিত নয়?

১৪ এ ছাড়া, যোহন আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন আমরা আমাদের ভাই-বোনদের ঘৃণা না করি। আমরা যদি এই পরামর্শে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হই, তা হলে শয়তান আমাদের স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগানোর সুযোগ পেয়ে যাবে। (১ যোহন ২:১১; ৩:১৫) প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে কারো কারো ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছিল। ঈশ্বরের লোকদের মধ্যে ঘৃণা জাগিয়ে তোলার এবং তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য শয়তান তার যথাসাধ্য করেছিল। যোহন যে-সময়ে তার চিঠিগুলো লিখেছিলেন, তখন ইতিমধ্যেই সেই লোকেরা মণ্ডলীতে প্রবেশ করেছিল, যারা শয়তানের মতো একই মনোভাব দেখিয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, দিয়ত্রিফি একটা মণ্ডলীর মধ্যে গুরুতর বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিল। (৩ যোহন ৯, ১০) পরিচালকগোষ্ঠী যে-প্রাচীনদের বিভিন্ন মণ্ডলীতে যাওয়ার জন্য পাঠাত, তাদের প্রতি সে সম্মান দেখাত না। সে এমনকী সেই ব্যক্তিদের মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, যারা তার অপছন্দের ব্যক্তিদের প্রতি আতিথেয়তা দেখাত। কতই-না অহংকারী এক মনোভাব! শয়তান এখনও ঈশ্বরের লোকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছে। আমরা যেন কখনো ঘৃণাকে আমাদের পৃথক করে দেওয়ার সুযোগ না দিই।

আপনার পরিবারের প্রতি প্রেম দেখান

যিশু যোহনকে বলেছিলেন যেন তিনি মরিয়মের যত্ন নেন ও সেইসঙ্গে তাকে যিহোবার সেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। আজকে পরিবারের মস্তকদেরও অবশ্যই তাদের পরিবারের প্রয়োজনগুলো মেটাতে হবে (১৫-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. পরিবারের একজন মস্তককে অবশ্যই কী মনে রাখতে হবে?

১৫ একটা গুরুত্বপূর্ণ যে-উপায়ে পরিবারের একজন মস্তক নিজের পরিবারের প্রতি তার প্রেমের প্রমাণ দিতে পারেন, তা হল পরিবারের জন্য বস্তুগত বিষয়গুলো জোগানোর মাধ্যমে। (১ তীম. ৫:৮) কিন্তু, তাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে তার পরিবারকে সাহায্য করা তার জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। (মথি ৫:৩) পরিবারের মস্তকদের জন্য যিশু যে-উদাহরণ স্থাপন করেছেন, তা লক্ষ করুন। যোহনের সুসমাচার অনুযায়ী, যিশু যখন যাতনাদণ্ডে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করছিলেন, তখনও তিনি তাঁর পরিবারের বিষয়ে চিন্তা করছিলেন। যেখানে যিশুকে যাতনাদণ্ডে বিদ্ধ করা হচ্ছিল, যোহন সেখানে যিশুর মা মরিয়মের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই তীব্র যন্ত্রণার মধ্যেও যিশু যোহনকে বলেছিলেন যেন তিনি মরিয়মের যত্ন নেন। (যোহন ১৯:২৬, ২৭) যিশুর নিজের ভাই-বোন ছিল, যারা নিশ্চিতভাবেই মরিয়মের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাবেন, কিন্তু সেই সময় হয়তো তাদের মধ্যে কেউই যিশুর শিষ্য হয়ে ওঠেননি। তাই, যিশু এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যেন এমন কেউ থাকেন, যিনি মরিয়মের যত্ন নেবেন ও সেইসঙ্গে তাকে যিহোবার সেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করবেন।

১৬. যোহনের কোন কোন দায়িত্ব ছিল?

১৬ যোহনের অনেক দায়িত্ব ছিল। তিনি যেহেতু একজন প্রেরিত ছিলেন, তাই তাকে প্রচার কাজে উদ্যোগ বজায় রাখতে হত। এ ছাড়া, তিনি হয়তো বিবাহিত ছিলেন আর তাই তাকে পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাতে হত ও সেইসঙ্গে পরিবারকে ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে হত। (১ করি. ৯:৫) বর্তমানে, পরিবারের মস্তকেরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারে?

১৭. কীভাবে পরিবারের একজন মস্তক দেখাতে পারেন যে, তিনি তার পরিবারকে ভালোবাসেন?

১৭ একজন ভাই, যিনি পরিবারের মস্তক, তার হয়তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, তাকে অবশ্যই চাকরির জায়গায় কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, যাতে তিনি যিহোবার প্রশংসা নিয়ে আসতে পারেন। (ইফি. ৬:৫, ৬; তীত ২:৯, ১০) আর তার হয়তো মণ্ডলীতে বিভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে, যেমন পালকীয় সাক্ষাৎ করা এবং প্রচার কাজে নেতৃত্ব নেওয়া। এগুলো করার পাশাপাশি, তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করাও তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের স্বাস্থ্যবান ও সুখী রাখার এবং যিহোবার সেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের সাহায্য করার উদ্দেশে তিনি যা-কিছু করেন, সেগুলোর জন্য তারা অনেক কৃতজ্ঞ হবেন।—ইফি. ৫:২৮, ২৯; ৬:৪.

“আমার ভালোবাসার পাত্র হিসেবে থাকো”

১৮. যোহন কোন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন?

১৮ যোহন অনেক বছর বেঁচে ছিলেন এবং তার অনেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এ ছাড়া, তিনি অনেক কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন, যেগুলো তার বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে পারত। কিন্তু, তিনি ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর আজ্ঞা-সহ যিশুর সমস্ত আজ্ঞা পালন করার জন্য সবসময় তার সর্বোত্তমটা করেছিলেন। এই কারণে যোহন এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা ও যিশু তাকে ভালোবাসেন এবং তাঁরা তাকে যেকোনো পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করার শক্তি দেবেন। (যোহন ১৪:১৫-১৭; ১৫:৯, ১০; ১ যোহন ৪:১৬) শয়তান এবং তার জগৎ যোহনকে তার ভাই-বোনদের প্রেম করার এবং তার কথা ও কাজের মাধ্যমে তা প্রকাশ করা থেকে বিরত করতে পারেনি।

১৯. প্রথম যোহন ৪:৭ পদ আমাদের কী করার জন্য উৎসাহিত করে আর কেন?

১৯ যোহনের মতো আমরাও এমন এক জগতে বাস করছি, যে-জগতে এই বিধিব্যবস্থার নিষ্ঠুর ঈশ্বর শয়তান শাসন করছে। (১ যোহন ৩:১, ১০) যদিও শয়তান চায় যেন আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখানো বন্ধ করে দিই কিন্তু আমরা সুযোগ না দিলে সে তা করতে পারবে না। আমরা যেন আমাদের ভাই-বোনদের প্রেম করার, আমাদের কথার মাধ্যমে সেই প্রেম প্রকাশ করার এবং কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। আমরা যখন প্রেম দেখাব, তখন আমরা যিহোবার পরিবারের অংশ হওয়ার আনন্দ লাভ করব এবং অনেক সুখী হতে পারব।—পড়ুন, ১ যোহন ৪:৭.

গান সংখ্যা ১১ যিহোবার চিত্তকে আনন্দিত করা

^ অনু. 5 মনে করা হয়, প্রেরিত যোহন হলেন ‘সেই শিষ্য, যিশু যাকে ভালোবাসতেন।’ (যোহন ২১:৭) তাই, যোহন যখন যিশুর সঙ্গে ছিলেন, তখন যদিও তিনি একজন যুবক ছিলেন, তারপরও তার মধ্যে নিশ্চয়ই অনেক চমৎকার গুণ ছিল। পরবর্তী সময়ে, তিনি যখন বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, তখন যিহোবা তাকে দিয়ে প্রেম সম্বন্ধে অনেক কিছু লিখিয়েছিলেন। এই প্রবন্ধে যোহনের লেখা কিছু বিষয় নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা হবে এবং তার উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি, তা আলোচনা করা হবে।

^ অনু. 59 ছবি সম্বন্ধে: পরিবারের একজন ব্যস্ত মস্তক দুর্যোগের সময় ত্রাণ কাজে সাহায্য করছেন, বিশ্বব্যাপী কাজের জন্য দান দিচ্ছেন আর স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে পারিবারিক উপাসনায় অন্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।