সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৬

সত্য শেখান আর শিষ্য তৈরি করুন

সত্য শেখান আর শিষ্য তৈরি করুন

“ঈশ্বরই . . . তোমাদের মধ্যে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষমতা, উভয়ই দেন।”—ফিলি. ২:১৩.

গান ৪৪ শস্যচ্ছেদনের কাজে আনন্দের সঙ্গে অংশ নেওয়া

সারাংশ *

১. আপনি কীসের জন্য যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ?

আপনার কি মনে আছে, কীভাবে আপনি একজন যিহোবার সাক্ষি হয়েছিলেন? হতে পারে, আপনি আপনার বাবা-মা, সহকর্মী কিংবা সহপাঠীর কাছ থেকে সত্য সম্বন্ধে শুনেছিলেন। অথবা কোনো সাক্ষি হয়তো আপনার বাড়িতে এসে আপনাকে বাইবেল থেকে “সুসমাচার” সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন। (মার্ক ১৩:১০) আপনি যখন অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন, তখন কেউ আপনাকে শেখানোর জন্য অনেক পরিশ্রম করেছিল আর সময় ব্যয় করেছিল। অধ্যয়ন থেকে আপনি শিখেছিলেন, যিহোবা আপনাকে খুব ভালোবাসেন আর তাই আপনিও তাঁকে ভালোবাসতে শুরু করেন। যিহোবা আপনাকে তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেন। আর আজ আপনি একজন সাক্ষি এবং আপনার কাছে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে। (যোহন ৬:৪৪) আপনি এই বিষয়ে কৃতজ্ঞ যে, যিহোবা কাউকে ব্যবহার করে আপনাকে সত্য শিখিয়েছেন আর আপনাকে তাঁর একজন উপাসক হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

২. এই প্রবন্ধে কী উল্লেখ করা হবে?

আমরা সত্য সম্বন্ধে জেনেছি, তাই এখন আমাদের দায়িত্ব হল অন্যদের সত্য জানানো। আমাদের হয়তো ঘরে ঘরে প্রচার করাকে সহজ বলে মনে হয়। কিন্তু, কারো সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করা কিংবা তা চালিয়ে যাওয়াকে কঠিন বলে মনে হয়। আপনিও কি এইরকমটা মনে করেন? এই প্রবন্ধে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেগুলো আপনাকে সাহায্য করবে। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা শিষ্য তৈরির কাজ কেন করি আর আমাদের যদি অধ্যয়ন পরিচালনা করতে কঠিন লাগে, তা হলে আমরা কী করতে পারি। তবে, প্রথমে আমরা এটা জানব যে, শিষ্য তৈরি করার জন্য প্রচার করাই যথেষ্ট নয়, লোকদের শেখানোরও প্রয়োজন রয়েছে।

যিশু প্রচার করার এবং শেখানোর আদেশ দিয়েছেন

৩. কেন আমরা প্রচার করি?

যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি তাঁর শিষ্যদের ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করার আদেশ দিয়েছিলেন আর এও বলেছিলেন, কীভাবে তা করতে হবে। (মথি ১০:৭; লূক ৮:১) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লোকেরা যদি তাদের কথা শুনতে না চায়, তা হলে তাদের কী করা উচিত আর যদি শোনে, তা হলে কী করা উচিত। (লূক ৯:২-৫) যিশু এও বলেছিলেন, ‘সমস্ত জাতি সুসমাচার’ জানবে। এটা থেকে বোঝা যায় যে, প্রচার কাজ পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত করা হবে। (মথি ২৪:১৪; প্রেরিত ১:৮) লোকেরা তাদের কথা শুনুক বা না-ই শুনুক, যিশুর শিষ্যদের ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে জানাতে হত আর এও জানাতে হত, সেই রাজ্য কী কী করবে।

৪. মথি ২৮:১৮-২০ পদে যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আর কী করতে হবে?

যিশু তাঁর শিষ্যদের প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গে লোকদের সত্য শেখানোর জন্যও বলেছিলেন। কিছু লোক মনে করে, শিষ্য তৈরির কাজ শুধুমাত্র প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের করতে হত। কিন্তু, এমনটা নয়। এটা ঠিক যে, যিশু শিষ্য তৈরির কাজ তাঁর ৫০০ জন শিষ্যকে দিয়েছিলেন। (১ করি. ১৫:৬) কিন্তু, তিনি এও বলেছিলেন, শিষ্য তৈরির কাজ “এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময় পর্যন্ত” অর্থাৎ আমাদের সময় পর্যন্ত চলবে। (পড়ুন, মথি ২৮:১৮-২০.) শুধু তা-ই নয়, যিশু প্রেরিত যোহনের কাছেও প্রকাশ করেছিলেন, তাঁর সমস্ত শিষ্য লোকদের যিহোবা সম্বন্ধে শেখাবে।—প্রকা. ২২:১৭.

৫. পৌল কোন দৃষ্টান্ত তুলে ধরার মাধ্যমে বুঝিয়েছিলেন যে, প্রচার করা আর শেখানো দুটোই প্রয়োজন রয়েছে? (১ করিন্থীয় ৩:৬-৯)

প্রেরিত পৌল শিষ্য তৈরির কাজকে কৃষিকাজের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তিনি করিন্থের খ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “আমি রোপণ করলাম, আপল্লো জল দিলেন, . . . তোমরা ঈশ্বরেরই ক্ষেত্র, যেখানে তিনি চাষ করছেন।” (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৩:৬-৯.) এখান থেকে বোঝা যায় যে, আমাদের শুধুমাত্র বীজ রোপণ করাই যথেষ্ট নয়, কিন্তু জল দেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। আমরা যখন প্রচার করি, তখন আমরা বীজ রোপণ করি আর আমরা যখন লোকদের শেখাই, তখন আমরা জল দিই। (যোহন ৪:৩৫) কিন্তু, আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত, যিহোবাই বৃদ্ধিদাতা অর্থাৎ তিনিই লোকদের তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেন।

৬. লোকদের শেখানোর সময় আমাদের কী কী করতে হবে?

আমরা সবাই এমন লোকদের খোঁজার চেষ্টা করছি, যাদের “অনন্তজীবন লাভ করার জন্য সঠিক মনোভাব” রয়েছে। (প্রেরিত ১৩:৪৮) আমরা চাই, এই লোকেরা যেন যিশুর শিষ্য হয়ে ওঠে। এরজন্য, আমাদের তাদের সাহায্য করতে হবে, যেন তারা বাইবেল থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো (১) বোঝে, (২) গ্রহণ করে আর (৩) নিজেদের জীবনে কাজে লাগায়। (যোহন ১৭:৩; কল. ২:৬, ৭; ১ থিষল. ২:১৩) এটা সত্য যে, যখন কোনো ছাত্র সভায় আসে, তখন সমস্ত ভাই-বোন তাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায় এবং তার সঙ্গে প্রেম সহকারে আচরণ করে। (যোহন ১৩:৩৫) কিন্তু, অধ্যয়ন পরিচালক ভাই কিংবা বোনকে হয়তো ছাত্রের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয় আর সময় ব্যয় করতে হয়, যাতে তার ছাত্র এমন অভ্যাসগুলো ছাড়তে পারে, যেগুলো তার কাছে “দূর্গের মতো দৃঢ়।” (২ করি. ১০:৪, ৫) একজন ছাত্রের পক্ষে নিজেকে পরিবর্তন করতে এবং বাপ্তিস্ম নিতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। কিন্তু, তাকে সাহায্য করার জন্য আমরা যা-ই পরিশ্রম করি না কেন, সেটা ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে।

যদি ভালোবাসা থাকে, তা হলে লোকদের শেখাব

৭. কেন আমরা লোকদের কাছে প্রচার করি এবং তাদের সত্য শেখাই?

আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি, তাই আমরা তাঁর আদেশ পালন করি এবং লোকদের কাছে প্রচার করি আর তাদের সত্য শেখাই। (১ যোহন ৫:৩) একটু চিন্তা করে দেখুন, আপনার যিহোবার প্রতি ভালোবাসা ছিল আর এই কারণে আপনি প্রচার কাজ শুরু করেছিলেন। প্রথম বার প্রচারে যাওয়া আপনার পক্ষে হয়তো সহজ ছিল না। কিন্তু, আপনি জানতেন যে, যিশু আপনাকে এই কাজ দিয়েছেন। তাই, আপনি তাঁর আদেশ পালন করেছিলেন আর আজ আপনি সহজে প্রচার কাজ করতে পারছেন। কিন্তু, যখন বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার বিষয়টা আসে, তখন হতে পারে আপনি ভয় পেয়ে যান। আপনার যদি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার আকাঙ্ক্ষা থাকে, তা হলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। তিনি আপনার ভয় দূর করবেন আর আপনাকে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার জন্য সাহস জোগাবেন।

৮. মার্ক ৬:৩৪ পদ অনুযায়ী আমরা আর কোন কারণে লোকদের শেখাই?

আরেকটা যে-কারণে আমরা প্রচার করি এবং লোকদের সত্য শেখাই, সেটা হল আমরা লোকদের ভালোবাসি। একবার, যিশু ও তাঁর শিষ্যেরা প্রচার করার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তারা বিশ্রাম নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেই সময় অনেক লোক সেখানে আসে। যিশু তাদের প্রতি সমবেদনা দেখিয়ে “অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন।” (পড়ুন, মার্ক ৬:৩৪.) যিশু বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা কতটা কষ্টের মধ্যে রয়েছে এবং তাদের ঈশ্বরকে জানার প্রয়োজন রয়েছে। তাই, ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি তাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। আজ লোকদের পরিস্থিতি ঠিক একইরকম। তাদের দেখে অনেক সুখী বলে মনে হয়, কিন্তু তারাও কষ্টের মধ্যে রয়েছে। তারা যেন পালকবিহীন মেষপালের মতো এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রেরিত পৌল এই ধরনের লোকদের সম্বন্ধে বলেছিলেন যে, তাদের কাছে কোনো প্রত্যাশা নেই আর তারা ঈশ্বরকে জানে না। (ইফি. ২:১২) তারা সেই রাস্তায় রয়েছে, যেটা “ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।” (মথি ৭:১৩) আমরা যখন লোকদের পরিস্থিতি বুঝব, তখন তাদের প্রতি প্রেম ও সমবেদনা দেখাতে অনুপ্রাণিত হব। আর এটা আমাদের তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার জন্য পরিচালিত করবে।

৯. ফিলিপীয় ২:১৩ পদে যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে, যিহোবা কী করতে পারেন?

আপনি হয়তো বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার ক্ষেত্রে ইতস্তত বোধ করেন। আপনার হয়তো মনে হয়, বাইবেল ছাত্রকে অনেক সময় দিতে হবে আর অধ্যয়নের আগে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও অনেকটা সময় ব্যয় করতে হবে। আপনার যদি এমনটা মনে হয়, তা হলে যিহোবার কাছে মনের কথা খুলে বলুন। তাঁর কাছে অনুরোধ করুন যেন তিনি আপনার মধ্যে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার আকাঙ্ক্ষা দেন। (পড়ুন, ফিলিপীয় ২:১৩.) প্রেরিত যোহন বলেছেন যে, যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে প্রার্থনা করলে তিনি তা অবশ্যই শুনবেন। (১ যোহন ৫:১৪, ১৫) তিনি আপনারও প্রার্থনা শুনবেন আর আপনার মধ্যে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার আকাঙ্ক্ষা দেবেন।

যেভাবে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো কাটিয়ে ওঠা যায়

১০-১১. কেন কিছু ভাই-বোন হয়তো বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে ইতস্তত বোধ করে?

১০ আমরা জানি, লোকদের শেখানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, এমনটা করা সহজ নয়। আসুন আমরা দেখি, এমন কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, যেগুলোর কারণে আমরা লোকদের শেখাতে ইতস্তত বোধ করতে পারি আর কীভাবে আমরা তা কাটিয়ে উঠতে পারি।

১১ আমরা হয়তো যতটা করতে চাই, ততটা করতে পারি না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কিছু ভাই-বোন বয়স্ক হয়ে গিয়েছে অথবা তারা অসুস্থ। আপনার পরিস্থিতিও কি একইরকম? যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে চিন্তা করুন, কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন আমরা কী কী শিখেছি। আমরা ঘরে বসে ফোন অথবা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অধ্যয়ন পরিচালনা করতে শিখেছি। এভাবে অধ্যয়ন পরিচালনা করার একটা উপকার হল, আপনি যেকোনো সময় অধ্যয়ন পরিচালনা করতে পারেন। যেমন, কিছু লোক দিনের বেলায় সময় দিতে পারে না, কিন্তু তাদের হয়তো খুব সকালে কিংবা অনেক রাতে সময় হয়। আপনি কি সেই সময় তাদের সঙ্গে অধ্যয়ন করতে পারেন? যিশু নীকদীমকে রাতের বেলায় শিক্ষা দিতেন কারণ তিনি সেই সময় যিশুর কাছ আসতেন।—যোহন ৩:১, ২.

১২. কোন তিনটে বিষয় বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার জন্য আমাদের সাহস বৃদ্ধি করতে পারে?

১২ আমাদের মনে হতে পারে, আমরা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে পারব না। আমাদের হয়তো মনে হয়, কারো সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার আগে আমাদের অনেক জ্ঞান থাকতে হবে অথবা ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। আপনারও যদি এমনটা মনে হয়, তা হলে তিনটে বিষয় আপনার সাহস বৃদ্ধি করতে পারে। প্রথমত, আপনার উপর যিহোবার আস্থা রয়েছে। তিনি জানেন, আপনি অন্যদের শেখাতে পারেন। (২ করি. ৩:৫) দ্বিতীয়ত, যিশু আপনাকে এই কাজ দিয়েছেন, যাঁকে “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্তৃত্ব” দেওয়া হয়েছে। আর তাঁরও আপনার উপর আস্থা রয়েছে। (মথি ২৮:১৮) তৃতীয়ত, আপনি যিহোবা ও ভাই-বোনদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন। যিশুও যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছিলেন। তিনি সেগুলোই বলতেন, যেগুলো তাঁর পিতা তাঁকে শিখিয়েছিলেন। আপনিও যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন। (যোহন ৮:২৮; ১২:৪৯) আপনি আপনার ক্ষেত্রের পরিচর্যা দলের অধ্যক্ষ, কোনো অগ্রগামী কিংবা অভিজ্ঞ প্রকাশকের সাহায্যেও একটা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করতে পারেন। আপনি তাদের বাইবেল অধ্যয়নেও যেতে পারেন। আপনি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন আর এর ফলে, আপনার সাহস বৃদ্ধি পাবে।

১৩. কেন আমাদের নতুন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ইচ্ছুক থাকতে হবে?

১৩ আমাদের কোনো নতুন পদ্ধতি কিংবা নতুন প্রকাশনা ব্যবহার করা কঠিন বলে মনে হতে পারে। যখন থেকে চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! বইটা এসেছে, তখন থেকে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। অধ্যয়নের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার এবং পরিচালনা করার পদ্ধতিও পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আমরা অধ্যয়ন পরিচালনা করার সময় কম অনুচ্ছেদ পড়ি আর সেই বিষয়ে ছাত্রের সঙ্গে আলোচনা করি। আমরা ছাত্রকে ভিডিও দেখাই অথবা JW লাইব্রেরি অ্যাপ ও আমাদের ওয়েবসাইটে যে-সমস্ত প্রকাশনা রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করি। হতে পারে, নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করা আমাদের জন্য সহজ নয় কারণ একজন ব্যক্তি সেটাই করতে পছন্দ করে, যেটা সে দীর্ঘসময় ধরে করে আসছে। যদি এমনটা হয়, তা হলে আমরা কারো সঙ্গে কথা বলতে পারি। যিহোবা ও ভাই-বোনদের সাহায্যে আমরা নতুন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করা শিখতে পারি। আর সেইসময় আমাদের অধ্যয়ন পরিচালনা করতে ভালো লাগবে। একজন অগ্রগামী ভাই বলেন, এখন অধ্যয়ন পরিচালনা করার সময়ে “ছাত্র ও শিক্ষক দু-জনেই উপভোগ করে।”

১৪. (ক) যখন বাইবেল অধ্যয়ন খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়, তখন কেন আমাদের আশা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়? (খ) ১ করিন্থীয় ৩:৬, ৭ পদ থেকে আমরা কোন উৎসাহ পাই?

১৪ আমরা যেখানে প্রচার করি, সেখানে বাইবেল অধ্যয়ন খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। লোকেরা আমাদের কথা না-ও শুনতে পারে কিংবা আমাদের বিরোধিতা করতে পারে। এইরকম ক্ষেত্রে আমাদের আশা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। জগতের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, লোকদের পরিস্থিতি দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। যে-লোকেরা আজকে সত্যের প্রতি আগ্রহ দেখায় না, তারা পরবর্তী সময়ে ঈশ্বর সম্বন্ধে জানার জন্য আকাঙ্ক্ষী হতে পারে। (মথি ৫:৩) যে-লোকেরা এমনকী আমাদের প্রকাশনাও নেয় না, তারাও বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করতে পারে। আর এমনটা সত্যিই ঘটেছে। আমরা জানি যে, যিহোবা হলেন শস্যখেতের প্রভু। (মথি ৯:৩৮) যিহোবা চান যেন আমরা বীজ রোপণ করি আর তাতে জল দিয়ে চলি, কিন্তু বৃদ্ধি তিনিই দেবেন। (১ করি. ৩:৬, ৭) বর্তমানে, আমাদের কাছে কোনো অধ্যয়ন না-ও থাকতে পারে, কিন্তু যিহোবা আমাদের পরিশ্রম লক্ষ করেন আর আমাদের পুরস্কার দেন। এটা জেনে আমরা কতই-না উৎসাহিত হই! *

সত্য শেখান আর আনন্দ লাভ করুন

আমরা যখন কারো কাছে প্রচার করি আর তাকে সত্য শেখাই, তখন তার জীবন পালটে যায় (১৫-১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৫. একজন ব্যক্তি যখন অধ্যয়ন করতে শুরু করেন এবং শিক্ষণীয় বিষয়গুলো কাজে লাগান, তখন যিহোবার কেমন লাগে?

১৫ একজন ব্যক্তি যখন সত্য গ্রহণ করেন এবং অন্যদের সত্য শেখান, তখন এটা দেখে যিহোবা অনেক খুশি হন। (হিতো. ২৩:১৫, ১৬) ২০২০ সালের পরিচর্যা বছরের উদাহরণ বিবেচনা করুন। সেই সময় পৃথিবীব্যাপী অতিমারি ছড়িয়ে পড়েছিল। তা সত্ত্বেও, ৭৭,০৫,৭৬৫ জন বাইবেল অধ্যয়ন করেছিল আর ২,৪১,৯৯৪ জন বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। একটু চিন্তা করে দেখুন, এটা দেখে যিহোবা কতই-না আনন্দিত হয়েছিলেন! যে-লোকেরা বাপ্তিস্ম নিয়ে যিশুর শিষ্য হয়েছিল, এখন তারা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার মাধ্যমে শিষ্য তৈরি করবে। (লূক ৬:৪০) আমরা আস্থা রাখতে পারি, আমরা যখন লোকদের সত্য শেখাই এবং শিষ্য তৈরি করি, তখন যিহোবার হৃদয় আনন্দে ভরে ওঠে।

১৬. আমরা কোন লক্ষ্য রাখতে পারি?

১৬ কাউকে সত্য শেখানোর পিছনে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু, যিহোবার সাহায্যে আমরা একজন ব্যক্তিকে যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখাতে পারি। তাই, আমরা কি অন্ততপক্ষে একটা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার লক্ষ্য রাখতে পারি? আমাদের যাদের সঙ্গে দেখা হয়, তাদের জিজ্ঞেস করতে পারি, তারা বাইবেল অধ্যয়ন করতে চায় কি না। আমরা আমাদের তরফ থেকে যে-পরিশ্রম করব, যিহোবা তাতে নিশ্চয়ই আশীর্বাদ দেবেন।

১৭. আমরা যখন কাউকে বাইবেল অধ্যয়ন করাব, তখন আমাদের কেমন লাগবে?

১৭ যিহোবা লোকদের কাছে প্রচার করার আর তাঁর সম্বন্ধে শেখানোর এক বিশেষ সুযোগ আমাদের দিয়েছেন। এই কাজে আমরা প্রকৃত আনন্দ খুঁজে পাই। প্রেরিত পৌল থিষলনীকীতে বসবাসকারী অনেক লোককে সত্য শিখিয়েছিলেন। সেই লোকদের সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন: “আমাদের প্রভু যিশুর উপস্থিতির সময়ে তাঁর সামনে তোমরাই কি আমাদের প্রত্যাশা, আনন্দ ও গর্বের মুকুট হবে না? হ্যাঁ, তোমরাই আমাদের গৌরব ও আনন্দ।” (১ থিষল. ২:১৯, ২০; প্রেরিত ১৭:১-৪) আজ অনেক খ্রিস্টান এইরকমই অনুভব করে। বোন স্টেফানি ও তার স্বামী অনেক লোককে সত্য শিখিয়েছেন। স্টেফানি বলেন, “আমরা যখন কাউকে তার জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করি, তখন খুব আনন্দিত হই। সত্যি বলতে কী, এই আনন্দ অন্য কোনো কাজের মধ্যে পাওয়া যায় না।”

গান ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম

^ অনু. 5 যিহোবা আমাদের প্রচার কাজই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে লোকদের শেখানোর কাজও দিয়েছেন, যাতে তারা যিশুর শিষ্য হতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন আমরা এই কাজ করি? শিষ্য তৈরির কাজে কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসতে পারে? আর আমরা কীভাবে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি?

^ অনু. 14 শিষ্য তৈরির কাজ সম্বন্ধে আরও জানার জন্য ২০২১ সালের মার্চ মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার এই প্রবন্ধটা দেখুন, যেটার শিরোনাম হল “কীভাবে মণ্ডলীর সবাই একজন বাইবেল ছাত্রকে বাপ্তিস্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

^ অনু. 53 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: বাইবেল অধ্যয়ন করার ফলে একজন ব্যক্তির জীবন পালটে যায়: একেবারে শুরুতে, তিনি যিহোবা সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না আর তার জীবনে কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। পরে, সাক্ষিরা তার সঙ্গে দেখা করেন এবং তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। কিছু সময় পর, তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেন এবং বাপ্তিস্ম নেন। এরপর, তিনিও শিষ্য তৈরির কাজে অংশ নিচ্ছেন আর নতুন জগতে গিয়ে তারা সবাই আনন্দের সঙ্গে জীবন উপভোগ করছেন।