সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৫

সবসময় ধৈর্য ধরুন!

সবসময় ধৈর্য ধরুন!

“ধৈর্যকে কাপড়ের মতো পরিধান করো।”—কল. ৩:১২.

গান ১১৪ “ধৈর্য ধরো”

সারাংশ a

১. লোকেরা যখন ধৈর্য ধরে, তখন কেন আমাদের তা ভালো লাগে?

 লোকেরা যখন ধৈর্য ধরে, তখন আমাদের সবার তা ভালো লাগে। কেন? কারণ তাদের যদি কোনো বিষয়ে অপেক্ষা করতে হয়, তা হলে তারা বিরক্ত হয়ে যায় না। কিংবা আমাদের দ্বারা যদি কোনো ভুল হয়ে যায়, তা হলেও তারা রেগে যায় না। আর আমাদের যদি কোনো বিষয় বুঝতে সময় লাগে, তারপরও তারা আমাদের প্রতি ধৈর্য ধরে। যেমন, আমাদের মধ্যে অনেকেরই বাইবেলের কোনো সত্য বুঝতে, সেটা বিশ্বাস করতে বা সেই অনুযায়ী চলতে সময় লেগেছিল। কিন্তু, যে-ভাই কিংবা বোন আমাদের শেখাচ্ছিলেন, তিনি হাল ছেড়ে দেননি। আর সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, আমরা যিহোবার প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাদের প্রতি ধৈর্য ধরেন!—রোমীয় ২:৪.

২. কখন আমাদের পক্ষে ধৈর্য ধরা কঠিন হতে পারে?

আমরা যখন অন্যদের ধৈর্য ধরতে দেখি, তখন আমাদের খুব ভালো লাগে। কিন্তু, যখন আমাদের ধৈর্য ধরার বিষয়টা আসে, তখন কখনো কখনো আমাদের পক্ষে ধৈর্য ধরা কঠিন হতে পারে। যেমন, আমরা যদি ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে যাই, তার উপর আমাদের যদি দেরিও হয়ে যায়, তা হলে আমরা হয়তো শান্ত না-ও থাকতে পারি। অথবা কেউ যখন আমাদের বিরক্ত করে, তখন হয়তো আমাদের মেজাজ গরম হয়ে যায়। আর অনেকসময় আমাদের পক্ষে হয়তো নতুন জগতের জন্য অপেক্ষা করাও কঠিন বলে মনে হয়। তাই, আপনি কি আরও বেশি করে ধৈর্য ধরতে চান? এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, ধৈর্য ধরার মানে কী এবং ধৈর্য ধরা কেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর আমরা কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো মনে রাখলে আমরা আরও ধৈর্য ধরতে পারব।

ধৈর্য ধরার মানে কী?

৩. যে-ব্যক্তি ধৈর্য ধরেন, তাকে যদি কেউ রাগিয়ে তোলে, তা হলে তিনি কী করেন?

আসুন লক্ষ করি, যে-ব্যক্তি ধৈর্য ধরেন, তার মধ্যে কোন চারটে বিশেষ বিষয় থাকে। প্রথমত, যে-ব্যক্তি ধৈর্য ধরেন, তিনি “ক্রোধে ধীর” হন এবং দ্রুত রেগে যান না। যখন কেউ তাকে রাগিয়ে তোলে কিংবা তিনি যখন চাপের মধ্যে থাকেন, তখন তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেন না বরং শান্ত থাকেন। আপনি কি জানেন, “ক্রোধে ধীর” হওয়ার বিষয়টা বাইবেলে প্রথম বার তখন লেখা হয়েছিল, যখন যিহোবার বিষয়ে বলা হয়েছিল যে, তিনি “স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্‌”!—যাত্রা. ৩৪:৬.

৪. যে-ব্যক্তি ধৈর্য ধরেন, তাকে যদি অপেক্ষা করতে হয়, তা হলে তিনি কী করেন?

দ্বিতীয়ত, যে-ব্যক্তি ধৈর্য ধরেন, তাকে যদি কখনো অপেক্ষা করতে হয়, তা হলেও তিনি শান্ত থাকেন। যেমন, যদি কোনো বিষয়ে তিনি যতটা ভেবেছিলেন, তার চেয়ে বেশি সময় লাগে, তা হলে তিনি অধৈর্য হয়ে পড়েন না কিংবা বিরক্ত হয়ে যান না। (মথি ১৮:২৬, ২৭) এমন অনেক পরিস্থিতি আসতে পারে, যেখানে আমাদের শান্তভাবে অপেক্ষা করতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ, কেউ যদি এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলে, তা হলে আমাদের মন দিয়ে তার কথা শোনা উচিত। কখনোই কথার মাঝে কথা বলা উচিত নয়। (ইয়োব ৩৬:২) অথবা আমাদের বাইবেল ছাত্রের যদি বাইবেলের কোনো শিক্ষা বুঝতে একটু কঠিন লাগে কিংবা তার যদি কোনো মন্দ অভ্যাস ছাড়তে সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তা হলেও আমাদের হয়তো ধৈর্য ধরতে হবে।

৫. যে-ব্যক্তি ধৈর্য ধরেন, তিনি কী করেন না?

তৃতীয়ত, যে-ব্যক্তি ধৈর্য ধরেন, তিনি তাড়াহুড়ো করে কাজ করেন না। এটা ঠিক যে, কিছু কাজ আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে হয়। তবে, যে-ব্যক্তি ধৈর্য ধরেন, তাকে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়, তা হলে তিনি সেটা শুরু করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করেন না, আবার তাড়াহুড়ো করে শেষও করেন না। এর পরিবর্তে, তিনি সময় নিয়ে আগে থেকে চিন্তা করেন যে, সেই কাজটা ভালোভাবে করতে তার কতটা সময় লাগবে। আর তারপর, সেই সময়ের মধ্যেই তিনি কাজটা শেষ করেন।

৬. যে-ব্যক্তি ধৈর্য ধরেন, তিনি কঠিন সময়ে কী করেন না?

চতুর্থত, যে-ব্যক্তি ধৈর্য ধরেন, তিনি কঠিন সময়ে অভিযোগ করেন না। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, তিনি ধৈর্য ধরেন এবং সমস্ত কিছু আনন্দের সঙ্গে সহ্য করে নেন। যখন আমরা কোনো কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাই, তখন আমরা হয়তো আমাদের কোনো বন্ধুকে বলতে চাই যে, আমরা কেমন অনুভব করছি। আর এমনটা করা ভুল নয়। তবে, আমাদের মধ্যে যদি ধৈর্য থাকে, তা হলে আমরা শুধু সমস্যার বিষয়েই চিন্তা করব না। এর পরিবর্তে, আমরা ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেব এবং আনন্দের সঙ্গে যিহোবার সেবা করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করব। (কল. ১:১১) তাহলে, এই পর্যন্ত আমরা যে-বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম, খ্রিস্টান হিসেবে সেগুলো সবই মনে রাখার মাধ্যমে আমাদের ধৈর্য ধরা উচিত। কিন্তু, ধৈর্য ধরা কেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ? আসুন, কিছু কারণের উপর মনোযোগ দিই।

কেন ধৈর্য ধরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ?

একজন কৃষক ধৈর্য ধরেন এবং নিশ্চিত থাকেন যে, সঠিক সময়ে তিনি অবশ্যই ফসল কাটবেন। ঠিক একইভাবে, আমরাও ধৈর্য ধরি এবং নিশ্চিত থাকি যে, যিহোবা সঠিক সময়ে তাঁর করা সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. যাকোব ৫:৭, ৮ পদ অনুযায়ী ধৈর্য ধরা কেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ? (ছবিও দেখুন।)

ধৈর্য ধরার মাধ্যমেই আমরা অনন্তজীবন লাভ করতে পারব। অতীতে ঈশ্বরের উপাসকেরা তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছিল। তাদের মতো আমাদেরও ধৈর্য ধরতে হবে। (ইব্রীয় ৬:১১, ১২) বাইবেল জানায়, আমরা হলাম একজন কৃষকের মতো। (পড়ুন, যাকোব ৫:৭, ৮.) একজন কৃষক বীজ বোনার জন্য অনেক পরিশ্রম করেন এবং তাতে জল দেন। কিন্তু তিনি এটা জানেন না যে, সেই বীজ ঠিক কখন অঙ্কুরিত হবে। তাই, তিনি ধৈর্য ধরেন। তবে, সেই কৃষক নিশ্চিত যে, একদিন তার প্রচেষ্টা সার্থক হবে। একইভাবে, যদিও আমরা জানি না, “[আমাদের] প্রভু কোন দিন আসবেন,” তারপরও আমরা ঈশ্বরের সেবায় ব্যস্ত থাকি। (মথি ২৪:৪২) আমরা ধৈর্য ধরি এবং নিশ্চিত থাকি, যিহোবা একেবারে সঠিক সময়ে তাঁর করা সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূরণ করবেন। আমরা যদি অধৈর্য হয়ে পড়ি, তা হলে আমাদের অপেক্ষা করতে কঠিন লাগতে পারে আর আমরা ধীরে ধীরে যিহোবার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারি। আমরা এমন বিষয়গুলোর পিছনে ছুটতে পারি, যেগুলো এখনই আমাদের সমস্ত আনন্দ দিতে পারে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, আমরা যদি ধৈর্য ধরি, তা হলে আমরা শেষ পর্যন্ত স্থির থাকতে পারব এবং রক্ষা পাব।—মীখা ৭:৭; মথি ২৪:১৩.

৮. ধৈর্য ধরার মাধ্যমে কীভাবে আমরা অন্যদের সঙ্গে আচরণ করতে পারব? (কলসীয় ৩:১২, ১৩)

ধৈর্য ধরার মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো থাকে। ধৈর্য থাকলে আমরা অন্যদের কথা মন দিয়ে শুনব। (যাকোব ১:১৯) আমাদের মধ্যে শান্তি বজায় থাকবে। আমরা যখন চাপের মধ্যে থাকব, তখন আমরা চিন্তাভাবনা না করেই কিছু করব না আর সেইসঙ্গে কাউকে আঘাত দিয়ে কথাও বলব না। এ ছাড়া, কেউ যদি আমাদের আঘাত দেয়, তা হলে আমরা দ্রুত রেগে যাব না এবং প্রতিশোধ নেওয়ারও চেষ্টা করব না। এর পরিবর্তে, আমরা ‘সবসময় একে অন্যকে সহ্য করব এবং পরস্পরকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করব।’—পড়ুন, কলসীয় ৩:১২, ১৩.

৯. ধৈর্য ধরার মাধ্যমে কীভাবে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব? (হিতোপদেশ ২১:৫)

ধৈর্য ধরার মাধ্যমে আমরা সঠিক সিদ্ধান্তও নিতে পারি। আমরা চিন্তাভাবনা না করেই কিংবা তাড়াহুড়ো করে কিছু করি না। এর পরিবর্তে, আমরা সময় নিয়ে একটু গবেষণা করি আর চিন্তা করি যে, কী করলে সবচেয়ে ভালো হবে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২১:৫.) উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যদি কোনো চাকরির খোঁজে থাকি, তা হলে আমাদের হয়তো ইচ্ছে করবে যে, আমরা প্রথমে যে-চাকরিটা খুঁজে পেয়েছি, সেটাই করতে শুরু করি। আর তা করার ফলে হয়তো আমাদের সভাগুলোর জন্য এবং প্রচারের জন্য সময় না-ও থাকতে পারে। তবে, আমরা যদি ধৈর্য ধরি, তা হলে আমরা সময় বের করে একটু চিন্তা করব যে, সেই চাকরি করলে আমাকে কত দূর যেতে হবে, সেটার পিছনে কতটা সময় ব্যয় করতে হবে আর সেটা আমার পরিবার এবং যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্কের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, আমরা যদি ধৈর্য ধরি, তা হলে আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না, যেটার কারণে আমাদের হয়তো পরবর্তী সময়ে আপশোস করতে হবে।

কীভাবে আমরা আরও ধৈর্য ধরতে পারি?

১০. একজন খ্রিস্টান কী করতে পারেন, যাতে তিনি ধৈর্য ধরতে পারেন আর এটা তার এক অভ্যাসে পরিণত হয়?

১০ প্রার্থনা করুন যেন আপনি আরও ধৈর্য ধরতে পারেন। ধৈর্য পবিত্র শক্তির ফলের একটা দিক। (গালা. ৫:২২, ২৩) তাই, যিহোবার কাছ থেকে পবিত্র শক্তি চান এবং তাঁর কাছে অনুরোধ করুন যেন আপনি ধৈর্য ধরতে পারেন। যদি আপনার সামনে কখনো এমন পরিস্থিতি আসে, যেখানে ধৈর্য ধরা আপনার কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে পবিত্র শক্তি ‘চাইতে থাকুন।’ (লূক ১১:৯, ১৩) এ ছাড়া, আমরা বিনতি করতে পারি, যেন আমরা পরিস্থিতিকে যিহোবার মতো করে দেখতে পারি। এরপর, আমাদের প্রার্থনা করা উচিত। প্রার্থনা করার পর আমাদের প্রতিদিন ধৈর্য ধরার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত। আমরা ধৈর্য ধরার জন্য যত বেশি প্রার্থনা করব এবং তা করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করব, তত বেশি আমরা ধৈর্য ধরতে পারব। আর এটা আমাদের এক অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।

১১-১২. কীভাবে যিহোবা ধৈর্য ধরে আছেন?

১১ বাইবেলে দেওয়া উদাহরণগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, যারা ধৈর্য ধরেছিল। সেই ব্যক্তিদের বিবরণ পড়ে এবং সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে আমরা জানতে পারি যে, কীভাবে আমরা আলাদা আলাদা পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে পারি। আসুন, তাদের মধ্যে কিছু জনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই। তবে, সবচেয়ে প্রথমে আমরা যিহোবার উদাহরণের উপর মনোযোগ দেব, যিনি ধৈর্য ধরার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ রেখেছেন।

১২ এদন উদ্যানে শয়তান যিহোবার নামের উপর নিন্দা নিয়ে এসেছিল। সে তাঁর উপর এই অভিযোগ নিয়ে এসেছিল যে, তিনি একজন উত্তম শাসক নন এবং তিনি মানুষকে ভালোবাসেন না। যিহোবা চাইলে সেইসময় শয়তানকে মেরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু, যিহোবা আত্মসংযম বজায় রেখেছিলেন এবং ধৈর্য ধরেছিলেন। কারণ তিনি জানতেন, তাঁর শাসন করার পদ্ধতি যে সবচেয়ে উত্তম, সেটা প্রমাণ করতে সময় লাগবে। চিন্তা করুন, যিহোবা কত বছর ধরে ধৈর্য ধরে রয়েছেন এবং তাঁর নামের উপর যে-নিন্দা নিয়ে আসা হয়েছে, সেটা সহ্য করছেন। শুধু তা-ই নয়, বেশিরভাগ লোক যাতে অনন্তজীবন লাভ করতে পারে, সেইজন্যও যিহোবা ধৈর্য ধরে আছেন। (২ পিতর ৩:৯, ১৫) এই কারণে লক্ষ লক্ষ লোক তাঁকে জানতে পেরেছে। আমরা যদি এটার উপর মনোযোগ দিই, যিহোবার ধৈর্য ধরার ফলে কত উপকার লাভ করা যায়, তা হলে আমাদের জন্য সেইসময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা আরও সহজ হয়ে যাবে, যখন তিনি এই মন্দ জগৎকে ধ্বংস করে দেবেন।

আমাদের মধ্যে যদি ধৈর্য থাকে, তা হলে কেউ আমাদের উসকে দিলেও আমরা রেগে যাব না (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩. যিশু কীভাবে তাঁর পিতার মতোই ধৈর্য ধরেছিলেন? (ছবিও দেখুন।)

১৩ যিশু একেবারে তাঁর পিতার মতো ধৈর্য ধরেন। তিনি যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি অনেক বার তা প্রমাণ করেছিলেন। তবে, তাঁর জন্য ধৈর্য ধরা সবসময় সহজ ছিল না, বিশেষভাবে অধ্যাপক ও ফরীশীদের সঙ্গে আচরণ করার সময়ে। (যোহন ৮:২৫-২৭) তারপরও, যিশু তাঁর পিতার মতো দ্রুত রেগে যেতেন না। তাঁর বিরোধীরা যখন তাঁকে অপমান করেছিল কিংবা রাগিয়ে তুলেছিল, তখন তিনি প্রতিশোধ নেননি। (১ পিতর ২:২৩) আর যখন যিশুর উপর পরীক্ষা এসেছিল, তখন তিনি অভিযোগ করেননি। তিনি ধৈর্য ধরে সব কিছু সহ্য করেছিলেন। তাই, বাইবেল আমাদের জানায়, ‘তাঁর কথা ভালোভাবে বিবেচনা করো, যিনি সেই লোকদের নিন্দা সহ্য করেছিলেন, যারা দোষী ছিল।’ (ইব্রীয় ১২:২, ৩) যিহোবার সাহায্যে আমরাও ধৈর্য ধরতে পারব এবং আমাদের সামনে যেকোনো পরীক্ষাই আসুক না কেন, তা ধৈর্য সহকারে সহ্য করতে পারব।

অব্রাহামের মতো যদি আমাদের ধৈর্য থাকে, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আজ আমাদের পুরস্কার দেবেন এবং নতুন জগতেও প্রচুর আশীর্বাদ করবেন (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. যেভাবে অব্রাহাম ধৈর্য ধরেছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (ইব্রীয় ৬:১৫) (ছবিও দেখুন।)

১৪ হতে পারে, আমরা অনেক বছর ধরে শেষ আসার অপেক্ষা করছি আর এখন আমাদের মনে হচ্ছে, আমাদের বেঁচে থাকতে থাকতে শেষ আসবে না। এইরকম সময়ে, ধৈর্য ধরার জন্য কোন বিষয়টা আমাদের সাহায্য করতে পারে? অব্রাহামের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। এটা সেই সময়ের কথা, যখন তার বয়স ৭৫ বছর ছিল। অব্রাহামের কোনো সন্তান ছিল না, কিন্তু যিহোবা তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, “আমি তোমা হইতে এক মহাজাতি উৎপন্ন করিব।” (আদি. ১২:১-৪) অব্রাহাম কি যিহোবার করা এই প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হতে দেখেছিলেন? পুরোপুরিভাবে তিনি তা দেখেননি। ইউফ্রেটিস নদী পার করার পর তিনি ২৫ বছর ধরে অপেক্ষা করেছিলেন। এরপর, যিহোবা এক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। অব্রাহামের একটি ছেলে হয়েছিল, যার নাম ছিল ইস্‌হাক আর ৬০ বছর পর তার দুই নাতি হয়েছিল, যাদের নাম ছিল এষৌ ও যাকোব। (পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১৫.) অব্রাহাম তার বংশধরদের একটা বড়ো জাতি হয়ে উঠতে দেখেননি আর তিনি বেঁচে থাকতে থাকতে প্রতিজ্ঞাত দেশে থাকার সুযোগও পাননি। তবে, অব্রাহাম যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন আর এই কারণে যিহোবার সঙ্গে তার ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেছিল। (যাকোব ২:২৩) কল্পনা করুন, অব্রাহাম যখন পুনরুত্থিত হবেন, তখন তিনি এটা জেনে কতই-না আনন্দিত হবেন যে, তার বিশ্বাস ও ধৈর্য ধরার কারণে সমস্ত জাতি আশীর্বাদ লাভ করেছে! (আদি. ২২:১৮) এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা হয়তো এখনই যিহোবার করা সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূরণ হতে না-ও দেখতে পারি। কিন্তু, আমরা যদি অব্রাহামের মতো ধৈর্য ধরি, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা শুধুমাত্র বর্তমানেই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে নতুন জগতেও আমাদের প্রচুর আশীর্বাদ করবেন।—মার্ক ১০:২৯, ৩০.

১৫. আমরা কোন বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করতে পারি?

১৫ বাইবেলে এমন আরও ব্যক্তির উদাহরণ রয়েছে, যারা ধৈর্য ধরেছিল। (যাকোব ৫:১০) ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার সময়ে সেই ব্যক্তিদের বিষয়ে গবেষণা করুন এবং তাদের কাছ থেকে শিখুন। b যেমন, আপনি দায়ূদের বিষয়ে অধ্যয়ন করতে পারেন। তিনি যখন ছোটো ছিলেন, তখনই ইজরায়েলের রাজা হওয়ার জন্য তাকে অভিষেক করা হয়েছিল। তবে, রাজা হওয়ার জন্য তাকে অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। শিমিয়োন ও হান্না অনেক বছর ধরে মশীহকে দেখার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন আর সেইসময়ে তারা বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে গিয়েছিলেন। (লূক ২:২৫, ৩৬-৩৮) আপনি যখন এইরকম বিবরণগুলো পড়েন, তখন এই প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করুন: ‘এই ব্যক্তি কেন ধৈর্য ধরতে পেরেছিলেন? ধৈর্য ধরার ফলে তিনি কীভাবে উপকার পেয়েছিলেন? আর আমি কীভাবে তাকে অনুকরণ করতে পারি?’ এ ছাড়া, আপনি সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধেও পড়তে পারেন, যারা ধৈর্য ধরেনি। (১ শমূ. ১৩:৮-১৪) তাদের বিষয়ে অধ্যয়ন করার সময়ে চিন্তা করুন, ‘এই ব্যক্তি কেন ধৈর্য ধরেননি? এই কারণে তাকে কোন কোন পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিল?’

১৬. ধৈর্য ধরার কিছু উপকার সম্বন্ধে বলুন।

১৬ চিন্তা করুন, ধৈর্য ধরার ফলে কোন কোন উপকার লাভ করা যায়। আমরা যখন ধৈর্য ধরি, তখন আমরা আরও বেশি আনন্দে থাকি এবং শান্ত থাকতে পারি। এ ছাড়া, আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং আমরা অযথা চাপের মধ্যে থাকি না। ধৈর্য ধরার ফলে অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো থাকে এবং মণ্ডলীতে একতার বন্ধন আরও মজবুত হয়। আর কেউ যদি আমাদের উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে আমরা দ্রুত রেগে যাই না। এর ফলে, বিষয়টা আর বাড়তে পারে না। (গীত. ৩৭:৮; হিতো. ১৪:২৯) সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, ধৈর্য ধরার ফলে আমরা আমাদের পিতা যিহোবাকে অনুকরণ করি এবং তাঁর আরও নিকটবর্তী হই।

১৭. কী করার জন্য আমাদের দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?

১৭ ধৈর্য কতই-না চমৎকার এক গুণ আর এর কত উপকার রয়েছে! ধৈর্য ধরা সবসময় সহজ হয় না ঠিকই, কিন্তু যিহোবার সাহায্যে আমরা আরও ধৈর্য ধরতে পারি। যতদিন পর্যন্ত আমরা ধৈর্য ধরছি এবং নতুন জগতের জন্য “অপেক্ষা” করছি, ততদিন পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন এবং আমাদের সুরক্ষা জোগাবেন। (মীখা ৭:৭) তাই আসুন, আমরা সবসময় “ধৈর্যকে কাপড়ের মতো” পরে থাকার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই!

গান ৪১ শোনো যিহোবা এই প্রার্থনা

a আজ শয়তানের এই জগতে বেশিরভাগ লোক ধৈর্য ধরে না। তবে, বাইবেলে লেখা আছে, আমাদের “ধৈর্যকে কাপড়ের মতো” পরতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন ধৈর্য ধরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে আমরা আরও ধৈর্য ধরতে পারি।

b ধৈর্য ধরার ব্যাপারে বাইবেলে দেওয়া বিবরণ খোঁজার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের জন্য গবেষণা নির্দেশিকা-এ “আবেগঅনুভূতি, গুণাবলি ও আচরণ” শিরোনামের বিষয়ের অধীনে দেওয়া উপশিরোনাম “ধৈর্য” দেখুন।