সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৩

হাল ছেড়ে দেবেন না!

হাল ছেড়ে দেবেন না!

“এসো, আমরা উত্তম কাজ করার ব্যাপারে হাল ছেড়ে না দিই।”—গালা. ৬:৯.

গান ৪৪ শস্যচ্ছেদনের কাজে আনন্দের সঙ্গে অংশ নেওয়া

সারাংশ *

১. (ক) আমরা কোন বিশেষ সুযোগ লাভ করেছি? (খ) আর কোন কাজে আমরা আনন্দিত হই?

আমরা একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ার এক বিশেষ সুযোগ লাভ করেছি। আর সাক্ষি হওয়ায় আমরা লোকদের কাছে ঈশ্বর সম্বন্ধে প্রচার করি। যখনই আমরা এমন কোনো ব্যক্তিকে শিষ্য হওয়ার জন্য সাহায্য করি, যার “অনন্তজীবন লাভ করার জন্য সঠিক মনোভাব” রয়েছে, তখন আমরা খুব আনন্দিত হই, ঠিক যেমনটা যিশু হয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৩:৪৮) যিশুর শিষ্যেরা যখন তাঁকে বলেছিলেন, প্রচার কাজে তারা কত ভালো ফলাফল লাভ করেছে, তখন তিনি “পবিত্র শক্তিতে উল্লসিত” হয়েছিলেন।—লূক ১০:১, ১৭, ২১.

২. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা পরিচর্যাকে হালকাভাবে নিই না?

প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন: “তোমার নিজের বিষয়ে এবং তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান থাকো। . . . তা করার মাধ্যমে তুমি নিজেকে এবং যারা তোমার শিক্ষার প্রতি মনোযোগ দেয়, তাদের রক্ষা করবে।” (১ তীম. ৪:১৬) আমাদের পরিচর্যাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় কারণ লোকদের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। আমরা ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা, তাই ‘নিজেদের বিষয়ে সাবধান’ থাকা উচিত। আমাদের সবসময় এমন কাজ করা উচিত যেন সেটা যিহোবার গৌরব নিয়ে আসে। আর এমনভাবে জীবনযাপন করা উচিত, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, আমরা যা প্রচার করি, সেটা বিশ্বাসও করি। (ফিলি. ১:২৭) আমাদের ‘নিজেদের শিক্ষার বিষয়েও সাবধান’ থাকা উচিত। কীভাবে? প্রচারে যাওয়ার আগে আমাদের ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত এবং প্রার্থনা করার মাধ্যমে যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া উচিত।

৩. সমস্ত লোক কি সত্যের প্রতি আগ্রহ দেখাবে? একটা উদাহরণ দিন।

কখনো কখনো এমনটা হয় যে, আমরা অনেক পরিশ্রম করি, তা সত্ত্বেও আমাদের এলাকায় কেউই সত্যের প্রতি আগ্রহ দেখায় না। ভাই গেয়র্গ লিন্ডালের উদাহরণ বিবেচনা করুন। তিনি ১৯২৯ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আইসল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় একা প্রচার করেছিলেন। তিনি হাজার হাজার প্রকাশনা অর্পণ করেছিলেন, কিন্তু এক জন ব্যক্তিও সত্যের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। ভাই বলেন: “কিছু লোক সত্যের বিরোধিতা করত। কিন্তু, বেশিরভাগ লোক সত্যের প্রতি কোনো আগ্রহ দেখাত না।” পরে, কিছু মিশনারিকে সেখানে পাঠানো হয়। তারাও অনেক বছর ধরে সেখানে প্রচার করেন, কিন্তু কেউই বাপ্তিস্ম নেয়নি। নয় বছর পর, কিছু লোক যিহোবার সাক্ষি হয়।

৪. লোকেরা যখন সত্যের প্রতি ভালোভাবে সাড়া দেয় না, তখন আমরা হয়তো কেমন অনুভব করি?

পৌলের উদাহরণের উপর একটু মনোযোগ দিন। যখন বেশিরভাগ যিহুদি যিশুকে প্রতিজ্ঞাত মশীহ হিসেবে গ্রহণ করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন পৌল বলেছিলেন: “আমার হৃদয়ে গভীর দুঃখ ও কষ্ট রয়েছে।” (রোমীয় ৯:১-৩) প্রচার করার সময় লোকেরা যখন আমাদের কথা শোনে না, তখন আমাদেরও ঠিক এইরকমটা মনে হতে পারে। কিংবা আমাদের সেইসময় এইরকমটা মনে হতে পারে, যখন আমরা আমাদের ছাত্রকে শেখানোর জন্য অনেক পরিশ্রম করি এবং তার জন্য প্রার্থনা করি, কিন্তু তারপরও সে নিজের মধ্যে কোনোরকম পরিবর্তন করে না। ফলে, আমাদের তার অধ্যয়ন বন্ধ করতে হয়। অথবা সেইসময়ও, যখন আমাদের কোনো ছাত্র বাপ্তিস্ম নেয় না। এইরকম ক্ষেত্রে আমাদের কি এমনটা চিন্তা করা উচিত যে, আমরা আমাদের পরিচর্যায় ব্যর্থ হয়েছি এবং যিহোবা আমাদের কাজে খুশি নন? এই প্রবন্ধে আমরা দুটো প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব: (১) কোন বিষয়গুলো আমাদের পরিচর্যাকে সফল করে তোলে? (২) প্রচার করার সময় কোন বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখা উচিত?

কোন বিষয়গুলো আমাদের পরিচর্যাকে সফল করে তোলে?

৫. কেন প্রতি বার বিষয়গুলো ঠিক সেভাবেই হয় না, যেভাবে আমরা আশা করে থাকি?

বাইবেলে লেখা রয়েছে, যে-ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে “যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য” বা সফল “হয়।” (গীত. ১:৩) কিন্তু, এর অর্থ এই নয় যে, প্রতি বার বিষয়গুলো ঠিক সেভাবেই হবে, যেভাবে আমরা আশা করে থাকি। আমরা অসিদ্ধ এবং আমাদের জীবন “উদ্বেগে পরিপূর্ণ।” এই কারণে আমরা হয়তো যিহোবার সেবায় ততটা করতে পারি না, যতটা আমরা করতে চাই। (ইয়োব ১৪:১) শুধু তা-ই নয়, বিরোধীরাও আমাদের প্রচার কাজে বাধা দেওয়ার অনেক চেষ্টা করে। (১ করি. ১৬:৯; ১ থিষল. ২:১৮) তাই আসুন, আমরা দেখি যে, যিহোবার দৃষ্টিতে কোন বিষয়গুলো আমাদের সফল করে তোলে।

আমরা ঘরে ঘরে প্রচার করি অথবা ফোন কিংবা চিঠির মাধ্যমে প্রচার করি, যিহোবা আমাদের পরিশ্রমকে মূল্য দেন (৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৬. যিহোবার দৃষ্টিতে আমরা কখন সফল হই?

যিহোবা আমাদের পরিশ্রম ও নিষ্ঠার উপর মনোযোগ দেন। তিনি দেখেন যে, আমরা তাঁকে কতটা ভালোবাসি আর আমরা তাঁর সেবা করার জন্য কতটা পরিশ্রম করছি। তাই, যদিও লোকেরা আমাদের বার্তার প্রতি মনোযোগ দেয় না, তারপরও তাঁর দৃষ্টিতে আমরা সফল। পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নন; তোমরা পবিত্র ব্যক্তিদের যে-সেবা করেছ এবং এখনও করে চলছ আর এভাবে তোমরা যে-কাজ করেছ এবং তাঁর নামের প্রতি যে-প্রেম দেখিয়েছ, তা তিনি ভুলে যাবেন না।” (ইব্রীয় ৬:১০) আমাদের বাইবেল ছাত্র বাপ্তিস্ম না নিলেও যিহোবা আমাদের প্রচেষ্টা ভুলে যাবেন না। হতে পারে, আমরা আমাদের পরিশ্রমের উত্তম ফলাফল পাই না। কিন্তু, আমরা পৌলের এই কথাগুলো মনে রাখতে পারি: “প্রভুর জন্য তোমরা যে-পরিশ্রম করে থাক, তা নিষ্ফল নয়।”—১ করি. ১৫:৫৮.

৭. প্রেরিত পৌল যা বলেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

প্রেরিত পৌল একজন মিশনারি ছিলেন। তিনি অনেক নগরে নতুন নতুন মণ্ডলী গঠন করেছিলেন। কিন্তু, কিছু লোক যখন তার উপর অভিযোগ নিয়ে এসেছিল যে, তিনি একজন উত্তম শিক্ষক নন, তখন তিনি উত্তরে এইরকম বলেননি, তিনি কত জন লোককে খ্রিস্টান হতে সাহায্য করেছেন। এর পরিবর্তে, তিনি বলেছিলেন: “আমি আরও বেশি কাজ করেছি।” (২ করি. ১১:২৩) আমাদেরও মনে রাখা উচিত, যিহোবার কাছে আমাদের পরিশ্রম ও নিষ্ঠা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

৮. আমাদের কোন বিষয়টা মনে রাখা উচিত?

আমাদের পরিচর্যা যিহোবাকে খুশি করে। যিশু যখন তাঁর ৭০ জন শিষ্যকে প্রচার করতে পাঠিয়েছিলেন, তখন তারা “আনন্দের সঙ্গে ফিরে” এসেছিল। তারা বলেছিল: “প্রভু, আপনার নামে এমনকী মন্দ স্বর্গদূতেরাও আমাদের বশীভূত হয়।” কিন্তু, যিশু তাদের চিন্তাভাবনা সংশোধন করেছিলেন আর বলেছিলেন: “মন্দ স্বর্গদূতেরা তোমাদের বশীভূত হয় বলে তোমরা আনন্দ কোরো না, বরং তোমাদের নাম স্বর্গে লেখা হয়েছে বলে আনন্দ করো।” (লূক ১০:১৭-২০) যিশু জানতেন, তারা প্রচার কাজে সবসময় ভালো ফলাফল লাভ করবে না। আমরা তো এও জানি না যে, শিষ্যেরা যাদের কাছে প্রচার করেছিল, তাদের মধ্যে কত জন খ্রিস্টান হয়েছিল। এখান থেকে আমরা শিখতে পারি, আমাদের সবচেয়ে বেশি এই বিষয়ে খুশি হওয়া উচিত যে, যিহোবা আমাদের সেবায় আনন্দিত।

৯. গালাতীয় ৬:৭-৯ পদ অনুযায়ী আমরা যদি প্রচার কাজে রত থাকি, তা হলে কী হবে?

আমরা যদি প্রচার কাজে রত থাকি, তা হলে আমরা অনন্তজীবন লাভ করব। আমরা যখন কঠোর পরিশ্রম করে সত্যের বীজ বপন করি, তখন আমরা “পবিত্র শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়ে” বপন করি। এর অর্থ হল, ঈশ্বরের পবিত্র শক্তিকে আমাদের উপর কাজ করতে দিই। এর ফলে আমরা উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার কাজে রত থাকতে পারি। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন, আমরা যদি “হাল ছেড়ে না দিই,” তা হলে তিনি আমাদের অনন্তজীবন দেবেন, এমনকী আমরা যদি কাউকে সত্যে না-ও নিয়ে আসতে পারি।—পড়ুন, গালাতীয় ৬:৭-৯.

প্রচার করার সময় কোন বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখা উচিত?

১০. লোকেরা শুনবে কি শুনবে না, সেটা কীসের উপর নির্ভর করে?

১০ লোকেরা শুনবে কি শুনবে না, সেটা তাদের উপর নির্ভর করে। এই বিষয়টা বোঝানোর জন্য যিশু একটা দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন। একজন বীজ বপনকারী আলাদা আলাদা জমিতে বীজ বপন করে। কিন্তু, শুধু একটা জমিতে ফল উৎপন্ন হয়। (লূক ৮:৫-৮) বীজ হল “ঈশ্বরের বাক্য” আর জমি হল লোকদের হৃদয়। (লূক ৮:১১-১৫) একটা বীজ বৃদ্ধি পাবে কি পাবে না, সেটা বীজ বপনকারীর হাতে থাকে না। একইভাবে, কেউ আমাদের বার্তা শুনবে কি শুনবে না, সেটা আমাদের হাতে থাকে না। তারপরও, আমাদের প্রচার কাজ করে যেতে হবে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, “প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজ অনুযায়ী পুরস্কার পাবে,” কাজের ফল অনুযায়ী নয়।—১ করি. ৩:৮.

যদিও নোহ বিশ্বস্তভাবে অনেক বছর ধরে প্রচার করেছিলেন, কিন্তু তার পরিবারের সদস্যেরা ছাড়া কেউই জাহাজে প্রবেশ করেনি। তা সত্ত্বেও, যিহোবার দৃষ্টিতে নোহ সফল ছিলেন কারণ তিনি যিহোবার কথা শুনেছিলেন (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১. যদিও লোকেরা নোহের কথা শোনেনি, তারপরও যিহোবা কেন নোহের প্রতি খুশি ছিলেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১১ ইতিহাসজুড়ে, যিহোবার এমন অনেক দাস ছিল, যাদের কথা লোকেরা শোনেনি। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন নোহ। তিনি ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে প্রচার করেছিলেন। (২ পিতর ২:৫) তিনি আশা করেছিলেন, লোকেরা নিশ্চয়ই তার কথা শুনবে। কিন্তু যিহোবা জানতেন, এমনটা হবে না। যিহোবা আগেই নোহকে বলেছিলেন: “তুমি আপন পুত্ত্রগণ, স্ত্রী ও পুত্ত্রবধূদিগকে সঙ্গে লইয়া সেই জাহাজে প্রবেশ করিবে।” (আদি. ৬:১৮) জাহাজটা এত বড়ো ছিল যে, নোহ হয়তো অনুমান করেছিলেন, অন্তত কিছু লোক তার বার্তা শুনে জাহাজে প্রবেশ করবে। (আদি. ৬:১৫) তাই, তিনি প্রচার কাজ করে গিয়েছিলেন। কিন্তু, এক জন ব্যক্তিও তার কথা শোনেনি। (আদি. ৭:৭) এর অর্থ কি এই ছিল যে, নোহ ব্যর্থ হয়েছিলেন? একেবারেই না! যিহোবার দৃষ্টিতে নোহ সফল ছিলেন কারণ তিনি সমস্ত কিছু ঠিক সেভাবেই করেছিলেন, যেভাবে যিহোবা তাকে বলেছিলেন।—আদি. ৬:২২.

১২. কেন যিরমিয় আনন্দ সহকারে প্রচার কাজ করতে পেরেছিলেন?

১২ এখন আসুন, ভাববাদী যিরমিয়ের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই। যদিও লোকেরা তার কথা শুনত না এবং তার বিরোধিতা করত, তারপরও তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে প্রচার করেছিলেন। তারা তাকে এতটাই ‘টিটকারি দিত ও বিদ্রূপ করত’ যে, যিরমিয় ভেবেছিলেন, এখন থেকে তিনি আর প্রচার করবেন না। (যির. ২০:৮, ৯) কিন্তু, তিনি হাল ছেড়ে দেননি। তিনি আনন্দ সহকারে প্রচার কাজ করে গিয়েছিলেন। কেন? তিনি দুটো বিষয় মনে রেখেছিলেন। প্রথমত, তিনি যে-বার্তা জানাচ্ছিলেন, সেটা লোকদের “শেষ ফল ও আশাসিদ্ধি [“একটা ভবিষ্যৎ, একটা আশা,” জুবিলী বাইবেল]” দিচ্ছিল। (যির. ২৯:১১) দ্বিতীয়ত, যিহোবা তাঁর বার্তা জানানোর জন্য তাকে বাছাই করেছিলেন। (যির. ১৫:১৬) বর্তমানে, আমরাও লোকদের একটা উত্তম ভবিষ্যতের বার্তা জানাই আর এরজন্য যিহোবা আমাদের বাছাই করেছেন। আমরাও যদি এই দুটো বিষয় মনে রাখি, তা হলে আমাদের আনন্দ বজায় থাকবে, তা লোকেরা আমাদের কথা শুনুক বা না শুনুক।

১৩. যিশুর দেওয়া দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (মার্ক ৪:২৬-২৯)

১৩ বাইবেল ছাত্রের উন্নতি করতে সময় লাগে। এই বিষয়টা বোঝানোর জন্য যিশু এমন একজন কৃষকের দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন, যে বীজ বপন করার পর ঘুমিয়ে পড়ে। (পড়ুন, মার্ক ৪:২৬-২৯.) সেই বীজ ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, কিন্তু কীভাবে বেড়ে ওঠে, তা সে জানে না। একইভাবে, একজন বাইবেল ছাত্রও ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে পরিবর্তন করে। আমরা তাকে জোর করতে পারি না এবং সে যা পরিবর্তন করে, তা হয়তো কিছুসময় পর আমাদের চোখে পড়ে। তাই, আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া কিংবা নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয় বরং ধৈর্য ধরা উচিত।—যাকোব ৫:৭, ৮.

১৪. একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, লোকদের সত্যের প্রতি মনোযোগ দিতে সময় লাগতে পারে।

১৪ কিছু এলাকা এমন হয়, যেখানে অনেক বছর ধরে প্রচার করার পরও কেউই বাপ্তিস্ম নেয় না। কানাডার একটা ছোটো শহর এইরকমই ছিল। ১৯৫৯ সালে গ্ল্যাডিস অ্যালেন ও তার বোন রুবি অ্যালেন দু-জনেই সেখানে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করছিলেন। * সেখানকার লোকেরা নিজেদের প্রতিবেশী ও পাদরিদের উপর এতটাই রেগে ছিল যে, তারা এই দু-জন বোনের কথা একদমই শুনতে চাইত না। বোন গ্ল্যাডিস বলেন: “আমরা প্রতিদিন আট ঘণ্টা প্রচার করতাম। আর এমনটা আমরা প্রায় দুই বছর ধরে করি। কিন্তু, কেউই আমাদের কথা শোনেনি। তা সত্ত্বেও, আমরা হাল ছেড়ে দিইনি।” পরে, সেখানকার লোকেরা পরিবর্তিত হয়। তারা সাক্ষিদের বার্তার প্রতি মনোযোগ দেয়। আজ সেখানে তিনটে মণ্ডলী রয়েছে।—যিশা. ৬০:২২.

১৫. প্রথম করিন্থীয় ৩:৬, ৭ পদ থেকে আমরা শিষ্য তৈরি করার কাজ সম্বন্ধে কী শিখতে পারি?

১৫ অনেক লোকের পরিশ্রমের ফলে একজন ব্যক্তি সত্য গ্রহণ করে। মণ্ডলীর প্রত্যেক প্রকাশক একজন ব্যক্তিকে বাপ্তিস্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৩:৬, ৭.) হতে পারে, একজন প্রকাশক কাউকে কোনো ট্র্যাক্ট কিংবা পত্রিকা দিয়েছেন। কিন্তু, যখন কোনো কারণে তিনি সেই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে পারেন না, তখন তিনি অন্য কোনো প্রকাশককে সেই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে বলেন। সেই অন্য প্রকাশক সেই ব্যক্তির সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন আর অধ্যয়নে আলাদা আলাদা ভাই-বোনকে নিয়ে যান। যে-সমস্ত ভাই-বোন অধ্যয়নে আসে, তারাও তাকে উৎসাহিত করে এবং তার বিশ্বাস দৃঢ় করে। পরে, সেই ছাত্র যখন বাপ্তিস্ম নেয়, তখন সেই সমস্ত ব্যক্তি খুশি হয়, যারা তাকে সাহায্য করেছিল।—যোহন ৪:৩৫-৩৮.

১৬. আমরা যদি আগের মতো প্রচার করতে না পারি, তা হলে আনন্দ বজায় রাখার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৬ আমরা হয়তো আগের মতো প্রচার করতে পারছি না কারণ আমাদের শক্তি কমে গিয়েছে কিংবা আমরা অসুস্থ থাকি। কিন্তু তারপরও, আমরা আনন্দ বজায় রাখতে পারি। আসুন, এটা বোঝার জন্য আমরা দায়ূদ ও তার লোকদের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই। অমালেকীয়েরা তাদের সমস্ত কিছু লুট করে নিয়ে যায় আর এমনকী তাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরও বন্দি করে নিয়ে যায়। তাই, দায়ূদ ও তার লোকেরা অমালেকীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যান। তবে, তাদের মধ্যে ২০০ জন লোক খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এইজন্য তারা দায়ূদের সঙ্গে না গিয়ে সৈন্যদের জিনিসপত্র দেখাশোনা করে। কিন্তু, যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর দায়ূদ যখন ফিরে আসেন, তখন তিনি লুটদ্রব্য সেই ২০০ জন লোকের সঙ্গেও ভাগ করে নেন। (১ শমূ. ৩০:২১-২৫) দায়ূদের এই গল্প থেকে আমরা শিখি যে, আমরা যতটুকু করতে পারি, ততটুকু আমাদের মনপ্রাণ দিয়ে করা উচিত। আর পরবর্তী সময়ে, একজন ব্যক্তি যখন বাপ্তিস্ম নেবেন, তখন আমরা সবাই আনন্দিত হব।

১৭. আমরা কোন বিষয়ের জন্য আনন্দিত?

১৭ আমরা খুব আনন্দিত যে, যিহোবা আমাদের পরিশ্রম লক্ষ করেন এবং এরজন্য তিনি আমাদের পুরস্কার দেন। তিনি জানেন, আমরা কাউকে জোর করে সত্যে নিয়ে আসতে পারি না। আমরা যখন তাঁর সেবায় ততটা করতে পারি না, যতটা আমরা করতে চাই, তখন তিনি আমাদের আনন্দ বজায় রাখতে শেখান। (যোহন ১৪:১২) তাই আসুন, আমরা যেন হাল ছেড়ে না দিই এবং ক্রমাগত যিহোবাকে খুশি করি।

গান ৪৭ সুসমাচার ঘোষণা করো

^ অনু. 5 প্রায়ই, লোকেরা যখন অধ্যয়ন করতে রাজি হয়, তখন আমরা খুব আনন্দিত হই। কিন্তু, তারা যখন অধ্যয়ন করতে রাজি হয় না, তখন আমরা খুব দুঃখ পাই। কখনো কখনো অধ্যয়ন শুরু তো হয়ে যায়, কিন্তু ছাত্র নিজের মধ্যে পরিবর্তন করে না। আবার কখনো কখনো আমরা অনেক অধ্যয়ন পরিচালনা করি, কিন্তু এক জন ছাত্রও বাপ্তিস্ম নেয় না। এর অর্থ কি এই, আমরা আমাদের পরিচর্যায় ব্যর্থ হয়েছি? এই প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, এইসমস্ত কিছু থাকা সত্ত্বেও আমরা সফল হতে পারি এবং আনন্দ বজায় রাখতে পারি।

^ অনু. 14 ২০০২ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় বোন গ্ল্যাডিস অ্যালেনের জীবনকাহিনি পড়ুন, যেটার শিরোনাম হল “আমি কোন কিছু পরিবর্তন করব না!