পরিবারের জন্য সাহায্য | বিয়ে
কীভাবে দীর্ঘসময়ের দাম্পত্য জীবনে বিবাহবিচ্ছেদ এড়ানো যায়?
১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ বছর এবং তার চেয়ে বেশি বয়সের ব্যক্তিদের বিবাহবিচ্ছেদের হার দ্বিগুণ বেড়েছে এবং ৬৫ বছরেরও বেশি বয়সের ব্যক্তিদের বিবাহবিচ্ছেদের হার তিনগুণ বেড়েছে। দীর্ঘসময়ের দাম্পত্য জীবনে বিবাহবিচ্ছেদের কারণ কী? এই কারণ থেকে কীভাবে আপনি আপনার বিবাহ বন্ধনকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন?
এই প্রবন্ধে রয়েছে
দীর্ঘসময়ের দাম্পত্য জীবনে বিবাহবিচ্ছেদের কারণগুলো কী?
প্রায়ই দেখা গিয়েছে, বয়স্ক দম্পতিরা যাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়, পরবর্তী সময়ে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর পছন্দ অপছন্দ ভিন্ন হতে শুরু করে এবং তারা মনে করে যে, তাদের মধ্যে খুবই কম মিল রয়েছে। সন্তানেরা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায় এবং অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে শুরু করে, তখন কোনো কোনো দম্পতি হয়তো বুঝতে পারে যে, তারা এত দীর্ঘসময় ধরে শুধু বাবা মায়ের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছে। কিন্তু, তারা ভুলে গিয়েছে কীভাবে একজন ভালো স্বামী ও স্ত্রী হওয়া যায়।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে গবেষকেরা স্বামী-স্ত্রীদের তাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিতে বলে। তারা স্বামী-স্ত্রীদের নিজেদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করার জন্য পরামর্শ দেয়: ‘আমি কি এই বিয়েতে সুখী?’ ‘এই বিয়ে কি আমাকে একজন ভালো ব্যক্তি হতে সাহায্য করছে?’ ‘আমার বিবাহসাথি কি আমাকে ভালোবাসে এবং মূল্যবান বলে মনে করে?’ বর্তমানে লোকদের চিন্তাধারা হল, যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর “না” হয়, তা হলে আপনার বিবাহবিচ্ছেদ করা উচিত এবং নতুন করে জীবন শুরু করা উচিত।
লোকেরা বিবাহবিচ্ছেদকে আর খারাপ বিষয় বলে মনে করে না। একজন সমাজবিজ্ঞানী এরিক ক্লাইনেনবার্গ বলেন, “কিছু সময় আগে যদি কোনো ব্যক্তি তার বিবাহসাথির প্রতি সন্তুষ্ট হতেন না এবং বিবাহবিচ্ছেদ করতে চাইতেন, তা হলে তাকে সেই সিদ্ধান্তের যথাযথ কারণ দিতে হত। তবে, বর্তমানে এর ঠিক বিপরীতটা ঘটতে দেখা যায়। বর্তমানে কেউ যদি তার বিবাহিত জীবনে সন্তুষ্ট না হয়, তা হলে তাকে সেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকার জন্য যথাযথ কারণ দিতে হয়। কারণ আজ সমাজের অনেক লোক মনে করে, তাদের সেটাই করা উচিত, যেটা তারা নিজের জন্য ভালো বলে মনে করে।” a
এটা ঠিক যে, বিবাহবিচ্ছেদের ফলে কিছু সমস্যার সমাধান হয়, তবে আরও নতুন সমস্যা দেখা দেয়। উদাহরণ স্বরূপ, একটা গবেষণা দেখায়, “দীর্ঘসময়ের দাম্পত্য জীবনে বিবাহবিচ্ছেদের ফলে, লোকদের আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, বিশেষ করে মহিলাদের।”
চিন্তা করার মতো আরও কিছু বিষয় রয়েছে। Don’t Divorce নামক একটি বই বলে, “আপনি এক নতুন জীবন শুরু করতে পারেন ঠিকই, কিন্তু আপনি তো সেই একই ব্যক্তি থাকবেন।” এ ছাড়া, আরেকটা বই বলে, “আপনি আপনার কথাবার্তার ধরনে কোন পরিবর্তন করেছেন, যে-ধরনটা আগে আপনার বিবাহসাথির সঙ্গে ভালো ফল নিয়ে আসেনি? আপনি আপনার আচরণে কোন পরিবর্তন করেছেন, যখন কোনো সমস্যা বা মতপার্থক্য দেখা দেয়?” b
আপনি যা করতে পারেন
পরিবর্তন মেনে নিন। কোনো সম্পর্কই সবসময় একইরকম থাকে না। আপনার বিবাহসাথির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক পরিবর্তন হতে পারে। আর এর কারণ হয়তো আপনার সন্তানেরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কোথাও দূরে চলে গিয়েছে অথবা আপনাদের দু-জনের মধ্যে পছন্দের অমিল দেখা দিয়েছে। বিষয়গুলো অতীতে কেমন ছিল, সেটা নিয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে কীভাবে সেই পরিস্থিতি বর্তমানে আরও ভালো করা যায়, সেটা নিয়ে চিন্তা করুন।
বাইবেলের নীতি: ”এমনটা বলো না, ‘আগেকার দিনগুলো এখনকার চেয়ে আরও ভালো ছিল।’ কারণ এই কথা বলা বিজ্ঞতার কাজ নয়।”—উপদেশক ৭:১০.
আপনার সাথির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন। আপনি কি আপনার বিবাহসাথির নতুন পছন্দের বিষয়গুলো মেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন? আপনি কি নতুন কিছু করার বিষয়ে চিন্তা করতে পারেন, যেটা আপনারা দু-জনেই উপভোগ করবেন? আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত একসঙ্গে সময় কাটানো, যাতে আপনি ও আপনার সাথি একই ছাদের নীচে থাকা দু-জন আলাদা ব্যক্তি নয়, বরং বিবাহসাথির মতো অনুভব করেন।
বাইবেলের নীতি: “প্রত্যেকে কেবল নিজের উপকারের জন্য চেষ্টা না করুক, কিন্তু অন্যের উপকারের জন্য চেষ্টা করুক।”—১ করিন্থীয় ১০:২৪.
ভালো আচার-আচরণ বজায় রাখুন। দীর্ঘসময় একসঙ্গে আছেন বলে একে অপরের সঙ্গে ভালো আচরণ দেখানো বন্ধ করে দেবেন না। আপনার বিবাহসাথির প্রতি সম্মান দেখিয়ে কথা বলুন, ঠিক যেমনটা আপনি বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা করার সময় কথা বলতেন। একে অন্যের প্রতি “প্লিজ”এবং “থ্যাঙ্ক ইউ” শব্দগুলো ব্যবহার করুন। প্রতিদিন আপনার সাথির প্রতি ভালোবাসা দেখান এবং আপনার সাথি আপনার জন্য যা-কিছু করে, সেগুলোর জন্য তার প্রশংসা করুন।
বাইবেলের নীতি: “একে অন্যের প্রতি সদয় হও, কোমল সমবেদনা দেখাও।”—ইফিষীয় ৪:৩২.
ভালো মুহূর্তগুলো মনে করুন। আপনি বিয়ের ছবি অথবা অন্যান্য সময় কাটানো বিভিন্ন ভালো মুহূর্তগুলোর ছবি আপনার সাথির সঙ্গে দেখুন। এমনটা করার ফলে আপনি আবারও একে অপরের প্রতি প্রেম এবং সম্মান বজায় রাখতে পারবেন।
বাইবেলের নীতি: “তোমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ স্ত্রীকে নিজের মতো ভালোবেসো; আর স্ত্রীর উচিত, যেন সে তার স্বামীকে গভীর সম্মান করে।”—ইফিষীয় ৫:৩৩.
a Going Solo—The Extraordinary Rise and Surprising Appeal of Living Alone শিরোনামের বই থেকে।
b বিবাহবিচ্ছেদের একমাত্র শাস্ত্রীয় ভিত্তি হল ব্যভিচার। (মথি ১৯:৫, ৬, ৯) “Does the Bible Permit Divorce?” শিরোনামের অনলাইন প্রবন্ধ দেখুন।