সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩১

আপনি কি যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করবেন?

আপনি কি যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করবেন?

“আমি . . . অপেক্ষা করিব।”—মীখা ৭:৭.

গান ২৪ পুরস্কারে তোমার চোখ রাখো!

সারাংশ *

১-২. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

ধরুন, আপনি কারো জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, কিন্তু সে এখনও পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি। হতে পারে, তখন আপনি হতাশ হয়ে পড়েন অথবা তার জন্য চিন্তা করতে থাকেন। হিতোপদেশ ১৩:১২ পদেও এই বিষয়টা লেখা আছে, “আশাসিদ্ধির বিলম্ব হৃদয়ের পীড়াজনক।” কিন্তু, আপনি যদি জানতে পারেন, কোনো উপযুক্ত কারণে তার দেরি হচ্ছে, তা হলে আপনি হয়তো ধৈর্য ধরবেন এবং তার অপেক্ষা করবেন।

এই প্রবন্ধে আমরা বাইবেল থেকে কিছু নীতি নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো আমাদের যিহোবার সময়ের জন্য “অপেক্ষা” করতে সাহায্য করবে। (মীখা ৭:৭) এরপর, আমরা এমন দুটো পরিস্থিতি সম্বন্ধে আলোচনা করব, যে-পরিস্থিতিগুলোতে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে আর এই আস্থা রাখতে হবে যে, যিহোবা সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেবেন। পরিশেষে আমরা জানব যে, যারা যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করে, তারা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করবে।

বাইবেলের কিছু নীতি আমাদের ধৈর্য ধরতে শেখায়

৩. যাকোব ৫:৭ পদে দেওয়া নীতি থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যাকোব ৫:৭ পদ থেকে আমরা জানতে পারি, কেন আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। এই পদে লেখা রয়েছে: “একজন কৃষক ভূমির মূল্যবান ফসলের জন্য অপেক্ষা করে আর শুরুর বৃষ্টি এবং শেষের বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে।” এই পদ থেকে আমরা শিখি, যেকোনো কাজ করার সময় আমরা যখন ধৈর্য ধরব আর তাড়াহুড়ো করব না, তখন সেটার ফলাফল ভালো হবে।

৪. হিতোপদেশ ৪:১৮ পদে দেওয়া নীতি থেকে কী বোঝা যায়?

হিতোপদেশ ৪:১৮ পদে লেখা রয়েছে: “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।” এই পদ থেকে বোঝা যায়, যিহোবা তাঁর লোকদের কাছে নিজের ইচ্ছা সম্বন্ধে ধীরে ধীরে প্রকাশ করেন। এই পদে দেওয়া নীতি থেকে আমরা এও বুঝতে পারি, খ্রিস্টানেরা নিজেদের জীবনে ধীরে ধীরে পরিবর্তনগুলো করে আর যিহোবার নিকটবর্তী হয়। একজন ব্যক্তি যখন বাইবেল অধ্যয়ন করেন আর সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করেন এবং সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শগুলো কাজে লাগান, তখন তিনি নিজের মধ্যে খ্রিস্টের মতো গুণাবলি গড়ে তোলেন। আসুন দেখি, এই বিষয়টা বোঝানোর জন্য যিশু কোন দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন।

ঠিক যেমন একটা চারাগাছ ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, একইভাবে একজন ব্যক্তি যখন সত্য শেখেন, তখন তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে পরিবর্তন করেন (৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৫. কোন দৃষ্টান্ত তুলে ধরার মাধ্যমে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, একজন ব্যক্তির নিজেকে পরিবর্তন করতে সময় লাগে?

যিশু বলেছিলেন: “একসময় বীজ অঙ্কুরিত হয় এবং তা বেড়ে ওঠে—কিন্তু কীভাবে হয়, তা সে [বীজ বপনকারী] জানে না। জমি আপনা-আপনি ধীরে ধীরে ফল উৎপন্ন করে, প্রথমে বৃন্ত, পরে শিষ আর অবশেষে শিষের মধ্যে পূর্ণ শস্য।” (মার্ক ৪:২৭, ২৮) এখানে, বীজ হল ঈশ্বরের রাজ্যের বার্তা। যিশু আসলে বলছিলেন, একটা চারাগাছ যেমন ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, ঠিক একইভাবে একজন ব্যক্তি যখন রাজ্যের বার্তা শোনেন আর বাইবেলের সত্যগুলো শেখেন, তখন তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে পরিবর্তন করেন। আমাদের বাইবেল ছাত্রদের প্রতিও এমনটা হয়ে থাকে। তারা যখন যিহোবার নিকটবর্তী হয়, তখন তারা নিজেদের পরিবর্তন করে। (ইফি. ৪:২২-২৪) কিন্তু, আমাদের মনে রাখতে হবে, যিহোবাই হলেন সেই বীজের বৃদ্ধিদাতা।—১ করি. ৩:৭.

৬-৭. যিহোবা যেভাবে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, সেটা থেকে আমরা তাঁর সম্বন্ধে কী শিখতে পারি?

যিহোবা যা-কিছু করেন, সেগুলো ভেবে-চিন্তে আর সময় নিয়ে করেন। এতে, তাঁর নামের গৌরব হয় আর অন্যেরা উপকৃত হয়। লক্ষ করুন, যিহোবা যখন পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি সমস্ত কাজ একসঙ্গে করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি এক এক করে তা করেছিলেন।

বাইবেল জানায়, যিহোবা “পৃথিবীর পরিমাণ নিরূপণ” করলেন, “চুঙ্গী সকল” আর “তাহার কোণের প্রস্তর” স্থাপন করলেন। (ইয়োব ৩৮:৫, ৬) তিনি সময় বের করে নিজের কাজ লক্ষও করলেন। (আদি. ১:১০, ১২) একটু চিন্তা করে দেখুন, যিহোবা যখন এক এক করে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করছিলেন, তখন স্বর্গদূতেরা তা দেখে কেমন অনুভব করেছিলেন! তারা নিশ্চয়ই আনন্দে “জয়ধ্বনি” করতে লাগলেন। (ইয়োব ৩৮:৭) এটা থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখি? পৃথিবী, সূর্য, চাঁদ, তারা ও প্রত্যেক জীবিত প্রাণী সৃষ্টি করার জন্য যিহোবার হাজার হাজার বছর লেগেছিল। কিন্তু, এত সময় দেওয়া উপকারজনক ছিল কারণ এই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করার পর যিহোবা যখন সেগুলো দেখেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, “অতি উত্তম।”—আদি. ১:৩১.

৮. এখন আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

বাইবেলে এমন অনেক নীতি রয়েছে, যেগুলো আমাদের ধৈর্য ধরতে শেখায়। এখন আমরা এমন দুটো পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করব, যে-পরিস্থিতিগুলোতে আমাদের অবশ্যই যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

কখন আমাদের যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে?

৯. কখন আমাদের হয়তো যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে?

আমাদের হয়তো প্রার্থনার উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। প্রায়ই, আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, যেন তিনি কোনো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের শক্তি দেন। কিংবা কোনো মন্দ অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য আমাদের সাহায্য করেন। কিন্তু, আমরা হয়তো আমাদের প্রার্থনার উত্তর সঙ্গেসঙ্গে পাই না। কেন এমনটা হয়?

১০. কেন আমাদের প্রার্থনার উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে?

১০ যিহোবা আমাদের প্রার্থনা মন দিয়ে শোনেন। (গীত. ৬৫:২) আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে, তাঁর উপর আমাদের কতটা বিশ্বাস রয়েছে। (ইব্রীয় ১১:৬) যিহোবা এও দেখতে চান, আমরা আমাদের প্রার্থনা অনুযায়ী কাজ করছি কি না। (১ যোহন ৩:২২) তাই, আমরা যখন প্রার্থনা করি, তিনি যেন কোনো মন্দ অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য আমাদের সাহায্য করেন, তখন আমাদের তরফ থেকে পরিশ্রম করতে হবে আর ধৈর্য ধরতে হবে। যিশুও বুঝিয়েছিলেন, আমাদের সমস্ত প্রার্থনার উত্তর আমরা সঙ্গেসঙ্গে না-ও পেতে পারি। তিনি বলেছিলেন: “চাইতে থাকো, তা হলে তোমাদের দেওয়া হবে; অন্বেষণ করতে থাকো, তা হলে তোমরা খুঁজে পাবে; দরজায় আঘাত করতে থাকো, তা হলে তোমাদের জন্য তা খুলে দেওয়া হবে; কারণ যারা চায়, তারা সবাই লাভ করবে, যারা অন্বেষণ করে, তারা সবাই খুঁজে পাবে আর যারা দরজায় আঘাত করে, তাদের সবার জন্য তা খুলে দেওয়া হবে।” (মথি ৭:৭, ৮) আমরা যদি যিশুর এই পরামর্শ কাজে লাগাই আর “অবিরত প্রার্থনা” করি, তা হলে আমরা আস্থা রাখতে পারি, যিহোবা আমাদের প্রার্থনা অবশ্যই শুনবেন এবং উত্তর দেবেন।—কল. ৪:২.

যতক্ষণ পর্যন্ত না যিহোবার সময় আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সম্পূর্ণ আস্থার সঙ্গে ক্রমাগত তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে হবে (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১১. প্রথম পিতর ৫:৬ পদ থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিতে দেরি করেন না?

১১ আমাদের মনে হতে পারে, আমাদের প্রার্থনার উত্তর পেতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু, এমনটা নয়। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি একেবারে “উপযুক্ত সময়ে” আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন। (পড়ুন, ১ পিতর ৫:৬.) তাই, আমাদের যিহোবাকে দোষ দেওয়া উচিত নয়। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা দীর্ঘসময় ধরে প্রার্থনা করছি যে, ঈশ্বরের রাজ্য আসুক আর এই দুষ্ট জগৎ শীঘ্র শেষ হয় যাক। যিশুও এই বিষয়ে প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। (মথি ৬:১০) কিন্তু, শেষ যদি সেই সময় না আসে, যে-সময় আসবে বলে আমরা চিন্তা করেছিলাম আর এই কারণে আমরা যদি যিহোবার উপর আমাদের বিশ্বাস দুর্বল হতে দিই, তা হলে এটা কতই-না বড়ো এক মূর্খতাপূর্ণ কাজ হবে! (হবক্‌. ২:৩; মথি ২৪:৪৪) বুদ্ধিমানের কাজ হল, যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করা আর সম্পূর্ণ আস্থার সঙ্গে প্রার্থনা করা। যিহোবা এই দুষ্ট জগতের শেষ নিয়ে আসার জন্য দেরি করবেন না। তিনি একটা ‘দিন এবং সময়’ নির্ধারণ করে রেখেছেন। সেই দিন আমাদের সবার জন্য একেবারে উপযুক্ত হবে।—মথি ২৪:৩৬; ২ পিতর ৩:১৫.

ধৈর্য ধরার ক্ষেত্রে আমরা যোষেফের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? (১২-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. ধৈর্য ধরা বিশেষভাবে কখন কঠিন হয়ে পড়ে?

১২আমাদের প্রতি যখন অবিচার করা হয়, তখন আমাদের হয়তো ধৈর্য ধরতে আর সেটা সহ্য করতে হবে। এই জগতে প্রায়ই সেই লোকদের প্রতি অবিচার করা হয়, যাদের লিঙ্গ, বর্ণ, জাতি, সংস্কৃতি ও দেশ ভিন্ন হয়ে থাকে। যারা প্রতিবন্ধী কিংবা মানসিকভাবে অসুস্থ, তাদের প্রতিও খারাপ আচরণ করা হয়ে থাকে। শুধু তা-ই নয়, অনেক যিহোবার সাক্ষির প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়ে থাকে কারণ তারা বাইবেলের উপর বিশ্বাস করে। যদি আমাদের প্রতি এইরকমটা হয়, তা হলে যিশুর এই কথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে, “যে-কেউ শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে, সে-ই রক্ষা পাবে।” (মথি ২৪:১৩) তবে, আপনি যদি জানতে পারেন, মণ্ডলীতে কেউ পাপ করেছে, তা হলে আপনি কী করবেন? যখন প্রাচীনেরা এই বিষয়টা জানতে পারেন, সেইসময় আপনি কি ধৈর্য ধরবেন আর এই আস্থা রাখবেন, তারা বিষয়টা ঈশ্বরের বাক্যে দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী সমাধান করবেন? প্রাচীনেরা বিষয়টা কীভাবে সমাধান করেন?

১৩. একজন ব্যক্তি যখন পাপ করেন, তখন প্রাচীনেরা বিষয়টা কীভাবে সমাধান করেন?

১৩ প্রাচীনেরা যখন জানতে পারেন যে, মণ্ডলীতে কেউ পাপ করেছে, তখন তারা “যে-প্রজ্ঞা স্বর্গ থেকে আসে,” সেটার জন্য প্রার্থনা করেন, যাতে তারা বিষয়টা সেভাবে দেখতে পারেন, যেভাবে যিহোবা দেখে থাকেন। (যাকোব ৩:১৭) তারা চান যেন অন্যায়কারী ব্যক্তি “ভুল পথ থেকে” ফিরে আসে। (যাকোব ৫:১৯, ২০) তারা মণ্ডলীকে সুরক্ষিত রাখতে চান এবং সেই ব্যক্তিদেরও সান্ত্বনা দিতে চান, যারা অন্যায়কারী ব্যক্তির কারণে দুঃখ পেয়েছে। (২ করি. ১:৩, ৪) বিষয়টা সমাধান করার জন্য প্রাচীনেরা সবচেয়ে প্রথমে খোঁজখবর নেন আর এটা জানার চেষ্টা করেন, প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল। এরজন্য সময় লাগে। এরপর, তারা প্রার্থনা করেন আর অন্যায়কারী ব্যক্তিকে বাইবেল থেকে পরামর্শ দেন। তারা তাকে শোধরানোর জন্য “বিচারানুরূপ শাস্তি” দেন। (যির. ৩০:১১) প্রাচীনেরা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন না, তবে তারা তাড়াহুড়োও করেন না। যখন বিষয়টা সঠিকভাবে সমাধান করা হয়ে থাকে, তখন এটা থেকে পুরো মণ্ডলী উপকৃত হয়। কিন্তু হতে পারে, যে-লোকেরা অন্যায়কারী ব্যক্তির কারণে দুঃখ পেয়েছে, তারা এখনও কষ্ট পাচ্ছে। আপনার প্রতি যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?

১৪. কেউ যদি আপনাকে দুঃখ দেয়, তা হলে কার উদাহরণ থেকে আপনি সান্ত্বনা লাভ করতে পারেন?

১৪ কোনো ভাই কিংবা বোন কি আপনাকে দুঃখ দিয়েছেন? যদি দিয়ে থাকেন, তা হলে বাইবেল থেকে আপনি সাহায্য পেতে পারেন। এটিতে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো থেকে আপনি শিখতে পারেন যে, আপনাকে যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যোষেফের উদাহরণ বিবেচনা করে দেখুন। যোষেফের ভাইয়েরা তার প্রতি খুবই খারাপ আচরণ করেছিল। কিন্তু, যোষেফ নিজের মধ্যে তিক্ততার অনুভূতি গড়ে তোলেননি। তিনি যিহোবার সেবা চালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ধৈর্য ধরেছিলেন আর এই কারণে যিহোবা তাকে আশীর্বাদ দিয়েছিলেন। (আদি. ৩৯:২১) সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যোষেফ তার ভাইদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন আর দেখেছিলেন, যিহোবা তাকে কোন কোন আশীর্বাদ দিয়েছেন। (আদি. ৪৫:৫) যোষেফের মতো আপনি যদি যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে শক্তিশালী করেন আর এই আস্থা রাখেন, তিনি সঠিক সময়ে ন্যায়বিচার অবশ্যই করবেন, তা হলে এটা থেকে আপনি অনেক সান্ত্বনা লাভ করবেন।—গীত. ৭:১৭; ৭৩:২৮.

১৫. কী একজন বোনকে অবিচার সহ্য করতে সাহায্য করেছিল?

১৫ আমাদের প্রতি হয়তো সেইরকম আচরণ করা হয় না, যেমনটা যোষেফের প্রতি করা হয়েছিল। কিন্তু, কোনো ভাই কিংবা বোন অথবা যিহোবার উপাসনা করে না এমন কোনো ব্যক্তি আমাদের প্রতি যখন খারাপ আচরণ করে, তখন আমরা খুব দুঃখ পাই। এইরকম ক্ষেত্রে বাইবেলের নীতিগুলো পালন করলে আমরা উপকৃত হতে পারি। (ফিলি. ২:৩, ৪) একজন বোনের উদাহরণ লক্ষ করুন। বোনের সঙ্গে কাজ করেন একজন মহিলা বোনের বিষয়ে মিথ্যা কথা ছড়ান। এটা শুনে বোন খুব দুঃখ পান। তবে, বোন দ্রুত রেগে যাননি। তিনি সময় নিয়ে যিশু সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করেন। যিশুকে যখন অপমান করা হচ্ছিল, তখন তিনি পালটা অন্যদের অপমান করেননি। (১ পিতর ২:২১, ২৩) তাই, বোন বিষয়টা বেশি বাড়তে দেননি। পরে বোন জানতে পারেন, সেই মহিলার কোনো গুরুতর অসুস্থতা রয়েছে। আর তাই, তিনি সবসময় দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকেন। বোন বুঝতে পারেন, হয়তো এই কারণে সেই মহিলার মুখ থেকে এইরকম কথা বের হয়ে গিয়েছিল। বোন খুশি হন যে, তিনি বিষয়টা বেশি বাড়তে দেননি বরং সব কিছু সহ্য করে গিয়েছেন।

১৬. আপনি যদি কোনো ধরনের অবিচার সহ্য করে থাকেন, তা হলে কোন বিষয়টা আপনাকে সান্ত্বনা দিতে পারে? (১ পিতর ৩:১২)

১৬ এমন যদি হয়, আপনি কোনো ধরনের অবিচার সহ্য করছেন কিংবা অন্য কোনো কারণে দুঃখের মধ্যে রয়েছেন, তা হলে মনে রাখবেন, যিহোবা “ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী।” (গীত. ৩৪:১৮) তিনি আপনাকে ভালোবাসেন আর চান যেন আপনি ধৈর্য ধরেন এবং আপনার সমস্ত বোঝা তাঁর উপর ফেলে দেন। (গীত. ৫৫:২২) যিহোবা হলেন এই পৃথিবীর বিচারক আর তাঁর দৃষ্টিতে কোনো কিছুই গোপন থাকে না। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:১২.) আপনি যদি এইরকম কোনো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যান, যেটা পরিবর্তন করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, তা হলে আপনি কি যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করবেন?

যারা যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করে, তারা প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করবে

১৭. যিশাইয় ৩০:১৮ পদে যিহোবা কী প্রতিজ্ঞা করেছেন?

১৭ আমাদের স্বর্গীয় পিতা খুব শীঘ্রই তাঁর রাজ্য আনবেন আর আমাদের প্রচুর আশীর্বাদ দেবেন। যিশাইয় ৩০:১৮ পদ জানায়: “আর সেই জন্য সদাপ্রভু তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করিবার আকাঙ্ক্ষায় অপেক্ষা করিবেন, আর সেই জন্য তোমাদের প্রতি করুণা করিবার আকাঙ্ক্ষায় ঊর্দ্ধ্বে থাকিবেন; কেননা সদাপ্রভু ন্যায়বিচারের ঈশ্বর; ধন্য তাহারা সকলে, যাহারা তাঁহার অপেক্ষা করে।” যারা যিহোবার উপর প্রত্যাশা রাখে, তারা বর্তমানে প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করে আর নতুন জগতেও আশীর্বাদ লাভ করবে।

১৮. ভবিষ্যতে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করব?

১৮ যখন নতুন জগৎ আসবে, তখন আমাদের সেই সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হবে না, যেগুলোর মুখোমুখি আজকে আমরা হই। সমস্ত ধরনের অবিচার ও কষ্ট চিরকালের জন্য শেষ করে দেওয়া হবে। (প্রকা. ২১:৪) সমস্ত কিছু সেখানে প্রচুর পরিমাণে থাকবে, তাই আমাদের কোনো বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না। (গীত. ৭২:১৬; যিশা. ৫৪:১৩) সত্যিই, এটা কতই-না অপূর্ব এক আশীর্বাদ হবে!

১৯. যিহোবা কীসের জন্য আমাদের প্রস্তুত করছেন?

১৯ বর্তমানে, যিহোবা আমাদের মন্দ অভ্যাস ত্যাগ করতে এবং উত্তম গুণগুলো গড়ে তুলতে সাহায্য করছেন, যাতে তাঁর রাজ্য যখন আসবে, তখন আমরা যেন সেখানে বেঁচে থাকতে পারি। সেই সময় না আসা পর্যন্ত আমরা যেন হাল ছেড়ে না দিই বরং যিহোবার সেবা করে চলি। শীঘ্রই, আমরা এক সর্বোত্তম জীবন লাভ করতে চলেছি! তাই আসুন, আমরা ধৈর্য ধরি আর সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করি, যখন যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন।

গান ৫৪ আমাদের বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন

^ অনু. 5 আপনি কি কখনো দীর্ঘসময় ধরে যিহোবার সেবা করছেন এমন কোনো ভাই কিংবা বোনকে এইরকমটা বলতে শুনেছেন, “আমি কখনো চিন্তা করিনি, এই জগৎ এত সময় ধরে টিকে থাকবে।” আমরা সবাই চাই, এই দুষ্ট জগৎ যেন ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা শিখব, বাইবেলের কোন নীতিগুলো ধৈর্য ধরার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া, আমরা এমন দুটো পরিস্থিতি সম্বন্ধে দেখব, যে-পরিস্থিতিগুলোতে আমাদের যিহোবার সময়ের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। পরিশেষে আমরা আলোচনা করব, যারা ধৈর্য ধরে, তারা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করবে।

^ অনু. 56 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: বোন ছোটোবেলা থেকে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে আসছেন। তিনি যখন ছোটো ছিলেন, তখন তার বাবা-মা তাকে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। যখন বোন বড়ো হয়ে ওঠেন, তখন তিনি অগ্রগামী সেবা করতে শুরু করেন। তিনি সবসময় যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতেন, যেন যিহোবা তার এই সেবায় তাকে আশীর্বাদ দেন। কয়েক বছর পর, তার স্বামী গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বোন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন, যেন যিহোবা তাকে সেই কঠিন পরিস্থিতি সহ্য করার শক্তি দেন। বর্তমানে, তিনি একজন বিধবা আর তিনি এখনও যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন। তিনি নিশ্চিত যে, যিহোবা সব সময়ের মতো বর্তমানেও তার প্রার্থনার উত্তর দেবেন।