সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৬

কোন বিষয়গুলো নিয়ে দৌড়াবেন আর কোন বিষয়গুলো ফেলে দেবেন?

কোন বিষয়গুলো নিয়ে দৌড়াবেন আর কোন বিষয়গুলো ফেলে দেবেন?

‘এসো, আমরা সমস্ত বোঝা . . . ফেলে দিই, . . . আর আমাদের সামনে যে-দৌড় প্রতিযোগিতা রয়েছে, সেখানে আমরা ধৈর্য ধরে দৌড়াই।’—ইব্রীয় ১২:১.

গান ৪২ ঈশ্বরের দাসের প্রার্থনা

সারাংশ a

১. ইব্রীয় ১২:১ পদ অনুযায়ী জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত দৌড়ানোর জন্য আমাদের কী করতে হবে?

 বাইবেলে খ্রিস্টানদের জীবনকে দৌড় প্রতিযোগিতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যারা দৌড় প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত দৌড়াবে, তারা পুরস্কার হিসেবে অনন্তজীবন লাভ করবে। (২ তীম. ৪:৭, ৮) তাই, আমাদের সবাইকে ক্রমাগত দৌড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। কেন? এর কারণ হল, আজ আমরা এই দৌড় প্রতিযোগিতার একেবারে শেষ সীমানায় এসে পৌঁছেছি, খুব তাড়াতাড়ি এই দৌড় প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে যাবে। প্রেরিত পৌল তার জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত দৌড়েছিলেন এবং এমন বিষয়গুলো সম্বন্ধে বলেছিলেন, যেগুলো এই দৌড় প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত দৌড়াতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। তিনি বলেছিলেন যেন ‘আমরা সমস্ত বোঝা ফেলে দিই, আর আমাদের সামনে যে-দৌড় প্রতিযোগিতা রয়েছে, সেখানে আমরা ধৈর্য ধরে দৌড়াই।’—পড়ুন, ইব্রীয় ১২:১.

২. ‘সমস্ত বোঝা ফেলে দেওয়ার’ মানে কী?

পৌল যখন বলেছিলেন, আমরা যেন “সমস্ত বোঝা ফেলে দিই,” তখন তার কথাগুলোর মানে কি এই ছিল, খ্রিস্টানদের কোনো ভার বহন করা উচিত নয়? না, এমনটা নয়। এর মানে ছিল, আমাদের এমন সমস্ত বোঝা ফেলে দিতে হবে, যেগুলো বহন করা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ এই ধরনের বোঝাগুলো অযথা বহন করার ফলে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারি আর সেইসঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় আমাদের গতিও কমে যেতে পারে। তাই, আমাদের সবসময় এই বিষয়ের উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত যে, আমরা এইরকম কোনো বোঝা নিয়ে দৌড়াচ্ছি কি না। যদি এমনটা হয়, তা হলে আমাদের দ্রুত সেটাকে ফেলে দিতে হবে। তবে, এমন কিছু ভারও রয়েছে, যেগুলো আমাদের সবাইকে বহন করতে হবে। আমরা যদি সেগুলো বহন না করি, তা হলে আমরা এই দৌড় প্রতিযোগিতায় দৌড়ানোর ক্ষেত্রে যোগ্য হব না। (২ তীম. ২:৫) এই ভারগুলো কী?

৩. (ক) গালাতীয় ৬:৫ পদ অনুযায়ী আমাদের সবাইকে কী করতে হবে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব আর কেন?

গালাতীয় ৬:৫ পদ পড়ুন। পৌল এই পদে বলেছিলেন, ‘প্রত্যেককে নিজ নিজ ভার বহন করতে’ হবে। পৌল এখানে সেই দায়িত্বগুলোর বিষয়ে বলছিলেন, যেগুলো যিহোবা চান যেন তাঁর প্রত্যেক উপাসক নিজে তা পালন করে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, এমন কোন ভারগুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদের বহন করতে হবে আর কীভাবে আমরা তা করতে পারি। এরপর আমরা এও জানতে পারব, এমন কোন বিষয়গুলো বোঝার মতো, যেগুলো নিয়ে আমরা হয়তো দৌড়াচ্ছি আর কীভাবে আমরা তা ফেলে দিতে পারি। আমরা যদি আমাদের ভার বহন করি আর অপ্রয়োজনীয় বোঝা ফেলে দিই, তা হলে আমরা জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত দৌড়াতে পারব।

যে-ভারগুলো আমাদের বহন করতে হবে

নিজেদের ভার বহন করার মানে হল, উৎসর্গীকরণের প্রতিজ্ঞা রাখা, পারিবারিক দায়িত্বগুলো পালন করা এবং নিজেদের সিদ্ধান্তের দায়ভার বহন করা (৪-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৪. কেন উৎসর্গীকরণের প্রতিজ্ঞা ভারী বোঝা নয়? (ছবিও দেখুন।)

উৎসর্গীকরণের প্রতিজ্ঞা। আমরা যখন যিহোবাকে আমাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলাম, তখন তাঁর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, আমরা শুধুমাত্র তাঁর উপাসনা করব এবং তাঁর ইচ্ছা পূরণ করব। আমাদের সবাইকে এই প্রতিজ্ঞা রাখতে হবে। এই প্রতিজ্ঞা রাখা একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ঠিকই, তবে এটা এতটা ভারী বোঝা নয় যে, আমরা তা বহন করতে পারব না। আসলে, যিহোবা আমাদের এই কারণে সৃষ্টি করেছেন, যেন আমরা তাঁর ইচ্ছা পূরণ করি। (প্রকা. ৪:১১) যিহোবা আমাদের মধ্যে তাঁকে জানার এবং তাঁর উপাসনা করার আকাঙ্ক্ষা দিয়েছেন এবং আমাদের সেই গুণগুলো দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যেগুলো তাঁর মধ্যে রয়েছে। এই কারণে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারি এবং তাঁর ইচ্ছা পূরণ করার মাধ্যমে আনন্দ লাভ করতে পারি। (গীত. ৪০:৮) শুধু তা-ই নয়, আমরা যখন যিহোবার ইচ্ছা পূরণ করি এবং তাঁর পুত্রের মতো হওয়ার চেষ্টা করি, তখন আমরা “সতেজতা” লাভ করি।—মথি ১১:২৮-৩০.

(৪-৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৫. উৎসর্গীকরণের প্রতিজ্ঞা রাখার জন্য আপনি কী করতে পারেন? (১ যোহন ৫:৩)

কীভাবে আপনি এই ভার বহন করতে পারেন? দুটো বিষয় আপনাকে সাহায্য করতে পারে। প্রথমত, যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা বৃদ্ধি করে চলুন। আপনি কীভাবে তা করতে পারেন? এই বিষয়ে চিন্তা করুন, যিহোবা এখনও পর্যন্ত আপনার জন্য কী কী করেছেন আর ভবিষ্যতে তিনি আপনাকে কোন কোন আশীর্বাদ দেবেন। যত বেশি আপনি যিহোবাকে ভালোবাসবেন, তত বেশি আপনার জন্য যিহোবার আজ্ঞা পালন করা সহজ হবে। তাঁর আজ্ঞাগুলো আপনার কাছে বোঝা বলে মনে হবে না, যেগুলো আপনি বহন করতে পারবেন না। (পড়ুন, ১ যোহন ৫:৩.) দ্বিতীয়ত, যিশুর মতো হওয়ার চেষ্টা করুন। যিশু যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন আর সেই পুরস্কারের উপর দৃষ্টি রেখেছিলেন, যেটা তিনি পরবর্তী সময়ে পেতে যাচ্ছিলেন। তাই, তিনি যিহোবার ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছিলেন। (ইব্রীয় ৫:৭; ১২:২) যিশুর মতো যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চান এবং অনন্তজীবনের আশার উপর মনোযোগ বজায় রাখুন। আমরা যখন যিহোবাকে আরও ভালোবাসতে শুরু করব এবং তাঁর পুত্রের মতো হওয়ার চেষ্টা করব, তখন আমরা আমাদের উৎসর্গীকরণের প্রতিজ্ঞা রাখতে পারব।

৬. কেন আমাদের পারিবারিক দায়িত্বগুলো পালন করা উচিত? (ছবিও দেখুন।)

পারিবারিক দায়িত্বগুলো। জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় ক্রমাগত দৌড়ানোর জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেন আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের চেয়ে যিহোবা ও যিশুকে বেশি ভালোবাসি। (মথি ১০:৩৭) তবে এর মানে এই নয়, আমরা আমাদের পারিবারিক দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব কারণ এটা যিহোবা ও যিশুকে খুশি করার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা দিচ্ছে। বরং তাঁদের খুশি করার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা আমাদের পারিবারিক দায়িত্বগুলো পালন করি। (১ তীম. ৫:৪, ৮) আর আমরা যখন এমনটা করব, তখন আমরা আরও আনন্দিত হব। যিহোবা আমাদের সবাইকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, আমরা যখন প্রত্যেকে পারিবারিক দায়িত্ব পালন করি, তখন আমরা সবাই আনন্দে থাকি। যেমন, স্বামী-স্ত্রীরা যখন একে অন্যকে ভালোবাসে এবং একে অন্যের প্রতি সম্মান দেখায়, বাবা-মা সন্তানদের ভালোবাসে এবং তাদের শিক্ষা দিয়ে থাকে আর সন্তানেরা যখন বাবা-মায়ের বাধ্য থাকে, তখন পরিবারের মধ্যে আনন্দময় পরিবেশ বজায় থাকে।—ইফি. ৫:৩৩; ৬:১, ৪.

(৬-৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. পরিবারের প্রত্যেক সদস্য কীভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারে?

কীভাবে আপনি এই ভার বহন করতে পারেন? আস্থা রাখুন যে, বাইবেলে স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা এবং সন্তানদের জন্য যে-অপূর্ব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো মেনে চললে সবসময় মঙ্গল হয়। আজ জগতের লোকেরা সেটাই করে, যেটা তাদের ঠিক বলে মনে হয় কিংবা যেটা তাদের আশেপাশের লোকেরা করে থাকে। অথবা তারা বড়ো বড়ো পরামর্শদাতাদের কথা শুনে থাকে। (হিতো. ২৪:৩, ৪) তবে এমনটা করার পরিবর্তে, বাইবেলের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করুন। বাইবেলের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা বিভিন্ন প্রকাশনা পড়ুন। সেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কীভাবে আমরা বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগাতে পারি। যেমন, “আপনার পরিবার সুখী হতে পারে” ব্রোশার থেকে এবং “চিরকাল জীবন উপভোগ করুন!” বইয়ের পাঠ ৪৯ ও ৫০-এ দেওয়া নীতিগুলো থেকে দম্পতিরা, বাবা-মায়েরা এবং কিশোর-কিশোরীরা সাহায্য লাভ করতে পারে। b আর যদি আপনার পরিবারের বাকি সদস্যেরা বাইবেলের পরামর্শ মেনে না-ও চলে, তারপরও আপনি তা মেনে চলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। এর ফলে, আপনার পুরো পরিবার উপকার লাভ করবে এবং যিহোবা আপনাকে প্রচুর আশীর্বাদ করবেন।—১ পিতর ৩:১, ২.

৮. আমরা যে-সিদ্ধান্তগুলো নিই, সেগুলো আমাদের উপরে কোন প্রভাব ফেলতে পারে?

নিজেদের সিদ্ধান্তের দায়ভার বহন করা। যিহোবা আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন। আর তিনি চান, আমরা যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিই এবং আনন্দে থাকি। তবে, যখন আমরা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিই, তখন সেটার পরিণতি থেকে তিনি আমাদের রক্ষা করেন না। (গালা. ৬:৭, ৮) তাই, আমরা যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, কাউকে খারাপ কিছু বলে দিই কিংবা চিন্তাভাবনা না করে কিছু করে ফেলি, তা হলে আমরা এটা স্বীকার করি যে, এর পরিণতির জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। আমরা যে-ভুল করেছি, সেটার কারণে আমাদের বিবেক আমাদের দংশন করতে পারে। তবে, এই উপলব্ধি বোধ থাকা ভালো যে, আমাদের সিদ্ধান্তের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। কারণ এরজন্য হয়তো আমরা আমাদের ভুল স্বীকার করব, নিজেদের সংশোধন করব এবং চেষ্টা করব যেন আমরা সেই ভুল আবারও না করি। এই পদক্ষেপগুলো নিলে আমরা জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় ক্রমাগত দৌড়াতে পারব।

(৮-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯. আপনি যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? (ছবিও দেখুন।)

কীভাবে আপনি এই ভার বহন করতে পারেন? আপনি যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তা হলে এটা স্বীকার করুন, আপনি আপনার অতীতকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। আর এই অজুহাত দেখানোরও চেষ্টা করবেন না যে, আপনি যা করেছেন, তা ঠিক ছিল। অথবা নিজেকে অতিরিক্ত দোষ দেবেন না কিংবা অন্যদের উপরও দোষারোপ করার চেষ্টা করবেন না। এতে কোনো লাভ হবে না, শুধু আপনার সময় নষ্ট হবে আর আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। এর পরিবর্তে, আপনার ভুল স্বীকার করুন এবং পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আপনার পক্ষে যা করা সম্ভব, তা করুন। আর আপনি যদি কোনো পাপ করে থাকেন এবং সেই বিষয়ে বার বার চিন্তা করে আপনার খারাপ লাগে, তা হলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন, তাঁর কাছে আপনার পাপ স্বীকার করুন এবং মন থেকে ক্ষমা চান। (গীত. ২৫:১১; ৫১:৩, ৪) আপনার কারণে কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকে, তা হলে তার কাছে ক্ষমা চান আর যদি প্রয়োজন পড়ে, তা হলে প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্য নিন। (যাকোব ৫:১৪, ১৫) আপনার ভুলগুলো থেকে শিখুন এবং চেষ্টা করুন যেন আপনি আবারও সেই ভুলগুলো না করেন। আপনি যদি এই পদক্ষেপগুলো নেন, তা হলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবা আপনার প্রতি করুণা দেখাবেন আর আপনার যা-কিছু সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলো তিনি জুগিয়ে দেবেন।—গীত. ১০৩:৮-১৩.

যে-বোঝাগুলো আমাদের ফেলে দিতে হবে

১০. আমরা যদি নিজেদের কাছ থেকে একটু বেশিই আশা করি, তা হলে কীভাবে এটা এক বোঝা হতে পারে? (গালাতীয় ৬:৪)

১০ নিজেদের কাছ থেকে একটু বেশিই আশা করা। আমরা যদি অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করি, তা হলে এটা দেখাবে যে, আমরা নিজেদের কাছ থেকে একটু বেশিই আশা করছি। আর এটা আমাদের জন্য এক বোঝা হতে পারে। (পড়ুন, গালাতীয় ৬:৪.) সবসময় অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করার ফলে আমরা হয়তো তাদের দেখে ঈর্ষা করতে পারি কিংবা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারি। (গালা. ৫:২৬) আর আমরা যদি অন্যদের দেখাদেখি এমন কিছু করার চেষ্টা করি, যেটা আমাদের সাধ্যের বাইরে, তা হলে আমরা হয়তো নিজেদের ক্ষতি করে ফেলব। বাইবেলে লেখা আছে, “আশাসিদ্ধির বিলম্ব হৃদয়ের পীড়াজনক।” তাই চিন্তা করুন, আমরা যদি নিজেদের কাছ থেকে এমন কিছু আশা করি, যেটা আমরা কখনো পূরণ করতে পারব না, তা হলে আমরা হয়তো হতাশ হয়ে পড়ব! (হিতো. ১৩:১২) এর ফলে, আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারি এবং জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় আমাদের গতি কমে যেতে পারে।—হিতো. ২৪:১০.

১১. কীভাবে আপনি নিজের কাছ থেকে একটু বেশিই আশা করা এড়িয়ে চলতে পারেন?

১১ কীভাবে আপনি এই বোঝা ফেলে দিতে পারেন? যিহোবা আপনার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করেন না, যেটা আপনি করতে পারবেন না। তাই, আপনিও নিজের কাছ থেকে এমন কিছু আশা করবেন না, যেটা আপনি পূরণ করতে পারবেন না। (২ করি. ৮:১২) বিশ্বাস করুন, যিহোবা কখনো অন্যদের সঙ্গে আপনার তুলনা করেন না। (মথি ২৫:২০-২৩) তিনি এটা দেখেন, আপনি কীভাবে মনপ্রাণ দিয়ে তাঁর সেবা করছেন, আপনি কীভাবে তাঁর প্রতি অনুগত রয়েছেন এবং আপনি কীভাবে ধৈর্য ধরছেন। এও বোঝার চেষ্টা করুন, আপনার বয়স, স্বাস্থ্য এবং পরিস্থিতির কারণে আপনি এখন ততটা করতে পারছেন না, যতটা আপনি আগে করতে পারতেন। আপনার যদি মনে হয়, আপনার স্বাস্থ্য এবং বয়সের কারণে আপনি কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, তা হলে বর্সিল্লয়ের মতো হোন এবং ভাইদের বলুন, আপনার দ্বারা সেই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। (২ শমূ. ১৯:৩৫, ৩৬) মোশির মতো অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নিন আর সম্ভব হলে কিছু দায়িত্ব অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিন। (যাত্রা. ১৮:২১, ২২) এভাবে, আপনি যখন নিজের উপর বেশি আশা করবেন না, তখন আপনি অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না আর জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় ক্রমাগত দৌড়াতে পারবেন।

১২. অন্যদের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের কি নিজেদের দোষ দেওয়া উচিত? ব্যাখ্যা করুন।

১২ অন্যদের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য নিজেকে দোষ দেওয়া। আমরা অন্যদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আর যখন তারা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সবসময় সেটার পরিণতি থেকে আমরা তাদের রক্ষাও করতে পারি না। যেমন, কোনো সন্তান হয়তো যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছে। এইরকম সময়ে বাবা-মায়েরা যে-কষ্ট পায়, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু, যে-বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য নিজেদের দোষ দেয়, তারা যেন এক বোঝা বহন করে দৌড়াচ্ছে। আর যিহোবা চান না, তারা এই বোঝা বহন করুক।—রোমীয় ১৪:১২.

১৩. যদি কারো ছেলে কিংবা মেয়ে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে তার বাবা-মা কী করতে পারেন?

১৩ কীভাবে আপনি এই বোঝা ফেলে দিতে পারেন? মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদের প্রত্যেককে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন। তাই, প্রত্যেকে নিজে এটা স্থির করতে পারে, সে যিহোবার সেবা করতে চায় কি না। বাবা-মায়েরা, যিহোবা জানেন আপনারা অসিদ্ধ এবং সন্তানদের মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে আপনাদের দ্বারা কিছু ভুল হতে পারে। যিহোবা কেবল এটাই চান, আপনাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, আপনারা যেন তা করেন। আপনাদের ছেলে কিংবা মেয়ে যা-ই সিদ্ধান্ত নিক না কেন, সেটার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী, আপনারা নন। (হিতো. ২০:১১) তারপরও, হতে পারে আপনাদের দ্বারা যে-ভুল হয়েছে, সেই বিষয়ে বার বার চিন্তা করে আপনারা কষ্ট পাচ্ছেন এবং ক্রমাগত নিজেদের দোষ দিচ্ছেন। যদি এমনটা হয়, তা হলে যিহোবাকে বলুন যে, আপনারা কেমন অনুভব করছেন এবং তাঁর কাছ থেকে ক্ষমা চান। যিহোবা জানেন, আপনারা অতীতকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিন্তু তিনি এও চান না, আপনারা আপনাদের সন্তানকে তার ভুলের পরিণতি ভোগ করা থেকে রক্ষা করেন। একজন ব্যক্তি যা বুনবে, তাকে সেটা কাটতেও হবে। তবে, আপনাদের ছেলে কিংবা মেয়ে যদি যিহোবার কাছে ফিরে আসার জন্য সামান্যও প্রচেষ্টা করে, তা হলে যিহোবা আনন্দের সঙ্গে তাকে গ্রহণ করে নেবেন।—লূক ১৫:১৮-২০.

১৪. নিজের ভুলের বিষয়ে বার বার চিন্তা করে অনেক কষ্ট পাওয়া কেন এক বোঝার মতো?

১৪ নিজের ভুলের বিষয়ে বার বার চিন্তা করে অনেক কষ্ট পাওয়া। আমরা যদি কোনো পাপ করে ফেলি এবং সেটার জন্য নিজেদের দোষী বলে মনে করি, তা হলে এতে ভুল কিছু নেই। তবে, আমরা যদি সেই বিষয়ে বার বার চিন্তা করে কষ্ট পাই, তা হলে এটা এমন হবে যেন আমরা এক বোঝা বহন করছি। আমাদের এই বোঝাকে ফেলে দেওয়া উচিত। যখন আমরা নিজেদের পাপ স্বীকার করে নিই, অনুতপ্ত হই আর সেই ভুল আবারও না করার চেষ্টা করি, তখন আমরা আস্থা রাখতে পারি, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। (প্রেরিত ৩:১৯) আমরা যদি এই পদক্ষেপগুলো নিই, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা চান না যে, আমরা আমাদের ভুলগুলোর বিষয়ে এখনও নিজেদের দোষী বলে মনে করি। তিনি জানেন, এমনটা করলে আসলে আমাদেরই ক্ষতি হবে। (গীত. ৩১:১০) আমরা যদি অতিরিক্ত হতাশ হয়ে পড়ি, তা হলে আমরা হয়তো হাল ছেড়ে দেব আর এর ফলে, জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় আমাদের গতি কমে যাবে।—২ করি. ২:৭.

আমরা যখন আমাদের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হই, তখন যিহোবা আমাদের পাপগুলোর বিষয়ে ক্রমাগত চিন্তা করেন না আর আমাদেরও তা করা উচিত নয় (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. আপনি যদি আপনার ভুলের কারণে কষ্ট পেয়ে থাকেন, তা হলে কী করতে পারেন? (১ যোহন ৩:১৯, ২০) (ছবিও দেখুন।)

১৫ কীভাবে আপনি এই বোঝা ফেলে দিতে পারেন? যখনই আপনি আপনার ভুলের কারণে নিজেকে অতিরিক্ত দোষী বলে মনে করেন, তখন মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদের সত্যিই “ক্ষমা” করে দেন। (গীত. ১৩০:৪) যারা মন থেকে অনুতপ্ত হয়, যিহোবা তাদের ক্ষমা করে দেন আর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, ‘আমি তোমাদের পাপ আর স্মরণে আনিব না।’ (যির. ৩১:৩৪) এর মানে হল, যিহোবা যখন এক বার আমাদের পাপ ক্ষমা করে দেন, তখন তিনি আমাদের সেই পাপ ভুলে যান এবং সেটার বিষয়ে আবারও চিন্তা করেন না। তাই, যখন আপনি আপনার পাপের পরিণতি ভোগ করেন, তখন এমনটা চিন্তা করবেন না যে, যিহোবা আপনাকে ক্ষমা করেননি এবং তিনি আপনাকে শাস্তি দিচ্ছেন। অথবা আপনি যদি আপনার ভুলের কারণে এখন যিহোবাকে সেভাবে সেবা করতে পারছেন না, যেভাবে আগে করতেন, তা হলে নিজেকে দোষ দেবেন না। যিহোবা আপনার ভুলগুলো নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করেন না আর আপনারও তা করা উচিত নয়।—পড়ুন, ১ যোহন ৩:১৯, ২০.

এমনভাবে দৌড়ান, যেন পুরস্কার পেতে পারেন

১৬. জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় ক্রমাগত দৌড়ানোর জন্য আমাদের কী শনাক্ত করতে হবে?

১৬ আমাদের জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় ‘এমনভাবে দৌড়াতে হবে, যেন পুরস্কার পেতে পারি।’ (১ করি. ৯:২৪) তবে, এরজন্য আমাদের শনাক্ত করতে হবে যে, কোন বিষয়গুলো এমন ভারের মতো, যেগুলো আমাদের বহন করে দৌড়াতে হবে এবং কোন বিষয়গুলো এমন বোঝার মতো, যেগুলো আমাদের ফেলে দিতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা এমনই কিছু ভারের এবং কিছু বোঝার বিষয়ে জেনেছি। তবে, এমন আরও অনেক বোঝা থাকতে পারে, যেগুলো হয়তো আমরা বহন করে দৌড়াচ্ছি। যেমন যিশু বলেছিলেন, আমরা যেন ‘অতিরিক্ত ভোজন ও পান এবং জীবনের উদ্‌বিগ্নতার দ্বারা ভারগ্রস্ত হয়ে না পড়ি।’ (লূক ২১:৩৪) এইরকম কিছু শাস্ত্রপদের উপর মনোযোগ দিলে আমরা বুঝতে পারি, কোথায় আমাদের সংশোধন করার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে আমরা জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত দৌড়াতে পারি।

১৭. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় আমরা জয়ী হতে পারব?

১৭ আমরা জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে পারি কারণ আমরা যদি কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তা হলে যিহোবা আমাদের শক্তি জোগাবেন। (যিশা. ৪০:২৯-৩১) তাই, গতি কমিয়ে দেবেন না! প্রেরিত পৌলের মতো হোন, যিনি পুরস্কার লাভ করার জন্য প্রাণপণ করেছিলেন। (ফিলি. ৩:১৩, ১৪) এই দৌড় প্রতিযোগিতায় আপনাকে নিজেকেই দৌড়াতে হবে, আপনার হয়ে অন্য কেউ দৌড়াতে পারে না। তবে, যিহোবার সাহায্যে আপনি শেষ পর্যন্ত দৌড়াতে পারেন। তাঁর সাহায্যে আপনি আপনার ভার বহন করতে পারেন এবং বোঝাগুলো ফেলে দিতে পারেন। (গীত. ৬৮:১৯) সবসময় মনে রাখবেন, যিহোবা আপনার সঙ্গে রয়েছেন। তাই নিশ্চিত থাকুন, আপনি ধৈর্য সহকারে জীবনের এই দৌড় প্রতিযোগিতায় দৌড়াতে পারবেন এবং পুরস্কার লাভ করতে পারবেন!

গান ৫৪ এটাই সেই পথ

a এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কীভাবে আমরা জীবনের দৌড় প্রতিযোগিতায় ভালোভাবে দৌড়াতে পারি। আমাদের সবাইকে কিছু ভার বা দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যেমন, আমাদের উৎসর্গীকরণের প্রতিজ্ঞা রাখতে হবে, পারিবারিক দায়িত্বগুলো পালন করতে হবে আর আমাদের সিদ্ধান্তের দায়ভার বহন করতে হবে। কিন্তু, আমরা হয়তো কোনো অপ্রয়োজনীয় বোঝা নিয়ে দৌড়াচ্ছি, যেটার কারণে আমাদের গতি কমে যাচ্ছে। এই ধরনের বোঝা আমাদের ফেলে দিতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, এইরকম কিছু বোঝা কী।

b আপনি “পরিবারের জন্য সাহায্য” শিরোনামের প্রবন্ধগুলো jw.org ওয়েবসাইটে পড়তে পারেন। যেমন, স্বামী-স্ত্রীদের জন্য, “যেভাবে প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ় করা যায়” এবং “যেভাবে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যায়”; বাবা-মায়েদের জন্য, “সন্তানদের আত্মসংযমী হতে শেখানো” এবং “আপনার কিশোর বয়সি সন্তানের সঙ্গে যেভাবে কথা বলবেন”; আর কিশোর-কিশোরীদের জন্য, “যেভাবে প্রলোভন প্রতিরোধ করা যায়” এবং “যেভাবে একাকিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়।” এ ছাড়া, এই ধরনের আরও প্রবন্ধ পড়তে পারেন।