সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৮

আপনার পরামর্শ কি অন্যদের ‘মনকে আনন্দিত’ করে?

আপনার পরামর্শ কি অন্যদের ‘মনকে আনন্দিত’ করে?

“সুগন্ধি তেল আর ধূপ মনকে আনন্দ দেয়; ঠিক সেইভাবে বন্ধুর দেওয়া উপদেশ বন্ধুর কাছে মিষ্টি লাগে।”—হিতো. ২৭:৯, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

গান ৪২ ‘দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর’

সারাংশ *

১-২. একজন প্রাচীন পরামর্শ দেওয়ার ব্যাপারে কী শিখেছিলেন?

অনেক বছর আগে, দু-জন প্রাচীন এমন একজন বোনের সঙ্গে দেখা করতে যান, যিনি কিছুসময় ধরে সভায় যোগ দিচ্ছিলেন না। তাদের মধ্যে একজন প্রাচীন বাইবেল থেকে বিভিন্ন পদ খুলে বোনকে বোঝান যে, সভায় যোগ দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রাচীন ভাইয়ের মনে হয়েছিল, তিনি ভালো করেই তার দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু, সেই দু-জন প্রাচীন যখন বোনের বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছিলেন, তখন বোন একটু অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের বলেন: “আপনারা তো কিছুই জানেন না, আমি কোন পরিস্থিতিতে রয়েছি!” প্রাচীন ভাইয়েরা বোনকে এটা বোঝান ঠিকই যে, তাকে সভায় যোগ দেওয়া উচিত, কিন্তু তারা এটা জিজ্ঞেস করেননি, কেন তিনি সভায় যোগ দিচ্ছিলেন না। তাই, তাদের পরামর্শ বোনের ভালো লাগেনি।

সে-দিনের ঘটনার কথা মনে করে সেই প্রাচীন ভাই বলেন: “সেইসময় আমার মনে হয়েছিল, বোনের কথা বলার ধরন ঠিক ছিল না। কিন্তু পরে, আমি যখন এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমি বুঝতে পারি, আমি যদি এত শাস্ত্রপদ না দেখিয়ে প্রথমে জিজ্ঞেস করতাম, ‘সব কিছু কেমন চলছে? কীভাবে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?,’ তা হলে সেটা আরও ভালো হত।” সেই ঘটনা থেকে ভাই যা শিখেছিলেন, তা তিনি এখনও পর্যন্ত মনে রেখেছেন। এখন যখনই তিনি অন্যদের সঙ্গে কথা বলেন, তখনই তিনি তাদের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন।

৩. মণ্ডলীতে কারা পরামর্শ দিতে পারে?

  প্রাচীনেরা যিহোবার মেষদের দেখাশোনা করেন। তাই, তাদের দায়িত্ব হল প্রয়োজনে অন্যদের পরামর্শ দেওয়া। তবে, মণ্ডলীর অন্য ব্যক্তিরাও পরামর্শ দিতে পারে। যেমন, কোনো ভাই কিংবা বোন তার বন্ধুকে বাইবেল থেকে পরামর্শ দিতে পারেন। (গীত. ১৪১:৫; হিতো. ২৫:১২) অথবা একজন বয়স্ক বোন এক যুবতী বোনকে সেই বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন, যা তীত ২:৩-৫ পদে লেখা রয়েছে। আর বাবা-মায়েদের প্রায়ই তাদের সন্তানদের বোঝাতে এবং শেখাতে হয়। যদিও এই প্রবন্ধ বিশেষ করে প্রাচীনদের জন্য, তবে আমরা সবাই এখান থেকে কিছু-না-কিছু শিখতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, কীভাবে আমরা অন্যদের পরামর্শ দিতে পারি, যাতে তারা উৎসাহিত হয়, উপকার লাভ করে এবং তাদের ‘মন আনন্দিত’ হয়।—হিতো. ২৭:৯.

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব?

এই প্রবন্ধে আমরা চারটে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব: (১) পরামর্শ দেওয়ার সঠিক কারণ কী হওয়া উচিত? (২) পরামর্শ দেওয়ার কি সত্যিই প্রয়োজন রয়েছে? (৩) কে পরামর্শ দেবেন? (৪) ভালোভাবে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

পরামর্শ দেওয়ার সঠিক কারণ কী হওয়া উচিত?

৫. পরামর্শ দেওয়ার আগে প্রাচীনেরা কী করতে পারেন? (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৭)

প্রাচীনেরা ভাই-বোনদের ভালোবাসেন। আর কখনো কখনো এই ভালোবাসার কারণেই তারা এমন কোনো ভাই কিংবা বোনকে পরামর্শ দেন, যিনি কোনো ভুল পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। (গালা. ৬:১) কিন্তু, পরামর্শ দেওয়ার আগে প্রাচীনেরা কী করতে পারেন? তারা প্রেমের আলাদা আলাদা দিক নিয়ে চিন্তা করতে পারেন, যেগুলোর বিষয়ে প্রেরিত পৌল উল্লেখ করেছিলেন। পৌল বলেছিলেন: “প্রেম ধৈর্য ধরে এবং দয়া দেখায়। . . . প্রেম কোনো পরিস্থিতিতে হাল ছেড়ে দেয় না, সমস্ত কিছু বিশ্বাস করে, সবসময় প্রত্যাশা রাখে, সমস্ত কিছু সহ্য করে।” (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৩:৪, .) প্রাচীনেরা যদি এই পদগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন, তা হলে তারা প্রেমের সঙ্গে ভাই-বোনদের পরামর্শ দিতে পারবেন। আর ভাই-বোনেরা যখন অনুভব করবে যে, প্রাচীনেরা তাদের ভালোবাসেন, তখন তারা প্রাচীনদের পরামর্শ মেনে নিতে পারবে।—রোমীয় ১২:১০.

৬. প্রেরিত পৌলের কাছ থেকে প্রাচীনেরা কী শিখতে পারেন?

পরামর্শ দেওয়ার ব্যাপারে প্রাচীনেরা প্রেরিত পৌলের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, প্রেরিত পৌল যখন জানতে পেরেছিলেন যে, থিষলনীকীর ভাই-বোনদের পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে, তখন তিনি চিঠি লিখে তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে, পরামর্শ দেওয়ার আগে তিনি তাদের প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তারা বিশ্বস্তভাবে কাজ করছে, প্রেম সহকারে পরিশ্রম করছে এবং ধৈর্য ধরছে। পৌল এও লিখেছিলেন, তিনি তাদের পরিস্থিতি বোঝেন আর জানেন যে, বিভিন্ন তাড়না ও কষ্টের কারণে তাদের জীবন সহজ নয়। (১ থিষল. ১:৩; ২ থিষল. ১:৪) এ ছাড়া, পৌল তাদের বলেছিলেন, অন্য ভাই-বোনদের জন্য তারা এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করছে। (১ থিষল. ১:৮, ৯) একটু চিন্তা করুন, পৌলের এই কথাগুলো পড়ে থিষলনীকীর সেই ভাই-বোনেরা কতই-না আনন্দিত হয়েছিল! তারা হয়তো নিশ্চিত হয়েছিল যে, পৌল তাদের অনেক ভালোবাসেন। তাই, পৌল যখন তার দুটো চিঠির মাধ্যমে তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তখন তারা তা মেনে নিতে পেরেছিল।—১ থিষল. ৪:১, ৩-৫, ১১; ২ থিষল. ৩:১১, ১২.

৭. কেন কেউ কেউ পরামর্শ পাওয়ার পর অসন্তুষ্ট হয়ে যায়?

পরামর্শ যদি প্রেমের সঙ্গে না দেওয়া হয়, তা হলে কী হতে পারে? একজন অভিজ্ঞ প্রাচীন বলেন: “কেউ কেউ পরামর্শ পাওয়ার পর অসন্তুষ্ট হয়ে যায়। এর কারণ এই নয় যে, পরামর্শ ভুল ছিল বরং পরামর্শ প্রেমের সঙ্গে দেওয়া হয়নি।” এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা যদি চাই, অন্যেরা আমাদের পরামর্শ মেনে নিক, তা হলে আমাদের বিরক্ত হয়ে নয় বরং প্রেমের সঙ্গে তাদের পরামর্শ দিতে হবে।

পরামর্শ দেওয়ার কি সত্যিই প্রয়োজন রয়েছে?

৮. পরামর্শ দেওয়ার আগে একজন প্রাচীনের নিজেকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

বাইবেলে লেখা রয়েছে, আমরা যেন “হঠকারী” না হই অর্থাৎ চিন্তাভাবনা না করে কোনো কথা না বলি। (হিতো. ২৯:২০) প্রত্যেক প্রাচীনকে এই নীতি মেনে চলতে হবে। তাড়াহুড়ো করে পরামর্শ দেওয়ার পরিবর্তে, একজন প্রাচীনের নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘সেই ভাই কিংবা বোনকে পরামর্শ দেওয়ার কি সত্যিই প্রয়োজন রয়েছে? আমি কি এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, তিনি কোনো ভুল করছেন? তিনি কি বাইবেলের কোনো নিয়ম ভাঙছেন, না কি শুধু এমন কিছু করছেন, যেটা আমি করি না?’ সেই প্রাচীন যদি এই ব্যাপারে নিশ্চিত না হন, সেই ভাই কিংবা বোনকে পরামর্শ দেওয়া ঠিক হবে কি না, তা হলে তাকে অন্য প্রাচীনের সঙ্গে কথা বলা উচিত। তাকে সেই অন্য প্রাচীনকে জিজ্ঞেস করা উচিত, তারও কি মনে হয় যে, সেই ভাই কিংবা বোন কোনো ভুল করেছেন আর তাকে পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।—২ তীম. ৩:১৬, ১৭.

৯. পোশাক-আশাক এবং সাজগোজের ক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়ার ব্যাপারে আমরা পৌলের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? (১ তীমথিয় ২:৯, ১০)

এই বিষয়টা বোঝার জন্য একটা উদাহরণ লক্ষ করুন। ধরুন, একজন প্রাচীনের মনে হয়েছে যে, কোনো ভাই কিংবা বোনের পোশাক-আশাক অথবা সাজগোজের ধরন ঠিক নয়। এইরকম ক্ষেত্রে সেই প্রাচীন নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘সেই ভাই কিংবা বোন কি বাইবেলের কোনো নীতির বিরুদ্ধে কাজ করেছেন?’ তিনি এই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন, তিনি যেন নিজের ইচ্ছামতো কোনো পরামর্শ না দেন। তাই, তিনি অন্য কোনো প্রাচীন অথবা পরিপক্ব ভাই কিংবা বোনকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন। তারা একসঙ্গে পৌলের দেওয়া পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করতে পারে। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ২:৯, ১০.) পৌল খ্রিস্টানদের জন্য কোনো নিয়ম স্থির করেননি যে, তাদের কোন ধরনের পোশাক পরা উচিত এবং কোন ধরনের পোশাক পরা উচিত নয়। তিনি জানতেন, ভাই-বোনেরা বাইবেলের নীতি মেনে চলে নিজেদের পছন্দের পোশাক-আশাক পরতে পারে। তিনি শুধু এতটুকুই বলেছিলেন, তারা যেন চিন্তাভাবনা করে পোশাক-আশাক বাছাই করে আর খেয়াল রাখে, যাতে এটার মাধ্যমে যিহোবার বদনাম না হয়। এই কথাগুলো মাথায় রেখে প্রাচীনদের এটা নির্ধারণ করতে হবে, কোনো ভাই কিংবা বোনকে পোশাক-আশাক এবং সাজগোজের ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না।

১০. আমাদের কোন বিষয়টা মনে রাখতে হবে?

১০ আমাদের এটা মনে রাখতে হবে, কোনো বিষয়ে দু-জন ভাই আলাদা আলাদা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং দু-জনের সিদ্ধান্তই সঠিক হতে পারে। তাই, ভাই-বোনদের উপর আমাদের নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। আমরা তাদের এটা বলে দেব না যে, তাদের কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়।—রোমীয় ১৪:১০.

কে পরামর্শ দেবেন?

১১-১২. যদি পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তা হলে একজন প্রাচীন নিজেকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন আর কেন?

১১ এই বিষয়টা যদি স্পষ্ট হয়ে যায়, কোনো ভাই কিংবা বোনের পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে, তা হলে প্রশ্ন ওঠে যে, কে তাকে পরামর্শ দেবেন। কোনো বিবাহিত বোন অথবা কোনো বাচ্চা কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে পরামর্শ দেওয়ার আগে, একজন প্রাচীন তার পরিবারের মস্তকের সঙ্গে কথা বলবেন। পরিবারের মস্তক বলতে পারেন, তিনি নিজেই তার সঙ্গে কথা বলবেন। * অথবা তিনি বলতে পারেন, ‘আপনি যখন ওকে পরামর্শ দেবেন, তখন আমিও সেখানে থাকতে চাই।’ আর যদি একজন যুবতী বোনকে পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তা হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো হবে, যেন একজন বয়স্ক বোন তার সঙ্গে কথা বলেন, যেমনটা  ৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।

১২ পরামর্শ দেওয়ার আগে প্রাচীনদের আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। একজন প্রাচীন নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘আমার কি তাকে পরামর্শ দেওয়া ঠিক হবে, না কি ভালো হবে যেন অন্য কোনো প্রাচীন তাকে পরামর্শ দেন?’ উদাহরণ স্বরূপ, একজন ভাই হয়তো খুব হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং নিজেকে খুব অযোগ্য বলে মনে করছেন। এই ক্ষেত্রে ভালো হবে যেন এমন একজন প্রাচীন তাকে পরামর্শ দেন, যিনি তার মতো একই অনুভূতির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। তিনি সেই ব্যক্তির পরিস্থিতি ভালো করে বুঝতে পারবেন এবং আরও ভালোভাবে তাকে পরামর্শ দিতে পারবেন। তবে, প্রাচীনদের মধ্যে যদি এক জনও ভাই-বোনদের মতো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে না গিয়ে থাকেন, তা হলে তাদের কী করা উচিত? তাদের মনে রাখা উচিত, ভাই-বোনদের পরামর্শ দেওয়া এবং তাদের উৎসাহিত করার দায়িত্ব সমস্ত প্রাচীনেরই। তাই, প্রয়োজন দেখা দিলে প্রাচীনদের ভাই-বোনদের পরামর্শ দেওয়া উচিত।

ভালোভাবে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

কেন প্রাচীনদের “শোনার ব্যাপারে ইচ্ছুক” হতে হবে? (১৩-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩-১৪. কেন প্রাচীনদের অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত?

১৩মনোযোগ দিয়ে শুনুন। পরামর্শ দেওয়ার আগে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় একজন প্রাচীনের নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি আমার ভাইয়ের পরিস্থিতি সম্বন্ধে কতটা জানি? তার জীবনে সব কিছু কেমন চলছে? তিনি কি এমন কোনো সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, যেটা আমি জানি না? এই মুহূর্তে তার কোন ধরনের সাহায্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন?’

১৪ যারা পরামর্শ দেয়, তাদের সবার প্রতি যাকোব ১:১৯ পদের নীতি প্রযোজ্য। এই পদে যাকোব লিখেছিলেন: “তোমরা প্রত্যেকে শোনার ব্যাপারে ইচ্ছুক এবং কথা বলার ব্যাপারে ধীর হও আর দ্রুত রেগে যেয়ো না।” একজন প্রাচীনের মনে হতে পারে, তিনি ভাই-বোনদের সম্বন্ধে সব কিছু জানেন। কিন্তু, সত্যিই কি তিনি সব কিছু জানেন? হিতোপদেশ ১৮:১৩ পদ বলে: “শুনিবার পূর্ব্বে যে উত্তর করে, তাহা তাহার পক্ষে অজ্ঞানতা ও অপমান।” কারো পরিস্থিতি সম্বন্ধে জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হল, সরাসরি তাকেই জিজ্ঞেস করা। তাই, কোনো কিছু বলার আগে প্রাচীনদের মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনতে হবে। মনে করে দেখুন, এই প্রবন্ধের শুরুতে সেই প্রাচীন কী বলেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, নিজে কথা বলার আগে তার সেই বোনকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল যে, ‘সব কিছু কেমন চলছে? কীভাবে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?’ প্রাচীনেরা যদি সময় বের করে ভাই-বোনদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করেন, তা হলে তারা আরও ভালোভাবে তাদের সাহায্য করতে এবং তাদের উৎসাহিত করতে পারবেন।

১৫. কীভাবে প্রাচীনেরা হিতোপদেশ ২৭:২৩ পদে দেওয়া নীতি কাজে লাগাতে পারেন?

১৫ভাই-বোনদের ভালোভাবে জানার জন্য প্রচেষ্টা করুন। এই প্রবন্ধের শুরুতে যেমনটা বোঝানো হয়েছে, ভালোভাবে পরামর্শ দেওয়ার জন্য শুধু বাইবেল থেকে কিছু পদ দেখানো অথবা কিছু প্রস্তাব দেওয়া যথেষ্ট নয়। প্রাচীনেরা যেন ভাই-বোনদের এইরকমটা অনুভব করান যে, তারা তাদের জন্য চিন্তা করেন, তাদের পরিস্থিতি বোঝেন এবং তাদের সাহায্য করতে চান। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২৭:২৩.) তাই, প্রাচীনদের ভাই-বোনদের ভালো বন্ধু হওয়ার কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে।

কখন প্রাচীনদের জন্য পরামর্শ দেওয়া সহজ হবে? (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. ভালোভাবে পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রাচীনদের কী করতে হবে?

১৬ প্রাচীনদের খেয়াল রাখতে হবে যেন ভাই-বোনেরা এমনটা মনে না করে যে, প্রাচীনেরা তাদের সঙ্গে কেবল তখনই কথা বলেন, যখন তারা কোনো ভুল করে ফেলেছে। এর পরিবর্তে, প্রাচীনদের নিয়মিতভাবে ভাই-বোনদের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে হবে, বিশেষ করে তখন, যখন তারা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। একজন অভিজ্ঞ প্রাচীন বলেন: “এমনটা করার মাধ্যমে আপনি তাদের ভালো বন্ধু হয়ে উঠবেন। আর যদি প্রয়োজন হয়, তা হলে আপনি সহজেই তাদের পরামর্শ দিতে পারবেন।” শুধু তা-ই নয়, ভাই-বোনেরাও সহজে প্রাচীনদের দেওয়া পরামর্শ মেনে নিতে পারবে।

কেন প্রাচীনদের পরামর্শ দেওয়ার সময়ে ধৈর্য ধরতে এবং দয়া দেখাতে হবে? (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. একজন প্রাচীনকে বিশেষভাবে কখন ধৈর্য ধরতে এবং দয়া দেখাতে হবে?

১৭ধৈর্য ধরুন এবং দয়া দেখান। এই গুণগুলো সেইসময় দেখানো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যখন কেউ পরামর্শ মেনে নিতে চায় না। একজন ব্যক্তিকে যদি পরামর্শ দেওয়া হয় এবং তিনি তা সঙ্গেসঙ্গে মেনে না নেন, তা হলে একজন প্রাচীনের এই বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত, যেন তিনি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে না ফেলেন। তাকে যিশুর মতো হওয়া উচিত, যাঁর বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল: “তিনি থেঁতলে যাওয়া নলখাগড়া ভাঙবেন না এবং মিটমিট করে জ্বলতে থাকা সলতে নিভিয়ে ফেলবেন না।” (মথি ১২:২০) সেই প্রাচীন একান্তে প্রার্থনা করতে পারেন, যেন যিহোবা সেই ভাই কিংবা বোনকে এটা বুঝতে সাহায্য করেন, কেন তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং তিনি যেন তা মেনে নিতে পারেন। কিছু ভাই-বোনের পক্ষে পরামর্শ মেনে নেওয়ার জন্য সময় লাগতে পারে। তাই, প্রাচীনেরা যদি ধৈর্য ধরেন এবং সদয়ভাবে কথা বলেন, তা হলে অন্যেরা সহজেই তাদের পরামর্শ মেনে নিতে পারবে। এ ছাড়া, প্রাচীনদের সবসময় বাইবেল থেকে পরামর্শ দেওয়া উচিত।

১৮. (ক) পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোন বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে? (খ) বাক্সের সঙ্গে দেওয়া ছবিতে বাবা-মা কোন বিষয়ে কথা বলছেন?

১৮নিজের ভুল থেকে শিখুন। আমরা সবাই অসিদ্ধ। তাই, এই প্রবন্ধে দেওয়া পরামর্শগুলো আমরা হয়তো নিখুঁতভাবে মেনে চলতে পারব না। (যাকোব ৩:২) আমরা ভুল করবই। আমরা এমন কিছু বলে কিংবা করে ফেলত পারি, যেটার কারণে ভাই-বোনেরা আঘাত পেতে পারে। তবে, নিজেদের ভুল থেকে আমাদের শেখা উচিত এবং ভাই-বোনদের ভালোবাসা উচিত। তারা যখন অনুভব করবে যে, আমরা তাদের ভালোবাসি, তখন তারা আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করে দিতে পারবে।—এ ছাড়া, “ বাবা-মায়েদের জন্য” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

আমরা কী শিখেছি?

১৯. ভাই-বোনদের মন যাতে আনন্দিত হয়, সেইজন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৯ আমরা যেমনটা এই প্রবন্ধ থেকে শিখলাম, ভালোভাবে পরামর্শ দেওয়া সহজ নয়। আমরা সবাই অসিদ্ধ এবং আমাদের ভাই-বোনেরাও অসিদ্ধ। তাই, ভালো হবে যেন আমরা এই প্রবন্ধের বিষয়গুলো মনে রাখি। যেমন, আমাদের খেয়াল রাখা উচিত, আমরা যেন সঠিক কারণে ভাই-বোনদের পরামর্শ দিই। পরামর্শ দেওয়ার আগে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, পরামর্শ দেওয়ার কি সত্যিই প্রয়োজন রয়েছে এবং কে পরামর্শ দিলে ভালো হবে। আমাদের তাদের পরিস্থিতিও বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তা করার জন্য তাদের সরাসরি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হবে এবং মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনতে হবে। আমাদের ভাই-বোনদের ভালো বন্ধু হতে হবে এবং তাদের সঙ্গে ভালোভাবে আচরণ করতে হবে। মনে রাখবেন, আমরা চাই যেন ভাই-বোনেরা আমাদের পরামর্শ পেয়ে শুধুমাত্র উপকৃত না হয়, কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের ‘মনও আনন্দিত’ হয়।—হিতো. ২৭:৯.

গান ৬ ঈশ্বরের দাসের প্রার্থনা

^ অনু. 5 অন্যদের পরামর্শ দেওয়া সবসময় সহজ হয় না। কিন্তু, আমাদের যদি পরামর্শ দিতে হয়, তা হলে কীভাবে তা দিতে পারি, যাতে অন্যেরা উৎসাহিত হয় এবং উপকার লাভ করে? এই প্রবন্ধ বিশেষ করে প্রাচীনদের সাহায্য করবে যেন তারা এমনভাবে পরামর্শ দেন, যাতে ভাই-বোনেরা তা শোনে এবং মেনে চলে।

^ অনু. 11 ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “মণ্ডলীতে মস্তকপদের ভূমিকা কী?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।