সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৯

নিজের কাজে আনন্দ লাভ করুন!

নিজের কাজে আনন্দ লাভ করুন!

“প্রত্যেকে . . . অন্যদের সঙ্গে তুলনা না করে বরং নিজের কাজ নিয়ে আনন্দ করবে।”—গালা. ৬:৪.

গান ২৯ নীতিনিষ্ঠার পথে চলা

সারাংশ *

১. কেন যিহোবা অন্যদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করেন না?

যিহোবা সমস্ত কিছু একইরকম সৃষ্টি করেননি। তিনি ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের গাছপালা ও জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি মানুষকেও একে অপরের থেকে আলাদাভাবে সৃষ্টি করেছেন। তাই, তিনি অন্যদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করেন না। তিনি আমাদের অন্তঃকরণ বা হৃদয় দেখেন অর্থাৎ তিনি আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্ব লক্ষ করেন। (১ শমূ. ১৬:৭) তিনি এও জানেন, আমাদের মধ্যে কোন কোন ভালো বিষয় রয়েছে এবং কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে আর আমরা কোন পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছি। তাই, আমরা যতটা করতে পারি, তিনি সেটার চেয়ে বেশি আশা করেন না। আমাদের যিহোবার মতো করে সমস্ত কিছু দেখার প্রয়োজন রয়েছে, তা হলেই আমরা “উত্তম বিচারবুদ্ধি” রাখতে পারব। এভাবে, আমরা অন্যদের চেয়ে নিজেদের খুব বড়ো অথবা ছোটো বলে মনে করব না।—রোমীয় ১২:৩.

২. কেন অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করা উচিত নয়?

কাউকে দেখে শেখার মধ্যে ভুল কিছু নেই। যেমন, কোনো ভাই কিংবা বোন যদি ভালোভাবে প্রচার করতে পারেন, তা হলে তাকে দেখে আমরা ভালোভাবে প্রচার করা শিখতে পারি। (ইব্রীয় ১৩:৭; ফিলি. ৩:১৭) কিন্তু, কারো সঙ্গে নিজেদের তুলনা করলে আমরা তাকে হিংসা করতে পারি কিংবা আমরা নিজেরা হতাশ হয়ে পড়তে আর নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতে পারি। আমরা যেমনটা আগের প্রবন্ধে শিখেছিলাম, আমরা যদি অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার চেষ্টা করি, তা হলে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই, যিহোবা আমাদের বলেছেন: “প্রত্যেকে নিজের কাজ পরীক্ষা করে দেখুক আর তা হলে সে অন্যদের সঙ্গে তুলনা না করে বরং নিজের কাজ নিয়ে আনন্দ করবে।”—গালা. ৬:৪.

৩. যিহোবার সেবায় আপনি কী কী করেছেন, যেগুলো আপনাকে আনন্দিত করে?

যিহোবা চান, আমরা এই পর্যন্ত তাঁর সেবায় যা-কিছু করেছি, তা থেকে আনন্দ লাভ করি। আপনি যদি বাপ্তিস্ম নিয়ে থাকেন, তা হলে আপনি খুশি হতে পারেন যে, আপনি একটা লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছেন। আপনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কারণ যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা রয়েছে। একটু চিন্তা করুন, বাপ্তিস্ম থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত আপনি কোন কোন বিষয়ে উন্নতি করেছেন। হতে পারে, আপনি ভালোভাবে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে, মন থেকে প্রার্থনা করতে, প্রচারে ভালোভাবে সাক্ষ্য দিতে এবং প্রকাশনাগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করতে শিখেছেন। (গীত. ১৪১:২) আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তা হলে যিহোবার সাহায্যে আপনি একজন উত্তম স্বামী, স্ত্রী অথবা বাবা-মা হতে পেরেছেন। আপনার আনন্দিত হওয়া উচিত যে, আপনি কত কিছু করতে পেরেছেন!

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

কখনো কখনো পরিবারের সদস্য ও মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, যিহোবার সেবায় আনন্দ লাভ করার জন্য বাবা-মা নিজের সন্তানদের আর স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে কীভাবে সাহায্য করতে পারেন। এ ছাড়া, আমরা এও আলোচনা করব, কীভাবে প্রাচীন ও অন্যান্য খ্রিস্টান মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সাহায্য করতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, আমরা কিছু শাস্ত্রপদের উপরও মনোযোগ দেব। এগুলো আমাদের এমন লক্ষ্য স্থাপন করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে পারে, যেটা আমরা অর্জন করতে পারি।

বাবা-মা ও স্বামী-স্ত্রী কী করতে পারেন?

বাবা-মায়েরা, আপনার প্রত্যেক সন্তানের কাজের জন্য প্রশংসা করুন (৫-৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৫. ইফিষীয় ৬:৪ পদে যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে, বাবা-মায়েদের কী করতে হবে?

বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন এক সন্তানের সঙ্গে অন্য সন্তানের তুলনা না করে কিংবা সে যতটা করতে পারে, সেটার চেয়ে বেশি আশা না করে। এমনটা করলে সে হতাশ হয়ে যেতে পারে। (পড়ুন, ইফিষীয় ৬:৪.) বোন সঞ্চিতা * বলেন: “আমি যখন ছোটো ছিলাম, তখন সমস্ত শিক্ষক চাইত, আমি যেন অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে বেশি নম্বর পাই। আমার মাও চাইতেন, আমি যেন খুব ভালোভাবে পড়াশোনা করি, যাতে আমার শিক্ষকেরা ও বাবা, যিনি সত্যে ছিলেন না, তারা সবাই সাক্ষিদের সম্বন্ধে ভুল দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে না তোলে। মা চাইতেন, আমি যেন স্কুলের পরীক্ষায় ভালো নম্বর নিয়ে আসি। কিন্তু আমি জানতাম, আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়। এটা অনেক বছর আগের কথা। কিন্তু আজও, আমার প্রায় সময় মনে হয়, আমি যিহোবার সেবায় যা-কিছু করছি, তা যথেষ্ট নয়। যিহোবা আমার পরিশ্রম দেখে খুশি নন।”

৬. গীতসংহিতা ১৩১:১, ২ পদ থেকে বাবা-মায়েরা কী শিখতে পারে?

গীতসংহিতা ১৩১:১, ২ পদ পড়ুন। রাজা দায়ূদ বলেছিলেন, তিনি ‘মহৎ বিষয়’ আর সেইসঙ্গে এমন বিষয় পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেননি, যেগুলো পাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব ছিল। দায়ূদ নম্র ছিলেন, তাই তার কাছে যা-কিছু ছিল, তাতে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। দায়ূদের কাছ থেকে বাবা-মায়েরা কী শিখতে পারে? তাদের নম্র হতে হবে। তাদের নিজেদের ও সেইসঙ্গে সন্তানদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আশা করা উচিত নয়। তাদের এটা বুঝতে হবে, তাদের সন্তানেরা কী করতে পারে আর কী করতে পারে না। আর সেই অনুযায়ী সন্তানদের লক্ষ্য স্থাপন করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। এমনটা করলে সন্তানেরা নিজেদের অযোগ্য বলে মনে করবে না। বোন মারিনা বলেন: “আমার মা কখনো আমার তিন ভাই অথবা অন্য ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে আমার তুলনা করেননি। তিনি বুঝিয়েছিলেন, আমাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা দক্ষতা রয়েছে আর আমরা প্রত্যেকেই যিহোবার দৃষ্টিতে মূল্যবান। এই কারণে, আমি কখনো অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করিনি।”

৭-৮. একজন খ্রিস্টান স্বামীর তার স্ত্রীকে কীভাবে সমাদর করা উচিত?

একজন স্বামীর তার স্ত্রীকে সমাদর করা উচিত। (১ পিতর ৩:৭) এর অর্থ হল, তিনি তাকে সম্মান করবেন এবং তার কাছ থেকে অতিরিক্ত আশা করবেন না। তিনি অন্য মহিলাদের সঙ্গে তার স্ত্রীর তুলনা করবেন না। যদি এমনটা করেন, তা হলে তার স্ত্রীর কেমন লাগবে? রোসা নামে একজন বোনের উদাহরণ লক্ষ করুন। বোনের স্বামী সত্যে ছিলেন না আর তিনি প্রায়ই অন্য মহিলাদের সঙ্গে বোনের তুলনা করতেন। তার কথাগুলো বোনের মনে তিরের মতো গেঁথে যেত আর বোন নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতেন। রোসা বলেন: “আমি বার বার নিজেকে মনে করাতাম, যিহোবা আমাকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন।” একজন খ্রিস্টান স্বামী তার স্ত্রীকে সমাদর করবেন কারণ তিনি জানেন, এভাবে তার স্ত্রীর ও যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো থাকবে। *

একজন স্বামীর আরেকটা উপায়ে তার স্ত্রীকে সমাদর করা উচিত। তিনি তাকে আশ্বস্ত করবেন যে, তিনি তাকে অনেক ভালোবাসেন। এ ছাড়া, তিনি অন্যদের সামনে তার প্রশংসা করবেন। (হিতো. ৩১:২৮) আগের প্রবন্ধে আমরা ক্যাটারিনা সম্বন্ধে শিখেছিলাম, যিনি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতেন। আসলে, ছোটোবেলায় তার মা তাকে অন্যদের সামনে ছোটো করত আর তার বন্ধুবান্ধব ও অন্য মেয়েদের সঙ্গে তার তুলনা করত। এইরকম চিন্তাধারা তার মধ্যেও চলে এসেছিল। সত্যে আসার পরও তিনি অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করতেন। কিন্তু, তার স্বামীর সাহায্যে তিনি এইরকম চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে পেরেছিলেন। ক্যাটারিনা বলেন: “ও আমাকে খুব ভালোবাসে, আমার ভালো কাজের জন্য আমার প্রশংসা করে আর আমার জন্য প্রার্থনাও করে। আমি যখন নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করি, তখন ও আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে, যিহোবা আমার সম্বন্ধে এমনটা চিন্তা করেন না।”

প্রাচীন ও অন্য ভাই-বোনেরা কী করতে পারেন?

৯-১০. কীভাবে প্রাচীনেরা একজন বোনকে সাহায্য করেছিলেন?

প্রাচীনেরা সেই ভাই-বোনদের কীভাবে সাহায্য করতে পারেন, যারা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে? হানুনি নামে একজন বোনের উদাহরণ বিবেচনা করে দেখুন। ছোটোবেলায় তিনি অন্যদের কাছ থেকে খুব কম প্রশংসা পেতেন। বোন বলেন: “আমি অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে শুরু করি। কারণ আমি লাজুক স্বভাবের ছিলাম আর আমার মনে হত, আমার চেয়ে অন্য ছেলে-মেয়েরা অনেক ভালো।” সত্য শেখার পরও বোন এমনটাই করতেন। তার মনে হত, অগ্রগামী সেবায় তিনি যা-কিছু করছেন, সেগুলোর কোনো মূল্য নেই। কিন্তু আজকে, তিনি আনন্দের সঙ্গে সেবা করছেন। কীভাবে তিনি নিজের চিন্তাধারা পরিবর্তন করেছিলেন?

১০ প্রাচীনেরা বোনকে সাহায্য করেছিলেন। তারা তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, মণ্ডলীতে তার মূল্য রয়েছে আর বোনের ভালো কাজের জন্য প্রশংসাও করেছিলেন। বোন বলেন: “অনেক বার প্রাচীনেরা অন্য বোনদের উৎসাহিত করার জন্য আমাকে বলেছিলেন। আমার মনে হয়েছিল, মণ্ডলীতে আমারও মূল্য রয়েছে। একবার, তারা আমাকে কিছু যুবতী বোনকে সাহায্য করার জন্য বলেন আর এরজন্য তারা আমাকে ধন্যবাদ দেন। তারা আমাকে ১ থিষলনীকীয় ১:২, ৩ পদ পড়ে শোনান। এটা শুনে আমি খুব খুশি হই। প্রাচীনদের জন্য আমি নিশ্চিত হই যে, মণ্ডলীর কাজে আমি ব্যবহৃত হতে পারি।”

১১. যিশাইয় ৫৭:১৫ পদ অনুযায়ী কীভাবে আমরা সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারি, যাদের মন “চূর্ণ” হয়ে গিয়েছে?

১১ যিশাইয় ৫৭:১৫ পদ পড়ুন। যিহোবা সেই ব্যক্তিদের জন্য চিন্তা করেন, যাদের মন “চূর্ণ” হয়ে গিয়েছে। আমাদেরও তাদের প্রতি চিন্তা দেখানোর প্রয়োজন। এই কাজ শুধু প্রাচীনদের নয় বরং মণ্ডলীর সমস্ত ভাই-বোনের। আমাদের সেই দুঃখী ভাই-বোনদের আশ্বস্ত করতে হবে যে, যিহোবা তাদের ভালোবাসেন এবং তাদের মূল্যবান হিসেবে দেখেন। (কল. ৩:১২) আমাদের নম্র হওয়া উচিত। আমরা যদি অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করি, তা হলে অন্য ভাই-বোনেরা আমাদের হিংসা করতে পারে আর আমরা চাইব না, কখনো এমনটা হোক। আমরা চাই, আমাদের যে-ক্ষমতা রয়েছে, তা যেন ভাই-বোনদের উৎসাহিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।—১ পিতর ৪:১০, ১১.

যিশুর শিষ্যেরা তাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন কারণ যিশু নম্র ছিলেন আর নিজেকে কখনো তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতেন না। যিশুও তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. কেন সাধারণ লোকেরা যিশুকে পছন্দ করত? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১২ অন্যদের সঙ্গে আমাদের কীভাবে আচরণ করা উচিত, তা আমরা যিশুর কাছ থেকে শিখতে পারি। পৃথিবীতে বসবাসকারী ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বমহান ব্যক্তি। তা সত্ত্বেও, তিনি “মৃদুশীল ও নম্রমনা” ছিলেন। (মথি ১১:২৮-৩০) তিনি কখনো নিজের বুদ্ধি ও জ্ঞান লোকদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য ব্যবহার করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি সহজসরল ভাষায় লোকদের শেখাতেন আর এমন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতেন, যেটা লোকেরা সহজেই বুঝতে পারত। (লূক ১০:২১) তিনি ধর্মীয় গুরুদের মতো ছিলেন না, যারা সাধারণ লোকদের নীচু চোখে দেখত। তিনি সাধারণ লোকদের সঙ্গে সম্মান সহকারে আচরণ করতেন। ফলে, তারা মনে করত যে, যিহোবার দৃষ্টিতে তাদের মূল্য রয়েছে।—যোহন ৬:৩৭.

১৩. কীভাবে এটা বোঝা যায় যে, যিশু তাঁর শিষ্যদের ভালোবাসতেন?

১৩ যিশু তাঁর শিষ্যদের ভালোবাসতেন। তিনি জানতেন যে, তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা পরিস্থিতি ও ক্ষমতা রয়েছে। একজন শিষ্য যতটা করতে পারেন, অন্য শিষ্য ততটা না-ও করতে পারেন। তা সত্ত্বেও, তারা প্রত্যেকে যে-পরিশ্রম করতেন, তা দেখে তিনি খুশি হতেন। এই বিষয়টা তালন্তের দৃষ্টান্ত থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। সেই দৃষ্টান্তে একজন প্রভু তার প্রত্যেক দাসকে “যার যেমন ক্ষমতা,” সেই অনুযায়ী কাজ দিয়েছিলেন। ব্যাবসা করে একজন দাস অন্য দাসের চেয়ে বেশি তালন্ত লাভ করেছিল। তা সত্ত্বেও, সেই প্রভু তাদের দু-জনকে একই কথা বলেছিলেন: “বেশ, উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস!”—মথি ২৫:১৪-২৩.

১৪. যিশুর মতো আমরা কী করতে পারি?

১৪ যিশু আমাদের সঙ্গেও প্রেম সহকারে আচরণ করেন। তিনি জানেন, আমাদের পরিস্থিতি এবং ক্ষমতা আলাদা। তাই, আমরা যখন অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করব না আর আমরা যা করতে পারি, সেটা মনপ্রাণ দিয়ে করব, তখন যিশু খুশি হবেন। যিশুর মতো আমাদেরও অন্যদের সঙ্গে প্রেম সহকারে আচরণ করতে হবে। মণ্ডলীতে যদি কোনো ভাই কিংবা বোন অন্যদের মতো ততটা করতে না পারেন, তা হলে তাকে এইরকমটা অনুভব করানো উচিত নয় যে, তিনি কোনো কাজের নন। এর পরিবর্তে, তিনি যতটা করতে পারছেন, সেটার জন্য তার প্রশংসা করা উচিত।

এমন লক্ষ্য রাখুন, যেটা আপনি অর্জন করতে পারবেন

এমন লক্ষ্য রাখুন, যেটা আপনি অর্জন করতে পারবেন। তা হলে, আপনি আনন্দ লাভ করবেন (১৫-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৫-১৬. কীভাবে একজন বোন নিজের পরিস্থিতি অনুযায়ী লক্ষ্য রাখার ফলে উপকৃত হয়েছেন? ব্যাখ্যা করুন।

১৫ আমরা যখন যিহোবার সেবায় কোনো লক্ষ্য রাখি, তখন আমাদের জীবনে এক উদ্দেশ্য থাকে আর আমরা আনন্দ লাভ করি। তবে, নিজেদের পরিস্থিতি ও ক্ষমতা অনুযায়ী আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত। আমরা যদি অন্যদের পরিস্থিতি ও ক্ষমতা অনুযায়ী লক্ষ্য রাখি, তা হলে আমরা দুঃখিত ও হতাশ হয়ে পড়ব। (লূক ১৪:২৮) মিডোরি নামে একজন অগ্রগামী বোন কী করেছিলেন, তা লক্ষ করুন।

১৬ মিডোরির বাবা যিহোবার সাক্ষি ছিলেন না। মিডোরি যখন ছোটো ছিলেন, তখন তার বাবা প্রায়ই তার ভাই-বোন ও ক্লাসের অন্য ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তার তুলনা করতেন। এই কারণে, মিডোরি নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতেন। কিন্তু, ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে ওঠার সময় তিনি এই অনুভূতি কাটিয়ে ওঠেন। কীভাবে? মিডোরি বলেন: “আমি প্রতিদিন বাইবেল পড়তে শুরু করি। এভাবে, আমি নিশ্চিত হই যে, যিহোবা আমাকে ভালোবাসেন।” মিডোরি নিজের পরিস্থিতি অনুযায়ী কিছু লক্ষ্য রাখেন এবং সেগুলো অর্জন করার জন্য প্রার্থনা করেন। এই কারণে, তিনি যিহোবার সেবায় যা-কিছু করতে পেরেছেন, তা থেকে তিনি আনন্দ লাভ করেছিলেন।

আপনি যা করতে পারেন, সেটা মনপ্রাণ দিয়ে করুন

১৭. (ক) নিজেদের চিন্তাধারা পালটানোর জন্য আমাদের কী করতে হবে? (খ) এর ফলাফল কী হবে?

১৭ আমরা যদি নিজেদের অযোগ্য বলে মনে করি, তা হলে এই চিন্তাধারা রাতারাতি পালটাবে না। তাই, ঈশ্বর বলেছেন: “তোমাদের মনোভাবকে দিন দিন নতুন কর।” (ইফি. ৪:২৩, ২৪) এরজন্য, আমাদের বাইবেল অধ্যয়ন, ধ্যান ও প্রার্থনা করতে হবে আর তা ক্রমাগত করতে হবে। তারপর, যিহোবা তাঁর পবিত্র শক্তি আমাদের দেবেন, যাতে আমরা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা না করি। আমাদের হৃদয়ে যদি গর্ব কিংবা হিংসার মনোভাব দেখা দেয়, তা হলে যিহোবা সেটাকে দূর করতে আমাদের সাহায্য করবেন।

১৮. দ্বিতীয় বংশাবলি ৬:২৯, ৩০ পদ থেকে আপনি কোন সান্ত্বনা লাভ করতে পারেন?

১৮ দ্বিতীয় বংশাবলি ৬:২৯, ৩০ পদ পড়ুন। যিহোবা আমাদের অন্তঃকরণ বা হৃদয় দেখেন। তিনি জানেন, আমরা কী চিন্তা করি আর কেমন অনুভব করি। তিনি এও জানেন, এই জগতের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার এবং নিজেদের দুর্বলতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমরা কতটা প্রচেষ্টা করছি। তিনি যখন আমাদের এইরকম লড়াই করতে দেখেন, তখন তিনি আমাদের আরও বেশি ভালোবাসেন।

১৯. কোন উদাহরণ তুলে ধরে যিহোবা বুঝতে সাহায্য করেছেন যে, তিনি আমাদের ভালোবাসেন?

১৯ যিহোবা একজন মায়ের উদাহরণ তুলে ধরে আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছেন যে, তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসেন। (যিশা. ৪৯:১৫) বোন রেচেল কী বলেন, তা লক্ষ করুন: “আমার মেয়ে স্টেফানি সময়ের অনেক আগেই জন্মগ্রহণ করেছিল। আমি যখন ওকে প্রথম বার দেখি, তখন ও খুব ছোট্ট ছিল আর ওকে একেবারে অসহায় বলে মনে হচ্ছিল। ডাক্তাররা ওর করুণ অবস্থা দেখে ওকে এক মাসের জন্য অন্য একটা রুমে রেখেছিল। কিন্তু, আমি প্রতিদিন ওর সঙ্গে দেখা করতে আর ওকে কোলে নিতে পারতাম। সেই সময় আমাদের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আজ স্টেফানির বয়স ছয় বছর আর ওকে ওর বয়সি ছেলে-মেয়েদের চেয়ে দেখতে অনেক ছোটো লাগে। আমি ওকে খুব ভালোবাসি কারণ ও বেঁচে থাকার জন্য অনেক লড়াই করেছে। ওর কারণে আমার জীবন আনন্দে ভরে উঠেছে।” যিহোবা যখন দেখেন, আমরা তাঁর সেবা করার জন্য কত লড়াই করছি, তখন তিনিও ঠিক তেমনটা অনুভব করেন, যেমনটা একজন মা অনুভব করে থাকেন। এটা জেনে আমরা কতই-না উৎসাহ লাভ করি!

২০. যিহোবার দাসেরা কীসের জন্য আনন্দ লাভ করে?

২০ আমরা যিহোবার দাস। তাই, আমরা প্রত্যেকেই যিহোবার কাছে মূল্যবান। তিনি জানেন, আমরা সবাই একে অপরের থেকে আলাদা। যিহোবা এইজন্য আমাদের তাঁর দাস হিসেবে বেছে নেননি যে, আমরা অন্যদের থেকে ভালো। কিন্তু, তিনি আমাদের হৃদয় দেখেছেন। তিনি দেখেছেন, আমরা নম্র আর আমরা শেখার এবং নিজেদের পরিবর্তন করার জন্য ইচ্ছুক। (গীত. ২৫:৯) আমরা যখন মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করি, তখন তিনি সেটাকে অনেক উপলব্ধি করেন। এ ছাড়া, আমরা যখন ধৈর্য ধরি আর তাঁর সেবা করে চলি, তখন তা থেকে বোঝা যায় যে, আমাদের ‘হৃদয় ভালো ও বিশুদ্ধ।’ (লূক ৮:১৫) তাই আসুন, আমরা যেন অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা না করি। এর পরিবর্তে, আমরা যতটা করতে পারি, ততটা মনপ্রাণ দিয়ে করি। তা হলে, আমরা ‘নিজের কাজে’ আনন্দ লাভ করতে পারব।

গান ৬০ তিনি তোমায় সবল করবেন

^ অনু. 5 যিহোবা অন্যদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করেন না। কিন্তু হতে পারে, আমরা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করি। আর আমাদের মনে হতে পারে, আমরা তাদের মতো ভালো নই। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন আমাদের অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। আমরা এও দেখতে পারব, আমরা কী করতে পারি, যাতে আমাদের পরিবারের সদস্য ও মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা নিজেদের সেভাবে দেখে, যেভাবে যিহোবা তাদের দেখে থাকেন।

^ অনু. 5 কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ অনু. 7 যদিও এখানে স্বামীদের বিষয়ে বলা হয়েছে, তবে এখানে দেওয়া নীতিগুলো স্ত্রীদের প্রতিও প্রযোজ্য।

^ অনু. 58 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: পারিবারিক উপাসনার সময়ে পরিবারের সবাই মিলে নোহের জাহাজ তৈরি করছে। এই জাহাজ তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানও কিছু-না-কিছু করছে। আর বাবা-মা প্রত্যেক সন্তানের কাজ দেখে অনেক খুশি হচ্ছেন।

^ অনু. 62 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন একক মা তার ছোটো সন্তানকে বড়ো করে তুলছেন। তিনি সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করার জন্য পরিকল্পনা করছেন। তিনি খুশি যে, এই অগ্রগামীর কাজ তিনি করে যেতে পারছেন।