সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪

কোমল স্নেহ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করে চলুন

কোমল স্নেহ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করে চলুন

“ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পরের প্রতি কোমল স্নেহ দেখাও।”—রোমীয় ১২:১০.

গান সংখ্যা ২৫ শিষ্যত্বের প্রমাণ

সারাংশ *

১. বর্তমানে, কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা স্নেহের অভাব দেখতে পাই?

বাইবেলে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল যে, শেষকালে লোকদের মধ্যে ‘স্নেহের’ অভাব দেখা যাবে। (২ তীম. ৩:১, ৩) বর্তমানে, আমরা এই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হতে দেখছি। উদাহরণ স্বরূপ, লক্ষ লক্ষ পরিবার বিবাহবিচ্ছেদের কারণে ভেঙে গিয়েছে আর এর ফলে বাবা-মায়েরা একে অন্যের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে আছে আর সন্তানেরা মনে করে, কেউ তাদের ভালোবাসে না। এমনকী পরিবারের যে-সদস্যেরা একই বাড়িতে থাকে, তারাও একে অন্যের কাছে হয়তো অচেনা ব্যক্তির মতো। পরিবার বিষয়ক একজন পরামর্শদাতা বলেন: “মা, বাবা ও সন্তানেরা সবাই একে অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে কম্পিউটারের স্ক্রিনের, ট্যাবলেটের, স্মার্টফোনের অথবা ভিডিও গেমের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গিয়েছে। যদিও এই পরিবারগুলো একই ছাদের নীচে বাস করে কিন্তু তারা একে অন্যের বিষয়ে খুব কমই জানে।”

২-৩. (ক) রোমীয় ১২:১০ পদ অনুযায়ী, কাদের প্রতি আমাদের কোমল স্নেহ গড়ে তুলতে হবে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

আমরা জগতের প্রেমহীন মনোভাব অনুকরণ করতে চাই না। (রোমীয় ১২:২) এর পরিবর্তে, আমাদের কোমল স্নেহ গড়ে তুলতে হবে আর তা কেবল আমাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতিই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের বিশ্বাসী ভাই-বোনদের প্রতিও। (পড়ুন, রোমীয় ১২:১০.) কোমল স্নেহ বলতে কী বোঝায়? এই অভিব্যক্তি নির্দিষ্টভাবে পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের মধ্যে থাকা আন্তরিক সম্পর্ককে বোঝায়। আমাদের এই ধরনের ভালোবাসাই মণ্ডলীর ভাই-বোনদের প্রতি গড়ে তুলতে হবে। যখন আমরা কোমল স্নেহ দেখাই, তখন আমরা একতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করি, যেটা সত্য উপাসনার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।—মীখা ২:১২.

কোমল স্নেহ গড়ে তোলার এবং তা দেখানোর ক্ষেত্রে সাহায্য লাভ করার জন্য আসুন আমরা দেখি, বাইবেলের কিছু উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

যিহোবা “অত্যন্ত স্নেহময়”

৪. কীভাবে যাকোব ৫:১১ পদ যিহোবার ভালোবাসার গভীরতা সম্বন্ধে আমাদের বুঝতে সাহায্য করে?

বাইবেল যিহোবার অপূর্ব গুণগুলো সম্বন্ধে প্রকাশ করে। উদাহরণ স্বরূপ, এটি বলে “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) এই বিষয়টা জানাই আমাদের তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করে। তবে, বাইবেল এও জানায় যে, যিহোবা “অত্যন্ত স্নেহময়।” (পড়ুন, যাকোব ৫:১১.) যিহোবা যে আমাদের কতটা ভালোবাসেন, তা বর্ণনা করার কী-এক চমৎকার অভিব্যক্তি!

৫. কীভাবে যিহোবা করুণা দেখান আর কীভাবে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে পারি?

লক্ষ করুন, যাকোব ৫:১১ পদ যিহোবার স্নেহকে আরেকটা গুণের সঙ্গে সংযুক্ত করে, যে-গুণের কারণে আমরা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হই—তাঁর করুণা। (যাত্রা. ৩৪:৬) একটা যে-উপায়ে যিহোবা আমাদের প্রতি করুণা দেখান, তা হল আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করার মাধ্যমে। (গীত. ৫১:১) বাইবেলে করুণা বলতে ক্ষমা করার চেয়ে আরও বেশি কিছুকে বোঝায়। করুণা হল এক তীব্র অনুভূতি, যেটা একজন ব্যক্তি কাউকে সংকটের মধ্যে থাকতে দেখে নিজের ভিতরে অনুভব করেন এবং তাকে সাহায্য করার জন্য অনুপ্রাণিত হন। আমাদের সাহায্য করার বিষয়ে যিহোবার যে-তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, সেটাকে তিনি শিশুর প্রতি তার মায়ের অনুভূতির চেয়েও আরও জোরালো হিসেবে উল্লেখ করেন। (যিশা. ৪৯:১৫) আমরা যখন সংকটের মধ্যে থাকি, তখন যিহোবা তাঁর করুণার কারণে আমাদের সাহায্য করতে অনুপ্রাণিত হন। (গীত. ৩৭:৩৯; ১ করি. ১০:১৩) ভাই-বোনেরা যখন আমাদের অসন্তুষ্ট করে, তখন তাদের ক্ষমা করার এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পুষে না রাখার মাধ্যমে আমরা তাদের প্রতি করুণা দেখাতে পারি। (ইফি. ৪:৩২) তবে, করুণা দেখানোর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল, আমাদের ভাই-বোনেরা যখন কষ্টের মধ্য দিয়ে যায়, তখন তাদের সাহায্য করা। আমরা যখন প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যদের প্রতি করুণা দেখাই, তখন আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করি, যিনি কোমল স্নেহ দেখানোর ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ।—ইফি. ৫:১.

“যোনাথনের প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইল”

৬. কীভাবে যোনাথন ও দায়ূদ একে অন্যের প্রতি কোমল স্নেহ দেখিয়েছিলেন?

বাইবেলে এমন অনেক অসিদ্ধ মানুষের বিবরণ রয়েছে, যারা কোমল স্নেহ দেখিয়েছিলেন। এই ক্ষেত্রে যোনাথন ও দায়ূদের উদাহরণ বিবেচনা করুন। বাইবেল বলে: “যোনাথনের প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইল, এবং যোনাথন আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতে লাগিলেন।” (১ শমূ. ১৮:১) দায়ূদকে শৌলের পরে রাজা হওয়ার জন্য অভিষিক্ত করা হয়েছিল। এর কিছুসময় পর শৌল দায়ূদকে ঈর্ষা করতে শুরু করেছিলেন এবং তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, দায়ূদকে হত্যা করার এই পরিকল্পনায় শৌলের ছেলে যোনাথন তার বাবার সঙ্গে যোগ দেননি। যোনাথন ও দায়ূদ বন্ধুত্ব বজায় রাখার এবং সবসময় একে অন্যকে সমর্থন করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।—১ শমূ. ২০:৪২.

যোনাথন ও দায়ূদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য একে অন্যের প্রতি কোমল স্নেহ দেখানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি (৬-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. কোন একটা বিষয় যোনাথন ও দায়ূদের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারত?

আমরা যখন যোনাথন ও দায়ূদের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারত এমন কিছু বিষয় বিবেচনা করি, তখন আমরা বুঝতে পারি, তাদের মধ্যে থাকা কোমল স্নেহ সত্যিই উল্লেখযোগ্য। উদাহরণ স্বরূপ, যোনাথনের বয়স দায়ূদের চেয়ে প্রায় ৩০ বছর বেশি ছিল। যোনাথন হয়তো এমনটা চিন্তা করতে পারতেন, যেহেতু দায়ূদ যথেষ্ট কমবয়সি এবং কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, তাই দায়ূদের সঙ্গে তার কোনো বিষয়েরই মিল নেই। কিন্তু, যোনাথন এমনটা চিন্তা করেননি। তিনি দায়ূদের প্রতি অনেক সম্মান দেখিয়েছিলেন।

৮. আপনার কী মনে হয়, কেন যোনাথন দায়ূদের এত ভালো বন্ধু ছিলেন?

যোনাথন দায়ূদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হতে পারতেন। যেহেতু যোনাথন রাজা শৌলের ছেলে ছিলেন, তাই তিনি দাবি করতে পারতেন যে, তিনিই পরবর্তী রাজা হবেন। (১ শমূ. ২০:৩১) কিন্তু, যোনাথন নম্র ছিলেন আর সেইসঙ্গে যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন। তাই, যিহোবা যে দায়ূদকে পরবর্তী রাজা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, এই বিষয়টাকে যোনাথন পুরোপুরি সমর্থন করেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি দায়ূদের প্রতি অনুগত ছিলেন, এমনকী তখনও, যখন এই বিষয়টা শৌলকে খুবই রাগান্বিত করে তুলেছিল।—১ শমূ. ২০:৩২-৩৪.

৯. যোনাথন কি দায়ূদকে তার প্রতিদ্বন্দী হিসেবে দেখেছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।

দায়ূদের প্রতি যোনাথনের কোমল স্নেহ ছিল, তাই তিনি দায়ূদকে তার প্রতিদ্বন্দী হিসেবে দেখেননি। যোনাথন একজন দক্ষ তিরন্দাজ এবং সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। তার এবং তার বাবা শৌলের সুনাম ছিল যে, তারা “ঈগল অপেক্ষা বেগবান” এবং “সিংহ অপেক্ষা বলবান।” (২ শমূ. ১:২২, ২৩) তাই, যোনাথন তার বীরত্বের কাজগুলো নিয়ে বড়াই করতে পারতেন। কিন্তু, যোনাথনের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব কিংবা ঈর্ষা ছিল না। এর বিপরীতে, দায়ূদের সাহস এবং যিহোবার প্রতি তার নির্ভরতার জন্য যোনাথন দায়ূদকে সম্মান করতেন। সত্যি বলতে কী, দায়ূদ গলিয়াৎকে হত্যা করার পরই যোনাথন দায়ূদকে খুব ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন। কীভাবে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি এইরকম কোমল স্নেহ দেখাতে পারি?

বর্তমানে কীভাবে আমরা কোমল স্নেহ দেখাতে পারি?

১০. ‘একে অন্যকে হৃদয় থেকে গভীরভাবে ভালোবাসার’ অর্থ কী?

১০ বাইবেল আমাদের ‘একে অন্যকে হৃদয় থেকে গভীরভাবে ভালোবাসার’ পরামর্শ দেয়। (১ পিতর ১:২২) এই ক্ষেত্রে যিহোবা আমাদের জন্য উদাহরণ স্থাপন করেন। আমাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এতটাই গভীর যে, আমরা যদি তাঁর প্রতি অনুগত থাকি, তা হলে কোনো কিছুই সেই বন্ধনকে নষ্ট করতে পারবে না। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) “গভীরভাবে” শব্দটা এই ধারণা দেয় যে, কোনো ব্যক্তি ভালোবাসা দেখানোর জন্য প্রচুর প্রচেষ্টা করছেন। কখনো কখনো আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো সহজ হয় না। অন্যেরা যখন আমাদের অসন্তুষ্ট করে, তখন বাইবেল আমাদের সবসময় এমনটা করার পরামর্শ দেয়: “প্রেম সহকারে একে অন্যকে সহ্য করো আর একে অন্যের সঙ্গে শান্তিতে থাকার মাধ্যমে সেই একতা বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য করো, যা তোমরা পবিত্র শক্তির মাধ্যমে অর্জন করেছ।” (ইফি. ৪:১-৩) আমরা যদি “শান্তিতে থাকার” প্রচেষ্টা করি, তা হলে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের ভুলগুলো উপেক্ষা করব। আমরা আমাদের ভাই-বোনদের যিহোবার মতো করে দেখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।—১ শমূ. ১৬:৭; গীত. ১৩০:৩.

ইবদিয়া ও সুন্তুখীকে একই মনোভাব বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কখনো কখনো আমাদের পক্ষেও ভাই-বোনদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১. কেন কখনো কখনো কোমল স্নেহ গড়ে তোলা কঠিন হতে পারে?

১১ আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি কোমল স্নেহ দেখানো সবসময় সহজ হয় না, বিশেষভাবে যখন আমরা তাদের ভুলত্রুটি সম্বন্ধে জেনে থাকি। স্পষ্টতই, প্রথম শতাব্দীর কোনো কোনো খ্রিস্টানের জন্য এই বিষয়টা একটা কঠিন সমস্যা ছিল। উদাহরণ স্বরূপ, ইবদিয়া ও সুন্তুখীর “সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য [পৌলের] সঙ্গে” কাজ করার ক্ষেত্রে সম্ভবত কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু, কোনো কারণে তাদের একে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই, পৌল তাদের অনুরোধ করেছিলেন, যেন তারা ‘প্রভুর সেবা করার সময় একই মনোভাব বজায় রাখেন।’—ফিলি. ৪:২, ৩.

কমবয়সি ও বয়স্ক প্রাচীনেরা একে অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্বের দৃঢ়বন্ধন গড়ে তুলতে পারেন (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. কীভাবে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি কোমল স্নেহ গড়ে তুলতে পারি?

১২ বর্তমানে, কীভাবে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি কোমল স্নেহ গড়ে তুলতে পারি? আমরা যখন আমাদের সহবিশ্বাসীদের সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে জানতে পারি, তখন আমরা হয়তো আরও সহজে তাদের বুঝতে পারি এবং তাদের প্রতি কোমল স্নেহ গড়ে তুলতে পারি। এই ক্ষেত্রে বয়স কিংবা পটভূমি কোনো বাধা নয়। মনে করে দেখুন, যোনাথনের বয়স দায়ূদের চেয়ে প্রায় ৩০ বছর বেশি ছিল, কিন্তু তারপরও তিনি দায়ূদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন। আপনি কি এমন কারো বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন, যিনি আপনার চেয়ে বয়সে বড়ো কিংবা ছোটো? তা করার মাধ্যমে আপনি প্রমাণ করবেন যে, আপনি ‘সমগ্র ভ্রাতৃসমাজের প্রতি প্রেম দেখান।’—১ পিতর ২:১৭.

১২ অনুচ্ছেদ দেখুন *

১৩. কেন মণ্ডলীর প্রত্যেকের সঙ্গে আমাদের হয়তো একইরকম ঘনিষ্ঠতা থাকবে না?

১৩ সহবিশ্বাসীদের প্রতি কোমল স্নেহ থাকার মানে কি এই যে, মণ্ডলীর প্রত্যেকের সঙ্গে আমাদের একইরকম ঘনিষ্ঠতা থাকবে? না, তা সম্ভব নয়। একই ধরনের বিষয়ে আগ্রহ থাকার কারণে অন্যদের চেয়ে কারো কারো প্রতি বেশি আকৃষ্ট হওয়া ভুল নয়। যিশু তাঁর সমস্ত প্রেরিতকে “বন্ধু” বলে উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু যোহনের প্রতি তাঁর বিশেষ স্নেহ ছিল। (যোহন ১৩:২৩; ১৫:১৫; ২০:২) তবে, যিশু যোহনের প্রতি পক্ষপাত করেননি। উদাহরণ স্বরূপ, যখন যোহন এবং তার ভাই যাকোব ঈশ্বরের রাজ্যে তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন, তখন যিশু তাদের বলেছিলেন: “কাউকে আমার ডান পাশে অথবা আমার বাম পাশে বসতে দেওয়ার অধিকার আমার নেই।” (মার্ক ১০:৩৫-৪০) যিশুকে অনুকরণ করে আমরাও যেন অন্যদের চেয়ে আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের প্রতি পক্ষপাত না করি। (যাকোব ২:৩, ৪) যদি আমরা তা করি, তা হলে সেটা বিভেদ সৃষ্টি করার মনোভাবকে তুলে ধরবে, যে-মনোভাবের খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কোনো স্থান নেই।—যিহূদা ১৭-১৯.

১৪. ফিলিপীয় ২:৩ পদ অনুযায়ী কী আমাদের প্রতিযোগিতার মনোভাব এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে?

১৪ আমরা যখন একে অন্যের প্রতি কোমল স্নেহ দেখাই, তখন আমরা মণ্ডলীকে প্রতিযোগিতার মনোভাব থেকে সুরক্ষিত রাখি। স্মরণ করুন, যোনাথন দায়ূদকে রাজা হওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রতিদ্বন্দী হিসেবে মনে করে তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার চেষ্টা করেননি। আমরা সবাই যোনাথনের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি। আপনার ভাই-বোনদের বিভিন্ন ক্ষমতা রয়েছে বলে তাদের আপনার প্রতিদ্বন্দী হিসেবে না দেখে ‘বরং নম্রতা সহকারে অন্যকে নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করুন।’ (পড়ুন, ফিলিপীয় ২:৩.) মনে রাখবেন, আমরা প্রত্যেকে কোনো-না-কোনো উপায়ে মণ্ডলীকে সাহায্য করতে সমর্থ। আমরা যদি নম্রতা বজায় রাখি, তা হলে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের ভালো গুণগুলো দেখতে পারব এবং তাদের ভালো উদাহরণ অনুকরণ করতে পারব।—১ করি. ১২:২১-২৫.

১৫. বোন তানিয়া এবং তার পরিবারের অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কোন শিক্ষা লাভ করেন?

১৫ যখন আমরা অপ্রত্যাশিতভাবে পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন আমাদের ভাই-বোনদের কাছ থেকে পাওয়া কোমল স্নেহ এবং ব্যাবহারিক সাহায্যের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করেন। লক্ষ করুন, যুক্তরাষ্ট্রে একটা পরিবার ২০১৯ সালের “প্রেম কখনও শেষ হয় না!” আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শনিবারের কার্যক্রমে উপস্থিত হওয়ার পর তাদের প্রতি কী ঘটেছিল। তিন সন্তানের মা, বোন তানিয়া বলেন, “আমরা গাড়ি চালিয়ে আমাদের হোটেলে ফিরে যাচ্ছিলাম, এমন সময় হঠাৎ একটা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাদের গাড়িতে ধাক্কা মারে। কেউই আঘাত পায়নি, কিন্তু আমরা গাড়ি থেকে বের হই এবং হতভম্ব হয়ে রাস্তায় দাড়াই। রাস্তার পাশে কেউ একজন আমাদের দিকে হাত নাড়িয়ে আমাদের তার গাড়ির কাছে আসতে বলেন, যাতে আমরা সুরক্ষিত থাকতে পারি। উনি আমাদের একজন ভাই ছিলেন, যিনি সবেমাত্র সম্মেলন থেকে বের হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন। তবে, কেবল তিনি একাই সেখানে থামেননি। সুইডেন থেকে আসা পাঁচ জন অভ্যাগতও এসে থামেন। বোনেরা আমাকে এবং আমার মেয়েদের জড়িয়ে ধরেন আর সেইসময় আমাদের সত্যিই সেটার প্রয়োজন ছিল! আমি তাদের বলি যে, আমরা ঠিক আছি কিন্তু তারা আমাদের ছেড়ে যেতে চাননি। এমনকী প্রাথমিক চিকিৎসার দল আসার পরও তারা আমাদের সঙ্গে থাকেন আর তারা খেয়াল রাখেন, আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু আছে কি না। এই কঠিন সময়ে, প্রতিটা মুহূর্তে আমরা যিহোবার ভালোবাসা অনুভব করেছিলাম। এই অভিজ্ঞতা ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে ও সেইসঙ্গে যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতাকে বৃদ্ধি করেছিল।” আপনি কি এমন কোনো সময়ের কথা মনে করতে পারেন, যখন আপনার সাহায্যের প্রয়োজন ছিল আর কোনো সহবিশ্বাসী আপনার প্রতি কোমল স্নেহ দেখিয়েছিলেন?

১৬. কোন কোন কারণে আমরা একে অন্যের প্রতি কোমল স্নেহ দেখাব?

১৬ চিন্তা করুন, আমরা যখন একে অন্যের প্রতি কোমল স্নেহ দেখাই, তখন কোন ভালো বিষয়গুলো ঘটে। আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রয়োজনের সময় সান্ত্বনা প্রদান করি। আমরা ঈশ্বরের লোকদের মধ্যে থাকা একতাকে বৃদ্ধি করি। আমরা প্রমাণ করি যে, আমরা যিশুর শিষ্য আর এটা আন্তরিক ব্যক্তিদের সত্য উপাসনার দিকে আকৃষ্ট করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমরা “করুণাময় পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” যিহোবাকে মহিমান্বিত করি। (২ করি. ১:৩) আমরা সবাই যেন ক্রমাগত কোমল স্নেহ গড়ে তুলি এবং তা দেখিয়ে চলি!

গান সংখ্যা ৩৫ ঈশ্বরের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা

^ অনু. 5 যিশু বলেছিলেন, তাঁর শিষ্যদের নিজেদের মধ্যে থাকা ভালোবাসার দ্বারা চেনা যাবে। আমরা সবাই সেই চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করি। আমরা কোমল স্নেহ অর্থাৎ যে-ধরনের ভালোবাসা পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যেরা একে অন্যের প্রতি দেখিয়ে থাকে, তা গড়ে তোলার মাধ্যমে ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও গভীর করতে পারি। এই প্রবন্ধ আমাদের বিশ্বাসী ভাই-বোনদের প্রতি কোমল স্নেহ গড়ে তোলার এবং তা বজায় রাখার জন্য সাহায্য করবে।

^ অনু. 55 ছবি সম্বন্ধে: একজন কমবয়সি প্রাচীন একজন বয়স্ক প্রাচীনের অভিজ্ঞতা থেকে উপকার লাভ করেন; সেই বয়স্ক ভাই কমবয়সি ভাইকে তার বাড়িতে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছেন। তারা এবং তাদের স্ত্রীরা একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা ও উদারতা দেখাচ্ছেন।