সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তুলুন

যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তুলুন

প্রতি বছর অনেক লোককে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে পুনর্বহাল করা হয়ে থাকে। যখন কেউ ফিরে আসে, তখন ‘স্বর্গে আনন্দ হয়।’ (লূক ১৫:৭, ১০) আপনি যদি সেই লোকদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি এই বিষয়ে আস্থা রাখতে পারেন যে, যিহোবা, যিশু ও স্বর্গদূতেরা আপনার ফিরে আসার কারণে অনেক আনন্দিত। কিন্তু, যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তোলা সহজ না-ও হতে পারে। আসুন দেখি, কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসতে পারে আর আপনি সেগুলো কীভাবে কাটিয়ে উঠতে পারেন?

কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসতে পারে?

অনেক ভাই-বোনের মতো আপনিও হয়তো হতাশার সঙ্গে লড়াই করছেন। এর কারণ হল মণ্ডলীতে ফিরে আসার অনেক বছর পরও নিজের মধ্যে দোষী মনোভাব এবং লজ্জা বোধ থেকেই যায়। রাজা দায়ূদের প্রতি এমন কিছু ঘটেছিল। নিজের পাপের ক্ষমা লাভ করার পরও তিনি বলেছিলেন: “আমার অপরাধ সকল আমাকে ধরিয়াছে।” (গীত. ৪০:১২; ৬৫:৩) ইজাবেলের * উদাহরণ লক্ষ করুন। তিনি ২০ বছর ধরে সমাজচ্যুত ছিলেন। তিনি যখন মণ্ডলীতে ফিরে আসেন, তখন তার মনে হয়েছিল, যিহোবা কীভাবে তার পাপ ক্ষমা করতে পারেন! আপনি যদি হতাশায় ডুবে থাকেন, তা হলে যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। (হিতো. ২৪:১০) তাই, এটা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করুন।

আপনি হয়তো এই বিষয়ে দুশ্চিন্তা করেন যে, যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তোলার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে। পুনর্বহাল হওয়ার পর অ্যান্টন বলেন: “আমার মনে হয়েছিল, আমি যা-কিছু শিখেছিলাম, সেই সমস্ত কিছু ভুলে গিয়েছি।” এইরকম অনুভূতির কারণে আপনি মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা না-ও করতে পারেন।

একটা উদাহরণ লক্ষ করুন। ঝড়ের ফলে যখন কারো ঘরের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়, তখন সে হয়তো চিন্তা করে যে, সেই ঘর পুনরায় নির্মাণ করার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে ও সময় দিতে হবে। একইভাবে, গুরুতর পাপ করার ফলে যদি যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়, তা হলে আপনি হয়তো এই বিষয়ে দুশ্চিন্তা করেন যে, সেই সম্পর্ককে পুনরায় গড়ে তোলার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে। কিন্তু আস্থা রাখুন, আপনাকে একা তা করতে হবে না।

যিহোবা বলেছেন: “আইস, আমরা উত্তর প্রত্যুত্তর [“বোঝাপড়া,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] করি।” (যিশা. ১:১৮) যিহোবার সঙ্গে “বোঝাপড়া” করার জন্য আপনি ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছেন আর এই কারণে যিহোবা আপনাকে অনেক ভালোবাসেন। এমনটা করার মাধ্যমে আপনি যিহোবাকে সুযোগ দিয়েছেন যেন তিনি শয়তানের প্রশ্নের উত্তর দেন।—হিতো. ২৭:১১.

মণ্ডলীতে ফিরে আসার মাধ্যমে আপনি যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন আর যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনিও আপনার নিকটবর্তী হবেন। (যাকোব ৪:৮) কিন্তু, শুধু এটাই যথেষ্ট নয়। যিহোবা আপনার বন্ধু ও পিতা। তাই, তাঁর প্রতি আপনার ভালোবাসা বৃদ্ধি করতে হবে। কীভাবে আপনি তা করতে পারেন?

কিছু লক্ষ্য স্থাপন করুন

অনেক বার যখন ঝড়ের ফলে ঘরের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়, তখন সেটার ভিত টিকে থাকে। শুধু ঘরের উপরের অংশ নির্মাণ করতে হয়। একইভাবে, মণ্ডলীতে ফিরে আসার পর আপনার হয়তো বাইবেলের মৌলিক শিক্ষা মনে রয়েছে। কিন্তু, এখন আপনাকে যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তুলতে হবে। এরজন্য, আপনাকে সেই সমস্ত কিছু করতে হবে, যেগুলো আপনি আগে করতেন। যেমন, প্রচার করা, সভায় যাওয়া এবং ভাই-বোনদের সঙ্গে সময় কাটানো। এগুলো করার জন্য আপনি ছোটো ছোটো লক্ষ্য স্থাপন করতে পারেন।

যিহোবার সঙ্গে বার বার কথা বলুন। আপনার পিতা যিহোবা জানেন, আপনি যদি সবসময় নিজেকে দোষী বলে মনে করেন, তা হলে তাঁর কাছে প্রার্থনা করা আপনার পক্ষে সহজ হবে না। (রোমীয় ৮:২৬) তারপরও, “অবিরত প্রার্থনা” করুন আর যিহোবাকে বলুন যে, আপনি তাঁর সঙ্গে পুনরায় বন্ধুত্ব করতে চান। (রোমীয় ১২:১২) আন্দ্রে যখন এমনটা করেছিলেন, তখন তিনি অনেক উপকৃত হয়েছিলেন। তিনি বলেন: “আমি নিজেকে খুব দোষী বলে মনে করতাম এবং লজ্জা বোধ করতাম। কিন্তু, প্রার্থনা করার সঙ্গেসঙ্গে আমি মনের শান্তি লাভ করতাম।” অনেক সময় আপনি হয়তো বুঝতে পারেন না যে, প্রার্থনায় আপনি কী বলবেন। সেই সময়ে আপনি রাজা দায়ূদের করা প্রার্থনাগুলোর উপর মনোযোগ দিতে পারেন, যেগুলো তিনি অনুতপ্ত হওয়ার পর লিখেছিলেন। এগুলো গীতসংহিতা ৫১ ও ৬৫ গীতে লেখা রয়েছে।

নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করুন। এমনটা করার মাধ্যমে আপনার বিশ্বাস দৃঢ় হবে আর যিহোবার প্রতি আপনার প্রেম বৃদ্ধি পাবে। (গীত. ১৯:৭-১১) ফেলিপে বলেন: ‘নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন না করার ফলেই যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছিল আর আমি তাঁকে দুঃখ দিয়েছিলাম। আমি দ্বিতীয় বার এই ভুল করতে চাইনি। তাই, আমি নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নিই।’ আপনিও ফেলিপের মতো করতে পারেন। যদি বুঝতে না পারেন, আপনার কোন বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করা উচিত, তা হলে এমন কোনো বন্ধুর কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন, যার যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক রয়েছে।

ভাই-বোনদের সঙ্গে আবারও বন্ধুত্ব করুন। মণ্ডলীতে ফিরে আসার পর কিছু লোক মনে করে যে, অন্যেরা তাদের সম্বন্ধে কী চিন্তা করবে। লারিসা বলেন: “আমি অনেক লজ্জিত ছিলাম। আমার মনে হত যেন আমি মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। এইরকম নেতিবাচক অনুভূতি দীর্ঘসময় ধরে ছিল।” আস্থা রাখুন, প্রাচীনেরা ও মণ্ডলীর অন্য পরিপক্ব ভাই-বোনেরা যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তোলার জন্য আপনাকে সাহায্য করতে চান। (“ প্রাচীনেরা কী করতে পারেন?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) তারা অনেক আনন্দিত যে, আপনি ফিরে এসেছেন আর চান যেন আপনিও আনন্দিত থাকেন।—হিতো. ১৭:১৭.

মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য আপনি কী করতে পারেন? তাদের সঙ্গে মিলে যিহোবার সেবা করুন, প্রতিটা সভায় যান এবং নিয়মিতভাবে প্রচারে অংশ নিন। ফিলিক্স বলেন: “মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা আমার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছিল। এর ফলে, আমি বুঝতে পারি, তারা আমাকে কতটা ভালোবাসে। তারা আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছে যে, আমিও মণ্ডলীর এক অংশ, যিহোবা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন আর আমি তাঁর সেবা করতে পারি।”—“ আপনি কী করতে পারেন?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

হাল ছেড়ে দেবেন না!

শয়তান চায় যেন যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। সে আপনার জীবনে বিভিন্ন “ঝড়” নিয়ে আসবে। (লূক ৪:১৩) তাই, আপনার বিশ্বাস দৃঢ় করুন।

আমরা সবাই যিহোবার মূল্যবান মেষ। তাই, তিনি প্রতিজ্ঞা করছেন: “আমি হারাণ মেষের অন্বেষণ করিব, দূরীকৃতকে ফিরাইয়া আনিব, ভগ্নাঙ্গের ক্ষত বাঁধিব, ও পীড়িতকে সবল করিব।” (যিহি. ৩৪:১৬) যিহোবা তাঁর অনেক লোককে সাহায্য করেছেন, যাতে তারা পুনরায় তাঁর সঙ্গে এক দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। তিনি আপনাকেও সাহায্য করবেন।

^ অনু. 4 এই প্রবন্ধে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।