সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৯

কীভাবে অন্যদের সঙ্গে আচরণ করা উচিত?

কীভাবে অন্যদের সঙ্গে আচরণ করা উচিত?

“আপন প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।”—লেবীয়. ১৯:১৮.

গান ২৫ শিষ্যত্বের প্রমাণ

সারাংশ *

১-২. (ক) আগের প্রবন্ধে আমরা কী শিখেছি? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?

আগের প্রবন্ধে, আমরা লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায় থেকে অনেক কিছু শিখেছি। উদাহরণ স্বরূপ, ৩ পদে যিহোবা ইজরায়েলীয়দের বলেছিলেন, তাদের নিজ নিজ বাবা-মাকে সমাদর করা উচিত। এটা থেকে আমরা শিখেছি যে, আমাদের বাবা-মায়েদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো এনে দেওয়া উচিত, তাদের উৎসাহিত করা উচিত এবং যিহোবার নিকটে থাকার জন্য সাহায্য করা উচিত। সেই পদে এও লেখা রয়েছে, ইজরায়েলীয়দের বিশ্রামবার পালন করা উচিত। যদিও আজ আমরা এই নিয়ম পালন করি না, কিন্তু এটা থেকে আমরা শিখতে পারি যে, প্রতিদিন যিহোবার উপাসনা করার জন্য আমাদের কিছুটা সময় আলাদা করে রাখা উচিত। আমরা যদি এইসমস্ত কিছু করি, তা হলে আমরা পবিত্র হতে পারব, ঠিক যেমনটা লেবীয় পুস্তক ১৯:২ এবং ১ পিতর ১:১৫ পদে লেখা রয়েছে।

এই প্রবন্ধে আমরা লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায় থেকে আরও কিছু বিষয় শিখব। আমরা শিখব যে, কীভাবে আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি বিবেচনা দেখাতে পারি, সৎভাবে ব্যাবসা করতে পারি এবং অন্যদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারি। আমরা যদি এইসমস্ত কিছু করি, তা হলে আমরা ঈশ্বরের মতো পবিত্র হতে পারব।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি বিবেচনা দেখান

লেবীয় পুস্তক ১৯:১৪ পদ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে কীভাবে আমাদের আচরণ করা উচিত? (৩-৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৩-৪. লেবীয় পুস্তক ১৯:১৪ পদ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে কীভাবে ইজরায়েলীয়দের আচরণ করতে হত?

লেবীয় পুস্তক ১৯:১৪ পদ পড়ুন। যিহোবা চেয়েছিলেন যেন ইজরায়েলীয়েরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি বিবেচনা দেখায়। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি ইজরায়েলীয়দের বলেছিলেন যেন তারা বধির ব্যক্তিদের অভিশাপ না দেয়। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল তাদের ভয় না দেখানো, তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ না করা এবং খারাপভাবে কথা না বলা। একটু চিন্তা করে দেখুন, ইজরায়েলীয়েরা যদি এমনটা করত, তা হলে তা কতই-না খারাপ বিষয় হত! একজন বধির ব্যক্তি এটা শুনতে পেত না যে, তার সম্বন্ধে কী বলা হচ্ছে। তাই, সে হয়তো উত্তরে কিছুই বলতে পারত না।

এ ছাড়া, ১৪ পদে লেখা রয়েছে যে, ইজরায়েলীয়েরা যেন কোনো “অন্ধের সম্মুখে বাধাজনক বস্তু” না রাখে। একটা বইয়ে বলা হয়েছে, “প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হত। কিছু লোক হয়তো অন্ধ ব্যক্তিদের ক্ষতি করার জন্য কিংবা তাদের নিয়ে ঠাট্টাতামাশা করার জন্য তাদের সামনে বাধাজনক বস্তু রেখে দিত।” তারা কতই-না নিষ্ঠুর ছিল! যিহোবার দেওয়া এই আজ্ঞা থেকে ইজরায়েলীয়েরা বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি বিবেচনা দেখানো উচিত।

৫. কীভাবে আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি বিবেচনা দেখাতে পারি?

যিশু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা দেখিয়েছিলেন। একবার, তিনি যোহন বাপ্তাইজককে এই বার্তা পাঠিয়েছিলেন: “অন্ধ ব্যক্তিরা এখন দেখতে পাচ্ছে, খোঁড়া ব্যক্তিরা হাঁটছে, কুষ্ঠ রোগীরা শুচি হচ্ছে, বধির ব্যক্তিরা শুনতে পাচ্ছে, [এবং] মৃত ব্যক্তিদের জীবিত করা হচ্ছে।” (লূক ৭:২০-২২) যিশুর এই অলৌকিক কাজ দেখে ‘অন্য সকলে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল।’ (লূক ১৮:৪৩) আজ আমরাও যিশুর মতো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা দেখাই, তাদের সঙ্গে প্রেম সহকারে আচরণ করি এবং তাদের প্রতি ধৈর্য ধরি। যদিও আমরা অলৌকিকভাবে তাদের কষ্ট দূর করতে পারি না, তবে আমরা তাদের আসন্ন পরমদেশ পৃথিবী সম্বন্ধে জানাতে পারি, যেখানে তারা সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে যাবে। যদিও এই সুসমাচার আমরা সেই ব্যক্তিদের জানাই, যারা দেখতে পায় না, তবে এর সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদেরও এই সুসমাচার জানিয়ে থাকি, যারা আধ্যাত্মিকভাবে অন্ধ হয়ে রয়েছে অর্থাৎ যারা সত্যকে দেখতে পায় না। (লূক ৪:১৮) এই সুসমাচারের কারণে আজ অনেক লোক ঈশ্বরের প্রশংসা করছে।

সৎভাবে ব্যাবসা করুন

৬. লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায়ের কিছু পদে কোন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে?

দশ আজ্ঞা পালন করার সঙ্গে কী জড়িত, সেটার বিষয়ে লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায়ের কিছু পদে আরও তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, অষ্টম আজ্ঞা ছিল: “চুরি করিও না।” (যাত্রা. ২০:১৫) একজন ইজরায়েলীয় চিন্তা করতে পারতেন, তিনি যদি কারো কোনো জিনিস না নেন, তা হলে তিনি এই আজ্ঞা পালন করছেন। কিন্তু হতে পারে, তিনি অন্য কোনো উপায়ে চুরি করছেন।

৭. কী করলে একজন বণিক অষ্টম আজ্ঞার অবাধ্য হতেন?

একজন বণিক হয়তো কখনো কারো কোনো জিনিস চুরি করেন না। তবে, ব্যাবসা করার সময় তিনি কি এই বিষয়টা খেয়াল রাখেন? লেবীয় পুস্তক ১৯:৩৫, ৩৬ পদে যিহোবা বলেছিলেন: “তোমরা বিচার কিম্বা পরিমাণ কিম্বা বাটখারা কিম্বা কাঠার বিষয়ে অন্যায় করিও না। তোমরা ন্যায্য দাঁড়ি, ন্যায্য বাটখারা, ন্যায্য ঐফা ও ন্যায্য হিন রাখিবে।” একজন বণিক যদি অন্যদের ঠকানোর জন্য সঠিক দাঁড়িপাল্লা কিংবা বাটখারা ব্যবহার না করেন, তা হলে এক দিক থেকে তিনি চুরিই করছেন। লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায়ের অন্যান্য পদ থেকে জানা যায় যে, চুরি করার সঙ্গে আর কী জড়িত।

লেবীয় পুস্তক ১৯:১১-১৩ পদ অনুযায়ী ব্যাবসা করার সময় কিংবা চাকরির জায়গায় একজন খ্রিস্টানের কোন বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত? (৮-১০ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৮. (ক) লেবীয় পুস্তক ১৯:১১-১৩ পদ পড়ে যিহুদিরা অষ্টম আজ্ঞা সম্বন্ধে কী বুঝতে পেরেছিল? (খ) এটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

লেবীয় পুস্তক ১৯:১১-১৩ পদ পড়ুন। লেবীয় পুস্তক ১৯:১১ পদের শুরুতে লেখা আছে, “তোমরা চুরি করিও না” আর ১৩ পদে লেখা আছে, ‘তুমি আপন প্রতিবাসীকে অত্যাচার করিও না’ বা ঠোকিয়ো না। এই পদগুলো থেকে বোঝা যায় যে, ব্যাবসা করার সময় কিংবা চাকরির জায়গায় কাউকে ঠকানো এক প্রকার চুরি। অষ্টম আজ্ঞায় কেবল এটা লেখা ছিল যে, তোমরা চুরি কোরো না। কিন্তু, যিহুদিরা এটার পিছনে থাকা নীতি লেবীয় পুস্তকের এই পদগুলো থেকে বুঝতে পারত। সেই নীতিটা ছিল, তাদের যেকোনো ব্যাপারে সৎ থাকা উচিত। লেবীয় পুস্তক ১৯:১১-১৩ পদ থেকে আমরা শিখতে পারি যে, কাউকে ঠকানো এবং চুরি করাকে যিহোবা কীভাবে দেখেন। তাই, আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘আমি কি ব্যাবসা করার সময় কিংবা চাকরির জায়গায় সৎ থাকি? না কি আমার কিছু পরিবর্তন করা উচিত?’

৯. লেবীয় পুস্তক ১৯:১৩ পদে উল্লেখিত কথাগুলো থেকে কীভাবে মজুরেরা উপকৃত হত?

যদি একজন খ্রিস্টান ব্যাবসা করেন আর তার অধীনে কর্মচারী থাকে, তা হলে তিনি লেবীয় পুস্তক ১৯:১৩ পদ থেকে সৎ হওয়ার ব্যাপারে আরেকটা বিষয় শিখতে পারেন। সেখানে লেখা রয়েছে: “বেতনজীবীর বেতন প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত সমস্ত রাত্রি রাখিও না।” ইজরায়েলে বেশিরভাগ লোক কৃষক ছিল আর তারা নিজেদের খেতে কাজ করার জন্য মজুরদের রাখত। আর দিনের শেষে সেই মজুরদের বেতন দিতে হত। যদি একজন কৃষক দিনের শেষে কোনো মজুরকে বেতন না দিতেন, তা হলে সেই দিন সেই মজুরের পরিবারকে হয়তো খালি পেটে থাকতে হত। যিহোবা এই বিষয়টা জানতেন। তিনি বলেছিলেন: “[সেই মজুর] অভাবী এবং সেই পারিশ্রমিক দিয়েই তার দিন চলে।”—দ্বিতীয়. ২৪:১৪, ১৫; মথি ২০:৮.

১০. লেবীয় পুস্তক ১৯:১৩ পদ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১০ আজ, অনেক লোক প্রত্যেক দিন নয় বরং মাসে এক বার কিংবা দু-বার বেতন পায়। কিন্তু, লেবীয় পুস্তক ১৯:১৩ পদের যে-নীতি রয়েছে, সেটা আজও প্রযোজ্য। কিছু মালিক জানে যে, তাদের কর্মচারীদের চাকরির খুবই প্রয়োজন। এই বিষয়টার সুযোগ নিয়ে তারা তাদের দিয়ে বেশি কাজ করায়, কিন্তু সেই অনুযায়ী বেতন কম দেয়। এমনটা করার মাধ্যমে তারা এক দিক দিয়ে “বেতনজীবীর বেতন” নিজেদের কাছে রেখে দিচ্ছে। একজন খ্রিস্টানের খেয়াল রাখা উচিত যেন তিনি তার কর্মচারীদের সঙ্গে এমনটা না করেন। এর পরিবর্তে, তিনি যেন তাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক তাদের দেন। এখন আসুন, আমরা লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায় থেকে আরও কিছু বিষয় শিখি।

অন্যদের নিজের মতো ভালোবাসুন

১১-১২. যিশু কোন বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন? (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৭, ১৮)

১১ ঈশ্বর শুধু এটাই চান না যে, আমরা অন্যদের ক্ষতি না করি। তিনি আমাদের কাছ থেকে আরও কিছু চান। এই বিষয়টা লেবীয় পুস্তক ১৯:১৭, ১৮ পদে লেখা রয়েছে। (পড়ুন।) যিহোবা স্পষ্টভাবে বলেছেন: “তুমি . . . আপন প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” আমরা যদি যিহোবাকে খুশি করতে চাই, তা হলে আমাদের এই কথা মেনে চলতে হবে।

১২ যিশুও এই বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন। একবার, একজন ফরীশী তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “ব্যবস্থার মধ্যে সর্বমহৎ আজ্ঞা কোনটা?” তখন যিশু তাকে বলেছিলেন, সমস্ত হৃদয়, সমস্ত প্রাণ এবং সমস্ত মন দিয়ে যিহোবাকে ভালোবাসাই হল “সর্বমহৎ ও প্রথম আজ্ঞা।” এরপর, তিনি লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদ উদ্ধৃতি করে বলেছিলেন: “আর দ্বিতীয়টা প্রথম আজ্ঞার মতোই: ‘তুমি তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসবে।’” (মথি ২২:৩৫-৪০) নিজের প্রতিবেশীকে ভালোবাসার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। কিছু উপায় লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায়ে পাওয়া যায়।

১৩. লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদে দেওয়া পরামর্শ মেনে চলার ব্যাপারে আমরা যোষেফের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

১৩ নিজের প্রতিবেশীকে ভালোবাসার একটা উপায় লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদে পাওয়া যায়। সেখানে লেখা আছে: “তুমি . . . প্রতিহিংসা কি দ্বেষ করিও না।” আপনি হয়তো এমন একজন ব্যক্তিকে জানেন, যিনি তার সহকর্মী, সহপাঠী, বন্ধু অথবা কোনো আত্মীয়ের উপর অনেক বছর ধরে রেগে ছিলেন। যোষেফের ১০ জন ভাইও তার বিরুদ্ধে দ্বেষ বা ঘৃণা পুষে রেখেছিল, যেটার পরিণতি একসময় খুবই খারাপ হয়। তার ভাইয়েরা তার সঙ্গে খুবই নিষ্ঠুরভাবে আচরণ করে। (আদি. ৩৭:২-৮, ২৫-২৮) কিন্তু, যোষেফ তার ভাইদের মতো ছিলেন না। তাকে যখন একজন শাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, তখন যোষেফ চাইলে তার ভাইদের উপর প্রতিহিংসা করতে বা প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু, যোষেফ তা করেননি বরং তিনি তাদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন। তিনি তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা পুষে রাখেননি। লক্ষ করুন, যোষেফ সেটাই করেছিলেন, যেটা পরবর্তী সময়ে লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদে লেখা হয়েছিল।—আদি. ৫০:১৯-২১.

১৪. কেন আমাদের বর্তমানেও লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদে দেওয়া নীতি মেনে চলা উচিত?

১৪ আমরা যদি যিহোবাকে খুশি করতে চাই, তা হলে আমাদের যোষেফের মতো অন্যদের বিরুদ্ধে ঘৃণা পুষে রাখা উচিত নয় আর প্রতিশোধ নেওয়াও উচিত নয়। আদর্শ প্রার্থনায় যিশু এই বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমাদের “তাদের ক্ষমা” করা উচিত, “যারা আমাদের বিরুদ্ধে পাপ” করে। (মথি ৬:৯, ১২) একইভাবে, প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “হে প্রিয়েরা, তোমরা নিজেরা প্রতিশোধ নিয়ো না।” (রোমীয় ১২:১৯) তিনি এও বলেছিলেন: “এমনকী কারো বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ করার কারণও থাকে, তবুও সবসময় একে অন্যকে সহ্য করো এবং পরস্পরকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করো।” (কল. ৩:১৩) যিহোবার নীতিগুলো কখনো পালটায় না। তাই, আমাদের লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদে দেওয়া নীতি বর্তমানেও মেনে চলা উচিত।

ঠিক যেমন কোনো ক্ষতস্থান বার বার স্পর্শ করলে, সেটা বেড়ে যায় একইভাবে অন্যদের ভুলগুলো নিয়ে সবসময় চিন্তা করলে সেটা আমাদেরই ক্ষতি করবে। তাই, আমাদের সেগুলো ভুলে যাওয়া উচিত (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৫. উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, কেন আমাদের অন্যদের ভুল ক্ষমা করা এবং তা ভুলে যাওয়া উচিত।

১৫ কেন আমাদের অন্যদের ক্ষমা করা উচিত, এই বিষয়টা বোঝার জন্য আসুন একটা উদাহরণ লক্ষ করি। ধরুন, সবজি কাটার সময় আপনার আঙুল সামান্য কেটে গিয়েছে আর এর ফলে আপনার আঙুল ব্যথা করছে। কিন্তু, এই ব্যথা বেশি সময় ধরে থাকবে না। দু-এক দিনের মধ্যেই আপনি ভুলে যাবেন যে, আপনার আঙুল কেটে গিয়েছিল। একইভাবে, আপনার কোনো বন্ধু হয়তো এমন কিছু বলে বা করে, যেটার ফলে আপনি দুঃখ পান। তবে, বিষয়টা হয়তো বেশি বড়ো নয়, তাই আপনি তাকে ক্ষমা করে দেন। এবার ধরুন, আপনি গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। আপনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন আর ডাক্তার আপনার ক্ষতস্থান বেঁধে দিয়েছেন। আপনি যদি বার বার সেই ক্ষতস্থান স্পর্শ করেন, তা হলে সেই ক্ষত আরও বেড়ে যেতে পারে। ঠিক একইভাবে, কেউ হয়তো আপনাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। এইরকম ক্ষেত্রে আপনি যদি বার বার সেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন, তা হলে এতে আপনারই ক্ষতি হবে। তাই ভালো হবে, যেন আপনি লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদে দেওয়া পরামর্শ মেনে চলেন।

১৬. (ক) লেবীয় পুস্তক ১৯:৩৩, ৩৪ পদ অনুযায়ী ইজরায়েলীয়দের বিদেশিদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হত? (খ) এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৬ যখন যিহোবা ইজরায়েলীয়দের আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তারা যেন ‘আপন প্রতিবাসীকে প্রেম’ করে, তখন তিনি কেবল অন্য ইজরায়েলীয়দের বিষয়ে বলেননি। তিনি সেই বিদেশিদের বিষয়েও বলেছিলেন, যারা তাদের মাঝে বাস করত। এই বিষয়টা লেবীয় পুস্তক ১৯:৩৩, ৩৪ পদ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। (পড়ুন।) ইজরায়েলীয়দের বিদেশিদের সঙ্গে সেভাবে আচরণ করতে হত, যেভাবে তারা “স্বদেশীয় লোক” অর্থাৎ অন্য ইজরায়েলীয়দের সঙ্গে আচরণ করত। এ ছাড়া, ইজরায়েলীয়দের সেই বিদেশিদের নিজেদের মতো “প্রেম” করতে হত। উদাহরণ স্বরূপ, ইজরায়েলীয়দের নিজেদের খেতে শস্য রেখে দিতে হত, যাতে দরিদ্র ও বিদেশিরা সেগুলো কুড়োতে পারে। (লেবীয়. ১৯:৯, ১০) লেবীয় পুস্তক ১৯:৩৩, ৩৪ পদ থেকে আমরাও শিখতে পারি। (লূক ১০:৩০-৩৭) বর্তমানে, লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি নিজেদের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে বাস করে। কিছু ব্যক্তি হয়তো আপনার এলাকায় বাস করে। আমাদের সেই ব্যক্তিদের প্রতি প্রেম দেখানো উচিত এবং সম্মানের সঙ্গে আচরণ করা উচিত।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ

১৭-১৮. (ক) লেবীয় পুস্তক ১৯:২ এবং ১ পিতর ১:১৫ পদ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (খ) প্রেরিত পিতর কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার জন্য আমাদের উৎসাহিত করেছেন?

১৭ লেবীয় পুস্তক ১৯:২ পদ এবং ১ পিতর ১:১৫ পদ থেকে আমরা বুঝতে পারি, যিহোবা চান যেন আমরা পবিত্র হই। আমরা লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায়ের কিছু পদ থেকে শিখেছি যে, আমাদের কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, যাতে যিহোবা আমাদের প্রতি খুশি হন। এই অধ্যায়ের অন্যান্য পদ থেকেও আমরা এই বিষয়ে আরও কিছু শিখতে পারি। * শুধু তা-ই নয়, খ্রিস্টীয় গ্রিক শাস্ত্র-এর কিছু পদ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, যিহোবা আজও চান যেন আমরা সেই নীতিগুলো মেনে চলি। তবে, প্রেরিত পিতর আরেকটা বিষয়ে বলেছিলেন।

১৮ আমরা হয়তো যিহোবার সেবায় বিভিন্ন কাজে রত থাকি, তবে পিতর একটা কাজের উপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন, যেটা থেকে অন্যেরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়। ‘তোমরা তোমাদের সমস্ত আচরণে পবিত্র হও,’ এই কথা বলার আগে তিনি বলেছিলেন, “তোমরা তোমাদের মনকে কাজের জন্য প্রস্তুত করো।” (১ পিতর ১:১৩, ১৫) কোন কাজের জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে? পিতর বলেছিলেন, খ্রিস্টের অভিষিক্ত ভাইয়েরা “সমস্ত জায়গায় [ঈশ্বরেরই] চমৎকার গুণাবলি সম্বন্ধে ঘোষণা” করবে। (১ পিতর ২:৯) বর্তমানে, এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমরা তাদের সহযোগিতা করি। আমরা উদ্যোগের সঙ্গে লোকদের কাছে প্রচার করি আর সত্য সম্বন্ধে তাদের শেখাই। (মার্ক ১৩:১০) সত্যিই, ঈশ্বরের পবিত্র লোক হওয়ার কারণে আমরা কতই-না বিশেষ এক সুযোগ লাভ করেছি! আমরা যখন লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায়ে দেওয়া নীতিগুলো মেনে চলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি, তখন আমরা দেখাই যে, আমরা ঈশ্বর ও আমাদের প্রতিবেশীকে ভালোবাসি। আমরা এও দেখাই যে, আমরা আমাদের সমস্ত আচরণে “পবিত্র” হতে চাই।

গান ২৮ নতুন গীত

^ অনু. 5 খ্রিস্টান হিসেবে আজ আমরা মোশির ব্যবস্থার অধীনে নেই। কিন্তু, এটা থেকে আমরা শিখতে পারি যে, আমাদের কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়। এভাবে, আমরা অন্যদের প্রতি প্রেম দেখাতে পারব এবং ঈশ্বরকে খুশি করতে পারব। এই প্রবন্ধে আমরা লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায়ে লেখা কিছু কথা নিয়ে আলোচনা করব।

^ অনু. 17 লেবীয় পুস্তক ১৯ অধ্যায়ের অন্যান্য পদে মুখাপেক্ষা বা পক্ষপাত করার, কর্ণেজপ বা নিন্দা করার, রক্ত গ্রহণ করার, প্রেতচর্চা করার এবং ভাগ্যগণনা করার বিষয়ে আর সেইসঙ্গে অনৈতিকতার বিষয়ে উল্লেখ করা রয়েছে।—লেবীয়. ১৯:১৫, ১৬, ২৬-২৯, ৩১.—এই সংখ্যার “পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন” দেখুন।

^ অনু. 52 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে একজন বধির ভাইকে সাহায্য করছেন।

^ অনু. 54 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন ভাই রঙের কাজ করেন। তিনি তার কর্মচারীকে বেতন দিচ্ছেন।

^ অনু. 56 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন বোন তার সামান্য কেটে যাওয়ার বিষয়টা ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু, একটা গভীর ক্ষতের বিষয়ে তিনি কী করবেন?