সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৪

গভীরভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করুন

গভীরভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করুন

‘সত্যের প্রস্থ, দৈর্ঘ্য, উচ্চতা ও গভীরতা কী, তা পুরোপুরিভাবে বোঝো।’—ইফি. ৩:১৮.

গান ৯৫ উজ্জ্বল ধীরে ধীরে হয় আলো

সারাংশ a

১-২. বাইবেল পড়ার এবং এটি নিয়ে অধ্যয়ন করার সবচেয়ে ভালো উপায় কী? একটা উদাহরণ দিন।

 কল্পনা করুন, আপনি একটা বাড়ি কিনতে চান। সেটা কেনার আগে আপনি কী করতে চাইবেন? আপনি কি সেটার একটা ছবি দেখেই তা কিনে নেবেন? না। একেবারেই না। আপনি নিজে গিয়ে সেটা দেখবেন। আপনি সেই বাড়ির ভিতরে ঢুকবেন এবং প্রতিটা ঘর ভালোভাবে লক্ষ করবেন। এ ছাড়া, সেটার উচ্চতা, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ প্রতিটা বিষয়ই মনোযোগ দিয়ে দেখবেন। কেউ কেউ আবার বাড়ির মালিকের সঙ্গেও কথা বলতে চায় কিংবা সেই বাড়ির নকশা দেখতে চায়, যাতে বাড়ির বিষয়ে আরও ভালোভাবে জানতে পারে। এই সমস্ত কিছু ভালোভাবে দেখার পরই আপনি সেই বাড়িটা কেনার সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাইবেল পড়া এবং সেটি নিয়ে অধ্যয়ন করার সময়ে আমরা এমনই কিছু করতে পারি। একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেছেন, “বাইবেল হল একটা বিল্ডিংয়ের মতো, যেটা খুবই উঁচু এবং যেটার ভিত খুবই গভীর।” তাই, বাইবেলে লেখা বিষয়গুলো বোঝার জন্য আমরা কী করতে পারি? আপনি যদি এটি তাড়াহুড়ো করে পড়েন, তা হলে আপনি শুধুমাত্র এটির অল্প বিষয়ই জানতে পারবেন অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের বাক্যের প্রথম বিষয়গুলোই জানতে পারবেন।’ (ইব্রীয় ৫:১২) কিন্তু, আমরা এমনটা করতে চাই না। আমরা সেই বিল্ডিংয়ের ভিতরে প্রবেশ করতে চাই অর্থাৎ সেটার সমস্ত কিছু ভালোভাবে পরীক্ষা করতে চাই। এমনটা করার জন্য সবচেয়ে প্রথমে আমাদের চিন্তা করতে হবে, আমরা কোন সত্যগুলো বিশ্বাস করি আর আমাদের সেগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। এরপর, আমাদের এটা জানার চেষ্টা করতে হবে যে, কেন আমরা তা বিশ্বাস করি। এ ছাড়া আমাদের বুঝতে হবে, বাইবেলের আলাদা আলাদা অংশে লেখা বিষয়গুলো কীভাবে একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

৩. প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের কী করতে অনুরোধ করেছিলেন এবং কেন? (ইফিষীয় ৩:১৪-১৯)

ঈশ্বরের বাক্যকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আমাদের এটিতে লেখা সত্যগুলো এবং গভীর বিষয়গুলো জানতে হবে। প্রেরিত পৌল খ্রিস্টান ভাই-বোনদের অনুরোধ করেছিলেন, তারা যেন ঈশ্বরের বাক্য ভালোভাবে অধ্যয়ন করে, যাতে তারা এটির ‘প্রস্থ, দৈর্ঘ্য, উচ্চতাগভীরতা কী, তা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে।’ এমনটা করলে তারা ‘বিশ্বাসের ভিত্তির সঙ্গে সংযুক্ত থাকত’ এবং দৃঢ় হত। (পড়ুন, ইফিষীয় ৩:১৪-১৯.) আমাদেরও তা-ই করতে হবে। আসুন দেখি, কীভাবে আমরা ভালোভাবে ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারি, যাতে আমরা এটিতে লেখা সমস্ত বিষয় জানতে পারি।

বাইবেলের গভীর বিষয়গুলো খুঁজুন

৪. যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি? কয়েকটা উদাহরণ দিন।

খ্রিস্টান হিসেবে আমরা কেবল বাইবেল থেকে অল্প বিষয় জেনেই সন্তষ্ট থাকি না। আমরা পবিত্র শক্তির সাহায্যে ‘ঈশ্বরের এমন চিন্তাভাবনা’ সম্বন্ধে জানতে চাই, “যেগুলো অনুসন্ধান করে বের করা যায় না।” (১ করি. ২:৯, ১০) তাই, ব্যক্তিগত অধ্যয়নের সময়ে আপনি এমন বিষয়গুলো নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারেন, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি যিহোবার আরও নিকটবর্তী হবেন। আপনি চাইলে এই বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারেন যে, যিহোবা অতীতে তাঁর দাসদের প্রতি কীভাবে প্রেম দেখিয়েছিলেন আর এটা থেকে কীভাবে বোঝা যায়, তিনি আপনাকেও ভালোবাসেন। অথবা আপনি এই বিষয় নিয়েও অধ্যয়ন করতে পারেন, যিহোবা অতীতে ইজরায়েলীয়দের যেভাবে তাঁকে উপাসনা করতে বলেছিলেন আর বর্তমানে তিনি খ্রিস্টানদের যেভাবে উপাসনা করতে বলেছেন, সেটার মধ্যে কোন কোন মিল রয়েছে। এ ছাড়া, আপনি সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন, যেগুলো যিশু পৃথিবীতে থাকাকালীন পরিপূর্ণ করেছিলেন।

৫. ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার সময়ে আপনি কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে চান?

যে-ভাই-বোনেরা ভালোভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করে, তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তারা বাইবেলের কোন বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা করতে চায়। তারা যা বলেছে, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা “ ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য কিছু বিষয়” শিরোনামের বাক্সে দেওয়া হয়েছে। আপনি এই বিষয়গুলো নিয়ে অধ্যয়ন করার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের জন্য গবেষণা নির্দেশিকা ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে অধ্যয়ন করলে আপনার অনেক ভালো লাগবে। আপনি যখন বাইবেল নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করবেন, তখন আপনার বিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং আপনি “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” লাভ করবেন। (হিতো. ২:৪, ৫) এখন আসুন, আমরা বাইবেলের কিছু গভীর বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই, যেগুলো নিয়ে আমরা আরও ভালোভাবে অধ্যয়ন করতে পারি।

ঈশ্বরের উদ্দেশ্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন

৬. (ক) উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, যিহোবার উদ্দেশ্য কেন সবসময় পরিপূর্ণ হয়? (খ) কেন আমরা এটা বলতে পারি যে, পৃথিবী এবং মানুষের জন্য যিহোবার “অনন্ত উদ্দেশ্য” রয়েছে?

আসুন আমরা এই বিষয়ে মনোযোগ দিই যে, বাইবেলে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কী বলা হয়েছে। ধরুন, আপনি কোথাও যেতে চান। তাই, আপনি হয়তো প্ল্যান করেন এবং সমস্ত কিছু চিন্তা করে রাখেন যে, আপনি কীভাবে যাবেন এবং কোন রাস্তা দিয়ে যাবেন। তবে, রাস্তায় কোনো বাধা চলে আসতে পারে এবং আপনার প্ল্যান সফল না-ও হতে পারে। কিন্তু অন্যদিকে, যিহোবা যদি কিছু করতে চান, তা হলে তিনি এভাবে চিন্তা করেন না। তিনি শুধুমাত্র একটা গন্তব্য বা উদ্দেশ্য স্থির করেন। তিনি তাঁর গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য যেকোনো রাস্তা ব্যবহার করতে পারেন। বাইবেলে যিহোবা তাঁর “অনন্ত উদ্দেশ্য” সম্বন্ধে ধীরে ধীরে প্রকাশ করেছেন। (ইফি. ৩:১১) যিহোবা যেকোনো উপায়ে তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতে পারেন আর তিনি সবসময় সফল হন, কারণ তিনি সমস্ত কিছু এমনভাবে করেন, যাতে তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হয়। (হিতো. ১৬:৪) তাঁর উদ্দেশ্য “অনন্ত” কালের জন্য কারণ তিনি তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য যা-কিছু করেন, সেটা থেকে ক্রমাগত উপকার লাভ করা যাবে। তাই, আসুন আমরা আলোচনা করি, যিহোবার উদ্দেশ্য কী এবং সেটা পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে তিনি কোন কোন রদবদল করেছেন।

৭. আদম ও হবা যখন যিহোবার অবাধ্য হয়েছিলেন, তখন যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য কোন রদবদল করেছিলেন? (মথি ২৫:৩৪)

যিহোবা আদম ও হবাকে বলেছিলেন যে, মানুষের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য কী। তিনি তাদের বলেছিলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর . . . এবং যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্ত্তৃত্ব কর।” (আদি. ১:২৮) কিন্তু, আদম ও হবা যখন যিহোবার অবাধ্য হয়েছিলেন, তখন সমস্ত মানুষের মধ্যে পাপ চলে এসেছিল। তবে, এই কারণে যিহোবার উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়ে যায়নি। যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য কিছু রদবদল করেছিলেন। তিনি তখনই স্থির করে নিয়েছিলেন যে, তিনি স্বর্গে একটা রাজ্য স্থাপন করবেন এবং সেটার মাধ্যমে পৃথিবী ও মানুষের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন। (পড়ুন, মথি ২৫:৩৪.) এরপর, যিহোবা তাঁর নির্ধারিত সময়ে নিজের একজাত পুত্রকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, যেন তিনি আমাদের এই রাজ্য সম্বন্ধে জানান এবং পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার করার জন্য তাঁর জীবন দেন। এরপর, যিহোবা যিশুকে পুনরুত্থিত করেছিলেন এবং স্বর্গে তাঁর রাজ্যের রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু, যিহোবার উদ্দেশ্য এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। তাঁর উদ্দেশ্যের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে, যেটা আমরা এখন আলোচনা করব।

সেই সময়ের কথা চিন্তা করুন, যখন স্বর্গে এবং পৃথিবীতে যিহোবার প্রত্যেক দাস একসঙ্গে বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করবে (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৮. (ক) বাইবেলের মুখ্য বিষয় কী? (খ) ইফিষীয় ১:৮-১১ পদে যেমনটা বলা হয়েছে, অবশেষে যিহোবা কী করবেন? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন)

বাইবেলের মুখ্য বিষয় হল, যিহোবার নামকে পবিত্র করা। আর এটা তখনই হবে, যখন তিনি তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে পৃথিবীর জন্য তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন, যেটার রাজা হলেন যিশু খ্রিস্ট। যিহোবার উদ্দেশ্য কখনো পরিবর্তিত হতে পারে না। তিনি আমাদের এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন, যা-ই ঘটুক না কেন, তিনি তাঁর উদ্দেশ্য অবশ্যই পরিপূর্ণ করবেন। (যিশা. ৪৬:১০, ১১; ইব্রীয় ৬:১৭, ১৮) ভবিষ্যতে এই পৃথিবী এক সুন্দর পরমদেশে পরিণত হবে, যেখানে আদম ও হবার ধার্মিক ও সিদ্ধ সন্তানেরা “চিরকাল জীবিত” থাকবে। (গীত. ২২:২৬, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) কিন্তু, তাঁর উদ্দেশ্য শুধু এটাই নয়। অবশেষে, তিনি সমস্ত স্বর্গদূত এবং মানুষকে একতাবদ্ধ করবেন। তখন তারা সবাই তাদের রাজা যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করবে। (পড়ুন, ইফিষীয় ১:৮-১১.) আপনার কি মনে হয় না, যিহোবা যেভাবে তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করেন, সেটা সত্যিই অসাধারণ?

ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করুন

৯. বাইবেল পড়লে আমরা ভবিষ্যতে কত দূর পর্যন্ত দেখতে পারি?

আসুন আমরা এখন সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীর প্রতি মনোযোগ দিই, যেটা যিহোবা এদন উদ্যানে করেছিলেন। এটা আমরা আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে পাই। b এই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে এমন অনেক বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হত। কিন্তু, এই সমস্ত কিছু হাজার হাজার বছর পরে গিয়ে ঘটত। যেমন, প্রতিজ্ঞাত বংশ বা মশীহ অব্রাহামের বংশ থেকে আসতেন। (আদি. ২২:১৫-১৮) এই পদে এও বলা হয়েছিল, বংশ বা মশীহের গোড়ালিতে আঘাত করা হবে। এটা ৩৩ খ্রিস্টাব্দে ঘটেছিল, যখন যিশু মারা গিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৩:১৩-১৫) এ ছাড়া, এই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে এও বলা হয়েছিল যে, অবশেষে শয়তানের মাথা থেতলে দেওয়া হবে। এই ঘটনাটা ভবিষ্যতে হাজার বছরেরও বেশি সময় পর পরিপূর্ণ হবে। (প্রকা. ২০:৭-১০) বাইবেলে এই বিষয়েও অনেক কিছু বলা রয়েছে যে, যখন শয়তানের জগৎ এবং যিহোবার সংগঠনের মধ্যে শত্রুতার শেষ হবে, তখন কোন কোন ঘটনা ঘটবে।

১০. (ক) শীঘ্রই ভবিষ্যতে কোন ঘটনাগুলো ঘটবে? (খ) এই ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমরা নিজেদের কীভাবে আগে থেকে প্রস্তুত করতে পারি? (পাদটীকা দেখুন।)

১০ আসুন আমরা বাইবেলে বলা সেই ঘটনাগুলোর উপর মনোযোগ দিই, যেগুলো এই পৃথিবীকে কাঁপিয়ে তুলবে। সবচেয়ে প্রথমে জগতের জাতিগুলো “শান্তি ও নিরাপত্তা!” ঘোষণা করবে। (১ থিষল. ৫:২, ৩) “হঠাৎ” জগতের জাতিগুলো মিথ্যা ধর্মের উপর আক্রমণ করবে এবং মহাক্লেশ শুরু হয়ে যাবে। (প্রকা. ১৭:১৬) আর এরপর হয়তো অলৌকিকভাবে ‘মনুষ্যপুত্রকে ক্ষমতা ও মহাগৌরবের সঙ্গে মেঘের মধ্যে আসতে দেখা’ যাবে। (মথি ২৪:৩০) যিশু সমস্ত মানুষের বিচার করবেন অর্থাৎ তিনি ছাগদের থেকে মেষদের পৃথক করবেন। (মথি ২৫:৩১-৩৩, ৪৬) কিন্তু, এই সমস্ত কিছু চলাকালীন শয়তান চুপ করে বসে থাকবে না। শয়তান রেগে গিয়ে মাগোগ দেশীয় গোগকে (জাতির জোটকে) উসকে দেবে, যাতে সে যিহোবার লোকদের উপর আক্রমণ করে। (যিহি. ৩৮:২, ১০, ১১) এরই মধ্যে অবশিষ্ট অভিষিক্ত ব্যক্তিরা স্বর্গে চলে যাবে আর মহাক্লেশের শেষে খ্রিস্ট এবং তাঁর স্বর্গীয় সৈন্যের সঙ্গে আরমাগিদোনের যুদ্ধ করবে। c (মথি ২৪:৩১; প্রকা. ১৬:১৪, ১৬) এরপর, পৃথিবীতে খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্ব শুরু হয়ে যাবে।—প্রকা. ২০:৬.

আপনার কী মনে হয়, কোটি কোটি বছর ধরে যিহোবা সম্বন্ধে জানার পর তাঁর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন হবে? (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১. আপনার কাছে চিরকাল বেঁচে থাকার যে-আশা রয়েছে, সেটার কারণে আপনি কী কী করতে পারবেন? (ছবিও দেখুন।)

১১ এবার আসুন, আমরা আরও দূরে দেখার চেষ্টা করি। আমরা দেখি, ১,০০০ বছর পর কী কী ঘটবে। বাইবেলে লেখা রয়েছে যে, আমাদের সৃষ্টিকর্তা “আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকার ইচ্ছা দিয়েছেন।” (উপ. ৩:১১, NW) তাই কল্পনা করুন, সেই সময়ে আপনার জীবন কেমন হবে এবং যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ হবে। যিহোবার নিকটবর্তী হোন বইয়ের ৩১৯ পৃষ্ঠায় এই বিষয়ে খুবই আগ্রহজনক কথা লেখা রয়েছে: “শত শত, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি বছর বেঁচে থাকার পর, আমরা যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে এখন যা জানি, সেটার চেয়ে আরও বেশি কিছু জানব। কিন্তু তখনও আমাদের মনে হবে যে, আরও অগণিত চমৎকার বিষয়গুলো জানার বাকি আছে। . . . অনন্তজীবন অকল্পনীয়ভাবে অর্থপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময় হবে—আর যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া এর সবচেয়ে সন্তোষজনক অংশ হবে।” কিন্তু, সেই সময় না আসা পর্যন্ত ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা আর কী কী জানতে পারব?

স্বর্গের দিকে তাকান

১২. একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে আমরা স্বর্গের দিকে তাকাতে পারি?

১২ বাইবেলে বলা হয়েছে, যিহোবা “ঊর্দ্ধ্বলোকে বাস করেন।” এটা থেকে আমরা এই বিষয়টা একটু হলেও বুঝতে পারি যে, তাঁর চারিদিকের দৃশ্য কত সুন্দর। (যিশা. ৩৩:৫) এটিতে যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের যে-অংশ স্বর্গে রয়েছে, সেই সম্বন্ধেও অনেক অপূর্ব বিষয় বলা রয়েছে। (যিশা. ৬:১-৪; দানি. ৭:৯, ১০; প্রকা. ৪:১-৬) উদাহরণ স্বরূপ, আমরা বাইবেল থেকে সেই সমস্ত বিস্ময়কর কথাগুলোর বিষয়ে পড়তে পারি, যা যিহিষ্কেল সেইসময় দেখেছিলেন, যখন ‘স্বর্গ খুলিয়া গেল, আর তিনি ঈশ্বরীয় দর্শন প্রাপ্ত হইলেন।’—যিহি. ১:১.

১৩. ইব্রীয় ৪:১৪-১৬ পদে যেমনটা বলা হয়েছে, বর্তমানে যিশু স্বর্গ থেকে যা-করছেন, সেটার মধ্যে কোন বিষয়টা আপনার ভালো লাগে?

১৩ এখন যিশুর প্রতি মনোযোগ দিন। কল্পনা করুন, তিনি কীভাবে একজন মহাযাজক হিসেবে আমাদের প্রতি সমবেদনা দেখাচ্ছেন এবং স্বর্গে শাসন করছেন। যিশুর নামে প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের “মহাদয়ার সিংহাসনের কাছে” যেতে পারি এবং আমরা যিহোবার কাছে বিনতি করতে পারি, যেন তিনি আমাদের প্রতি করুণা দেখান এবং “আমাদের যখন সাহায্যের প্রয়োজন হয়,” তখন আমাদের সাহায্য করেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ৪:১৪-১৬.) প্রতিদিন এই বিষয়ে চিন্তা করুন, যিহোবা ও যিশু আপনার জন্য কী কী করেছেন এবং বর্তমানে তারা স্বর্গ থেকে আপনার জন্য কী কী করছেন। তাঁরা যেভাবে আমাদের ভালোবেসেছেন, সেটা কি আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে না? আর আমাদের কি আরও উদ্যোগের সঙ্গে সেবা করতে ইচ্ছে করে না?—২ করি. ৫:১৪, ১৫.

কল্পনা করুন, নতুন জগতে আপনি কতটা আনন্দিত হবেন যে, আপনি লোকদের যিহোবার সাক্ষি এবং যিশুর শিষ্য হতে সাহায্য করেছেন! (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. যিহোবা ও যিশুর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর সবচেয়ে ভালো উপায় কী? (ছবিগুলোও দেখুন)

১৪ ঈশ্বর এবং তাঁর পুত্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর সবচেয়ে ভালো উপায় কী? সেটা হল, লোকদের যিহোবার সাক্ষি হতে এবং যিশুর শিষ্য হতে সাহায্য করা। (মথি ২৮:১৯, ২০) প্রেরিত পৌলও ঈশ্বর এবং খ্রিস্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর জন্য এমনটাই করেছিলেন। তিনি জানতেন, যিহোবার ইচ্ছা হল “যেন সমস্ত ধরনের লোক রক্ষা পায় এবং সত্য সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করে।” (১ তীম. ২:৩, ৪) তাই, তিনি প্রচার করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন এবং যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে সুসমাচার জানানোর জন্য প্রচেষ্টা করেছিলেন, যেন ‘যেকোনো উপায়েই হোক, কয়েক জনকে রক্ষা করতে পারেন।’—১ করি. ৯:২২, ২৩.

ঈশ্বরের বাক্য আরও ভালোভাবে জানার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পান

১৫. গীতসংহিতা ১:২ পদ অনুযায়ী কী করলে আমরা আনন্দিত হব?

১৫ গীতসংহিতা বইয়ের একজন লেখক বলেছেন, যে-ব্যক্তি “সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে” এবং “তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে,” সে-ই সত্যিকারের সুখী হয় এবং নিজের জীবনে সফল হয়। (গীত. ১:১-৩) জোষেফ রথারহ্যাম নামে বাইবেলের একজন অনুবাদক এই গীতের বিষয়ে তার একটা বইতে লিখেছেন, “একজন ব্যক্তির মধ্যে ঈশ্বরের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এতটাই তীব্র হওয়া উচিত যে, তিনি এরজন্য গবেষণা করবেন, অধ্যয়ন করবেন এবং অনেক সময় ধরে সেই বিষয়ে চিন্তা করবেন।” তিনি এও লিখেছেন, “একজন ব্যক্তি যদি কোনো একদিন বাইবেল না পড়েন, তা হলে বিষয়টা এমন হবে যেন তার দিনটা বেকার চলে গিয়েছে।” তাই, বাইবেল অধ্যয়ন করার সময়ে এটির সমস্ত বিষয়ের উপর মনোযোগ দিন এবং বোঝার চেষ্টা করুন যে, এটির আলাদা আলাদা অংশে লেখা বিষয়গুলো কীভাবে একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এভাবে আপনি যখন ঈশ্বরের বাক্যের প্রস্থ, দৈর্ঘ্য, উচ্চতা এবং গভীরতা ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করবেন, তখন আপনি অনেক আনন্দিত হবেন।

১৬. পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

১৬ যিহোবা তাঁর বাক্যে যে-গভীর বিষয়গুলো লিখিয়েছেন, সেগুলো এতটাও কঠিন নয় যে, আমরা বুঝতে পারব না। পরের প্রবন্ধে আমরা এমনই একটা গুরুত্বপূর্ণ সত্য নিয়ে আলোচনা করব। সেটা হল যিহোবার মহান আধ্যাত্মিক মন্দির, যেটার বিষয়ে পৌল ইব্রীয় খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা তার চিঠিতে বলেছিলেন। আশা করি, আপনি এই বিষয়টা নিয়ে অধ্যয়ন করে আনন্দ লাভ করবেন।

গান ৯৪ ঈশ্বরের বাক্যের জন্য কৃতজ্ঞ

a বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা সারাজীবন ধরে আনন্দ লাভ করতে পারি, অনেক উপকার লাভ করতে পারি আর সেইসঙ্গে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের বাক্যের “প্রস্থ, দৈর্ঘ্য, উচ্চতা ও গভীরতা” জানতে পারি।

b ২০২২ সালের জুলাই মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “এক পুরোনো ভবিষ্যদ্‌বাণী আপনার জন্য কোন অর্থ রাখে?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

c ভবিষ্যতে যে-ঘটনাগুলো এই জগৎকে কাঁপিয়ে তুলবে, সেটার জন্য আপনি নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করতে পারেন, সেই বিষয়ে জানার জন্য ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করছে! (ইংরেজি) বইয়ের ২৩০ পৃষ্ঠা দেখুন।