সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫

গান ২৭ ঈশ্বরের পুত্রদের মহিমা প্রকাশ

“আমি কখনো তোমাকে পরিত্যাগ করব না”!

“আমি কখনো তোমাকে পরিত্যাগ করব না”!

“ঈশ্বর বলেছেন: ‘আমি কখনো তোমাকে ছাড়ব না আর আমি কখনো তোমাকে পরিত্যাগ করব না।’”ইব্রীয় ১৩:৫খ

আমরা কী শিখব?

সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টান যখন স্বর্গে চলে যাবে, তখন কেন পৃথিবীতে থাকা ঈশ্বরের উপাসকেরা এই বিষয়ে আস্থা রাখতে পারে যে, যিহোবা তাদের একা ছেড়ে দেবেন না?

১. কখন সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টান স্বর্গে চলে যাবে?

 অনেক বছর আগে যিহোবার লোকদের মনে এই প্রশ্ন আসত, ‘অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মধ্যে শেষ ব্যক্তিকে কবে স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হবে?’ আগে আমরা মনে করতাম, কিছু অভিষিক্ত খ্রিস্টান হয়তো আরমাগিদোনের পরও পরমদেশ পৃথিবীতে কিছুসময়ের জন্য থাকবে। কিন্তু, ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় বোঝানো হয়েছিল যে, আরমাগিদোন শুরু হওয়ার আগেই সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টান স্বর্গে চলে যাবে।—মথি ২৪:৩১.

২. কিছু লোকের মনে হয়তো কোন প্রশ্ন আসে আর এই প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেব?

কিছু ভাই-বোনের মনে হয়তো এইরকম প্রশ্ন আসে: খ্রিস্টের ‘আরও মেষের’ কী হবে, যখন মহাক্লেশের সময়ে তারা বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করবে? (যোহন ১০:১৬; মথি ২৪:২১) আমরা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অনেক ভালোবাসি। তাই কেউ কেউ হয়তো চিন্তা করে, যখন সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টান স্বর্গে চলে যাবে, তখন তারা পৃথিবীতে একা হয়ে যাবে এবং তাদের নির্দেশনা দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না। আসুন, আমরা বাইবেলের দুটো ঘটনার উপর মনোযোগ দিই, যেগুলোর কারণে এই ভাই-বোনেরা হয়তো এমনটা চিন্তা করে। এরপর আমরা কিছু কারণের উপরও মনোযোগ দেব যে, কেন আমাদের এই বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা উচিত নয়।

আরও মেষের প্রতি কী ঘটবে না?

৩-৪. কিছু ভাই-বোন হয়তো কী চিন্তা করে আর কেন?

কিছু ভাই-বোন হয়তো চিন্তা করে, ‘পরিচালকগোষ্ঠীর ভাইয়েরা যখন এই পৃথিবীতে আর থাকবে না, তখন আরও মেষের ব্যক্তিরা সত্যের পথ থেকে সরে যাবে না তো?’ তারা হয়তো বাইবেলের কোনো ঘটনা পড়ে এমনটা চিন্তা করে। আসুন, আমরা এইরকমই দুটো ঘটনা নিয়ে আলোচনা করি। প্রথমে আমরা সেই ঘটনা দেখি, যখন যিহোয়াদা একজন মহাযাজক ছিলেন। তিনি যিহোবার একজন বিশ্বস্ত উপাসক ছিলেন। তিনি এবং তার স্ত্রী যিহোশাবৎ ছোট্ট যিহোয়াশের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। তারা তাকে সঠিক পথে চলতে শিখিয়েছিলেন, তাই পরে গিয়ে তিনি একজন ভালো রাজা হয়েছিলেন। যতদিন বয়স্ক মহাযাজক বেঁচে ছিলেন, ততদিন যিহোয়াশ যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন এবং সঠিক কাজ করে গিয়েছিলেন। কিন্তু, যিহোয়াদা মারা যাওয়ার পর যিহোয়াশ যিহূদার খারাপ অধ্যক্ষদের কথা শুনতে শুরু করেছিলেন এবং যিহোবার উপাসনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।—২ বংশা. ২৪:২, ১৫-১৯.

দ্বিতীয় ঘটনাটা হল, দ্বিতীয় শতাব্দীর (১০০ খ্রিস্টাব্দের পরের) খ্রিস্টানদের বিষয়ে। যিশুর প্রেরিতেরা যতদিন বেঁচে ছিল, ততদিন তারা বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে চলার জন্য খ্রিস্টানদের অনেক সাহায্য করেছিল। যোহনও তা-ই করেছিলেন, যিনি প্রেরিতদের মধ্যে সবার শেষে মারা গিয়েছিলেন। (৩ যোহন ৪) সেই সময় লোকেরা মণ্ডলীগুলোতে মিথ্যা শিক্ষা শেখাচ্ছিল। তাদের হাত থেকে সেই খ্রিস্টানদের রক্ষা করার জন্য অন্য প্রেরিতদের মতো যোহন অনেক পরিশ্রম করেছিলেন। তিনি যেন খ্রিস্টানদের ‘বাধা দিচ্ছিলেন।’ (১ যোহন ২:১৮; ২ থিষল. ২:৭) তবে, যোহন মারা যাওয়ার পর মিথ্যা শিক্ষাগুলো আগুনের মতো মণ্ডলীগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছিল আর কিছু বছরের মধ্যেই খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলো একেবারে দূষিত হয়ে গিয়েছিল।

৫. বাইবেলের এই দুটো ঘটনা পড়ে আমাদের কী মনে করা উচিত নয়?

এই দুটো ঘটনার মাধ্যমে কি এটা প্রমাণ হয় যে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা যখন স্বর্গে চলে যাবে, তখন যিশুর আরও মেষদের প্রতি এইরকমই কিছু ঘটবে? সেইসময় কি বিশ্বস্ত খ্রিস্টানেরা যিহোয়াশের মতো সঠিক পথ ছেড়ে চলে যাবে? তারা কি দ্বিতীয় শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মতো সত্য ধর্ম ছেড়ে দেবে? না, এমনটা একদমই হবে না! আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি, অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা স্বর্গে চলে যাওয়ার পরও আরও মেষ বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে চলবে আর তিনি তাদের যত্ন নেবেন। কেন আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?

বিশুদ্ধ উপাসনা আর কখনো দূষিত হবে না

৬. আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, ভবিষ্যতে যখন বিভিন্ন সমস্যা আসবে, তখনও বিশুদ্ধ উপাসনা দূষিত হবে না? কারণ বাইবেল আমাদের বলে, আমরা এক বিশেষ সময়ে বাস করছি। এটা ইজরায়েলীয়দের সময় এবং দ্বিতীয় শতাব্দীর খ্রিস্টানদের সময়ের চেয়ে অনেক আলাদা। তাই আসুন, আমরা একটা একটা করে এই তিনটে সময় নিয়ে আলোচনা করি: (১) ইজরায়েলীয়দের সময়, (২) প্রেরিতদের মৃত্যুর পরের সময় আর (৩) আমাদের সময় অর্থাৎ “সমস্ত বিষয়ের পুনর্স্থাপনের সময়।”—প্রেরিত ৩:২১.

৭. যখন ইজরায়েলের রাজারা আর লোকেরা খারাপ কাজ করতে শুরু করেছিল, তখন কেন বিশ্বস্ত ইজরায়েলীয়েরা আশা ছেড়ে দেয়নি?

ইজরায়েলীয়দের সময়। মারা যাওয়ার কিছুসময় আগে মোশি ইজরায়েলীয়দের বলেছিলেন, “আমি ভালো করেই জানি, আমার মৃত্যুর পর তোমরা মন্দ কাজ করবে আর আমি তোমাদের যে-পথে চলার আজ্ঞা দিয়েছি, তোমরা সেই পথ থেকে দূরে চলে যাবে।” (দ্বিতীয়. ৩১:২৯, NW) মোশি তাদের এই বিষয়েও সাবধান করেছিলেন, তারা যদি যিহোবার কথা না শোনে, তা হলে তাদের বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হবে। (দ্বিতীয়. ২৮:৩৫, ৩৬) আর ঠিক তা-ই হয়েছিল! পরবর্তী সময়ে ইজরায়েলের উপর যে-রাজারা শাসন করেছিল, তাদের মধ্যে অনেকে প্রচুর খারাপ কাজ করেছিল এবং যিহোবার কাছ থেকে লোকদের দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এই কারণে যিহোবা ইজরায়েলের খারাপ লোকদের শাস্তি দিয়েছিলেন এবং তাদের উপর আর কোনো ইজরায়েলীয় রাজাকে শাসন করতে দেননি। (যিহি. ২১:২৫-২৭) কিন্তু, বিশ্বস্ত ইজরায়েলীয়েরা যখন দেখেছিল যে, কীভাবে যিহোবার প্রতিটা কথা পূরণ হয়েছে, তখন তারা সাহস লাভ করেছিল এবং ক্রমাগত সত্যের পথে চলেছিল।—যিশা. ৫৫:১০, ১১.

৮. আমাদের কি এটা জেনে অবাক হওয়া উচিত যে, দ্বিতীয় শতাব্দীতে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলো একেবারে দূষিত হয়ে গিয়েছিল? বুঝিয়ে বলুন।

প্রেরিতদের মৃত্যুর পরের সময়। দ্বিতীয় শতাব্দীতে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলো একেবারে দূষিত হয়ে গিয়েছিল। এটা জেনে কি আমাদের অবাক হওয়া উচিত? না, কারণ যিশু আগেই বলে দিয়েছিলেন যে, অনেক লোক সত্য ধর্ম ছেড়ে সেটারই বিপরীতে কথা বলবে। (মথি ৭:২১-২৩; ১৩:২৪-৩০, ৩৬-৪৩) প্রথম শতাব্দীতে যিশুর করা এই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হতে শুরু করে দিয়েছিল। প্রেরিত পৌল, পিতর ও যোহনও এই বিষয়ে লিখেছিলেন। (২ থিষল. ২:৩, ৭; ২ পিতর ২:১; ১ যোহন ২:১৮) আর দ্বিতীয় শতাব্দীতে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলো একেবারে দূষিত হয়ে গিয়েছিল। এভাবে মিথ্যা খ্রিস্টান ধর্মের শুরু হয়েছিল, যেটা মহতী বাবিলের (মিথ্যা ধর্মের সাম্রাজ্য) একটা বড়ো অংশ হয়েছিল। যিশু যা যা বলেছিলেন, ঠিক তা-ই ঘটেছিল!

৯. আমরা এখন যে-সময়ে রয়েছি, সেটা ইজরায়েলীয়দের সময় এবং দ্বিতীয় শতাব্দীর খ্রিস্টানদের সময়ের চেয়ে কেন আলাদা?

“সমস্ত বিষয়ের পুনর্স্থাপনের সময়।” আজ আমরা এমন এক সময়ে রয়েছি, যেটা প্রাচীন কালের ইজরায়েলীয়দের সময়ের মতো নয় এবং দ্বিতীয় শতাব্দীর খ্রিস্টানদের সময়ের মতোও নয়, যখন কিনা অনেক লোক সত্য ধর্ম ছেড়ে দিয়েছিল এবং সেটারই বিপরীতে কথা বলেছিল। তাহলে, আমরা এখন কোন সময়ে রয়েছি? সাধারণত, আমরা এটাকে এই খারাপ জগতের ‘শেষকাল’ বলে থাকি। (২ তীম. ৩:১) তবে বাইবেল দেখায় যে, ১৯১৪ সাল থেকে আরেকটা বিশেষ সময় শুরু হয়েছিল, যেটা দীর্ঘসময় ধরে চলবে। এই সময়টা খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের শেষে গিয়ে শেষ হবে, যখন সমস্ত মানুষ নিখুঁত হয়ে যাবে এবং এই পৃথিবী পরমদেশে পরিণত হয়ে যাবে। এই সময়ে ‘সমস্ত বিষয়ের পুনর্স্থাপন’ করা হবে। (প্রেরিত ৩:২১) তাহলে, এখনও পর্যন্ত কোন কোন বিষয় পুনর্স্থাপন করা হয়েছে অথবা আগের মতো করা হয়েছে? ১৯১৪ সালে যিশুকে স্বর্গে রাজা করা হয়েছে। এভাবে, যিহোবার পক্ষ থেকে এমন একজন রাজা আবার শাসন করতে শুরু করেছেন, যিনি বিশ্বস্ত রাজা দায়ূদের একজন বংশধর। এর কিছুসময় পর, যিহোবা আরেকটা বিষয় আগের মতো করেছেন। তাঁর সাহায্যে আরেক বার তাঁর লোকেরা বিশুদ্ধ উপাসনা করতে শুরু করেছে। (যিশা. ২:২-৪; যিহি. ১১:১৭-২০) কিন্তু, বিশুদ্ধ উপাসনা কি আবার দূষিত হয়ে যাবে?

১০. (ক) আমাদের সময়ে যে-বিশুদ্ধ উপাসনা করা হচ্ছে, সেটার বিষয়ে কী ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল? (যিশাইয় ৫৪:১৭) (খ) এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো থেকে আমরা কোন আশ্বাস পাই?

১০ যিশাইয় ৫৪:১৭ পদ পড়ুন। এই ভবিষ্যদ্‌বাণীর বিষয়ে একটু চিন্তা করুন: “যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না।” যিহোবা যা বলেছিলেন, তা আজ পরিপূর্ণ হচ্ছে। আরেকটা ভবিষ্যদ্‌বাণীও আমাদের সময়ে পরিপূর্ণ হচ্ছে: “তোমার সন্তানেরা সকলে সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে, আর তোমার সন্তানদের পরম শান্তি হইবে। তুমি ধার্ম্মিকতায় স্থিরীকৃত হইবে; . . . তুমি ভীত হইবে না; এবং ত্রাস হইতে দূরে থাকিবে, বাস্তবিক তাহা তোমার নিকটে আসিবে না।” (যিশা. ৫৪:১৩, ১৪) আজ যিহোবার লোকেরা সারা পৃথিবীতে যে-শেখানোর কাজ করছে, সেটা “এই বিধিব্যবস্থার ঈশ্বর” শয়তানও থামাতে পারবে না। (২ করি. ৪:৪) আরও একবার বিশুদ্ধ উপাসনা করা হচ্ছে এবং এটা আর কখনো দূষিত হবে না। যিহোবার লোকেরা চিরকাল ধরে বিশুদ্ধ উপাসনা করবে। ‘যে কোন অস্ত্র আমাদের বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না।’

অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা স্বর্গে চলে যাওয়ার পর কী হবে?

১১. কোন বিষয়টা থেকে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা স্বর্গে চলে যাওয়ার পর আরও মেষদের একা ছেড়ে দেওয়া হবে না?

১১ অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা যখন স্বর্গে চলে যাবে, তখন কী হবে? মনে রাখবেন, যিশু হলেন আমাদের মেষপালক এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক। তিনি বলেছিলেন: “তোমাদের নেতা এক জন, তিনি খ্রিস্ট।” (মথি ২৩:১০) যিশু খ্রিস্ট স্বর্গে শাসন করছেন আর তিনি সবসময় তাঁর লোকদের যত্ন নেবেন। তাই, খ্রিস্ট যদি আমাদের সঠিক পথ দেখান, তা হলে আর চিন্তা কীসের? আমরা এটা জানি না, যিশু সেইসময় ঠিক কীভাবে আমাদের সঠিক পথ দেখাবেন। কিন্তু আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি তাঁর দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করবেন। আসুন, আমরা বাইবেলের কিছু উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে পারব।

১২. (ক) মোশি মারা যাওয়ার পর কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকদের যত্ন নিয়েছিলেন? (খ) এলিয়কে যখন অন্য কোথাও পাঠানো হয়েছিল, তখন কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকদের যত্ন নিয়েছিলেন? (ছবিও দেখুন।)

১২ ইজরায়েলীয়েরা প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢোকার আগেই মোশি মারা গিয়েছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর যিহোবা কি তাঁর লোকদের একা ছেড়ে দিয়েছিলেন? না। যতদিন তারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল, তিনি তাদের যত্ন নিয়েছিলেন। মোশি মারা যাওয়ার আগে যিহোবা তাকে বলেছিলেন যে, তিনি যিহোশূয়কে লোকদের নেতা করবেন। তাই, মোশি অনেক বছর ধরে যিহোশূয়কে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। (যাত্রা. ৩৩:১১; দ্বিতীয়. ৩৪:৯) এ ছাড়া, ইজরায়েলে এমন অনেক অভিজ্ঞ লোক ছিল, যাদের হাজার জনের দলের উপর, এক-শো জনের দলের উপর, পঞ্চাশ জনের দলের উপর এবং দশ জনের দলের উপর অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। (দ্বিতীয়. ১:১৫) এভাবে, যিহোবা তাঁর লোকদের খুব ভালোভাবে যত্ন নিয়েছিলেন। আরেকটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। এটা সেই সময়কার কথা, যখন এলিয় ইজরায়েলে একজন ভাববাদী হিসেবে ছিলেন। তিনি অনেক বছর ধরে ইজরায়েলীয়দের সাহায্য করেছিলেন যেন তারা যিহোবার উপাসনা করে চলে। কিন্তু পরে, যিহোবা তাকে দক্ষিণে যিহূদায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। (২ রাজা. ২:১; ২ বংশা. ২১:১২) সেইসময় ইজরায়েলের দশ বংশের লোকদের কি যিহোবা একা ছেড়ে দিয়েছিলেন? তাদের কি সঠিক পথ দেখানোর কেউ ছিল না? না, তা নয়। এলিয় অনেক বছর ধরে ইলীশায়কে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। এ ছাড়া ‘ভাববাদীদের ছেলেরাও’ ছিল, যাদের অনেক ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। (২ রাজা. ২:৭) এখান থেকে বোঝা যায়, যিহোবার লোকদের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য সবসময় বিশ্বস্ত পুরুষেরা ছিল। তাদের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর লোকদের ভালোভাবে যত্ন নিয়েছিলেন আর এভাবে নিজের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করেছিলেন।

মোশি (বাঁ-দিকের ছবি) ও এলিয় (ডান দিকের ছবি) দু-জনেই এমন কাউকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যারা পরে গিয়ে যিহোবার লোকদের সঠিক পথ দেখাতে পেরেছিলেন (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১৩. ইব্রীয় ১৩:৫খ পদ থেকে আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি? (ছবিও দেখুন।)

১৩ বাইবেলের এই ঘটনাগুলো মাথায় রেখে আপনি কী বলবেন, সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টান যখন স্বর্গে চলে যাবে, তখন কী হবে? এই বিষয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। বাইবেল থেকে আমরা নিশ্চিত হই, যিহোবা কখনো তাঁর লোকদের একা ছেড়ে দেবেন না। (পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৫খ।) মোশি ও এলিয়ের মতো পরিচালকগোষ্ঠীর ভাইয়েরাও জানে, অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বছরের পর বছর ধরে তারা আরও মেষের ভাইদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে, যাতে তারা যিহোবার মেষদের যত্ন নিতে পারে। তাই তারা প্রাচীনদের জন্য, সীমা অধ্যক্ষদের জন্য, শাখা অফিসের সদস্যদের জন্য, বেথেলের অধ্যক্ষদের জন্য, মিশনারিদের জন্য এবং আরও অনেকের জন্য বিভিন্ন স্কুল প্রস্তুত করেছে। এ ছাড়া, যে-ভাইয়েরা পরিচালকগোষ্ঠীর বিভিন্ন কমিটিতে সাহায্য করে, তাদের পরিচালকগোষ্ঠীর ভাইয়েরা প্রশিক্ষণ দেয়। এই ভাইয়েরা এখনই সংগঠনে বড়ো বড়ো দায়িত্ব সামলাচ্ছে আর ভবিষ্যতে তারা খ্রিস্টের মেষদের যত্ন নেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।

পরিচালকগোষ্ঠী তার সাহায্যকারী ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আর সারা পৃথিবীর প্রাচীনদের, ভ্রমণ অধ্যক্ষদের, শাখা কমিটির সদস্যদের, বেথেলের অধ্যক্ষদের এবং মিশনারি ভাই-বোনদের শেখানোর জন্য বিভিন্ন স্কুলের ব্যবস্থা করেছে (১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)


১৪. এই আলোচনা থেকে আমরা কী শিখলাম?

১৪ তাহলে, এই আলোচনা থেকে আমরা কী শিখলাম? মহাক্লেশের একেবারে শেষের দিকে যখন শেষ অভিষিক্ত খ্রিস্টান স্বর্গে চলে যাবে, তখন পৃথিবীতে বিশুদ্ধ উপাসনা থেমে যাবে না। এটা চলতে থাকবে। যিশু খ্রিস্টের নির্দেশনায় যিহোবার লোকেরা বিশ্বস্তভাবে সেবা করে চলবে। আমরা জানি, সেইসময় মাগোগ দেশীয় গোগ বা জাতির জোট রেগে গিয়ে আমাদের আক্রমণ করবে। (যিহি. ৩৮:১৮-২০) কিন্তু, সেই আক্রমণ শুধু কিছুসময়ের জন্য হবে আর শত্রুরা সফল হতে পারবে না। যিহোবার লোকেরা তাঁর উপাসনা করে চলবে এবং তিনি অবশ্যই তাঁর লোকদের রক্ষা করবেন। প্রেরিত যোহন একটা দর্শনে খ্রিস্টের “আরও মেষের” ‘বিরাট জনতাকে’ দেখেছিলেন। যোহনকে বলা হয়েছিল যে, এই “বিরাট জনতা” “মহাক্লেশ পার হয়ে এসেছে।” (প্রকা. ৭:৯, ১৪) এর থেকে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা তাঁর লোকদের অবশ্যই রক্ষা করবেন!

১৫-১৬. প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৪ পদ অনুযায়ী অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা আরমাগিদোনের সময়ে কী করবে আর এটা জেনে কেন আমরা উৎসাহ পাই?

১৫ তারপরও কিছু ভাই-বোন হয়তো চিন্তা করে, ‘স্বর্গে যাওয়ার পর অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা কী করবে?’ এর উত্তর বাইবেলে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে। এখানে লেখা আছে, জগতের সরকারগুলো “মেষশাবকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।” আর আমরা জানি, তারা এই যুদ্ধে হেরে যাবে। বাইবেলে লেখা রয়েছে, “[মেষশাবক] তাদের পরাজিত করবেন।” কারা মেষশাবককে সাহায্য করবে? সেই একই পদ বলে: “যাদের আহ্বান করা হয়েছে এবং মনোনীত করা হয়েছে এবং যারা বিশ্বস্ত।” (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৪.) কিন্তু, তারা কারা? তারা হল সেই সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টান, যাদের স্বর্গে পুনরুত্থিত করা হবে। তাহলে, মহাক্লেশের শেষের দিকে যখন শেষ অভিষিক্ত খ্রিস্টান স্বর্গে চলে যাবে, তখন সবচেয়ে প্রথমে তাদের সবাইকে কোন কাজ দেওয়া হবে? তাদের যুদ্ধ করতে হবে। বাহ! কী দারুণ কাজ দেওয়া হবে। কিছু অভিষিক্ত খ্রিস্টান যিহোবার সাক্ষি হওয়ার আগে লড়াই করত আর কেউ কেউ সেনাবাহিনীতে ছিল। কিন্তু, পরে তারা যখন খ্রিস্টান হয়েছিল, তখন তারা শান্তির পথে চলতে শিখেছিল। (গালা. ৫:২২; ২ থিষল. ৩:১৬) তারা যুদ্ধে অংশ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে, তারা যখন স্বর্গে যাবে, তখন তারা খ্রিস্ট এবং তাঁর পবিত্র স্বর্গদূতদের সঙ্গে যিহোবার শত্রুদের বিরুদ্ধে শেষ যুদ্ধে অংশ নেবে।

১৬ এই বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। বর্তমানে কিছু অভিষিক্ত খ্রিস্টান বয়স্ক ও কমজোরী। কিন্তু, তারা যখন স্বর্গে পুনরুত্থিত হবে, তখন তারা শক্তিশালী হয়ে যাবে এবং চিরকাল বেঁচে থাকবে। তারা তাদের মহান রাজা যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করবে। আরমাগিদোনের পর তারা যিশুর সঙ্গে মিলে মানুষকে নিখুঁত হতে সাহায্য করবে। আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি, সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টান স্বর্গে চলে যাওয়ার পর তারা আমাদের জন্য অনেক বড়ো বড়ো কাজ করবে, যেগুলো তারা বর্তমানে চাইলেও করতে পারছে না।

১৭. কেন আমরা বলতে পারি, আরমাগিদোনের সময়ে যিহোবার সমস্ত উপাসক সুরক্ষিত থাকবে?

১৭ আপনি কি আরও মেষের অংশ? এর উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে যখন আরমাগিদোন শুরু হবে, তখন আপনাকে কী করতে হবে? আপনাকে শুধু যিহোবার উপর নির্ভর করতে হবে এবং তাঁর নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আপনাকে সেটাই করতে হবে, যেটা বাইবেলে লেখা রয়েছে: “তোমার অন্তরাগারে প্রবেশ কর, তোমার দ্বার সকল রুদ্ধ কর; অল্পক্ষণ মাত্র লুক্কায়িত থাক, যে পর্য্যন্ত ক্রোধ অতীত না হয়।” (যিশা. ২৬:২০) এটা জেনে কি আপনি স্বস্তি পান না? সেইসময় যিহোবার সমস্ত উপাসক সুরক্ষিত থাকবে, তা তারা স্বর্গে হোক বা পৃথিবীতে। প্রেরিত পৌলের মতো আমরাও নিশ্চিত থাকতে পারি, ‘কি সরকার, কি বর্তমান বিষয়, কি আসন্ন বিষয়, কোনো কিছুই ঈশ্বরের প্রেম থেকে আমাদের আলাদা করতে পারবে না।’ (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) সবসময় মনে রাখবেন: যিহোবা আপনাকে খুব ভালোবাসেন এবং তিনি কখনো আপনাকে ছেড়ে দেবেন না!

যখন শেষ অভিষিক্ত খ্রিস্টান স্বর্গে চলে যাবে,

  • তখন আরও মেষদের প্রতি কী ঘটবে না?

  • তখন কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, বিশুদ্ধ উপাসনা আর দূষিত হবে না?

  • তখন কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা তাঁর লোকদের যত্ন নিয়ে যাবেন?

গান ১৪৮ যিহোবা উদ্ধার করেন