সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৯

জীবন ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক উপহার, এটার প্রতি সম্মান দেখান!

জীবন ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক উপহার, এটার প্রতি সম্মান দেখান!

“তাঁর মাধ্যমেই আমরা জীবন, গতি ও সত্তা লাভ করেছি।”—প্রেরিত ১৭:২৮.

গান ১৪১ আশ্চর্য এই জীবন

সারাংশ a

১. যিহোবার কাছে আমাদের জীবন কতটা মূল্যবান?

 চিন্তা করুন, আপনার বাবা উত্তরাধিকার হিসেবে আপনাকে একটা বাড়ি দিয়েছেন। বাড়িটা খুবই মজবুত ও সুন্দর। এটা ঠিক যে, কোথাও কোথাও থেকে সেই বাড়িটার রং চোটে গিয়েছে, কিন্তু, আজও সেই বাড়ির দাম লক্ষ লক্ষ টাকা। তাই, আপনি কি উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া সেই উপহারের প্রতি উপলব্ধি দেখাবেন না? সেটাকে আরও ভালো অবস্থায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা করবেন না? ঠিক একইভাবে, যিহোবাও আমাদের এক মূল্যবান উপহার দিয়েছেন আর সেটা হল, আমাদের জীবন। যিহোবার কাছে আমাদের জীবন এতটাই মূল্যবান যে, তিনি আমাদের জন্য তাঁর পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছেন।—যোহন ৩:১৬.

২. দ্বিতীয় করিন্থীয় ৭:১ পদ অনুযায়ী যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান?

যিহোবাই সবাইকে জীবন দান করেন। (গীত. ৩৬:৯) প্রেরিত পৌলও এই বিষয়টা বিশ্বাস করতেন, তাই তিনি বলেছিলেন: “তাঁর মাধ্যমেই আমরা জীবন, গতি ও সত্তা লাভ করেছি।” (প্রেরিত ১৭:২৫, ২৮) সত্যিই, আমাদের জীবন ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক উপহার। তিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন আর বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু জুগিয়ে থাকেন। (প্রেরিত ১৪:১৫-১৭) তবে, তিনি কোনো অলৌকিক কাজ করে আমাদের বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন না। তিনি চান আমরা যেন নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিই আর এরজন্য আমাদের পক্ষে যা-কিছু করা সম্ভব, তা করি এবং তাঁর সেবা করে চলি। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৭:১.) কিন্তু, কেন নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এবং নিজেদের সুরক্ষিত রাখা গুরুত্বপূর্ণ আর কীভাবে আমরা তা করতে পারি? আসুন তা লক্ষ করি।

জীবন এক উপহার, এটার প্রতি সম্মান দেখান

৩. নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার একটা কারণ কী?

নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার একটা কারণ হল, আমরা মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করতে চাই। আর যখন স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, তখনই আমরা তা করতে পারব। (মার্ক ১২:৩০) আমরা চাই যেন আমরা ‘আমাদের দেহকে জীবিত, পবিত্র এবং ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলি হিসেবে উৎসর্গ করি।’ তাই, আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যেটার কারণে আমাদের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যেতে পারে। (রোমীয় ১২:১) এটা ঠিক যে, আমরা নিজেদের পুরোপুরিভাবে সুস্থসবল রাখতে পারি না। কখনো কখনো আমরা অসুস্থ হয়েই যাই। কিন্তু, আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব আমাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া উচিত। এভাবে আমরা দেখাব, আমাদের পিতা যিহোবা আমাদের যে-মূল্যবান জীবন দিয়েছেন, সেটার প্রতি আমরা খুবই সম্মান দেখাই।

৪. রাজা দায়ূদ কী চেয়েছিলেন?

রাজা দায়ূদও জীবনের প্রতি খুবই সম্মান দেখাতেন। একটা গীতে তিনি যা লিখেছিলেন, তা থেকে বোঝা যায় যে, কেন তিনি তা দেখাতেন। তিনি লিখেছিলেন: “আমার মরণে কিম্বা মৃতস্থানে যাওয়াতে কি লাভ? ধুলা কি তোমার গৌরব করবে কিম্বা তোমার বিশ্বস্ততা প্রচার করবে?” (গীত. ৩০:৯, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) দায়ূদ এই কথাগুলো হয়তো সেইসময় লিখেছিলেন, যখন তার অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, তিনি যেকোনোভাবে হোক নিজেকে সুস্থসবল রাখতে চেয়েছিলেন এবং দীর্ঘসময় ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন, যাতে তিনি যিহোবার প্রশংসা করতে পারেন। আর আমরা সবাই তো এটাই চাই, তাই না?

৫. আমরা যতই অসুস্থ হয়ে পড়ি না কেন কিংবা বয়স্ক হয়ে যাই না কেন, তারপরও আমরা কী করতে পারি?

আমরা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি অথবা আমাদের বয়স বাড়তে থাকে, তখন আমরা হয়তো ততটা করতে পারি না, যতটা আগে করতে পারতাম। এই কারণে কখনো কখনো আমরা হয়তো নিজেদের উপর রেগে যাই কিংবা অনেক দুঃখ পাই। তবে, আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় বরং নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, তা করা উচিত। এর কারণ হল, আমরা যতই অসুস্থ হয়ে পড়ি না কেন কিংবা বয়স্ক হয়ে যাই না কেন, দায়ূদের মতো আমরাও যিহোবার প্রশংসা করতে পারি। আমাদের শরীর যতই দুর্বল হয়ে যাক না কেন, যিহোবার চোখে আমাদের মূল্য কখনো কমে যাবে না। এটা জেনে আমাদের কতই-না ভালো লাগে! (মথি ১০:২৯-৩১) কাল আমরা যদি মারাও যাই, যিহোবা আমাদের জীবন ফিরিয়ে দেবেন আর তিনি তা দেওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে রয়েছেন। (ইয়োব ১৪:১৪, ১৫) তাই, আমরা যে আজ বেঁচে রয়েছি, আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত।

ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলুন

৬. খাওয়া ও পান করার অভ্যাসের বিষয়ে যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান?

বাইবেল এমন কোনো বই নয়, যেখানে বলা রয়েছে যে, কীভাবে আমরা নিজেদের সুস্থসবল রাখতে পারি কিংবা এর জন্য আমাদের কী খাওয়া উচিত এবং কী খাওয়া উচিত নয়। তবে, বাইবেল থেকে আমরা নিশ্চয়ই জানতে পারি, এই বিষয়ে যিহোবা কী চিন্তা করেন। যেমন, বাইবেলে যিহোবা আমাদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন, আমরা যেন এমন সমস্ত বিষয় থেকে দূরে থাকি, যেগুলো আমাদের শরীরকে ক্ষতি করতে পারে। (উপ. ১১:১০) বাইবেলে এও বলা হয়েছে, আমরা যেন প্রচুর পরিমাণে মদ না খাই এবং অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া না করি। এমনটা করলে আমাদের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যেতে পারে আর এমনকী আমাদের জীবনও চলে যেতে পারে। (হিতো. ২৩:২০) যিহোবা চান আমরা যখন এই সিদ্ধান্ত নিই যে, আমরা কী খাব ও পান করব এবং কতটা খাব ও পান করব, তখন আমরা যেন আত্মসংযম দেখাই।—১ করি. ৬:১২; ৯:২৫.

৭. হিতোপদেশ ২:১১ পদে দেওয়া পরামর্শ কাজে লাগিয়ে আমরা স্বাস্থ্যের বিষয়ে কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি?

আমরা যখন চিন্তাভাবনা করে সমস্ত কিছু করি, তখনও আমরা দেখাই যে, যিহোবা আমাদের যে-জীবন দিয়েছেন, সেটার প্রতি আমরা খুবই সম্মান দেখাই। (গীত. ১১৯:৯৯, ১০০; পড়ুন হিতোপদেশ ২:১১.) যেমন, খাওয়ার ও পান করার বিষয়টাই ধরা যাক। আমরা যদি জানি, কোনো খাবার খেলে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি, তা হলে বুদ্ধিমানের কাজ হবে আমরা যেন সেই খাবার না খাই। আমরা তখনও উত্তম বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করি, যখন আমরা ভালোভাবে ঘুমাই, ক্রমাগত এক্সারসাইজ করি আর নিজেকে এবং নিজেদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি।

নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখুন এবং সুরক্ষিত থাকুন

৮. কেন আমরা বলতে পারি, যিহোবা চান যেন আমরা সবসময় সুরক্ষার বিষয়টা খেয়াল রাখি?

যিহোবা ইজরায়েলীয়দের এমন অনেক নিয়ম দিয়েছিলেন, যেগুলো কাজে লাগানোর মাধ্যমে তারা মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারত এবং বাড়িতে থাকার সময়ে আর কাজ করার সময়েও সুরক্ষিত থাকতে পারত। (যাত্রা. ২১:২৮, ২৯; দ্বিতীয়. ২২:৮) কোনো ব্যক্তি যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে কারো জীবন নিয়ে নিত, তা হলে তাকে সেটার চরম পরিণতি ভোগ করতে হত। (দ্বিতীয়. ১৯:৪, ৫) আর একজন ব্যক্তি যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো গর্ভবতী মহিলাকে আঘাত করত আর এর ফলে যদি তার সন্তান মারা যেত, তা হলে সেই ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হত। (যাত্রা. ২১:২২, ২৩) এভাবে, বাইবেল থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যিহোবা চান যেন আমরা সবসময় সুরক্ষার বিষয়টা খেয়াল রাখি।

এই পরিস্থিতিগুলোতে কীভাবে আমরা জীবনের প্রতি সম্মান দেখাতে পারি? (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯. আমরা কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে পারি, যাতে কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা না ঘটে? (ছবিগুলোও দেখুন।)

আমরা যখন বাড়িতে এবং কাজ করার সময়ে সুরক্ষিত থাকার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করি, তখন আমরা দেখাই যে, জীবনের প্রতি আমাদের সম্মান রয়েছে। যেমন, আমরা খেয়াল রাখি যেন ধারালো কোনো জিনিস, ওষুধ এবং রাসায়নিক দ্রব্য (কেমিক্যাল) যেন বাচ্চাদের নাগালের বাইরে থাকে। আর যখন আমাদের এগুলো ফেলতে হয়, তখন এমনভাবে ফেলি যেন সেগুলো অন্যদের কোনো ক্ষতি না করে। আমরা যখন আগুন জ্বালাই, জল ফুটাই কিংবা কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি, তখন আমরা সাবধানতা অবলম্বন করি আর সেগুলো এখানে-ওখানে ছড়িয়ে রাখি না। আমরা এই বিষয়েও খেয়াল রাখি, আমরা যদি মদ খাই কিংবা এমন কোনো ওষুধ খাই, যেটার কারণে আমাদের ঘুম ঘুম ভাব লাগে কিংবা আমাদের ঘুম পূরণ না হয়ে থাকে, তা হলে আমরা যেন গাড়ি না চালাই। আর আমরা এটাও খেয়াল রাখি, গাড়ি চালানোর সময়ে আমরা যেন এক হাত দিয়ে ফোন ব্যবহার না করি।

যখন কোনো বিপর্যয় ঘটে

১০. কোনো বিপর্যয় আসার আগে কিংবা চলাকালীন নিজেদের সুরক্ষার জন্য আমরা কী করতে পারি?

১০ কিছু বিপর্যয় এমন হয়, যেগুলো আমরা আটকাতে পারি না। যেমন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মহামারি এবং দাঙ্গা। তবে, যখন এইরকম বিপর্যয় আসে, তখন আমরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য অনেক কিছু করতে পারি। যেমন, আমরা যে-এলাকায় থাকি, সেখানে যদি কারফিউ কিংবা কিছু বিধি-নিষেধ জারি করা হয় অথবা সেই এলাকা খালি করতে বলা হয়, তা হলে আমরা যেন সেই নির্দেশনাগুলো মেনে চলি। (রোমীয় ১৩:১, ৫-৭) কিছু বিপর্যয়ের বিষয়ে আগে থেকে জানা যায়। এইরকম সময়ে আধিকারিকেরা যে-নির্দেশনাগুলো দেয়, সেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারি। যেমন, আমাদের এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের কাছে যেন যথেষ্ট পরিমাণে জল, পচনশীল নয় এমন খাবারদাবার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র থাকে।

১১. আমাদের এলাকায় যদি কোনো রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?

১১ আমরা যেখানে থাকি, সেখানে যদি এমন কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে, যেটা খুব দ্রুত একজনের থেকে অন্য জনের হয়ে যাচ্ছে, তা হলে আমরা কী করতে পারি? এইরকম সময় আধিকারিকেরা যে-নির্দেশনাগুলো দেবে, আমাদের সেগুলো মেনে চলা উচিত। যেমন, আমাদের বলা হতে পারে যেন আমরা বার বার হাত ধুই, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি, মাস্ক পরি আর যদি আমাদের মধ্যে রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তা হলে অন্যদের থেকে নিজেদের আলাদা রাখি। এভাবে আমরা যখন সাবধানতা অবলম্বন করি, তখন আমরা দেখাই যে, ঈশ্বর আমাদের যে-জীবন দিয়েছেন, সেটার প্রতি আমাদের সম্মান রয়েছে।

১২. যখন কোনো বিপর্যয় আসে, তখন কীভাবে আমরা হিতোপদেশ ১৪:১৫ পদে দেওয়া নীতি কাজে লাগাতে পারি?

১২ এইরকম পরিস্থিতিতে আমরা হয়তো নিজেদের বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী কিংবা নিউজের মাধ্যমে এমন কিছু শুনতে পাই, যেগুলো সত্য নয়। লোকদের “সকল কথায়” চোখ-কান বন্ধ করে বিশ্বাস করার পরিবর্তে আমাদের সরকারি আধিকারিক এবং ডাক্তারদের কাছ থেকে পাওয়া নির্ভরযোগ্য তথ্যের উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৪:১৫.) পরিচালকগোষ্ঠী এবং শাখা অফিসের ভাইয়েরা সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করে আর এরপরই সভা কিংবা প্রচারের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দিয়ে থাকে। (ইব্রীয় ১৩:১৭) আমরা যদি সেই নির্দেশনা মেনে চলি, তা হলে আমরা নিজেরা সুরক্ষিত থাকব এবং অন্যেরা সুরক্ষিত থাকবে। এর ফলে, হয়তো আমাদের এলাকার লোকেরা যিহোবার সাক্ষিদের আরও সম্মান করতে শুরু করবে।—১ পিতর ২:১২.

রক্তের ব্যাপারে কোনো সমস্যা আসার আগেই প্রস্তুতি নিন

১৩. যখন রক্ত নেওয়ার বিষয়টা আসে, তখন কীভাবে আমরা দেখাই যে, আমরা জীবনকে খুবই মূল্যবান হিসেবে দেখি?

১৩ অনেক লোক এই বিষয়টা জানে, যিহোবার সাক্ষিরা রক্ত গ্রহণ করে না। কারণ সাক্ষিরা এটাকে পবিত্র হিসেবে দেখে। যিহোবা বাইবেলে স্পষ্টভাবে লিখিয়েছেন, আমাদের রক্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। আমরা এই নিয়ম যেকোনো পরিস্থিতিতে পালন করি, তা আমাদের জীবন যতই ঝুঁকির মুখে থাকুক না কেন। (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) কিন্তু, এর মানে এই নয়, আমরা আমাদের জীবনকে ভালোবাসি না। ঈশ্বর আমাদের যে-জীবন দিয়েছেন, সেটাকে আমরা খুবই মূল্যবান হিসেবে দেখি। তাই, আমরা এমন ডাক্তারের কাছে যাই, যারা রক্ত ছাড়াই উন্নত মানের চিকিৎসা করার জন্য প্রস্তুত থাকে।

১৪. কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে হয়তো অপারেশন করানোর প্রয়োজন পড়বে না?

১৪ এখনও পর্যন্ত আমরা এই প্রবন্ধে যে-পরামর্শগুলোর উপর মনোযোগ দিয়েছি, আমরা যদি সেগুলো মেনে চলি এবং নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিই, তা হলে হয়তো বড়ো ধরনের কোনো চিকিৎসা অথবা অপারেশন করানোর প্রয়োজন পড়বে না। আর যদি অপারেশন করাতেও হয়, তা হলে সেই সময়ে বেশি সমস্যা হবে না এবং অপারেশন করানোর পর আমরা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠব। আমরা যদি বাড়িতে এবং কাজের জায়গায় সুরক্ষার বিষয়টা খেয়াল রাখি এবং ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে চলি, তা হলে আমরা মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেকটাই কমাতে পারব। আর আমাদের হয়তো কোনো বড়ো অপারেশন করানোর প্রয়োজন পড়বে না।

আমরা জীবনকে মূল্যবান হিসেবে দেখি, তাই আমরা অ্যাডভান্স হেল্থকেয়ার ডাইরেক্টিভ পূরণ করি এবং সবসময় সেটা আমাদের কাছে রাখি (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) d

১৫. (ক) কেন আমাদের অ্যাডভান্স হেল্থকেয়ার ডাইরেক্টিভে সাম্প্রতিক তথ্যগুলো দেওয়া এবং তা সবসময় কাছে রাখা গুরুত্বপূর্ণ? (ছবিও দেখুন।) (খ) ভিডিওতে যেমনটা দেখানো হয়েছে, কীভাবে আমরা রক্তের ব্যাপারে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারি?

১৫ ঈশ্বর আমাদের যে-জীবন দিয়েছেন, সেটার প্রতি আমরা খুবই সম্মান দেখাই। তাই, আমরা অ্যাডভান্স হেল্থকেয়ার ডাইরেক্টিভ (নো ব্লাড কার্ড) পূরণ করি এবং সবসময় নিজেদের কাছে রাখি। b এই কার্ডে লেখা থাকে, যদি রক্ত নেওয়ার বিষয়টা আসে, তা হলে আমাদের সিদ্ধান্ত কী হবে। এতে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু বিষয়ও লিখতে পারি। আপনি কি আপনার অ্যাডভান্স হেল্থকেয়ার ডাইরেক্টিভ কার্ড পূরণ করেছেন? কিংবা এতে দেওয়া তথ্য কি পুরোনো হয়ে গিয়েছে? আপনি যদি এটাকে এখনও পর্যন্ত পূরণ না করে থাকেন অথবা এতে কোনো রদবদল করতে চান, তা হলে দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা করুন। এই কার্ডে এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে লেখা খুবই উপকারজনক। কাল যদি আমাদের স্বাস্থ্যগত কোনো বড়ো সমস্যা দেখা দেয়, তখন চিকিৎসা শুরু হতে অযথা দেরি হবে না। আর ডাক্তারেরাও আমাদের এমন কোনো ওষুধ দেবে না, যেটার কারণে আমাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। c

১৬. আমরা যদি বুঝতে না পারি, কীভাবে অ্যাডভান্স হেল্থকেয়ার ডাইরেক্টিভ পূরণ করতে হবে, তা হলে আমরা কী করতে পারি?

১৬ হতে পারে, আপনার বয়স কম এবং আপনার স্বাস্থ্যও এখন ভালো রয়েছে, কিন্তু মনে রাখবেন, দুর্ঘটনা যে-কারো প্রতি ঘটতে পারে এবং যেকোনো সময়ে যে-কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। (উপ. ৯:১১) তাই, এটা কতই-না ভালো হবে যেন আমরা সবাই অ্যাডভান্স হেল্থকেয়ার ডাইরেক্টিভ পূরণ করে রাখি। আপনি যদি বুঝতে না পারেন, কীভাবে এই কার্ড পূরণ করতে হয়, তা হলে আপনি প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তারা এই কার্ড পূরণ করার জন্য আপনাকে সাহায্য করতে পারেন কারণ সাধারণত তারা জানেন, কীভাবে এটা পূরণ করতে হয়। তারা আপনাকে এটা বুঝতে অবশ্যই সাহায্য করবেন যে, রক্তের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছু ক্ষেত্রে কোন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এরপর, তারা আপনার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো সেই কার্ডে লিখতে আপনাকে সাহায্য করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, প্রাচীনেরা আপনার হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না, আপনাকেই আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।—গালা. ৬:৪, ৫.

‘যুক্তিবাদী হোন’

১৭. স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো বিষয়ে কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা যুক্তিবাদী?

১৭ স্বাস্থ্যের এবং চিকিৎসার ব্যাপারে অনেক সিদ্ধান্তই আমরা আমাদের বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেকের উপর ভিত্তি করে নিই। (প্রেরিত ২৪:১৬; ১ তীম. ৩:৯) তাই, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে এবং এই বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে আমাদের ফিলিপীয় ৪:৫ পদে দেওয়া নীতিটা মাথায় রাখা উচিত, যেখানে লেখা আছে: “তোমাদের যুক্তিবাদিতা যেন সবার কাছে প্রকাশ পায়।” যুক্তিবাদিতা দেখানোর মানে হল আমরা যেন নিজস্ব সিদ্ধান্ত বা মতামত অন্যদের উপর চাপিয়ে না দিই। আর তারা যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, যেটা আমাদের পছন্দ নয়, তখনও আমরা যেন তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখাই এবং তাদের সম্মান করি। আর যুক্তিবাদী হওয়ার আরেকটা অর্থ হল, আমরা যেন নিজেদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করি।—রোমীয় ১৪:১০-১২.

১৮. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, যিহোবা আমাদের যে-জীবন দিয়েছেন, সেটার প্রতি আমরা খুবই কৃতজ্ঞ?

১৮ আমরা যখন সুরক্ষিত থাকার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করি এবং মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করি, তখন আমরা দেখাই যে, আমরা যিহোবার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ, যিনি আমাদের জীবন দিয়েছেন। (প্রকা. ৪:১১) আজ এই জগতে আমাদের বিভিন্ন রোগের সঙ্গে লড়াই করতে হয় এবং বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু, ঈশ্বর যখন আমাদের সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি এমনটা চাননি। তিনি আমাদের খুবই ভালোবাসেন এবং খুব শীঘ্রই আমাদের অনন্তজীবন দেবেন। সেই সময় কেউই যন্ত্রণায় ছটফট করবে না এবং কেউই মারা যাবে না। (প্রকা. ২১:৪) তাই আসুন, ততদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের ভালোভাবে যত্ন নিই এবং মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার সেবা করে চলি।

গান ১৪০ জীবন অন্তহীন!

a আমাদের জীবন ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক মূল্যবান উপহার। এই প্রবন্ধে আমরা এমন কিছু বিষয়ের উপর মনোযোগ দেব, যেগুলোর ফলে জীবনের প্রতি আমাদের সম্মান আরও বেড়ে যাবে। আমরা এও জানতে পারব, যখন কোনো বিপর্যয় ঘটে, তখন আমরা কীভাবে সুরক্ষিত থাকতে পারি, নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারি আর এমন কী করতে পারি, যাতে আমাদের প্রতি কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা না ঘটে। আমরা এও আলোচনা করব, স্বাস্থ্যগত বড়ো বড়ো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য কীভাবে আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারি।

b এটাকে চিকিৎসা সংক্রান্ত অলঙ্ঘনীয় ঘোষণাপত্রও (DPA কার্ড) বলা হয়।

d ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: একজন যুবক ভাই অ্যাডভান্স হেল্থকেয়ার ডাইরেক্টিভ পূরণ করছেন আর বাইরে যাওয়ার সময় সেটা সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন।