সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৮

প্রতিযোগিতা না করে, শান্তি বজায় রাখুন

প্রতিযোগিতা না করে, শান্তি বজায় রাখুন

“এসো, আমরা আত্মকেন্দ্রিক না হই, একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করি, একে অন্যকে হিংসা না করি।”—গালা. ৫:২৬.

গান ৫৩ একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা

সারাংশ *

১. লোকেরা যখন একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে, তখন কী হয়?

আজ জগতে এমন অনেক লোক রয়েছে, যারা একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। যেমন, কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থের জন্য অন্যের ক্ষতি করে। কিছু খেলোয়াড় অন্য টিমের খেলোয়াড়দের ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করে, যাতে নিজেরা জয়ী হতে পারে। স্কুলে পড়াশোনা করে এমন ছেলে-মেয়েরা কলেজে ভরতি হওয়ার জন্য পরীক্ষায় নকল করে। তবে, সত্য খ্রিস্টানেরা জানে, এই সমস্ত কিছু ‘পাপপূর্ণ স্বভাবের কাজ।’ (গালা. ৫:১৯-২১) কিন্তু, এমনটা কি হতে পারে যে, মণ্ডলীর কিছু ভাই-বোন অন্যদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে আর অজান্তেই একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে? যদি এমনটা হয়, তা হলে মণ্ডলীর একতা বজায় থাকবে না।

২. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব যে, আমরা কোন কোন কারণে অন্যদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতে পারি। এ ছাড়া, আমরা বাইবেল থেকে কিছু লোকের উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করব, যারা নিজেদের চেয়ে অন্যদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেছিল। কিন্তু প্রথমে আসুন, আমরা নিজেদের পরীক্ষা করে দেখি যে, আমরা কোন মনোভাব নিয়ে যিহোবার সেবা করি।

নিজের মনোভাব পরীক্ষা করুন

৩. আমাদের সময় বের করে নিজেদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

আমাদের সময় বের করে নিজেদের কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত। যেমন, ‘আমি কি নিজের সম্বন্ধে সেইসময় ভালো অনুভব করি, যখন দেখি যে, আমার অন্যদের চেয়ে বেশি দক্ষতা কিংবা ক্ষমতা রয়েছে? আমি কি মণ্ডলীতে এই কারণে পরিশ্রম করি, যাতে অন্যদের দেখাতে পারি যে, আমি তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ? না কি আমি এই কারণে পরিশ্রম করি, যাতে যিহোবা আমার কাজে খুশি হন?’ এই ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা ভালো। কেন? আসুন, বাইবেল থেকে তা লক্ষ করি।

৪. গালাতীয় ৬:৩, ৪ পদে যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে, কেন অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা উচিত নয়?

বাইবেল জানায়, আমাদের অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা উচিত নয়। (পড়ুন, গালাতীয় ৬:৩, ৪.) কেন? প্রথম কারণটা হল, আমরা যদি চিন্তা করি, আমরা অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তা হলে আমরা গর্বিত হয়ে পড়তে পারি। দ্বিতীয় কারণটা হল, আমরা যদি চিন্তা করি, ভাই-বোনেরা আমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তা হলে আমরা হতাশ হয়ে পড়তে পারি। উভয় ধরনের চিন্তাই আসলে সঠিক নয়। (রোমীয় ১২:৩) গ্রিসে বসবাসকারী বোন ক্যাটারিনা * বলেন: “আমি যখন দেখতাম, অন্য বোনেরা আমার থেকে বেশি সুন্দরী, তারা ভালোভাবে প্রচার করতে পারে আর তাদের অনেক বন্ধু রয়েছে, তখন আমার খুব খারাপ লাগত। সেইসময় আমার নিজেকে খুব অযোগ্য ও মূল্যহীন বলে মনে হত।” আমাদের মনে রাখা উচিত, যিহোবা আমাদের এই কারণে তাঁর উপাসক হওয়ার জন্য বেছে নেননি যে, আমরা দেখতে অনেক সুন্দর, আমরা ভালোভাবে কথা বলতে পারি অথবা আমাদের অনেক বন্ধু রয়েছে। এর পরিবর্তে, তিনি আমাদের বেছে নিয়েছেন কারণ আমরা তাঁকে ভালোবাসি আর তাঁর পুত্র যিশুর কথা শুনি।—যোহন ৬:৪৪; ১ করি. ১:২৬-৩১.

৫. ভাই হুয়ানের উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন?

আমরা নিজেদের আরেকটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি কি ভাইদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখি, না কি কথায় কথায় তাদের সঙ্গে তর্ক করি?’ হুয়ান নামে দক্ষিণ কোরিয়ার একজন প্রাচীন ভাইয়ের উদাহরণ বিবেচনা করুন। একসময়, তিনি অন্য প্রাচীনদের দেখে ঈর্ষা করতেন। তিনি বলেন: “আমি তাদের দোষ ধরতাম আর কথায় কথায় তাদের সঙ্গে তর্ক করতাম। আমার জন্য মণ্ডলীতে একতা নষ্ট হয়ে যায়।” হুয়ানের কিছু বন্ধু তাকে তার ভুল বুঝতে সাহায্য করে। তিনি নিজের চিন্তাধারা পরিবর্তন করেন আর আজ তিনি নিজের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করছেন। যদি মনে হয়, আমাদের কারণে মণ্ডলীতে প্রতিযোগিতার মনোভাব দেখা দিচ্ছে, তা হলে আমাদের দ্রুত নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে এবং মণ্ডলীতে শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে।

আত্মকেন্দ্রিক না হই, হিংসা না করি

৬. গালাতীয় ৫:২৬ পদ অনুযায়ী প্রতিযোগিতার মনোভাব কীভাবে শুরু হতে পারে?

গালাতীয় ৫:২৬ পদ পড়ুন। আমরা যদি আত্মকেন্দ্রিক হই এবং হিংসা করি, তা হলে মণ্ডলীতে প্রতিযোগিতার মনোভাব দেখা দিতে পারে। একজন আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি শুধু নিজের সম্বন্ধেই চিন্তা করেন। যে-ব্যক্তি হিংসা করেন, তিনি সেইসমস্ত বিষয়গুলো পেতে চান, যেগুলো অন্যদের কাছে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তিনি সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে সেই বিষয়গুলো কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সত্যি বলতে কী, যে-ব্যক্তি হিংসা করেন, তিনি নিজের ভাইকে ঘৃণা করেন। আমাদের সাবধান থাকতে হবে, যেন আমাদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিক ও হিংসার মনোভাব চলে না আসে।

৭. আত্মকেন্দ্রিক হওয়া এবং হিংসা করা কতটা বিপদজনক? একটা উদাহরণ দিন।

আত্মকেন্দ্রিক হওয়া এবং হিংসা করা যে কতটা বিপদজনক, তা বোঝার জন্য এই উদাহরণটা লক্ষ করুন। একটা কাঠের বাড়ি দেখতে যতই সুন্দর হোক না কেন, তাতে যদি উইপোকা ধরে, তা হলে সেই বাড়িটা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে। আত্মকেন্দ্রিক ও হিংসার মনোভাব হল সেই উইপোকার মতো। যে-ব্যক্তিদের মধ্যে এই মনোভাব রয়েছে, তারা ধীরে ধীরে যিহোবার উপাসনা করা বন্ধ করে দেয় আর নিজেদের সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও ক্ষতি করে। (হিতো. ১৬:১৮) আমরা এমন কী করতে পারি, যাতে আমরা আত্মকেন্দ্রিক না হই এবং হিংসা না করি?

৮. কোন পরামর্শ মেনে চললে আমরা আত্মকেন্দ্রিক হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি?

প্রেরিত পৌল ফিলিপীয়দের যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা মেনে চললে আমরা আত্মকেন্দ্রিক হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি। তিনি বলেছিলেন: “ঝগড়া করার মনোভাব কিংবা আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব নিয়ে কিছুই কোরো না, বরং নম্রতা সহকারে অন্যকে নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করো।” (ফিলি. ২:৩) আমরা যদি নিজেদের চেয়ে অন্যদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি, তা হলে আমরা সেই ভাই-বোনদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব না, যাদের অনেক দক্ষতা কিংবা ক্ষমতা রয়েছে। এর পরিবর্তে, আমরা আনন্দিত হব যে, তারা নিজেদের দক্ষতা কিংবা ক্ষমতা যিহোবার সেবায় ব্যবহার করছে। অপর দিকে, যে-সমস্ত ভাই কিংবা বোনের অনেক দক্ষতা রয়েছে, তারা যদি পৌলের দেওয়া পরামর্শ মেনে চলে, তা হলে তারা আমাদের মধ্যে ভালো গুণগুলো দেখতে পাবে। এভাবে, মণ্ডলীর শান্তি ও একতা বজায় থাকবে।

৯. আমরা কী করতে পারি, যাতে আমরা কোনো ভাই কিংবা বোনকে দেখে হিংসা না করি?

আমরা যদি বিনয়ী মনোভাব গড়ে তুলি, তা হলে আমরা অন্যদের দেখে হিংসা করব না। আমরা নিজেদের সীমাবদ্ধতা বোঝার চেষ্টা করব; প্রতিটা বিষয়ে সেরা হওয়ার চেষ্টা করব না। আমরা এটা প্রমাণ করার প্রচেষ্টা করব না যে, অন্যদের চেয়ে আমাদের বেশি দক্ষতা কিংবা ক্ষমতা রয়েছে। এর পরিবর্তে, আমরা তাদের কাছ থেকে শিখব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ভাই যদি ভালো বক্তৃতা দেন, তা হলে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করতে পারি, কীভাবে তিনি বক্তৃতার জন্য প্রস্তুতি নেন। কিংবা একজন বোন যদি ভালো রান্না করতে পারেন, তা হলে আমরা তার কাছ থেকে রান্না করা শিখতে পারি। একইভাবে, একজন যুবক ভাই অথবা যুবতী বোন যদি কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ইতস্তত বোধ করে, তা হলে সে এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারে, যার অনেক বন্ধু রয়েছে। এভাবে, আমরা আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারব আর অন্যদের দেখে হিংসা করব না।

বাইবেলের কিছু উদাহরণ থেকে শিখুন

গিদিয়োন নম্র ছিলেন। তাই, তিনি ইফ্রয়িমের লোকদের সঙ্গে শান্তি বজায় রেখেছিলেন (১০-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. গিদিয়োনকে কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল?

১০ গিদিয়োন ও ইফ্রয়িম গোষ্ঠীর লোকদের মধ্যে কী ঘটেছিল, তা একটু কল্পনা করে দেখুন। যিহোবা গিদিয়োন ও তার ৩০০ জন লোককে যুদ্ধে জয়ী করেছিলেন। কিন্তু, ইফ্রয়িমের লোকেরা গিদিয়োনের প্রশংসা করার পরিবর্তে, তার সঙ্গে ঝগড়া করেছিল। গিদিয়োন শুরু থেকে তাদের যুদ্ধে আমন্ত্রণ জানাননি বলে তাদের খুব খারাপ লেগেছিল। তাদের মনে হয়েছিল, লোকেরা এবার থেকে তাদের গোষ্ঠীর সম্মান করবে না। কিন্তু, তারা এই বিষয়টা বুঝতে পারেনি যে, গিদিয়োনের জন্য যিহোবার নামের মহিমা হয়েছিল আর তাঁর লোকেরা রক্ষা পেয়েছিল।—বিচার. ৮:১.

১১. সমস্যাটা যাতে আরও বেড়ে না যায়, সেইজন্য গিদিয়োন কী করেছিলেন?

১১ গিদিয়োন ইফ্রয়িমের লোকদের বলেছিলেন: “তোমাদের কর্ম্মের তুল্য কোন কর্ম্ম আমি করিয়াছি?” তিনি তাদের সেই ঘটনার বিষয়টা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, যখন যিহোবা তাদের দিয়ে বড়ো বড়ো কাজ করিয়েছিলেন। এটা শুনে ইফ্রয়িমের লোকদের “ক্রোধ নিবৃত্ত হইল।” (বিচার. ৮:২, ৩) গিদিয়োন চাননি যে, সমস্যাটা আরও বেড়ে যাক। তাই, তিনি নম্র হয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং শান্তি বজায় রেখেছিলেন।

১২. ইফ্রয়িমের লোকদের ও গিদিয়োনের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? ইফ্রয়িমের লোকদের কাছ থেকে আমরা শিখতে পারি, নিজেদের মানসম্মানের বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার পরিবর্তে, কীভাবে যিহোবার সম্মান নিয়ে আসা যায়, সেই বিষয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত। আমরা যদি প্রাচীন কিংবা পরিবারের মস্তক হই, তা হলে আমরা গিদিয়োনের কাছ থেকে একটা বিষয় শিখতে পারি। একজন ব্যক্তি যদি কোনো কারণে আমাদের উপর রেগে থাকেন, তা হলে বিষয়টা আমাদের তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে হবে। সেই ব্যক্তি যে-ভালো কাজ করেছেন, সেটার জন্য তার প্রশংসা করতে হবে। আমরা এই সমস্ত কিছু তখনই করত পারব, যদি আমাদের মধ্যে নম্র গুণটা থাকে। আমাদের সেইসময় আরও নম্র হতে হবে, যখন আমরা বুঝতে পারি, ভুলটা আসলে সেই ব্যক্তির। নিজেদের সঠিক বলে প্রমাণ করার পরিবর্তে, ভাই-বোনদের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা করতে হবে।

হান্নার আস্থা ছিল, যিহোবা সব কিছু একদিন ঠিক করে দেবেন। তাই, তিনি মনের শান্তি লাভ করেছিলেন (১৩-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. (ক) হান্নাকে কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল? (খ) তিনি কী করেছিলেন?

১৩ হান্না সম্বন্ধে একটু চিন্তা করে দেখুন। ইল্‌কানা নামে একজন লেবীয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। ইল্‌কানার পনিন্না নামে আরেকজন স্ত্রী ছিল। তবে, ইল্‌কানা পনিন্নার চেয়ে হান্নাকে বেশি ভালোবাসতেন। “পনিন্নার সন্তান হইয়াছিল, কিন্তু হান্নার সন্তান হয় নাই।” এইজন্য পনিন্না “তাঁহার মনস্তাপ জন্মাইবার চেষ্টায় তাঁহাকে বিরক্ত করিতেন।” হান্না খুব দুঃখ পেতেন। বাইবেল জানায়, “তিনি ভোজন না করিয়া ক্রন্দন করিতেন।” (১ শমূ. ১:২, ৬, ৭) কিন্তু, বাইবেলে কোথাও এমনটা লেখা নেই, হান্না প্রতিশোধ নিয়েছিলেন। এর পরিবর্তে, তিনি নিজের মনের কথা যিহোবাকে বলেছিলেন আর এই আস্থা রেখেছিলেন যে, যিহোবা সমস্ত কিছু ঠিক করে দেবেন। আমরা জানি না, পরবর্তী সময়ে পনিন্না হান্নাকে বিরক্ত করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন কি দেননি। কিন্তু, আমরা এটা জানি, এরপর থেকে হান্না মনের শান্তি লাভ করেছিলেন। বাইবেল জানায়, “তাঁহার মুখ আর বিষণ্ণ রহিল না।”—১ শমূ. ১:১০, ১৮.

১৪. হান্নার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৪ হান্নার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? কেউ যদি আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার চেষ্টা করে, তা হলে আমাদের তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার প্রয়োজন নেই। মন্দের পরিশোধে কারো মন্দ করার পরিবর্তে, আমাদের সেই ব্যক্তির সঙ্গে শান্তি বজায় রাখতে হবে। (রোমীয় ১২:১৭-২১) তারপরও, সেই ব্যক্তি যদি প্রতিযোগিতা করতে থাকে, তা হলে আমরা উদ্‌বিগ্ন হব না বরং আনন্দে থাকব।

আপল্লো ও পৌল জানতেন, যিহোবার সাহায্যেই তারা তাদের সেবা করতে পারছেন। তাই, তারা একে অন্যকে হিংসা করতেন না (১৫-১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. আপল্লো ও পৌলের মধ্যে কোন বিষয়ে মিল ছিল?

১৫ এখন আসুন বিবেচনা করে দেখি, আপল্লো ও প্রেরিত পৌলের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি। তাদের দু-জনেরই শাস্ত্র সম্বন্ধে ভালো বোধগম্যতা ছিল। অনেক লোক তাদের জানত আর তারা লোকদের ভালোভাবে শিক্ষা দিতেন। তারা অনেক লোককে যিশুর শিষ্য হতে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তারা একে অন্যকে হিংসা করতেন না।

১৬. আপল্লো সম্বন্ধে কিছু উল্লেখ করুন।

১৬ আপল্লো “আলেক্‌সান্দ্রীয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।” প্রথম শতাব্দীতে, লোকেরা শিক্ষা লাভ করার জন্য এই শহরে আসত। আপল্লো একজন সুবক্তা ছিলেন এবং “শাস্ত্র সম্বন্ধে অভিজ্ঞ ছিলেন।” (প্রেরিত ১৮:২৪) কিছু সময়ের জন্য তিনি যখন করিন্থে ছিলেন, তখন সেখানকার কিছু ভাই এটা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছিল যে, তারা পৌল ও অন্যান্য ভাইয়ের চেয়ে আপল্লোকে বেশি পছন্দ করে। (১ করি. ১:১২, ১৩) কিন্তু, আপল্লো এইরকম চিন্তাকে প্রশ্রয় দেননি। তাই, পৌল তাকে আবারও করিন্থে পাঠিয়েছিলেন। (১ করি. ১৬:১২) তিনি যদি মণ্ডলীর একতাকে নষ্ট করতেন, তা হলে পৌল তাকে আবারও করিন্থে পাঠাতেন না। আপল্লো প্রচার করার এবং ভাই-বোনদের উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতাকে ব্যবহার করেছিলেন। আপল্লো খুবই নম্র স্বভাবের ব্যক্তি ছিলেন। আমরা তা বলতে পারি কারণ একবার যখন প্রিষ্কিল্লা ও আক্বিলা ‘তাকে ঈশ্বরের পথ সম্বন্ধে আরও নিখুঁতভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন,’ তখন তিনি খারাপ মনে করেননি।—প্রেরিত ১৮:২৪-২৮.

১৭. পৌল শান্তি বজায় রাখার জন্য কী করেছিলেন?

১৭ প্রেরিত পৌল খুব ভালোভাবে জানতেন, আপল্লো কত ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু, পৌল এই বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন না যে, লোকেরা তার চেয়ে আপল্লোকে বেশি প্রাধান্য দেবে। পৌল করিন্থ মণ্ডলীর উদ্দেশে যা লিখেছিলেন, সেখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, তিনি কতটা নম্র ছিলেন আর নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতেন। যখন মণ্ডলীর লোকেরা বলেছিল, “আমি পৌলের” শিষ্য, তখন এই কথা শুনে তার ভালো লাগেনি। পৌল তাদের বুঝতে সাহায্য করেছিলেন, তাদের কোনো ব্যক্তির উপর নয় বরং যিহোবা ও যিশু খ্রিস্টের উপর মনোযোগ রাখার প্রয়োজন রয়েছে।—১ করি. ৩:৩-৬.

১৮. পৌল ও আপল্লোর কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (১ করিন্থীয় ৪:৬, ৭)

১৮ পৌল ও আপল্লোর কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? হতে পারে, আমরা যিহোবার সেবায় অনেক পরিশ্রম করেছি আর অনেক লোককে সত্য শিখিয়েছি। কিন্তু, আমাদের এই বিষয়টা মনে রাখতে হবে, এই সমস্ত কিছু যিহোবার সাহায্যেই সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া, আমরা পৌল ও আপল্লোর কাছ থেকে আরেকটা বিষয় শিখতে পারি। মণ্ডলীতে যাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে, তাদের এই বিষয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে, যেন মণ্ডলীর মধ্যে শান্তি বজায় থাকে। আমরা খুবই খুশি যে, প্রাচীন ও পরিচারক দাসেরা মণ্ডলীতে শান্তি বজায় রাখার জন্য অনেক পরিশ্রম করে থাকেন। তারা যে-পরামর্শগুলো দেন, সেগুলো নিজেদের মনগড়া কথা নয় বরং বাইবেল থেকে দিয়ে থাকেন। তারা ভাইদের সাহায্য করেন, যাতে তাদের মনোযোগ সবসময় আমাদের আদর্শ, যিশু খ্রিস্টের উপর থাকে।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৪:৬, ৭.

১৯. এই প্রবন্ধ থেকে আমরা কী শিখেছি? (এ ছাড়া, “ প্রতিযোগিতার মনোভাব এড়িয়ে চলুন” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

১৯ আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে কোনো-না-কোনো দক্ষতা কিংবা ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের সেটা “অন্যের সেবা করার জন্য” ব্যবহার করতে হবে। (১ পিতর ৪:১০) আমাদের মনে হতে পারে, আমরা বেশি কিছু করতে পারছি না। কিন্তু, ঠিক যেমন প্রতিটা ইট একটা বাড়ি নির্মাণ করতে সাহায্য করে, একইভাবে আমাদের ছোটো ছোটো কাজের মাধ্যমে মণ্ডলীতে একতা ও শান্তি বজায় থাকে। আমাদের যদি মনে হয়, আমাদের মধ্যে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার মনোভাব গড়ে উঠছে, তা হলে সেটা শিকড় বিস্তার করার আগেই উপড়ে ফেলতে হবে আর মণ্ডলীতে শান্তি ও একতা বজায় রাখতে হবে।—ইফি. ৪:৩.

গান ১ যিহোবার গুণাবলি

^ অনু. 5 কোনো মাটির পাত্রে যদি চিড় ধরে, তা হলে সেটা দ্রুত ভেঙে যেতে পারে। একইভাবে, মণ্ডলীতে কিছু ভাই-বোন যদি অন্যদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে, তা হলে মণ্ডলীর একতা ও শান্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কেন অন্যদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা উচিত নয় আর আমরা এমন কী করতে পারি, যাতে মণ্ডলীতে শান্তি বজায় থাকে।

^ অনু. 4 নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।