সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪০

অনেক লোককে ধার্মিকতার প্রতি ফিরিয়ে আনা হবে!

অনেক লোককে ধার্মিকতার প্রতি ফিরিয়ে আনা হবে!

“যাহারা অনেককে ধার্ম্মিকতার প্রতি ফিরায়, তাহারা তারাগণের ন্যায় অনন্তকাল দেদীপ্যমান হইবে।”—দানি. ১২:৩.

গান ১২ অনন্তজীবনের প্রতিজ্ঞা

সারাংশ a

১. আমরা কোন সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি?

 ধরুন, যিশুর হাজার বছরের রাজত্ব শুরু হয়ে গিয়েছে আর আপনি সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন, যখন আপনি আপনার প্রিয়জনকে আবারও দেখতে পাবেন। অবশেষে, সেই দিন আসে আর আপনি এতটাই খুশি হন যে, আপনি আপনার চোখের জল আর আটকাতে পারলেন না! চারিদিকে সবাই আনন্দে রয়েছে। প্রত্যেকে তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করছে এবং একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছে। সত্যিই, আমরা সবাই সেই দিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি! যিহোবাও সেই দিন দেখার জন্য উৎসুক হয়ে আছেন। (ইয়োব ১৪:১৫) আপনি যদি আপনার প্রিয়জনদের সম্প্রতি হারিয়ে থাকেন, তা হলে তারা হয়তো সেই লোকদের মধ্যে থাকবে, যাদের পৃথিবীতে সবার আগে পুনরুত্থিত করা হবে। b আমরা যেমনটা আগের প্রবন্ধে দেখেছিলাম, “ধার্মিক” ও “অধার্মিক” দুই দলের লোকদের পুনরুত্থিত করা হবে। “ধার্মিক” লোকদের নাম জীবনপুস্তকে আছে, তাই তাদের ‘অনন্তজীবনের’ জন্য পুনরুত্থিত করা হবে। তবে, “অধার্মিক” লোকেরা যিহোবাকে ভালোভাবে জানার এবং তাঁর সেবা করার সুযোগ পায়নি। তাই, তাদের ‘বিচারের’ জন্য পুনরুত্থিত করা হবে।—প্রেরিত ২৪:১৫; যোহন ৫:২৯.

২-৩. (ক) যিশাইয় ১১:৯, ১০ পদ অনুযায়ী কোন কাজ বিরাট আকারে করা হবে আর কেন? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

যাদের পুনরুত্থিত করা হবে, তাদের অনেক কিছু জানতে হবে। (যিশা. ২৬:৯; ৬১:১১) তাই, তাদের অনেক কিছু শেখানো হবে। ইতিহাসে প্রথম বার এত বিরাট আকারে লোকদের শেখানোর কাজ চলবে। (পড়ুন, যিশাইয় ১১:৯, ১০.) ‘যে-অধার্মিক’ লোকদের পুনরুত্থিত করা হবে, তাদের যিশু, ঈশ্বরের রাজ্য এবং মুক্তির মূল্যের বিষয়ে শিখতে হবে। তাদের এও শিখতে হবে, ঈশ্বরের নাম পবিত্র করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর পুরো পৃথিবীর উপর একমাত্র তাঁরই শাসন করার অধিকার আছে। ‘যে-ধার্মিক’ লোকদের পুনরুত্থিত করা হবে, তাদেরও অনেক কিছু শিখতে হবে। তাদের জানতে হবে, যিহোবা পৃথিবীর জন্য তাঁর উদ্দেশ্যের বিষয়ে আর কী কী বলেছেন। এমন অনেক বিশ্বস্ত লোককেও পুনরুত্থিত করা হবে, যারা পুরো বাইবেল লেখা শেষ হওয়ার আগেই মারা গিয়েছিল। এই লোকদেরও অনেক কিছু শিখতে হবে।

এই প্রবন্ধে আমরা দুটো প্রশ্নের উত্তর জানতে পারব: এত বিরাট আকারে শেখানোর কাজ কীভাবে করা হবে? আর যাদের শেখানো হবে, তাদের সবার নাম কি চিরকালের জন্য জীবনপুস্তকে লেখা হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার জন্য আমরা দানিয়েল ও প্রকাশিত বাক্য বইয়ে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর উপর মনোযোগ দেব। এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নিয়ে আলোচনা করার মাধ্যমে আমরা জানতে পারব, দানিয়েল বইয়ে মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করার বিষয়ে যে-ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল, সেই সম্বন্ধে আগে আমরা যা বুঝতাম, তাতে কোন রদবদল হয়েছে। যদিও এই সমস্ত কিছু ভবিষ্যতে হবে, তবে আমরা জানতে পারব যে, বর্তমানেও এই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ। তাই আসুন, প্রথমে দানিয়েল ১২:১, ২ পদে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে আলোচনা করি।

‘মৃত্তিকার ধূলিতে নিদ্রিত লোকেরা জাগরিত হইবে’

৪-৫. দানিয়েল ১২:১ পদে শেষকালের বিষয়ে কী বলা হয়েছে?

দানিয়েল ১২:১ পদ পড়ুন। দানিয়েল বই থেকে বোঝা যায়, শেষকালে এক এক করে কোন কোন রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটবে। যেমন, দানিয়েল ১২:১ পদে মীখায়েল অর্থাৎ যিশু খ্রিস্টের বিষয়ে বলা হয়েছে, যিনি ঈশ্বরের লোকদের পক্ষে ‘উঠিয়া দাঁড়াইয়াছেন।’ এই কথাগুলো ১৯১৪ সাল থেকে পরিপূর্ণ হতে শুরু করে, যখন যিশু স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হন।

দানিয়েলকে এও বলা হয়েছিল যে, “এমন সঙ্কটের কাল উপস্থিত হইবে, যাহা মনুষ্যজাতির স্থিতিকাল অবধি সেই সময় পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই” আর সেইসময় যিশু “উঠিয়া দাঁড়াইবেন।” এর অর্থ কী? “সঙ্কটের কাল” হল “মহাক্লেশ,” যেটার বিষয়ে মথি ২৪:২১ পদে বলা হয়েছে। আর যখন যিশু সংকটের কালে উঠে দাঁড়াবেন, তখন এর অর্থ হবে, তিনি মহাক্লেশের শেষে অর্থাৎ আরমাগিদোনের সময়ে ঈশ্বরের লোকদের রক্ষা করবেন। যে-লোকদের যিশু রক্ষা করবেন, প্রকাশিত বাক্যে তাদের “বিরাট জনতা” বলা হয়েছে, যারা “মহাক্লেশ পার হয়ে এসেছে।”—প্রকা. ৭:৯, ১৪.

৬. যখন বিরাট জনতা মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাবে, তারপর কী হবে? ব্যাখ্যা করুন। (এ ছাড়া, কাদের পৃথিবীতে পুনরুত্থিত করা হবে আর কীভাবে তাদের বিচার করা হবে, এই বিষয়ে আরও তথ্য জানার জন্য প্রহরীদুর্গ পত্রিকার এই সংখ্যায় দেওয়া “পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন” দেখুন।)

দানিয়েল ১২:২ পদ পড়ুন। যখন বিরাট জনতা সংকটের কালে রক্ষা পাবে, তারপর কী হবে? এই পদে যেমন বলা হয়েছে, “মৃত্তিকার ধূলিতে নিদ্রিত লোকদের মধ্যে অনেকে জাগরিত হইবে।” আগে মনে করা হত, এই পদে শেষকালে যিহোবার লোকদের রূপকভাবে পুনরুত্থিত করার বিষয়ে বলা হয়েছে অর্থাৎ সেই সময়কার কথা, যখন ১৯১৮ সালে হওয়া বিরোধিতার পর তারা আবারও উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করতে শুরু করে। c তবে, এই পদের বিষয়ে আমরা আগে যা বুঝতাম, তাতে রদবদল হয়েছে। এখন আমরা এটা মনে করি যে, এখানে নতুন জগতে মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থানের বিষয়ে বলা হয়েছে। এই রদবদলের কারণ কী? লক্ষ করুন, দানিয়েল ১২:২ পদে সেই লোকদের বিষয়ে বলা হয়েছে, যারা “মৃত্তিকার ধূলিতে” মিশে গিয়েছে। আরেক বার যখন ইয়োব নিজের মৃত্যুর বিষয়ে বলছিলেন, তখন তিনিও “ধূলায়” মিশে যাওয়া কিংবা ‘পাতাল’ বা কবরের বিষয়ে বলেছিলেন। (ইয়োব ১৭:১৬) এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, দানিয়েল ১২:২ পদে সেই লোকদের পুনরুত্থানের বিষয়ে বলা হয়েছে, যারা মাটিতে মিশে গিয়েছে অর্থাৎ যারা সত্যি সত্যিই মারা গিয়েছে আর যাদের শেষকালের শেষে আরমাগিদোন যুদ্ধের পর পুনরুত্থিত করা হবে।

৭. (ক) কিছু লোককে “অনন্ত জীবনের” জন্য পুনরুত্থান করা হবে, এর অর্থ কী? (খ) তারা “আরও শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থান” লাভ করবে, এর অর্থ কী?

দানিয়েল ১২:২ পদ লেখা আছে, কিছু লোককে “অনন্ত জীবনের” জন্য পুনরুত্থিত করা হবে। এর অর্থ কী? ১,০০০ বছর চলাকালীন অনেক লোককে পুনরুত্থিত করা হবে, কিন্তু তাদের মধ্যে যারা যিহোবা ও যিশু সম্বন্ধে ক্রমাগত শিখবে এবং তাঁদের দেওয়া আজ্ঞাগুলো পালন করবে, তারাই অনন্তজীবন লাভ করবে। (যোহন ১৭:৩) বাইবেলে এও লেখা আছে, এই লোকেরা “আরও শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থান” লাভ করবে। (ইব্রীয় ১১:৩৫) এর কারণ হল, যাদের আগে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল, তারা পরে মারা গিয়েছিল। তবে, নতুন জগতে যখন লোকদের পুনরুত্থিত করা হবে আর তারা ক্রমাগত যিহোবা সম্বন্ধে শিখবে, তখন তারা আর কখনো মারা যাবে না বরং চিরকাল বেঁচে থাকবে।

৮. কিছু লোককে “লজ্জার ও অনন্ত ঘৃণার” জন্য পুনরুত্থিত করা হবে, এর অর্থ কী?

দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে এও বলা হয়েছিল, কিছু লোককে “লজ্জার ও অনন্ত ঘৃণার” জন্য পুনরুত্থিত করা হবে। এর অর্থ কী? নতুন জগতে যখন লোকদের শেখানো হবে, তখন প্রত্যেকে শিখতে চাইবে না। যে-কেউ যিহোবার এই ব্যবস্থাকে মানবে না এবং নিজেদের পরিবর্তন করবে না, তাদের নাম জীবনপুস্তকে লেখা হবে না এবং তারা অনন্তজীবন লাভ করবে না। এর পরিবর্তে, তাদের ‘অনন্ত ঘৃণা’ সহ্য করতে হবে অর্থাৎ তাদের চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে। তাই আমরা বলতে পারি, দানিয়েল ১২:২ পদে বলা হয়েছে যে, পুনরুত্থিত হওয়ার পর লোকেরা যেমন কাজ করবে, সেটার উপর ভিত্তি করে তাদের বিচার করা হবে। d (প্রকা. ২০:১২) কিছু লোক অনন্তজীবন লাভ করবে আর কিছু লোককে চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

‘যাহারা অনেককে ধার্ম্মিকতার প্রতি ফিরাইবে’

৯-১০. (ক) দানিয়েল ১২:৩ পদ অনুযায়ী মহাক্লেশের পরে আর কী হবে? ব্যাখ্যা করুন।

দানিয়েল ১২:৩ পদ পড়ুন। দানিয়েল ১২:২ পদের মতো ৩ পদেও কিছু বিষয় বলা হয়েছে, যেগুলো মহাক্লেশের পরে হবে।

১০ এই পদে বলা হয়েছে, কিছু লোক ‘বিতানের দীপ্তির ন্যায় দেদীপ্যমান হইবে।’ এরা কারা? এর উত্তর আমরা মথি ১৩ অধ্যায়ে পাই। মথি ১৩:৩৮ পদে যিশু ‘রাজ্যের সন্তানদের’ অর্থাৎ অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বিষয়ে বলেছিলেন, যারা তাঁর সঙ্গে স্বর্গে শাসন করবে। এরপর, ৪৩ পদে তিনি বলেছিলেন: “তখন ধার্মিক ব্যক্তিরা তাদের পিতার রাজ্যে সূর্যের মতো উজ্জ্বল হয়ে আলো ছড়াবে।” তাই আমরা বলতে পারি, দানিয়েল ১২:৩ পদেও অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বিষয়ে বলা হয়েছে আর সেই কাজগুলোর বিষয়েও, যেগুলো তারা ১,০০০ বছরের রাজত্ব চলাকালীন করবে।

১,০০০ বছর চলাকালীন যখন লোকদের শেখানো হবে, তখন ১,৪৪,০০০ জন যিশুর সঙ্গে মিলে এই কাজে নেতৃত্ব দেবে (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১-১২. হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা কী করবে?

১১ কীভাবে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ‘অনেককে ধার্ম্মিকতার প্রতি ফিরাইবে’? ১,০০০ বছর চলাকালীন যখন পুরো পৃথিবীর লোকদের এক বিরাট আকারে শেখানো হবে, তখন ১,৪৪,০০০ জন যিশুর সঙ্গে মিলে এই কাজে নেতৃত্ব দেবে। তারা শুধু রাজাদের মতো শাসনই করবে না বরং যাজকদের মতো সেবাও করবে। (প্রকা. ১:৬; ৫:১০; ২০:৬) তারা যাজক হিসেবে “জাতিগুলোকে সুস্থ করে তোলার জন্য” সাহায্য করবে অর্থাৎ মানুষকে সাহায্য করবে, যাতে তারা ধীরে ধীরে সিদ্ধতার দিকে পৌঁছায়। (প্রকা. ২২:১, ২; যিহি. ৪৭:১২) এই কাজ করে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা অনেক খুশি হবে।

১২ তবে, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা কাদের ধার্মিকতার প্রতি ফিরিয়ে আনবে? সেই লোকদের, যাদের নতুন জগতে পুনরুত্থিত করা হবে, যারা আরমাগিদোন থেকে রক্ষা পাবে আর সেই সমস্ত সন্তানকে, যারা নতুন জগতে জন্ম নেবে। ১,০০০ বছর শেষ হতে হতে সমস্ত মানুষ সিদ্ধ হয়ে যাবে। তাহলে, তাদের নাম জীবনপুস্তকে পেন দিয়ে অর্থাৎ চিরকালের জন্য কখন লেখা হবে?

চূড়ান্ত পরীক্ষা

১৩-১৪. পৃথিবীতে থাকা সমস্ত সিদ্ধ মানুষকে কী করতে হবে, যাতে তারা অনন্তজীবন লাভ করতে পারে?

১৩ মনে রাখবেন, একজন ব্যক্তি সিদ্ধ হলেই যে অনন্তজীবন লাভ করবে, তা কিন্তু নয়। আদম ও হবার বিষয়ে চিন্তা করুন। তারা সিদ্ধ ছিলেন। তবে, তারা যিহোবার আজ্ঞা পালন করেননি। তাই, তারা অনন্তজীবন লাভ করতে পারেননি। (রোমীয় ৫:১২) এর মানে হল, একজন সিদ্ধ ব্যক্তিকেও যিহোবার আজ্ঞা পালন করতে হবে আর প্রমাণ করতে হবে, তিনি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত। তা হলেই, তিনি অনন্তজীবন লাভ করবেন।

১৪ আমরা যেমনটা দেখলাম, ১,০০০ বছর শেষ হতে হতে সমস্ত মানুষ সিদ্ধ হয়ে যাবে। তবে, তারা সবাই কি পরেও যিহোবার শাসন করার অধিকারকে সমর্থন করবে? না কি তাদের মধ্যে কেউ কেউ আদম ও হবার মতো হবে, যারা সিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও যিহোবার আজ্ঞা পালন করেননি? ১,০০০ বছরের পর এমন কিছু ঘটবে, যেটার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, কারা বিশ্বস্ত থাকবে এবং কারা থাকবে না।

১৫-১৬. (ক) সমস্ত মানুষ কখন এটা দেখানোর সুযোগ পাবে যে, তারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত? (খ) চূড়ান্ত পরীক্ষার পর কী হবে?

১৫ হাজার বছর চলাকালীন শয়তানকে বন্দি করে রাখা হবে আর সে লোকদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তবে, ১,০০০ বছর শেষ হওয়ার পর তাকে মুক্ত করা হবে আর সে লোকদের ভ্রান্ত করার অর্থাৎ বোকা বানানোর চেষ্টা করবে। সেই পরীক্ষার সময়ে সমস্ত সিদ্ধ মানুষের কাছে এটা দেখানোর সুযোগ থাকবে, তারা যিহোবার নামকে সম্মান আর সেইসঙ্গে তাঁর শাসন করার অধিকারকে সমর্থন করে কি না। (প্রকা. ২০:৭-১০) সেই সময় তারা যা করবে, সেটা নির্ধারণ করবে যে, তাদের নাম জীবনপুস্তকে চিরকালের জন্য লেখা হবে কি হবে না।

১৬ কিছু লোক আদম ও হবার মতো বিশ্বস্ত থাকবে না আর যিহোবার শাসন করার অধিকারকে সমর্থন করবে না। তাদের কী হবে? তাদের চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে। প্রকাশিত বাক্য ২০:১৫ পদে লেখা আছে: “যে-কারো নাম জীবনপুস্তকে লেখা নেই, তাকে আগুনের হ্রদে নিক্ষেপ করা হল।” আমরা এটা জানি না, সেই চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়ে কত লোক যিহোবার বিরুদ্ধে যাবে। তবে, আমরা এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি, সেই সময় বেশিরভাগ লোক যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে। আর এরপর, সেই বিশ্বস্ত লোকদের নাম জীবনপুস্তকে চিরকালের জন্য লিখে দেওয়া হবে।

‘শেষকালে’ কী হবে?

১৭. ‘শেষকালের’ বিষয়ে দানিয়েলকে কী বলা হয়েছিল? (দানিয়েল ১২:৪, ৮-১০)

১৭ আমরা সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, যখন এই সমস্ত ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হবে। তবে, দানিয়েল বইয়ে কেবল ভবিষ্যতের বিষয়ে নয় বরং ‘শেষকালের’ বিষয়ে অর্থাৎ আমাদের দিনের বিষয়েও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে। (পড়ুন, দানিয়েল ১২:৪, ৮-১০; ২ তীম. ৩:১-৫) স্বর্গদূত দানিয়েলকে বলেছিলেন, শেষকালে “জ্ঞানের বৃদ্ধি হইবে।” এর মানে হল, শেষকালে ঈশ্বরের লোকেরা বাইবেলে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে, যেগুলোর মধ্যে দানিয়েলের বইয়ে লেখা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোও রয়েছে। এরপর, সেই স্বর্গদূত দানিয়েলকে এও বলেছিলেন, “দুষ্টেরা দুষ্টাচরণ করিবে, আর দুষ্টদের মধ্যে কেহ বুঝিবে না।”

১৮. খুব শীঘ্রই দুষ্ট লোকদের কী হবে?

১৮ আজ চারিদিকে দুষ্টতা বেড়েই চলেছে। দুষ্ট লোকেরা আরামে জীবন কাটাচ্ছে আর কেউ তাদের কিছুই বলছে না। (মালাখি ৩:১৪, ১৫) কিন্তু খুব শীঘ্রই, যিশু সবার বিচার করবেন। তিনি মেষতুল্য ব্যক্তিদের থেকে ছাগতুল্য ব্যক্তিদের পৃথক করবেন। (মথি ২৫:৩১-৩৩) মহাক্লেশ চলাকালীন দুষ্ট লোকদের ধ্বংস করা হবে। তাদের নতুন জগতে পুনরুত্থিত করা হবে না। এই লোকদের নাম ঈশ্বরের সেই পুস্তকে লেখা হবে না, যেটার বিষয়ে মালাখি ৩:১৬ পদে বলা হয়েছে।

১৯. আজ আমাদের কেমন কাজ করা উচিত আর কেন? (মালাখি ৩:১৬-১৮)

১৯ মালাখি ৩:১৬-১৮ পদ পড়ুন। আজ যিহোবা সেই লোকদের একত্রিত করছেন, যাদের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, “তাহারা আমার নিজস্ব হইবে” অর্থাৎ তারা তাঁর মূল্যবান সম্পত্তি হবে। আমরা সবাই চাই যেন যিহোবা আমাদেরও তাঁর মূল্যবান সম্পত্তি হিসেবে দেখেন। তাই, আমাদের খেয়াল রাখা উচিত যেন আমরা দুষ্ট লোকদের মতো কোনো খারাপ কাজ না করি বরং ভালো কাজ করি, যেটা দেখে যিহোবা খুশি হবেন।

নতুন জগতে যখন দানিয়েল, আমাদের প্রিয়জন এবং অন্য বিশ্বস্ত লোকেরা “দণ্ডায়মান হইবে,” তখন তাদের সঙ্গে দেখা করে আমরা কতই-না খুশি হব! (২০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

২০. (ক) যিহোবা দানিয়েলের কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? (খ) কেন আপনি সেই প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছেন?

২০ আজ অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে, তবে ভবিষ্যতে আরও রোমাঞ্চকর বিষয়গুলো ঘটবে। সেইসময় আরও অনেক ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হবে। দুষ্ট লোকদের চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে আর যিহোবা দানিয়েলের কাছে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেটাও পরিপূর্ণ হবে। যিহোবা বলেছিলেন, ‘তুমি দিন-সমূহের শেষে আপন অধিকারে দণ্ডায়মান হইবে।’ (দানি. ১২:১৩) আপনি কি সেই সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, যখন দানিয়েল এবং আপনার প্রিয়জনেরা “দণ্ডায়মান হইবে” আর আপনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন? তাই আজ, যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন, তা হলে আপনার নাম জীবনপুস্তকে লেখা থাকবে।

গান ১ যিহোবার গুণাবলি

a এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, দানিয়েল ১২:২, ৩ পদের বিষয়ে আগে আমরা যা বুঝতাম, তাতে কোন রদবদল হয়েছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা এই বিষয়েও লক্ষ করব যে, নতুন জগতে কীভাবে লোকদের এক বিরাট আকারে শেখানোর কাজ চলবে আর কারা এতে অংশ নেবে। আমরা এও জানতে পারব, যখন লোকদের শেখানোর কাজ চলবে, তখন তারা ১,০০০ বছরের পর যে-চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে, সেটার জন্য কীভাবে প্রস্তুত হতে পারবে।

b সবার আগে হয়তো সেই লোকদের পুনরুত্থিত করা হবে, যারা শেষকালে মারা গিয়েছিল। এরপর, হয়তো সেই লোকদের পুনরুত্থিত করা হবে, যারা তাদের কিছুসময় আগে মারা গিয়েছিল। এভাবে, এক প্রজন্মের লোকেরা আগের প্রজন্মের লোকদের স্বাগত জানাবে, যাদের তারা খুব ভালোভাবে জানত। যদিও আমরা সঠিকভাবে জানি না, কাকে কখন পুনরুত্থিত করা হবে, তবে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, এই সমস্ত কিছু খুবই সুশৃঙ্খলভাবে হবে। কারণ বাইবেলে বলা হয়েছে, যখন লোকদের স্বর্গে পুনরুত্থান হয়, তখন সেটাও “পালা অনুযায়ী” হয়।—১ করি. ১৪:৩৩; ১৫:২৩.

c এই পদের বিষয়ে আগে আমরা যা মনে করতাম, সেই বিষয়ে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে মনোযোগ দিন! (ইংরেজি) বইয়ের ১৭ অধ্যায় আর সেইসঙ্গে ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২১-২৫ পৃষ্ঠায় লেখা আছে। কিন্তু এখন, এতে রদবদল হয়েছে।

d তবে, প্রেরিত ২৪:১৫ পদে সেই কাজগুলোর উপর ভিত্তি করে লোকদের “ধার্মিক” অথবা “অধার্মিক” বলা হয়েছ, যেগুলো তারা মারা যাওয়ার আগে করেছে। একইভাবে, যখন যোহন ৫:২৯ পদে বলা হয়েছে, কিছু লোক “ভালো কাজ করেছে” আর কিছু লোক “মন্দ কাজ করেছে,” তখন সেখানেও সেই কাজগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছে, যেগুলো তারা মারা যাওয়ার আগে করেছে।