সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেভাবে অন্যদের সঙ্গে মিলে কাজ করা যায়

যেভাবে অন্যদের সঙ্গে মিলে কাজ করা যায়

‘আমি তাঁহার কাছে কার্য্যকারী ছিলাম; তাঁহার সম্মুখে নিত্য আহ্লাদ করিতাম।’ (হিতো. ৮:৩০) এই শাস্ত্রপদ থেকে বোঝা যায় যে, পৃথিবীতে আসার আগে যিশু কোটি কোটি বছর ধরে তাঁর পিতার সঙ্গে কাজ করেছিলেন। আর এতে তিনি অনেক আনন্দিত ছিলেন।

যিশু যখন স্বর্গে ছিলেন, তখন তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে এক উত্তম সহকর্মী হতে শিখেছিলেন। যখন তিনি পৃথিবীতে আসেন, তখন তিনি এই ব্যাপারে অন্যদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন। তাঁর উদাহরণ থেকে আমরা তিনটে নীতির বিষয়ে শিখতে পারি, যেগুলো মেনে চললে আমরাও উত্তম সহকর্মী হতে পারব। তখন আমরা আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারব এবং আমাদের মধ্যে একতা বজায় থাকবে।

যিহোবা ও যিশুর মতো অন্যদের সেই বিষয়গুলো জানান, যেগুলো আপনি জানেন

নীতি ১: ‘পরস্পরের প্রতি সমাদর দেখাও’

একজন উত্তম সহকর্মী নম্র হন। তিনি নিজের উপর অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করান না। এ ছাড়া, তার সঙ্গে যারা কাজ করে, তাদের তিনি মূল্যবান হিসেবে দেখেন। যিশু যিহোবার কাছ থেকে নম্র হতে শিখেছিলেন। যদিও যিহোবাই হলেন সৃষ্টিকর্তা, তবুও তিনি চেয়েছিলেন যেন সবাই জানতে পারে যে, তাঁর পুত্র সৃষ্টির কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। লক্ষ করুন, যিহোবা কী বলেছিলেন: “আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, . . . মনুষ্য নির্ম্মাণ করি।” (আদি. ১:২৬) যিহোবা যখন এই কথা বলেছিলেন, তখন যিশু হয়তো জানতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা খুবই নম্র!—গীত. ১৮:৩৫.

যিশুও যিহোবার মতো নম্র। পৃথিবীতে যখন লোকেরা যিশুর কাজের জন্য তাঁর প্রশংসা করেছিল, তখন তিনি সমস্ত কৃতিত্ব ঈশ্বরকে দিয়েছিলেন। (মার্ক ১০:১৭, ১৮; যোহন ৭:১৫, ১৬) তিনি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে শান্তি বজায় রেখেছিলেন এবং তিনি তাদের দাস নয় বরং বন্ধু হিসেবে দেখেছিলেন। (যোহন ১৫:১৫) নম্র হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝানোর জন্য তিনি তাঁর শিষ্যদের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন। (যোহন ১৩:৫, ১২-১৪) যিশুর মতো আমাদেরও ‘পরস্পরের প্রতি সমাদর দেখানো’ উচিত এবং কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। আমাদের নিজেদের পরিবর্তে অন্যদের সম্বন্ধে চিন্তা করা উচিত। এভাবে, আমরা তাদের সঙ্গে মিলে অনেক কাজ করতে পারব।—রোমীয় ১২:১০.

একজন নম্র ব্যক্তি এও জানেন যে, “পরামর্শদাতা অনেক হলে পরিকল্পনা সফল হয়।” (হিতো. ১৫:২২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) হতে পারে, আমাদের কাছে অনেক বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে কিংবা আমাদের মধ্যে বিভিন্ন দক্ষতা রয়েছে। কিন্তু, আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা সমস্ত কিছু জানতে পারি না। এমনকী যিশুও এটা স্বীকার করেছিলেন যে, কিছু বিষয় সম্বন্ধে তিনি জানেন না। (মথি ২৪:৩৬) যিশুর শিষ্যেরা অসিদ্ধ ছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিশু জানার চেষ্টা করতেন যে, কোনো বিষয়ে তাদের মতামত কী অথবা সেই বিষয়ে তারা কী জানেন। (মথি ১৬:১৩-১৬) তাই, যিশুর সঙ্গে থাকতে তাদের ভালো লাগত। যিশুর মতো আমাদেরও নম্র হওয়া উচিত এবং অন্যদের মতামত নেওয়া উচিত কারণ আমরা সমস্ত কিছু জানি না। এভাবে, সবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো হবে আর আমরা আমাদের কাজে “সফল” হতে পারব।

প্রাচীনদের বিশেষভাবে নম্র হওয়া উচিত এবং একে অন্যের সঙ্গে মিলে কাজ করা উচিত। যখন প্রাচীনদের সভা হয়, তখন পবিত্র শক্তি যেকোনো প্রাচীনকে এমন কিছু বলার জন্য পরিচালিত করতে পারে, যেটা তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। তাই, সভা চলাকালীন প্রাচীনদের সবাইকে নিজ নিজ মতামত জানানোর সুযোগ দেওয়া উচিত।

নীতি ২: ‘তোমাদের যুক্তিবাদিতা যেন সবার কাছে প্রকাশ পায়’

একজন উত্তম সহকর্মী তাদের প্রতি যুক্তিবাদিতা দেখান, যারা তার সঙ্গে কাজ করে। তিনি একগুঁয়ে মনোভাব দেখান না বরং তাদের মতামত শোনেন এবং নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। যিশু অনেক বার দেখেছিলেন যে, তাঁর পিতা অন্যদের প্রতি কত যুক্তিবাদিতা দেখান। উদাহরণ স্বরূপ, মানুষ পাপী আর মৃত্যুর যোগ্য। তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাদের প্রতি যুক্তিবাদিতা দেখিয়েছেন। তাদের পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার করার জন্য তিনি তাঁর পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন।—যোহন ৩:১৬.

যখনই সম্ভব হয়েছিল, তখনই যিশু অন্যদের প্রতি যুক্তিবাদিতা দেখিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিশুকে ইজরায়েলীয়দের সাহায্য করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, তিনি এই বিষয়ে একগুঁয়ে মনোভাব দেখাননি বরং তিনি একজন ফৈনীকীয় মহিলাকে সাহায্য করেছিলেন। (মথি ১৫:২২-২৮) যিশু তাঁর শিষ্যদের প্রতিও যুক্তিবাদিতা দেখিয়েছিলেন। তিনি এমনটা আশা করেননি যে, তাঁর শিষ্যদের দিয়ে কখনোই কোনো ভুল হবে না। যিশুর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু পিতর তাঁকে সবার সামনে অস্বীকার করেছিলেন। তারপরও, তিনি পিতরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, তিনি পিতরকে বড়ো বড়ো দায়িত্বও দিয়েছিলেন। (লূক ২২:৩২; যোহন ২১:১৭; প্রেরিত ২:১৪; ৮:১৪-১৭; ১০:৪৪, ৪৫) যিশুর কাছ থেকে আমরা শিখতে পারি যে, আমাদের কখনোই একগুঁয়ে মনোভাব দেখানো উচিত নয় এবং অন্যদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আশা করা উচিত নয়। আর তখনই ‘আমাদের যুক্তিবাদিতা সবার কাছে প্রকাশ পাবে।’—ফিলি. ৪:৫.

আমরা যদি অন্যদের প্রতি যুক্তিবাদিতা দেখাই, তা হলে আমরা নিজেদের পরিবর্তন করার জন্যও প্রস্তুত থাকব। এভাবে, আমরা যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারব। যিশু সবার সঙ্গে ভালোভাবে আচরণ করতেন, তাই লোকেরা তাঁর কথা শুনত। এটা দেখে তাঁর শত্রুরা তাঁকে হিংসা করত আর বলত, তিনি “কর আদায়কারীদের ও পাপীদের বন্ধু।” (মথি ১১:১৯) আমরাও কি যিশুর মতো যেকোনো ব্যক্তির সঙ্গে মিলে কাজ করছি? ভাই লুইসের উদাহরণ লক্ষ করুন। যখন তিনি সীমা অধ্যক্ষ ছিলেন এবং বেথেলে সেবা করেছিলেন, তখন তিনি অনেক ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করেছিলেন। ভাই বলেন: “অন্যদের সঙ্গে কাজ করা অনেকটা আলাদা আলাদা আকারের পাথর দিয়ে একটা দেওয়াল নির্মাণ করার মতো। এটা ঠিক যে, আলাদা আলাদা আকারের পাথরকে সঠিক জায়গায় এবং সঠিকভাবে রাখার জন্য সময় ও পরিশ্রমের প্রয়োজন। তা সত্ত্বেও, একটা সোজা দেওয়াল নির্মাণ করা সম্ভব। আমি নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন করি, যাতে অন্যদের সঙ্গে মিলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কাজ করতে পারি।”

একজন উত্তম সহকর্মী অন্যদের কাছে কোনো বিষয় গোপন করেন না

কীভাবে আমরা মণ্ডলীর ভাই-বোনদের প্রতি যুক্তিবাদিতা দেখাতে পারি? ভাই-বোনদের আলাদা আলাদা দায়িত্ব থাকে আর তাদের বয়সও আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। আমরা যখন তাদের সঙ্গে প্রচারে যাই, তখন আমাদের তাদের পরিস্থিতির বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। যেমন, আমরা তাদের সঙ্গে ধীরে ধীরে হাঁটতে পারি, প্রচারের মাঝখানে একটু ব্রেক নিতে পারি আর সেই উপায়ে প্রচার করতে পারি, যেটা তারা পছন্দ করে। এভাবে, তাদের প্রচার করতে ভালো লাগবে।

নীতি ৩: ‘নিজের যা আছে, তা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নাও’

একজন উত্তম সহকর্মী “নিজের যা আছে, তা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে” নেন। (১ তীম. ৬:১৮) যিশু যখন যিহোবার সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি দেখেছিলেন যে, যিহোবা কোনো কিছুই গোপন করেন না। যখন যিহোবা “আকাশমণ্ডল প্রস্তুত” করেছিলেন, তখন যিশু ‘সেখানে ছিলেন’ আর তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলেন। (হিতো. ৮:২৭) পরবর্তী সময়ে, যিশু তাঁর পিতার কাছ থেকে ‘যা যা শুনেছিলেন, সেই সমস্ত কিছু’ তাঁর শিষ্যদের জানিয়েছিলেন। (যোহন ১৫:১৫) বর্তমানে এমন অনেক লোক রয়েছে, যারা অন্যদের উপর কর্তৃত্ব করার জন্য তাদের সম্পূর্ণ তথ্য জানায় না। কিন্তু, একজন উত্তম সহকর্মী কখনোই এমনটা করবেন না। তিনি যিহোবার মতো অন্যদের সেইসমস্ত বিষয় আনন্দের সঙ্গে জানাবেন, যেগুলো তিনি জানেন।

যাদের সঙ্গে আমরা কাজ করি, তাদের প্রশংসা করা উচিত। কেউ যখন আমাদের কাজের জন্য প্রশংসা করে, তখন আমরা খুব খুশি হই, তাই-না? যিশু তাঁর শিষ্যদের প্রশংসা করেছিলেন। (তুলনা করুন, মথি ২৫:১৯-২৩; লূক ১০:১৭-২০) তিনি তাদের এও বলেছিলেন যে, তারা তাঁর “চেয়েও মহৎ মহৎ কাজ” করবেন। (যোহন ১৪:১২) মারা যাওয়ার আগে তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার সময়ে আমার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছ।” (লূক ২২:২৮) যিশুর এই কথাগুলো শোনার পর তারা কতই-না উৎসাহিত হয়েছিলেন এবং পরে আরও বেশি কাজ করার জন্য উদ্যোগী হয়ে উঠেছিলেন! আমাদেরও তাদের প্রশংসা করা উচিত, যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করে। এভাবে, তারা খুশি হবে এবং মন দিয়ে কাজ করতে পারবে।

আপনি একজন উত্তম সহকর্মী হতে পারেন

ক্যাওডে নামে একজন ভাই বলেন: “যিনি কখনোই কোনো ভুল করেন না, তিনি একজন উত্তম সহকর্মী হতে পারেন না। এর পরিবর্তে, যিনি অন্যদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেন এবং যেকোনো কাজ করাকে সহজ করে দেন, তিনিই হলেন একজন উত্তম সহকর্মী।” আপনি কি এই ধরনের সহকর্মী? এই বিষয়ে ভাই-বোনদের জিজ্ঞেস করুন না কেন? তাদের যদি আপনার সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে, ঠিক যেমন যিশুর শিষ্যদের তাঁর সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগত, তা হলে আপনি প্রেরিত পৌলের মতো বলতে পারেন: “তোমাদের আনন্দের জন্য আমরা তোমাদের সহকর্মী হিসেবে কাজ করছি।”—২ করি. ১:২৪.