যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য
বাবা-মায়ের ডিভোর্স হতে চলেছে, এখন আমি কী করতে পারি?
ছেলে-মেয়েরা যত সমস্যার মুখোমুখি হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হল, যখন তাদের বাবা-মায়ের মধ্যে ডিভোর্স হয়। তুমি কীভাবে এই বেদনাদায়ক পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করবে?
এই প্রবন্ধে জানা যাবে
তিনটে বিষয় যা তোমার করা উচিত নয়
১. নিজের ঘাড়ে দোষ নেওয়া
“আমার মাকে বলতে শুনেছি যে, আমার জন্মের পর থেকেই বাবা-মায়ের মধ্যে যত সমস্যা শুরু হয়েছে। তাই মনে হয় যে, আমার কারণেই বাবা-মায়ের বিয়ে ভেঙে গিয়েছে।”—ডায়ানা।
এটা মনে রেখো: তোমার জন্য তাদের ডিভোর্স হয়নি। এটা তাদের নিজেদের সমস্যার কারণে হয়েছে। তাদের সমস্যাগুলোর জন্য তুমি দায়ী নও আর তুমি সেগুলো সমাধানও করতে পারবে না। তাদের বিবাহিত জীবনে যে-সমস্যাগুলো আছে, সেগুলোর দায়ভার তাদের নিজেদেরই নিতে হবে।
২. বিরক্ত হয়ে থাকা
“আমি বাবার উপর খুবই রেগে আছি, কারণ সে মায়ের প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছে। আমার পক্ষে তাকে আবারও বিশ্বাস করা অনেক কঠিন।”—রিয়ানা।
এটা মনে রেখো: বাবা-মায়ের মধ্যে যে-সমস্যাগুলো চলছে, তাতে তোমার রেগে থাকা ও মন খারাপ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে, রাগ ধরে রাখাটা তোমার পক্ষে ভালো নয়, কারণ এতে তোমার শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে। তাই, বিরক্তি পুষে রাখাটা হল এমন যেন, তুমি নিজে বিষ খাচ্ছ আর আশা করছ যে, অন্যজন অসুস্থ হয়ে পড়বে। a
৩. নিজের বিয়েটা সুখের হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ করা
“আমার খুব ভয় হয় যে, বাবার মতো আমারও একই অবস্থা হবে কি না। আমি ভাবি যে, আমার যদি বিয়ে হয় আর সন্তান হয়, তা হলে আমিও তাদের মতো একই পরিস্থিতিতে পড়ব আর আমারও ডিভোর্স হয়ে যাবে।”—জেসিকা।
এটা মনে রেখো: বাবা-মায়ের বিয়ে ভেঙে গিয়েছে বলে তোমার বিয়েও যে ভেঙে যাবে, এমনটা নয়। আসলে, তাদের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার এই ঘটনা থেকে তুমি মূল্যবান কিছু শিখতে পারো; যেমন, যাকে তুমি বিয়ে করবে তার মধ্যে কোন কোন গুণ থাকলে ভালো হয়। এ ছাড়া, একজন ভালো বিবাহসাথি হয়ে ওঠার জন্য তোমার নিজের মধ্যে কোন কোন গুণ গড়ে তোলা উচিত, সেই বিষয়েও তুমি মনোযোগী হতে পারবে।
তিনটে বিষয় যা তুমি করতে পারো
১. কথা বলা চালিয়ে যাও। যে-সমস্ত লোকেরা তাদের নেতিবাচক অনুভূতি অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে পারে না, তারা প্রায়ই মদ বা ড্রাগের মত ক্ষতিকারক অভ্যাসগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ওই সমস্ত পথে না গিয়ে, নীচে দেওয়া বিষয়গুলো করার চেষ্টা করে দেখতে পারো:
বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলো। যদি বাবা-মায়ের মধ্যে কোনো একজন বা দু-জনেই, তাদের সমস্যার মধ্যে তোমাকে জড়াতে চায়, তা হলে দৃঢ়ভাবে কিন্তু শান্ত হয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করো যে, এটা তোমার কতটা ক্ষতি করছে। তুমি যদি এই ব্যাপারে সরাসরি তাদের সঙ্গে কথা বলতে না পারো, তা হলে সেগুলো লিখে জানাতে পারো।
বিশ্বস্ত কোনো বন্ধুর সঙ্গে কথা বলো। তোমার বন্ধু যদি তোমার কথা শুধুমাত্র মন দিয়ে শোনে, তা হলেও তুমি অনেক স্বস্তি পাবে। বাইবেল এই বিষয়ে বলে, “প্রকৃত বন্ধু সবসময় ভালোবাসা দেখায় আর সে বিপদের সময়ে নিজের ভাই বলে প্রমাণিত হয়।”—হিতোপদেশ ১৭:১৭.
সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে কথা বলো। যিহোবা ঈশ্বর, যিনি ‘প্রার্থনা শুনে থাকেন,’ তিনি সবসময় তোমার কথা শুনবেন। (গীতসংহিতা ৬৫:২) বাইবেল জানায় যে, তুমি তোমার “সমস্ত উদ্বিগ্নতার বোঝা তাঁর উপর ফেলে দাও, কারণ তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।”—১ পিতর ৫:৭.
বাবা না কি মা, কার কাছে গিয়ে তুমি শান্তভাবে, ঠিকঠাক করে গুছিয়ে কথা বলতে পার?
তোমার বিশ্বস্ত বন্ধুদের মধ্যে (সমবয়সি বা প্রাপ্তবয়স্ক) কার কার কাছ থেকে তুমি ধৈর্য ধরার জন্য সাহায্য পেতে পার?
নির্দিষ্ট কোন বিষয়গুলো নিয়ে তুমি প্রার্থনা করতে পার?
২. পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নাও
তোমার বাবা-মায়ের ডিভোর্সের ফলে তোমাকে অনেক কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হতে পারে; যেমন, নতুন ঘর, নতুন স্কুল, তোমার জন্য প্রয়োজনীয় খরচের পরিমাণ, এমনকী নতুন বন্ধুবান্ধব। এটা ঠিক যে, এই পরিস্থিতিটা তোমার জন্য অনেক হতাশাজনক ও চাপপূর্ণ আর মনে হতে পারে, তোমার জীবন পুরোপুরি তছনছ হয়ে গিয়েছে। কোন বিষয়টা তোমাকে এই পরিবর্তনগুলো আরেকটু সহজভাবে মেনে নিতে সাহায্য করবে? নতুন পরিস্থিতিতে কীভাবে তুমি মানিয়ে নেবে, তার উপর মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করো।
বাবা-মায়ের ডিভোর্সের কারণে তোমাকে সবচেয়ে বড়ো কোন পরিবর্তনটা করতে হয়েছিল?
এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তুমি কোন কোন পদক্ষেপ নিতে পার?
৩. তোমার ক্ষমতাগুলো চিহ্নিত করো
এটা ঠিক যে, তোমার বাবা-মায়ের ডিভোর্সের কারণে তুমি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাক। তবে, এই পরিস্থিতি তোমার নিজের মধ্যে থাকা ক্ষমতাগুলোকে জানতে সাহায্য করবে, এমনকী নতুন কিছু শিখতেও সাহায্য করবে। জেরেমির ১৩ বছর বয়সে তার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। সে বলে, “আমার বাবা-মায়ের ডিভোর্সের ঘটনাটা আমাকে আরও দায়িত্বশীল হতে শেখায়। যেহেতু ভাই-বোনদের মধ্যে আমিই বড়ো, তাই মাকে আগের চেয়ে বেশি সাহায্য করতে হয়েছিল আর এর পাশাপাশি ছোটো ভাইয়েরও দেখাশোনা করতে হয়েছিল।”
বাবা-মায়ের ডিভোর্সের কারণে তোমার মধ্যে কোন ক্ষমতাগুলো আছে বলে তুমি বুঝতে পেরেছ?
এই ক্ষমতাগুলো কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে বলে তুমি মনে কর?
a আরও জানার জন্য, “How Can I Control My Anger?” শিরোনামের প্রবন্ধটা পড়ো