সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫১

ক্রমাগত যিশুর কথা শুনুন

ক্রমাগত যিশুর কথা শুনুন

“ইনি আমার প্রিয় পুত্র, তাঁর উপর আমি খুব সন্তুষ্ট। তোমরা তাঁর কথা শোনো।”—মথি ১৭:৫.

গান ৩২ সুস্থির হও, নিশ্চল হও!

সারাংশ *

১-২. (ক) যিশুর তিন জন প্রেরিতকে কোন আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল আর তারা কী করেছিলেন? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী জানব?

বত্রিশ খ্রিস্টাব্দে নিস্তারপর্বের পর, প্রেরিত পিতর, যাকোব ও যোহন যিশুর সঙ্গে একটা উঁচু পর্বতের উপরে ছিলেন। আর সেখানে তারা একটা দর্শন দেখেছিলেন। সেই দর্শনে তাদের সামনে যিশুর রূপ বদলে গিয়েছিল। “তাঁর মুখ সূর্যের মতো দীপ্তিময় হয়ে উঠল এবং তাঁর কাপড় আলোর মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠল।” (মথি ১৭:১-৪) দর্শনের শেষের দিকে প্রেরিতেরা ঈশ্বরকে এই কথা বলতে শুনেছিলেন: “ইনি আমার প্রিয় পুত্র, তাঁর উপর আমি খুব সন্তুষ্ট। তোমরা তাঁর কথা শোনো।” (মথি ১৭:৫) এই তিন জন প্রেরিত যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন, সেটা থেকে জানা যায় যে, তারা যিশুর কথা শুনেছিলেন। আমাদেরও তাদের মতো যিশুর কথা শোনা উচিত।

আগের প্রবন্ধে আমরা শিখেছিলাম, যিশুর কথা শোনার অর্থ হল আমাদের কিছু বিষয় বন্ধ করা উচিত। এই প্রবন্ধে আমরা জানব, যিশুর কথা শোনার জন্য আমাদের কোন দুটো বিষয় করা উচিত।

“সরু দরজা দিয়ে প্রবেশ করো”

৩. মথি ৭:১৩, ১৪ পদ অনুযায়ী আমাদের কী করা উচিত?

মথি ৭:১৩, ১৪ পদ পড়ুন। যিশু বলেছিলেন, দুটো দরজা রয়েছে, যেটা দুটো রাস্তার দিকে খোলে। একটা রাস্তা “সহজ” এবং আরেকটা রাস্তা “কঠিন।” লক্ষ করুন, যিশু বলেছিলেন, কেবলমাত্র দুটো রাস্তা রয়েছে। আমাদের সেই দুটোর মধ্যে একটা রাস্তা বাছাই করতে হবে। এটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কারণ এর উপর আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। আর একটাই রাস্তা অনন্তজীবনের দিকে নিয়ে যায়।

৪. “সহজ” রাস্তা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করুন।

দুটো রাস্তা আলাদা আলাদা দিকে নিয়ে যায়। অনেক লোক “সহজ” রাস্তা দিয়ে যেতে পছন্দ করে কারণ এই রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। দুঃখের বিষয় হল, অনেক লোক অন্যদের দেখাদেখি এই রাস্তায় চলে। তারা জানে না, শয়তানই আসলে তাদের এই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই রাস্তা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।—১ করি. ৬:৯, ১০; ১ যোহন ৫:১৯.

৫. কীভাবে কিছু লোক “কঠিন” রাস্তা খুঁজে পেয়েছে?

“সহজ” রাস্তার তুলনায় অন্য রাস্তা কঠিন আর যিশু বলেছিলেন, অল্প লোকই এই রাস্তায় চলবে। কেন? পরের পদেই যিশু বলেছিলেন, মিথ্যা ভাববাদীরা আসবে আর তারা লোকদের ভ্রান্ত করবে। (মথি ৭:১৫) আজ, যিশুর এই কথা পরিপূর্ণ হতে আমরা দেখছি। জগতে অনেক ধর্ম রয়েছে আর প্রত্যেক ধর্মই দাবি করে যে, তারা সত্য শেখায়। এই কারণে লক্ষ লক্ষ লোক দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। তারা সেই রাস্তা খোঁজার জন্য প্রচেষ্টাই করে না, যেটা জীবনের দিকে নিয়ে যায়। তারা মনে করে যে, এই রাস্তা খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু, তা সত্যি নয়। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি সবসময় আমার কথা অনুযায়ী কাজ কর, তা হলে তোমরা সত্যিই আমার শিষ্য আর তোমরা সত্য জানতে পারবে এবং সেই সত্য তোমাদের মুক্ত করবে।” (যোহন ৮:৩১, ৩২) খুশির বিষয় হল, আপনি ভিড়ের পিছন পিছন যাননি বরং আপনি সত্য খোঁজার চেষ্টা করেছেন। আপনি বাইবেল অধ্যয়ন করেছেন এবং জেনেছেন যে, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী আশা করেন। আপনি যিশুর শিক্ষাগুলো সম্বন্ধে শিখেছেন। এ ছাড়া, আপনি শিখেছেন যে, যিহোবা চান যেন আপনি মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষাগুলো প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিভিন্ন উৎসব ও রীতিনীতি পালন করা বন্ধ করেন। এইসমস্ত কিছু করা হয়তো আপনার জন্য সহজ ছিল না। কিন্তু তারপরও, আপনি তা করেছেন। (মথি ১০:৩৪-৩৬) কারণ আপনি যিহোবাকে খুব ভালোবাসেন এবং তাঁকে খুশি করতে চান। আপনার পরিশ্রম দেখে যিহোবা কতই-না খুশি হয়েছিলেন!—হিতো. ২৭:১১.

কঠিন রাস্তায় ক্রমাগত চলার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

ঈশ্বরের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করলে আমরা “কঠিন” রাস্তা দিয়ে ক্রমাগত চলতে পারব (৬-৮ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৬. গীতসংহিতা ১১৯:৯, ১০, ৪৫, ১৩৩ পদ অনুযায়ী কঠিন রাস্তায় ক্রমাগত চলার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

আমরা যদি ক্রমাগত কঠিন রাস্তা দিয়ে চলতে চাই, তা হলে আমাদের কী করতে হবে? আমাদের যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে, যেটা বাইবেলে দেওয়া রয়েছে। কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ? আসুন, একটা উদাহরণের সাহায্যে তা বোঝার চেষ্টা করি। কিছু পাহাড়ি রাস্তার এক দিকে রেলিং থাকে, যাতে কোনো গাড়ি খাদে পড়ে না যায়। কেউই এটা নিয়ে অভিযোগ করবে না যে, কেন এই রেলিং দেওয়া হয়েছে। কারণ সবাই নিজেদের জীবনকে খুব ভালোবাসে। বাইবেলে দেওয়া যিহোবার মান সেই রেলিঙের মতো, যেটা আমাদের সুরক্ষা জোগায় এবং কঠিন রাস্তায় ক্রমাগত চলার জন্য আমাদের সাহায্য করে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৯, ১০, ৪৫, ১৩৩.

৭. তরুণ-তরুণীদের কঠিন রাস্তা সম্বন্ধে কী চিন্তা করা উচিত নয় আর কেন?

তরুণ-তরুণীরা, তোমাদের কি মনে হয় যে, যিহোবার মান খুব কঠিন, তাই তোমরা সেগুলো করতে পার না, যেগুলো করতে চাও? শয়তান চায় যেন তোমরা এমনটাই চিন্তা কর। সে তোমাদের মনোযোগ সেই লোকদের উপর আকর্ষণ করাতে চায়, যারা সহজ রাস্তা দিয়ে চলে। সে তোমাদের বন্ধুবান্ধব অথবা ইন্টারনেটে তুলে ধরা ব্যক্তিদের মাধ্যমে তোমাদের বিশ্বাস করাতে চায় যে, তারা খুব আনন্দে জীবন কাটাচ্ছে। * কিন্তু মনে রেখো, শয়তান সেই লোকদের এটা বলেনি, যে-রাস্তায় তারা চলছে, সেটা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অপর দিকে, যিহোবা তোমাদের কাছে কোনো কিছুই গোপন করেননি। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, কঠিন রাস্তায় চললে তোমরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করবে।—গীত. ৩৭:২৯; যিশা. ৩৫:৫, ৬; ৬৫:২১-২৩.

৮. ওলাফের কাছ থেকে তরুণ-তরুণীরা কী শিখতে পারে?

আসুন, ওলাফ নামে একজন তরুণ ভাইয়ের উদাহরণ লক্ষ করি। * তার স্কুলের সহপাঠীরা তাকে যৌনসম্পর্ক করার জন্য চাপ দেয়। সে যখন তাদের বলে যে, সে একজন যিহোবার সাক্ষি আর বাইবেলের উচ্চ নৈতিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে, তখন কিছু মেয়ে তার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করার জন্য তাকে বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু, ওলাফ তার সিদ্ধান্তে স্থির থাকে। এ ছাড়া, তাকে আরেকটা চাপের মুখোমুখি হতে হয়। সে বলে, “আমার শিক্ষকেরা বলত যেন আমি উচ্চশিক্ষা নিই। তা হলেই, আমি একটা ভালো চাকরি পাব আর জীবনে সফল হতে পারব।” কীভাবে ওলাফ এই চাপগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করে? সে বলে, “আমি মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি। তারা আমার পরিবারের মতো হয়ে ওঠে। আমি গভীরভাবে বাইবেল অধ্যয়নও করি। ফলে আমি বুঝতে পারি, এটাই হল সত্য। আর আমি ঠিক করি, আমি বাপ্তিস্ম নিয়ে যিহোবার সেবা করব।”

৯. কঠিন রাস্তায় ক্রমাগত চলার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

শয়তান চায়, আপনি যেন কঠিন রাস্তা ছেড়ে দিয়ে সহজ রাস্তায় চলেন, যেটা দিয়ে বেশিরভাগ লোক চলে আর যেটা “ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।” (মথি ৭:১৩) কিন্তু, আমরা যদি কঠিন রাস্তায় ক্রমাগত চলতে চাই, তা হলে আমাদের যিশুর কথা শুনতে হবে। আর মনে রাখতে হবে যে, এই রাস্তায় চললে আমরা জীবন লাভ করতে পারব। এখন আসুন, আমরা বিবেচনা করে দেখি, সেই দ্বিতীয় বিষয়টা কী, যেটা যিশু আমাদের করতে বলেছেন।

আপনার ভাইয়ের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করুন

১০. মথি ৫:২৩, ২৪ পদ অনুযায়ী আমাদের কী করা উচিত?

১০ মথি ৫:২৩, ২৪ পদ পড়ুন। এই পদগুলোতে যিশু এমন এক রীতির বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যেটাকে যিহুদিরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখত। সেটা হল যিহোবার উদ্দেশে পশুবলি উৎসর্গ করা। একটু কল্পনা করুন, একজন যিহুদি মন্দিরে রয়েছেন আর তিনি তার পশু উৎসর্গ করার জন্য সেটা যাজককে দিতে যাচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎই, তার মনে পড়ে যায় যে, তার ভাই তার উপর রেগে আছে। এখন তাকে সেই পশু সেখানে রেখে ‘চলে যেতে’ হবে। কেন? যিহোবার উদ্দেশে পশুবলি উৎসর্গ করা কি গুরুত্বপূর্ণ নয়? নিশ্চয়ই, এটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে, যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: “প্রথমে তোমার ভাইয়ের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করো।”

আপনি কি যাকোবের মতো নম্র হবেন এবং আপনার ভাই-বোনদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করবেন? (১১-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১১. এষৌর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার জন্য যাকোব কী করেছিলেন?

১১ শান্তি স্থাপন করার ব্যাপারে আমরা কুলপতি যাকোবের কাছ থেকে শিখতে পারি। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি নিজের দেশ ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যান। পরে, ঈশ্বর একজন স্বর্গদূতের মাধ্যমে তাকে নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার আজ্ঞা দেন। (আদি. ৩১:১১, ১৩, ৩৮) কিন্তু, একটা সমস্যা ছিল। তিনি যদি ফিরে যান, তা হলে তার বড়ো ভাই এষৌ তাকে হত্যা করবেন। (আদি. ২৭:৪১) এটা ভেবে তিনি “অতিশয় ভীত ও উদ্বিগ্ন” হয়ে পড়েন। (আদি. ৩২:৭) কিন্তু তা সত্ত্বেও, তিনি এষৌর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। সবচেয়ে প্রথমে, তিনি হৃদয় উজাড় করে এই বিষয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন এবং তাঁর কাছ থেকে সাহায্য চান। তারপর, তিনি এষৌকে অনেক উপহার পাঠান। (আদি. ৩২:৯-১৫) পরিশেষে, তিনি যখন এষৌর সঙ্গে দেখা করেন, তখন প্রথমে তিনি তার সামনে প্রণিপাত করেন। তিনি এক বার নয়, দু-বার নয় বরং সাত বার তার সামনে প্রণিপাত করেন। যাকোব নম্র ছিলেন আর তিনি এষৌর প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। ফলে, তিনি এষৌর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতে পেরেছিলেন।—আদি. ৩৩:৩, ৪.

১২. এষৌর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার জন্য যাকোব কোন দুটো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?

১২ আপনি কি লক্ষ করলেন, যাকোব এষৌর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার জন্য কোন কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? প্রথমত, তিনি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং তাঁর কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন। এরপর, তিনি সেই প্রার্থনা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন, যাতে এষৌর রাগ ঠাণ্ডা হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, যাকোব দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি এষৌর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করবেনই। তাই, তিনি যখন এষৌর সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখন তিনি এই বিষয়ে তর্ক করেননি, কে ঠিক ছিল আর কে ভুল ছিল।

যেভাবে সবার সঙ্গে শান্তি বজায় রাখা যায়

১৩-১৪. আমরা যদি কোনো ভাই কিংবা বোনকে দুঃখ দিয়ে থাকি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?

১৩ জীবনের পথে ক্রমাগত চলার জন্য আমাদের সবার সঙ্গে শান্তি বজায় রাখতে হবে। (রোমীয় ১২:১৮) যদি বুঝতে পারি, আমরা আমাদের কোনো ভাই কিংবা বোনকে দুঃখ দিয়েছি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? যাকোবের মতো আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত, যেন তিনি সেই ভাই কিংবা বোনের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করেন।

১৪ আমাদের নিজেদেরও পরীক্ষা করা উচিত। নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি কি নিজের ভুলগুলো স্বীকার করি এবং ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকি? আমি যদি আমার ভাই কিংবা বোনের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার জন্য এগিয়ে যাই, তা হলে যিহোবা ও যিশুর কেমন লাগবে?’ এভাবে, নিজেদের পরীক্ষা করা আমাদের যিশুর কথা শুনতে এবং ভাই-বোনদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করবে। এরজন্য আমাদের যাকোবের মতো নম্র হতে হবে।

১৫. আমাদের ভাইয়ের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার ব্যাপারে ইফিষীয় ৪:২, ৩ পদে কোন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?

১৫ একটু চিন্তা করুন, যাকোব যদি নম্র না হতেন এবং কে ঠিক বা কে ভুল সেই বিষয়ে এষৌর সঙ্গে ঝগড়া করতেন, তা হলে কী হত? এর পরিণতি খুব খারাপ হত। এটা থেকে আমরা শিখতে পারি যে, আমরা যখন শান্তি স্থাপন করতে যাই, তখন আমাদের নম্র হতে হবে। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:২, ৩.) হিতোপদেশ ১৮:১৯ পদে লেখা রয়েছে: “বিরক্ত ভ্রাতা দৃঢ় নগর অপেক্ষা [দুর্জ্জয়], আর বিবাদ দুর্গের অর্গলস্বরূপ।” কিন্তু, আমরা যদি নম্র হই এবং ক্ষমা চাই, তা হলে ‘দুর্গের অর্গল’ খুলে যাবে অর্থাৎ এটা সেই ভাইকে আমাদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতে সাহায্য করবে।

১৬. আমাদের কোন বিষয়ে চিন্তা করা উচিত আর কেন?

১৬ যে-ভাই কিংবা বোনকে আমরা দুঃখ দিয়েছি, তার সঙ্গে কথা বলার আগে আমাদের চিন্তা করা উচিত, আমরা কী বলব আর কীভাবে তা বলব। তারপর, আমরা যখন তার সঙ্গে দেখা করব, তখন আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত যেন সমস্ত মনোমালিন্য দূর হয়ে যায় আর আমরা আবারও বন্ধু হয়ে উঠি। তিনি এমন কিছু বলে ফেলতে পারেন, যেটা আমাদের খারাপ লাগতে পারে। সেইসময় আমাদের রাগ করা উচিত নয় অথবা নিজেকে সঠিক বলে প্রমাণ করা উচিত নয়। এতে কী হবে? এতে বিষয়টা আরও জটিল হয়ে যাবে। কে ঠিক আর কে ভুল, সেটা প্রমাণ করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা যেন তার সঙ্গে শান্তি স্থাপন করি।—১ করি. ৬:৭.

১৭. ভাই গিলবার্টের কাছ থেকে আপনি কী শিখেছেন?

১৭ গিলবার্ট নামে একজন ভাই শান্তি স্থাপন করার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছিলেন। তিনি বলেন: “আমার মেয়ের সঙ্গে আমার খুব-একটা ভালো সম্পর্ক ছিল না। দু-বছর ধরে আমি অনেক চেষ্টা করি, যাতে আমাদের সম্পর্ক ভালো হয়ে যায়। প্রত্যেক বার ওর সঙ্গে কথা বলার আগে আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতাম আর নিজেকে বলতাম, ‘ও আমাকে যা-ই বলুক না কেন, আমার রেগে যাওয়া উচিত নয় বরং ওকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত।’ আমি বুঝেছি যে, ওর উপর আমার অধিকার ফলানোর পরিবর্তে আমাকে ওর সঙ্গে শান্তি বজায় রাখতে হবে।” ভাই গিলবার্ট কি নিজের পরিশ্রমের ফল পেয়েছিলেন? ভাই বলেন: “আজ আমি অনেক খুশি যে, পরিবারের সবার সঙ্গে আমার এক উত্তম সম্পর্ক রয়েছে।”

১৮-১৯. আমরা যদি কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত আর কেন?

১৮ আমরা যদি বুঝতে পারি যে, আমরা কোনো ভাই কিংবা বোনকে দুঃখ দিয়েছি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? আমাদের যিশুর পরামর্শ কাজে লাগিয়ে সেই ভাই কিংবা বোনের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করা উচিত। এই ব্যাপারে আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত এবং তাঁর কাছ থেকে পবিত্র শক্তি চাওয়া উচিত। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা সুখী হতে পারব।—মথি ৫:৯.

১৯ আমরা যিহোবার কাছে কতই-না কৃতজ্ঞ যে, তিনি ‘মণ্ডলীর মস্তক’ অর্থাৎ যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে আমাদের পরামর্শ দেন। (ইফি. ৫:২৩) তাই আসুন, আমরা প্রেরিত পিতর, যাকোব ও যোহনের মতো ক্রমাগত যিশুর ‘কথা শুনি।’ (মথি ১৭:৫) এরজন্য আমাদের সেই ভাই-বোনদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করা উচিত, যাদের আমরা দুঃখ দিয়েছি এবং সেই কঠিন রাস্তা দিয়ে চলা উচিত, যেটা জীবনের দিকে নিয়ে যায়। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা শুধু বর্তমানে নয়, কিন্তু ভবিষ্যতেও চিরকালের জন্য সুখী হব।

গান ৩৫ ঈশ্বরের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা

^ অনু. 5 যিশু উৎসাহিত করেছিলেন, আমরা যেন সরু দরজা দিয়ে প্রবেশ করে সেই রাস্তায় চলি, যেটা জীবনের দিকে নিয়ে যায়। তিনি এও পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমরা যেন ভাই-বোনদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখি। কিন্তু, এই পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসতে পারে। আসুন দেখি, সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো কী আর কীভাবে আমরা সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি।

^ অনু. 7 তরুণ-তরুণীদের ১০ প্রশ্নের উত্তর নামক ব্রোশারের প্রশ্ন ৬ দেখো, যেটার শিরোনাম হল “কীভাবে আমি সঙ্গীসাথিদের চাপকে প্রতিরোধ করতে পারি?” এবং www.pr418.com ওয়েবসাইট থেকে সঙ্গীসাথিদের চাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করো! হোয়াইটবোর্ড অ্যানিমেশনটা দেখো। (ভিডিও > তরুণ-তরুণী > হোয়াইটবোর্ড অ্যানিমেশন)

^ অনু. 8 কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ অনু. 56 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: আমরা যদি যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তা হলে আমরা “কঠিন” রাস্তা দিয়ে ক্রমাগত চলতে পারব। এ ছাড়া, আমরা পর্নোগ্রাফি দেখার, যৌনসম্পর্ক করার এবং উচ্চশিক্ষা নেওয়ার বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব।

^ অনু. 58 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: এষৌর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার জন্য যাকোব বার বার তার সামনে প্রণিপাত করেছিলেন।