সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১৫

আপনি কি কথা বলার ব্যাপারে উদাহরণযোগ্য?

আপনি কি কথা বলার ব্যাপারে উদাহরণযোগ্য?

“তুমি কথায়, . . . বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জন্য উদাহরণযোগ্য হও।”—১ তীম. ৪:১২.

গান ৫৩ একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা

সারাংশ *

১. কে আমাদের কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছেন?

 যিহোবা আমাদের অনেক ভালোবাসেন আর তিনিই আমাদের কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছেন। যখন প্রথম মানুষ আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তখন থেকেই তিনি যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন আর পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন শব্দও তৈরি করতে পারতেন। এই ক্ষমতার কারণে তিনি জীবজন্তুর নাম রাখতে পেরেছিলেন। (আদি. ২:১৯) আর একটু চিন্তা করুন, তিনি যখন প্রথম বার তার প্রিয় স্ত্রী হবার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন তিনি কতটা আনন্দিত হয়েছিলেন!—আদি. ২:২২, ২৩.

২. (ক) কীভাবে কথা বলার ক্ষমতার অপব্যবহার হতে শুরু হয়? (খ) বর্তমানে লোকদের কথাবার্তা কেমন?

মানুষ সৃষ্টি হওয়ার কিছুসময় পর, কথা বলার ক্ষমতার অপব্যবহার হতে শুরু হয়। শয়তান হবাকে মিথ্যা কথা বলেছিল, যেটার কারণে মানুষ পাপ করেছিল আর অসিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। (আদি. ৩:১-৪) আদম যখন ভুল করেছিলেন, তখন তিনি সমস্ত দোষ যিহোবা ও হবার উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। (আদি. ৩:১২) কয়িন তার ভাই হেবলকে হত্যা করার পর যিহোবার কাছে মিথ্যা কথা বলেছিলেন। (আদি. ৪:৯) পরবর্তী সময়ে, কয়িনের একজন বংশধর লেমক প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে একটা কবিতা লিখেছিলেন। এই কবিতা থেকে বোঝা যায়, সেই সময় জগতের অবস্থা কেমন ছিল আর লোকেরা কতটা হিংস্র হয়ে উঠেছিল। (আদি. ৪:২৩, ২৪) বর্তমানে, লোকদের কথাবার্তা কেমন? অনেক নেতা ভাষণ দেওয়ার সময়ে নোংরা ভাষা ব্যবহার করে আর বেশিরভাগ সিনেমাতে লোকদের গালিগালাজ করতে দেখা যায়। স্কুল হোক কিংবা কাজের জায়গা, আমরা যেখানেই থাকি না কেন, সেখানেই এইরকম ভাষা শুনতে পাই। এগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি, এই জগৎ কতটা নীচে নেমে গিয়েছে।

৩. (ক) কেন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?

আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে লোকদের দেখাদেখি আমরাও নোংরা ভাষা ব্যবহার করা শুরু করতে পারি। কিন্তু, আমরা যদি যিহোবাকে খুশি করতে চাই, তা হলে আমরা কখনোই এইরকম ভাষা ব্যবহার করব না। আমরা আমাদের কথা বলার ক্ষমতাকে ভালোভাবে ব্যবহার করব আর আমাদের কথাবার্তার দ্বারা যিহোবার প্রশংসা করব। এই প্রবন্ধে আমরা শিখব, যখন আমরা (১) প্রচার করি, (২) সভাগুলোতে থাকি এবং (৩) অন্যদের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমরা কীভাবে তা করতে পারি। তবে আসুন, সবচেয়ে প্রথমে আমরা মনোযোগ দিই, কেন যিহোবা চান যেন আমাদের কথাবার্তা ভালো হয়।

যিহোবা চান যেন আমাদের কথাবার্তা ভালো হয়

আপনার কথাবার্তা থেকে বোঝা যায় যে, আপনার হৃদয়ে আসলে কী আছে (৪-৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৪. মালাখি ৩:১৬ পদ অনুযায়ী কেন যিহোবা মনোযোগ দিয়ে আমাদের কথাবার্তা শোনেন?

মালাখি ৩:১৬ পদ পড়ুন। এই পদ অনুযায়ী, যিহোবা মনোযোগ দিয়ে লোকদের কথাবার্তা শোনেন কারণ তাদের কথাবার্তা থেকে বোঝা যায়, তাদের হৃদয়ে আসলে কী রয়েছে। আর যে-লোকদের কথাবার্তা থেকে বোঝা যায় যে, তারা তাঁকে ভয় করে এবং তাঁর নাম নিয়ে ধ্যান করে, তিনি তাদের নাম একটা ‘স্মরণার্থক পুস্তকে’ লিখে রাখেন। যিশুও বলেছিলেন: “হৃদয় যা দিয়ে পূর্ণ থাকে, মুখ সেটাই বলে।” (মথি ১২:৩৪) আমাদের কথাবার্তা থেকে যিহোবা জানতে পারেন, আমরা তাঁকে কত ভালোবাসি। আর যারা তাঁকে ভালোবাসে, তাদের তিনি অনন্তজীবন দিতে চান।

৫. (ক) কখন যিহোবা আমাদের উপাসনা গ্রহণ করবেন? (খ) ছবিতে যেমনটা দেখানো হয়েছে, আমাদের কী করা উচিত নয়?

যিহোবা আমাদের উপাসনা তখনই গ্রহণ করবেন, যখন আমাদের কথাবার্তা ভালো হবে। (যাকোব ১:২৬) যে-ব্যক্তিরা যিহোবাকে ভালোবাসে না, তারা প্রায়ই রেগে গিয়ে এবং রূঢ়ভাবে কথা বলে আর নিজেদের কথার দ্বারা অন্যদের আঘাত দেয়। (২ তীম. ৩:১-৫) কিন্তু, আমরা সেই ব্যক্তিদের মতো হতে চাই না। আমরা চাই যেন আমাদের কথাবার্তা শুনে যিহোবা খুশি হন। তাই, আমাদের শুধু প্রচার করার সময় এবং সভাগুলোতেই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে নিজেদের ঘরেও প্রেমের সঙ্গে আর সদয়ভাবে কথা বলা উচিত।—১ পিতর ৩:৭.

৬. কণিকার ভালো কথাবার্তার ফলে কী হয়েছিল?

আমাদের ভালো কথাবার্তা শুনে লোকেরা হয়তো জানতে চায়, কেন আমরা অন্যদের থেকে আলাদা। আর সেইসময় আমরা তাদের কাছে যিহোবা সম্বন্ধে কথা বলতে পারি। এর ফলে, লোকেরা স্পষ্টভাবে দেখতে পায় যে, “[কে] ঈশ্বরের সেবা করে, ও [কে] তাঁহার সেবা না করে।” (মালাখি ৩:১৮) কণিকা * নামে একজন বোনের অভিজ্ঞতার উপর মনোযোগ দিন। তাকে স্কুলে এক মেয়ের সঙ্গে একটা প্রজেক্টে কাজ করার জন্য বলা হয়েছিল। একসঙ্গে কাজ করার সময়ে সেই মেয়ে স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিল যে, কণিকা অন্যদের থেকে কতটা আলাদা। কণিকা পরনিন্দা করে না, গালিগালাজ করে না আর সবার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলে। সেই মেয়ে জানতে চেয়েছিল, কেন কণিকা অন্যদের থেকে এত আলাদা আর তাই সে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য রাজি হয়েছিল। আমাদের কথাবার্তা শুনে যখন লোকেরা যিহোবা সম্বন্ধে জানতে চায়, তখন চিন্তা করুন, এটা দেখে যিহোবা কতটা খুশি হন!

৭. আমাদের কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে?

আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমাদের কথাবার্তার দ্বারা যিহোবার প্রশংসা হয় আর ভাই-বোনদের সঙ্গে আমাদের এক উত্তম সম্পর্ক বজায় থাকে। তাই আসুন, কিছু পরামর্শের উপর মনোযোগ দিই, যেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা কথা বলার ব্যাপারে উদাহরণযোগ্য হতে পারি।

প্রচার করার সময়

আমরা যদি প্রচার করার সময় প্রেম সহকারে কথা বলি, তা হলে যিহোবা খুশি হবেন (৮-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৮. লোকদের কাছে প্রচার করার সময় কীভাবে আমরা যিশুর মতো হতে পারি?

যখন কেউ খারাপভাবে কথা বলে, তখনও প্রেম ও সম্মান সহকারে কথা বলুন। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তাঁর সম্বন্ধে লোকেরা বলেছিল যে, যিশু পেটুক ও মদ্যপায়ী এবং বিশ্রামবারের নিয়ম পালন করেন না। আবার কেউ কেউ বলেছিল, তিনি দিয়াবলের একজন সঙ্গী আর ঈশ্বরনিন্দা করেন। (মথি ১১:১৯; ২৬:৬৫; লূক ১১:১৫; যোহন ৯:১৬) তারপরও, যিশু তাদের পালটা জবাব দেননি। আজ লোকেরা আমাদের সম্বন্ধেও খারাপ কথাবার্তা বলতে পারে। কিন্তু, যিশুর মতো আমাদের কখনোই তাদের পালটা জবাব দেওয়া উচিত নয়। (১ পিতর ২:২১-২৩) তবে, এমনটা করা সহজ নয়। (যাকোব ৩:২) এই ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা আমাদের সাহায্য করতে পারে?

৯. প্রচার করার সময় যখন কোনো ব্যক্তি রেগে যায়, তখন আমরা কী করতে পারি?

প্রচার করার সময় যখন কেউ আমাদের সঙ্গে খারাপভাবে কথা বলে, তখন আমাদের রেগে যাওয়া উচিত নয়। সনু নামে একজন ভাই বলেন: “আমি মনে রাখি, সত্য সম্বন্ধে জানা গৃহকর্তার জন্য কতটা জরুরি এবং পরবর্তী সময়ে তিনি পরিবর্তিত হতে পারেন।” কখনো কখনো একজন ব্যক্তি আমাদের উপরে রেগে যেতে পারেন কারণ আমরা ভুল সময়ে দরজার কড়া নেড়েছি। আমাদের যখন এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়, যিনি খুব রেগে আছেন, তখন আমরা প্রার্থনা করতে পারি। লুসি নামে একজন বোনও এইরকমই করেন। বোন যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চান, যেন তিনি শান্ত থাকতে পারেন এবং কোনো আজেবাজে কথা বলে না ফেলেন।

১০. প্রথম তীমথিয় ৪:১৩ পদ অনুযায়ী আমাদের কী করে যাওয়া উচিত?

১০ শেখানোর ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ান। তীমথিয় লোকদের অনেক ভালোভাবে শেখাতেন। কিন্তু, তাকেও নিজের দক্ষতা ক্রমাগত বাড়াতে হত। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ৪:১৩.) কীভাবে আমরা এই দক্ষতা বাড়াতে পারি? আমরা যদি ভালোভাবে প্রস্তুতি নিই, তা হলে আমরা লোকদের ভালোভাবে শেখাতে পারব। এইজন্য সংগঠন আমাদের বিভিন্ন প্রকাশনা জুগিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, শিক্ষা দেওয়া ব্রোশার আর সেইসঙ্গে জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-য় দেওয়া “প্রচার কাজে আপনার দক্ষতা বাড়ান” বিভাগ থেকে আপনি কিছু পরামর্শ পাবেন। এগুলো মেনে চললে আপনি অনেক উপকার পাবেন। আর আপনি যখন ভালোভাবে প্রস্তুতি নেবেন, তখন আপনি বেশি ঘাবড়ে যাবেন না বরং আস্থা সহকারে কথা বলতে পারবেন।

১১. কীভাবে কিছু ভাই-বোন শেখানোর ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়েছে?

১১ মণ্ডলীর অন্যান্য ভাই-বোনকে দেখার মাধ্যমেও আমরা শেখানোর ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারি। সনু, যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি অন্যান্য অভিজ্ঞ ভাই-বোনকে মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ করেন যে, তারা কীভাবে অন্যদের শেখায়। তারপর, তিনি নিজেও সেইরকমটা করার চেষ্টা করেন। তানিয়া নামে একজন বোন লক্ষ করেন, কীভাবে অভিজ্ঞ ভাইয়েরা উত্তমভাবে জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। এভাবে, তিনি প্রচার করার সময়ে লোকদের ভালোভাবে শেখাতে পারেন আর তাদের সঙ্গে যুক্তি করতে পারেন।

সভাগুলোতে

সভাগুলোতে উদ্যোগ সহকারে গান গাওয়ার মাধ্যমে আমরা যিহোবার প্রশংসা করি (১২-১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. কিছু লোক কী করতে ইতস্তত বোধ করে?

১২ আমরা সবাই উদ্যোগ সহকারে গান গাওয়ার আর ভালোভাবে উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে সভাগুলোতে অংশ নিতে পারি। তবে, কিছু লোক তা করতে ইতস্তত বোধ করে। (গীত. ২২:২২) যদি আপনি এমনটা অনুভব করে থাকেন, তা হলে অন্যান্য ভাই-বোনের অভিজ্ঞতা পড়ে আপনি সাহায্য পেতে পারেন।

১৩. সভাগুলোতে উদ্যোগ সহকারে গান গাওয়ার জন্য আপনি কী করতে পারেন?

১৩ উদ্যোগ সহকারে গান করুন। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যখন সভাগুলোতে গান গাই, তখন এর ফলে যিহোবার প্রশংসা হয়। সারা নামে একজন বোন বলেন, তিনি খুব ভালোভাবে গান গাইতে পারেন না। তারপরও, তিনি গান গাওয়ার মাধ্যমে যিহোবার প্রশংসা করতে চান। তাই, সভাগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তিনি গানও প্র্যাকটিস করেন। তিনি বিশেষ করে এই বিষয়ে লক্ষ রাখেন, গানের কথাগুলো সভার আলাদা আলাদা ভাগের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত। তিনি বলেন: “আমি যখন গানের কথাগুলোর উপর মনোযোগ দিই, তখন আমি এই বিষয়ে চিন্তা করি না যে, আমি কীভাবে গাইছি।”

১৪. আপনার যদি উত্তর দিতে ভয় লাগে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?

১৪ প্রতিটা সভায় উত্তর দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করুন। কিছু ব্যক্তির পক্ষে এমনটা করা অনেক কঠিন হতে পারে। তানিয়া, যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বলেন: “অন্যেরা না জানলেও আমি জানি, উত্তর দেওয়ার সময় আমি কতটা ভয় পেয়ে যাই।” তারপরও, তিনি উত্তর দেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন। তিনি যখন সভাগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেন, তখন এই বিষয়টা মনে রাখেন যেন তার উত্তর সংক্ষিপ্ত ও সরাসরি হয়। তিনি বলেন, “যদি আমার উত্তর সংক্ষিপ্ত, সরাসরি এবং মুখ্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তা হলে এটা ভুল কিছু নয়। সত্যি বলতে কী, অধ্যয়ন পরিচালক ভাইও চান যেন আমরা সকলে এভাবেই উত্তর দিই।”

১৫. উত্তর দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

১৫ কিছু ভাই-বোন লাজুক স্বভাবের নয়, তারপরও তারা উত্তর দেওয়ার ব্যাপারে ইতস্তত বোধ করে। কেন? জুলি নামে একজন বোন বলেন: “কখনো কখনো আমার মনে হয় যেন আমার উত্তর খুবই সাধারণ, তাই আমি হাত তুলি না।” তবে, আমরা সবাই মনে রাখতে পারি যে, যিহোবা শুধু আমাদের কাছ থেকে এটুকুই চান যেন আমরা নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী ভালো করে উত্তর দিই। * যিহোবা যখন দেখেন, ভয় পাওয়া সত্ত্বেও আমরা সভাগুলোতে উত্তর দেওয়ার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করি, তখন তিনি খুব খুশি হন।

অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময়

১৬. আমাদের কোন ধরনের কথাবার্তা বলা উচিত নয়?

১৬ গালিগালাজ করবেন না এবং অন্যেরা অপমানিত হতে পারে এমন কথাবার্তা বলবেন না। (ইফি. ৪:৩১) আমরা জানি যে, আমাদের কখনোই গালিগালাজ করা উচিত নয় এবং এমন কথাবার্তা বলাও উচিত নয়, যেটার কারণে অন্যেরা অপমানিত হয়। আমরা হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে তা করি না, তবে অজান্তেই আমরা এমনটা করে ফেলতে পারি। যেমন অন্য সংস্কৃতির, জাতির কিংবা দেশের লোকদের বিষয়ে কথা বলার সময়ে আমরা তাদের নিয়ে উপহাস করতে পারি অথবা তাদের দুর্নাম করতে পারি। আবার হতে পারে, আমরা কাউকে টিটকারি দিই অথবা আঘাতদায়ক কথা বলি। একজন ভাই বলেন: “হাসতে হাসতে আমি এমন কিছু বলে ফেলতাম, যেটার কারণে অন্যদের খুব খারাপ লাগত। তবে বছরের পর বছর ধরে, আমার স্ত্রী এই বিষয়ে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। যখনই আমি এমন কিছু বলেছি, যেটার ফলে ওর কিংবা অন্যদের খুব খারাপ লেগেছে, তখনই ও আমাকে একান্তে বিষয়টা বুঝিয়েছে।”

১৭. ইফিষীয় ৪:২৯ পদ অনুযায়ী কীভাবে আমরা অন্যদের শক্তি লাভ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারি?

১৭ আপনার কথার দ্বারা অন্যদের শক্তি লাভ করতে সাহায্য করুন। সবসময় অভিযোগ করার অথবা অন্যদের ভুলত্রুটি বের করার পরিবর্তে তাদের প্রশংসা করুন। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:২৯.) ইজরায়েলীয়েরা অনেক আশীর্বাদ লাভ করেছিল, তারপরও যখনই তারা সুযোগ পেত, তখনই অভিযোগ করত। আর প্রায়ই দেখা গিয়েছে, একজন ব্যক্তিকে অভিযোগ করতে দেখে অন্যেরাও তা করতে শুরু করে। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, যখন দশ জন গুপ্তচর প্রতিজ্ঞাত দেশের বিষয়ে খারাপ খারাপ কথা বলেছিল, তখন এটা শুনে “ইস্রায়েল-সন্তানগণ সকলে মোশির বিপরীতে . . . বচসা করিল।” (গণনা. ১৩:৩১–১৪:৪) কিন্তু, অভিযোগ করার পরিবর্তে আমরা যদি উৎসাহজনক কথা বলি, তা হলে এটা সবার উপর ভালো প্রভাব ফেলবে। যিপ্তহের মেয়ের উদাহরণ লক্ষ করুন। প্রতি বছর যখন তার বান্ধবীরা তার সঙ্গে দেখা করতে আসত, তখন তারা তাকে প্রশংসা করত। (বিচার. ১১:৪০) এর ফলে, তিনি যিহোবার সেবা করে চলার জন্য অনেক উৎসাহ লাভ করেছিলেন। সারা, যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বলেন: “আমরা যখন কারো প্রশংসা করি, তখন আমরা তাকে এই আশ্বাস দিই যে, যিহোবা এবং অন্যেরা তাকে ভালোবাসেন আর তিনি অনেক মূল্যবান।” তাই, যখনই সুযোগ পান, তখনই মন থেকে অন্যদের প্রশংসা করুন।

১৮. (ক) গীতসংহিতা ১৫:১, ২ পদ অনুযায়ী কেন আমাদের সত্য কথা বলা উচিত? (খ) সত্য কথা বলার অন্তর্ভুক্ত কী?

১৮ সত্য কথা বলুন। আমরা যদি যিহোবাকে সন্তুষ্ট করত চাই, তা হলে আমাদের কখনোই মিথ্যা কথা বলা উচিত নয়। যিহোবা সমস্ত ধরনের মিথ্যা কথাকে ঘৃণা করেন। (হিতো. ৬:১৬, ১৭) অনেক লোকের মনে হতে পারে যে, আজকাল মিথ্যা কথা বলা একটা সাধারণ বিষয়, এতে ভুল কিছু নেই। কিন্তু, লোকদের কথা শোনার পরিবর্তে আমাদের যিহোবার কথা শোনা উচিত। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৫:১, ২.) সরাসরি মিথ্যা বলা তো দূরের কথা, আমাদের অর্ধেক সত্য বলাও উচিত নয় আর সেইসঙ্গে কথা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলাও উচিত নয়, যেটার কারণে লোকেরা ভুল বুঝতে পারে।

কারো সম্বন্ধে গুজব ছড়ানোর পরিবর্তে, আমরা যদি ভালো কথাবার্তা বলি, তা হলে যিহোবা খুশি হবেন (১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৯. আমাদের আর কী করা উচিত নয়?

১৯ অন্যদের সম্বন্ধে গুজব ছড়াবেন না। (হিতো. ২৫:২৩; ২ থিষল. ৩:১১) জুলি, যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বলেন: “আমি যখন কাউকে অন্যদের সম্বন্ধে গুজব ছড়াতে শুনি, তখন আমার একদমই ভালো লাগে না। তার উপর আমি আর বিশ্বাস করতে পারি না। আজ সে অন্য কারো সম্বন্ধে গুজব ছড়াচ্ছে, কাল হয়তো সে আমার সম্বন্ধে গুজব ছড়াবে।” তাই, যখনই আপনি দেখবেন, কেউ কারো সম্বন্ধে গুজব ছড়াচ্ছে, তখনই কথাবার্তা থামিয়ে দিন আর কোনো ভালো বিষয় নিয়ে কথা বলুন।—কল. ৪:৬.

২০. আমাদের কী করে চলার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে?

২০ আমাদের আশেপাশের লোকেরা খুবই খারাপ ভাষা ব্যবহার করে। তাই, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা তাদের মতো হয়ে না যাই। আমাদের মনে রাখতে হবে, কথা বলার ক্ষমতা আমরা যিহোবার কাছ থেকে পেয়েছি আর তিনি চান, আমরা যেন এটাকে ভালোভাবে ব্যবহার করি। আমরা যদি প্রচার করার সময়, সভাগুলোতে এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় তা করি, তা হলে যিহোবা খুশি হবেন এবং আমাদের আশীর্বাদ করবেন। যখন এই দুষ্ট জগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন আমাদের কথার দ্বারা যিহোবার প্রশংসা করা আরও সহজ হবে। (যিহূদা ১৫) কিন্তু, সেই সময় না আসা পর্যন্ত, আসুন আমরা আমাদের “মুখের বাক্য” দ্বারা যিহোবার প্রশংসা করার জন্য প্রচেষ্টা করে চলি।—গীত. ১৯:১৪.

গান ৫২ তোমার হৃদয়কে রক্ষা করো

^ অনু. 5 যিহোবা মানুষকে এক বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন, সেটা হল কথা বলার ক্ষমতা। তবে দুঃখের বিষয় হল, অনেক লোক এই ক্ষমতার অপব্যবহার করছে আর তাদের কথাবার্তা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এইরকম ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি, যাতে আমাদের কথাবার্তা ভালো থাকে আর অন্যেরা এর দ্বারা শক্তি লাভ করে? আমরা যখন প্রচার করি, সভাগুলোতে থাকি এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলি, তখন কীভাবে আমরা আমাদের কথাবার্তার মাধ্যমে যিহোবাকে খুশি করতে পারি? এই প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানব।

^ অনু. 6 কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ অনু. 15 সভাগুলোতে উত্তর দেওয়ার ব্যাপারে আরও তথ্য জানার জন্য ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “মণ্ডলীতে যিহোবার প্রশংসা করুন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

^ অনু. 61 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: প্রচার করার সময় একজন ব্যক্তি যখন রেগে গিয়ে কথা বলেন, তখন ভাইও তাকে পালটা জবাব দেন। একজন ভাই মণ্ডলীতে উদ্যোগের সঙ্গে গান গাইছেন না। একজন বোন কারো সম্বন্ধে গুজব ছড়াচ্ছেন।