সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫

“খ্রিস্টের প্রেম আমাদের পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে”

“খ্রিস্টের প্রেম আমাদের পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে”

“খ্রিস্টের প্রেম আমাদের পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, . . . তিনি সকলের জন্য মারা গিয়েছেন, যেন যারা বেঁচে আছে, তারা আর নিজেদের উদ্দেশে নয়, বরং তাঁর উদ্দেশেই বেঁচে থাকে।”—২ করি. ৫:১৪, ১৫.

গান ১৩ খ্রিস্ট, আমাদের আদর্শ

সারাংশ a

১-২. (ক) আমরা যখন যিশুর জীবন এবং তাঁর সেবার বিষয়ে পড়ি, তখন আমাদের কেমন লাগে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?

 আমরা যখন মৃত্যুতে আমাদের প্রিয়জনদের হারাই, তখন তাদের কথা আমাদের খুব মনে পড়ে! শুরু শুরুতে আমরা হয়তো এটা ভেবে অনেক দুঃখ পাই যে, মারা যাওয়ার আগে তাদের প্রতি কী কী ঘটেছিল কিংবা তারা কতটা কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু, কিছুসময় পর আমরা হয়তো তাদের সঙ্গে কাটানো ভালো মুহূর্তগুলো নিয়ে চিন্তা করি। যেমন, তারা হয়তো এমন কথা বলেছিল, যেটা আমাদের ভালো লাগত অথবা তারা যেভাবে আমাদের উৎসাহিত করত। এগুলো চিন্তা করে আমরা হয়তো আবারও খুশি হই এবং আমাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

একইভাবে, স্মরণার্থ মরসুমে আমরা যখন যিশুর মৃত্যুর বিষয়ে পড়ি এবং চিন্তা করি, তাঁকে কত কিছু সহ্য করতে হয়েছিল, তখন আমরা খুব দুঃখ পাই। কিন্তু, আমরা যখন এই বিষয়ে চিন্তা করি, পৃথিবীতে থাকাকালীন তিনি কী কী করেছিলেন এবং কী কী শিখিয়েছিলেন, তখন আমরা খুব খুশি হই। আমরা যখন চিন্তা করি, যিশুর মুক্তির মূল্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আজ তিনি কী করছেন আর ভবিষ্যতে কী করবেন, তখন আমরা অনেক উৎসাহিত হই। (১ করি. ১১:২৪, ২৫) আমরা যখন গভীরভাবে চিন্তা করব যে, যিশু আমাদের কতটা ভালোবাসেন, তখন আমাদের হৃদয় কৃতজ্ঞতায় ভরে যাবে। আমাদের ইচ্ছে করবে যেন আমরাও যেকোনো উপায়ে এটা দেখাই, যিহোবা ও যিশু আমাদের প্রতি যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধি রয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে আমরা তা দেখাতে পারি।

আমরা যিশুর প্রতি কৃতজ্ঞ, তাই আমরা সেবায় রত থাকি

৩. কেন আমরা যিশুর মুক্তির মূল্যের জন্য খুবই কৃতজ্ঞ?

আমরা যখন যিশুর জীবন এবং তাঁর সেবা নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমাদের হৃদয় কৃতজ্ঞতায় ভরে যায়। তিনি যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি লোকদের বলেছিলেন, ঈশ্বরের রাজ্যে তারা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করবে। আমরা যখন সেই আশীর্বাদের বিষয়ে পড়ি, তখন আমাদের খুব ভালো লাগে, তাই না? আমরা যিশুর মুক্তির মূল্যের জন্য খুবই কৃতজ্ঞ, যেটার কারণে আমরা যিহোবা ও যিশুর বন্ধু হতে পারি। আমরা জানি, যিশুর উপর বিশ্বাস করলে আমরা চিরকাল ধরে বেঁচে থাকতে পারব আর মৃত্যুতে যে-প্রিয়জনদের হারিয়েছি, তাদের আবারও দেখতে পাব। (যোহন ৫:২৮, ২৯; রোমীয় ৬:২৩) আমরা এগুলোর মধ্যে কোনো আশীর্বাদই পাওয়ার যোগ্য নই কিংবা এগুলোর পরিবর্তে আমরা যিহোবা ও যিশুকে কোনো কিছুই ফেরত দিতে পারি না। (রোমীয় ৫:৮, ২০, ২১) কিন্তু, আমরা এটা নিশ্চয়ই দেখাতে পারি যে, আমরা তাঁদের প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ। কীভাবে?

মগ্দলীনী মরিয়মের কাছ থেকে আপনি যিহোবা ও যিশুর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর বিষয়ে কী শিখতে পারেন? (৪-৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৪. কীভাবে মগ্দলীনী মরিয়ম দেখিয়েছিলেন, তিনি যিশুর প্রতি কৃতজ্ঞ? (ছবি দেখুন।)

মগ্দলীনী মরিয়মের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি একজন যিহুদি মহিলা ছিলেন। তার উপর সাতটা মন্দ স্বর্গদূত ভর করে ছিল এবং তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তিনি হয়তো মনে করেছিলেন, কেউই তাকে সুস্থ করতে পারবে না আর তাকে সারাজীবন এভাবেই থাকতে হবে। কিন্তু একটু চিন্তা করুন, যিশু যখন তাকে সুস্থ করে দিয়েছিলেন, তখন তার কেমন লেগেছিল। তার হৃদয় হয়তো কৃতজ্ঞতায় ভরে গিয়েছিল। এই কারণে তিনি যিশুর পিছন পিছন গিয়েছিলেন এবং চিন্তা করেছিলেন, তিনি তার সময়, শক্তি ও সম্পদ দিয়ে যিশুর সেবা করবেন। (লূক ৮:১-৩) যিশু মরিয়মের জন্য যা করেছিলেন, সেটা অনেক বড়ো কাজ ছিল। তবে, পরবর্তী সময়ে তিনি আরও কিছু করতে যাচ্ছিলেন, যেটা হয়তো মরিয়ম চিন্তাও করতে পারতেন না। তিনি সমস্ত মানুষের জন্য নিজের জীবন দিতে যাচ্ছিলেন, “যাতে যে-কেউ তাঁর উপর বিশ্বাস করে,” সে অনন্তজীবন পায়। (যোহন ৩:১৬) যিশুকে যখন যাতনাদণ্ডে বিদ্ধ করা হয়েছিল, তখনও মরিয়ম সেখানে ছিলেন। তার সেখানে থাকার ফলে যিশু এবং অন্যেরা উৎসাহিত হয়েছিল। (যোহন ১৯:২৫) যিশু মারা যাওয়ার পর, মরিয়ম এবং আরও দু-জন মহিলা সুগন্ধিদ্রব্য কিনে এনেছিলেন, যাতে সেগুলো যিশুর দেহে মাখাতে পারেন। (মার্ক ১৬:১, ২) মরিয়ম যিশুর প্রতি অনুগত ছিলেন আর এভাবে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ। অনুগত থাকার কারণে তিনি পুরস্কারও পেয়েছিলেন। যিশু যখন পুনরুত্থিত হয়েছিলেন, তখন মরিয়ম তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পেরেছিলেন আর এমনকী তিনি যিশুর সঙ্গে কথা বলার সুযোগও পেয়েছিলেন। এই সুযোগ কেবল যিশুর কিছু শিষ্যই পেয়েছিলেন।—যোহন ২০:১১-১৮.

৫. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমরা যিহোবা ও যিশুর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ?

আমরাও আমাদের সময়, শক্তি ও সম্পদ যিহোবার সেবায় ব্যবহার করতে পারি। আর এভাবে দেখাতে পারি, আমরা তাঁর এবং যিশুর প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ। যেমন, আমরা সংগঠনের বিল্ডিংগুলো নির্মাণ এবং সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কাজে সাহায্য করতে পারি।

যিহোবা ও যিশুকে ভালোবাসার কারণে আমরা অন্যদেরও ভালোবাসি

৬. কেন আমরা বলতে পারি, যিশু আমাদের প্রত্যেকের জন্য তাঁর জীবন দিয়েছেন?

আমরা যখন এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করি, যিহোবা ও যিশু আমাদের কতটা ভালোবাসেন, তখন আমাদেরও তাঁদের ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। (১ যোহন ৪:১০, ১৯) আর আমরা যখন এভাবে চিন্তা করি যে, যিশু আমার জন্য তাঁর জীবন দিয়েছেন, তখন তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়। পৌলও এভাবে চিন্তা করতেন আর তিনি যিশুর মুক্তির মূল্যের জন্য খুবই কৃতজ্ঞ ছিলেন। লক্ষ করুন, তিনি তার একটা চিঠিতে কী লিখেছিলেন: ‘ঈশ্বরের পুত্র আমাকে ভালোবাসেন এবং আমার জন্য তাঁর জীবন দান করেছেন।’ (গালা. ২:২০) যিশুর মুক্তির মূল্যের কারণেই যিহোবা আমাদের তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেন আর আমরা তাঁর বন্ধু হতে পারি। (যোহন ৬:৪৪) আপনি যখন এই বিষয়ে চিন্তা করেন, যিহোবা আপনার মধ্যে ভালো কিছু দেখেছেন এবং আপনাকে তাঁর বন্ধু হওয়ার জন্য কত বড়ো মূল্য জুগিয়েছেন, তখন আপনার কেমন লাগে? আপনার হৃদয় কি কৃতজ্ঞতায় ভরে যায় না? আপনার কি যিহোবা ও যিশুকে আরও বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না? যিহোবা ও যিশুর প্রতি আমাদের যদি ভালোবাসা থাকে, তা হলে আমাদের চিন্তা করা উচিত, কীভাবে আমরা সেই ভালোবাসা দেখাতে পারি।

যিহোবা ও যিশুর প্রতি ভালোবাসা আমাদের পরিচালিত করে, যেন আমরা সব ধরনের লোকদের কাছে সুসমাচার জানাই (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. ছবিতে যেমনটা দেখানো হয়েছে, কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমরা যিহোবা ও যিশুকে ভালোবাসি? (২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫; ৬:১, ২)

আমরা যিহোবা ও যিশুকে ভালোবাসি আর এটা অন্যদের ভালোবাসতেও আমাদের পরিচালিত করে। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫; ৬:১, ২.) অন্যদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা দেখানোর একটা উপায় হল, উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করা। আমরা সবার কাছে প্রচার করি। আমরা এটা দেখি না যে, সেই ব্যক্তি কোন জাতির অথবা তার গায়ের রং কী, তিনি ধনী না কি গরিব কিংবা সমাজে তার কোন পদ রয়েছে। এভাবে, আমরা যিহোবার ইচ্ছা পূরণ করে থাকি। আর “তাঁর ইচ্ছা এই, যেন সমস্ত ধরনের লোক রক্ষা পায় এবং সত্য সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করে।”—১ তীম. ২:৪.

৮. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমরা ভাই-বোনদের ভালোবাসি?

আমরা ভাই-বোনদের ভালোবাসার মাধ্যমেও দেখাই যে, আমরা যিহোবা ও যিশুকে ভালোবাসি। (১ যোহন ৪:২১) আমরা ভাই-বোনদের জন্য চিন্তা করি। তারা যখন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়, তখন আমরা তাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকি। তাদের কোনো প্রিয়জন যখন মারা যায়, তখন আমরা তাদের সান্ত্বনা দিই। তারা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাই। আর তারা যখন কোনো বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করে কিংবা হতাশ হয়ে পড়ে, তখন আমরা তাদের উৎসাহিত করি। (২ করি. ১:৩-৭; ১ থিষল. ৫:১১, ১৪) আমরা তাদের জন্য ক্রমাগত প্রার্থনাও করি কারণ আমরা জানি, “একজন ধার্মিক ব্যক্তির বিনতির জোরালো প্রভাব রয়েছে।”—যাকোব ৫:১৬.

৯. ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর আরেকটা উপায় কী?

ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর আরেকটা উপায় হল, তাদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখা। আমাদের যিহোবার মতো হওয়ার চেষ্টা করা উচিত, যিনি আমাদের পুরোপুরি ক্ষমা করেন। চিন্তা করুন, যিহোবা আমাদের পাপ ক্ষমা করার জন্য স্বেচ্ছায় তাঁর পুত্রকে মারা যেতে দিয়েছিলেন। তাই, ভাই-বোনেরা যখন আমাদের বিরুদ্ধে পাপ করে, তখন আমাদেরও কি তাদের ক্ষমা করা উচিত নয়? আমরা সেই দুষ্ট দাসের মতো হতে চাই না, যার বিষয়ে যিশু একটা দৃষ্টান্তে উল্লেখ করেছিলেন। সেই দাসের প্রভু তার একটা বড়ো ঋণ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু, সে কী করেছিল? সে তার এক সহদাসের ছোট্ট একটা ঋণ ক্ষমা করে দেয়নি। (মথি ১৮:২৩-৩৫) আপনার মনে যদি কোনো ভাই কিংবা বোনের বিষয়ে ভুল ধারণা থাকে, তা হলে স্মরণার্থ দিবসের আগেই তার কাছে গিয়ে শান্তি স্থাপন করুন। (মথি ৫:২৩, ২৪) এমনটা করার মাধ্যমে আপনি দেখাতে পারেন যে, আপনি যিহোবা ও যিশুকে কতটা ভালোবাসেন।

১০-১১. কীভাবে প্রাচীনেরা দেখাতে পারেন যে, তারা যিহোবা ও যিশুকে ভালোবাসেন? (১ পিতর ৫:১, ২)

১০ কীভাবে প্রাচীনেরা দেখাতে পারেন, তারা যিহোবা ও যিশুকে ভালোবাসেন? তা দেখানোর একটা বিশেষ উপায় হল, যিশুর মেষদের দেখাশোনা করা। (পড়ুন, ১ পিতর ৫:১, ২.) যিশু পিতরকে যা বলেছিলেন, তা থেকেও আমরা এই বিষয়টা বুঝতে পারি। পিতর যিশুকে তিন বার অস্বীকার করেছিলেন। এই কারণে পিতর খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন আর যেকোনোভাবেই হোক তিনি হয়তো এটা দেখাতে চেয়েছিলেন, তিনি যিশুকে কতটা ভালোবাসেন। তাই, পুনরুত্থিত হওয়ার পর যিশু যখন পিতরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘যোহনের ছেলে শিমোন, তুমি কি আমাকে ভালোবাস?’, তখন পিতর তার ভালোবাসা দেখানোর জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত ছিলেন। যিশু তাকে বলেছিলেন, “আমার মেষশাবকদের চরাও।” (যোহন ২১:১৫-১৭) পিতর সারাজীবন এই কথাগুলো মনে রেখেছিলেন এবং প্রেমের সঙ্গে যিশুর মেষদের দেখাশোনা করেছিলেন। এভাবে পিতর দেখিয়েছিলেন, তিনি যিশুকে কতটা ভালোবাসেন।

১১ প্রাচীনেরা, স্মরণার্থ মরসুমে কীভাবে আপনারা দেখাতে পারেন, আপনারাও সেই কথাগুলো মেনে চলছেন, যেগুলো যিশু পিতরকে বলেছিলেন? ক্রমাগত ভাই-বোনদের সঙ্গে পালকীয় সাক্ষাৎ করুন। বিশেষ করে সেই ভাই-বোনদের উৎসাহিত করুন, যারা কিছুসময় ধরে যিহোবার সেবা করছে না আর তাঁর কাছে ফিরে আসার জন্য তাদের সাহায্য করুন। (যিহি. ৩৪:১১, ১২) আপনারা সেই বাইবেল ছাত্র এবং নতুন ব্যক্তিদের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন, যারা স্মরণার্থ সভায় যোগ দেয় আর তাদের উৎসাহিতও করতে পারেন। মনে রাখবেন, পরবর্তী সময়ে তারাও যিশুর শিষ্য হতে পারে। এই সমস্ত কিছু করার মাধ্যমে আপনারা দেখাতে পারবেন যে, আপনারা যিহোবা ও যিশুকে কতটা ভালোবাসেন।

আমরা যিশুকে ভালোবাসি, তাই সাহসের সঙ্গে কাজ করি

১২. যিশু তাঁর শিষ্যদের যা বলেছিলেন, তা থেকে কেন আমরা আজ সাহস লাভ করতে পারি? (যোহন ১৬:৩২, ৩৩)

১২ যিশু মারা যাওয়ার আগের রাতে তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “এই জগতে তোমরা ক্লেশ ভোগ করবে, কিন্তু সাহস করো! আমিই এই জগৎকে জয় করেছি।” (পড়ুন, যোহন ১৬:৩২, ৩৩.) যিশুর অনেক শত্রু ছিল, কিন্তু তিনি তাদের ভয় পাননি। তিনি সাহস বজায় রেখেছিলেন এবং শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। কীভাবে তিনি তা করতে পেরেছিলেন? তিনি যিহোবার উপর আস্থা রেখেছিলেন। যিশু জানতেন, তাঁর শিষ্যদেরও এইরকম পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হতে হবে। তাই, যিশু যিহোবার কাছে অনুরোধ করেছিলেন, তিনি যেন তাদের যত্ন নেন। (যোহন ১৭:১১) আজ যিহোবা আমাদেরও যত্ন নিচ্ছেন। এটা জেনে আমরা কতই-না সাহস লাভ করি! তিনি আমাদের শত্রুদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। (১ যোহন ৪:৪) তিনি সমস্ত কিছুই দেখতে পান। তাই, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, আমরা যদি যিহোবার উপর আস্থা রাখি, তা হলে আমরা ভয় পাব না বরং সাহসের সঙ্গে কাজ করতে পারব।

১৩. অরিমাথিয়ার যোষেফ কীভাবে সাহসের সঙ্গে কাজ করেছিলেন?

১৩ অরিমাথিয়ার যোষেফের বিষয়ে চিন্তা করুন। তিনি যিহুদি মহাসভার সদস্য ছিলেন, যেটা সেই সময়ে যিহূদিয়ায় সবচেয়ে বড়ো আদালত ছিল। সমাজে তার এক সুনাম ছিল। তিনি যিশুর শিষ্য ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি কখনো সাহস করে অন্যদের তা বলেননি। বাইবেলে লেখা আছে, ‘তিনি যিহুদি নেতাদের ভয়ে তা প্রকাশ করতেন না।’ (যোহন ১৯:৩৮) তার হয়তো এই ভয় ছিল, লোকেরা যদি জানতে পারে যে, তিনি যিশুর শিষ্য, তা হলে তারা তাকে সম্মান করবে না। অবশেষে, তিনি সাহসের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। যিশু মারা যাওয়ার পর ‘তিনি সাহস করে পীলাতের কাছে গিয়েছিলেন এবং যিশুর দেহ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন।’ (মার্ক ১৫:৪২, ৪৩) এরপর, সবাই জানতে পেরে গিয়েছিল, তিনি যিশুর একজন শিষ্য।

১৪. আপনি যদি অন্যদের ভয় পান, তা হলে কী করতে পারেন?

১৪ কখনো কখনো আপনিও কি অরিমাথিয়ার যোষেফের মতো অন্যদের ভয় পান? আপনি কি স্কুলে অথবা কাজের জায়গায় এটা বলতে লজ্জা পান যে, আপনি একজন যিহোবার সাক্ষি? আপনি কি এই ভেবে একজন প্রকাশক হচ্ছেন না কিংবা বাপ্তিস্ম নিচ্ছেন না যে, লোকেরা আপনার সম্বন্ধে কী মনে করবে? এইরকম চিন্তা করে সঠিক কাজ করা থেকে পিছিয়ে যাবেন না। এই ব্যাপারে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন এবং সাহস চান। লক্ষ করুন, কীভাবে তিনি আপনাকে সাহায্য করছেন। তখন আপনার বিশ্বাস মজবুত হবে আর আপনি সাহসের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন।—যিশা. ৪১:১০, ১৩.

আমরা আনন্দে থাকি, তাই আমরা যিহোবার সেবায় রত থাকি

১৫. যিশুকে জীবিত দেখে তাঁর শিষ্যেরা খুব খুশি হয়েছিলেন, তাই তারা কী করেছিলেন? (লূক ২৪:৫২, ৫৩)

১৫ যিশু মারা যাওয়ার পর তাঁর শিষ্যেরা খুবই দুঃখিত ছিলেন। চিন্তা করুন, আপনি যদি তাদের জায়গায় থাকতেন, তা হলে আপনি কেমন অনুভব করতেন। তারা শুধু তাদের বন্ধুকেই হারাননি বরং এমনটা মনে হচ্ছিল, তারা তাদের আশাও হারিয়েছেন। (লূক ২৪:১৭-২১) কিন্তু, পুনরুত্থিত হওয়ার পর যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখন তারা নিশ্চয়ই খুব খুশি হয়েছিলেন! তিনি তাদের বুঝিয়েছিলেন, তাঁর বলিদানের মাধ্যমে কীভাবে বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হয়েছে। আর যিশু তাদের এক গুরুত্বপূর্ণ কাজও দিয়েছিলেন। (লূক ২৪:২৬, ২৭, ৪৫-৪৮) যিশু ৪০ দিন পর স্বর্গে ফিরে যান। ততদিন পর্যন্ত শিষ্যদের দুঃখ আনন্দে পরিণত হয়েছিল। তারা খুশি ছিলেন, যিশু জীবিত রয়েছেন এবং তিনি তাদের যে-কাজ দিয়েছেন, সেটা পূরণ করার ক্ষেত্রে সাহায্যও করবেন। এই আনন্দই তাদের যিহোবার প্রশংসা করে চলার জন্য পরিচালিত করেছিল।—পড়ুন, লূক ২৪:৫২, ৫৩; প্রেরিত ৫:৪২.

১৬. আমরা যিশুর শিষ্যদের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

১৬ আমরা যিশুর শিষ্যদের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? আমাদের শুধুমাত্র স্মরণার্থ মরসুমেই নয়, কিন্তু বছরের বাকি মাসগুলোতেও উদ্যোগের সঙ্গে যিহোবার সেবা করা উচিত। এটা করার জন্য আমাদের ঈশ্বরের রাজ্যকে জীবনে প্রথম স্থান দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এর ফলে, আমরা অনেক আনন্দ লাভ করব। আমাদের অনেক ভাই-বোন এমনটাই করেছে, যেমন কেউ কেউ কম ঘণ্টা কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে তারা বেশি করে প্রচার করতে পারে, সভায় যেতে পারে এবং নিয়মিতভাবে পারিবারিক উপাসনা করতে পারে। কোনো কোনো ভাই-বোন অনেক ভেবে-চিন্তে জিনিসপত্র কেনে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা কিছু জিনিস কিনবে না, কিন্তু অন্য লোকেরা চিন্তা করতে পারে, এগুলো না কিনলে তাদের চলবে না। কিন্তু, সেই ভাই-বোনেরা এই কারণে সেই সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে তারা মণ্ডলীর কাজে আরও সাহায্য করতে পারে কিংবা যেখানে বেশি প্রচারকের প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করতে পারে। আর যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমরা যদি অনুগতভাবে তাঁর সেবা করে চলি এবং তাঁর রাজ্যকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থান দিই, তা হলে তিনি আমাদের প্রচুর আশীর্বাদ করবেন।—হিতো. ১০:২২; মথি ৬:৩২, ৩৩.

স্মরণার্থ মরসুমে একটু সময় বের করে চিন্তা করুন, যিহোবা ও যিশু আপনার জন্য কী কী করেছেন (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. এই বছর স্মরণার্থ মরসুমে আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ? (ছবি দেখুন।)

১৭ আমরা সবাই মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল স্মরণার্থ দিবস পালন করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি। কিন্তু, আমরা এখন থেকেই যিশুর জীবন ও বলিদান নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারি আর এও চিন্তা করতে পারি, যিহোবা ও যিশু আমাদের কতটা ভালোবাসেন। আমরা এমনটা স্মরণার্থ দিবসের পরও করতে পারি। আপনি একটু সময় বের করে এই বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারেন, পৃথিবীতে যিশুর জীবনের শেষ সপ্তাহে কী কী হয়েছিল। এই বিষয়ে জানার জন্য আপনি ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের আমাদের খ্রিস্টীয় জীবন ও পরিচর্যা—সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র ৪ ও ৫ পৃষ্ঠায় দেওয়া তালিকা দেখতে পারেন। আপনি যখন যিশুর জীবনের বিষয়ে পড়বেন, তখন এমন ঘটনাগুলো নিয়ে চিন্তা করুন, যেগুলো পড়ে আপনি যিশু ও যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারবেন, তাঁদের ভালোবাসতে পারবেন, আপনার সাহস বাড়বে এবং আপনি আনন্দিত হবেন। এরপর চিন্তা করুন, কীভাবে আপনি দেখাতে পারেন যে, আপনি তাঁদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। বিশ্বাস করুন, আপনি যখন স্মরণার্থ মরসুমে এই সমস্ত কিছু করবেন, তখন তা দেখে যিশু খুব খুশি হবেন!—প্রকা. ২:১৯.

গান ১৭ আমি চাই

a স্মরণার্থ মরসুমে আমাদের যিশুর জীবন ও তাঁর বলিদান নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত। আর এও চিন্তা করা উচিত যে, তিনি এবং যিহোবা আমাদের কতটা ভালোবাসেন। আমরা যখন তা করব, তখন আমাদের হৃদয় তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে যাবে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, মুক্তির মূল্যের জন্য আমরা খুবই কৃতজ্ঞ এবং যিহোবা ও যিশুকে খুব ভালোবাসি। আর এটাও জানতে পারব, কীভাবে আমরা ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে পারি, কীভাবে আমরা সাহসের সঙ্গে কাজ করতে পারি এবং কীভাবে আমরা যিহোবার সেবায় আনন্দ পেতে পারি।