সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৭

“তোমরা সদাপ্রভুর উপর আশা রাখ”

“তোমরা সদাপ্রভুর উপর আশা রাখ”

“তোমরা সদাপ্রভুর উপর আশা রাখ; মনে শক্তি আন ও সাহসে বুক বাঁধ।”—গীত. ২৭:১৪, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

গান ২৪ পুরস্কারে তোমার চোখ রাখো!

সারাংশ *

১. (ক) যিহোবার কাছ থেকে আমরা কোন আশা লাভ করেছি? (খ) “সদাপ্রভুর উপর আশা” রাখার অর্থ কী? (“এই অভিব্যক্তির অর্থ” দেখুন।)

 আমাদের কাছে এক অপূর্ব আশা রয়েছে। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি খুব শীঘ্রই আমাদের দুঃখকষ্ট, অসুস্থতা ও মৃত্যু দূর করে দেবেন। (প্রকা. ২১:৩, ৪) আর এই পৃথিবীকে আবারও পরমদেশে পরিণত করার জন্য ‘মৃদুশীল’ ব্যক্তিদের সাহায্য করবেন। (গীত. ৩৭:৯-১১) শুধু তা-ই নয়, সেই সময় আমরা যিহোবা সঙ্গে আরও নিকট সম্পর্ক উপভোগ করব। কিন্তু, কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবার এই প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হবে? কারণ আজ পর্যন্ত তিনি যা-কিছু বলেছেন, সেগুলো সবই পরিপূর্ণ হয়েছে। এই কারণে আমরা “সদাপ্রভুর উপর আশা” রাখতে পারি। * (গীত. ২৭:১৪) তবে, কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমাদের যিহোবার উপর আশা রয়েছে? আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে আর আনন্দের সঙ্গে সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে, যখন যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করবেন।—যিশা. ৫৫:১০, ১১.

২. যিহোবা কী প্রমাণ করেছেন?

যিহোবা প্রমাণ করেছেন যে, তিনি তাঁর প্রতিটা প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করেন। আসুন, এই বিষয়ে একটা উদাহরণ লক্ষ করি। প্রকাশিত বাক্য বইয়ে যিহোবা লিখেছিলেন, আমাদের দিনে সমস্ত জাতি, বংশ ও ভাষার লোকেরা মিলে তাঁর উপাসনা করবে। এই বিশেষ দলকে “বিরাট জনতা” বলা হয়েছে। (প্রকা. ৭:৯, ১০) আজ যিহোবার এই প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হচ্ছে। এই জনতার মধ্যে পুরুষ, মহিলা আর সেইসঙ্গে সন্তানেরাও রয়েছে। এই লোকেরা আলাদা আলাদা ভাষায় কথা বলে, আলাদা আলাদা দেশে থাকে এবং তাদের জীবনযাপন করার ধরণও আলাদা। তারপরও, একটা পরিবারের মতো তাদের মধ্যে ভালোবাসা ও একতা আছে। (গীত. ১৩৩:১; যোহন ১০:১৬) তারা উদ্যোগের সঙ্গে লোকদের এই আশার বিষয় বলে যে, খুব শীঘ্রই সমস্ত কিছু ঠিক হয়ে যাবে। (মথি ২৮:১৯, ২০; প্রকা. ১৪:৬, ৭; ২২:১৭) আপনিও যদি সেই বিরাট জনতার অংশ হয়ে থাকেন, তা হলে আপনার জন্য এই আশা অনেক মূল্যবান আর আপনি অধীর আগ্রহে সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন, যখন এটা পরিপূর্ণ হবে।

৩. শয়তান কী চায়?

শয়তান চেষ্টা করে যেন আমরা আমাদের আশা হারিয়ে ফেলি। সে চায় যেন আমরা এইরকম চিন্তা করি, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন না আর তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করবেন না। তবে, আমরা যদি আশা হারিয়ে ফেলি, তা হলে আমরা সাহস হারিয়ে ফেলব এবং যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেব। শয়তান চেষ্টা করেছিল যেন ইয়োব তার আশা হারিয়ে ফেলেন এবং যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেন।

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব? (ইয়োব ১:৯-১২)

এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, ইয়োব যাতে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত না থাকেন, তারজন্য শয়তান কী করেছিল। (পড়ুন, ইয়োব ১:৯-১২.) আমরা এও জানতে পারব, ইয়োবের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি আর কেন আমাদের মনে রাখা উচিত যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন এবং তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করবেন।

শয়তান চেষ্টা করেছিল, যাতে ইয়োব তার আশা হারিয়ে ফেলেন

৫-৬. ইয়োবের প্রতি একের-পর-এক কী ঘটেছিল?

ইয়োবের জীবনে সব কিছু ভালোই চলছিল। যিহোবার সঙ্গে তার এক উত্তম সম্পর্ক ছিল, তার এক সুখী পরিবার ছিল এবং অনেক ধনসম্পত্তি ছিল। (ইয়োব ১:১-৫) তবে, একদিন সব কিছু পালটে গিয়েছিল। তিনি তার সমস্ত ধনসম্পত্তি হারিয়েছিলেন। (ইয়োব ১:১৩-১৭) এরপর, তার সমস্ত সন্তান মারা গিয়েছিল। একজন বাবা-মা যখন চোখের সামনে তাদের কোনো সন্তানকে মারা যেতে দেখে, তখন তাদের জীবনে শোকের ছায়া নেমে আসে। কিন্তু, ইয়োব তার এক জন সন্তানকে নয় বরং দশ জন সন্তানকে মৃত্যুতে হারিয়েছিলেন। তারা ঘরের নীচে চাপা পড়ে মারা গিয়েছিল। একটু চিন্তা করুন, সেইসময় ইয়োব এবং তার স্ত্রী কত বড়ো আঘাত পেয়েছিলেন! তারা শোকে ডুবে গিয়েছিলেন আর নিজেকে খুবই অসহায় ও দুর্বল মনে করেছিলেন। ইয়োব দুঃখে নিজের কাপড় ছিঁড়েছিলেন আর মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন।—ইয়োব ১:১৮-২০.

এরপর, শয়তান নিজে ইয়োবকে এক যন্ত্রণাদায়ক রোগের দ্বারা অসুস্থ করে দিয়েছিল আর তার মানসম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। (ইয়োব ২:৬-৮; ৭:৫) একসময়, লোকেরা ইয়োবকে খুব সম্মান করত আর তার কাছ থেকে পরামর্শ চাইত। (ইয়োব ২৯:৭, ৮, ২১) কিন্তু, এখন তারা ইয়োবকে এড়িয়ে চলছিল। তার নিজের ভাইয়েরা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল আর সেইসঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, তার দাসেরা তার কথা শুনতে চাইছিল না।—ইয়োব ১৯:১৩, ১৪, ১৬.

ইয়োবের সামনে যে-সমস্যাগুলো এসেছিল, আজ অনেক ভাই-বোনের সামনে সেই একই সমস্যাগুলো আসে। তাই তারা বুঝতে পারে, ইয়োবের কেমন লেগেছিল (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৭. (ক) তার উপর কে দুঃখকষ্ট নিয়ে আসছিল বলে ইয়োবের মনে হয়েছিল? (খ) কিন্তু তিনি কী করেননি? (গ) আজ আমাদেরও হয়তো কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়? (ছবি দেখুন।)

শয়তান ইয়োবকে এইরকম চিন্তা করাতে চেয়েছিল যে, যিহোবা তার উপর রেগে আছেন আর এই কারণে তাকে এত কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। সেইজন্য শয়তান প্রথমে স্বর্গ থেকে আগুন ফেলেছিল, যেটার জন্য ইয়োবের মেষপাল আর যে-যুবকেরা তা দেখাশোনা করছিল, তারা সবাই মারা গিয়েছিল। (ইয়োব ১:১৬) এরপর, সে প্রচণ্ড ঝড় উঠিয়েছিল, যেটার জন্য সেই ঘরও ভেঙে গিয়েছিল, যেখানে ইয়োবের সন্তানেরা খাওয়া-দাওয়া করছিল। (ইয়োব ১:১৮, ১৯) এই সমস্ত কিছু থেকে ইয়োব ভেবেছিলেন যে, এর পিছনে নিশ্চয়ই যিহোবা রয়েছে। তার মনে হয়েছিল, তিনি হয়তো এমন কিছু করেছেন, যেটার কারণে যিহোবা রেগে গিয়েছেন। তারপরও, ইয়োব যিহোবা সম্বন্ধে কোনো খারাপ কথা বলেননি। তিনি স্মরণ করেছিলেন যে, যিহোবা এখনও পর্যন্ত কীভাবে তাকে আশীর্বাদ করেছেন আর চিন্তা করেছিলেন, ‘আমি ঈশ্বর হইতে কি মঙ্গলই গ্রহণ করিব, অমঙ্গল গ্রহণ করিব না?’ তাই, ইয়োব বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর নাম ধন্য হউক।” (ইয়োব ১:২০, ২১; ২:১০) ইয়োব তার ধনসম্পত্তি হারিয়েছিলেন, তার সমস্ত সন্তান মারা গিয়েছিল এবং তার এক কঠিন রোগও হয়েছিল। তারপরও, ইয়োব যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। তাই, শয়তান আরও কিছু করার চেষ্টা করে।

৮. শয়তান এবার কোন ফন্দি আঁটে?

শয়তান তার পরবর্তী ফন্দি আঁটে। সে ইয়োবের তিন বন্ধুর মাধ্যমে তাকে এইরকমটা মনে করাতে চেয়েছিল, তিনি কোনো কাজের নন। সেই বন্ধুরা তাকে বলেছিলেন, তিনি নিশ্চয়ই অনেক পাপ করেছেন, তাই তার প্রতি এইসব ঘটছে। (ইয়োব ২২:৫-৯) তিনি যদি ভালো কাজ করেও থাকেন, তারপরও যিহোবার তাতে কিছু যায়-আসে না। (ইয়োব ৪:১৮; ২২:২, ৩; ২৫:৪) এ ছাড়া, তারা ইয়োবকে এইরকমটা মনে করাতে চেয়েছিল, ঈশ্বর তাকে ভালোবাসেন না, তার জন্য চিন্তাও করেন না এবং ঈশ্বরের সেবা করে কোনো লাভ নেই। তাদের কথা শুনে ইয়োব হতাশ হয়ে পড়তে পারতেন। কিন্তু, তিনি কি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন?

৯. কেন ইয়োব সাহস বজায় রাখতে আর যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পেরেছিলেন?

একটু চিন্তা করে দেখুন, ইয়োব ছাইয়ের উপর বসে আছেন এবং যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। (ইয়োব ২:৮) ইয়োবের জীবনে পাহাড়ের মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং তিনি সন্তানদের কথা চিন্তা করে খুব কষ্ট পাচ্ছেন। তবে, তিনি কোনো কথা বলছেন না। (ইয়োব ২:১৩–৩:১) ইয়োবকে চুপ করে থাকতে দেখে তার বন্ধুদের হয়তো মনে হয়েছিল, তিনি যিহোবার দিক থেকে মুখ সরিয়ে নেবেন এবং তাঁর নিন্দা করবেন। কিন্তু, এমন কিছুই হয়নি। ইয়োবের বন্ধুরা তাকে অভিযোগ করেই চলেছেন আর তার সম্বন্ধে খারাপ কথা বলেই যাচ্ছেন। অবশেষে, তিনি তাদের উত্তর দেন। কল্পনা করুন, তিনি মাথা তোলেন আর তার বন্ধুদের চোখে চোখ রেখে বলেন: “প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা [“বিশ্বস্ততা,” NW] ত্যাগ করিব না।” (ইয়োব ২৭:৫) এত সমস্যা আসা সত্ত্বেও কেন ইয়োব সাহস বজায় রাখতে আর যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পেরেছিলেন? তাকে যখন একের-পর-এক সমস্যা ঘিরে ধরেছিল, তখনও তিনি আশা ছেড়ে দেননি। তিনি আশা রেখেছিলেন, একদিন যিহোবা তার সমস্ত দুঃখকষ্ট দূর করে দেবেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, যদি তিনি মারাও যান, তারপরও যিহোবা তার জীবন ফিরিয়ে দেবেন।—ইয়োব ১৪:১৩-১৫.

ইয়োবের কাছ থেকে শিখুন

১০. ইয়োবের বিবরণ থেকে আমরা কোন বিষয়গুলো শিখতে পারি?

১০ ইয়োবের বিবরণ থেকে আমরা শিখতে পারি, শয়তান যিহোবাকে পরিত্যাগ করার জন্য আমাদের বাধ্য করতে পারে না আর যিহোবা খুব ভালোভাবে জানেন, আমরা কোন পরিস্থিতিতে আছি। এ ছাড়া, এই বিবরণ থেকে আমরা বুঝতে পারি, শয়তান কোন বিষয়গুলো তুলেছিল এবং কীভাবে আমরা ইয়োবের মতো যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি।

১১. আমরা যদি যিহোবার উপর আস্থা রাখি, তা হলে আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি? (যাকোব ৪:৭)

১১ আমরা যদি ইয়োবের মতো যিহোবার উপর আস্থা রাখি, তা হলে আমরা সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব আর শয়তানের প্রতিরোধ করতে পারব। বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয়, আমরা যদি তা করি, তা হলে শয়তান আমাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে।—পড়ুন, যাকোব ৪:৭.

১২. মৃত ব্যক্তিরা যে জীবন ফিরে পাবে, এই আশা থেকে ইয়োব কীভাবে সাহস পেয়েছিলেন?

১২ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে, আমরা যদি মারাও যাই, যিহোবা আমাদের জীবন ফিরিয়ে দেবেন। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আগে প্রবন্ধে আমরা শিখেছিলাম, শয়তান চায় যেন আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই আর নিজেদের জীবন রক্ষা করার জন্য বাইবেলের নীতিগুলোর বিরুদ্ধে যাই। শয়তান ইয়োবের প্রতি এমনই কিছু করেছিল। শয়তান ইয়োবের উপর অভিযোগ নিয়ে এসেছিল যে, তিনি নিজের জীবন রক্ষা করার জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি আছেন, এমনকী যিহোবাকে পরিত্যাগ করতেও রাজি আছেন। কিন্তু, ইয়োব শয়তানকে মিথ্যা প্রমাণ করেছিলেন। যখন তার জীবনে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছিল না আর তিনি মনে করেছিলেন যে, তিনি আর বাঁচবেন না, তখনও ইয়োব যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, যিহোবা হলেন মঙ্গলময় আর তিনি একদিন সব কিছু ঠিক করে দেবেন। আর তার প্রকৃত আশা ছিল যে, তিনি যদি মারাও যান, ভবিষ্যতে যিহোবা তার জীবন ফিরিয়ে দেবেন আর তখন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। ইয়োবের মতো আমরাও যদি এই বিষয়ে পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত থাকি আর আমাদের প্রকৃত আশা থাকে, তা হলে কোনো কিছুই যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা দিতে পারবে না, এমনকী আমাদের শেষ শত্রু মৃত্যুও নয়।

১৩. শয়তান ইয়োবের সময়ে যে-ফন্দি এটেঁছিল, সেটার উপর কেন আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত?

১৩ শয়তান আজও সেই একই ফন্দি আঁটে, যেমনটা সে ইয়োবের সময়ে করেছিল। লক্ষ করুন, শয়তান শুধু ইয়োবের উপর অভিযোগ নিয়ে আসেনি, কিন্তু এর পাশাপাশি সে সমস্ত মানুষের বিষয়ে বলেছিল: “প্রাণের জন্য লোক সর্ব্বস্ব দিবে।” (ইয়োব ২:৪, ৫) এমনটা বলার মাধ্যমে শয়তান এই দাবি করছিল যে, আমরা মন থেকে যিহোবাকে ভালোবাসি না এবং যদি আমাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে, তা হলে আমরা তাঁকে ছেড়ে দেব। শয়তান যেন এমনটাও বলছিল, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন না, তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমরা যা-ই করি না কেন, তাতে তাঁর কিছু যায়-আসে না। আমরা শয়তানের কলাকৌশল সম্বন্ধে জানি, তাই সেগুলো থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত আর যিহোবার উপর আশা রাখা উচিত।

১৪. যখন আমাদের সামনে সমস্যা আসে, তখন আমরা কী বুঝতে পারি? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১৪ যখন আমাদের সামনে সমস্যা আসে, তখন আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদের মধ্যে কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে। ইয়োবের সামনে যখন সমস্যা এসেছিল, তখন তিনিও বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার মধ্যেও কিছু দুর্বলতা রয়েছে এবং তিনি নিজেকে পরিবর্তন করেছিলেন। যেমন, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাকে আরও নম্র হতে হবে। (ইয়োব ৪২:৩) এবার ভাই নিকোলাইয়ের * প্রতি মনোযোগ দিন। যদিও তিনি অনেক অসুস্থ ছিলেন, তারপরও তাকে জেলে বন্দি করা হয়েছিল। তিনি বলেন: “জেলে যাওয়া অনেকটা এক্স-রে করানোর মতোই। আমরা বুঝতে পারি, আমরা ভিতর থেকে আসলে কেমন, আমাদের মধ্যে কোন কোন ভালো বিষয় রয়েছে আর কোন কোন খারাপ বিষয় রয়েছে।” যখন আমরা বুঝতে পারব, আমাদের মধ্যে কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে, তখন আমরা নিজেদের পরিবর্তন করতে পারব।

১৫. ইয়োবের মতো আমাদের কার কথা শোনা উচিত আর কেন?

১৫ আমাদের যিহোবার কথা শোনা উচিত, আমাদের শত্রুদের কথা নয়। ইয়োব এমনটাই করেছিলেন। ইয়োবের চিন্তাধারা সংশোধন করার জন্য যিহোবা তাকে কিছু বিষয় মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। এক অর্থে, যিহোবা ইয়োবকে বলেছিলেন, ‘তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না, আমি কী কী সৃষ্টি করেছি? তোমার কি মনে হয় না, আমি তোমার যত্ন নিচ্ছি? আমি জানি, তোমার প্রতি কী কী ঘটেছে।’ এই কথা শুনে ইয়োব নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, যিহোবা তার জন্য চিন্তা করেন। তিনি যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন: “পূর্ব্বে তোমার বিষয় কর্ণে শুনিয়াছিলাম, কিন্তু সম্প্রতি আমার চক্ষু তোমাকে দেখিল।” (ইয়োব ৪২:৫) ইয়োব যখন ছাইয়ের উপর বসে ছিলেন, তখন তিনি হয়তো এই কথাগুলো বলেছিলেন। তার সারা শরীর ফোঁড়ায় ভরে গিয়েছিল আর তিনি তখনও তার সন্তানদের মৃত্যুর কারণে খুব দুঃখের মধ্যে ছিলেন। এই খারাপ সময়ে যিহোবা ইয়োবকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি তাকে খুব ভালোবাসেন আর তার উপর সন্তুষ্ট। ইয়োব যিহোবার কথা মন দিয়ে শুনেছিলেন।—ইয়োব ৪২:৭, ৮.

১৬. যিশাইয় ৪৯:১৫, ১৬ পদ অনুযায়ী আমাদের সামনে যখন সমস্যাগুলো আসবে, তখন আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

১৬ আজও লোকেরা হয়তো আমাদের সম্বন্ধে আজেবাজে কথা বলে আর আমাদের টিটকারি দেয় কিংবা আমাদের সংগঠন সম্বন্ধে “মিথ্যাভাবে সমস্ত ধরনের মন্দ কথা বলে।” (মথি ৫:১১) ইয়োবের বিবরণ থেকে আমরা বুঝতে পারি, যিহোবার এই আস্থা আছে যে, সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকব। যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন আর যারা তাঁর উপর আশা রাখে, তিনি তাদের কখনো ছেড়ে দেন না। (পড়ুন, যিশাইয় ৪৯:১৫, ১৬.) তাই, লোকেরা যখন আপনার এবং সংগঠনের বদনাম করে, তখন তাদের কথায় কান দেবেন না। জেমসের উদাহরণ লক্ষ করুন, যিনি তুর্কিতে থাকেন। তার পরিবারের সামনে অনেক সমস্যা এসেছিল। তিনি বলেন: “লোকেরা যিহোবার সংগঠন সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলত। আমরা বুঝতে পারি, তাদের কথায় কান দিলে আমরা হতাশ হয়ে পড়ব আর সাহস হারিয়ে ফেলব। তাই, আমরা আমাদের আশার উপর মনোযোগ দিতে থাকি এবং উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবা সেবা করে চলি। এর ফলে, সমস্যা আসা সত্ত্বেও আমরা আনন্দে থাকতে পেরেছিলাম।” তাই আসুন, আমরা যেন আমাদের শত্রুদের সুযোগ না দিই যেন তারা আমাদের আশাকে দুর্বল করে দেয় বরং ইয়োবের মতো যিহোবার কথা শুনে চলি।

আশা থাকলে বিশ্বস্ত থাকতে পারবেন

ইয়োব বিশ্বস্ত ছিলেন, তাই যিহোবা তাকে অনেক আশীর্বাদ করেছিলেন। তিনি এবং তার স্ত্রী দীর্ঘসময় ধরে সুখে জীবনযাপন করেছিলেন (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৭. ইব্রীয় ১১ অধ্যায়ে বলা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৭ ইয়োবের মতো আরও অনেক ব্যক্তি ছিল, যারা সাহসের সঙ্গে সমস্যার মোকাবিলা করেছিল এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। ইব্রীয়দের প্রতি লেখা চিঠিতে পৌল এইরকমই কিছু বিশ্বস্ত ভাই-বোনের বিষয়ে লিখেছিলেন এবং তাদের “সাক্ষিদের এক বড়ো দল” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। (ইব্রীয় ১২:১) তাদের জীবনে বড়ো বড়ো সমস্যা এসেছিল, কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। (ইব্রীয় ১১:৩৬-৪০) এটা ঠিক যে, তারা যিহোবার করা সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হতে দেখেনি, কিন্তু তারা তাঁর উপর আশা রেখেছিল। তারা নিশ্চিত ছিল যে, যিহোবা তাদের উপর সন্তুষ্ট আর ভবিষ্যতে তারা তাঁর করা সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হতে দেখতে পাবে। (ইব্রীয় ১১:৪, ৫) তাই আসুন, আমরা তাদের কাছ থেকে শিখি এবং জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, যিহোবার উপর আশা রাখি।

১৮. সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমাদের কী করা উচিত? (ইব্রীয় ১১:৬)

১৮ এই জগৎ দিনের পর দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে আর শয়তান যিহোবার লোকদের উপর একের-পর-এক সমস্যা নিয়ে আসছে। (২ তীম. ৩:১৩) কিন্তু, আমাদের সামনে যত সমস্যাই আসুক না কেন, আমাদের মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করে যাওয়া উচিত কারণ “আমরা জীবন্ত ঈশ্বরের উপর প্রত্যাশা রেখেছি।” (১ তীম. ৪:১০) ইয়োব যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন, তাই যিহোবা তাকে পুরস্কার দিয়েছিলেন এবং প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি “অত্যন্ত স্নেহময় ও করুণাময়” ঈশ্বর। (যাকোব ৫:১১) তাই আসুন, আমরাও যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি আর এই আস্থা রাখি, “যারা আন্তরিকভাবে তাঁর অন্বেষণ করে, তিনি তাদের পুরস্কার দেন।”—পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৬.

গান ৪৯ যিহোবা মোদের আশ্রয়

^ আপনি যখন এমন কোনো ব্যক্তির বিষয়ে চিন্তা করেন, যিনি অনেক কষ্ট ভোগ করেছেন, তখন আপনার হয়তো ইয়োবের কথা মনে পড়ে যায়। তার জীবনে অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বস্ত ছিলেন। তার বিবরণ থেকে আমরা আর কী শিখতে পারি? (১) শয়তান আমাদের যিহোবাকে পরিত্যাগ করার জন্য বাধ্য করতে পারে না। (২) যিহোবা খুব ভালো করে জানেন যে, আমরা কোন পরিস্থিতিতে আছি। (৩) যিহোবা যেভাবে ইয়োবের সমস্যাগুলো দূর করে দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই তিনি আমাদের সমস্যাগুলো একদিন পুরোপুরিভাবে দূর করে দেবেন। আমরা যখন এইসমস্ত বিষয়ে নিশ্চিত হব আর সেই অনুযায়ী কাজ করব, তখন আমরা দেখাব যে, আমরা “সদাপ্রভুর উপর আশা” রাখি।

^ এই অভিব্যক্তির অর্থ: যে-ইব্রীয় শব্দ থেকে “আশা” শব্দটা অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার অর্থ হল কোনো বিষয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা। এ ছাড়া, এই শব্দটা কারো উপর আস্থা রাখা কিংবা নির্ভর করাকে বোঝাতে পারে।—গীত. ২৫:২, ৩; ৬২:৫.

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: ইয়োব এবং তার স্ত্রী এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তাদের সন্তানদের মৃত্যুতে হারিয়েছেন।

^ ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: সমস্যা আসা সত্ত্বেও ইয়োব যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত আছেন। তিনি এবং তার স্ত্রী এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করছেন, যিহোবা তাদের কত আশীর্বাদ করেছেন।