সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১১

সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বাইবেল আপনাকে সাহায্য করতে পারে

সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বাইবেল আপনাকে সাহায্য করতে পারে

“ঈশ্বর, . . . আমাদের ধৈর্য ধরার শক্তি দেন।”—রোমীয় ১৫:৫.

গান সংখ্যা ৩৭ শাস্ত্রলিপি—ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত

সারাংশ *

১. যিহোবার লোকদের হয়তো কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়?

আপনি কি কোনো গুরুতর সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন? হতে পারে, মণ্ডলীর কোনো ভাই অথবা বোন আপনাকে আঘাত দিয়েছে। (যাকোব ৩:২) কিংবা আপনি একজন যিহোবার সাক্ষি বলে, আপনার সহকর্মী অথবা সহপাঠীরা আপনাকে নিয়ে উপহাস করে থাকে। (১ পিতর ৪:৩, ৪) কিংবা পরিবারের সদস্যরা আপনাকে সভায় যাওয়ার অথবা প্রচারে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। (মথি ১০:৩৫, ৩৬) জীবনে যখন পাহাড়ের মতো কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন প্রায়ই যিহোবার উপাসনা বন্ধ করে দেওয়ার কথা মাথায় আসে। কিন্তু, আস্থা রাখতে পারেন, আপনার জীবনে যেকোনো সমস্যা আসুক না কেন, যিহোবা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রজ্ঞা দেবেন আর সেইসঙ্গে ধৈর্য ধরার জন্য শক্তি দেবেন।

২. রোমীয় ১৫:৪ পদ অনুযায়ী বাইবেল পড়লে আমরা কোন কোন উপকার লাভ করতে পারব?

যিহোবা বাইবেলে এমন ব্যক্তিদের সম্বন্ধে লিখিয়েছেন, যারা খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ধৈর্য ধরেছিল। কেন তিনি তাদের সম্বন্ধে লিখিয়েছেন? আমরা যেন তাদের কাছ থেকে শিখতে পারি। আর এই বিষয়টা তিনি প্রেরিত পৌলকে দিয়েও লিখিয়েছিলেন। (পড়ুন, রোমীয় ১৫:৪.) বাইবেল থেকে আমরা যদি সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে পড়ি, তা হলে আমরা সান্ত্বনা ও উৎসাহ লাভ করতে পারব। কিন্তু, শুধু বাইবেল পড়াই যথেষ্ট নয়। আমরা যা পড়ি, সেটা যেন আমাদের চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলে এবং আমাদের অনুভূতিকেও স্পর্শ করে। আপনি যদি কোনো সমস্যার মুখোমুখি হন, তা হলে এই চারটে বিষয় আপনাকে সাহায্য করতে পারে: () প্রার্থনা () কল্পনা () ধ্যান এবং () প্রয়োগ। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে আপনি তা করতে পারেন। * এরপর দেখব, এই চারটে বিষয় ব্যবহার করে আপনি রাজা দায়ূদ এবং প্রেরিত পৌলের জীবন থেকে কী শিখতে পারেন।

১. প্রার্থনা

বাইবেল পড়ার আগে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন, যাতে আপনি যা পড়বেন, সেটা থেকে উপকৃত হতে পারেন (৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৩. বাইবেল পড়ার আগে আপনার কী করা উচিত এবং কেন?

() প্রার্থনা। বাইবেল পড়ার আগে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। আর আপনি যা পড়বেন, সেটা থেকে উপকার লাভ করার জন্য তাঁর কাছ থেকে সাহায্য চান। আপনি যদি কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন, তা হলে যিহোবার কাছে অনুরোধ করুন, যাতে তিনি আপনাকে সেই সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বাইবেল থেকে নীতি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন।—ফিলি. ৪:৬, ৭; যাকোব ১:৫.

২. কল্পনা

কোনো ব্যক্তি সম্বন্ধে পড়ার সময় তার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করুন (৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৪. বাইবেলের কোনো চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলার জন্য আপনাকে কী করতে হবে?

() কল্পনা। যিহোবা আমাদের কল্পনা করার অসাধারণ দক্ষতা দিয়েছেন। বাইবেল থেকে কোনো চরিত্র সম্বন্ধে পড়ার সময়ে আপনি যদি কল্পনা করেন যে, তার ব্যক্তিত্ব কেমন, তিনি কী করছেন, তার আশেপাশে কী ঘটছে, তিনি কী লক্ষ করছেন এবং তিনি কেমন অনুভব করছেন, তা হলে সেই ব্যক্তি সম্বন্ধে আপনার মনে এক জীবন্ত চিত্র ভেসে উঠবে।

৩. ধ্যান

যা পড়েছেন, সেটা নিয়ে মনোযোগ সহকারে ধ্যান করুন, যাতে আপনি সেই তথ্য থেকে উপকৃত হতে পারেন (৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৫. (ক) ধ্যান করার অর্থ কী? (খ) ধ্যান করার জন্য আপনি নিজেকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারেন?

() ধ্যান। ধ্যান করার অর্থ হল আপনি যা পড়ছেন, সেটা নিয়ে মন দিয়ে চিন্তা করা আর এটা বোঝার চেষ্টা করা যে, সেই তথ্য থেকে কীভাবে আপনি উপকার লাভ করতে পারেন। ধ্যান করার মাধ্যমে আপনি ইতিমধ্যে যে-বিষয়গুলো জানতেন, সেগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। আপনি যদি বাইবেল পড়ার সময় ধ্যান না করেন, তা হলে এটা এমন হবে যেন আপনি খাবার তৈরি করার সমস্ত উপকরণ নিয়ে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেগুলো দিয়ে কোনো খাবার তৈরি করেননি। কিন্তু, যখন আপনি ধ্যান করেন, তখন সমস্ত উপকরণ মিলিয়ে রান্না করেন আর তা এক সুস্বাদু খাবারে পরিণত হয়। ধ্যান করার জন্য আপনি নিজেকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘এই ঘটনার মুখ্য চরিত্র নিজের সমস্যার সমাধান করার জন্য কী করেছিলেন? যিহোবা কীভাবে তাকে সাহায্য করেছিলেন? আর নিজের সমস্যার সমাধান করার জন্য আমি এই চরিত্র থেকে কী শিখতে পারি?’

৪. প্রয়োগ

সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে, মনের শান্তি বজায় রাখতে এবং বিশ্বাসকে মজবুত করতে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো প্রয়োগ করুন (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৬. কেন আমাদের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো প্রয়োগ করতে হবে?

() প্রয়োগ। যিশু বলেছিলেন, আমরা যদি শিক্ষণীয় বিষয়গুলো প্রয়োগ না করি, তা হলে আমরা এমন ব্যক্তির মতো হব, যিনি বালির উপর তার বাড়ি নির্মাণ করেন। তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন ঠিকই, কিন্তু সেটা ব্যর্থ হয়ে যাবে। কারণ ঝড়ো বাতাস বা বন্যা এলে সেই বাড়ি পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। (মথি ৭:২৪-২৭) ঠিক একইভাবে, আমরা যদি প্রার্থনা করি, কল্পনা করি আর ধ্যান করি কিন্তু শিক্ষণীয় বিষয়গুলো প্রয়োগ না করি, তা হলে আমাদের সমস্ত পরিশ্রম ব্যর্থ হয়ে যাবে। যখন আমাদের উপর কোনো পরীক্ষা বা তাড়না আসবে, তখন বিশ্বাসে টিকে থাকা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। অপর দিকে, আমরা যদি শিক্ষণীয় বিষয়গুলো প্রয়োগ করি, তা হলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব। আর আমাদের মনের শান্তি বজায় থাকবে এবং বিশ্বাসও মজবুত হবে। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) আসুন দেখি, এই চারটে বিষয় ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা রাজা দায়ূদের জীবন থেকে কী শিখতে পারি।

রাজা দায়ূদের কাছ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন?

৭. কার উদাহরণের প্রতি আমরা এখন মনোযোগ দেব?

আপনার কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্য কি আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে? যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে রাজা দায়ূদের উদাহরণের প্রতি মনোযোগ দিন। তার ছেলে অবশালোম তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন এবং তার রাজ্য কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।—২ শমূ. ১৫:৫-১৪, ৩১; ১৮:৬-১৪.

৮. আপনি যিহোবার কাছে কোন বিষয়ে প্রার্থনা করতে পারেন?

() প্রার্থনা। দায়ূদের ঘটনা মাথায় রেখে যিহোবাকে নির্দিষ্টভাবে বলুন, আপনার সঙ্গে যে-খারাপ আচরণ করা হয়েছে, সেই বিষয়ে আপনি কেমন অনুভব করছেন। (গীত. ৬:৬-৯) এরপর, যিহোবার কাছে অনুরোধ করুন, যাতে তিনি আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বাইবেল থেকে নীতি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন।

৯. দায়ূদ ও অবশালোমের মধ্যে কী ঘটেছিল? ব্যাখ্যা করুন।

() কল্পনা। এই ঘটনা সম্বন্ধে একটু চিন্তা করুন আর কল্পনা করুন, সেই সময়ে দায়ূদ কেমন অনুভব করেছিলেন, যখন অবশালোম লোকদের মন জয় করার জন্য কয়েক বছর ধরে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন। (২ শমূ. ১৫:৭) এরপর, যখন সঠিক সময় আসে, তখন অবশালোম পুরো ইজরায়েলে তার গুপ্তচরদের পাঠান, যাতে লোকেরা তাকে রাজা হিসেবে মেনে নেয়। তিনি দায়ূদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরামর্শদাতা অহীথোফলকেও দায়ূদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য নিজের দলে টেনে নেন। পরে, অবশালোম নিজেকে একজন রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন আর তারপর তার পিতা, দায়ূদকে হত্যা করার চক্রান্ত করেন, যিনি সেই সময়ে খুবই অসুস্থ ছিলেন। (গীত. ৪১:১-৯) দায়ূদ যখন এই চক্রান্তের বিষয়ে জানতে পারেন, তখন তিনি জেরুসালেমে পালিয়ে যান। পরিশেষে, অবশালোম ও দায়ূদের সৈন্যদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। অবশালোমের সৈন্যরা পরাজিত হয় এবং অবশালোমকে হত্যা করা হয়।

১০. রাজা দায়ূদ চাইলে কী করতে পারতেন?

১০ এবার একটু কল্পনা করে দেখুন, দায়ূদের জীবনে যখন এই সমস্ত কিছু ঘটছিল, তখন তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন। তিনি নিজের ছেলে অবশালোমকে খুব ভালোবাসতেন এবং নিজের বন্ধু অহীথোফলের উপর তার প্রচুর আস্থা ছিল। কিন্তু, তারা দু-জনেই দায়ূদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, তারা দায়ূদকে হত্যা করার প্রচেষ্টাও করেছিলেন। এতে অন্য বন্ধুদের উপর থেকে দায়ূদের বিশ্বাস উঠে যেতে পারত। তিনি এই ভেবে সন্দেহ করতে পারতেন যে, তারাও অবশালোমের সঙ্গে বিদ্রোহে জড়িত রয়েছে। তিনি চাইলে শুধুমাত্র নিজের সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারতেন এবং জীবন রক্ষা করার জন্য একা পালিয়ে যেতে পারতেন। হতাশায় ডুবে যেতে পারতেন কিংবা হাল ছেড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু, দায়ূদ এমন কিছুই করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছিলেন। তিনি কীভাবে তা করতে পেরেছিলেন? আসুন দেখি।

১১. দায়ূদ নিজের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য কী করেছিলেন?

১১ () ধ্যান। এই বিষয়ে একটু চিন্তা করুন, “দায়ূদ নিজের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য কী করেছিলেন?” দায়ূদ ঘাবড়ে যাননি এবং তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি কিংবা ভয়ের কাছে নতিস্বীকার করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি নিজের বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছিলেন আর তিনি তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যদিও দায়ূদ অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে ছিলেন, তবুও তিনি নিজের মধ্যে তিক্ততার অনুভূতি গড়ে তোলেননি। তিনি যিহোবা ও বন্ধুদের উপর আস্থা বজায় রেখেছিলেন।

১২. কীভাবে যিহোবা দায়ূদকে সাহায্য করেছিলেন?

১২ কীভাবে যিহোবা দায়ূদকে সাহায্য করেছিলেন? আপনি যদি একটু গবেষণা করেন, তা হলে বুঝতে পারবেন যে, যিহোবা তাকে সেই কঠিন পরিস্থিতির সময়ে ধৈর্য ধরার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জুগিয়েছিলেন। (গীত. ৩:১-৮; শীর্ষলিখন) তিনি দায়ূদের সিদ্ধান্তের উপর আশীর্বাদও করেছিলেন। আর যখন দায়ূদের সৈন্যরা তাকে রক্ষা করার জন্য অবশালোমের সৈন্যদের সঙ্গে লড়াই করছিল, তখন যিহোবা দায়ূদের সৈন্যদের সাহায্য করেছিলেন, যাতে তারা রাজা দায়ূদকে রক্ষা করতে পারে।

১৩. কেউ যদি আপনাকে আঘাত দিয়ে থাকে, তা হলে কীভাবে আপনি দায়ূদকে অনুকরণ করতে পারেন? (মথি ১৮:১৫-১৭)

১৩ () প্রয়োগ। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: “কীভাবে আমি দায়ূদকে অনুকরণ করতে পারি?” সমস্যা সমাধান করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিন। আর যদি প্রয়োজন হয়, তা হলে মথি ১৮ অধ্যায়ে যিশু যে-পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন। (পড়ুন, মথি ১৮:১৫-১৭.) তবে, আপনার তাড়াহুড়ো করে অথবা আবেগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। ঠাণ্ডা মাথায় এবং বুদ্ধিপূর্বক কাজ করার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করুন। আপনার বন্ধুদের উপর আস্থা রাখুন এবং তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিন। (হিতো. ১৭:১৭) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাইবেলের মাধ্যমে যিহোবা যে-পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা মেনে চলুন।—হিতো. ৩:৫, ৬.

পৌলের কাছ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন?

১৪. কোন পরিস্থিতিতে আপনি ২ তীমথিয় ১:১২-১৬; ৪:৬-১১, ১৭-২২ পদ থেকে উৎসাহ লাভ করতে পারেন?

১৪ আপনি কি আপনার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছেন? কিংবা আপনি কি এমন দেশে বাস করেন, যেখানে আমাদের কাজের উপর সীমা আরোপ করা হয়েছে বা আমাদের কাজ নিষিদ্ধ? যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে পৌল ২ তীমথিয় ১:১২-১৬ এবং ৪:৬-১১, ১৭-২২ পদে যে-কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলো পড়ার মাধ্যমে আপনি অনেক উৎসাহ লাভ করতে পারেন। * পৌল এই কথাগুলো কারাগারে বন্দি থাকার সময়ে লিখেছিলেন।

১৫. আপনি যিহোবার কাছে কোন বিষয়ে প্রার্থনা করতে পারেন?

১৫ () প্রার্থনা। এই পদগুলো পড়ার আগে, যিহোবাকে নির্দিষ্টভাবে বলুন যে, আপনি কোন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন আর এই বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন। এরপর, যিহোবার কাছে অনুরোধ করুন, যাতে তিনি আপনাকে সেই সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য পৌলের ঘটনা থেকে নীতি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন।

১৬. পৌলের প্রতি কী ঘটেছিল? ব্যাখ্যা করুন।

১৬ () কল্পনা। পৌলের পরিস্থিতি নিয়ে একটু কল্পনা করুন। তিনি রোমে কারাগারে বন্দি আর তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আর তিনি এর আগেও বন্দি অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু, এবার পৌল জানেন যে, তাকে হত্যা করা হবে। তার কয়েক জন বন্ধু তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে আর তিনি শারীরিক দিক দিয়েও একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।—২ তীম. ১:১৫.

১৭. পৌল চাইলে কী করতে পারতেন?

১৭ পৌল হয়তো এভাবে চিন্তা করতে পারতেন, ‘আমি যদি একজন খ্রিস্টান না হতাম, তা হলে আমার সঙ্গে এসব হত না কিংবা আমাকে কারাগারে বন্দি থাকতে হত না।’ এশিয়া প্রদেশে যে-ভাইয়েরা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তাদের সম্বন্ধে তিনি তিক্ততার অনুভূতি গড়ে তুলতে পারতেন এবং অন্য বন্ধুদের উপর থেকে তার বিশ্বাস উঠে যেতে পারত। কিন্তু, তিনি এমন কিছুই করেননি। তিনি নিজের বন্ধুদের উপর আস্থা বজায় রেখেছিলেন আর নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা তাকে পুরস্কার দেবেন। কেন তিনি এতটা নিশ্চিত ছিলেন?

১৮. কীভাবে পৌল নিজের সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন?

১৮ () ধ্যান। এই বিষয় একটু চিন্তা করুন, “কীভাবে পৌল নিজের সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন?” পৌল জানতেন, তিনি শীঘ্রই মারা যাবেন। তা সত্ত্বেও তার চিন্তার বিষয় ছিল, কীভাবে তিনি যিহোবার গৌরব করতে পারেন। তিনি সবসময় নিজের বিষয় নয় বরং কীভাবে অন্যদের উৎসাহিত করা যায়, সেই বিষয়ে চিন্তা করতেন। তিনি যিহোবার কাছে নিয়মিত প্রার্থনা করার মাধ্যমে তাঁর উপর নির্ভরতা দেখিয়েছিলেন। (২ তীম. ১:৩) তিনি সেই বন্ধুদের সম্বন্ধে এই ভেবে দুঃখিত হননি যে, তারা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে বরং কঠিন পরিস্থিতির সময় যারা তার পাশে ছিল, তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ ছিলেন। এ ছাড়া, পৌল ঈশ্বরের বাক্য নিয়মিতভাবে অধ্যয়ন করতেন। (২ তীম. ৩:১৬, ১৭; ৪:১৩) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তিনি পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা ও যিশু তাকে ভালোবাসেন। তাঁরা তাকে ছেড়ে দেননি আর তাঁরা তার এই আনুগত্যের জন্য তাকে অবশ্যই পুরস্কার দেবেন।

১৯. কীভাবে যিহোবা পৌলকে সাহায্য করেছিলেন?

১৯ যিহোবা পৌলকে জানিয়েছিলেন, একজন খ্রিস্টান হওয়ার ফলে তাকে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। (প্রেরিত ২১:১১-১৩) কিন্তু, যিহোবা তাকে একা ছেড়ে দেননি বরং তাকে সাহায্য করেছিলেন। কীভাবে? যিহোবা পৌলের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন এবং তাকে শক্তি জুগিয়েছিলেন। (২ তীম. ৪:১৭) যিহোবা পৌলকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, যে-পুরস্কার লাভ করার জন্য পৌল কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, সেটা তিনি অবশ্যই পাবেন। এ ছাড়া, যিহোবা পৌলের অনুগত বন্ধুদের ব্যবহার করেছিলেন, যাতে তারা পৌলকে সাহায্য করে।

২০. (ক) রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯ পদ অনুযায়ী পৌল কোন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা পৌলকে অনুকরণ করতে পারি?

২০ () প্রয়োগ। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘কীভাবে আমি পৌলকে অনুকরণ করতে পারি?’ পৌলের মতো আমাদের উপরেও বিশ্বাসের কারণে তাড়না আসবে। (মার্ক ১০:২৯, ৩০) তাই, যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য আমাদের তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে হবে, তাঁর উপর নির্ভর করতে হবে এবং বাইবেল অধ্যয়ন করে যেতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যিহোবার গৌরব করা। আর এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা কখনোই আমাদের ছেড়ে দেবেন না আর কোনো কিছুই তাঁর প্রেম থেকে আমাদের আলাদা করতে পারবে না।—পড়ুন, রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯; ইব্রীয় ১৩:৫, ৬.

বাইবেলের অন্যান্য চরিত্র থেকে শিখুন

২১. কীভাবে আয়োকো ও হেকটার নিজেদের পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করেছিলেন?

২১ আমরা যদি বাইবেলে উল্লেখিত বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে অধ্যয়ন করি, তা হলে আমরা শক্তি লাভ করতে এবং যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব। উদাহরণ স্বরূপ, জাপানে বসবাসকারী আয়োকো * নামে একজন অগ্রগামী বোনের কথা বিবেচনা করে দেখুন। তিনি জনসাধারণ্যে প্রচার করতে ভয় পেতেন। কিন্তু, বাইবেল থেকে যোনার বিষয়ে পড়ার ফলে তিনি সেই ভয় কাটিয়ে উঠেছিলেন । ইন্দোনেশিয়ায় বসবাসকারী হেকটার নামে একজন যুবকের বিষয় বিবেচনা করে দেখুন। তার বাবা-মা যিহোবার উপাসনা করেন না। কিন্তু, তিনি বাইবেল থেকে রূতের বিষয়ে পড়ার ফলে যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে এবং তাঁর উপাসনা করতে শুরু করেন।

২২. কোথায় আপনি বাইবেলের বিভিন্ন চরিত্র সম্বন্ধে আরও তথ্য লাভ করতে পারেন?

২২ কোথায় আপনি বাইবেলের বিভিন্ন চরিত্র সম্বন্ধে আরও তথ্য লাভ করতে পারেন? আমাদের ভিডিওতে, নাটকের আকারে বাইবেল পাঠে এবং “তাদের বিশ্বাস অনুকরণ করুন” ধারাবাহিক প্রবন্ধে। * তাদের সম্বন্ধে দেখার, শোনার ও পড়ার আগে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন আর তাঁকে নির্দিষ্টভাবে বলুন যে, আপনার কোন বিষয়ে সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। সেই চরিত্রের বিষয়ে কল্পনা করুন, তিনি কোন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন, তিনি কী চিন্তা করছেন এবং তিনি কেমন অনুভব করছেন। এই বিষয়ে ধ্যান করুন যে, নিজের সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তিনি কী করেছিলেন আর যিহোবা তাকে কীভাবে সাহায্য করেছিলেন। এরপর, আপনি যা-কিছু শিখেছেন, সেগুলো প্রয়োগ করুন। যিহোবা এই পর্যন্ত আপনার জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিন। আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য অন্যদের উৎসাহিত করুন এবং সাহায্য করুন। 

২৩. যিশাইয় ৪১:১০, ১৩ পদে যিহোবা আমাদের জন্য কী প্রতিজ্ঞা করেছেন?

২৩ শয়তানের জগতে টিকে থাকা সহজ নয়। কখনো কখনো আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি না যে, আমাদের কী করতে হবে। (২ তীম. ৩:১) কিন্তু, আমাদের উদ্‌বিগ্ন হওয়ার বা ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ যিহোবা ভালোভাবে জানেন, আমরা কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যিহোবা আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, সমস্যার সময় তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে আমাদের ধরে রাখবেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৪১:১০, ১৩.) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন এবং বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের শক্তি দেবেন, যাতে আমরা যেকোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।

গান সংখ্যা ৬ ঈশ্বরের দাসের প্রার্থনা

^ অনু. 5 বাইবেলে বিভিন্ন ব্যক্তির সম্বন্ধে লেখা হয়েছে। তাদের জীবনকাহিনি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, যিহোবা তাঁর লোকদের কতটা ভালোবাসেন আর তারা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে, কীভাবে তিনি তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এই প্রবন্ধে আমরা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের একটা উপায় সম্বন্ধে লক্ষ করব, যাতে আপনি বাইবেল থেকে যা পড়েন, সেটা থেকে আরও উপকার লাভ করতে পারেন।

^ অনু. 2 এই প্রবন্ধে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার কেবল একটা উপায় তুলে ধরা হয়েছে। এর আরও উপায় সম্বন্ধে জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের জন্য গবেষণা নির্দেশিকা-র বিষয়বস্তুর অধীনে “বাইবেল” আর এরপর “বাইবেল পাঠ ও বোধগম্যতা” উপশিরোনাম দেখুন।

^ অনু. 14 মণ্ডলীতে প্রহরীদুর্গ অধ্যয়ন চলাকালীন এই পদগুলো পড়ার প্রয়োজন নেই।

^ অনু. 21 কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ অনু. 22 jw.org ওয়েবসাইটে “তাদের বিশ্বাস অনুকরণ করুন—বাইবেলে উল্লেখিত পুরুষ ও নারীদের জীবনকাহিনি” দেখুন। (লাইব্রেরি > ধারাবাহিক প্রবন্ধ দেখুন।)