সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২০

প্রচার কাজে রত থাকুন

প্রচার কাজে রত থাকুন

“আপন বীজ বপন কর, . . . হস্ত নিবৃত্ত করিও না।”—উপ. ১১:৬.

গান ৪৪ শস্যচ্ছেদনের কাজে আনন্দের সঙ্গে অংশ নেওয়া

সারাংশ *

যিশু স্বর্গে ফিরে যাওয়ার পর, তাঁর শিষ্যেরা জেরুসালেম এবং অন্যান্য জায়গায় উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করছেন (১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১. যিশু তাঁর অনুসারীদের জন্য কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

যিশু খ্রিস্ট যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি প্রচার কাজে রত ছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন, লোকেরা একদিন না একদিন তাঁর কথা অবশ্যই শুনবে। তিনি চাইতেন যেন তাঁর অনুসারীরাও প্রচার কাজে রত থাকে। (যোহন ৪:৩৫, ৩৬) যিশুর সঙ্গে থাকার সময়ে তাঁর শিষ্যেরা উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার কাজ করতেন। (লূক ১০:১, ৫-১১, ১৭) কিন্তু, পরবর্তী সময়ে যখন যিশুকে গ্রেপ্তার এবং হত্যা করা হয়, তখন শিষ্যদের উদ্যোগ কমে যায়। (যোহন ১৬:৩২) পুনরুত্থিত হওয়ার পর, যিশু তাঁর শিষ্যদের প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। যিশু স্বর্গে ফিরে যাওয়ার পর, তাঁর শিষ্যেরা খুবই উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার কাজ করেছিলেন। এর ফলে, তাদের শত্রুরা বলেছিল: “দেখো! তোমরা তোমাদের শিক্ষা দিয়ে জেরুসালেম পূর্ণ করেছ।”—প্রেরিত ৫:২৮.

২. কীভাবে আমরা বলতে পারি যে, যিহোবা প্রচার কাজে আশীর্বাদ করছেন?

প্রথম শতাব্দীতে, প্রচার কাজ যিশুর নির্দেশনার অধীনে হয়েছিল আর যিহোবা এই কাজে আশীর্বাদ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, ৩৩ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রায় ৩,০০০ জন ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। (প্রেরিত ২:৪১) আর এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। (প্রেরিত ৬:৭) যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, শেষকালে আরও বেশি লোক সুসমাচারের প্রতি সাড়া দেবে।—যোহন ১৪:১২; প্রেরিত ১:৮.

৩-৪. (ক) কেন কিছু দেশে প্রচার করা সহজ নয়? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

কিছু কিছু দেশে প্রচার করা সহজ কারণ সেখানে অনেক লোক বাইবেল সম্বন্ধে শিখতে চায়। কখনো কখনো এত বেশি লোক শিখতে চায় যে, অধ্যয়ন পরিচালকই কম পড়ে যায়। কিন্তু, কিছু দেশে প্রচার করা সহজ নয় কারণ লোকদের ঘরে পাওয়া যায় না। আর যাদের পাওয়া যায়, তারা আবার আমাদের বার্তা শুনতে চায় না।

আপনি যদি এমন এলাকায় থাকেন, যেখানে লোকেরা আপনার কথা শুনতে চায় না, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কিছু ভাই-বোন কোন কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল, যেগুলোর মাধ্যমে তারা অনেক লোকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিল। এ ছাড়া, আমরা এও আলোচনা করব, লোকেরা আমাদের বার্তা শুনুক বা না-ই শুনুক, কেন আমাদের প্রচার কাজে রত থাকতে হবে।

লোকদের যখন ঘরে পাওয়া যায় না, তখনও রত থাকুন

৫. কেন কিছু ভাই-বোনের জন্য প্রচার করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে?

বর্তমানে, ভাই-বোনদের জন্য লোকদের সঙ্গে দেখা করা এবং তাদের কাছে প্রচার করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে। কিছু এলাকায় লোকেরা বড়ো বড়ো অ্যাপার্টমেন্টে থাকে। যদি সেই অ্যাপার্টমেন্টে আমাদের কোনো পরিচিত ব্যক্তি না থাকে, তা হলে সিকিউরিটি গার্ড আমাদের ভিতরে ঢুকতে দেয় না। আবার কিছু এলাকায় আমরা লোকদের বাড়িতে যেতে পারি ঠিকই, কিন্তু লোকদের আমরা বাড়িতে পাই না। কিছু প্রকাশক এমন এলাকায় প্রচার করে, যেখানে খুব কম লোক বাস করে। শুধুমাত্র এক জন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রকাশকেরা অনেক দূর পর্যন্ত যাত্রা করে থাকে। কিন্তু, তারা যখন সেখানে পৌঁছায়, তখন সেই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয় না। আমরা যদি এই ধরনের এলাকায় প্রচার করে থাকি, তা হলে আমাদের হতাশ হওয়া কিংবা হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের আরও বেশি লোকের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত।

৬. কেন প্রচার কাজকে মাছ ধরার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?

যিশু প্রচার কাজকে মাছ ধরার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। (মার্ক ১:১৭) কখনো কখনো অনেক দিন পরিশ্রম করার পরও, জেলেরা একটাও মাছ ধরতে পারে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তারা হাল ছেড়ে দেয় না। তারা তাদের মাছ ধরার সময়, জায়গা কিংবা পদ্ধতি পরিবর্তন করে। আমরা আমাদের প্রচার কাজে এইরকম কিছু পরিবর্তন করতে পারি, যাতে আমরা আরও বেশি লোকের কাছে প্রচার করতে পারি। আসুন, কিছু পরামর্শের উপর মনোযোগ দিই।

লোকদের যখন ঘরে পাওয়া যায় না, তখন আমাদের আলাদা আলাদা সময়ে, আলাদা আলাদা জায়গায়, আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে প্রচার করার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে (৭-১০ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৭. কেন আমাদের আলাদা আলাদা সময়ে প্রচার করতে হবে?

আমাদের আলাদা আলাদা সময়ে লোকদের সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে। এর একটা কারণ হল, লোকেরা কোনো-না-কোনো সময়ে তো বাড়িতে ফিরে আসবেই। অনেক ভাই-বোন বিকেল অথবা সন্ধ্যা বেলায় প্রচার করে। কারণ তারা লক্ষ করেছে, সেই সময়ে লোকদের বাড়িতে পাওয়া যায় আর তারা আমাদের কথাও শুনতে চায়। আমরা হয়তো ডেভিড নামে একজন প্রাচীনের উপায়ও কাজে লাগাতে পারি। তিনি ও তার সঙ্গী কিছু সময় ঘরে ঘরে প্রচার করার পর, আবারও সেই বাড়িগুলোতে ফিরে যান, যেগুলো প্রথমে বন্ধ ছিল। তিনি বলেন: “আমি দেখেছি যে, দ্বিতীয় বার ফিরে যাওয়ার ফলে কোনো-না-কোনো ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়েই যায়।” *

লোকদের যখন ঘরে পাওয়া যায় না, তখন আমাদের আলাদা আলাদা সময়ে প্রচার করার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে (৭-৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৮. কীভাবে আমরা প্রচারের ক্ষেত্রে উপদেশক ১১:৬ পদে দেওয়া পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি?

এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদ থেকে আমরা শিখেছি, আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। আমাদের লোকদের খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রচার কাজে রত থাকতে হবে। (পড়ুন, উপদেশক ১১:৬.) আগে উল্লেখিত ডেভিডও ঠিক এমনটাই করেছিলেন। তিনি একজন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার জন্য বার বার তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। কয়েক বার ব্যর্থ হওয়ার পর, পরিশেষে সেই ব্যক্তির সঙ্গে ডেভিডের দেখা হয়। এর ফলাফল কী হয়? সেই ব্যক্তি মন দিয়ে ডেভিডের কথা শুনেছিলেন এবং বাইবেল নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়েছিলেন। সেই ব্যক্তি বলেন: “আমি এখানে প্রায় আট বছর ধরে বাস করছি, কিন্তু কখনো কোনো যিহোবার সাক্ষির সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।” ডেভিড বলেন: “আমি দেখেছি, অনেক প্রচেষ্টা করার পর যখন কারো সঙ্গে দেখা হয়, তখন সেই ব্যক্তি আমাদের বার্তা শুনতে আগ্রহী হয়।”

লোকদের যখন ঘরে পাওয়া যায় না, তখন আমাদের আলাদা আলাদা জায়গায় প্রচার করার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯. যে-লোকদের ঘরে পাওয়া যায় না, তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কিছু প্রকাশক কী কী করেছে?

আমাদের আলাদা আলাদা জায়গায় গিয়ে প্রচার করতে হবে। যে-লোকদের ঘরে পাওয়া যায় না, তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কিছু প্রকাশক আলাদা আলাদা জায়গায় গিয়ে সাক্ষ্য দেয়। উদাহরণ স্বরূপ, যে-লোকেরা বড়ো বড়ো অ্যাপার্টমেন্টে থাকে অথবা এমন জায়গায় থাকে, যেখানে কড়াকড়ি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে, তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রকাশকেরা রাস্তায় অথবা ট্রলি ব্যবহার করে সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। এর ফলে, প্রকাশকেরা অনেক লোকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে সক্ষম হয়েছে। আবার অনেক প্রকাশক পার্কে, বাজারে কিংবা ব্যাবসায়িক এলাকায় সাক্ষ্য দেয়। এর ফলে, সেই ব্যক্তিরা ভালোভাবে তাদের কথা শোনে এবং সাহিত্যাদি নেয়। বলিভিয়ার একজন সীমা অধ্যক্ষ ফ্লরান বলেন: “আমরা দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে এবং ব্যাবসায়িক এলাকায় গিয়ে সাক্ষ্য দিই কারণ সেই সময়ে বিক্রেতারা বেশি ব্যস্ত থাকে না। এর ফলে, তারা আমাদের কথা মন দিয়ে শোনে আর এমনকী অনেকে বাইবেল অধ্যয়ন করতেও রাজি হয়।”

লোকদের যখন ঘরে পাওয়া যায় না, তখন আমাদের আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে প্রচার করার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. লোকদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আমরা আর কোন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি?

১০ আমাদের আলাদা আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। ধরুন, আপনি কোনো ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার জন্য বার বার চেষ্টা করছেন, আলাদা আলাদা সময়ে তার বাড়িতে যাচ্ছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তার সঙ্গে আপনার দেখা হচ্ছে না। তখন আপনি কী করবেন? ক্যাটারিনা নামে একজন বোন বলেন: “আমি যাদের ঘরে পাই না, তাদের চিঠি লিখি। চিঠিতে সেই সব কথা লিখি, যা আমি তাদের সঙ্গে দেখা করে বলতে চেয়েছিলাম।” আমরা বোনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারি, লোকদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আমরা যেন প্রতিটা পদ্ধতি ব্যবহার করি।

লোকেরা যখন শুনতে চায় না, তখনও রত থাকুন

১১. কেন কিছু লোক আমাদের কথা শুনতে চায় না?

১১ জগতে এত দুঃখকষ্ট দেখে কিছু লোক ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করা বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু লোক বাইবেল সম্বন্ধে শিখতে চায় না কারণ তারা দেখেছে, যে-ধর্মীয় গুরুরা বাইবেল থেকে শেখানোর দাবি করে থাকে, তারা নিজেরাই মন্দ কাজ করছে। কিছু লোক আবার নিজেদের চাকরি, পরিবার এবং ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত থাকে। ফলে, তারা এই বিষয়টা বুঝতে ব্যর্থ হয় যে, বাইবেল সত্যিই তাদের সাহায্য করতে পারে। এই কারণগুলোর জন্য হয়তো লোকেরা আমাদের কথা না-ও শুনতে পারে। কীভাবে আমরা এইরকম পরিস্থিতিতে আনন্দ সহকারে প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে পারি?

১২. কীভাবে আমরা প্রচার করার সময় ফিলিপীয় ২:৪ পদে দেওয়া পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি?

১২ আমাদের লোকদের প্রতি চিন্তা দেখাতে হবে। কিছু লোক শুরুতে আমাদের কথা শুনতে চাইত না। কিন্তু, তারা যখন দেখেছে যে, তাদের প্রতি সত্যিই আমাদের চিন্তা রয়েছে, তখন তারা আমাদের কথা মন দিয়ে শুনেছে। (পড়ুন, ফিলিপীয় ২:৪.) আগে উল্লেখিত ভাই ডেভিড বলেন: “কেউ যখন আমাদের কথা শুনতে চায় না, তখন আমরা আমাদের বাইবেল এবং প্রকাশনাগুলো ব্যাগে রেখে দিই আর জানার চেষ্টা করি, কেন তিনি আমাদের কথা শুনতে চাইছেন না।” আমরা কী বলি, সেটা হয়তো বেশিরভাগ সময় লোকেরা ভুলে যেতে পারে। কিন্তু, তাদের কথা শোনার জন্য আমরা কতটা আগ্রহী, সেই বিষয়টা তারা বেশি মনে রাখে। লোকেরা প্রায়ই আমাদের মুখের হাবভাব দেখে বুঝতে পারে, তাদের প্রতি আমাদের সত্যিই চিন্তা রয়েছে কি না। তাই, লোকদের সঙ্গে যখন আমাদের দেখা হয়, তখন তাদের প্রতি আমাদের উত্তম আচরণ বজায় রাখতে হবে, তা তারা আমাদের কথা শুনুক বা না-ই শুনুক।

১৩. আমরা যদি চাই, লোকেরা আমাদের বার্তা শুনুক, তা হলে আমাদের কোন বিষয়ে কথা বলতে হবে?

১৩ আমাদের লোকদের প্রয়োজন, পরিস্থিতি এবং আগ্রহের উপর ভিত্তি করে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ধরুন, আমরা কোনো বাড়িতে গিয়েছি আর সেখানে কিছু খেলনা দেখতে পেয়েছি। এর অর্থ হল সেই বাড়িতে ছোটো সন্তান রয়েছে। সেই বাড়িতে হয়তো বাবা-মা সন্তানকে বড়ো করে তোলার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাতে পারে কিংবা তারা জানতে চায়, কীভাবে পরিবার সুখী হতে পারে। আবার আমরা যদি দেখি, কোনো বাড়ির বাইরে ক্যামেরা রয়েছে কিংবা অনেক তালা ঝুলছে, তা হলে আমরা সেই বাড়িতে অপরাধ এবং নিরাপত্তা সম্বন্ধে কথা বলতে পারি। আমরা বলতে পারি, অপরাধমূলক কাজ খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে। আমরা যদি প্রতি বার লোকদের আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলি, তা হলে আমরা তাদের বুঝতে সাহায্য করতে পারব যে, কীভাবে বাইবেলে দেওয়া পরামর্শ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উপকারজনক। আগে উল্লেখিত ক্যাটারিনা এখনও এই বিষয়টা সবসময় মনে রাখেন যে, কীভাবে বাইবেল তার জীবনকে পালটে দিয়েছে। তাই, তিনি এখন আরও দৃঢ়তার সঙ্গে লোকদের কাছে প্রচার করতে পারেন।

১৪. হিতোপদেশ ২৭:১৭ পদ অনুযায়ী প্রচার করার সময় কীভাবে ভাই-বোনেরা একে অপরকে সাহায্য করতে পারে?

১৪ আমাদের ভাই-বোনদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে। প্রথম শতাব্দীতে, পৌল তীমথিয়কে প্রচার করতে এবং শিক্ষা দিতে শিখিয়েছিলেন। আর তিনি তীমথিয়কে বলেছিলেন, যেন তীমথিয় অন্যদের তা শেখায়। (১ করি. ৪:১৭) তীমথিয়ের মতো আমাদেরও মণ্ডলীর অভিজ্ঞ ভাই-বোনদের কাছে থেকে শিখতে হবে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২৭:১৭.) শন নামে একজন অগ্রগামী ভাই ঠিক এমনটাই করেছিলেন। তিনি কিছু সময়ের জন্য একটা গ্রাম্য এলাকায় প্রচার করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, সেখানে বেশিরভাগ লোক শুনতে চাইত না কারণ তারা নিজেদের ধর্মে খুশি ছিল। কীভাবে তিনি এইরকম পরিস্থিতিতে নিজের আনন্দ বজায় রাখতে পেরেছিলেন? তিনি বলেন, “আমি সবসময় কোনো-না-কোনো প্রকাশকের সঙ্গে প্রচারে যেতাম। আর একটা বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যাওয়ার সময়ে আমরা আলোচনা করতাম যে, আগের বাড়িতে গৃহকর্তা কী জিজ্ঞেস করেছিল কিংবা কী বলেছিল এবং আমরা তাকে কী উত্তর দিয়েছিলাম। আর যদি পরের বাড়িতে গৃহকর্তা একইরকম কথা বলে, তা হলে কীভাবে আমরা তাকে আরও ভালোভাবে বোঝাতে পারি। এভাবে আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পেরেছিলাম।”

১৫. কেন প্রচারে যাওয়ার আগে প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ?

১৫ আমাদের সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। প্রতি বার প্রচারে যাওয়ার আগে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তাঁর পবিত্র শক্তি ছাড়া আমরা কোনো কিছুই করতে পারব না। (গীত. ১২৭:১; লূক ১১:১৩) যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার সময়ে নির্দিষ্টভাবে বলুন, আপনার কোন বিষয়ে সাহায্যের প্রয়োজন। আপনি হয়তো বলতে পারেন, তিনি যেন আপনাকে এমন ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে সাহায্য করেন, যারা সত্যিই তাঁর বিষয় জানতে এবং শিখতে চায়। এরপর, আপনাকে সেই প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হবে অর্থাৎ যাদের সঙ্গে আপনার দেখা হয়, তাদের কাছে প্রচার করতে হবে।

১৬. কেন কার্যকারী উপায়ে প্রচার করার জন্য ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করা গুরুত্বপূর্ণ?

১৬ আমাদের ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য সময় বের করতে হবে। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “তোমরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কী: তাঁর ইচ্ছা উত্তম, প্রীতিজনক ও নিখুঁত।” (রোমীয় ১২:২) আমরা নিজেরা যদি পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হই, এটাই সত্য, তা হলে আমরা আরও দৃঢ়তার সঙ্গে প্রচার করতে পারব। আগে উল্লেখিত ক্যাটারিনা বলেন: “কিছু সময় আগে আমি বুঝতে পারি, আমাকে বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলোর উপর আমার বিশ্বাস আরও মজবুত করতে হবে। তাই, আমি সেই প্রমাণগুলো নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করি, যেগুলো দেখায় যে, একজন সৃষ্টিকর্তা সত্যিই রয়েছেন, বাইবেল হল ঈশ্বরের বাক্য আর বর্তমানে তাঁর একটা সংগঠন রয়েছে, যেটাকে ঈশ্বর পরিচালনা দিচ্ছেন।” ক্যাটারিনা বলেন, ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার ফলে তার বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয় আর প্রচার কাজে তার আনন্দ বৃদ্ধি পায়।

কেন প্রচার কাজে রত থাকা গুরুত্বপূর্ণ?

১৭. কেন যিশু প্রচার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন?

১৭ যিশু যখন প্রচার করছিলেন, তখন কিছু লোক তাঁর কথা শোনেনি। তা সত্ত্বেও, যিশু হাল ছেড়ে দেননি। তিনি প্রচার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, লোকদের জন্য সত্য জানা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই, তিনি যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে জানাতে চেয়েছিলেন। তিনি এও জানতেন, যদিও কিছু লোক আজকে তাঁর কথা শুনতে চাইছে না, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা তাঁর বার্তার প্রতি মনোযোগ দেবে। যিশুর পরিবারের লোকদের উদাহরণই বিবেচনা করে দেখুন। তিনি পৃথিবীতে সাড়ে তিন বছর ধরে সেবা করেছিলেন। কিন্তু, তাঁর ভাইয়েরা তাঁর উপর বিশ্বাস করেনি। (যোহন ৭:৫) তবে, পরে যখন যিশুকে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল, তখন তারা যিশুর উপর বিশ্বাস করেছিল এবং খ্রিস্টান হয়েছিল।—প্রেরিত ১:১৪.

১৮. কেন আমাদের প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে হবে?

১৮ আমরা জানি না, কে পরিশেষে সত্য শিখবে এবং যিহোবার উপাসক হয়ে উঠবে। তাই, আমাদের প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কিছু লোকের সত্য শিখতে অনেক সময় লাগে। অপর দিকে, কিছু লোক হয়তো শুরুতে আমাদের বার্তা শুনতে চায় না, কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমাদের উত্তম আচার-আচরণ এবং মনোভাব দেখে “ঈশ্বরের গৌরব” করার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।—১ পিতর ২:১২.

১৯. প্রথম করিন্থীয় ৩:৬, ৭ পদ অনুযায়ী আমাদের কোন বিষয়টা মনে রাখতে হবে?

১৯ আমরা প্রচার করার এবং শিক্ষা দেওয়ার সময়ে অনেক পরিশ্রম করি ঠিকই, কিন্তু আমাদের পরিশ্রম তখনই সফল হবে, যদি যিহোবা সেটার উপর আশীর্বাদ করেন। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৩:৬, ৭.) ইথিওপিয়ায় বসবাসকারী ভাই গেটোহুন বলেন: “আমাদের এলাকায় আমি একা সাক্ষি ছিলাম আর ২০ বছর ধরে প্রচার কাজ করছিলাম। পরে, ১৩ জন লোক বাপ্তিস্ম নেয়, যাদের মধ্যে আমার স্ত্রী ও তিন সন্তান ছিল। বর্তমানে, এখানে ১৪ জন প্রকাশক রয়েছে এবং প্রায় ৩২ জন লোক সভায় যোগ দিয়ে থাকে।” গেটোহুন খুশি যে, তিনি ধৈর্য ধরেছিলেন আর ততদিন প্রচার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন, যতদিন না যিহোবা সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের তাঁর কাছে আকর্ষণ করেছিলেন।—যোহন ৬:৪৪.

২০. প্রচার কাজকে কোন কাজের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে?

২০ যিহোবা প্রত্যেক মানুষের জীবনকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন। তিনি আমাদের যিশুর সঙ্গে কাজ করার এক বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন, যাতে এই বিধিব্যবস্থার শেষ আসার আগে সমস্ত জাতির লোক রক্ষা পায়। (হগয় ২:৭) কল্পনা করুন, আমরা কয়লার খনিতে আটকে পড়া ব্যক্তিদের জীবন রক্ষার কাজ করছি। হতে পারে, অল্প কিছু ব্যক্তির জীবন আমরা রক্ষা করতে পারব। কিন্তু, আমরা সবাই তাদের রক্ষা করার জন্য যে পরিশ্রম করেছি, সেটা আসলে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রচার কাজও ঠিক একইরকম। আমরা জানি না, শয়তানের বিধিব্যবস্থার শেষ আসার আগে কত জন ব্যক্তিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। কিন্তু, আমরা জানি, যিহোবা আমাদের মধ্য থেকে কাউকে-না-কাউকে ব্যবহার করে লোকদের জীবন রক্ষা করবেন। বলিভিয়ায় বসবাসকারী আন্দ্রিয়াস বলেন: “একজন ব্যক্তি যখন সত্য শিখে বাপ্তিস্ম নেন, তখন সেটার পিছনে অনেক ব্যক্তির হাত থাকে।” আমাদের ঠিক একইরকম চিন্তা করতে হবে আর প্রচার কাজ করে যেতে হবে। আমরা যদি প্রচার কাজে রত থাকি, তা হলে যিহোবা আমাদের কাজে আশীর্বাদ করবেন এবং আমরাও এই কাজে আমাদের আনন্দ বজায় রাখতে পারব।

গান ৪৭ সুসমাচার ঘোষণা করো

^ অনু. 5 আমরা যখন লোকদের ঘরে পাই না অথবা তারা যখন আমাদের বার্তা শুনতে চায় না, তখনও আমরা যেন হাল ছেড়ে না দিয়ে প্রচার কাজ চালিয়ে যাই। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? এই প্রবন্ধে সেটার কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে।

^ অনু. 7 এই প্রবন্ধে তুলে ধরা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করার সময় প্রকাশকদের নিজেদের দেশের গোপনীয়তা এবং তথ্য সুরক্ষা আইনের বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।

^ অনু. 60 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: (উপর থেকে নীচে): এক দম্পতি এমন এলাকায় প্রচার করছেন, যেখানে বেশিরভাগ লোককে বাড়িতে পাওয়া যায় না। প্রথম বাড়ির ব্যক্তি কাজে গিয়েছেন। দ্বিতীয় বাড়ির মহিলা ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন। তৃতীয় বাড়ির মহিলা কেনাকাটা করতে গিয়েছেন। সেই দম্পতি প্রথম বাড়ির ব্যক্তির সঙ্গে সন্ধ্যার সময় দেখা করছেন। দ্বিতীয় বাড়ির মহিলার সঙ্গে ক্লিনিকের পাশে জনসাধারণ্যে সাক্ষ্যদান করার সময় দেখা করছেন। তৃতীয় বাড়ির মহিলার সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন।