“যিহোবা আমাদের জীবন বাঁচিয়েছেন”
২০০৫ সালে ভারতে বসবাসরত সৌভাগ্য নামে এক মহিলা, মৃত্যুতে তার প্রিয় স্বামীকে হারান। এই অবস্থায় তার নিজের ও তার তিন বছরের মেয়ে মেঘনার যত্ন নিতে হত। বেঁচে থাকার জন্য সৌভাগ্যর বেশ কিছু টাকাপয়সারও প্রয়োজন ছিল কিন্তু তার পক্ষে তা উপার্জন করা খুবই কঠিন ছিল।
তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে যখন সৌভাগ্য দেখেন যে, তাদের নিজের বলতে আর কেউ নেই। তার পরিবারের লোকজন তাদের সঙ্গে ভিখারির মত ব্যবহার করে আর তারা বার বার বলতে থাকে যে, তাদের কাছে তারা একটা বোঝার মত। সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য সৌভাগ্য স্থানীয় একটা গির্জায় যেতে শুরু করেন কিন্তু তারা খুব গরিব ছিল বলে সবাই তাদের নীচু চোখে দেখত। সৌভাগ্য একটা কাজ খুঁজতে থাকেন যাতে তিনি নিজেদের ভরণ-পোষণ জোগাতে পারেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও তিনি কোনো কাজ খুঁজে পাননি।
সৌভাগ্য বলেন, “আমার আর কোন আশাই ছিল না, তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিই। তবুও আমি চিন্তা করতে থাকি যে, আমাকে ছাড়া আমার এতটুকু ছোট্ট মেয়ের কী হবে? তাই, আমি দু-জনের জীবনই শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।” সৌভাগ্য যখন মনে করলেন যে, তিনি একেবারে অযোগ্য আর তাকে কেউ ভালোবাসে না, তখন তিনি বিষ কিনতে গেলেন।
এরপর সৌভাগ্য যখন ট্রেনে করে ঘরে ফিরছিলেন, সেইসময় এলিজাবেথ নামে এক সাক্ষি বোন তার সঙ্গে আলাপ করেন আর কথা বলতে শুরু করেন। এলিজাবেথ যখন জানতে পারেন যে, তার কোন কাজকর্ম নেই তখন তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে সৌভাগ্যকে বলেন যে, কাজ খোঁজার ব্যাপারে তিনি তাকে সাহায্য করবেন। এলিজাবেথ তাকে এও বলেন যে, তিনি তার এক বাইবেল স্টাডিতে যাচ্ছেন। এটা শুনে সৌভাগ্য খুব আশ্চর্য হয়ে যান কারণ এর আগে তিনি অনেকগুলো গির্জায় গেলেও, কাউকে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শোনেননি। বাইবেল স্টাডিতে কী হয় তা জানার জন্য এলিজাবেথ সৌভাগ্যকে আমন্ত্রণ জানান।
ঘরে ফিরে আসার পরেও সৌভাগ্যের মাথায় আত্মহত্যার পরিকল্পনাটা ঘুরছিল। কিন্তু সেই সময় তার এক আত্মীয় মেঘনাকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিল। তাই সৌভাগ্য অপেক্ষা করতে থাকেন যে, কখন তার মেয়ে ফিরবে আর তিনি দু-জনার জীবনই শেষ করে দেবেন।
কিন্তু এরই মধ্যে সৌভাগ্য এলিজাবেথের বাড়ি যান আর তিনি তাকে সাদরে ঘরে ডেকে নেন। কথা বলার সময়, এলিজাবেথ তাকে, বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইটা দেখান। সৌভাগ্য যখন “মৃতেরা কোথায়?” এই অধ্যায়টা দেখেন, তখন সেটা সম্বন্ধে বেশি করে জানতে চান কারণ তার স্বামী কিছুদিন আগেই মারা গিয়েছেন। সেই দিনেই সৌভাগ্য বাইবেল স্টাডি শুরু করতে রাজি হয়ে যান।
পরের সপ্তাহে একটা সম্মেলনে যাওয়ার জন্য এলিজাবেথ সৌভাগ্যকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি রাজি হয়ে যান। সেখানকার বক্তৃতাগুলো তাকে এতটাই প্রভাবিত করে যে, তিনি একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর সম্মেলন থেকে ফিরে আসার পর, তিনি একটা কাজও খুঁজে পান।
সৌভাগ্য নিয়মিতভাবে বাইবেল অধ্যয়ন চালিয়ে যান। এখন তিনি আর জীবন শেষ করে দেওয়ার কথা চিন্তা করেন না কারণ বেঁচে থাকার জন্য একটা উদ্দেশ্য তিনি খুঁজে পেয়েছেন। পরে তিনি বাপ্তিস্ম নেন আর কিছু সময় পর তার মেয়ে মেঘনাও একই সিদ্ধান্ত নেয়। এখন তারা দু-জনেই নিয়মিত অগ্রগামী আর ভারতবর্ষের এক অনুবাদ অফিসে মেঘনা রিমোট ভলেন্টিয়ার হিসেবে সেবা করছে।
সৌভাগ্য ও মেঘনা এলিজাবেথকে অনেক ধন্যবাদ দিতে চায় কারণ সেই বোন ট্রেনে খুবই আগ্রহ নিয়ে সৌভাগ্যর সঙ্গে কথা বলেছিলেন ও বাইবেলের আশা জানিয়েছিলেন। তারা যিহোবার প্রতিও খুব কৃতজ্ঞ। মেঘনা বলে, “যদি সেই দিন আমাদের সত্য জানানো না হত, তাহলে অনেক দিন আগেই আমরা কবরের তলায় শুয়ে থাকতাম। আমরা এখন খুবই সুখী। মা আর আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি যে, কখন বাবাকে জড়িয়ে ধরব, যিহোবার সম্বন্ধে জানাব আর বলব যে, কীভাবে তিনি আমাদের জীবন বাঁচিয়েছেন।”