সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩

যিহোবা আপনাকে সফল হতে সাহায্য করছেন!

যিহোবা আপনাকে সফল হতে সাহায্য করছেন!

‘সদাপ্রভু যোষেফের সহবর্ত্তী ছিলেন। তিনি যা-কিছু করছিলেন, সদাপ্রভু তাকে সফল করছিলেন।’—আদি. ৩৯:২, ৩.

গান ৩০ যিহোবা আমার পিতা, ঈশ্বর ও বন্ধু

সারাংশ a

১-২. (ক) আমরা যখন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন কেন আমরা অবাক হই না? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?

 আমরা যিহোবার উপাসনা করি, তাই আমরা যখন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন আমরা অবাক হই না। বাইবেলেও লেখা আছে: “অনেক ক্লেশের মধ্য দিয়ে আমাদের ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে হবে।” (প্রেরিত ১৪:২২) আমরা এও জানি, আমাদের কিছু সমস্যা নতুন জগতে গিয়েই শেষ হবে। সেই সময় “মৃত্যু আর থাকবে না; শোক বা আর্তনাদ বা ব্যথা আর থাকবে না।”—প্রকা. ২১:৪.

আমরা যে-পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হই, যদিও যিহোবা সেগুলো আটকান না, তবে তিনি সেগুলো সহ্য করার জন্য আমাদের শক্তি দেন। লক্ষ করুন, পৌল রোমে থাকা খ্রিস্টানদের প্রতি কী লিখেছিলেন। একেবারে শুরুতে পৌল তাদের বলেছিলেন, তিনি এবং তার সঙ্গীরা কোন কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছেন। এরপর তিনি বলেছিলেন: “যিনি আমাদের প্রেম করেন, তাঁর মাধ্যমে এই সমস্ত বিষয়ে আমরা পুরোপুরিভাবে জয়ী হই।” (রোমীয় ৮:৩৫-৩৭) এখান থেকে বোঝা যায়, পরীক্ষার সময়েও আমরা যিহোবার সাহায্যে সফল হতে পারি। যোষেফের প্রতি এইরকমই কিছু ঘটেছিল। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, যোষেফ যখন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন যিহোবার সাহায্যে তিনি কীভাবে সফল হতে পেরেছিলেন আর আজ, আমরা যখন বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন আমরা কীভাবে সফল হতে পারি।

যখন হঠাৎ পরিস্থিতি পালটে যায়

৩. কীভাবে যোষেফের জীবন হঠাৎ পালটে গেল?

যাকোব তার ছেলে যোষেফকে খুব ভালোবাসতেন। (আদি. ৩৭:৩, ৪) এই কারণে যোষেফের দাদারা তাকে ঈর্ষা করত আর যখনই তারা সুযোগ পেল, তখনই তারা কিছু মিদিয়নীয় বণিকের হাতে যোষেফকে বিক্রি করে দিল। সেই বণিকেরা তাকে তার বাড়ি থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে মিশরে নিয়ে গেল। সেখানে তাকে আরেক বার বিক্রি করে দেওয়া হল। এবার পোটীফরের কাছে, যিনি ফরৌণের পাহারাদারদের অধ্যক্ষ ছিলেন। যোষেফের জীবন পুরোপুরি পালটে গেল। তিনি একসময় তার বাবার খুবই প্রিয় ছেলে ছিলেন আর এখন তাকে একজন দাসের মতো জীবন কাটাতে হচ্ছে!—আদি. ৩৯:১.

৪. আমাদের হয়তো কোন ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়?

বাইবেলে লেখা আছে, “সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে।” (উপ. ৯:১১) এই কথাগুলো একেবারে সত্য। কখনো কখনো আমরা এমন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, যেটা অন্যদেরও মুখোমুখি হতে হয়। (১ করি. ১০:১৩) আর আমরা যেহেতু যিশুর শিষ্য, তাই অনেকসময় আমরা হয়তো অন্যান্য পরীক্ষারও মুখোমুখি হই। যেমন, আমাদের নিয়ে প্রায়ই হাসিঠাট্টা করা হয়, আমাদের বিরোধিতা করা হয় আর কখনো কখনো আমাদের উপর তাড়নাও করা হয়। (২ তীম. ৩:১২) কিন্তু, আমরা যেকোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হই না কেন, যিহোবার সাহায্যে আমরা সফল হতে পারি। আসুন দেখি, কীভাবে যিহোবা যোষেফকে তার পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করেছিলেন।

যোষেফ যখন মিশরে পোটীফরের দাস ছিলেন, তখনও যিহোবা তাকে সফল করেছিলেন (৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৫. যোষেফের সফলতা দেখে পোটীফর কী বুঝতে পেরেছিলেন? (আদিপুস্তক ৩৯:২-৬)

আদিপুস্তক ৩৯:২-৬ পদ পড়ুন। পোটীফর লক্ষ করেছিলেন, যোষেফ খুবই বুদ্ধিমান এবং অনেক পরিশ্রমী। তিনি এর কারণও বুঝতে পেরেছিলেন আর সেটা এই যে, যিহোবা প্রতিটা কাজে তাকে “সফল” করছিলেন। b কিছুসময় পর পোটীফর যোষেফকে তার বিশেষ সেবক হিসেবে নিযুক্ত করেন আর পরে তাকে তার বাড়ির অধ্যক্ষ হিসেবেও নিযুক্ত করেন। যোষেফের কারণে পোটীফরের ধনসম্পত্তি ও খ্যাতি বেড়েই চলেছিল।

৬. যোষেফের প্রতি যা-কিছু ঘটছিল, সেই বিষয়ে তিনি হয়তো কেমন অনুভব করছিলেন?

এখন পরিস্থিতিকে যোষেফের মতো করে দেখার চেষ্টা করুন। যদিও পোটীফরের বাড়িতে যোষেফের কাছে অনেক অধিকার ছিল, কিন্তু তিনি কি এটা চেয়েছিলেন, পোটীফর তার পরিশ্রমের উপর মনোযোগ দেবেন এবং তাকে পুরস্কার দেবেন? তিনি হয়তো নিজের বাড়ি ফিরে যেতে চেয়েছিলেন, তার বাবার কাছে যেতে চেয়েছিলেন। কারণ দেখতে গেলে, তিনি একজন দাসই ছিলেন, তা-ও আবার এমন একজনের দাস, যিনি যিহোবার উপাসনা করতেন না। তবে, যিহোবা এমন কিছুই করেননি যে, পোটীফর যোষেফকে মুক্ত করে দেবেন। বরং পরবর্তী সময়ে তাকে আরও পরীক্ষা সহ্য করতে হয়েছিল।

যখন পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়ে যায়

৭. কীভাবে যোষেফের পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হতে থাকে? (আদিপুস্তক ৩৯:১৪, ১৫)

আদিপুস্তক ৩৯ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, পোটীফরের স্ত্রী যোষেফের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করার জন্য বার বার তাকে চাপ দিতেন। কিন্তু, প্রতি বারই যোষেফ তাকে বারণ করে দিতেন। একবার পোটীফরের স্ত্রী এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, তিনি যোষেফের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিলেন। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩৯:১৪, ১৫.) যখন পোটীফর এই বিষয়টা জানতে পারেন, তখন তিনি যোষেফকে কারাগারে বন্দি করে রাখেন। আর তিনি অনেক বছর ধরে সেখানে থাকেন। (আদি. ৩৯:১৯, ২০) যোষেফকে যেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই জায়গাটা কেমন ছিল? যোষেফ সেই বিষয়ে বলার জন্য যে-ইব্রীয় শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, সেটার অর্থ কুয়ো কিংবা গর্তও হতে পারে। (আদি. ৪০:১৫) এখান থেকে বোঝা যায়, তাকে হয়তো এমন একটা জায়গায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল, যেটা অন্ধকার ছিল আর সেখানে তিনি খুবই নিরুৎসাহিত বোধ করছিলেন। বাইবেলে এও বলা হয়েছে, কিছুসময়ের জন্য তাকে পায়ে বেড়ি এবং গলায় লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। (গীত. ১০৫:১৭, ১৮) তার পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হতে থাকল। একসময় তিনি একজন নির্ভরযোগ্য দাস ছিলেন আর এখন একজন সাধারণ অপরাধী হিসেবে কারাগারে বন্দি হয়ে আছেন।

৮. যদি আপনার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়, তারপরও আপনি কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন?

আপনার প্রতি কি কখনো এমনটা হয়েছে যে, আপনি সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে বিনতি সহকারে প্রার্থনা করেছেন, কিন্তু তারপরও আপনার পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে? আমাদের প্রতি এমনটা হতে পারে কারণ আজ সমস্ত জগৎ শয়তানের অধীনে রয়েছে আর যিহোবা কোনো অলৌকিক কাজ করে আমাদের পরীক্ষাগুলো থেকে রক্ষা করেন না। (১ যোহন ৫:১৯) তবে, আপনি একটা বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন: যিহোবা খুব ভালোভাবেই জানেন, আপনি কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। (মথি ১০:২৯-৩১; ১ পিতর ৫:৬, ৭) তিনি আমাদের প্রত্যেকের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, “আমি কখনো তোমাকে ছাড়ব না আর আমি কখনো তোমাকে পরিত্যাগ করব না।” (ইব্রীয় ১৩:৫) যিহোবা আপনাকে পরীক্ষাগুলো সহ্য করার জন্য শক্তি দিতে পারেন, এমনকী সেইসময়ও, যখন আপনি কোনো আশার আলো দেখতে পান না। আসুন দেখি, তিনি কীভাবে যোষেফকে সাহায্য করেছিলেন।

যোষেফ যখন কারাগারে ছিলেন এবং তার হাতে সমস্ত বন্দিদের ভার তুলে দেওয়া হয়েছিল, তখনও যিহোবা তার সঙ্গে ছিলেন (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯. কেন আমরা বলতে পারি, যখন যোষেফ কারাগারে ছিলেন, তখন যিহোবা তার সঙ্গে ছিলেন? (আদিপুস্তক ৩৯:২১-২৩)

আদিপুস্তক ৩৯:২১-২৩ পদ পড়ুন। যোষেফ অনেক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন, তারপরও যিহোবার সাহায্যে তিনি সফল হতে পেরেছিলেন। কীভাবে? পোটীফর যেভাবে যোষেফের কাজ দেখে তার উপর আস্থা রাখতে শুরু করেছিলেন, একইভাবে কারাগারের কারারক্ষকও যোষেফের উপর আস্থা রাখতে শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই, সেই কারারক্ষক সমস্ত বন্দির ভার যোষেফের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। বাইবেলে এও লেখা আছে, “কারারক্ষক [যোষেফের] হস্তগত কোন বিষয়ে দৃষ্টিপাত করিতেন না।” এখন যোষেফ কারাগারের মধ্যে শুধু চুপচাপ বসে ছিলেন না কারণ তার কাছে করার মতো কিছু কাজ ছিল। একটু চিন্তা করুন: যে-ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ করার মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল, তাকে কীভাবে এত বড়ো দায়িত্ব দেওয়া হল! এর কেবল একটাই কারণ হতে পারে। আদিপুস্তক ৩৯:২৩ পদে লেখা আছে, “সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন, এবং তিনি যাহা কিছু করিতেন, সদাপ্রভু তাহা সফল করিতেন।”

১০. কেন যোষেফের হয়তো মনে হয়েছিল, তিনি প্রতিটা কাজে সফল হচ্ছেন না?

১০ আরেক বার পরিস্থিতিকে যোষেফের মতো করে দেখার চেষ্টা করুন। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং তাকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। এইরকম সময়ে তার কি এটা মনে হচ্ছিল যে, তিনি প্রতিটা কাজে সফল হচ্ছেন? সেইসময় যোষেফের মনে হয়তো কী চলছিল? তিনি কি এটা চেয়েছিলেন, কারারক্ষক তার উপরে খুশি হয়ে তাকে আরও দায়িত্ব দেবেন? তিনি হয়তো শুধু এটা চেয়েছিলেন, তার উপর যে-মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেটা সরে যাক এবং তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে যান। যোষেফ একজন অপরাধীর সঙ্গেও কথা বলেছিলেন, যে খুব শীঘ্রই ছাড়া পেতে যাচ্ছিল। যোষেফ তাকে বলেছিলেন, ছাড়া পাওয়ার পর সে যেন ফরৌণের সঙ্গে তার বিষয়ে কথা বলে, যাতে যোষেফ সেই অন্ধকার জায়গা থেকে বের হতে পারেন। (আদি. ৪০:১৪) কিন্তু, সেই ব্যক্তি যোষেফের বিষয়ে ফরৌণকে বলতে ভুলে গিয়েছিল। আর এই কারণে যোষেফকে আরও দু-বছর কারাগারে থাকতে হয়েছিল। (আদি. ৪০:২৩; ৪১:১, ১৪) তবে, এইরকম সময়েও যিহোবা প্রতিটা কাজে তাকে সফল করছিলেন। আসুন দেখি, কীভাবে।

১১. (ক) যিহোবার সাহায্যে যোষেফ কী করতে পেরেছিলেন? (খ) এর ফলে কীভাবে যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হয়েছিল?

১১ যোষেফ যখন কারাগারে ছিলেন, তখন যিহোবা ফরৌণকে দুটো স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। এই কারণে ফরৌণ খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলেন। তিনি যেকোনোভাবেই হোক তার স্বপ্নের অর্থ জানতে চেয়েছিলেন। এরপর রাজাকে বলা হয়েছিল, যোষেফ তার স্বপ্নের অর্থ বলতে পারে। তাই, রাজা যোষেফকে ডেকে পাঠান। যোষেফ যিহোবার সাহায্যে ফরৌণের স্বপ্নগুলোর অর্থ বলেন এবং তাকে ভালো পরামর্শও দেন। ফরৌণ খুশি হন আর বুঝতে পারেন, যিহোবা যোষেফের সঙ্গে আছেন। তাই, তিনি যোষেফকে পুরো মিশর দেশের ফসলের গোলাঘরের অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেন। (আদি. ৪১:৩৮, ৪১-৪৪) পরে, মিশর ও কনানে এক ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হয়। সেইসময় যোষেফের পরিবার কনান দেশে ছিল। কিন্তু, এখন যোষেফ বড়ো অধ্যক্ষ হয়ে গিয়েছেন আর নিজের পরিবারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করতে পারতেন। তাই, যোষেফ তাদের মিশরে ডেকে নেন। এভাবে সেই বংশ রক্ষা পেয়েছিল, যে-বংশে পরে গিয়ে মশীহের জন্ম হত।

১২. কীভাবে যিহোবা যোষেফকে তার প্রতিটা কাজে সফল করেছিলেন?

১২ যোষেফের জীবনে অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। একটু চিন্তা করুন: পোটীফর কেন একজন সাধারণ দাসের উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন? কারারক্ষক কেন একজন অপরাধীকে এত বড়ো দায়িত্ব দিয়েছিলেন? কে ফরৌণকে সেই স্বপ্নগুলো দেখিয়েছিলেন, যেগুলোর কারণে তিনি খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলেন? আর কে যোষেফকে ফরৌণের স্বপ্নের অর্থ বলার ক্ষমতা দিয়েছিলেন? কে ফরৌণের মনে এই ইচ্ছা দিয়েছিলেন, যেন তিনি যোষেফকে মিশর দেশের ফসলের গোলাঘরের অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেন? (আদি. ৪৫:৫) এই সমস্ত কিছু এমনি এমনিই ঘটেনি। এর পিছনে যিহোবার হাত ছিল। তিনি যোষেফকে তার প্রতিটা কাজে সফল করেছিলেন। যোষেফের দাদারা তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু, যিহোবা পরিস্থিতিকে এমনভাবে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন, যেন তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হয়।

কীভাবে যিহোবা আপনাকে সফল করতে পারেন?

১৩. আমরা যখন কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন যিহোবা কী করেন না? ব্যাখ্যা করুন।

১৩ যোষেফের গল্প থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা যখন পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হই, তখন যিহোবা সবসময় সেগুলো আটকান না কিংবা প্রতি বার পরিস্থিতিকে এমনভাবে ঘুরিয়ে দেন না, যাতে সেই পরীক্ষার সময়েও ভালো কিছু হয়। বাইবেল এমনটা বলে না যে, যা-কিছু হয়, ভালোর জন্যই হয়। (উপ. ৮:৯; ৯:১১) তবে, বাইবেলে এই বিষয়ে বলা আছে, যখন আমরা কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন যিহোবা ভালোভাবে জানেন, আমাদের মনের অবস্থা কেমন আর আমরা যখন তাঁকে ডাকি, তখন তিনি তা শোনেন। (গীত. ৩৪:১৫; ৫৫:২২; যিশা. ৫৯:১) শুধু তা-ই নয়, যিহোবা পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে আমাদের সাহায্য এবং সফল করতে পারেন। কীভাবে তিনি তা করেন?

১৪. আমরা যখন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন?

১৪ আমরা যখন কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন যিহোবা আমাদের সান্ত্বনা দেন এবং আমাদের উৎসাহিত করেন, যাতে আমরা সেটা সহ্য করতে পারি। কখনো কখনো তিনি এমনটা ঠিক সেইসময়ে করেন, যখন আমাদের তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়। (২ করি. ১:৩, ৪) তুর্কমেনিস্তানে থাকা ভাই এজিজের প্রতিও এমনই কিছু ঘটেছিল। বাইবেলের শিক্ষাগুলো মেনে চলার কারণে তাকে দু-বছরের জন্য জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। ভাই বলেন, “যে-দিন আমার শুনানি ছিল, সে-দিন সকালে একজন ভাই আমাকে যিশাইয় ৩০:১৫ পদ দেখিয়েছিলেন। এখানে যিহোবা আমাদের বলছেন, ‘শান্ত হইলে তোমরা পরিত্রাণ পাইবে, সুস্থির থাকিয়া বিশ্বাস করিলে তোমাদের পরাক্রম হইবে।’ সেই পদের বিষয়ে চিন্তা করে আমি অনেক শক্তি পেয়েছিলাম আর এর ফলে যতদিন পর্যন্ত আমি জেলে ছিলাম, ততদিন শান্ত থাকতে এবং যিহোবার উপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পেরেছিলাম।” আপনার কি এমন কোনো সময়ের কথা মনে আছে, যখন আপনার সবচেয়ে বেশি সান্ত্বনা ও উৎসাহের প্রয়োজন ছিল আর ঠিক সেইসময়েই যিহোবা আপনাকে তা জুগিয়েছিলেন?

১৫-১৬. আপনি বোন টোরির অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখেছেন?

১৫ প্রায়ই এমনটা দেখা গিয়েছে, আমরা যখন কোনো পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাই, তখন আমরা বুঝতে পারি না, যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করছেন। কিন্তু, পরে যখন আমরা সেই বিষয় নিয়ে চিন্তা করি, তখন বুঝতে পারি যিহোবা কীভাবে আমাদের সেই সময়ে সাহায্য করেছিলেন। বোন টোরির প্রতিও এমনই কিছু ঘটেছিল। তার ছেলে মেসনের ক্যান্সার হয়েছিল। সে ছয় বছর ধরে সেই কঠিন রোগের সঙ্গে লড়াই করছিল। আর অবশেষে সে মারা গিয়েছিল। বোন টোরি একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। বোন বলেন, “আমি বলে বোঝাতে পারব না, যখন একজন মা তার সন্তানকে নিজের চোখের সামনে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখেন, তখন তার মনের অবস্থা কেমন হয়! কোনো বাবা-মাই চান না, তার সন্তান এভাবে কষ্ট পাক। তাদের নিজেদের যা-ই হয়ে যাক না কেন, তারা কখনো এটা চাইবে না, তাদের সন্তানদের কিছু হয়ে যাক।”

১৬ নিজের সন্তানকে সবসময় এভাবে কষ্ট পেতে দেখা বোন টোরির জন্য খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু, পরে তিনি যখন সেই সময়ের কথা চিন্তা করেছিলেন, তখন বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবা কীভাবে তাকে সাহায্য করছিলেন। বোন বলেন, “আমি যখন সেই দিনের কথা চিন্তা করি, তখন বুঝতে পারি যে, যিহোবা প্রতিটা মুহূর্তে কীভাবে আমাদের যত্ন নিচ্ছিলেন। তিনি কখনো আমাদের একা ছেড়ে দেননি। যেমন, যখন মেসনের শরীর খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল আর ও কারো সঙ্গে দেখা করতে পারছিল না, তখনও ভাই-বোনেরা দু-ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে আসত। ভাই-বোনেরা আমাদের কখনো একা ছেড়ে দেয়নি। কেউ-না-কেউ সবসময় হাসপাতালে থাকত। তারা আমাদের অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়েরও যত্ন নিয়েছিল। কঠিন থেকে কঠিন সময়েও আমাদের কখনো কোনো জিনিসের অভাব হয়নি।” যিহোবার সাহায্যে বোন টোরি ও মেসন নিজেদের পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে পেরেছিল। তাদের যা প্রয়োজন ছিল, যিহোবা সেটাই জুগিয়েছিলেন।—“ যিহোবা আমাদের সেই সমস্ত কিছু দিয়েছেন, যেগুলো আমাদের প্রয়োজন ছিল” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

আপনি কোন কোন আশীর্বাদ পেয়েছেন?

১৭-১৮. পরীক্ষার সময়ে আমরা এমন কী করতে পারি, যাতে আমরা বুঝতে পারি, যিহোবা আমাদের সাহায্য করছেন? (গীতসংহিতা ৪০:৫)

১৭ গীতসংহিতা ৪০:৫ পদ পড়ুন। অনেক লোক পর্বতে উঠতে পছন্দ করে। পর্বতে ওঠার সময়ে তারা পর্বতের চূড়ায় পৌঁছাতে চায় ঠিকই, কিন্তু তারা মাঝে মাঝে থেমে আশেপাশের সুন্দর দৃশ্যগুলোও উপভোগ করে। একইভাবে, আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার পরীক্ষাগুলো কাটিয়ে উঠতে চান। কিন্তু, সেগুলোর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়ে মাঝে মাঝে এই বিষয়েও চিন্তা করুন যে, কীভাবে যিহোবা আপনাকে সাহায্য করছেন এবং কীভাবে তিনি আপনাকে সফল করছেন। আপনি চাইলে দিনের শেষে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারেন: ‘আজ যিহোবা কীভাবে আমাকে আশীর্বাদ করেছেন? আমার পরীক্ষাগুলো দূর হয়ে যায়নি ঠিকই, কিন্তু যিহোবা কীভাবে সেটা সহ্য করার জন্য আমাকে সাহায্য করছেন?’ চেষ্টা করুন, যেন আপনি অন্ততপক্ষে একটা আশীর্বাদ নিয়ে চিন্তা করেন, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, আপনি সফল হয়েছেন।

১৮ আপনি নিশ্চয়ই এই প্রার্থনা করছেন, যেন আপনার পরীক্ষা শেষ হয়ে যাক। আর এমনটা করা ভুলও নয়। (ফিলি. ৪:৬) তবে এই বিষয়েও খেয়াল রাখুন, আজ যিহোবা আপনাকে কোন কোন আশীর্বাদ করছেন। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি আপনাকে শক্তি দেবেন আর পরীক্ষাগুলো সহ্য করার জন্য আপনাকে সাহায্য করবেন। সবসময় মনে রাখবেন, যিহোবা আপনার সঙ্গে রয়েছেন আর তাই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। এভাবে আপনি বুঝতে পারবেন, কীভাবে পরীক্ষার সময়েও আপনি যিহোবার সাহায্যে সফল হচ্ছেন, ঠিক যেমনটা যোষেফ সফল হয়েছিলেন।—আদি. ৪১:৫১, ৫২.

গান ৩২ নাও পক্ষ যিহোবার!

a আমাদের মনে হতে পারে, যখন আমরা কোনো পরীক্ষা কাটিয়ে উঠব, তখন আমরা বলতে পারব, আমরা “সফল” হয়েছি। কিন্তু, আপনি কি জানেন, যখন আমরা কোনো পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাই, তখনও আমরা সফল হতে পারি? যোষেফের গল্প থেকে আমরা এইরকমই কিছু শিখি। পরীক্ষার সময়ে যিহোবা যেভাবে যোষেফকে সাহায্য করেছিলেন, একইভাবে তিনি আমাদেরও সাহায্য করতে পারেন আর আমরা সফল হতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা এই বিষয়ে জানতে পারব।

b বাইবেলে শুধুমাত্র কিছু পদে বলা হয়েছে, একজন দাস হিসেবে বিক্রি হওয়ার পর যোষেফের প্রতি কী কী ঘটেছিল। তবে, এগুলো ঘটতে হয়তো অনেক বছর লেগে গিয়েছিল।