সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৬

যিশুর মুক্তির মূল্যের প্রতি ক্রমাগত উপলব্ধি দেখান

যিশুর মুক্তির মূল্যের প্রতি ক্রমাগত উপলব্ধি দেখান

‘ মনুষ্যপুত্র অনেকের জীবনের পরিবর্তে নিজের জীবন মুক্তির মূল্য হিসেবে দিতে এসেছেন।’—মার্ক ১০:৪৫.

গান সংখ্যা ১৪৯ মুক্তির মূল্যের জন্য কৃতজ্ঞ

সারাংশ *

১-২. (ক) মুক্তির মূল্য কী? (খ) কেন যিশুকে মুক্তির মূল্য দিতে হয়েছিল?

আদম সিদ্ধ ছিলেন। কিন্তু, তিনি যখন পাপ করেছিলেন, তখন অনন্তজীবন হারিয়েছিলেন আর সেইসঙ্গে তার বংশধরেরাও তা হারিয়েছিল। আদম স্বেচ্ছায় পাপ করেছিলেন, তাই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তার সন্তানদের কোনো ভুল ছিল না। (রোমীয় ৫:১২, ১৪) তাই, আদমের সন্তানদের কি পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার করা সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। যিহোবা ধীরে ধীরে জানিয়েছিলেন, তিনি কীভাবে আদমের সন্তানদের পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার করবেন। (আদি. ৩:১৫) যিহোবা তাঁর নিরূপিত সময়ে নিজের পুত্রকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, যিনি “অনেকের জীবনের পরিবর্তে নিজের জীবন মুক্তির মূল্য হিসেবে” দিয়েছিলেন।—মার্ক ১০:৪৫; যোহন ৬:৫১.

মুক্তির মূল্য কী? আদম যা হারিয়েছিলেন, সেটা আবার ফিরে পাওয়ার জন্য যিশুকে নিজের জীবন দান করতে হয়েছিল। খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এ এটাকে মুক্তির মূল্য বলা হয়েছে। (১ করি. ১৫:২২) কিন্তু, কেন যিশুকে মুক্তির মূল্য দিতে হয়েছিল? কারণ যিহোবার ন্যায়বিচারের মান অনুযায়ী আশা করা হয় যে, প্রাণের পরিশোধে প্রাণ দিতে হবে। (যাত্রা. ২১:২৩, ২৪) আদম তার সিদ্ধ মানবজীবন হারিয়েছিলেন, তাই যিহোবার ন্যায়বিচারের মান পূরণ করার জন্য যিশুকে নিজের সিদ্ধ মানবজীবন দিতে হয়েছিল। (রোমীয় ৫:১৭) এভাবে, যিশু সেই সমস্ত ব্যক্তির জন্য “সনাতন পিতা” হয়ে ওঠেন, যারা মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস দেখায়।—যিশা. ৯:৬; রোমীয় ৩:২৩, ২৪.

৩. যোহন ১৪:৩১ এবং ১৫:১৩ পদ অনুযায়ী কেন যিশু তাঁর জীবন দিয়েছিলেন?

যিশু তাঁর জীবন দিয়েছিলেন কারণ তিনি তাঁর পিতাকে এবং আমাদের খুব ভালোবাসেন। (পড়ুন, যোহন ১৪:৩১; ১৫:১৩.) আর এই ভালোবাসার জন্যই যিশু তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করেছিলেন। যিশুর বলিদানের কারণেই মানবজাতি ও পৃথিবীর জন্য যিহোবার আদি উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবে। এই প্রবন্ধে আমরা দেখব যে, কেন যিহোবা তাঁর পুত্রকে খুবই যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু ভোগ করতে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, আমরা বাইবেলের একজন লেখক সম্বন্ধে আলোচনা করব, যিনি মুক্তির মূল্যের প্রতি গভীর উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন। পরিশেষে বিবেচনা করব, কীভাবে আমরা মুক্তির মূল্যের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি আর সেইসঙ্গে যিহোবা ও যিশু আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর প্রতি কীভাবে আমরা আমাদের উপলব্ধিবোধ আরও বৃদ্ধি করতে পারি।

কেন যিশুকে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু ভোগ করতে হয়েছিল?

একটু চিন্তা করুন, আমাদের জন্য মুক্তির মূল্য প্রদান করার ক্ষেত্রে যিশুকে কত কিছু সহ্য করতে হয়েছিল! (৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৪. কীভাবে যিশু মারা যান? ব্যাখ্যা করুন।

একটু কল্পনা করুন, যিশুর পার্থিব জীবনের শেষ দিনে তাঁর প্রতি কী কী ঘটেছিল। তিনি চাইলে নিজেকে রক্ষা করার জন্য স্বর্গীয় দূতবাহিনী ডাকতে পারতেন। কিন্তু, তিনি এমনটা করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি নিজেকে রোমীয় সৈন্যদের হাতে তুলে দেন আর তারা তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করে। (মথি ২৬:৫২-৫৪; যোহন ১৮:৩; ১৯:১) সৈন্যেরা যিশুকে এত বার চাবুক মারে যে, তাঁর পিঠে চাবুকের দাগ বসে যায়। এইরকম আহত অবস্থায় তারা তাঁকে যাতনাদণ্ড বয়ে নিয়ে যেতে বলে। কিছু দূর যাওয়ার পর যিশু যখন আর হাঁটতে পারছিলেন না, তখন রোমীয় সৈন্যেরা অন্য একজন ব্যক্তিকে সেই যাতনাদণ্ড বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্য করে। (মথি ২৭:৩২) যিশু যখন সেই জায়গায় পৌঁছান, যেখানে তারা তাঁকে হত্যা করবে, তখন সৈন্যেরা সেই যাতনাদণ্ডেই তাঁকে পেরেক দিয়ে বিদ্ধ করে। যাতনাদণ্ড খাড়া করা হলে যখন তাঁর সমস্ত দেহের ভার হাতে ও পায়ে গিয়ে পড়ে, তখন তিনি অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করেন। এটা দেখে তাঁর বন্ধুরা খুবই দুঃখ পান এবং তাঁর মা কান্নাকাটি করতে শুরু করেন। কিন্তু, যিহুদি শাসকেরা তাঁকে নিয়ে উপহাস করতে থাকে। (লূক ২৩:৩২-৩৮; যোহন ১৯:২৫) কিছু সময় ধরে কষ্ট ভোগ করার পর, তাঁর পক্ষে নিঃশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যিশু জানতেন, তিনি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। তাই, মারা যাওয়ার আগে তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন আর এরপর, মাথা নত করে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। (মার্ক ১৫:৩৭; লূক ২৩:৪৬; যোহন ১০:১৭, ১৮; ১৯:৩০) সত্যিই, যিশুকে কতই-না অপমান সহ্য করতে এবং যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল!

৫. কোন বিষয়টা যিশুকে তাঁর মৃত্যুর চেয়েও বেশি কষ্ট দিয়েছিল?

যিশুর এই বিষয়ে কোনো দুঃখ ছিল না, তাঁকে কীভাবে হত্যা করা হবে বরং তাঁর এই বিষয়ে বেশি দুঃখ ছিল, তাঁর উপর কোন অভিযোগ আনা হবে। তিনি জানতেন, তাঁর উপর ঈশ্বরনিন্দার মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আসা হবে। (মথি ২৬:৬৪-৬৬) এটা তাঁকে এতটাই কষ্ট দিয়েছিল যে, তিনি তাঁর পিতার কাছে অনুরোধ করেছিলেন, যেন তাঁকে ঈশ্বরনিন্দার কারণে এভাবে অপমান করা না হয়। (মথি ২৬:৩৮, ৩৯, ৪২) কিন্তু, কেন যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রকে এতটা কষ্ট ভোগ করে মারা যেতে দিয়েছিলেন? আসুন, তিনটে কারণ বিবেচনা করে দেখি।

৬. কেন যিশুকে একটা যাতনাদণ্ডে মারা যেতে হয়েছিল?

প্রথমত, যিশু তাঁর জীবন দিয়েছিলেন, যাতে যিহুদিরা এক অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারে। (গালা. ৩:১০, ১৩) কীভাবে যিহুদিরা অভিশপ্ত হয়েছিল? তারা যিহোবার সমস্ত ব্যবস্থা পালন করার প্রতিজ্ঞা করেছিল ঠিকই, কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। আদমের বংশধর হওয়ার কারণে তারা ইতিমধ্যেই অভিশপ্ত ছিল, কিন্তু এখন তাদের উপর আরেকটা অভিশাপ এসে পড়ে। আর এই কারণে তারা মৃত্যুর যোগ্য ছিল। (রোমীয় ৫:১২) ঈশ্বর ইজরায়েলীয়দের যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, সেই অনুযায়ী কেউ যদি মৃত্যুর যোগ্য কোনো পাপ করত, তা হলে তাকে হত্যা করার পর তার মৃতদেহ একটা দণ্ডে ঝুলিয়ে দেওয়া হত। * (দ্বিতীয়. ২১:২২, ২৩; ২৭:২৬) যে-জাতি যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, সেই জাতিকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য যিশুকে যাতনাদণ্ডে মারা যেতে হয়েছিল।

৭. যিহোবা যে তাঁর পুত্রকে কষ্ট ভোগ করতে দিয়েছিলেন, সেটার দ্বিতীয় কারণটা কী?

দ্বিতীয়ত, যিহোবা যিশুকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন কারণ তিনি ভবিষ্যতে আমাদের মহাযাজক হবেন। যিশু নিজে অনুভব করেছিলেন, চরম পরীক্ষার সময়ে যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকা সহজ নয়। তাই, তিনি “প্রচণ্ড আর্তনাদ এবং চোখের জল সহকারে” যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। আমরা যখন ‘পরীক্ষার’ মুখোমুখি হই, তখন যিশু আমাদের “সাহায্য করতে সমর্থ” কারণ তিনি নিজে কষ্ট ভোগ করেছিলেন এবং তিনি আমাদের ভালোভাবে বোঝেন। আমরা যিহোবার প্রতি কতই-না কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাদের জন্য এইরকম একজন মহাযাজককে নিযুক্ত করেছেন, যিনি “আমাদের দুর্বলতার প্রতি সমবেদনা দেখাতে” পারেন!—ইব্রীয় ২:১৭, ১৮; ৪:১৪-১৬, পাদটীকা; ৫:৭-১০.

৮. যিহোবা যে তাঁর পুত্রকে কষ্ট ভোগ করতে দিয়েছিলেন, সেটার তৃতীয় কারণটা কী?

তৃতীয়ত, যিশু কষ্ট ভোগ করার মাধ্যমে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন: চরম পরীক্ষার মধ্যে লোকেরা কি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারবে? শয়তান বলে থাকে, তারা কখনো থাকতে পারবে না। এ ছাড়া, সে এও দাবি করে যে, মানুষ স্বার্থপর কারণের জন্য ঈশ্বরের সেবা করে থাকে আর সে বিশ্বাস করে, তারা তাদের আদি পিতা আদমের মতো যিহোবাকে ভালোবাসে না। (ইয়োব ১:৯-১১; ২:৪, ৫) যিহোবার আস্থা ছিল, তাঁর পুত্র সহ্যশক্তির চরম সীমা পর্যন্ত পরীক্ষার মধ্যেও বিশ্বস্ত থাকবেন। তাই, তিনি যিশুকে কষ্ট ভোগ করতে দিয়েছিলেন। যিশু যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন আর এভাবে তিনি শয়তানকে মিথ্যা প্রমাণ করেছিলেন।

একজন বাইবেল লেখক মুক্তির মূল্যের প্রতি গভীর উপলব্ধি দেখান

৯. প্রেরিত যোহন আমাদের জন্য কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

মুক্তির মূল্যের শিক্ষা অনেক খ্রিস্টানকে বিশ্বাসে শক্তিশালী করেছে। এর ফলে, তারা বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও সারা জীবন ধরে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখছে। এই ক্ষেত্রে প্রেরিত যোহন আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খ্রিস্ট এবং মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে অনুগতভাবে প্রচার করেছিলেন। যোহনের বয়স যখন প্রায় ১০০ বছর, তখন রোমীয় সরকার পাট্‌ম দ্বীপে তাকে বন্দি করে রাখে। তার অপরাধ কী ছিল? তিনি “ঈশ্বরের বিষয়ে . . . এবং যিশুর বিষয়ে সাক্ষ্য” দিচ্ছিলেন। (প্রকা. ১:৯) সত্যিই, যোহন বিশ্বাস ও ধৈর্যের কতই-না এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন!

১০. কীভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, মুক্তির মূল্যের প্রতি যোহন গভীর উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন?

১০ যোহন তার বইয়ে যিশুর প্রতি তার ভালোবাসা এবং মুক্তির মূল্যের প্রতি তার গভীর উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন। তিনি মুক্তির মূল্য এবং মুক্তির মূল্যের ফলে পাওয়া উপকারগুলোর বিষয়ে ১০০ বারেরও বেশি উল্লেখ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, যোহন লিখেছিলেন: “কেউ যদি পাপ করে ফেলে, তা হলে পিতার সঙ্গে আমাদের একজন সাহায্যকারী আছেন। তিনি সেই যিশু খ্রিস্ট, যিনি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে যা সঠিক, তা-ই করেন।” (১ যোহন ২:১, ২) এ ছাড়া, যোহন “যিশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার” উপর জোর দিয়েছিলেন। (প্রকা. ১৯:১০) যোহন সত্যিই মুক্তির মূল্যের প্রতি গভীর উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন। কীভাবে আমরাও এটার প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি?

কীভাবে আমরা মুক্তির মূল্যের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি?

আমাদের মধ্যে যদি মুক্তির মূল্যের প্রতি সত্যিই উপলব্ধিবোধ থাকে, তা হলে আমরা পাপ করার প্রলোভন প্রতিরোধ করতে পারব (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১১. কী আমাদের প্রলোভন প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১১ পাপ করার প্রলোভন প্রতিরোধ করুন। আমরা যদি মুক্তির মূল্যের প্রতি সত্যিই উপলব্ধি দেখাতে চাই, তা হলে আমরা কখনো এইরকম চিন্তা করব না: ‘এত কষ্ট করে পাপ করার প্রলোভন প্রতিরোধ করে কী হবে। এখন পাপ করি, পরে যিহোবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেব।’ এর পরিবর্তে, আমাদের সামনে যখন পাপ করার প্রলোভন আসবে, তখন আমরা এইরকম চিন্তা করতে পারি: ‘যিহোবা আর যিশু আমার জন্য যা-কিছু করেছেন, তারপরও আমি কীভাবে এইরকম একটা খারাপ কাজ করতে পারি? আমি কখনো তাঁদের দুঃখ দিতে পারব না।’ তাই, আমরা যিহোবার কাছে শক্তি চাইতে পারি এবং এই বলে তাঁর কাছে অনুরোধ করতে পারি: ‘আমাকে প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করতে দিয়ো না।’—মথি ৬:১৩.

১২. প্রথম যোহন ৩:১৬-১৮ পদ অনুযায়ী আমাদের কী করতে হবে?

১২ ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখান। আমরা যদি মুক্তির মূল্যের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে চাই, তা হলে ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের প্রেম দেখাতে হবে। কেন? কারণ যিশু শুধুমাত্র আমাদের জন্য নয় বরং ভাই-বোনদের জন্যও তাঁর জীবন দান করেছিলেন। আর এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, তিনি তাদেরও খুব ভালোবাসেন। (পড়ুন, ১ যোহন ৩:১৬-১৮.) আমাদের কাজের মাধ্যমে এটা দেখাতে হবে যে, আমরা তাদের কতটা ভালোবাসি। (ইফি. ৪:২৯, ৩১–৫:২) উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের ভাই-বোনেরা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা কোনো কষ্টের মধ্য দিয়ে যায়, যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তখন আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি। কিন্তু, যদি কোনো ভাই অথবা বোন আমাদের আঘাত দেয়, তা হলে আমরা কী করতে পারি?

১৩. কেন আমাদের ভাই-বোনদের ক্ষমা করতে হবে?

১৩ আপনার পক্ষে কি কোনো ভাই অথবা বোনের ভুল ক্ষমা করাকে কঠিন বলে হয়? (লেবীয়. ১৯:১৮) যদি এমনটা মনে হয়, তা হলে এই পরামর্শ কাজে লাগান: “এমনকী কারো বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ করার কারণও থাকে, তবুও সবসময় একে অন্যকে সহ্য করো এবং পরস্পরকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করো। যিহোবা যেমন তোমাদের পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করেছেন, তেমনই তোমরাও ক্ষমা করো।” (কল. ৩:১৩) প্রতি বার আমরা যখন কারো ভুল ক্ষমা করি, তখন আমরা যিহোবার কাছে প্রমাণ করি যে, মুক্তির মূল্যের প্রতি সত্যিই আমাদের উপলব্ধিবোধ রয়েছে। কিন্তু, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এই উপহারের প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ আরও বৃদ্ধি করতে পারি?

কীভাবে মুক্তির মূল্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ আরও বৃদ্ধি করতে পারি?

১৪. মুক্তির মূল্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ আরও বৃদ্ধি করার একটা উপায় কী?

১৪ মুক্তির মূল্যের জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ দিন। ভারতে বসবাসকারী ৮৩ বছর বয়সি বোন জোয়ানা বলেন: “আমি প্রতিদিন আমার ব্যক্তিগত প্রার্থনায় যিহোবাকে ধন্যবাদ দিই যে, মুক্তির মূল্যের কারণে আমি কত আশীর্বাদ লাভ করতে পেরেছি।” সারা দিনে আমরা যা-ই ভুল করি না কেন, সেগুলোর বিষয়ে আমাদের যিহোবার কাছে বলতে হবে আর তাঁর কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু, আমরা যদি কোনো গুরুতর ভুল করে ফেলি, তা হলে আমাদের প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তারা আমাদের কথা শুনবেন, বাইবেল থেকে পরামর্শ দেবেন আর আমাদের জন্য প্রার্থনা করবেন, যাতে যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন আর তাঁর সঙ্গে আবারও আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।—যাকোব ৫:১৪-১৬.

১৫. কেন আমাদের মুক্তির মূল্য নিয়ে ধ্যান করতে হবে?

১৫ মুক্তির মূল্য নিয়ে ধ্যান করুন। ৭৩ বছর বয়সি রাজমনি নামে একজন বোন বলেন: “যিশু আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলো নিয়ে যখনই আমি পড়ি, তখনই আমি আমার চোখের জল ধরে রাখতে পারি না।” যিশু যে-কষ্ট ভোগ করেছেন, তা নিয়ে চিন্তা করলে আমাদেরও অনেক কষ্ট লাগে। কিন্তু, আমরা যদি যিশুর মুক্তির মূল্য নিয়ে ধ্যান করি, তা হলে তাঁর প্রতি এবং যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরা হয়তো ব্যক্তিগত অধ্যয়নে মুক্তির মূল্য নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করতে পারি।

যিশু এক সাধারণ ভোজ প্রবর্তন করার মাধ্যমে তাঁর শিষ্যদের দেখিয়েছিলেন যে, কীভাবে তাঁর বলিদান স্মরণ করতে হবে (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে অন্যদের জানানোর মাধ্যমে কীভাবে আমরা উপকৃত হই? (প্রচ্ছদচিত্র দেখুন।)

১৬ মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে অন্যদের শিক্ষা দিন। আমরা যখন মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে অন্যদের জানাই, তখন এটার প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ আরও বৃদ্ধি পায়। সংগঠন আমাদের বিভিন্ন প্রকাশনা ও ভিডিও জুগিয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করে আমরা লোকদের শেখাতে পারি যে, যিশু কেন আমাদের জন্য মারা গিয়েছিলেন। যেমন, আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে সুসমাচার! ব্রোশারের পাঠ ৪ ব্যবহার করতে পারি, যেটার শিরোনাম হল, “যিশু খ্রিস্ট কে?” কিংবা বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ৫ অধ্যায় ব্যবহার করতে পারি, যেটার শিরোনাম হল, “মুক্তির মূল্য—ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।” আর প্রতি বছর স্মরণার্থ সভায় আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য আমরা যখন অন্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাই, তখন মুক্তির মূল্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ আরও বৃদ্ধি পায়। সত্যিই, যিহোবা আমাদের তাঁর পুত্র সম্বন্ধে অন্যদের শেখানোর জন্য কতই-না বিশেষ এক সুযোগ দিয়েছেন!

১৭. কেন মানবজাতির জন্য মুক্তির মূল্য হল ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক সর্বোত্তম উপহার?

১৭ এই প্রবন্ধে আমরা শিখেছি, যিশুর মুক্তির মূল্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধি দেখাতে হবে এবং তা বৃদ্ধিও করতে হবে। মুক্তির মূল্যের কারণে, আমরা অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। মুক্তির মূল্যের কারণে, শয়তানের কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করা হবে। (১ যোহন ৩:৮) মুক্তির মূল্যের কারণে, পৃথিবীর জন্য যিহোবার আদি উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবে। পুরো পৃথিবী পরমদেশে পরিণত হবে আর সেখানে বসবাসকারী ব্যক্তিরা যিহোবাকে ভালোবাসবে এবং তাঁর উপাসনা করবে। তাই আসুন, আমরা প্রতিদিন আমাদের কাজের মাধ্যমে দেখাই যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এই সর্বোত্তম উপহারের প্রতি আমাদের সত্যিই উপলব্ধিবোধ রয়েছে।

গান সংখ্যা ২ ধন্যবাদ, যিহোবা

^ অনু. 5 এই প্রবন্ধে আমরা দেখব যে, কেন যিশুকে খুবই যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু ভোগ করতে হয়েছিল। এ ছাড়া, আমরা এও জানব, কীভাবে মুক্তির মূল্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধ আরও বৃদ্ধি করতে পারি।

^ অনু. 6 রোমীয়েরা অপরাধীদের জীবিত অবস্থায় একটা দণ্ডে পেরেক দিয়ে বিদ্ধ করত কিংবা বেঁধে দিত। যিহোবা তাঁর পুত্রকে এভাবে মারা যেতে দিয়েছিলেন।

^ অনু. 55 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: তিন জন ভাই আলাদা আলাদা পরিস্থিতিতে প্রলোভন প্রতিরোধ করছে। প্রথম, অনুপযুক্ত ছবি দেখা, দ্বিতীয়, ধূমপান করা এবং তৃতীয়, ঘুস নেওয়া।