সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৩

আপনি একা নন, যিহোবা আপনার সঙ্গে রয়েছেন

আপনি একা নন, যিহোবা আপনার সঙ্গে রয়েছেন

“সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে।”—গীত. ১৪৫:১৮.

গান ২৭ নাও পক্ষ যিহোবার!

সারাংশ *

১. যিহোবার দাসেরা হয়তো কোন কোন কারণে একাকিত্ব বোধ করে?

কখনো কখনো আমরা সবাই একাকিত্ব বোধ করি। কিছু ভাই-বোন একাকিত্বের অনুভূতি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারে। কিন্তু, কিছু ভাই-বোনকে এই অনুভূতির সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে লড়াই করতে হয়। ফলে, তারা হয়তো লোকদের মাঝে থাকা সত্ত্বেও নিজেদের একা বলে মনে করে। কেউ কেউ যখন একটা নতুন মণ্ডলীতে যোগ দেয়, তখন তারা দ্রুত বন্ধুত্ব করতে পারে না। আর এই কারণে তারা একাকিত্ব বোধ করে। আবার, কিছু লোক এমন পরিবার থেকে আসে, যেখানে সবাই একসঙ্গে সমস্ত কিছু করত। কিন্তু, এখন তারা পরিবারের কাছ থেকে দূরে রয়েছে আর এই কারণে তারা একাকিত্ব বোধ করে। কিছু ভাই-বোন মৃত্যুতে তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছে আর এই কারণে তারা সবসময় তাদের অভাব বোধ করে। কিছু খ্রিস্টান, বিশেষভাবে যারা সম্প্রতি সত্য শিখেছে, তারা যখন তাদের ন-সাক্ষি পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের কাছ থেকে বিরোধিতা কিংবা তাড়নার মুখোমুখি হয়, তখন তারা একাকিত্ব বোধ করে।

২. এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর বিবেচনা করে দেখব?

যিহোবা আমাদের সম্বন্ধে সমস্ত কিছু জানেন ও বোঝেন। তাই, আমরা যখন একাকিত্ব বোধ করি, তখন তিনি খুব ভালোভাবে আমাদের অনুভূতি বোঝেন আর সেই একাকিত্বের অনুভূতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের সাহায্য করতে চান। কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করে থাকেন? আমরা যখন একাকিত্ব বোধ করি, তখন আমরা কী করতে পারি? মণ্ডলীতে যারা একাকিত্ব বোধ করে, তাদের কীভাবে আমরা সাহায্য করতে পারি? আসুন, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিবেচনা করে দেখি।

যিহোবা তাঁর উপাসকদের জন্য চিন্তা করেন

যিহোবা তাঁর একজন স্বর্গদূতকে পাঠিয়ে এলিয়কে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, তিনি একা নন (৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৩. কীভাবে যিহোবা এলিয়ের প্রতি চিন্তা দেখিয়েছিলেন?

যিহোবা চান, যেন তাঁর সমস্ত উপাসক আনন্দে থাকে। তিনি তাদের প্রত্যেকের পাশে থাকেন আর তারা যখন দুঃখের মধ্যে থাকে অথবা কোনো কারণে হতাশ হয়ে পড়ে, তখন তিনি তাদের প্রতি মনোযোগ দেন। (গীত. ১৪৫:১৮, ১৯) ভাববাদী এলিয়ের উদাহরণ লক্ষ করুন। ইজরায়েলের ক্ষমতাশালী লোকেরা, যারা যিহোবাকে ভালোবাসত না, তারা যিহোবার উপাসকদের উপর প্রচণ্ড তাড়না নিয়ে এসেছিল। আর বিশেষভাবে তারা এলিয়কে হত্যা করতে চেয়েছিল। (১ রাজা. ১৯:১, ২) এলিয় হয়তো ভেবেছিলেন, ইজরায়েলে একমাত্র তিনিই ভাববাদী হিসেবে যিহোবার উপাসনা করছেন। (১ রাজা. ১৯:১০) যিহোবা এলিয়ের কষ্ট দেখেছিলেন আর তাকে সাহায্য করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যিহোবা তাঁর একজন স্বর্গদূতকে পাঠিয়ে তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, তিনি একা নন, ইজরায়েলে এখনও অনেক লোক রয়েছে, যারা তাঁর সেবা করছে।—১ রাজা. ১৯:৫, ১৮.

৪. মার্ক ১০:২৯, ৩০ পদ থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, যাদের পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুবান্ধব পরিত্যাগ করেছে, তাদের জন্য যিহোবা চিন্তা করেন?

যিহোবা জানেন, যারা তাঁর উপাসক হবে, তাদের কিছু ত্যাগস্বীকার করতে হবে। তাদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব, যারা যিহোবার উপাসনা করে না, তারা তাদের পরিত্যাগ করতে পারে। প্রেরিত পিতরও এই বিষয়টা জানতেন, তাই তিনি একবার যিশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমরা সমস্ত কিছু ত্যাগ করে আপনার অনুসারী হয়েছি; তবে আমরা কী পাব?” (মথি ১৯:২৭) যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তাঁর শিষ্যেরা একটা বিরাট পরিবার লাভ করবে। মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা তাদের কাছে পরিবারের মতো হয়ে উঠবে। (পড়ুন, মার্ক ১০:২৯, ৩০.) যিহোবাও প্রতিজ্ঞা করেছেন, যারা তাঁর সেবা করে, তিনি কখনোই তাদের পরিত্যাগ করবেন না। (গীত. ৯:১০) এখন আসুন দেখি, একাকিত্বের অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করার জন্য আপনি কী করতে পারেন।

আপনি যখন একাকিত্ব বোধ করেন, তখন কী করতে পারেন?

৫. আপনার কোন বিষয়ে চিন্তা করা উচিত আর কেন?

যিহোবা যেভাবে আপনাকে সাহায্য করছেন, তা নিয়ে চিন্তা করুন। (গীত. ৫৫:২২) এতে আপনি নিশ্চিত হয়ে যাবেন, আপনি একা নন। ক্যারল * নামে এক অবিবাহিত বোন, যিনি সত্যে একা রয়েছেন, বলেন: “আমি যখন অতীতের দিনগুলোর কথা মনে করি, তখন বুঝতে পারি, কঠিন সময়ে আমি একা ছিলাম না। যিহোবা আমার সঙ্গে ছিলেন। তিনি সেইসময় আমাকে সাহায্য করেছিলেন আর ভবিষ্যতেও আমাকে সাহায্য করবেন।”

৬. যারা একাকিত্বের অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করছে, তারা কীভাবে ১ পিতর ৫:৯, ১০ পদ থেকে উৎসাহ লাভ করতে পারে?

যিহোবা যেভাবে সেই ভাই-বোনদের সাহায্য করছেন, যারা নিজেদের একা বলে মনে করে, তা নিয়ে চিন্তা করুন। (পড়ুন, ১ পিতর ৫:৯, ১০.) ভাই হিরোশি, যিনি অনেক বছর ধরে সত্যে একা রয়েছেন, বলেন: “মণ্ডলীতে প্রত্যেক ভাই কিংবা বোনের জীবনে কোনো-না-কোনো সমস্যা আছে। কিন্তু, সবাই যিহোবার সেবা করার জন্য যথাসাধ্য করছে। এই বিষয়টা আমার মতো লোকদের অনেক উৎসাহিত করে, যারা সত্যে একা রয়েছে।”

৭. কীভাবে প্রার্থনা আপনাকে সাহায্য করে?

নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করুন, বাইবেল পড়ুন এবং সভায় যোগ দিন। আপনার অনুভূতির কথা যিহোবার কাছে খুলে বলুন। (১ পিতর ৫:৭) মাসিল নামে একজন যুবতী বোন যখন সত্য শিখছিলেন, তখন তার পরিবারের লোকেরা বিরোধিতা করে। বোনের মনে হচ্ছিল, তিনি যেন দিন দিন একা হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন: “যিহোবার কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করা আমাকে একাকিত্বের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করেছে। তিনি আমার কাছে একজন পিতার মতো ছিলেন। আর আমি প্রতিদিন তাঁর কাছে অনেক বার প্রার্থনা করতাম এবং আমার অনুভূতির কথা খুলে বলতাম।”

কেউ কেউ বাইবেল এবং অন্যান্য প্রকাশনার অডিও রেকর্ডিং শোনার মাধ্যমে একাকিত্বের অনুভূতি কাটিয়ে ওঠে (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৮. কীভাবে বাইবেল পড়া ও তা নিয়ে ধ্যান করা আপনাকে সাহায্য করে?

প্রতিদিন বাইবেল পড়ুন এবং সেই বিবরণগুলো নিয়ে ধ্যান করুন, যেগুলো দেখায় যে, যিহোবা আপনাকে ভালোবাসেন। বোন বিয়াঙ্কাকে সত্য গ্রহণ করার কারণে প্রায়ই তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হত। তিনি বলেন: “বাইবেলের বিবরণ এবং আমার মতো একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল এমন ভাই-বোনদের জীবনকাহিনি পড়া ও তা নিয়ে ধ্যান করা আমাকে সত্যিই সাহায্য করেছে।” কোনো কোনো ভাই-বোন কিছু শাস্ত্রপদ মুখস্থ করার ফলে অনেক সান্ত্বনা লাভ করে, যেমন গীতসংহিতা ২৭:১০ আর যিশাইয় ৪১:১০ পদ। আবার কোনো কোনো ভাই-বোন সভার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার অথবা বাইবেল পড়ার সময়ে অডিও রেকর্ডিং শুনে থাকে আর এটা তাদের একাকিত্বের অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

৯. কীভাবে সভায় যোগ দেওয়া আপনাকে সাহায্য করে?

নিয়মিত সভায় যোগ দিন। এর ফলে, আপনি উৎসাহিত হবেন এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনদের আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আগে উল্লেখিত মাসিল বলেন: “আমি খুবই লাজুক স্বভাবের ছিলাম। তা সত্ত্বেও, আমি স্থির করি, মণ্ডলীর প্রতিটা সভায় যোগ দেব এবং মন্তব্যও করব। এগুলো আমাকে মণ্ডলীর ভাই-বোনদের আরও নিকটবর্তী হতে সাহায্য করেছে।”

১০. কেন মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা গুরুত্বপূর্ণ?

১০ ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। মণ্ডলীর এমন ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন, যাদের কাছ থেকে আপনি ভালো বিষয়গুলো শিখতে পারবেন, তা তাদের বয়স অথবা সংস্কৃতি আপনার চেয়ে আলাদা হোক না কেন। বাইবেল আমাদের জানায়, “প্রাচীনদের নিকটে” প্রজ্ঞা আছে। (ইয়োব ১২:১২) বয়স্ক ভাই-বোনেরাও অল্পবয়সিদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। দায়ূদ ও যোনাথনের মধ্যে বয়সের অনেক পার্থক্য ছিল। তা সত্ত্বেও, তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। (১ শমূ. ১৮:১) তাদের জীবনে বিভিন্ন সমস্যা এসেছিল, কিন্তু তারা যিহোবার সেবা করে চলার জন্য একে অপরকে সাহায্য করেছিলেন। (১ শমূ. ২৩:১৬-১৮) বোন ইরিনা, যিনি সত্যে একা রয়েছেন, বলেন: “মণ্ডলীর অনেকেই আমাদের বাবা-মা ও ভাই-বোনের মতো হয়ে উঠতে পারে। তাদের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের যেকোনো অভাব পূরণ করতে পারেন।”

১১. বন্ধুত্ব করার জন্য আপনাকে কী করতে হবে?

১১ বন্ধুত্ব করা সহজ নয়, বিশেষভাবে আপনি যদি লাজুক স্বভাবের হয়ে থাকেন। রত্না নামে একজন বোনও লাজুক স্বভাবের ছিলেন। তিনি অনেক বিরোধিতা সত্ত্বেও সত্য শিখেছিলেন। বোন বলেন: “আমি বুঝতে পারি, আমার মণ্ডলীর ভাই-বোনদের কাছ থেকে সাহায্য এবং সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে।” এটা ঠিক যে, কোনো ভাই কিংবা বোনকে নিজের অনুভূতির বিষয় বলা সহজ নয়। কিন্তু, আপনি যদি তাকে তা বলেন, তা হলে তিনি আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন। মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা আপনাকে সাহায্য করতে এবং আপনাকে উৎসাহিত করতে চায়। কিন্তু, তারা তখনই তা করতে পারবে, যখন আপনি আপনার দুশ্চিন্তার বিষয়ে তাদের কাছে খুলে বলবেন।

১২. (ক) বন্ধুত্ব করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী? (খ) কেন ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা ভালো?

১২ বন্ধুত্ব করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল, ভাই-বোনদের সঙ্গে প্রচার করা। আগে উল্লেখিত ক্যারল বলেন: “আমি আলাদা আলাদা বোনের সঙ্গে প্রচার করেছি আর যিহোবার সেবায় অন্যান্য কাজও করেছি। এভাবে, অনেক বোনের সঙ্গে আমার এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যিহোবা এই বন্ধুদের মাধ্যমে আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।” ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা ভালো বিষয় কারণ আপনি যখন হতাশ হয়ে পড়েন আর একাকিত্ব বোধ করেন, তখন যিহোবা সেই বন্ধুদের ব্যবহার করে আপনাকে সাহায্য ও উৎসাহিত করেন।—হিতো. ১৭:১৭.

অন্যদের এটা বুঝতে সাহায্য করুন, তারা আমাদের পরিবারের মতো

১৩. মণ্ডলীতে আমাদের প্রত্যেকের কোন দায়িত্ব রয়েছে?

১৩ মণ্ডলীতে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হল, এক শান্তিপূর্ণ এবং প্রেমময় পরিবেশ বজায় রাখা, যাতে কেউই নিজেকে একা বলে মনে না করে। (যোহন ১৩:৩৫) আমরা যা বলি এবং যা করি, সেটা অন্যদের উৎসাহিত করতে পারে। একজন বোন বলেন: “আমি যখন সত্য শিখি, তখন মণ্ডলীর ভাই-বোন আমার পরিবারের মতো হয়ে ওঠে। আমার মনে হয় না, তাদের সাহায্য ছাড়া আমি একজন যিহোবার সাক্ষি হতে পারতাম।” আপনার মণ্ডলীতে কেউ যদি সত্যে একা থাকে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন, যাতে তার মনে হয় যে, মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা তাকে ভালোবাসে?

১৪. নতুন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য আপনি কী করতে পারেন?

১৪ নতুন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। আন্তরিকভাবে মণ্ডলীর সভায় নতুন ব্যক্তিদের স্বাগত জানান। যেমন বাইবেল ছাত্র, যে-ভাই-বোনেরা অন্য মণ্ডলী থেকে আমাদের মণ্ডলীতে চলে এসেছে কিংবা যারা সবেমাত্র বাপ্তিস্ম নিয়েছে। (রোমীয় ১৫:৭) তবে শুধুমাত্র, ‘নমস্কার, কেমন আছেন’ বলার পরিবর্তে, তাদের প্রতি প্রকৃত আগ্রহ দেখান এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করুন। আর মনে রাখবেন, তাদের জানার জন্য আপনি এমন কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন না, যাতে তারা অস্বস্তি বোধ করে। কিছু নতুন ব্যক্তি খোলাখুলিভাবে নিজেদের মনের কথা না-ও বলতে পারে। তাই, তাদের অতিরিক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবেন না। এর পরিবর্তে, ভেবে-চিন্তে তাদের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন। যেমন, আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন, তারা সত্য সম্বন্ধে কীভাবে জানতে পেরেছে। তারা যখন কিছু উত্তর দেয়, তখন তাদের কথা মন দিয়ে শুনুন।

১৫. কীভাবে পরিপক্ব ভাই-বোনেরা মণ্ডলীর অন্যদের সাহায্য করতে পারে?

১৫ প্রাচীনেরা ও পরিপক্ব ভাই-বোনেরা যখন সবার প্রতি আগ্রহ দেখায়, তখন ভাই-বোনদের বিশ্বাস মজবুত হয়। মেলিসার উদাহরণ বিবেচনা করে দেখুন, যার মা একাই তাকে সত্যে বড়ো করে তুলেছিলেন। মেলিসা বলেন: “মণ্ডলীর ভাইয়েরা আমার বাবার মতো ছিল। আমার যখনই প্রয়োজন হত, তখনই তারা আমাকে সময় দিত এবং আমার কথা মন দিয়ে শুনত। আমি তাদের প্রতি সত্যিই খুব কৃতজ্ঞ!” মাউরিসিয় নামে একজন যুবক ভাইয়ের উদাহরণ লক্ষ করুন। তিনি সেইসময় অনেক দুঃখ পেয়েছিলেন, যখন তার বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালক সত্য ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তিনি খুবই একাকিত্ব বোধ করতেন। তিনি বলেন: “সেইসময় প্রাচীনেরা আমার প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখিয়েছিলেন এবং আমার যত্ন নিয়েছিলেন। তারা নিয়মিতভাবে আমার সঙ্গে কথা বলতেন, আমার সঙ্গে প্রচার করতেন এবং তারা ব্যক্তিগত অধ্যয়ন থেকে যা-কিছু শিখতেন, সেগুলো আমাকে জানাতেন। তারা এমনকী আমার সঙ্গে খেলাধুলাও করতেন।” মেলিসা ও মাউরিসিয় উভয়ই এখন পূর্ণসময়ের সেবা করছেন।

আপনার মণ্ডলীতে কেউ যদি নিজেকে একা বলে মনে করে, তা হলে তার সঙ্গে সময় কাটান; এটা করলে তার ভালো লাগবে (১৬-১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৬-১৭. অন্যদের সাহায্য করার জন্য আর কী করা যেতে পারে?

১৬ ব্যাবহারিক উপায়ে সাহায্য করুন। (গালা. ৬:১০) লিও নামে একজন ভাই, যিনি নিজের পরিবারের কাছ থেকে অনেক দূরে অন্য একটা দেশে মিশনারি হিসেবে সেবা করছেন, বলেন: ‘কখনো কখনো অন্যদের সাহায্য করার জন্য আমাদের অনেক বড়ো কিছু করার প্রয়োজন নেই। আমরা যদি সঠিক সময়ে ছোটোখাটো সাহায্য করি, তা হলে সেটা অনেক উপকার নিয়ে আসে। আমার মনে আছে, একদিন গাড়ি চালানোর সময় আমার অ্যাক্সিডেন্ট হয় আর পরে যখন ঘরে পৌঁছাই, তখন খুব ক্লান্ত ও চিন্তিত হয়ে পড়ি। কিন্তু, সেইসময় এক দম্পতি আমাকে তাদের বাড়িতে খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানান। সেই দিন সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে আমি কী খেয়েছিলাম, সেটা আমার কিছুই মনে নেই, তবে এটা মনে আছে, তারা আমার কথা মন দিয়ে শুনেছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার মন অনেক হালকা হয়ে গিয়েছিল।’

১৭ আমরা সবাই আমাদের সম্মেলনগুলোতে আনন্দ উপভোগ করি কারণ সেইসময় আমরা ভাই-বোনদের সঙ্গে থাকি এবং তাদের সঙ্গে সম্মেলনের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করি। কিন্তু, আগে উল্লেখিত ক্যারল বলেন: ‘সম্মেলনগুলোতে যোগ দেওয়া আমার পক্ষে সহজ ছিল না। যদিও সেইসময় অনেক ভাই-বোন সেখানে থাকে, কিন্তু তারা নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে থাকে। তাদের একসঙ্গে দেখে আমার মনে হয়, আমি খুব একা।’ কিছু ভাই-বোনের পক্ষে বিবাহসাথির মৃত্যুর পর, প্রথম বার সম্মেলনে যোগ দেওয়া অনেক কঠিন বলে মনে হয়। আপনি কি এমন কোনো ভাই কিংবা বোনকে জানেন, যিনি এইরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন? যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে আপনি কি পরের সম্মেলনে আপনার পরিবারের সঙ্গে তাকে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন?

১৮. আপনি যখন ভাই-বোনদের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা চিন্তা করেন, তখন কোন বিষয়টা আপনাকে মনে রাখতে হবে? (২ করিন্থীয় ৬:১১-১৩)

১৮ একসঙ্গে সময় কাটান। আলাদা আলাদা ভাই-বোনের সঙ্গে সময় কাটান, বিশেষভাবে তাদের সঙ্গে, যারা নিজেদের খুব একা বলে মনে করে। বাইবেল জানায়, তাদের প্রতি ‘আমাদের সত্যিই ভালোবাসা’ দেখাতে হবে। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৬:১১-১৩.) আগে উল্লেখিত মেলিসা বলেন: “মণ্ডলীর বন্ধুরা যখন আমাদের তাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাত কিংবা আমরা যখন একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে যেতাম, তখন আমাদের খুব ভালো লাগত।” আপনার মণ্ডলীতে কি এমন কেউ রয়েছে, যার সঙ্গে আপনি সময় কাটাতে পারেন?

১৯. বিশেষভাবে কখন ভাই-বোনদের সঙ্গে সময় কাটানো ভালো হবে?

১৯ কিছু ভাই-বোন নিজেদের সেইসময় খুব একা বলে মনে করে, যখন তাদের পরিবার মিথ্যা ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করে। আবার কিছু ভাই-বোনের জন্য সেই দিন কাটানো খুব কঠিন হয়, যে-দিন তারা তাদের বিবাহসাথিকে মৃত্যুতে হারিয়েছিল। এইরকম পরিস্থিতিতে আমরা যদি তাদের সঙ্গে সময় কাটাই, তা হলে তাদের ভালো লাগবে। আর তারা উপলব্ধি করবে যে, তাদের প্রতি আমাদের ‘প্রকৃতই চিন্তা’ রয়েছে।—ফিলি. ২:২০.

২০. আমরা যখন একাকিত্ব বোধ করি, তখন কীভাবে মথি ১২:৪৮-৫০ পদের কথাগুলো আমাদের উৎসাহিত করে?

২০ আমরা সবাই বিভিন্ন কারণে একাকিত্ব বোধ করি। কিন্তু, আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত, যিহোবা আমাদের অনুভূতি বোঝেন। তিনি প্রায়ই ভাই-বোনদের মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন। (পড়ুন, মথি ১২:৪৮-৫০.) আমরা যখন তাদের কাছ থেকে সাহায্য লাভ করি, তখন আমাদেরও সেই ভাই-বোনদের সাহায্য করা উচিত, যাদের আমাদের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা কখনোই এইরকমটা চিন্তা করব না যে, আমরা একা, কারণ যিহোবা সবসময় আমাদের সঙ্গে রয়েছেন!

গান ২ ধন্যবাদ, যিহোবা

^ অনু. 5 কখনো কখনো আপনি কি একাকিত্বের অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করেন? যদি করে থাকেন, তা হলে নিশ্চিত থাকুন, যিহোবা আপনার কষ্ট জানেন আর তিনি আপনাকে সাহায্য করতে চান। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে, একাকিত্বের অনুভূতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আপনি কী করতে পারেন। এ ছাড়া, এও আলোচনা করা হবে, যে-ভাই-বোনেরা একাকিত্ব বোধ করে, তাদের সাহায্য করার জন্য কী করা যেতে পারে।

^ অনু. 5 কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ অনু. 60 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই, যিনি তার স্ত্রীকে মৃত্যুতে হারিয়েছেন, তিনি বাইবেল এবং অন্যান্য প্রকাশনার অডিও রেকর্ডিং শুনছেন।

^ অনু. 62 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই তার মেয়েকে নিয়ে মণ্ডলীর একজন বয়স্ক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন আর ভাইয়ের জন্য সঙ্গে করে কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন।