সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৬

কমবয়সি ভাই-বোনদের মূল্যবান বলে মনে করুন

কমবয়সি ভাই-বোনদের মূল্যবান বলে মনে করুন

“যুবকদের বলই তাহাদের শোভা।”—হিতো. ২০:২৯.

গান ১১ যিহোবার চিত্তকে আনন্দিত করা

সারাংশ *

১. বয়স্ক ভাই-বোনেরা কী করতে পারে?

আমাদের যখন বয়স বাড়তে থাকে, তখন আমাদের মনে হতে পারে, আমরা লোকদের সেবা করার জন্য বেশি কিছু করতে পারছি না, আমরা কোনো কাজের নই। যদিও আমাদের শক্তি কম হয়ে যায়, তারপরও আমাদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। এগুলো আমরা কমবয়সিদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি, যাতে তারা যিহোবার সেবায় আরও বেশি করতে পারে এবং নতুন দায়িত্বগুলো পালন করতে পারে। একজন বয়স্ক প্রাচীন বলেছিলেন, “আমি যিহোবার সেবায় এখন বেশি কিছু করতে পারছি না, কিন্তু এমন অনেক যোগ্য কমবয়সি ভাই রয়েছে, যারা মণ্ডলীর দায়িত্বগুলো পালন করতে পারে। এটা দেখে আমি অনেক খুশি হই।”

২. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানব?

আগের প্রবন্ধে আমরা জেনেছি যে, যখন কমবয়সি ভাই-বোনেরা বয়স্কদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, তখন তারা কীভাবে উপকৃত হয়। বয়স্ক ভাই-বোনদেরও কমবয়সিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত। এমনটা করার জন্য বয়স্ক ভাই-বোনদের নম্র হতে হবে, বিনয়ী হতে হবে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে আর উদার হতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা জানব, তারা এই গুণগুলো কীভাবে গড়ে তুলতে করতে পারে।

নম্র হোন

৩. (ক) ফিলিপীয় ২:৩, ৪ পদ অনুযায়ী নম্র হওয়ার অর্থ কী? (খ) একজন নম্র খ্রিস্টান কী করতে পারবেন?

বয়স্ক ভাই-বোনেরা যদি কমবয়সিদের সাহায্য করতে চায়, তা হলে তাদের নম্র হতে হবে। একজন নম্র ব্যক্তি নিজের চেয়ে অন্যদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন। (পড়ুন, ফিলিপীয় ২:৩, ৪.) যে-বয়স্ক ব্যক্তিরা নম্র হয়, তারা জানে, কোনো কাজ করার বিভিন্ন উপায় থাকতে পারে। তাই, তারা এমনটা আশা করে না যে, প্রত্যেকে সেই কাজ সেই উপায়েই করবে, যেভাবে তারা করে এসেছে। (উপ. ৭:১০) বয়স্ক ব্যক্তিদের জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা থাকে, যেগুলোর মাধ্যমে তারা কমবয়সিদের সাহায্য করতে পারে। তবে, তারা এও জানে, “এই জগতের দৃশ্যপট পরিবর্তন হচ্ছে।” তাই, তাদেরও হয়তো নিজেদের কাজ করার উপায় পরিবর্তন করতে হবে।—১ করি. ৭:৩১.

বয়স্ক ভাই-বোনেরা অন্যদের নিজেদের অভিজ্ঞতা বলার মাধ্যমে উদারতা দেখায় (৪-৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৪. কীভাবে সীমা অধ্যক্ষেরা লেবীয়দের মতো উদ্যোগ দেখান?

যে-বয়স্ক ভাই-বোনেরা নম্র হয়, তারা এটা স্বীকার করে যে, এখন তারা আগের মতো আর কাজ করতে পারবে না। তাই, তাদের যে-কার্যভারগুলো দেওয়া হয়, সেগুলো তারা আনন্দ সহকারে করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের সীমা অধ্যক্ষদের সম্বন্ধে বিবেচনা করে দেখুন। যখন তাদের বয়স ৭০ বছর হয়ে যায়, তখন তাদের একটা নতুন কার্যভার দেওয়া হয়। এই পরিবর্তন তাদের জন্য অনেক কঠিন হতে পারে। কারণ তারা অনেক বছর ধরে সীমার কাজ করে আসছেন। তারা নিজেদের কাজকে অনেক ভালোবাসতেন আর তারা এখনও ভাই-বোনদের সাহায্য করতে চান। কিন্তু তারা বোঝেন, এখন কমবয়সি ভাইদের সীমা অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে তারা অতীতের লেবীয়দের মতো উদ্যোগ দেখিয়ে থাকেন, যারা শুধুমাত্র ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত আবাসে সেবা করতে পারত। এরপর, সেই লেবীয়দের দায়িত্ব ছিল, কমবয়সিদের সাহায্য করা। (গণনা. ৮:২৫, ২৬) লেবীয়েরা এই দায়িত্ব আনন্দ সহকারে পালন করত। একইভাবে, যে-ভাইয়েরা সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেছেন, এখন তারা আলাদা আলাদা মণ্ডলীর পরিদর্শন করেন না। কিন্তু, তারা যে-মণ্ডলীতে সেবা করেন, সেখানকার ভাই-বোনদের সাহায্য করে থাকেন।

৫. আপনি ভাই ড্যান ও বোন কেটির কাছ থেকে কী শিখতে পারেন?

ভাই ড্যানের উদাহরণ লক্ষ করুন, যিনি ২৩ বছর ধরে একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করেছিলেন। তার বয়স যখন ৭০ বছর হয়, তখন তাকে ও তার স্ত্রী কেটিকে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। কীভাবে তারা নিজেদের নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিলেন? ভাই ড্যান বলেন, এখন তিনি আগের চেয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত রয়েছেন। তার কাছে মণ্ডলীর বিভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে। তিনি ভাইদের সাহায্য করেন, যাতে তারা পরিচারক দাস হয়ে উঠতে পারে। তিনি প্রকাশকদের জেলে প্রচার করতে ও সেইসঙ্গে যেখানেই লোকদের সঙ্গে দেখা হয়, সেখানেই তাদের কাছে সাক্ষ্য দিতে শেখান। আপনি ভাই ড্যান ও বোন কেটির কাছ থেকে কী শিখতে পারেন? আপনি পূর্ণসময়ের সেবা করুন বা না-ই করুন, আপনি অন্যদের অনেক সাহায্য করতে পারেন। আপনার নতুন পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নিন এবং নতুন লক্ষ্য রাখুন। আর যে-কাজগুলো করতে পারবেন না, সেগুলোর উপর নয় বরং যেগুলো করতে পারবেন, সেগুলোর উপর মনোযোগ দিন।

বিনয়ী হোন

৬. একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, কেন আমাদের বিনয়ী হতে হবে।

যে-ব্যক্তি বিনয়ী হন, তিনি নিজের সীমাবদ্ধতা বোঝেন আর শুধুমাত্র ততটা করেন, যতটা তিনি করতে পারেন। (হিতো. ১১:২) এমনটা করার মাধ্যমে তিনি আনন্দিত থাকেন আর কাজ করে যেতে পারেন। ধরুন, একজন ব্যক্তি খাড়া রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছেন। উপরে ওঠার জন্য তাকে গাড়ির গিয়ার কমাতে হবে। যদিও গাড়ির গতি কম হয়ে যাবে, কিন্তু তিনি এগিয়ে যেতে পারবেন। একইভাবে, একজন বিনয়ী ব্যক্তি জানেন যে, কখন তাকে আগের তুলনায় কম কাজ করতে হবে, যাতে তিনি যিহোবার সেবা করে যেতে পারেন আর অন্যদেরও সাহায্য করতে পারেন।—ফিলি. ৪:৫.

৭. কীভাবে বর্সিল্লয় বিনয়ী মনোভাব দেখিয়েছিলেন?

বর্সিল্লয়ের উদাহরণ লক্ষ করুন। তার বয়স যখন ৮০ বছর, তখন রাজা দায়ূদ তাকে রাজসভার মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, বর্সিল্লয় জানতেন যে, তার বয়স হয়ে গিয়েছে আর এখন তিনি বেশি কিছু করতে পারবেন না। তাই, তিনি রাজাকে বারণ করে দিয়েছিলেন এবং নিজের জায়গায় তার চেয়ে কমবয়সি কিম্‌হমকে পাঠিয়েছিলেন। (২ শমূ. ১৯:৩৫-৩৭) বর্তমানেও, বয়স্ক ভাইয়েরা কমবয়সি ভাইদের দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে সুযোগ দিয়ে থাকেন।

যিহোবা যখন দায়ূদকে বলেছিলেন, তার ছেলে শলোমন মন্দির নির্মাণ করবেন, তখন দায়ূদ যিহোবার কথা শুনেছিলেন (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৮. কীভাবে রাজা দায়ূদ বিনয়ী মনোভাব দেখিয়েছিলেন?

রাজা দায়ূদও বিনয়ী মনোভাব দেখানোর ক্ষেত্রে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। তিনি যিহোবার জন্য মন্দির নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, যিহোবা যখন তাকে বলেছিলেন, তার ছেলে শলোমন মন্দির নির্মাণ করবেন, তখন দায়ূদ যিহোবার কথা শুনেছিলেন এবং মন্দিরের জন্য প্রচুর দ্রব্যের আয়োজন করেছিলেন। (১ বংশা. ১৭:৪; ২২:৫) দায়ূদ এমনটা চিন্তা করেননি, তিনি শলোমনের চেয়ে ভালো কাজ করতে পারবেন কারণ শলোমন “এখনও অল্পবয়স্ক ও কোমল” অর্থাৎ তার বয়স বেশি নয় এবং অভিজ্ঞতাও কম। (১ বংশা. ২৯:১) দায়ূদ জানতেন, মন্দির নির্মাণ করার জন্য বয়স কিংবা অভিজ্ঞতা নয় বরং যিহোবার আশীর্বাদ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে, বয়স্ক ভাই-বোনেরা যখন নতুন কোনো কার্যভার লাভ করে, তখন তারা সেটা মনপ্রাণ দিয়ে করে থাকে। তারা জানে যে, যিহোবা সেই কমবয়সিদেরও আশীর্বাদ দেবেন, যারা এখন তাদের কাজগুলো সামলাচ্ছে।

৯. কীভাবে ভাই শিগেও বিনয়ী মনোভাব দেখিয়েছিলেন?

শিগেও নামে একজন ভাইয়ের উদাহরণ লক্ষ করুন। তিনিও বিনয়ী মনোভাব দেখিয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালে, তাকে শাখা কমিটি-র একজন সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করা হয় আর তখন তার বয়স ছিল ৩০ বছর। ২০০৪ সালে তাকে শাখা কমিটির কোঅর্ডিনেটর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। কিছু বছর পর, তিনি বুঝতে পারেন, তার বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তিনি এখন ততটা ভালোভাবে কাজ করতে পারছেন না, যতটা আগে করতে পারতেন। তিনি প্রার্থনা করেন আর চিন্তা করেন, যদি একজন কমবয়সি ভাই সেই দায়িত্বগুলো পালন করে, তা হলে খুব ভালো হবে। যদিও ভাই শিগেও বর্তমানে শাখা কমিটির কোঅর্ডিনেটর নন, তবে তিনি শাখা কমিটি-র সদস্য হিসেবে সেবা করছেন। আমরা যেমন বর্সিল্লয়, রাজা দায়ূদ ও ভাই শিগেওর উদাহরণ থেকে শিখলাম, যে-ব্যক্তি নম্র ও বিনয়ী হন, তিনি কমবয়সিদের কম অভিজ্ঞতার উপর নয় বরং তাদের ক্ষমতার উপর মনোযোগ দেন। তিনি এইরকম চিন্তা করে ভয় পাবেন না যে, কমবয়সি ভাইয়েরা তার দায়িত্বগুলো কেড়ে নিতে চায়। এর পরিবর্তে, তিনি এটা বুঝবেন, তারা তাকে সাহায্য করতে চায়।—হিতো. ২০:২৯.

কৃতজ্ঞ হোন

১০. বয়স্ক ভাই-বোনেরা কমবয়সিদের কীভাবে দেখে থাকে?

১০ বয়স্ক ভাই-বোনেরা কমবয়সিদের যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক উপহার হিসেবে দেখে থাকে। যখন মণ্ডলীর কমবয়সি ভাই-বোনেরা যিহোবার সেবায় নিজেদের শক্তি ব্যয় করে, তখন এটা দেখে বয়স্ক ভাই-বোনেরা খুশি হয় আর তাদের প্রতি কৃতজ্ঞও হয়।

১১. রূতের বিবরণ ৪:১৩-১৬ পদ থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, কমবয়সিদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার মাধ্যমে বয়স্ক ব্যক্তিরা আশীর্বাদ লাভ করে?

১১ যখন কমবয়সি ভাই-বোনেরা বয়স্ক ভাই-বোনদের সাহায্য করতে চায়, তখন বয়স্ক ভাই-বোনদের তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত এবং তাদের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া উচিত। নয়মী এই ব্যাপারে এক উত্তম উদাহরণ রেখেছেন। যখন নয়মীর ছেলে মারা যায়, তখন তিনি তার বউমা রূৎকে বলেন, তিনি যেন নিজের মায়ের কাছে ফিরে যান। কিন্তু, রূৎ ফিরে যেতে চাননি। রূৎ বলেন, তিনি নয়মীর সঙ্গে বেথলেহেমে যাবেন। নয়মী তাতে রাজি হন। (রূৎ. ১:৭, ৮, ১৮) রূতের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে তারা দু-জনেই আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। (পড়ুন, রূতের বিবরণ ৪:১৩-১৬.) বয়স্ক ব্যক্তিরা যদি নয়মীর মতো নম্র হয়, তা হলে তারা কমবয়সি ভাই-বোনদের কাছ থেকে সাহায্য নেবে।

১২. কীভাবে প্রেরিত পৌল ভাই-বোনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন?

১২ প্রেরিত পৌল সেই ভাই-বোনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন, যারা তাকে সাহায্য করেছিল। যখন ফিলিপীর ভাই-বোনেরা তাকে প্রয়োজনীয় বিষয় পাঠিয়েছিল, তখন তিনি তাদের ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। (ফিলি. ৪:১৬) পৌল তীমথিয়কেও ধন্যবাদ দিয়েছিলেন কারণ তীমথিয় তাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। (ফিলি. ২:১৯-২২) পৌলকে যখন বন্দি করে রোমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আর রাস্তায় ভাই-বোনেরা তাকে উৎসাহিত করতে এসেছিল, তখন তিনি যিহোবাকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ২৮:১৫) পৌল খুবই উদ্যোগী ছিলেন এবং আলাদা আলাদা জায়গায় গিয়ে প্রচার করেছিলেন আর বিভিন্ন মণ্ডলীকে উৎসাহিত করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি গর্বিত হননি। যখনই ভাই-বোনেরা তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল, তখনই তিনি তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছিলেন।

১৩. কীভাবে বয়স্ক ব্যক্তিরা কমবয়সিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে?

১৩ বয়স্ক ব্যক্তিরা, আপনারা বিভিন্ন উপায়ে কমবয়সিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন। কমবয়সিরা যদি কোথাও আসা-যাওয়ার এবং কেনাকাটা করার জন্য কিংবা অন্য কোনো উপায়ে আপনাদের সাহায্য করতে চায়, তা হলে তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিন। তাদের বারণ করবেন না কারণ তাদের মাধ্যমে যিহোবা আপনাদের প্রতি তাঁর প্রেম প্রকাশ করছেন। তাদের সঙ্গে আপনাদের হয়তো ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে। সবসময় তাদের যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করুন। তাদের বলুন যে, অন্যদের সাহায্য করার জন্য তারা যে-পরিশ্রম করছে, সেটা দেখে আপনারা অনেক খুশি। তাদের সঙ্গে সময় কাটান আর আপনাদের জীবনের অভিজ্ঞতা তাদের বলুন। এই সমস্ত কিছু করার মাধ্যমে আপনারা দেখাবেন, যিহোবার প্রতি আপনারা কতটা “কৃতজ্ঞ,” যিনি মণ্ডলীতে এইরকম কমবয়সি ভাই-বোনদের দিয়েছেন।—কল. ৩:১৫; যোহন ৬:৪৪; ১ থিষল. ৫:১৮.

উদার হোন

১৪. কীভাবে দায়ূদ উদারতা দেখিয়েছিলেন?

১৪ দায়ূদের কাছ থেকে আমরা আরেকটা গুণের বিষয়ে শিখতে পারি আর সেটা হল, উদার হওয়া। মন্দির নির্মাণের জন্য দায়ূদ নিজস্ব ধনসম্পদ থেকে অনেক অর্থ ও মূল্যবান বিষয় দান করেছিলেন। (১ বংশা. ২২:১১-১৬; ২৯:৩, ৪) তিনি জানতেন যে, যদিও লোকেরা এই মন্দিরকে শলোমনের মন্দির বলে জানবে, তা সত্ত্বেও তিনি এই নির্মাণ কাজে সাহায্য করেছিলেন। যখন বয়স্ক ভাই-বোনদের নির্মাণ প্রকল্পে অংশ নেওয়ার শক্তি থাকে না, তখন তারা নিজেদের পরিস্থিতি অনুযায়ী দান দেওয়ার মাধ্যমে নির্মাণ প্রকল্পে সাহায্য করতে পারে। তারা আরেকটা উপায়ে উদার হতে পারে আর সেটা হল, তাদের বহু বছরের অভিজ্ঞতা থেকে কমবয়সিদের শেখানোর মাধ্যমে।

১৫. কীভাবে আমরা বলতে পারি, পৌল একজন উদার ব্যক্তি ছিলেন?

১৫ পৌলও একজন উদার ব্যক্তি ছিলেন। মিশনারি হিসেবে কাজ করার সময়ে তিনি তীমথিয়কে নিজের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তীমথিয়কে একজন উত্তম প্রচারক ও শিক্ষক হতে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৬:১-৩; ১ করি. ৪:১৭) তীমথিয় পৌলের কাছ থেকে যা-কিছু শিখেছিলেন, সেগুলো তিনি আবার অন্যদের শিখিয়েছিলেন।

১৬. কেন ভাই শিগেও কমবয়সি ভাইদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন?

১৬ বয়স্ক ভাইয়েরা এমনটা মনে করে না যে, কমবয়সিদের প্রশিক্ষণ দিলে সংগঠনে তাদের আর কোনো কাজ থাকবে না। ভাই শিগেওর উদাহরণ লক্ষ করুন, যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছিল। তিনি শাখা কমিটি-র কমবয়সি ভাইদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। তিনি এমনটা এইজন্য করেছিলেন, যাতে সেই দেশে প্রচার কাজ ভালোভাবে হতে পারে। যখন সময় এসেছিল, তখন ভাই শিগেওর জায়গায় সেই শাখা কমিটি-র কমবয়সি ভাইদের মধ্যে একজন ভাইকে কোঅর্ডিনেটর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। ভাই শিগেও ৪৫ বছর ধরে শাখা কমিটি-র সদস্য হিসেবে সেবা করছেন আর তিনি বর্তমানেও কমবয়সি ভাইদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন। সত্যিই, এমন ভাইদের কাছ থেকে অন্যেরা অনেক সাহায্য লাভ করে!

১৭. বয়স্ক ভাই-বোনেরা লূক ৬:৩৮ পদে দেওয়া পরামর্শ কীভাবে কাজে লাগাতে পারে?

১৭ বয়স্ক ভাই ও বোনেরা, বিশ্বাস সহকারে যিহোবার সেবা করাই যে সবচেয়ে উত্তম জীবন, সেটার জীবন্ত প্রমাণ হলেন আপনারা। আপনাদের জীবনধারা থেকে এই বিষয়টা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, বাইবেলের নীতিগুলো শিখলে এবং সেগুলো কাজে লাগালে আমরাই উপকৃত হব। আপনারা জানেন, অতীতে কোনো একটা কাজ কীভাবে করা হত, কিন্তু পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনারা নতুন নতুন উপায়ে কাজ করতে শিখেছেন। আপনি যদি সম্প্রতি বাপ্তিস্ম নিয়ে থাকেন, তা হলেও আপনি কমবয়সিদের সাহায্য করতে পারেন। আপনি তাদের বলতে পারেন, এই বয়সেও যিহোবা সম্বন্ধে শিখে আপনি কতটা খুশি হয়েছেন। বয়স্ক ব্যক্তিরা, আপনাদের অভিজ্ঞতা শুনে কমবয়সিদের অনেক ভালো লাগবে আর আপনারাও যিহোবার কাছ থেকে অনেক আশীর্বাদ লাভ করবেন।—পড়ুন, লূক ৬:৩৮.

১৮. বয়স্ক ব্যক্তিরা ও কমবয়সিরা যখন একসঙ্গে মিলে কাজ করে, তখন কী হয়?

১৮ যখন বয়স্ক ব্যক্তি ও কমবয়সিদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, তখন তারা একে অপরকে সাহায্য করতে পারে। (রোমীয় ১:১২) উভয় বয়সের ব্যক্তিদেরই মূল্য রয়েছে। বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছে প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে আর কমবয়সিদের কাছে শক্তি রয়েছে। বয়স্ক ব্যক্তিরা ও কমবয়সিরা যখন একসঙ্গে মিলে কাজ করে, তখন ঈশ্বরের গৌরব হয় আর মণ্ডলীর একতা বজায় থাকে।

গান ৫৩ একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা

^ অনু. 5 এই বিষয়ে আমরা খুব খুশি যে, যিহোবার সংগঠনে এমন অনেক কমবয়সি ভাই-বোন রয়েছে, যারা অনেক পরিশ্রম করে। বয়স্ক ভাই-বোনেরা যেকোনো জায়গার কিংবা সংস্কৃতির হোক না কেন, তারা অপেক্ষাকৃত কমবয়সিদের সাহায্য করতে পারে। এর ফলে, কমবয়সি ভাই-বোনেরা যিহোবার সেবায় নিজেদের সম্পূর্ণ শক্তি ব্যয় করতে পারবে।

^ অনু. 55 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন সীমা অধ্যক্ষের বয়স ৭০ বছর হয়ে গিয়েছে। এখন তিনি ও তার স্ত্রী এক নতুন কার্যভার পেয়েছেন। তারা যে-মণ্ডলীতে রয়েছেন, সেখানে নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে অন্য ভাই-বোনদের প্রশিক্ষণ দিতে পারছেন।