সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২

আপনার চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করুন!

আপনার চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করুন!

“তোমাদের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে রূপান্তরিত হও, যেন তোমরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কী: তাঁর ইচ্ছা উত্তম, প্রীতিজনক ও নিখুঁত।”—রোমীয় ১২:২.

গান ৮৮ তোমার পথ আমাকে জানাও

সারাংশ a

১-২. বাপ্তিস্ম নেওয়ার পরও আমাদের কী করে চলা উচিত? ব্যাখ্যা করুন।

 আপনি কত বার আপনার ঘরবাড়ি পরিষ্কার করেন? আপনি যখন প্রথম বার আপনার ঘরে থাকার জন্য এসেছিলেন, তখন সেটার আগে আপনি হয়তো খুব ভালোভাবে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু, এক বার পরিষ্কার করার পর আপনি যদি সেটা এমনি রেখে দিতেন, তা হলে কী হত? ঘর খুব তাড়াতাড়ি নোংরা হয়ে যেত এবং ধুলোবালি জমে যেত। আপনি যদি চান, আপনার ঘর সবসময় দেখতে ভালো লাগুক, তা হলে আপনাকে ক্রমাগত সেটা পরিষ্কার করতে হবে।

একইভাবে, বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে আমরা নিজেদের মধ্যে অনেক কিছু পরিবর্তন করেছিলাম। আমরা আমাদের “দেহ ও মনের সমস্ত অশুচিতা থেকে নিজেদের শুচি” করেছিলাম। (২ করি. ৭:১) তবে, শুধু এক বার তা করা যথেষ্ট নয়। পৌল যেমন বলেছিলেন, বাপ্তিস্ম নেওয়ার পরও আমাদের “মনোভাবকে দিন দিন নতুন” করতে হবে। (ইফি. ৪:২৩) কিন্তু, এমনটা ক্রমাগত করা কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ আমরা যদি তা না করি, তা হলে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের চিন্তাভাবনা এই জগতের চিন্তাভাবনার মতো নোংরা হয়ে যেতে পারে। তাই, আমরা যদি চাই, এমনটা না হোক এবং আমাদের দেখে যিহোবার ভালো লাগুক, তা হলে সময়ে সময়ে আমাদের চিন্তাভাবনা, আমাদের ব্যক্তিত্ব এবং আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে পরীক্ষা করতে হবে।

“চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন” করে চলুন

৩. নিজেদের “চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করার” অর্থ কী? (রোমীয় ১২:২)

নিজেদের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (পড়ুন, রোমীয় ১২:২.) যে-গ্রিক শব্দগুলোকে ‘চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করা’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা “নিজেদের চিন্তাভাবনাকে পুরোপুরি নতুন করা” হিসেবেও অনুবাদ করা যেতে পারে। যেমন, আমাদের ঘরের অবস্থা যদি খুব খারাপ হয়ে যায়, তা হলে আমরা শুধু সেটাকে উপর উপর সাজিয়ে রাখি না। এর পরিবর্তে, আমরা সেটাকে আরও ভালোভাবে মেরামত করি, পুরোনো জিনিসপত্র বাইরে বের করে দিয়ে নতুন জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখি আর সেইসঙ্গে অনেক জিনিসপত্র পালটেও ফেলি। একইভাবে, আমাদের শুধু কিছু ভালো কাজ করাই যথেষ্ট নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের পরীক্ষা করতে হবে, আমরা ভিতর থেকে আসলে কেমন আর তারপর নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে, যাতে আমরা যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারি। আমাদের এমনটা এক বার নয় বরং বার বার করতে হবে।

পড়াশোনা করার ব্যাপারে কিংবা চাকরি বাছাই করার ব্যাপারে আপনি যে-সিদ্ধান্ত নেন, সেটা কি দেখায়, ঈশ্বরের সেবা আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? (৪-৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) c

৪. কীভাবে আমরা এটা খেয়াল রাখতে পারি যেন আমরা জগতের লোকদের মতো চিন্তা করা শুরু না করি?

আমরা যখন সিদ্ধ হয়ে যাব, তখন আমরা সবসময় এমন কাজ করতে পারব, যেটা দেখে যিহোবা খুশি হবেন। কিন্তু, ততদিন পর্যন্ত যিহোবাকে খুশি করার জন্য আমাদের ক্রমাগত পরিশ্রম করতে হবে। লক্ষ করুন, রোমীয় ১২:২ পদে পৌল বলেছিলেন, যখন আমরা আমাদের ‘চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করব,’ তখনই আমরা জানতে পারব, ঈশ্বরের ইচ্ছা কী। আর এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা নিজেদের পরীক্ষা করে চলি যে, আমাদের লক্ষ্য এবং সিদ্ধান্তগুলো যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী রয়েছে কি না। কারণ আমরা যদি তা না করি, তা হলে আমরা খুব সহজেই জগতের লোকদের মতো চিন্তা করা শুরু করতে পারি।

৫. (ক) কীভাবে আমরা জানতে পারি, আমাদের চিন্তাভাবনা সঠিক কি না? (খ) কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমরা যিহোবার দিন আসার অপেক্ষায় আছি? (ছবি দেখুন।)

আমরা কীভাবে নিজেদের পরীক্ষা করতে পারি? একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। যিহোবা চান যেন আমরা ‘তাঁর দিন আসার অপেক্ষায় থাকি এবং সেই দিনের কথা ভুলে না যাই।’ (২ পিতর ৩:১২) তাই, নিজেদের জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি যেভাবে জীবনযাপন করি, সেটা কি দেখায়, আমি এটা বিশ্বাস করি যে, এই জগতের শেষ খুবই কাছে? আমি যে-সিদ্ধান্তগুলো নিই, তা সেটা পড়াশোনা করার ব্যাপারে হোক কিংবা চাকরি বাছাই করার ব্যাপারে হোক, সেটা কি দেখায়, যিহোবার সেবা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? আমি কি বিশ্বাস করি, যিহোবা আমার পরিবারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাবেন, না কি সবসময় আমি এগুলো নিয়ে চিন্তা করি?’ একটু চিন্তা করুন, আমরা যখন ছোটো-বড়ো যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এটা খেয়াল রাখব যে, যিহোবার ইচ্ছা কী, তখন যিহোবা কতই-না খুশি হবেন!—মথি ৬:২৫-২৭, ৩৩; ফিলি. ৪:১২, ১৩.

৬. আমাদের ক্রমাগত কী করা উচিত?

আমাদের ক্রমাগত পরীক্ষা করা উচিত যে, আমাদের চিন্তাভাবনা যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী রয়েছে কি না। আর যদি এমনটা না হয়, তা হলে নিজেদের পরিবর্তন করা উচিত। পৌল করিন্থের খ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “সবসময় নিজেদের পরীক্ষা করে দেখো, তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না; তোমরা কেমন ব্যক্তি, তা প্রমাণ করে চলো।” (২ করি. ১৩:৫) ‘বিশ্বাসে থাকার’ অর্থ শুধু এই নয়, আমরা ক্রমাগত সভাগুলোতে যাব এবং প্রচার করব। এর পাশাপাশি, আমরা যা চিন্তা করি, আমাদের মনে যে-আকাঙ্ক্ষা আসে এবং আমরা যে-মনোভাব নিয়ে কোনো কাজ করি, তা থেকেও বোঝা যায় যে, আমরা বিশ্বাসে আছি কি না। নিজেদের “চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করার” জন্য আমাদের ঈশ্বরের বাক্য পড়তে হবে এবং এটা জানতে হবে, কোনো বিষয়ে যিহোবা কীভাবে চিন্তা করেন আর এরপর তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে।—১ করি. ২:১৪-১৬.

‘নতুন ব্যক্তিত্বকে কাপড়ের মতো পরুন’

৭. ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২ পদ অনুযায়ী আমাদের আর কী করতে হবে আর কেন তা করা কঠিন হতে পারে?

ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২ পদ পড়ুন। নিজেদের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের “নতুন ব্যক্তিত্বকে” কাপড়ের মতো পরতেও হবে। (ইফি. ৪:২৪) আমাদের মধ্যে কিছুজনের পক্ষে হয়তো এমনটা করা সহজ নয় আর তাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। যেমন, কিছু লোকের ব্যক্তিত্বই এমন হয় যে, তাদের মেজাজ একটুতেই গরম হয়ে যায় কিংবা অন্যদের দেখে হিংসা করে। বাইবেলেও বলা হয়েছে, কিছু লোক “রাগী” এবং “বদমেজাজী” হয়। (হিতো. ২৯:২২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) কিছু ভাই-বোনকেও হয়তো এইরকম অভ্যাসগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। তবে, তাদের এগুলো মূল থেকে উপড়ে ফেলার জন্য বাপ্তিস্মের পরও ক্রমাগত পরিশ্রম করতে হবে। আসুন, এখন এমন একজন ভাইয়ের বিষয়ে লক্ষ করি, যাকে এইরকমই কিছু করতে হয়েছিল।

৮-৯. ভাই স্টিভানের অভিজ্ঞতা থেকে কীভাবে আমরা বুঝতে পারি, পুরোনো ব্যক্তিত্বকে কাপড়ের মতো খুলে ফেলার জন্য আমাদের ক্রমাগত পরিশ্রম করতে হবে?

স্টিভান নামে একজন ভাই আগে খুব রাগী ছিলেন। তিনি বলেন: “আমার বাপ্তিস্ম তো হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তারপরও প্রায়ই আমি কথায় কথায় খুব রেগে যেতাম আর নিজেকে আটকাতে পারতাম না। একবার আমরা ঘরে ঘরে প্রচার করছিলাম আর আমি দেখি, একজন চোর আমার গাড়ির রেডিও চুরি করে পালাচ্ছে। আমি সঙ্গেসঙ্গে তার পিছনে দৌড়াই। যেই-না তাকে ধরতে যাচ্ছিলাম, অমনি সে রেডিওটা ফেলে পালিয়ে যায়। পরে আমি যখন বিষয়টা অন্যদের বলছিলাম, তখন আমার পরিচর্যা দলের একজন প্রাচীন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আচ্ছা স্টিভান, তুমি যদি ওই চোরকে ধরে ফেলতে, তা হলে কী করতে?’ সেইসময় আমি বুঝতে পারি, আমার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আর অন্যদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার জন্য পরিশ্রম করতে হবে।” b

আমরা ভাই স্টিভানের অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখতে পারি? আমাদের মনে হতে পারে, আমরা কোনো খারাপ অভ্যাস কিংবা কাজ ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু হঠাৎই এমন কোনো পরিস্থিতি আসতে পারে, যখন আমরা সেই একই কাজ আবারও করে ফেলতে পারি। আপনার প্রতি যদি এইরকম কিছু ঘটে, তা হলে নিরুৎসাহিত হবেন না। এমনটা চিন্তা করবেন না, আপনি একজন খ্রিস্টান হিসেবে অযোগ্য। পৌলও বলেছিলেন: “আমি সঠিক কাজ করার ইচ্ছা করলেও মন্দ আমার মধ্যে উপস্থিত থাকে।” (রোমীয় ৭:২১-২৩) আমরা সবাই কোনো-না-কোনো খারাপ অভ্যাস ছেড়েছি, কিন্তু আমরা সবাই অসিদ্ধ। তাই, কখনো কখনো আমরা আবারও সেই কাজ করে ফেলতে পারি। খারাপ অভ্যাসগুলো ঠিক ধুলোবালির মতো, যা পরিষ্কার করার পরও ঘরে ঢুকে যায়। সেইজন্য, এগুলো ছাড়ার জন্য আমাদের ক্রমাগত পরিশ্রম করতে হবে। কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

১০. খারাপ অভ্যাস ছাড়ার জন্য আমরা কী করতে পারি? (১ যোহন ৫:১৪, ১৫)

১০ যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন এবং তাঁকে বলুন, আপনি কোন কোন খারাপ অভ্যাস ছাড়ার চেষ্টা করছেন। বিশ্বাস করুন, তিনি আপনার প্রার্থনা শুনবেন এবং আপনাকে নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন। (পড়ুন, ১ যোহন ৫:১৪, ১৫.) তিনি কোনো অলৌকিক কাজ করে সেগুলো দূর করে দেবেন না। তবে, তিনি সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিশ্চয়ই শক্তি দেবেন। (১ পিতর ৫:১০) প্রার্থনা করার পাশাপাশি আপনাকে নিজেকেও কিছু করতে হবে। এমন বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকুন, যেগুলো ছাড়ার জন্য আপনি প্রচেষ্টা করছেন, যাতে সেগুলো আবারও করে না ফেলেন। উদাহরণ স্বরূপ, এমন কোনো সিনেমা কিংবা টিভির প্রোগ্রাম দেখবেন না আর সেইসঙ্গে এমন কোনো গল্পও পড়বেন না, যেখানে সেই কাজগুলোকে এমনভাবে দেখানো হয়েছে যে, সেগুলো ততটাও খারাপ নয়। আর যদি আপনার মনে খারাপ চিন্তা এসে যায়, তা হলে সেটা নিয়ে চিন্তা করে চলবেন না।—ফিলি. ৪:৮; কল. ৩:২.

১১. নতুন ব্যক্তিত্বকে পরে থাকার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১১ আপনি হয়তো আপনার পুরোনো ব্যক্তিত্বকে কাপড়ের মতো খুলে ফেলেছেন ঠিকই, তবে নতুন ব্যক্তিত্বকে পরাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে আপনি তা করতে পারেন? আপনি যখন আরও বেশি করে জানতে শুরু করবেন যে, যিহোবা কেমন ঈশ্বর এবং তাঁর মধ্যে কোন কোন গুণ রয়েছে, তখন তাঁকে অনুকরণ করার চেষ্টা করুন। (ইফি. ৫:১, ২) যেমন, আপনি যখন বাইবেলের এমন ঘটনাগুলো পড়েন, যেখানে যিহোবা পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করেছেন, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি অন্যদের ক্ষমা করি?’ অথবা আপনি যখন এই বিষয়ে পড়েন যে, দরিদ্র ব্যক্তিদের জন্য যিহোবা চিন্তা করেন, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি যিহোবার মতো দরিদ্র ভাই-বোনদের জন্য চিন্তা করি এবং তাদের কি সাহায্য করি?’ নতুন ব্যক্তিত্বকে পরে আপনার চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করে চলুন। তবে ধৈর্যও ধরুন, নিজেকে পরিবর্তন করতে সময় লাগে।

১২. কীভাবে ভাই স্টিভান বাইবেলের সাহায্যে নিজেকে পরিবর্তন করতে পেরেছিলেন?

১২ ভাই স্টিভান, যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনিও ধীরে ধীরে নতুন ব্যক্তিত্বকে পরতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন: ‘বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর থেকে আমি অনেক বার এমন পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হয়েছি, যেখানে আমি রাগে ফেটে পড়তে পারতাম, কিন্তু আমি আমার রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখি। কেউ যখন আমাকে রাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে, তখন হয় আমি সেখান থেকে চলে যাই কিংবা এমন কিছু করি, যাতে বিষয়টা বেড়ে না যায় বরং সেখানেই শেষ হয়ে যায়। আমি যেভাবে এই পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করছিলাম, তা দেখে আমার স্ত্রী এবং অন্যেরাও আমার প্রশংসা করেছে। অনেকসময় তো আমি নিজেও অবাক হয়ে যাই যে, এইরকম পরিস্থিতিতে কীভাবে আমি শান্ত থাকতে পেরেছি! আমার জীবনের এই পরিবর্তনগুলো আমি নিজের শক্তিতে করতে পারিনি। বাইবেল থেকে আমি অনেক সাহায্য পেয়েছি। সত্যিই, বাইবেল লোকদের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে!’

মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে চলুন

১৩. কীভাবে আমরা মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি আর ভালো বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারি? (গালাতীয় ৫:১৬)

১৩ গালাতীয় ৫:১৬ পদ পড়ুন। যিহোবা আমাদের তাঁর পবিত্র শক্তি দেন, যাতে আমরা মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং সঠিক কাজ করতে পারি। আমরা যখন ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে অধ্যয়ন করি, তখন আমরা পবিত্র শক্তিকে আমাদের উপর কাজ করতে দিই। সভাগুলোতেও আমরা যিহোবার পবিত্র শক্তি পাই। সেখানে আমাদের এমন ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা হয়, যারা আমাদের মতোই সঠিক কাজ করার চেষ্টা করছে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা অনেক উৎসাহিত হই। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫; ১৩:৭) পবিত্র শক্তির জন্য আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনাও করতে পারি এবং বিনতি করতে পারি, যাতে তিনি আমাদের দুর্বলতাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেন। এমন নয় যে, বাইবেল পড়লে, সভাগুলোতে গেলে এবং প্রচার করলে আমাদের মনে মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো আসবে না। তবে, এই কাজগুলোতে রত থাকলে আমরা এটার কাছে নতিস্বীকার করব না এবং ভুল কিছু করা থেকে নিজেদের আটকাতে পারব। গালাতীয় ৫:১৬ পদেও লেখা আছে: ‘যারা পবিত্র শক্তির পরিচালনা অনুযায়ী চলে, তারা কখনো কোনো মাংসিক আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করবে না।’

১৪. কেন ভালো বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে চলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ?

১৪ একবার আমরা যখন এমন কাজ করতে শুরু করি, যেটার মাধ্যমে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মজবুত হয়, তখন আমাদের সেই কাজ ক্রমাগত করা উচিত এবং ভালো বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে চলা উচিত। কারণ আমাদের মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো যেকোনো সময়ে আমাদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এটা এমন এক শত্রুর মতো, যে সবসময় এই সুযোগ খুঁজে বেড়ায়, কখন আমাদের ধরবে। বাপ্তিস্মের পরও আমাদের মনে মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো আসতে পারে আর আমাদের সেই কাজগুলো করার ইচ্ছা হতে পারে, যেগুলো আমরা ছেড়ে দিয়েছিলাম। যেমন জুয়া খেলা, অতিরিক্ত মদ খাওয়া এবং নোংরা নোংরা ছবি ও ভিডিও দেখা। (ইফি. ৫:৩, ৪) একজন যুবক ভাই বলেন: “আমার পক্ষে একটা আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন ছিল। সেটা হল, আমি ছেলেদের পছন্দ করতাম। আমার মনে হয়েছিল, পরে গিয়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু, আমি ভুল ছিলাম। এখনও আমার মনে এইরকম চিন্তা আসে।” আপনার মনেও যদি কোনো মন্দ আকাঙ্ক্ষা আসে, তা হলে আপনি কী মনে রাখতে পারেন?

আপনার মনে যদি মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো আসে, তা হলে হাল ছেড়ে দেবেন না; অন্যেরাও এইরকম আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে (১৫-১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. আমাদের সবার মনে মন্দ আকাঙ্ক্ষা আসে, এটা জেনে কোন বিষয়ে আমরা উৎসাহ পেতে পারি? (ছবি দেখুন।)

১৫ মনে রাখবেন, এমন নয় যে একমাত্র আপনিই মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। বাইবেলেও লেখা আছে: “মানুষ সাধারণত যে-সমস্ত প্রলোভনের মুখোমুখি হয়, সেগুলো ছাড়া অন্য কোনো প্রলোভন তোমাদের উপর আসেনি।” (১ করি. ১০:১৩ক) এই কথাগুলো পৌল করিন্থের মণ্ডলীর ভাই-বোনদের জন্য লিখেছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আগে যৌন অনৈতিকতায় রত ছিল, কেউ কেউ সমকামী ছিল আর কেউ কেউ মাতাল ছিল। (১ করি. ৬:৯-১১) আপনার কী মনে হয়, বাপ্তিস্মের পর তাদের মনে কি এক বারও সেই মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো আসেনি? যদিও তারা অভিষিক্ত খ্রিস্টান ছিল, তারপরও তারা তো অসিদ্ধই ছিল। কখনো কখনো তাদেরও হয়তো মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল। এখান থেকে আমরা অনেক উৎসাহ পাই। কারণ এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, আজ আমরা যে-মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধেই লড়াই করে থাকি না কেন, কোনো-না-কোনো ভাই কিংবা বোন নিশ্চয়ই আছেন, যিনি সেই মন্দ আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন। আপনি “বিশ্বাসে দৃঢ়” থাকতে পারেন কারণ আপনি জানেন, ‘সারা জগতে আমাদের সমস্ত ভাইয়েরাও একই ধরনের কষ্ট ভোগ করছে।’—১ পিতর ৫:৯.

১৬. আমাদের কী চিন্তা করা উচিত নয় আর কেন?

১৬ কখনো এমনটা চিন্তা করবেন না, আপনি যে-সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেটা কেউ বুঝতে পারবে না। এভাবে চিন্তা করলে আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন। আর আপনার মনে হবে, আপনি আপনার মন্দ আকাঙ্ক্ষাকে কখনোই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। বাইবেলে লেখা আছে: “ঈশ্বর বিশ্বস্ত এবং তিনি তোমাদের উপর সহ্যের অতিরিক্ত প্রলোভন আসতে দেবেন না, বরং প্রলোভনের সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের জন্য রক্ষার পথও করে দেবেন, যেন তোমরা তা সহ্য করতে পার।” (১ করি. ১০:১৩খ) যখন কোনো মন্দ আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়, তখনও আপনি যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পারেন। তাঁর সাহায্যে আপনি মন্দ কাজ করা থেকে নিজেকে আটকাতে পারবেন।

১৭. আমরা মন্দ আকাঙ্ক্ষাকে আমাদের মনে আসা থেকে আটকাতে পারি না ঠিকই, তবে আমরা কী করতে পারি?

১৭ মনে রাখবেন: আমরা সবাই অসিদ্ধ, তাই আমরা মন্দ আকাঙ্ক্ষাকে আমাদের মনে আসা থেকে আটকাতে পারব না। তবে, আমরা সেগুলোকে আমাদের মন থেকে উপড়ে ফেলতে পারি এবং মন্দ কাজ করা থেকে নিজেদের আটকাতে পারি। যোষেফও এমনটাই করেছিলেন। পোটীফরের স্ত্রী যখন তার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করার জন্য তাকে জোর করেছিলেন, তখন যোষেফ সঙ্গেসঙ্গে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।—আদি. ৩৯:১২.

ক্রমাগত প্রচেষ্টা করুন

১৮-১৯. আমাদের সময়ে সময়ে নিজেদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

১৮ আমাদের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করার মানে হল, আমরা যেন সবসময় এই বিষয়টা মনে রাখি যে, আমাদের চিন্তাভাবনা ও কাজ যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী হয়। তাই, সময়ে সময়ে আমাদের নিজেদের পরীক্ষা করা উচিত এবং জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি যেভাবে জীবনযাপন করি, সেটা কি দেখায় যে, আমি বিশ্বাস করি, শেষ খুবই কাছে? আমি কি নতুন ব্যক্তিত্বকে পরার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা করছি এবং নিজের মধ্যে ভালো গুণ গড়ে তুলছি? আমি কি যিহোবার পবিত্র শক্তিকে আমার উপর কাজ করতে দিচ্ছি, যাতে মন্দ আকাঙ্ক্ষা আমার উপর প্রভাব না ফেলে?’

১৯ আপনি যখন নিজেকে পরীক্ষা করেন, তখন এটা দেখবেন না, আপনি কতগুলো ভুল করেছেন বরং এটা দেখুন, আপনি কতটা উন্নতি করেছেন। মনে রাখবেন, আপনি অসিদ্ধ। তাই, আপনার দ্বারা ভুল হবেই। এইরকম ক্ষেত্রে হতাশ হবেন না বরং ফিলিপীয় ৩:১৬ পদের কথাগুলো মনে রাখবেন: “আমরা যতটা উন্নতি করেছি, এসো, আমরা ক্রমাগত সেই একই ধারায় চলি।” আপনি যখন এমনটা করবেন, তখন আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবা আপনার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করবেন এবং আপনি আপনার চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করতে পারবেন।

গান ৩৬ আমরা আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করি

a পৌল প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের বলেছিলেন, তারা যেন জগতের লোকদের মতো চিন্তাভাবনার দ্বারা নিজেদের প্রভাবিত হতে না দেয় এবং তাদের মতো কাজ না করে। আমাদের পৌলের এই পরামর্শ মনে রাখা উচিত কারণ এই জগতের চিন্তাভাবনা আমাদের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, আমাদের ক্রমাগত নিজেদের পরীক্ষা করা উচিত আর নিজেদের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করে চলা উচিত, যাতে তা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী হয়। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, আমরা কীভাবে তা করতে পারি।

b এই ভাইয়ের জীবনকাহিনি পড়ার জন্য jw.org ওয়েবসাইটে যান আর সার্চ বক্সে “আমার জীবন মন্দ থেকে মন্দতর হচ্ছিল” টাইপ করুন।

c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন যুবক ভাই চিন্তা করছেন, তার কি আরও বেশি পড়াশোনা করা উচিত, না কি পূর্ণসময়ের সেবা করা উচিত।