সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

পরিবারের জন্য সাহায্য | সন্তান লালনপালন

কোনো কাজ কঠিন বলে মনে হলেও, সন্তানদের হাল ছেড়ে না দিতে শেখানো

কোনো কাজ কঠিন বলে মনে হলেও, সন্তানদের হাল ছেড়ে না দিতে শেখানো

 “আমি এটা করতে পারছি না!” আপনার ছেলে চিৎকার করে বলছে। “এটা করা অনেক কঠিন! আমি এটা কখনো শিখতে পারব না!” কাজটা যদি কঠিন বলে মনে হয়, তা হলে সে তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দেয়। আপনার ছেলে যে কাজটা করার জন্য লড়াই করছে অথচ পারছে না, সেটা দেখতে আপনার একদম ভালো লাগে না। কিন্তু আপনি চান, সে যেন এই কঠিন কাজগুলো করতে শেখে। এমন পরিস্থিতিতে, আপনার কি সঙ্গে সঙ্গে তাকে সাহায্য করা উচিত? আপনি কি বলবেন, কাজটা তাকে আর করতে হবে না? না কি আপনি সন্তানকে হাল ছেড়ে না দেওয়ার ব্যাপারে শেখাবেন?

আপনার যা জানা উচিত

 হাল ছেড়ে না দেওয়া শেখানো গুরুত্বপূর্ণ। যখন বাবা-মায়েরা ছেলে-মেয়েদের কঠিন কাজ করতে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে শেখায়, তখন তারা স্কুলে আরও ভালো ফলাফল করে, তাদের শরীর ও মন খুব ভালো থাকে এবং বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। এর বিপরীতে, সন্তান ব্যর্থ হবে ভেবে, বাবা-মা যখন কঠিন কাজটা করতে দিতে চায় না, তখন দেখা যায় যে, পরবর্তী সময়ে সেই সন্তান হতাশ থাকে এবং নিজেকে কোনো কাজের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করে না আর যুবক হয়ে উঠলেও সে তার জীবনে ঠিক ততটা সন্তুষ্টি খুঁজে পায় না।

 হাল ছেড়ে না দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে গেলে মনোবল বৃদ্ধি পায়। ছোটো শিশুরাও এমনকী কঠিন কাজ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে পারে আর এতে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। একটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ১৫ মাসের বাচ্চারাও একটা কঠিন কাজ করার জন্য অনেক চেষ্টা করে, যদি সে বড়োদেরকে সেই কাজটা অনায়াসে শেষ করার পরিবর্তে, যথেষ্ট প্রচেষ্টা করতে দেখে।

 “আমার মনে পড়ে, মেয়েদেরকে আমি জুতোর ফিতে বাঁধা শিখিয়েছিলাম। এটা এক দিনে শিখে ফেলা যায় না। প্রতি বার জুতোর ফিতে বাঁধার সময় তারা একা একা ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে মনে করার চেষ্টা করত যে, আমি কীভাবে তাদের শিখিয়েছিলাম। এরপরেই, আমি তাদের সাহায্য করতে যেতাম। এভাবে, কয়েক মাস ধরে তারা ফিতে বাঁধার চেষ্টা করে আর মাঝে মাঝে ধৈর্য হারিয়ে কান্নাকাটিও করে। তবে, একসময় তারা তা শিখে গিয়েছিল। যদি আমি তাদেরকে ফিতে ছাড়া জুতো কিনে দিতাম ,তা হলে আমাকে এত ঝামেলা পোহাতে হত না। কিন্তু কখনো কখনো বাবা-মাকেও ধৈর্য ধরা শিখতে হয়, যাতে সন্তানেরাও হাল ছেড়ে না দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া শিখতে পারে।”—কলিন।

 হাল ছেড়ে না দেওয়ার মনোভাব দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সন্তানেরা যখন কোনো একটা কাজ করার প্রচেষ্টা করতে থাকে, তখন কোনো কোনো বাবা-মা তাদের সেই প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দেয় না আর তারা সেটা অনিচ্ছাকৃতভাবে করে থাকে। কীভাবে? যেমন, বাচ্চারা কোনো একটা কাজ করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, তখন সেই সন্তান কেঁদে ফেলবে বা মন খারাপ করবে ভেবে, কোনো কোনো বাবা-মা সঙ্গে সঙ্গে সেই কাজটা করে দেয়। তবে, এর একটা ক্ষতিকর দিকও আছে। জেসিকা লেহেই নামে একজন লেখিকা বলেন, “সন্তানেরা যখনই কোনো কঠিন কাজের সম্মুখীন হয় … আর প্রতি বারই যদি বাবা-মা নিজেরাই সন্তানকে কাজটা করে দেয়, তখন আসলে তারা সেই সন্তানকে স্পষ্টভাবে এটা বুঝিয়ে দেয় যে, সে এখনও ছোটো, সে পারবে না আর তার উপর ভরসা করা যায় না।” a এর ফলাফল কী হয়? সন্তানরা ভবিষ্যতে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে খুব সহজেই হাল ছেড়ে দেয় কারণ তারা মনে করতে থাকে, বড়োদের সাহায্য ছাড়া তারা কাজটা করতে পারবে না।

বাবা-মায়েরা সন্তানের কোনো কঠিন কাজ নিজেরা করে না দিয়ে তাকে হাল ছেড়ে না দেওয়া শেখাতে পারে।

আপনি যা করতে পারেন

 পরিশ্রম করতে শেখান। বাবা-মা তাদের সন্তানদের বয়স অনুযায়ী ঘরের টুকিটাকি কাজ করতে দেওয়ার মাধ্যমে হাল ছেড়ে না দিয়ে, ধৈর্য ধরে কোনো কাজ শেষ করা শেখাতে পারে। যেমন, তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সের সন্তানদের তাদের খেলনাগুলো গুছিয়ে রাখতে আর কাপড় ধুতে বড়োদের সাহায্য করতে বলা। তারা আরেকটু বড়ো হলে, তাদেরকে বাজার থেকে আনা জিনিসগুলো গুছিয়ে রাখতে, খাবার আগে টেবিল সাজাতে বা খাবার পরে টেবিল পরিষ্কার করতে, ময়লা ফেলতে এবং কিছুটা নোংরা হয়েছে এমন জায়গাগুলো পরিষ্কার করতে বলা। কিশোর বয়সে তারা আরেকটু বেশি কাজ করতে পারে, যেমন ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা আর কিছু মেরামত করা। তারা হয়তো সবসময় ঘরের কাজগুলো করতে চাইবে না, কিন্তু বাবা-মা দায়িত্ব দিয়ে কাজগুলো করতে শেখালে, পরবর্তী সময়ে তারা উপকৃত হয়। কীভাবে তারা উপকৃত হয়? তারা পরিশ্রমী হয়ে ওঠে আর বড়ো হওয়ার পর, যখন কঠিন কোনো কাজ করতে হয়, তখন সহজে হাল ছেড়ে দেয় না।

 বাইবেলের নীতি: “সব ধরনের পরিশ্রম থেকেই ভালো ফল লাভ করা যায়।”—হিতোপদেশ ১৪:২৩.

 “সন্তানদের শুধুমাত্র ব্যস্ত রাখার জন্য কোন কাজ করতে দেবেন না। সেটা কারোরই ভালো লাগবে না, এমনকী বাচ্চারাও সেটা পছন্দ করে না। আপনার কাজে সাহায্য করার জন্য তাকে কিছু করতে বলুন। সন্তান যদি ছোটো হয়, তা হলে সে নাগাল পায়, এমন ফার্নিচারগুলো মোছামুছি করতে বলুন। আপনি যখন গাড়ি পরিষ্কার করেন, তখন তাকে সেই জায়গাগুলো পরিষ্কার করতে বলুন, যেখানে আপনার হাত সহজে যাচ্ছে না। তারপর, সেই কাজটার জন্য সে যে-পরিশ্রম করেছে, সেজন্য সঙ্গে সঙ্গে প্রশংসা করুন।”—ক্রিস।

 কঠিন কোনো কাজ করার সময় সন্তানকে প্রশিক্ষণ দিন। কখনো কখনো সন্তানেরা খুব সহজেই হাল ছেড়ে দেয় কারণ তারা জানে না যে, কীভাবে কাজটা শেষ করতে হয়। তাই, তাকে নতুন কিছু শেখানোর সময়ে এখানে দেওয়া উপায়গুলো কাজে লাগাতে পারেন। প্রথমত, কাজটা আপনি নিজে করুন আর সন্তানকে সেটা ভালো করে দেখতে বলুন। এরপর, একসঙ্গে সেই কাজটা করুন। তারপর, সন্তানকে সেই কাজটা করতে দিন আর মাঝে মাঝে তাকে বলে দিন। শেষে, পুরো কাজটা তাকে একা একা করতে দিন।

 বাইবেলের নীতি: “আমি তোমাদের জন্য এক আদর্শ স্থাপন করলাম, যেন আমি তোমাদের প্রতি যেমনটা করলাম, তোমরাও তেমনটা কর।”—যোহন ১৩:১৫.

 “আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝেছি যে, যদি আমরা চাই যে সন্তানেরা কোনো কাজে সহজেই হাল ছেড়ে না দিক, তা হলে বাবা-মা হিসেবে আমাদেরকেই প্রথমে তা করে দেখাতে হবে।”—ডগ।

 সন্তানকে এটা মেনে নিতে সাহায্য করুন যে, প্রচেষ্টা করা সত্ত্বেও যে-কেউই ব্যর্থ হতে পারে। সন্তানকে আপনার নিজের জীবনের কোনো ঘটনার কথা বলুন, যখন আপনি হাল ছেড়ে দেননি বলে পরে উপকার পেয়েছিলেন। তাকে বুঝিয়ে বলুন যে, নতুন কোনো কিছু করতে গেলে সেটা কঠিন লাগাটা স্বাভাবিক আর সে ভুল করলেও, সেই ভুলগুলো তাকে শিখতে সাহায্য করবে। তাকে আশ্বস্ত করুন যে, সে ব্যর্থ হলেও তাকে আপনি এখনও আগের মতোই ভালোবাসেন। কাজ করার মাধ্যমে যেমন শরীরের পেশি শক্তিশালী হয়, তেমনি সন্তানকে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে দিলে, তার হাল ছেড়ে না দেওয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়। তাই, সন্তান যখন কোনো কিছু করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, তখন সঙ্গে সঙ্গে তাকে সাহায্য করার পরিবর্তে, ওই অবস্থায় তাকে কিছু সময় থাকতে দিন। হাও চিল্ড্রেন সাক্‌সিড বইটা বলে, “ছোটোদের ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার সবচেয়ে ভালো উপায় হল, তাদের এমন কোনো কিছু করার চেষ্টা করতে দেওয়া, যেখানে সত্যিকার অর্থে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

 বাইবেলের নীতি: “যৌবন কালে জোয়াল বহন [কঠোর প্রচেষ্টা] করা মানুষের জন্য ভাল।”—বিলাপ ৩:২৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

 “যখন আপনি আপনার সন্তানকে কঠিন কোনো কিছু করার ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত প্রচেষ্টা বা লড়াই করতে দেন আর তারা জানে যে, বাবা-মা তাদের পাশে আছে, তখন তারা উপকৃত হয়। কিছু সময় পরে, তাদের কাছে ধীরে ধীরে তা সহজ হয়ে ওঠে আর সেই কাজে দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস উভয়ই গড়ে ওঠে, যেটা হাল ছেড়ে না দেওয়ার কারণেই সম্ভব হয়।”—জর্ডান।

 বুদ্ধির নয় বরং তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করুন। “শাবাশ, খুব ভালো হয়েছে, তুমি তো দেখি খুব স্মার্ট!” এটা বলার পরিবর্তে, আপনি এভাবে বলতে পারেন, “শাবাশ, খুব ভালো হয়েছে, তুমি এত চেষ্টা করেছ দেখে আমি সত্যি খুব খুশি হয়েছি।” বুদ্ধির চেয়ে প্রচেষ্টার প্রশংসা করা কেন ভালো? এই বিষয়ে ড: ক্যারল ডুয়েক বলেন, ছোটো ছেলে-মেয়েদের বুদ্ধির প্রশংসা করা হলে “সন্তানেরা যখন কোনো কঠিন কাজের সম্মুখীন হয় বা কোনো ভুল করে, তখন তারা নিজেদের ক্ষমতার উপর সন্দেহ করতে শুরু করে।” তিনি আরও বলেন, “যদি বাবা-মায়েরা সন্তানদের কোনো উপহার দিতে চায়, তা হলে সবচেয়ে ভালো যে-উপায়ে তারা তা করতে পারে সেটা হল, সন্তানদের এটা শেখানো যে, যেভাবে চ্যালেঞ্জ ভালোবাসতে হয়, ভুলগুলো থেকে শেখা যায়, কঠোর পরিশ্রমকে ভালোবাসা যায়, কোনো কাজ নতুন উপায়ে করতে শেখা যায় আর শেখার মনোভাব বজায় রাখতে হয়। এভাবে শেখালে তারা যে শুধুমাত্র প্রশংসা পাওয়ার জন্যই কাজ করবে, এমনটা নয়।” b

 বাইবেলের নীতি: “একজন ব্যক্তি যে-প্রশংসা পায়, সেটার দ্বারা সে পরীক্ষিত হয়।”—হিতোপদেশ ২৭:২১.

a দ্যা গিফ্ট অভ ফেইলিয়র বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

b মাইন্ডসেট বই থেকে নেওয়া হয়েছে।