সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৪

“পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ কর”

“পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ কর”

“খ্রিস্টও তোমাদের জন্য কষ্ট ভোগ করেছেন এবং তোমাদের জন্য এক আদর্শ রেখে গিয়েছেন, যেন তোমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ কর।”—১ পিতর ২:২১.

গান সংখ্যা ৫ খ্রিস্ট, আমাদের আদর্শ

সারাংশ *

যিশু তাঁর পদচিহ্ন ছেড়ে গিয়েছেন, যাতে আমরা তাঁকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করতে পারি (১-২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১-২. উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, যিশুকে অনুসরণ করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

কল্পনা করুন, আপনি কিছু লোকের সঙ্গে তুষারাবৃত এক ভয়ংকর প্রান্তরের মধ্য দিয়ে হাঁটছেন। আপনার সঙ্গে একজন অভিজ্ঞ পথ প্রদর্শক রয়েছেন, যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি আপনার আগে আগে হেঁটে চলেছেন আর আপনি তার পিছন পিছন যাচ্ছেন। কিছু দূর যাওয়ার পর, আপনি তাকে আর দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু, আপনি ঘাবড়ে যাননি কারণ সেই পথ প্রদর্শক এগিয়ে যাওয়ার সময়ে তুষারের উপর তার পায়ের ছাপ ছেড়ে গিয়েছেন। আপনি সেই পথ প্রদর্শকের পায়ের ছাপ লক্ষ করে তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করার চেষ্টা করছেন।

সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমরা যে-জগতে বাস করি, সেটা ঠিক সেই ভয়ংকর প্রান্তরের মতো। কিন্তু, যিহোবা আমাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন নিখুঁত পথ প্রদর্শক জুগিয়েছেন আর তিনি হলেন যিশু খ্রিস্ট, যাঁর পদচিহ্ন আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করতে পারি। (১ পিতর ২:২১) একটা বাইবেল তথ্যগ্রন্থ ১ পিতর ২:২১ পদের বিষয় উল্লেখ করে বলে যে, পিতর এখানে যিশুকে একজন পথ প্রদর্শকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। একজন পথ প্রদর্শকের মতো যিশুও আমাদের জন্য তাঁর পায়ের ছাপ ছেড়ে গিয়েছেন, যাতে আমরা তা অনুসরণ করতে পারি। আসুন, এখন তিনটে প্রশ্নের উত্তর বিবেচনা করে দেখি: যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করার অর্থ কী? কেন আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করতে হবে? আর কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করার অর্থ কী?

৩. কারো পদচিহ্ন অনুসরণ করার অর্থ কী?

কারো পদচিহ্ন অনুসরণ করার অর্থ কী? বাইবেলের কিছু পদে যখন “গমনাগমন” ও “চরণ” এই শব্দ উল্লেখ করা হয়, তখন সেখানে একজন ব্যক্তির জীবনযাপন করার ধরন সম্বন্ধে বলা হয়ে থাকে। (আদি. ৬:৯; হিতো. ৪:২৬) একজন ব্যক্তি যেভাবে জীবনযাপন করে থাকেন, আমরা যদি ঠিক একইভাবে জীবনযাপন করি, তা হলে এটা বলা যেতে পারে, আমরা তার পদচিহ্ন অনুসরণ করছি।

৪. যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করার অর্থ কী?

তাহলে, যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করার অর্থ কী? সহজভাবে বললে, এর অর্থ হল তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করা। এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদে প্রেরিত পিতর বলেছেন, যিশু নিজে কষ্ট ভোগ করার মাধ্যমে আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি অন্যান্য বিষয়েও আমাদের জন্য এক আদর্শ রেখে গিয়েছেন, যেগুলো আমরা অনুসরণ করতে পারি। (১ পিতর ২:১৮-২৫) সত্যিই, যিশু তাঁর সমগ্র পার্থিব জীবনে যা বলেছিলেন এবং যা করেছিলেন, তা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।

৫. অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে আমরা কি সত্যিই যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি? ব্যাখ্যা করুন।

আমরা হয়তো চিন্তা করতে পারি, ‘অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে আমরা কি সত্যিই যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?’ হ্যাঁ, আমরা পারি। মনে করে দেখুন, পিতর বলেননি যে, আমাদের অবশ্যই যিশুর পদচিহ্ন নিখুঁতভাবে বা হুবহু অনুসরণ করতে হবে। এর পরিবর্তে, তিনি অনুরোধ করেছিলেন, আমরা যেন “পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে [যিশুর] পদচিহ্ন অনুসরণ” করি। অসিদ্ধ মানুষ হিসেবেও আমরা যদি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করি অর্থাৎ আমাদের দিক দিয়ে যথাসাধ্য করি, তা হলে আমরা প্রেরিত যোহনের এই কথাগুলোতে মনোযোগ দিচ্ছি: “সেভাবে জীবনযাপন করতে হবে, যেভাবে যিশু করেছিলেন।”—১ যোহন ২:৬.

কেন যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করতে হবে?

৬-৭. কেন আমরা বলতে পারি যে, যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করলে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারব?

যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করলে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারব। কেন আমরা তা বলতে পারি? প্রথম কারণটা হল, যিশু যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন, সেটা দেখে যিহোবা খুব খুশি হয়েছিলেন। (যোহন ৮:২৯) আমরা যদি যিশুর মতো জীবনযাপন করি, তা হলে আমরাও যিহোবাকে খুশি করতে পারব। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমরা যদি আমাদের স্বর্গীয় পিতার বন্ধু এবং তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করি, তা হলে তিনিও আমাদের নিকটবর্তী হবেন।—যাকোব ৪:৮.

দ্বিতীয় কারণটা হল, যিশু তাঁর পিতাকে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করেছিলেন। তাই, তিনি বলতে পেরেছিলেন: “যে আমাকে দেখেছে, সে পিতাকে দেখেছে।” (যোহন ১৪:৯) আমরা যিশুর মতো গুণাবলি গড়ে তুলতে পারি এবং তিনি যেভাবে অন্যদের সঙ্গে আচরণ করতেন, তা অনুকরণ করতে পারি। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি একজন কুষ্ঠ রোগীর প্রতি গভীর সমবেদনা দেখিয়েছিলেন। তিনি একজন মহিলার প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন, যিনি অনেক সময় ধরে এক কঠিন রোগে ভুগছিলেন। আর যারা মৃত্যুতে প্রিয়জনকে হারিয়েছিল, তাদের প্রতি তিনি করুণা দেখিয়েছিলেন। আমরা যখন এই ক্ষেত্রগুলোতে যিশুকে অনুকরণ করি, তখন আমরা আসলে যিহোবাকে অনুকরণ করি। (মার্ক ১:৪০, ৪১; ৫:২৫-৩৪; যোহন ১১:৩৩-৩৫) আর আমরা যত বেশি যিহোবার গুণাবলি অনুকরণ করব, তত বেশি তাঁর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় হবে।

৮. যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করলে কীভাবে আমরা এই জগৎকে “জয়” করতে পারব? ব্যাখ্যা করুন।

যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করলে আমরা এই দুষ্ট জগতের দ্বারা বিক্ষিপ্ত হব না। যিশু তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ রাতে বলতে পেরেছিলেন: “আমি জগৎকে জয় করেছি।” (যোহন ১৬:৩৩) এর অর্থ কী? এর অর্থ হল, যিশু এই জগতের দ্বারা প্রভাবিত হননি আর তিনি তাদের মতো চিন্তা করা, লক্ষ্য রাখা এবং কাজ করাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। যিশু কখনো ভুলে যাননি যে, যিহোবার নামকে মহিমান্বিত করার জন্য তাঁকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? এই জগতে এমন অনেক কিছু রয়েছে, যেগুলো আমাদের বিক্ষিপ্ত করতে পারে। কিন্তু, আমরা যদি যিশুর মতো যিহোবার ইচ্ছা পালন করার উপর আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি, তা হলে আমরাও এই জগৎকে “জয়” করতে পারব।—১ যোহন ৫:৫.

৯. অনন্তজীবন লাভ করতে হলে আমাদের কী করতে হবে?

যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করলে আমরা অনন্তজীবন লাভ করতে পারব। একজন ধনী যুবক যখন যিশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, অনন্তজীবন পেতে হলে কী করতে হবে, তখন যিশু তাকে বলেছিলেন: “এসো, আমার অনুসারী হও।” (মথি ১৯:১৬-২১) কিছু যিহুদি বিশ্বাস করত না যে, যিশুই ছিলেন খ্রিস্ট। যিশু তাদের বলেছিলেন: “আমার মেষ . . . আমাকে অনুসরণ করে। আমি তাদের অনন্তজীবন দিই।” (যোহন ১০:২৪-২৯) মহাসভার একজন সদস্য নীকদীম যখন যিশুর শিক্ষা সম্বন্ধে আরও জানার জন্য তাঁর কাছে এসেছিলেন, তখন যিশু তাকে বলেছিলেন, যে-কেউ “তাঁর উপর বিশ্বাস করে,” সে “অনন্তজীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) আমরা যদি অনন্তজীবন লাভ করতে চাই, তা হলে আমাদের যিশুর উপর বিশ্বাস করতে হবে, তাঁর দেওয়া শিক্ষা কাজে লাগাতে হবে এবং তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ করতে হবে।—মথি ৭:১৪.

কীভাবে আমরা যিশুর পদচিহ্ন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করতে পারি?

১০. যিশুকে ভালোভাবে জানার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (যোহন ১৭:৩)

১০ যিশুর পদচিহ্ন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করার আগে আমাদের অবশ্যই তাঁকে জানতে হবে। (পড়ুন, যোহন ১৭:৩.) যিশুকে “জানতে হবে,” এই ক্রিয়া পদ ক্রমাগত প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। এই কারণে, যিশুকে ভালোভাবে জানার জন্য সময় এবং পরিশ্রমের প্রয়োজন রয়েছে। তাই, আমরা যত বেশি যিশুর গুণাবলি, তাঁর চিন্তাধারা ও তাঁর মান সম্বন্ধে জানার প্রচেষ্টা করব, তত বেশি আমরা তাঁকে জানতে পারব। আমরা যত দীর্ঘসময় ধরেই সত্যে থাকি না কেন, যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে ভালোভাবে জানার জন্য আমাদের ক্রমাগত প্রচেষ্টা করতে হবে।

১১. সুসমাচারের চারটে বইয়ে কোন বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে?

১১ যিশুকে ভালোভাবে জানতে সাহায্য করার জন্য যিহোবা প্রেমের সঙ্গে তাঁর বাক্য বাইবেলে চারটে সুসমাচারের বই লিখিয়েছেন। সুসমাচারের বইগুলোর মধ্যে যিশুর জীবন এবং তাঁর পরিচর্যার বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এই বইগুলো থেকে জানা যায় যে, যিশু কী বলেছিলেন, কী করেছিলেন এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব ও অনুভূতি কেমন ছিল। সুসমাচারের এই চারটে বই যিশুর উদাহরণ “ভালোভাবে বিবেচনা” করে দেখতে আমাদের সাহায্য করবে। (ইব্রীয় ১২:৩) আমরা যত এই বইগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করব, তত যিশুকে ভালোভাবে জানতে পারব এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ করতে পারব।

১২. সুসমাচারের বইগুলো থেকে সম্পূর্ণ উপকার লাভ করতে চাইলে আমাদের কী করতে হবে?

১২ আমরা যদি সুসমাচারের বইগুলো থেকে সম্পূর্ণ উপকার লাভ করতে চাই, তা হলে এগুলো শুধুমাত্র পড়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে। আমাদের সময় বের করে এই বইগুলো অধ্যয়ন করতে হবে এবং তা নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করতে হবে। (তুলনা করুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৮.) সুসমাচারের বইগুলো থেকে আমরা যা পড়ি, সেটা নিয়ে কীভাবে আমরা ধ্যান করতে এবং তা কাজে লাগাতে পারি? আসুন, এই বিষয়ে দুটো পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করে দেখি।

১৩. ঘটনাটা মনের মধ্যে জীবন্ত করে তোলার জন্য আপনি কী করতে পারেন?

১৩ প্রথমত, ঘটনাটা মনের মধ্যে জীবন্ত করে তুলুন। সুসমাচারের বই থেকে আপনি যে-ঘটনার বিষয়ে পড়ছেন, সেটা কল্পনা করে দেখার, শোনার ও অনুভব করার চেষ্টা করুন। প্রসঙ্গটা বোঝার জন্য সেই ঘটনার আগের ও পরের শাস্ত্রপদগুলো পড়ুন আর সেখানে তুলে ধরা ব্যক্তিদের এবং জায়গার বিষয়ে মনোযোগ দিন। এক্ষেত্রে, যিহোবার সংগঠনের দ্বারা জোগানো বিভিন্ন প্রকাশনা নিয়ে আরও গবেষণা করুন। সেই ঘটনার বিষয়ে সুসমাচারের অন্য বই থেকেও পড়ুন। হতে পারে, সেখানে এমন আগ্রহজনক তথ্য রয়েছে, যেটা এই বইয়ে লেখা নেই।

১৪-১৫. সুসমাচারের বইগুলো থেকে আপনি যা-কিছু শিখেছেন, সেগুলো কীভাবে কাজে লাগাতে পারেন?

১৪ দ্বিতীয়ত, ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো কাজে লাগান। (যোহন ১৩:১৭) অধ্যয়ন ও ধ্যান করার পর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘সুসমাচারের বই থেকে যা শিখেছি, কীভাবে আমি তা কাজে লাগাতে পারি? আর কীভাবে সেই বিষয়গুলো অন্যদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি?’ আপনি সাহায্য করতে পারবেন এমন একজন ব্যক্তির বিষয়ে চিন্তা করুন। তারপর, সঠিক সময় দেখে সেই ব্যক্তিকে প্রেমের সঙ্গে এবং ভেবে-চিন্তে তা জানান।

১৫ কীভাবে আমরা এই দুটো পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি? আসুন, এই বিষয়ে আমরা সেই দরিদ্র বিধবার উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করে দেখি, যাকে যিশু মন্দিরে দেখেছিলেন।

দরিদ্র বিধবার কাহিনি

১৬. মার্ক ১২:৪১ পদে দেওয়া দৃশ্যটা বর্ণনা করুন।

১৬ ঘটনাটা মনের মধ্যে জীবন্ত করে তুলুন। (পড়ুন, মার্ক ১২:৪১.) দৃশ্যটা কল্পনা করুন। সময়টা হল ৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ নিশান। কয়েক দিন পরই যিশু মারা যাবেন। তিনি মন্দিরে প্রচার করছেন। আর ধর্মীয় গুরুরা তাঁর বিরোধিতা করে। আগে, এদের মধ্যে কয়েক জন এসে তাঁর অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। আবার অন্যেরা এসে তাঁকে কথার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। (মার্ক ১১:২৭-৩৩; ১২:১৩-৩৪) এরপর, যিশু স্ত্রীলোকদের প্রাঙ্গণে চলে যান, যেখানে দান বাক্স রাখা ছিল। তিনি সেখানে বসেন এবং লোকদের দান দেওয়ার বিষয়টা লক্ষ করতে থাকেন। তিনি লক্ষ করেন, ধনী ব্যক্তিরা সেখানে প্রচুর মুদ্রা ফেলছে। তিনি হয়তো দান বাক্সের কাছেই বসে আছেন আর তাই মুদ্রা ফেলার ঝন ঝন শব্দ তাঁর কানে আসছে।

১৭. মার্ক ১২:৪২ পদ অনুযায়ী দরিদ্র বিধবা কী করেছিলেন?

১৭ মার্ক ১২:৪২ পদ পড়ুন। কিছু সময় পর, মন্দিরে একজন “দরিদ্র বিধবা” আসেন। (লূক ২১:২) তার জীবন খুবই কষ্টের ছিল। আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো কেনার জন্য তার কাছে যথেষ্ট টাকাপয়সা ছিল না। যিশু সেই বিধবাকে লক্ষ করেন। তিনি চুপচাপ এসে দান বাক্সে দুটো ক্ষুদ্র মুদ্রা ফেলেন। সেই মুদ্রা ফেলার কোনো শব্দ শোনা যাইনি। কিন্তু, যিশু জানতেন, সেই বিধবা দান বাক্সে দুটো লেপ্টা ফেলেছেন, যেটার মূল্য সেই সময় খুবই কম ছিল। সত্যি বলতে কী, এতটাই কম ছিল যে, তা দিয়ে খাবারের জন্য সস্তায় একটি চড়ুই পাখিও কেনা যেত না।

১৮. মার্ক ১২:৪৩, ৪৪ পদে যিশু সেই দরিদ্র বিধবার দানের বিষয়ে কী বলেছিলেন?

১৮ মার্ক ১২:৪৩, ৪৪ পদ পড়ুন। যিশু সেই দরিদ্র বিধবার প্রতি খুবই খুশি হন। তিনি তাঁর শিষ্যদের ডেকে বলেন: “সকলের চেয়ে এই দরিদ্র বিধবা বেশি রেখেছে। কারণ সকলে [বিশেষভাবে ধনী ব্যক্তিরা] তাদের অতিরিক্ত ধন থেকে কিছুটা রেখেছে কিন্তু এই বিধবা অভাব থাকা সত্ত্বেও তার সর্বস্ব রাখল।” দান দেওয়ার মাধ্যমে সেই দরিদ্র বিধবা দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবার উপর তার সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আর তিনি নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা তার যত্ন নেবেন।—গীত. ২৬:৩.

অন্যদের যিহোবাকে তাদের সর্বোত্তমটা দেওয়ার জন্য প্রশংসা করুন, ঠিক যেমনটা যিশু করেছিলেন (১৯-২০ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৯. দরিদ্র বিধবার কাছ থেকে আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি?

১৯ ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো কাজে লাগান। আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘যিশু দরিদ্র বিধবা সম্বন্ধে যা-কিছু বলেছিলেন, সেখান থেকে আমি কী শিখতে পারি?’ সেই দরিদ্র বিধবা সম্বন্ধে একটু চিন্তা করুন। তিনি হয়তো অন্যদের মতো যিহোবাকে বেশি দান দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নিজের পরিস্থিতির কারণে তা দিতে পারেননি। তা সত্ত্বেও, তিনি যা করতে পারতেন, সেটা করেছিলেন; তিনি যিহোবাকে তার সর্বোত্তমটা দিয়েছিলেন। আর যিশু জানতেন, সেই বিধবার দান যিহোবার দৃষ্টিতে খুবই মূল্যবান। এখান থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি: আমরা যদি নিজেদের পরিস্থিতি অনুযায়ী যিহোবার সেবায় আমাদের সর্বোত্তমটুকু করি এবং পূর্ণহৃদয়ে করি, তা হলে যিহোবা খুব খুশি হবেন। (মথি ২২:৩৭; কল. ৩:২৩) প্রচারে অংশ নেওয়ার এবং সভায় যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা যখন যথাসাধ্য করি, তখন যিহোবা খুব খুশি হন।

২০. দরিদ্র বিধবার কাছ থেকে আপনি যা-কিছু শিখেছেন, সেগুলো কীভাবে কাজে লাগাতে পারেন? একটা উদাহরণ দিন।

২০ দরিদ্র বিধবার কাছ থেকে আপনি যা-কিছু শিখেছেন, সেগুলো কীভাবে কাজে লাগাতে পারেন? নিজের মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সম্বন্ধে চিন্তা করুন। আপনি হয়তো এমন একজন বয়স্ক বোনকে জানেন, যিনি প্রায়ই অসুস্থ থাকেন এবং আগের মতো আর প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। আর এই কারণেই তার মনে হয়, যিহোবা তার সেবায় খুশি নন। কিংবা আপনি হয়তো এমন একজন ভাইকে জানেন, যিনি অনেক দিন ধরে অসুস্থ রয়েছেন এবং নিয়মিতভাবে সভাতে আসতে পারেন না। আর এই কারণেই তিনি কখনো কখনো হতাশ হয়ে পড়েন। আপনি এই ভাই-বোনদের কীভাবে সাহায্য করতে পারেন? আপনি আপনার কথার দ্বারা তাদের “শক্তি লাভ” করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারেন। (ইফি. ৪:২৯) দরিদ্র বিধবার কাছ থেকে আপনি যা-কিছু শিখেছেন, সেগুলো বলার মাধ্যমে তাদের উৎসাহ বৃদ্ধি করতে পারেন। আপনি তাদের আশ্বস্ত করতে পারেন যে, যিহোবার সেবায় তারা যা-কিছু করছে, তা দেখে যিহোবা খুব খুশি হন। (হিতো. ১৫:২৩; ১ থিষল. ৫:১১) আপনি যখন অন্যদের যিহোবাকে তাদের সর্বোত্তমটা দেওয়ার জন্য প্রশংসা করেন, তখন আপনি আসলে যিশুর পদচিহ্ন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করছেন।

২১. এই প্রবন্ধ থেকে আপনি কী শিখেছেন?

২১ আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ যে, সুসমাচারের চারটে বইয়ে যিশুর জীবন সম্বন্ধে অনেক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে! এই বইগুলো পড়ার মাধ্যমে আমরা তাঁকে অনুকরণ করতে এবং তাঁর পদচিহ্ন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করতে পারি। আমরা হয়তো ব্যক্তিগত অধ্যয়নে এবং পারিবারিক উপাসনায় এই বইগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারি। কিন্তু, আমরা যদি যিশুর কাছ থেকে আরও বেশি শিখতে চাই, তা হলে ঘটনাগুলো আমাদের মনে জীবন্ত করে তুলতে হবে আর শিক্ষণীয় বিষয়গুলো কাজে লাগাতে হবে। এই পর্যন্ত আমরা দেখেছি, যিশু যা-কিছু করেছিলেন, সেগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি। পরের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, যিশু তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ মুহূর্তে যা-কিছু বলেছিলেন, সেগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

গান সংখ্যা ২৫ শিষ্যত্বের প্রমাণ

^ অনু. 5 সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের “পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে [যিশুর] পদচিহ্ন অনুসরণ” করতে হবে। কিন্তু, এর অর্থ কী? কেন আমাদের যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করতে হবে? আর কীভাবে আমরা তা করতে পারি? এই প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হবে।

^ অনু. 60 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিশু সেই দরিদ্র বিধবা সম্বন্ধে যা বলেছিলেন, তা নিয়ে একজন বোন ধ্যান করছেন। পরে, তিনি অন্য একজন বয়স্ক বোনের প্রশংসা করছেন, যিনি এখনও মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করে চলেছেন।