যিহোবার সাক্ষিদের বিয়ে প্রায়ই এক সাধারণ এবং মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হয়ে থাকে আর সেখানে এক সংক্ষিপ্ত বাইবেলভিত্তিক বক্তৃতা দেওয়া হয়। এরপর, সামাজিক মেলামেশা অথবা অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকতে পারে, যার মধ্যে ভোজও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। a যিশু তাঁর পরিচর্যার শুরুর দিকে কান্না নগরে এইরকম এক ভোজে যোগ দিয়েছিলেন।—যোহন ২:১-১১.

•  বিয়ের অনুষ্ঠান কীভাবে করা হয়ে থাকে?

•  যিহোবার সাক্ষিদের বিয়ের অনুষ্ঠান কোথায় করা হয়ে থাকে?

•  কারা যোগ দিতে পারে?

•  যিহোবার সাক্ষিদের বিয়েতে অতিথিদের কেমন পোশাক পরা উচিত?

•  সেখানে কি উপহার নিয়ে যেতে হয়?

•  সেখানে কি টোস্টিং বা মদের গ্লাস উপরে তুলে শুভকামনা করা হয়?

•  নবদম্পতির উপর কি চাল অথবা রঙিন কাগজের টুকরো ছোড়া হয়?

•  সেখানে কি খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা থাকে?

•  সেখানে কি সংগীত অথবা নাচের ব্যবস্থা থাকে?

•  যিহোবার সাক্ষিরা কি বিবাহবার্ষিকী উদ্‌যাপন করে?

 এই অনুষ্ঠানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ হল বিয়ের বক্তৃতা, যেটা যিহোবার সাক্ষিদের একজন পরিচারক প্রায় ৩০ মিনিটে দিয়ে থাকেন। এই উষ্ণ ও গঠনমূলক আলোচনা এই বিষয়ে জোর দেয় যে, কীভাবে বাইবেল সেই দম্পতিকে এক স্থায়ী, প্রেমপূর্ণ ও আনন্দপূর্ণ বিয়ে উপভোগ করার জন্য সাহায্য করতে পারে।—ইফিষীয় ৫:৩৩.

 অনেক দেশে, সরকার যিহোবার সাক্ষিদের কোনো কোনো পরিচারককে বিয়ের আইনগত অংশটুকু সম্পাদন করার অনুমতি দিয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে, বক্তৃতার শেষের দিকে দম্পতি একে অন্যের কাছে বিয়ের অঙ্গীকার করে। এ ছাড়া, তারা হয়তো আংটি বদল করে। এরপর, সেই পরিচারক তাদের স্বামী ও স্ত্রী বলে ঘোষণা করেন।

 অন্যান্য দেশে, দম্পতিকে আইন অনুযায়ী সরকারি অফিসে বিয়ে করতে হয়। দম্পতি এই বিষয়টা বিয়ের বক্তৃতার কিছু সময় আগে করে থাকে। সরকারিভাবে বিয়ের সময় যদি অঙ্গীকার করা না হয়ে থাকে, তা হলে দম্পতি হয়তো বক্তৃতার শেষের দিকে তা করতে পারে। তারা যদি সরকারিভাবে বিয়ের সময় অঙ্গীকার করে থাকে আর বক্তৃতার সময় আবারও অঙ্গীকার করতে চায়, তা হলে সেটা অতীত কাল ব্যবহার করে বলতে হবে। বক্তৃতাটা নবদম্পতির জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ চেয়ে করা প্রার্থনা দিয়ে শেষ হয়।

 অনেক সাক্ষি তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান কোনো কিংডম হলে করা বেছে নেয়, যদি তা প্রাপ্তিসাধ্য হয়। b এরপর, দম্পতি যদি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান করে, তা হলে সেটার জন্য তারা অন্য জায়গা বেছে নেয়।

 বিয়ে যদি কিংডম হলে হয়, তা হলে সাধারণত সাক্ষি ও ন-সাক্ষি, উভয়ই যোগ দিতে পারে। দম্পতি যদি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে থাকে, তা হলে তারা ঠিক করে, কাদের সেখানে আমন্ত্রণ জানাবে।

 কিংডম হলে বিয়ের অনুষ্ঠানে যদিও নির্দিষ্ট পোশাক পরার প্রয়োজন নেই, তবে যিহোবার সাক্ষিরা মার্জিতভাবে ও মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে পোশাক পরার বিষয়ে বাইবেলের নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য যথাসাধ্য করে। আর অন্যেরা যখন একই বিষয় করে থাকে, তখন তা খুবই উত্তম হয়। (১ তীমথিয় ২:৯) দম্পতি যদি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে থাকে, তা হলে সেই ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য।

 বাইবেল আমাদের দয়াবান বা উদার হতে উৎসাহিত করে। (গীতসংহিতা ৩৭:২১) যিহোবার সাক্ষিরা বিয়েতে উপহার দিয়ে এবং উপহার পেয়ে খুশি হয়। (লূক ৬:৩৮) তবে, সাক্ষিরা উপহার দাবি করে না অথবা সবার সামনে উপহারদাতার নাম ঘোষণা করে না। (মথি ৬:৩, ৪; ২ করিন্থীয় ৯:৭; ১ পিতর ৩:৮) এইরকম প্রথা বাইবেলের শিক্ষার বিপরীত আর সেইসঙ্গে এটা উপস্থিত অতিথিদের অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।

 না। যিহোবার সাক্ষিরা টোস্টিং করে না কারণ এই প্রথা মিথ্যা ধর্ম থেকে এসেছে। c সাক্ষিরা অন্যান্য উপায়ে নবদম্পতির মঙ্গলকামনা করে থাকে।

 না। কিছু জায়গায় লোকেরা নবদম্পতির উপর চাল, রঙিন কাগজের টুকরো কিংবা এই ধরনের কিছু ছুড়ে থাকে। কারণ তারা বিশ্বাস করে, এটা সেই নবদম্পতিকে সৌভাগ্যশালী হতে আর সুখী এবং দীর্ঘজীবন লাভ করতে সাহায্য করবে। কিন্তু, যিহোবার সাক্ষিরা কুসংস্কারের সঙ্গে জড়িত যেকোনো প্রথা এড়িয়ে চলে। এর অন্তর্ভুক্ত হল সৌভাগ্য কামনা করা, যা বাইবেলের নীতির সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে।—যিশাইয় ৬৫:১১.

 কিংডম হলে বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবার বা পানীয় পরিবেশন করা হয় না। কোনো কোনো দম্পতি পরে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে থাকে, যেখানে খাবার কিংবা পানীয় পরিবেশন করা হতে পারে। (উপদেশক ৯:৭) যদি তারা মদ্য-জাতীয় পানীয় পরিবেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে তারা এটা নিশ্চিত করে, যেন সেটা পরিমিত মাত্রায় পরিবেশন করা হয় আর তা যেন কেবল তাদের জন্যই প্রাপ্তিসাধ্য হয়, যাদের মদ খাওয়ার মতো বৈধ বয়স হয়েছে।—লূক ২১:৩৪; রোমীয় ১৩:১, ১৩.

 দম্পতি যদি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে, তা হলে তারা সেখানে সংগীত অথবা নাচ অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। (উপদেশক ৩:৪) যে-সমস্ত সংগীত বেছে নেওয়া হয়, সেগুলো ব্যক্তিগত পছন্দ ও সংস্কৃতি অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে, তবে সেগুলো যেন রুচিসম্মত হয় এবং অতিথিদের উপর ভালো প্রভাব ফেলে। কিংডম হলে বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় প্রায়ই শাস্ত্রভিত্তিক সংগীত বাজানো হয়।

 বাইবেল বিবাহবার্ষিকী উদ্‌যাপন করাকে অনুমোদনও করে না আবার নিষেধও করে না। তাই, সাক্ষি দম্পতিরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা তাদের বিবাহবার্ষিকী পালন করবে কি না। যদি তারা বিবাহবার্ষিকী উদ্‌যাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে তারা হয় একান্তে কিংবা বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে তা উদ্‌যাপন করতে পারে।