সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের ‘ঝড়’ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে লোকেদের সতর্কবাণী শোনার প্রয়োজন রয়েছে!

ঈশ্বরের বিচার—তিনি কি সবসময় যথেষ্ট সতর্কবাণী দেন?

ঈশ্বরের বিচার—তিনি কি সবসময় যথেষ্ট সতর্কবাণী দেন?

একজন আবহাওয়াবিদ এটা বুঝতে পারেন যে, একটা শক্তিশালী ঝড় দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে এবং সেটা একটা বড়ো জনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাবে। যেহেতু তিনি লোকেদের নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তিত, তাই অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই তিনি লোকেদের সতর্ক করার জন্য যথাসাধ্য করেন।

একইভাবে যিহোবা বর্তমানে পৃথিবীর লোকেদের একটা ‘ঘূর্ণবায়ুর [‘ঝড়ের,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]’ বিষয়ে সতর্ক করছেন। এটা এমন এক ঝড়, যেটা আগে কখনো আসেনি। কীভাবে তিনি তা করছেন? আর কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, সতর্কবাণীর প্রতি সাড়া দেওয়ার জন্য তিনি লোকেদের যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন? উত্তর পাওয়ার জন্য প্রথমে আসুন, আমরা যিহোবার দেওয়া কয়েকটা সতর্কবাণী নিয়ে বিবেচনা করে দেখি, যেগুলো তিনি অতীতে প্রদান করেছিলেন।

ঈশ্বর যখন আগাম সতর্কবাণীগুলো দিয়েছিলেন

বাইবেলের সময়ে যিহোবা বিভিন্ন ‘ঝড়ের’ অথবা বিচারের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন, যেগুলো তিনি সেই ব্যক্তিদের উপর নিয়ে এসেছিলেন, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর আজ্ঞার অবাধ্য হয়েছিল। (হিতো. ১০:২৫; যির. ৩০:২৩) প্রতিটা ক্ষেত্রে তিনি অবাধ্য লোকেদের আগে থেকে সতর্ক করেছিলেন এবং তাদের বলেছিলেন যে, তাঁর বাধ্য হওয়ার জন্য তাদের কী করতে হবে। (২ রাজা. ১৭:১২-১৫; নহি. ৯:২৯, ৩০) লোকেরা যাতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করতে ইচ্ছুক হয়, সেই উদ্দেশে তাদের সাহায্য করার জন্য তিনি প্রায়ই পৃথিবীতে তাঁর অনুগত দাসদের ব্যবহার করেছিলেন, যাতে তারা তাঁর বিচার ঘোষণা করে এবং লোকেদের এটা বুঝতে সাহায্য করে যে, তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।—আমোষ ৩:৭.

নোহ হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যাকে যিহোবা তাঁর বিচার ঘোষণা করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। তিনি তার দিনের অনৈতিক ও দৌরাত্ম্যপূর্ণ ব্যক্তিদের সতর্ক করার জন্য অনেক বছর ধরে তাদের কাছে আসন্ন বিশ্বব্যাপী জলপ্লাবনের বিষয়ে নির্ভীকভাবে ঘোষণা করেছিলেন। (আদি. ৬:৯-১৩, ১৭) তিনি তাদের এও বলেছিলেন, জলপ্লাবন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাদের কী করতে হবে। নোহ তাদের কাছে এত বেশি প্রচার করেছিলেন যে, পরবর্তী সময়ে তাকে “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” বলে ডাকা হয়েছিল।—২ পিতর ২:৫.

নোহের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জলপ্লাবনের আগের সেই লোকেরা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা সতর্কবাণীকে উপেক্ষা করেছিল। তারা দেখিয়েছিল যে, তাদের বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। ফল স্বরূপ, মহাপ্লাবন ‘আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গিয়াছিল।’ (মথি ২৪:৩৯; ইব্রীয় ১১:৭) ধ্বংসের মুখোমুখি হওয়ার সময়ে তারা এটা বলতে পারেনি, ঈশ্বর তাদের সতর্ক করেননি।

অন্যান্য সময়ে যিহোবা বিচারের ‘ঝড়’ শুরু হওয়ার অল্প সময় আগে ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে লোকেদের সতর্ক করেছিলেন। তারপরও তিনি এটা নিশ্চিত করতেন, যারা এর দ্বারা প্রভাবিত হতে চলেছে, তারা যেন সতর্কবাণীর প্রতি সাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পায়। উদাহরণ স্বরূপ, প্রাচীন মিশরের লোকেরা যে-দশ আঘাত ভোগ করেছিল, সেগুলোর প্রতিটার আগে ঈশ্বর তাদের সতর্কবাণী প্রদান করেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে একটা হল সপ্তম আঘত, যেখানে যিহোবা এক ধ্বংসাত্মক শিলাবৃষ্টির মাধ্যমে আঘাত করেছিলেন। কিন্তু, সেই আঘাত হানার আগে যিহোবা ফরৌণ ও তার দাসদের সতর্ক করার জন্য মোশি ও হারোণকে পাঠিয়েছিলেন। যেহেতু সতর্কবাণী দেওয়ার পরের দিনই শিলাবৃষ্টি শুরু হতে যাচ্ছিল, তাই ঈশ্বর কি তাদের কোনো আশ্রয়স্থল খুঁজে পাওয়ার এবং ঝড়ের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দিয়েছিলেন? বাইবেল বলে: “ফরৌণের দাসগণের মধ্যে যে কেহ সদাপ্রভুর বাক্যে ভীত হইল, সে শীঘ্র আপন দাস ও পশুদিগকে গৃহমধ্যে আনিল; আর যে কেহ সদাপ্রভুর বাক্যে মনোযোগ করিল না, সে আপন দাস ও পশুদিগকে ক্ষেত্রে থাকিতে দিল।” (যাত্রা. ৯:১৮-২১) স্পষ্টতই, যিহোবা যথেষ্ট সতর্কবাণী প্রদান করেছিলেন, যাতে সেই ব্যক্তিরা অন্যদের মতো কষ্ট না পায়, যারা সতর্কবাণীর প্রতি দ্রুত সাড়া দেয়নি।

ফরৌণ ও তার দাসদের একইভাবে দশম আঘাতের আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু, তারা সেই সতর্কবাণীকে উপেক্ষা করার মাধ্যমে মূর্খতার পরিচয় দিয়েছিল। (যাত্রা. ৪:২২, ২৩) ফল স্বরূপ, তাদের প্রথমজাত সন্তান মারা গিয়েছিল। কতই-না দুঃখজনক ঘটনা! (যাত্রা. ১১:৪-১০; ১২:২৯) তারা কি অনেক বেশি দেরি হওয়ার আগেই সেই সতর্কবাণীতে মনোযোগ দিতে পারত? হ্যাঁ! আসন্ন দশম আঘাতের বিষয়ে মোশি সঙ্গেসঙ্গে ইস্রায়েলীয়দের সতর্ক করেছিলেন এবং তাদের বলেছিলেন যে, কীভাবে তারা নিজেদের পরিবারকে রক্ষা করতে পারে। (যাত্রা. ১২:২১-২৮) কত জন ব্যক্তি সেই সতর্কবাণীর প্রতি সাড়া দিয়েছিল? কোনো কোনো পরিসংখ্যান অনুযায়ী ত্রিশ লক্ষ বা তার চেয়েও বেশি লোক, যাদের মধ্যে ইস্রায়েলীয়দের পাশাপাশি ন-ইস্রায়েলীয় ও মিশরীয় ‘মিশ্রিত লোকদের মহাজনতাও’ ছিল, সেই আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল এবং মিশর ত্যাগ করেছিল।—যাত্রা. ১২:৩৮.

এই উদাহরণগুলো যেমন দেখায়, যিহোবা সবসময় এটা নিশ্চিত করেন যেন লোকেরা তাঁর সতর্কবাণীর প্রতি সাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পায়। (দ্বিতীয়. ৩২:৪) এর পিছনে ঈশ্বরের কোন উদ্দেশ্য ছিল? প্রেরিত পিতর ব্যাখ্যা করেছিলেন, “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা” প্রভু যিহোবার “নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” (২ পিতর ৩:৯) হ্যাঁ, ঈশ্বর লোকেদের জন্য চিন্তা করেন। তিনি চান যেন লোকেরা অনুতপ্ত হয় এবং বিচারের সময় উপস্থিত হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে।—যিশা. ৪৮:১৭, ১৮; রোমীয় ২:৪.

বর্তমানে ঈশ্বরের সতর্কবাণীর প্রতি সাড়া দেওয়া

বর্তমানেও সবাইকেই একটা গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবাণীর প্রতি ইতিবাচকভাবে সাড়া দিতে হবে, যা পৃথিবীব্যাপী ঘোষণা করা হচ্ছে। পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু সতর্ক করেছিলেন, বর্তমান বিধিব্যবস্থা পরিশেষে ‘মহাক্লেশের’ সময়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। (মথি ২৪:২১) ভবিষ্যতের সেই বিচারের বিষয়ে তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, যেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেই সময় যত এগিয়ে আসবে, তাঁর অনুসারীরা কী কী ঘটতে দেখবে এবং কী কী ভোগ করবে। আর আজ আমরা যিশুর বলা সেই বিশ্বব্যাপী ঘটনাগুলোই ঘটতে দেখছি।—মথি ২৪:৩-১২; লূক ২১:১০-১৩.

সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীর সঙ্গে মিল রেখে যিহোবা বর্তমানে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁর প্রেমময় শাসন ব্যবস্থার বশীভূত হওয়ার জন্য জোরালো পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি চান যেন বাধ্য মানুষেরা বর্তমানে এক উত্তম জীবন উপভোগ করে আর সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে তাঁর ধার্মিক নতুন জগতে আশীর্বাদ উপভোগ করে। (২ পিতর ৩:১৩) যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস রাখার বিষয়ে উৎসাহিত করার জন্য জীবনরক্ষাকারী বার্তা প্রদান করেন আর সেই বার্তা হল ‘রাজ্যের সুসমাচার,’ যেটা “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত . . . সমুদয় জগতে প্রচার করা” হবে বলে যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। (মথি ২৪:১৪) ঈশ্বর তাঁর সত্য উপাসকদের সংগঠিত করেছেন আর তারা দেশ ও দ্বীপ মিলিয়ে প্রায় ২৪০টা জায়গায় এই “সাক্ষ্য” দিচ্ছে বা ঐশিক বার্তা প্রচার করছে। যিহোবা চান যেন যত বেশি সম্ভব লোক এই সতর্কবাণীর প্রতি সাড়া দেয় এবং তাঁর ধার্মিক বিচারের আসন্ন ‘নাশ [‘ঝড়,’ NW]’ থেকে রক্ষা পায়।—সফ. ১:১৪, ১৫; ২:২, ৩.

তাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখন এটা নয় যে, যিহোবা তাঁর সতর্কবাণীর প্রতি লোকেদের সাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দেন কি না। কারণ প্রমাণ দেখায়, তিনি সবসময়ই তা দেন। এর পরিবর্তে, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হল: লোকেরা কি সময় থাকতে থাকতেই ঈশ্বরের সতর্কবাণীর প্রতি সাড়া দেবে? ঈশ্বরের বার্তাবাহক হিসেবে আমরা যেন ক্রমাগত যতবেশি সম্ভব লোককে এই বিধিব্যবস্থার ধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাহায্য করি।