অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৩
একমাত্র যিহোবার উপাসনা করুন
“সদাপ্রভু স্বগৌরব-রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর।”—নহূম ১:২.
গান সংখ্যা ৭ খ্রিস্টীয় উৎসর্গীকরণ
সারাংশ *
১. কেন আমাদের একমাত্র যিহোবার উপাসনা করা উচিত?
আমাদের একমাত্র যিহোবার উপাসনা করা উচিত কারণ তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও জীবনদাতা। (প্রকা. ৪:১১) তবে, আমরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হই। যদিও আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি এবং সম্মান করি কিন্তু তারপরও আমরা হয়তো একমাত্র তাঁর উপাসনা করা থেকে বিরত হতে পারি। আমাদের এটা বুঝতে হবে, কীভাবে তা ঘটতে পারে। তবে আসুন, প্রথমে আমরা আলোচনা করি যে, একমাত্র যিহোবার উপাসনা করার অর্থ কী।
২. যাত্রাপুস্তক ৩৪:১৪ পদ অনুযায়ী আমরা যদি একমাত্র যিহোবার উপাসনা করি, তা হলে আমরা কী করব?
২ বাইবেল যখন যিহোবার প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকার বিষয়ে বলে, তখন সেটা একমাত্র তাঁর উপাসনা করার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমরা আমাদের হৃদয়ে তাঁর জায়গায় কোনো ব্যক্তি অথবা বস্তুকে স্থান দেব না।—পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ৩৪:১৪. *
৩. কেন আমরা অন্ধের মতো যিহোবার উপাসনা করি না?
৩ আমরা অন্ধের মতো যিহোবার উপাসনা করি না। কেন? কারণ আমরা তাঁর সম্বন্ধে যে-সত্য বিষয়গুলো শিখেছি, সেগুলোর উপর ভিত্তি করে তাঁর উপাসনা করি। আমরা তাঁর চমৎকার গুণগুলোর জন্য তাঁর প্রশংসা করি। আমরা তাঁর পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়গুলো সম্বন্ধে জানি এবং আমরা সেগুলোর সঙ্গে একমত। আমরা বুঝি যে, যিহোবা চান যেন আমরা অনন্তকাল ধরে আনন্দের সঙ্গে তাঁর সেবা করি। গীত. ২৫:১৪) আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে যা-কিছু শিখি, সেগুলো আমাদের তাঁর আরও নিকটবর্তী করে তোলে।—যাকোব ৪:৮.
আর এই কারণে আমরা তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি। তিনি যে আমাদের “গূঢ় মন্ত্রণা [‘তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব,’ NW]” লাভ করার সুযোগ দিয়েছেন, সেটার জন্য আমরা গর্ব বোধ করি। (৪. (ক) যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য দিয়াবল কী ব্যবহার করে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?
৪ দিয়াবল এই বিধিব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সে এটাকে এমনভাবে ব্যবহার করে, যাতে আমরা আমাদের স্বাভাবিক অভিলাষ বা আকাঙ্ক্ষা এবং মাংসিক দুর্বলতার কারণে সেটার প্রতি আকৃষ্ট হই। (ইফি. ২:১-৩; ১ যোহন ৫:১৯) তার লক্ষ্য হল আমাদের ভালোবাসাকে বিভক্ত করে দেওয়া, যাতে আমরা একমাত্র যিহোবাকে ভালো না বাসি। দিয়াবল যে-দুটো উপায়ে তা করতে পারে, আসুন আমরা সেগুলো নিয়ে বিবেচনা করি। প্রথমত, সে আমাদের ধনের পিছনে ছোটার জন্য প্রলুব্ধ করে এবং দ্বিতীয়ত, সে আমাদের খারাপ আমোদপ্রমোদ বাছাই করার জন্য প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
টাকাপয়সার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলা এড়িয়ে চলুন
৫. কেন আমাদের অবশ্যই টাকাপয়সার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলা এড়িয়ে চলতে হবে?
৫ আমরা স্বাভাবিকভাবেই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার, ভালো পোশাক এবং থাকার জন্য উপযুক্ত জায়গা লাভ করতে চাই। কিন্তু, আমাদের অবশ্যই টাকাপয়সার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলা এড়িয়ে চলতে হবে। বর্তমানে অনেকেই “অর্থপ্রিয়” এবং তারা সেই বিষয়গুলো ভালোবাসে, যেগুলো টাকাপয়সা দিয়ে কেনা যায়। (২ তীম. ৩:২) যিশু জানতেন, তাঁর অনুসারীরা এই ভালোবাসা গড়ে তোলার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারে। তিনি বলেছিলেন: “কেহই দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না; কেননা সে হয় ত এক জনকে দ্বেষ করিবে, আর এক জনকে প্রেম করিবে, নয় ত এক জনের প্রতি অনুরক্ত হইবে, আর এক জনকে তুচ্ছ করিবে; তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।” (মথি ৬:২৪) একজন ব্যক্তি, যিনি যিহোবার উপাসনা করেন এবং একইসঙ্গে জগতে ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় অতিরিক্ত সময় ও শক্তি ব্যয় করছেন, তিনি এক অর্থে দুই জন কর্তার দাসত্ব করার চেষ্টা করছেন। তিনি একমাত্র যিহোবার উপাসনা করছেন না।
৬. লায়দিকেয়ার মণ্ডলীর উদ্দেশে বলা যিশুর কথাগুলো থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?
৬ প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে, লায়দিকেয়া নগরে অবস্থিত মণ্ডলীর সদস্যরা গর্বের সঙ্গে বলেছিল: “আমি ধনবান্, ধন সঞ্চয় করিয়াছি, আমার কিছুরই অভাব নাই।” কিন্তু, যিহোবা ও যিশুর দৃষ্টিতে তারা “দুর্ভাগ্য, কৃপাপাত্র, দরিদ্র, অন্ধ ও উলঙ্গ” ছিল। তাদের কাছে ধনসম্পদ ছিল বলে নয় বরং ধনের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার কারণে যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল বলে যিশু তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। (প্রকা. ৩:১৪-১৭) আমরা যদি লক্ষ করি যে, আমাদের হৃদয়ে ধনের প্রতি ভালোবাসা শিকড় বিস্তার করছে, তা হলে আমাদের অবশ্যই দ্রুত সেটাকে উপড়ে ফেলতে হবে। (১ তীম. ৬:৭, ৮) আমরা যদি তা না করি, তা হলে আমাদের হৃদয় বিভক্ত হয়ে যাবে এবং যিহোবা আমাদের উপাসনাকে গ্রহণ করবেন না। তিনি “স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর।” (দ্বিতীয়. ৪:২৪) কীভাবে আমরা হয়তো টাকাপয়সার প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি হারিয়ে ফেলতে পারি?
৭-৯. ডেভিড নামে একজন প্রাচীন ভাইয়ের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখি?
৭ ডেভিড নামে একজন কঠোর পরিশ্রমী প্রাচীনের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন। তিনি বলেন যে, তিনি কাজের জায়গায়ও কঠোর পরিশ্রম করতেন। তিনি যে-কোম্পানিতে কাজ করতেন, সেখানে তার পদোন্নতি হয়েছিল এবং সেই কাজের ক্ষেত্রে তাকে দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হিসেবে দেখা হতো। ভাই ডেভিড বলেন: “কখনো কখনো আমার মনে হতো, এই পুরস্কারগুলো যিহোবার আশীর্বাদের এক প্রমাণ।” কিন্তু, সত্যিই কি তাই?
৮ ভাই ডেভিড ধীরে ধীরে উপলব্ধি করেন, তার কাজের জন্য যিহোবার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন: “মণ্ডলীর সভায় আর এমনকী ক্ষেত্রের পরিচর্যায়ও আমি কাজের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতাম। আমি প্রচুর টাকা সঞ্চয় করছিলাম ঠিকই কিন্তু আমার চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং বৈবাহিক জীবনে সমস্যা দেখা দিচ্ছিল।”
৯ ভাই ডেভিড বুঝতে পেরেছিলেন, তাকে তার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করে দেখতে হবে। তিনি বলেন: “আমি নিজের পরিস্থিতিকে শোধরানোর জন্য একটা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।” তিনি তার কাজের তালিকা পালটাতে চেয়েছিলেন এবং সেই বিষয়ে তার বসকে জানিয়েছিলেন। এর ফল কী হয়েছিল? ভাই ডেভিডকে কাজ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল! তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি বলেন: “তার ঠিক পরের দিনই আমি নিয়মিতভাবে সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবার করার জন্য আবেদন করেছিলাম।” ভরণ-পোষণের জন্য ভাই ডেভিড ও তার স্ত্রী পরিষ্কার করার কাজ করতে শুরু করেছিলেন। এর কিছু সময় পরে তিনি নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছিলেন এবং তার স্ত্রীও একসময়ে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। এই দম্পতি যে-ধরনের জাগতিক কাজ করা বেছে নিয়েছেন, সেটা অনেকে করতে চায় না। তবে, তারা যে-ধরনের কাজ করেন, সেটা তাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। যদিও তাদের আয় নব্বই ভাগ কমে গিয়েছে কিন্তু প্রতি মাসে তাদের কাছে ঠিক ততটাই টাকা থাকে, যতটা তাদের খরচ মেটানোর জন্য প্রয়োজন হয়। তারা যিহোবাকে তাদের জীবনে অগ্রাধিকার দিতে চান এবং তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছেন যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের যত্ন নেন, যারা রাজ্যের বিষয়ে প্রথমে চেষ্টা করে।—১০. কীভাবে আমরা আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করতে পারি?
১০ আমাদের কাছে অল্প অথবা বেশি, যে-পরিমাণই টাকাপয়সা থাকুক না কেন, আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। কীভাবে? ধনের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলবেন না। আর আপনার জাগতিক কাজকে যিহোবার প্রতি আপনার সেবার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার সুযোগ দেবেন না। কীভাবে আপনি জানতে পারবেন, আপনার প্রতি এমনটা ঘটছে কি না? আপনি হয়তো এই প্রশ্নগুলো নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘সভায় অথবা পরিচর্যায় থাকার সময়ে আমি কি প্রায়ই আমার জাগতিক কাজের বিষয়ে চিন্তা করি? আমি কি আমার ভবিষ্যৎকে আর্থিকভাবে সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে সবসময় দুশ্চিন্তা করি? টাকাপয়সা ও বস্তুগত বিষয়গুলো কি আমার বৈবাহিক জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করছে? আমি কি এমন ধরনের জাগতিক কাজ করতে ইচ্ছুক, যেটা আমাকে যিহোবার সেবায় আরও বেশি সময় ব্যয় করার সুযোগ করে দেবে, এমনকী যদিও লোকে সেই কাজকে ছোটো হিসেবে দেখে?’ (১ তীম. ৬:৯-১২) এই প্রশ্নগুলো নিয়ে বিবেচনা করার সময়ে আমরা যেন মনে রাখি যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন এবং যারা একমাত্র তাঁর উপাসনা করতে চায়, তাদের কাছে তিনি এই প্রতিজ্ঞা করেছেন: “আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।” এই কারণে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তোমাদের আচার ব্যবহার ধনাসক্তিবিহীন হউক।”—ইব্রীয় ১৩:৫, ৬.
সতর্কতার সঙ্গে আপনার আমোদপ্রমোদ বাছাই করুন
১১. আমোদপ্রমোদ একজন ব্যক্তিকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে?
১১ যিহোবা চান যেন আমরা জীবন উপভোগ করি এবং আমোদপ্রমোদ আমাদের তা করার জন্য সাহায্য করতে পারে। সত্যি বলতে কী, ঈশ্বরের বাক্য বলে: “ভোজন পান উপ. ২:২৪) তবে, জগতের বেশিরভাগ আমোদপ্রমোদ আমাদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে, লোকেদের নৈতিক মান নীচে নেমে যায় অর্থাৎ এটা সেই কাজগুলো লোকেদের মেনে নিতে অথবা ভালোবাসতে প্ররোচিত করে, যেগুলো যিহোবা করতে বারণ করেন।
করা এবং নিজ পরিশ্রমের মধ্যে প্রাণকে সুখভোগ করান ব্যতীত আর মঙ্গল মানুষের হয় না।” (১২. প্রথম করিন্থীয় ১০:২১, ২২ পদ অনুযায়ী কেন আমাদের সতর্কতার সঙ্গে আমোদপ্রমোদ বাছাই করা উচিত?
১২ আমরা যেহেতু একমাত্র যিহোবার উপাসনা করতে চাই, তাই আমরা “প্রভুর [ঈশ্বরের] মেজ” থেকে আর সেইসঙ্গে “ভূতদের মেজ” থেকে খাবার খেতে পারি না। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:২১, ২২.) কোনো ব্যক্তির সঙ্গে খাবার খাওয়া হল সাধারণত বন্ধুত্বের এক চিহ্ন। আমরা যদি সেই আমোদপ্রমোদগুলো বাছাই করি, যেগুলো দৌরাত্ম্য, প্রেতচর্চা, অনৈতিকতা অথবা অন্যান্য মাংসিক আকাঙ্ক্ষা ও মনোভাবকে তুলে ধরে, তা হলে এটা এমন হবে যেন আমরা ঈশ্বরের শত্রুদের সঙ্গে তাদের দ্বারা প্রস্তুতকৃত খাবার খাচ্ছি। এর ফলে আমরা যে কেবল নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করব, তা নয় কিন্তু সেইসঙ্গে যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকেও ক্ষতিগ্রস্ত করব।
১৩-১৪. যাকোব ১:১৪, ১৫ পদের উপর ভিত্তি করে, কেন আমাদের অবশ্যই আমোদপ্রমোদ বাছাই করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে? একটা উদাহরণ দিন।
১৩ নির্দিষ্ট কয়েকটা ক্ষেত্র বিবেচনা করুন, যেগুলোতে আমোদপ্রমোদ অনেকটা আক্ষরিক খাবারের মতো। আমরা যখন খাবার খাই, তখন আমরা আমাদের মুখে কী প্রবেশ করাব, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কিন্তু, একবার আমরা খাবার গিলে ফেলার পর পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো নিজে থেকে চালু হয়ে যায় এবং সেই খাবারে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো আমাদের শরীরের অংশ হয়ে যায়। স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের স্বাস্থ্যবান করতে পারে; অস্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের দুর্বল করবে। যদিও এর ফলাফল রাতারাতি প্রকাশ পায় না কিন্তু কিছু সময় পর সেগুলো নিশ্চিতভাবেই প্রকাশ পাবে।
১৪ একইভাবে আমরা যখন আমোদপ্রমোদ বাছাই করি, তখন আমরা আমাদের মনে কী প্রবেশ করাব, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। একবার তা প্রবেশ করানোর পর পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো নিজে থেকে চালু হয়ে যায় এবং সেগুলোর দ্বারা আমাদের মন ও হৃদয় প্রভাবিত হয়। উত্তম আমোদপ্রমোদ আমাদের সতেজ করতে পারে; গঠনমূলক নয়, এমন আমোদপ্রমোদ আমাদের ক্ষতি করবে। (পড়ুন, যাকোব ১:১৪, ১৫.) খারাপ আমোদপ্রমোদের প্রভাব হয়তো সঙ্গেসঙ্গে প্রকাশ পায় না কিন্তু কিছু সময়ে পর সেগুলো নিশ্চিতভাবেই প্রকাশ পাবে। এই কারণেই বাইবেল আমাদের সতর্ক করে: “তোমরা ভ্রান্ত হইও না, ঈশ্বরকে পরিহাস করা যায় না; কেননা মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে। ফলতঃ আপন মাংসের উদ্দেশে যে বুনে, সে মাংস হইতে ক্ষয়রূপ শস্য পাইবে।” (গালা. ৬:৭, ৮) আমাদের জন্য সেইসমস্ত আমোদপ্রমোদ প্রত্যাখ্যান করা কতই-না গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলো যিহোবার দৃষ্টিতে ঘৃণার্হ বিষয়গুলোকে তুলে ধরে!—গীত. ৯৭:১০.
১৫. আমাদের উপভোগ করার জন্য যিহোবা কী উপহার দিয়েছেন?
১৫ যিহোবার লোকেদের মধ্যে অনেকে JW Broadcasting® দেখাকে উপভোগ করে থাকে, যেটা হল আমাদের গঠনমূলক ইন্টারনেট টেলিভিশন স্টেশন। মেরলিন নামে একজন বোন বলেন: “JW ব্রডকাস্টিং আমাকে আরও বেশি ইতিবাচক হতে সাহায্য করেছে এবং এর বিষয়বস্তু গঠনমূলক হওয়ায় আমাকে কার্যক্রমের কোনো অংশ বাদ দিতে হয় না। আমি যখন একাকিত্ব অথবা নিরুৎসাহিত বোধ করি, তখন আমি কোনো উৎসাহজনক বক্তৃতা অথবা সকালের উপাসনার কোনো কার্যক্রম দেখা বেছে নিই। সেটা আমাকে যিহোবা ও তাঁর সংগঠনের আরও নিকটবর্তী বোধ করতে সাহায্য করে। JW ব্রডকাস্টিং-এর এই ব্যবস্থা আমার জীবনকে পুরোপুরি পালটে দিয়েছে।” আপনি কি যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া উপহারের দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন? JW ব্রডকাস্টিং-এ নতুন নতুন মাসিক কার্যক্রম ছাড়াও অডিও আর সেইসঙ্গে ভিডিওর আকারে অন্যান্য কার্যক্রম এবং উৎসাহজনক গানগুলো রয়েছে, যেগুলো আপনি যেকোনো সময়ে দেখতে ও শুনতে পারেন।
১৬-১৭. আমরা আমোদপ্রমোদের পিছনে কতটা সময় ব্যয় করি, কেন আমাদের অবশ্যই সেটাকে সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
১৬ আমাদের কেবল আমোদপ্রমোদের ধরনই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সেটার পিছনে আমরা কতটা সময় ব্যয় করছি, সেটাকেও অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
আমরা যদি তা না করি, তা হলে আমরা হয়তো যিহোবার সেবার চেয়ে আমোদপ্রমোদের পিছনে বেশি সময় ব্যয় করে ফেলতে পারি। অনেকে আমোদপ্রমোদের পিছনে কতটা সময় ব্যয় করবে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করাকে কঠিন বলে মনে করে। এবিগেল নামে ১৮ বছর বয়সি একজন বোন বলেন: “এক ব্যস্ত দিনের শেষে টিভি দেখা আমাকে সতেজ হতে সাহায্য করে। কিন্তু, আমি যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমি টিভির সামনে ঘণ্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে ফেলতে পারি।” স্যামুয়েল নামে ২১ বছর বয়সি একজন ভাই বলেন: “কখনো কখনো আমি ইন্টারনেটে অনেক ছোটো ছোটো ভিডিও দেখি। একবার ভিডিও দেখতে শুরু করার পর কীভাবে যে তিন-চার ঘণ্টা কেটে যায়, বুঝতেই পারি না।”১৭ আপনি আমোদপ্রমোদের পিছনে যতটা সময় ব্যয় করেন, কীভাবে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন? প্রথম পদক্ষেপটা হল এটা শনাক্ত করা যে, আপনি আসলে এর পিছনে কতটা সময় ব্যয় করছেন। আপনি এক সপ্তাহে এর পিছনে কতটা সময় ব্যয় করেছেন, সেটার একটা রেকর্ড রাখুন না কেন? ক্যালেন্ডারে লিখুন যে, আপনি টেলিভিশন দেখার, ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিষয় দেখার এবং মোবাইলে ভিডিও গেম খেলার পিছনে কত ঘণ্টা ব্যয় করেছেন। আপনি যদি মনে করেন, আপনি অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছেন, তা হলে একটা তালিকা বানানোর চেষ্টা করুন। প্রথমে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্য সময় আলাদা করুন আর তারপর, আমোদপ্রমোদের জন্য সময় নির্ধারণ করুন। এরপর, আপনার তালিকা অনুযায়ী কাজ করার জন্য সাহায্য চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। এভাবে আপনার কাছে ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন, পারিবারিক উপাসনা, মণ্ডলীর সভা এবং প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজের মাধ্যমে যিহোবার সেবা করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও শক্তি থাকবে। এ ছাড়া, আপনি যেহেতু যিহোবাকে প্রথমে রেখেছেন, তাই আপনি আমোদপ্রমোদের পিছনে যতটা সময় ব্যয় করেন, সেটাকে হয়তো আরও বেশি উপভোগ করবেন।
একমাত্র যিহোবারই উপাসনা করে চলুন
১৮-১৯. কীভাবে আমরা প্রমাণ করতে পারি যে, আমরা একমাত্র যিহোবার উপাসনা করি?
১৮ শয়তানের জগতের শেষ এবং আসন্ন নতুন জগৎ সম্বন্ধে লেখার পর প্রেরিত পিতর বর্ণনা করেছিলেন: “প্রিয়তমেরা, তোমরা যখন এই সকলের অপেক্ষা করিতেছ, তখন যত্ন কর, যেন তাঁহার কাছে তোমাদিগকে নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়!” (২ পিতর ৩:১৪) আমরা যখন এই পরামর্শের বাধ্য হই এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে শুচি থাকার জন্য সর্বোত্তমটা করি, তখন আমরা প্রমাণ করি যে, আমরা একমাত্র যিহোবার উপাসনা করি।
১৯ শয়তান ও তার বিধিব্যবস্থা আমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো পরিবর্তন করার জন্য আমাদের ক্রমাগত প্রলুব্ধ করবে। (লূক ৪:১৩) কিন্তু, আমরা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতারই মুখোমুখি হই না কেন, আমরা আমাদের হৃদয়ে যিহোবার জায়গায় কোনো ব্যক্তি অথবা বস্তুকে স্থান দেব না। আমরা একমাত্র যিহোবারই উপাসনা করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ!
গান সংখ্যা ৫১ আমরা যিহোবাতে আসক্ত
^ অনু. 5 আমরা যিহোবার সেবা করতে ভালোবাসি। কিন্তু, আমরা কি কেবল তাঁরই উপাসনা করি? আমাদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো এই প্রশ্নের উত্তরকে স্পষ্ট করে দেয়। আসুন, আমরা আমাদের জীবনের দুটো নির্দিষ্ট ক্ষেত্র নিয়ে বিবেচনা করে দেখি, যেগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, আমরা একমাত্র যিহোবার উপাসনা করছি কি না।
^ অনু. 2 বাইবেল যখন বলে, যিহোবা “স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর,” তখন সেটার অর্থ হল তিনি চান যে, আমরা যেন একমাত্র তাঁর উপাসনা করি।
^ অনু. 54 ছবি সম্বন্ধে: আমরা একটা নোংরা রান্নাঘরে তৈরি করা খাবার খেতে চাইব না। তা হলে, কেন আমরা দৌরাত্ম্য, প্রেতচর্চা অথবা অনৈতিকতা মিশ্রিত আমোদপ্রমোদ উপভোগ করতে চাইব?