সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৮

ভাই-বোনেরা কি আপনার উপর আস্থা রাখতে পারে?

ভাই-বোনেরা কি আপনার উপর আস্থা রাখতে পারে?

“নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি গোপন বিষয়কে গোপনই রাখেন।”—হিতো. ১১:১৩, NW.

গান ৫৩ একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা

সারাংশ a

১. একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি কেমন হন?

 একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নিজের কথা রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন এবং সত্যি কথা বলেন। (গীত. ১৫:৪) আমরা যখন একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে কোনো কাজ দিই, তখন আমরা এইরকম চিন্তা করি না যে, সেই কাজটা শেষ হবে কি না কিংবা তিনি সেই কাজটা করবেন কি করবেন না। আমরা নিশ্চিত থাকি, সেই কাজ তিনি করবেনই। সত্যি বলতে কী, আমরাও এমন একজন ব্যক্তি হতে চাই, যার উপর ভাই-বোনেরা আস্থা রাখতে পারে। কিন্তু, কীভাবে আমরা এমন একজন ব্যক্তি হতে পারি?

২. আমরা যদি চাই, লোকেরা আমাদের উপর আস্থা রাখুক, তা হলে আমাদের কী করতে হবে?

আমরা শুধু বললেই লোকেরা যে আমাদের উপর আস্থা রাখবে, এমন নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের এমন কাজ করতে হবে, যা দেখে তারা আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারবে। কারো আস্থা অর্জন করা বলতে গেলে টাকাপয়সা রোজগার করার মতো। টাকাপয়সা রোজগার করতে এবং কারো আস্থা অর্জন করতে সময় ও সেইসঙ্গে পরিশ্রম লাগে। আর যেভাবে টাকাপয়সা তাড়াতাড়ি খরচ হয়ে যায়, একইভাবে আস্থা ভেঙে যেতেও বেশি সময় লাগে না। আমরা যিহোবার উপর আস্থা রাখি কারণ তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তিনি একজন নির্ভরযোগ্য ঈশ্বর। বাইবেলে লেখা আছে, “তাঁহার সকল ক্রিয়া বিশ্বস্ততাসিদ্ধ।” (গীত. ৩৩:৪) আর তিনি চান, আমরাও যেন তাঁর মতো নির্ভরযোগ্য হই। (ইফি. ৫:১) এখন আসুন, যিহোবার কিছু বিশ্বস্ত উপাসকের কাছ থেকে শিখি, যারা তাঁর মতো নির্ভরযোগ্য ছিল। আমরা এমন পাঁচটা বিষয় নিয়েও আলোচনা করব, যেগুলো মনে রাখলে আমরা একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হতে পারব।

অতীতের লোকদের মতো নির্ভরযোগ্য হোন

৩-৪. (ক) কেন আমরা বলতে পারি, দানিয়েল একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন? (খ) আমরা যদি একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হতে চাই, তা হলে আমাদের কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত?

ভাববাদী দানিয়েল এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন, যার উপর লোকেরা আস্থা রাখতে পারত। তিনি যখন যুবক ছিলেন, তখন তাকে ব্যাবিলনে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে, অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সেখানে এক সুনাম অর্জন করেছিলেন এবং লোকেরা তার উপর আস্থা রাখতে শুরু করেছিল। তিনি যখন যিহোবার সাহায্যে রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের স্বপ্নের অর্থ বলে দিয়েছিলেন, তখন লোকেরা তার উপর আরও আস্থা রাখতে শুরু করেছিল। একবার দানিয়েলকে রাজাকে বলতে হত যে, যিহোবা তার উপর খুশি নন। রাজা নবূখদ্‌নিৎসর খুব তাড়াতাড়ি রেগে যেতেন। তাই, দানিয়েলের জন্য হয়তো তাকে সেই কথাটা বলা অনেক কঠিন ছিল। তারপরও, দানিয়েল সাহস করে রাজাকে সেই কথাটা বলেছিলেন। (দানি. ২:১২; ৪:২০-২২, ২৫) এর অনেক বছর পর, একদিন রাতে ব্যাবিলনের রাজপ্রাসাদের দেওয়ালে অলৌকিকভাবে হাতের লেখা দেখা দিয়েছিল। কেউই বুঝতে পারছিল না, সেগুলোর অর্থ কী। তখন দানিয়েল সেটার সঠিক অর্থ বলার মাধ্যমে আরেক বার দেখিয়েছিলেন যে, তিনি একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। (দানি. ৫:৫, ২৫-২৯) পরবর্তী সময়, রাজা দারিয়াবস এবং অন্য আধিকারিকেরাও লক্ষ করেছিল যে, দানিয়েলের মধ্যে অনেক দক্ষতা রয়েছে। তারা দেখেছিল, দানিয়েল একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি, নিজের কাজে অবহেলা করতেন না এবং সৎভাবে কাজ করতেন। (দানি. ৬:৩, ৪) এই আধিকারিক এবং রাজারা যিহোবার উপাসনা করত না। তারপরও, তারা এটা মানতে বাধ্য হয়েছিল, দানিয়েল একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি।

দানিয়েলের মতো আমরাও যদি একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হতে চাই, তা হলে আমাদের এই প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত: ‘যারা যিহোবার উপাসনা করে না, তাদের মাঝে কি আমার সুনাম আছে? তারা কি আমাকে একজন নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্ববান ব্যক্তি হিসেবে দেখে?’ এই প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করা খুবই জরুরি কারণ আমরা যদি নির্ভরযোগ্য হই, তা হলে এটা যিহোবার গৌরব নিয়ে আসবে।

নহিমিয় গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করেছিলেন (৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৫. কেন হনানিয় একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন?

খ্রিস্টপূর্ব ৪৫৫ সালে যখন জেরুসালেম নগরের প্রাচীর পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছিল, তখন রাজ্যপাল নহিমিয় এমন লোকদের খুঁজতে শুরু করেছিলেন, যারা নগরকে ভালো করে দেখাশোনা করতে পারে। এই কাজের জন্য তিনি যাদের বাছাই করেছিলেন, তাদের মধ্যে দুর্গের অধ্যক্ষ হনানিয়ও ছিলেন। বাইবেলে তার বিষয়ে লেখা আছে: “তিনি অন্যদের চেয়ে সত্য ঈশ্বরকে আরও বেশি ভয় করতেন আর তিনি একজন বিশ্বস্ত” বা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। (নহি. ৭:২, NW) তিনি যিহোবাকে খুব ভালোবাসতেন আর এমন কোনো কাজ করতে চাইতেন না, যেটা যিহোবা পছন্দ করেন না। তাই, তাকে যেকোনো কাজ দেওয়া হত, তিনি তা মনপ্রাণ দিয়ে করতেন। আমরাও যদি যিহোবাকে ভালোবাসি এবং তাঁকে ভয় করি, তা হলে আমাদের যেকোনো দায়িত্ব দেওয়া হোক না কেন, আমরা সেটা ভালো করে পালন করতে পারব। এর ফলে, ভাই-বোনেরা আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারবে।

৬. কেন আমরা বলতে পারি, তুখিক পৌলের একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু ছিলেন?

আমরা তুখিকের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারি। তিনি পৌলের একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু ছিলেন। পৌল যখন একটা ঘরে বন্দি ছিলেন, তখন তুখিক তাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। তাই, পৌল তাকে একজন “বিশ্বস্ত সেবক” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। (ইফি. ৬:২১, ২২) তুখিককে ইফিষীয় ও কলসীয় মণ্ডলীর ভাই-বোনদের কাছে চিঠি পৌঁছানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, পৌল তুখিককে আরেকটা দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি তাকে সেখানকার ভাই-বোনদের উৎসাহিত করতে এবং তাদের সান্ত্বনা দিতে বলেছিলেন। পৌলের পুরো আস্থা ছিল যে, তুখিক এই দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করবেন। তুখিকের মতো আজও এমন অনেক নির্ভরযোগ্য ভাই আছেন, যারা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী রাখার জন্য অনেক পরিশ্রম করেন।—কল. ৪:৭-৯.

৭. আপনি আপনার মণ্ডলীর প্রাচীন ও পরিচারক দাসদের কাছ থেকে নির্ভরযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে কী শিখতে পারেন?

আজ আমাদের মণ্ডলীতে এমন অনেক প্রাচীন ও পরিচারক দাস আছেন, যাদের উপর আমরা পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারি। দানিয়েল, হনানিয় ও তুখিকের মতো তারাও তাদের দায়িত্বগুলো ভালোভাবে পালন করেন। যেমন, তারা ভাই-বোনদের আগে থেকে বলে দেন যে, সপ্তাহের মাঝের সভায় তাদের কোন কোন অ্যাসাইনমেন্ট রয়েছে। তাই, আমরা যখন সভায় যাই, তখন আমাদের মনে কখনো এইরকম প্রশ্ন আসে না যে, ‘আজ সভার কোনো একটা অংশ বাদ চলে যাবে না তো?’ ভাইয়েরাও আমাদের উপর এই বিষয়ে আস্থা রাখেন, আমাদের যে-অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে, আমরা সেটার জন্য ভালো করে প্রস্তুতি নেব এবং তা ভালোভাবে তুলে ধরব। আমরা যখন এমনটা করি, তখন ভাইয়েরা অনেক খুশি হন। শুধু তা-ই নয়, আমরা যখন আমাদের বাইবেল ছাত্রদের পাবলিক টক শোনার জন্য আমন্ত্রণ জানাই, তখন আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকি, কোনো-না-কোনো ভাই সেই টক দেবেন। আমরা কখনো এমনটা চিন্তা করি না, ‘প্রাচীনেরা এটার ব্যবস্থা করতে ভুলে যাবেন না তো?’ এ ছাড়া, আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকি, প্রচার করার জন্য আমাদের যে-প্রকাশনাগুলো প্রয়োজন, সেগুলো আমরা পেয়ে যাব। আমরা যিহোবার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ, এই ভাইয়েরা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর খেয়াল রাখেন। কীভাবে আমরা এই ভাইদের মতো নির্ভরযোগ্য হতে পারি?

গোপন বিষয়গুলোকে গোপনই রাখুন

৮. আমরা ভাই-বোনদের খুব ভালোবাসি, কিন্তু আমাদের কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে? (হিতোপদেশ ১১:১৩)

আমরা ভাই-বোনদের খুব ভালোবাসি, তাই আমরা প্রায়ই তাদের খোঁজখবর নিই। কিন্তু, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক না গলাই। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলোতে এমন কিছু ব্যক্তি ছিল, যারা ‘অন্যদের সম্বন্ধে গুজব ছড়াত এবং অন্যদের ব্যাপারে নাক গলাত আর সেইসঙ্গে যে-সমস্ত বিষয় তাদের বলা উচিত নয়, সেগুলো বলত।’ (১ তীম. ৫:১৩) আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন এই ব্যক্তিদের মতো না হই এবং কেউ যদি নিজে থেকে এসে আমাদের কোনো কথা বলে আর সেটা কাউকে বলতে বারণ করে, তা হলে আমাদের সেই কথাটা এদিক থেকে ওদিক করা উচিত নয় কিংবা অন্যদের কাছে বলে বেড়ানো উচিত নয়। উদাহরণ স্বরূপ, একজন বোন যদি আপনাকে তার কোনো রোগের কথা কিংবা কোনো সমস্যার কথা বলে এবং অন্য কাউকে সেটা বলতে বারণ করে, তা হলে আপনার সেই কথাটা অন্যদের বলা উচিত নয়। b (পড়ুন, হিতোপদেশ ১১:১৩.) এখন আসুন আমরা দেখি, কখন কখন আমাদের খেয়াল রাখা উচিত যেন আমরা গোপন বিষয়গুলোকে গোপনই রাখি।

৯. কীভাবে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য দেখাতে পারে যে, তারা নির্ভরযোগ্য?

পরিবারের কথা। পরিবারের সবাইকে এই বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে যেন তাদের ঘরের কিছু কথা ঘরেই থাকে। হতে পারে, স্ত্রীর এমন একটা অভ্যাস আছে, যেটা দেখে তার স্বামীর হাসি পায়। কিন্তু, তিনি যদি পাঁচটা লোকের মাঝে সেই বিষয়টা বলেন, তা হলে তার স্ত্রী নিশ্চয়ই অনেক লজ্জায় পড়ে যাবেন। একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে ভালোবাসেন, তা হলে তিনি এমন কিছু করবেন না, যেটার কারণে তার স্ত্রীর খারাপ লাগতে পারে। (ইফি. ৫:৩৩) কিশোর-কিশোরীরা চায় যেন সবাই তাদের সম্মান করে। তাই, বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে যেন তারা অন্যদের কাছে তাদের ভুলগুলোর বিষয়ে বলে না বেড়ায়। (কল. ৩:২১) আর যদি পরিবারে ছোটো ছোটো সন্তান থাকে, তা হলে বাবা-মায়েদের তাদের শেখাতে হবে, তারা যেন ঘরের এমন কোনো কথা বাইরে না বলে, যেটার কারণে পরিবারের লোকেরা লজ্জায় পড়তে পারে। (দ্বিতীয়. ৫:১৬) পরিবারের সবাই যদি এই বিষয়ে খেয়াল রাখে, তা হলে তাদের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে।

১০. একজন প্রকৃত “বন্ধু” কেমন হন? (হিতোপদেশ ১৭:১৭)

১০ বন্ধুদের কথা। আমরা আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলি। কিন্তু, আপনি হয়তো কোনো বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। চিন্তা করুন, আপনি সাহস করে আপনার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে সেই বিষয়টা বলেছেন। আর পরে আপনি জানতে পারলেন, সে অন্যদের সেই কথাটা বলে দিয়েছে। তখন আপনার কেমন লাগবে? কেউ যখন আমাদের আস্থা ভেঙে দেয়, তখন আমাদের খুব খারাপ লাগে। কিন্তু, আমাদের বন্ধু যখন আমাদের কোনো কথা গোপন রাখে, তখন আমাদের খুব ভালো লাগে। বাইবেল বলে, এইরকম নির্ভরযোগ্য বন্ধু হল প্রকৃত “বন্ধু।”—পড়ুন, হিতোপদেশ ১৭:১৭.

প্রাচীনেরা ভাই-বোনদের ব্যক্তিগত বিষয় কাউকে বলেন না আর এমনকী নিজেদের পরিবারের সদস্যদেরও বলেন না (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) c

১১. (ক) কেন প্রাচীন এবং তাদের স্ত্রীদের উপর আস্থা রাখা যায়? (খ) এই অনুচ্ছেদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছবিতে যে-প্রাচীনকে দেখানো হয়েছে, তার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১১ ভাই-বোনদের কথা। ভাই-বোনেরা প্রাচীনদের উপর অনেক আস্থা রাখে। তারা ভাই-বোনদের কাছে ঝড়ের সময়ে লুকোনোর জায়গা এবং প্রবল বৃষ্টির সময়ে এক আশ্রয়ের মতো। (যিশা. ৩২:২) আমরা একেবারে নিশ্চিত থাকতে পারি, আমরা তাদের যা-কিছু বলব, সেগুলো তারা অন্যদের বলবেন না। তাই, তাদের কাছে আমাদের এমন কিছু বিষয়ে জানার জন্য জোরাজুরি করা উচিত নয়, যেটা জানার অধিকার আমাদের নেই। প্রাচীনদের স্ত্রীয়েরাও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কারণ তারা তাদের স্বামীর কাছ থেকে গোপন বিষয়গুলো বের করার জন্য জোরাজুরি করেন না। আর একজন প্রাচীন যখন তার স্ত্রীকে গোপন বিষয়গুলো বলেন না, তখন এতে স্ত্রীয়েরও উপকার হয়। এই বিষয়ে একজন প্রাচীনের স্ত্রী বলেন: “আমি খুব খুশি যে, আমার স্বামী যখন কাউকে উৎসাহিত করতে যায় অথবা কারো সঙ্গে পালকীয় সাক্ষাৎ করতে যায়, তখন ও তাদের বিষয়ে আমাকে কিছুই বলে না, এমনকী তাদের নাম পর্যন্ত বলে না। আর এমনিতেও, সেই বিষয়ে আমি কিছুই করতে পারব না। তাই, আমার স্বামী যখন আমাকে সেই বিষয়গুলো জানায় না, তখন আমার টেনশনও হয় না। আমি মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে সহজেই কথা বলতে পারি। আমি আমার স্বামীর উপর অনেক আস্থা রাখি কারণ আমি জানি, আমি যদি ওকে নিজের কোনো সমস্যার বিষয়ে বলি, তা হলে ও সেটা অন্য কাউকে বলে দেবে না।” তাই আসুন, এখন আমরা এমন পাঁচটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, যেগুলো মেনে চললে আমরা একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হতে পারব।

কীভাবে নির্ভরযোগ্য হওয়া যায়?

১২. ব্যাখ্যা করুন, কেন নির্ভরযোগ্য হওয়ার জন্য ভালোবাসা দেখানো জরুরি।

১২ যিহোবা এবং অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখান। একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হওয়ার জন্য অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো খুবই জরুরি। যিশু বলেছিলেন, যিহোবাকে ভালোবাসা এবং নিজের প্রতিবেশীকে ভালোবাসা, এই দুটোই হল সর্বমহৎ আজ্ঞা। (মথি ২২:৩৭-৩৯) আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি, তাই তাঁর মতো নির্ভরযোগ্য হতে চাই। আর আমরা আমাদের ভাই-বোনদেরও ভালোবাসি, তাই তাদের গোপন বিষয়গুলোকে গোপনই রাখি। আমরা কখনো তাদের কোনো কথা অন্যদের বলি না কারণ আমরা চাই না, তাদের কোনো ক্ষতি হোক, তারা লজ্জায় পড়ুক কিংবা তাদের খারাপ লাগুক।—যোহন ১৫:১২.

১৩. আমরা যদি নম্র হই, তা হলে কেন লোকেরা আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারবে?

১৩ নম্র হোন। আমরা যদি নির্ভরযোগ্য হতে চাই, তা হলে আমাদের নম্রও হতে হবে। একজন নম্র ব্যক্তি অন্যদের কোনো খবর বলার জন্য তাড়াহুড়ো করেন না। তিনি এইরকম চিন্তা করেন না, ‘সবার আগে আমি গিয়ে অন্যদের এই কথাটা বলে দেব, যাতে সবাই আমার প্রশংসা করে।’ (ফিলি. ২:৩) তিনি কখনো তার হাবভাবের মাধ্যমে এইরকমটা দেখান না যে, তিনি এমন কোনো বিষয় জানেন, যেটা তিনি অন্যদের বলতে পারবেন না। আর যে-বিষয়গুলো নিয়ে বাইবেলে কিংবা আমাদের প্রকাশনাগুলোতে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করা হয়নি, সেগুলো নিয়ে তিনি মনগড়া কাহিনি তৈরি করে অন্যদের বলে বেড়ান না।

১৪. আমরা যদি ভেবে-চিন্তে কথা বলি, তা হলে কেন লোকেরা আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারবে?

১৪ উত্তম বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করুন। যে-ব্যক্তি ভেবে-চিন্তে কথা বলে, লোকেরা তার উপর আস্থা রাখে। তিনি জানেন যে, কখন ‘নীরব থাকতে’ হবে এবং কখন ‘কথা’ বলতে হবে। (উপ. ৩:৭) আপনি হয়তো এইরকম প্রবাদ বাক্য শুনেছেন, “কথা হল রূপোর মতো আর নীরব থাকা হল সোনার মতো।” এ ছাড়া, হিতোপদেশ ১১:১২ পদে লেখা আছে, “বুদ্ধিমান নীরব হইয়া থাকে।” এখান থেকে বোঝা যায়, অনেকসময় চুপ থাকাও ভালো। একজন প্রাচীনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। কখনো কখনো অন্য মণ্ডলীর প্রাচীনেরা কিছু বিষয় সমাধান করার জন্য তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন কারণ সেই প্রাচীনের অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার নিজের মণ্ডলীর একজন প্রাচীন তার বিষয়ে বলেন, “তিনি এই বিষয়ে খুব খেয়াল রাখেন যেন আমাদের কখনোই অন্য মণ্ডলীর কোনো কথা বলে না দেন।” সেই প্রাচীন ভেবে-চিন্তে কথা বলেন আর গোপন বিষয়গুলোকে গোপনই রাখেন। তাই, তার নিজের মণ্ডলীর প্রাচীনদের পুরোপুরি আস্থা রয়েছে যে, তিনি তাদের মণ্ডলীর কোনো কথা অন্যদের কাছে বলবেন না। তাই, তারা তাকে অনেক সম্মান করেন।

১৫. একটা উদাহরণের সাহায্য ব্যাখ্যা করুন, আমরা যদি সত্যি কথা বলি, তা হলে কেন অন্যেরা আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারবে।

১৫ সত্যি কথা বলুন। আমরা এমন একজন ব্যক্তির উপরও আস্থা রাখতে পারি, যিনি সবসময় সত্যি কথা বলেন। (ইফি. ৪:২৫; ইব্রীয় ১৩:১৮) এটা বোঝার জন্য একটা উদাহরণ লক্ষ করুন। ধরুন, সভাতে আপনার কোনো অংশ রয়েছে আর আপনি জানতে চান, কীভাবে আপনি সেটা আরও ভালোভাবে তুলে ধরতে পারেন। তাই, আপনি কাউকে বলেন, সে যেন আপনার সেই অংশটা ভালোভাবে শোনেন এবং শোনার পর কোথায় কোথায় আপনাকে উন্নতি করতে হবে, তা বলেন। কিন্তু, আপনি কাকে জিজ্ঞেস করবেন? আপনি কি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, যিনি শুধু আপনার প্রশংসাই করেন, না কি আপনি সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন, যিনি সত্যি করে বলবেন যে, কোন বিষয়টা ভালো ছিল এবং কোথায় আপনাকে উন্নতি করতে হবে? বাইবেলেও লেখা আছে, “প্রকাশ্য অনুযোগ ভাল, তবু গুপ্ত প্রেম ভাল নয়। প্রণয়ীর প্রহার বিশ্বস্ততাযুক্ত।” (হিতো. ২৭:৫, ৬) যখন আপনাকে কেউ সত্যি করে বলে যে, আপনাকে কোথায় উন্নতি করতে হবে, তখন আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে তার কথা হয়তো আপনার অনেক উপকার নিয়ে আসবে।

১৬. আত্মসংযম বজায় রাখার ব্যাপারে আমরা হিতোপদেশ ১০:১৯ পদ থেকে কী শিখতে পারি?

১৬ আত্মসংযম বজায় রাখুন। নির্ভরযোগ্য হওয়ার জন্য আত্মসংযম বজায় রাখাও জরুরি। আমরা যদি আত্মসংযম বজায় রাখি, তা হলে আমরা এমন কথা অন্যদের বলব না, যেটা গোপন রাখা উচিত। আর সেইসময়েও বলব না, যখন তা বলতে আমাদের খুব ইচ্ছা করে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১০:১৯.) আমাদের বিশেষভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার সময় এই বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। আমরা যদি খেয়াল না রাখি, তা হলে আমরা হয়তো অজান্তেই এমন কোনো কথা অন্যদের কাছে বলে ফেলব, যেটা অন্যদের কাছে বলার কথা ছিল না। আর একবার ইন্টারনেটে কোনো কিছু পোস্ট করে দিলে সেটা কত লোকের কাছে ছড়িয়ে পড়বে, তারা সেটাকে কীভাবে ব্যবহার করবে আর এর ফলে কোন কোন সমস্যা দেখা দেবে, এই সমস্ত কিছুর উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ আর থাকে না। আমাদের সেইসময়েও আত্মসংযম বজায় রাখা উচিত এবং চুপ থাকা উচিত, যখন আমাদের কাজের উপর বিরোধিতা করে এমন লোকেরা আমাদের ভাই-বোনদের সম্বন্ধে কৌশলতার সঙ্গে তথ্য জানার চেষ্টা করে। আমরা হয়তো এমন কোনো দেশে থাকি, যেখানে আমাদের কাজের উপর বিধি-নিষেধ অথবা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আর হতে পারে, কিছু পুলিশ আমাদের কাজের বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। যখন এমন কিছু হয়, তখন যেন আমরা নিজেদের ‘মুখে জাল্‌তি বাঁধিয়া রাখি’ আর তাদের এমন কোনো তথ্য না দিই, যেটার কারণে ভাই-বোনেরা বিপদের মুখে পড়তে পারে। (গীত. ৩৯:১) আমরা সবাই চাই যেন আমাদের পরিবারের সদস্য, আমাদের বন্ধুবান্ধব, ভাই-বোনেরা এবং অন্যেরা আমাদের উপর আস্থা রাখে। কিন্তু, তারা তখনই আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারবে, যখন আমরা আত্মসংযম বজায় রাখব।

১৭. আমরা যদি চাই, মণ্ডলীর সবাই একে অন্যের উপর আস্থা রাখুক, তা হলে আমাদের কী করতে হবে?

১৭ আমরা কত খুশি যে, আমরা যিহোবার সংগঠনের এক অংশ। আমরা একে অন্যকে অনেক ভালোবাসি এবং একে অন্যের উপর আস্থা রাখতে পারি। তবে, আমরা যদি চাই, সংগঠনে এইরকম এক পরিবেশ বজায় থাকুক, তা হলে আমাদের প্রত্যেককে নির্ভরযোগ্য হতে হবে। আমরা যদি অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখাই, নম্র হই, উত্তম বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করি, সত্যি কথা বলি আর আত্মসংযম বজায় রাখি, তা হলে অন্যেরা আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারবে। কিন্তু, আস্থা ভেঙেও যেতে পারে। তাই আসুন, আমরা এমন কাজ করে চলি, যাতে লোকেরা সবসময় আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারে। এভাবে, আমরা আমাদের ঈশ্বর যিহোবার মতো নির্ভরযোগ্য হতে পারব।

গান ৪৩ জেগে থাকো, নিশ্চল হও, বলবান হও

a আমরা যদি চাই, অন্যেরা আমাদের উপর আস্থা রাখুক, তা হলে আমাদের নির্ভরযোগ্য হতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর এইরকম ব্যক্তি হওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে।

b আমরা যদি জানতে পারি, মণ্ডলীতে কেউ কোনো গুরুতর পাপ করেছে, তা হলে আমাদের তাকে বলা উচিত, সে যেন এই বিষয়টা নিয়ে প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলে। সে যদি তা না করে, তা হলে আমাদের প্রাচীনদের কাছে গিয়ে সেই বিষয়ে কথা বলা উচিত কারণ আমরা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে চাই আর মণ্ডলীতে শুদ্ধতা বজায় রাখতে চাই।

c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন প্রাচীন আরেকজন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে একজন বোনের সঙ্গে পালকীয় সাক্ষাৎ করতে গিয়েছেন। তবে, তিনি সেই বোনের কথা কাউকে বলছেন না, এমনকী তার পরিবারের সদস্যদেরও বলছেন না।