সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪০

প্রকৃত অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ কী?

প্রকৃত অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ কী?

“আমি . . . পাপীদেরই ডাকতে এসেছি, যেন তারা অনুতপ্ত হয়।”—লূক ৫:৩২.

গান ৫২ তোমার হৃদয়কে রক্ষা করো

সারাংশ *

১-২. (ক) রাজা আহাব ও রাজা মনঃশির মধ্যে কোন বিষয়ে পার্থক্য ছিল? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?

প্রাচীন কালে, দু-জন রাজা ছিলেন। একজন ইজরায়েলের রাজা এবং আরেকজন যিহূদার রাজা। সেই দু-জন রাজা আলাদা আলাদা সময়ে বাস করতেন। কিন্তু, তাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে মিল ছিল। দু-জন রাজাই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন আর তাদের কারণে ঈশ্বরের লোকেরা মন্দ কাজ করেছিল। সেই রাজারা প্রতিমাপূজা করেছিলেন এবং লোকদের হত্যা করেছিলেন। তবে, সেই দু-জন রাজার মধ্যে একটা বিষয়ে পার্থক্য ছিল। একজন রাজা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মন্দ কাজ করে গিয়েছিলেন। কিন্তু, আরেকজন রাজা নিজের ভুলগুলো স্বীকার করেছিলেন এবং অনুতপ্ত হয়েছিলেন। এই কারণে যিহোবা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। সেই রাজারা কারা ছিলেন?

ইজরায়েলের রাজা ছিলেন আহাব আর যিহূদার রাজা ছিলেন মনঃশি। আমরা এই দু-জন রাজার উদাহরণ থেকে শিখব, অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ কী এবং আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে, আমরা আমাদের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত। (প্রেরিত ১৭:৩০; রোমীয় ৩:২৩) এগুলো জানা খুবই প্রয়োজন। কেন? কারণ আমরাও কোনো পাপ কাজ করে ফেলতে পারি আর আমরা চাই যেন যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দেন। এই প্রবন্ধে আমরা এও শিখব যে, অনুতপ্ত হওয়ার ব্যাপারে যিশু কী শিখিয়েছিলেন।

রাজা আহাব

৩. আহাব কেমন রাজা ছিলেন?

আহাব ইজরায়েলের সপ্তম রাজা ছিলেন। তিনি সীদোনের রাজার মেয়ে ঈষেবলকে বিয়ে করেছিলেন। এই বিয়ের কারণে ইজরায়েলের কাছে অনেক ধনসম্পদ লাভ করার সুযোগ খুলে যায় ঠিকই, কিন্তু এর কারণে অনেক ক্ষতিও হয়। ইজরায়েলীয়েরা যিহোবার বিরুদ্ধে আরও পাপ করে। ঈষেবল বাল দেবতার উপাসনা করতেন আর তিনি আহাবের সাহায্যে পুরো দেশে বাল দেবতার উপাসনা ছড়িয়ে দেন। এই উপাসনা এতটাই জঘন্য ছিল যে, বাল দেবতার মন্দিরগুলোতে বেশ্যারা থাকত আর শিশুদের বলি দেওয়া হত। ঈষেবল যিহোবার অনেক ভাববাদীকেও হত্যা করান। (১ রাজা. ১৮:১৩) আহাব নিজেও অনেক মন্দ কাজ করেন। তাই, বাইবেল জানায়, “তাঁহার পূর্ব্বে যাঁহারা ছিলেন, তাঁহাদের সকলের হইতে . . . আহাব সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই অধিক পরিমাণে করিতেন।” (১ রাজা. ১৬:৩০) যিহোবা জানতেন যে, আহাব ও ঈষেবল কোন কোন মন্দ কাজ করে চলেছেন। তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাদের প্রতি করুণা দেখান। তিনি ভাববাদী এলিয়কে পাঠিয়ে তাদের ও অন্য লোকদের সতর্ক করেন। কিন্তু, আহাব ও ঈষেবল কোনো কথা শোনেননি।

৪. যিহোবা কোন শাস্তি ঘোষণা করেন আর আহাব কী করেন?

পরিশেষে, যিহোবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। তিনি এলিয়ের মাধ্যমে আহাব ও ঈষেবলকে বলেন যে, তিনি তাদের পুরো বংশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেবেন। এই কথা শুনে আহাব খুব দুঃখ পান! আর এই গর্বিত রাজা নিজেকে “অবনত” বা নম্র করেন।—১ রাজা. ২১:১৯-২৯.

রাজা আহাব নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হননি, তাই তিনি মীখায়কে কারাগারে বন্দি করেন (৫-৬ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

৫-৬. আহাব কি নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হয়েছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।

এটা ঠিক যে, আহাব সেই সময়ে নম্র হয়েছিলেন। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে তিনি যা-কিছু করেছিলেন, সেগুলো থেকে বোঝা যায়, তিনি নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হননি। তিনি নিজের দেশ থেকে বাল দেবতার উপাসনা দূর করেননি। আর তিনি লোকদের যিহোবার উপাসনা করার জন্য উৎসাহিতও করেননি। তিনি আরও অনেক কিছু করেছিলেন, যেগুলো থেকে বোঝা যায় যে, তিনি নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হননি।

কিছুসময় পর, আহাব যিহূদার রাজা যিহোশাফটকে বলেন, তিনি যেন অরামের (সিরিয়া) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তাকে সাহায্য করেন। যিহোশাফট একজন ভালো রাজা ছিলেন। তাই, তিনি বলেন, এই বিষয়ে তাকে যিহোবার ভাববাদীর কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত। আহাব তা করতে চাননি কারণ তিনি বলেন: “আমরা যাহার দ্বারা সদাপ্রভুর কাছে অন্বেষণ করিতে পারি, এমন আর এক জন আছে, . . . কিন্তু আমি তাহাকে ঘৃণা করি, কেননা আমার উদ্দেশে সে মঙ্গলের নয়, কেবল অমঙ্গলের ভাবোক্তি প্রচার করে।” তা সত্ত্বেও, আহাব রাজি হন এবং দু-জন রাজা ভাববাদী মীখায়ের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। আহাব যেমনটা বলেছিলেন, মীখায় তার সম্বন্ধে খারাপ খবর শোনান। এটা শুনে নিজেকে পরিবর্তন করার পরিবর্তে, আহাব ভাববাদীকে কারাগারে বন্দি করেন। (১ রাজা. ২২:৭-৯, ২৩, ২৭) যদিও তিনি ভাববাদীর মুখ বন্ধ করে দেন, কিন্তু যিহোবার কথা পরিপূর্ণ হওয়াকে বাধা দিতে পারেননি। সেই যুদ্ধে আহাব মারা যান।—১ রাজা. ২২:৩৪-৩৮.

৭. যিহোবা আহাবের বিষয়ে কী বলেন?

যুদ্ধের পর, রাজা যিহোশাফট যখন সুরক্ষিতভাবে নিজের প্রাসাদে পৌঁছান, তখন যিহোবা তাঁর ভাববাদী যেহূর মাধ্যমে তাকে বলেন, তিনি আহাবের বিষয়ে কী চিন্তা করেন। যেহূ রাজাকে তিরস্কার করে বলেন: “দুর্জনের সাহায্য করা এবং সদাপ্রভুর বিদ্বেষীদিগকে প্রেম করা কি আপনার উপযুক্ত?” (২ বংশা. ১৯:১, ২) একটু চিন্তা করে দেখুন, আহাব যদি প্রকৃত অনুতপ্ত হতেন, তা হলে যিহোবা কি তাকে দুর্জন বা দুষ্ট ব্যক্তি বলতেন? তিনি কি তাকে সেই লোকদের মধ্যে গণনা করতেন, যারা তাঁকে ঘৃণা করে? যদিও আহাব নিজের ভুলের জন্য আপশোস করেছিলেন, কিন্তু তিনি অনুতপ্ত হননি।

৮. রাজা আহাবের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

রাজা আহাবের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা শিখতে পারি, অনুতপ্ত হওয়ার জন্য শুধু আপশোস করাই যথেষ্ট নয়। আমাদের আরও কিছু করতে হবে। আসুন, এই বিষয়ে রাজা মনঃশির উদাহরণ থেকে শিখি।

রাজা মনঃশি

৯. মনঃশি কেমন রাজা ছিলেন?

প্রায় ২০০ বছর পর, মনঃশি যিহূদার রাজা হয়েছিলেন। তিনি হয়তো আহাবের চেয়েও অনেক মন্দ কাজ করেছিলেন। তাই, তার সম্বন্ধে বাইবেল জানায়: “তিনি সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বহুল কদাচরণ করিয়া তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিলেন।” (২ বংশা. ৩৩:১-৯) তিনি মিথ্যা দেব-দেবীদের জন্য যজ্ঞবেদি স্থাপন করেন আর যিহোবার মন্দিরের ভিতরে আশেরা-মূর্তি নির্মাণ করেন, যেটা হয়তো উর্বরতার দেবীর মূর্তি ছিল। তিনি জাদুবিদ্যা ও জ্যোতিষবিদ্যা চর্চা করেন আর সেইসঙ্গে মায়াবিদ্যাও চর্চা করেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি “অনেক নির্দ্দোষের রক্তপাতও” করান। আর এমনকী তিনি মিথ্যা দেব-দেবীদের উদ্দেশে “আপন পুত্ত্রকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন” করান।—২ রাজা. ২১:৬, ৭, ১০, ১১, ১৬.

১০. কীভাবে যিহোবা মনঃশিকে শাসন করেন আর মনঃশি কী করেন?

১০ যিহোবা মনঃশিকে সতর্ক করার জন্য তাঁর অনেক ভাববাদীকে পাঠান। কিন্তু, তিনিও আহাবের মতো তাদের কথায় মনোযোগ দেননি। তাই, “সদাপ্রভু [যিহূদার] বিরুদ্ধে অশূর-রাজের সেনাপতিদিগকে আনিলেন; আর তাহারা মনঃশিকে হাতকড়ী দিয়া তাঁহাকে শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া বাবিলে লইয়া গেল।” মনঃশি যখন বন্দি ছিলেন, তখন তিনি নিজের কাজের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। তিনি “আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বরের সম্মুখে আপনাকে অতিশয় অবনত” বা অত্যন্ত নম্র করেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি আরও কিছু করেন। তিনি “আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে বিনতি” করেন এবং বার বার তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন। ধীরে ধীরে মনঃশি নিজেকে পরিবর্তন করেন এবং যিহোবাকে “আপন ঈশ্বর” হিসেবে দেখতে শুরু করেন।—২ বংশা. ৩৩:১০-১৩.

রাজা মনঃশি নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হন, তাই তিনি মিথ্যা উপাসনা দূর করার চেষ্টা করেন (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১১. দ্বিতীয় বংশাবলি ৩৩:১৫, ১৬ পদ থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, মনঃশি নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হয়েছিলেন?

১১ যিহোবা দেখেন যে, মনঃশির মন সত্যিই পরিবর্তিত হয়েছে। তাই, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন আর কিছুসময় পর তাকে তার সিংহাসন ফিরিয়ে দেন। পুনরায় রাজা হওয়ার পর মনঃশি এটা দেখান যে, নিজের ভুলের জন্য তিনি প্রকৃত অনুতপ্ত। আহাব যা কখনো করেননি, মনঃশি তা করেন। মনঃশি নিজেকে পরিবর্তন করেন। তিনি নিজের দেশ থেকে মিথ্যা উপাসনা দূর করার চেষ্টা করেন আর লোকদের সত্য উপাসনা করার জন্য উৎসাহিতও করেন। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ৩৩:১৫, ১৬.) এই সমস্ত কিছু করা তার জন্য সহজ ছিল না কারণ তিনি তার যুবক বয়সে অনেক মন্দ কাজ করেছিলেন আর নিজের পরিবারের সদস্য, মন্ত্রী ও লোকদের জন্য খারাপ উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু, তিনি বৃদ্ধ বয়সে যিহোবার উপর বিশ্বাস রেখে এবং সাহসের সঙ্গে নিজের ভুলগুলো সংশোধন করার প্রচেষ্টা করেন। হয়তো এই সমস্ত কিছু তার নাতি যোশিয়ের উপর ভালো প্রভাব ফেলেছিল কারণ পরে সে একজন ভালো রাজা হয়ে উঠেছিল।—২ রাজা. ২২:১, ২.

১২. রাজা মনঃশির উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ রাজা মনঃশির উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? মনঃশি নিজেকে নম্র করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি আরও অনেক কিছু করেছিলেন। তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং করুণা লাভ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তিনি নিজেকে পরিবর্তন করেছিলেন এবং নিজের ভুলগুলো সংশোধন করার প্রচেষ্টা করেছিলেন। তিনি যিহোবার উপাসনা করেছিলেন আর অন্যদেরও তা করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। মনঃশির উদাহরণ আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, যে-লোকেরা অনেক মন্দ কাজ করে, তারাও ক্ষমা লাভ করতে পারে কারণ যিহোবা হলেন “মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান্‌।” (গীত. ৮৬:৫) কিন্তু, তাদের নিজেদের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হতে হবে।

১৩. একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, অনুতপ্ত হওয়ার জন্য কী করা যথেষ্ট নয়।

১৩ প্রকৃত অনুতপ্ত হওয়ার জন্য শুধু আপশোস করাই যথেষ্ট নয়। এই বিষয়টা বোঝার জন্য একটা উদাহরণ লক্ষ করুন। আপনি কেক কিনতে গিয়েছেন, কিন্তু দোকানদার কেক দেওয়ার পরিবর্তে আপনার হাতে ডিম ধরিয়ে দিয়েছে। আপনি কি সেটা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসবেন? অবশ্যই না! দোকানদার যদি আপনাকে বলে যে, কেক তৈরি করার জন্য ডিম খুবই প্রয়োজন, তা হলে আপনি কি সেটা মেনে নেবেন এবং ডিম নিয়ে বাড়ি ফিরে আসবেন? একেবারেই না! একইভাবে, নিজের ভুলের জন্য আপশোস করা ভালো বিষয়, কিন্তু শুধু এটা করাই যথেষ্ট নয়। যিহোবা চান যেন আমরা আমাদের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হই। এর অর্থ কী? যিশু হারানো ছেলের যে-দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন, আসুন সেটা থেকে জানার চেষ্টা করি।

একজন ব্যক্তি প্রকৃত অনুতপ্ত কি না, যেভাবে তা জানা যায়

হারানো ছেলে যখন নিজের চেতনা ফিরে পায়, তখন সে বাড়ি ফিরে আসে (১৪-১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন) *

১৪. যিশুর তুলে ধরা দৃষ্টান্ত থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, সেই হারানো ছেলে নিজের ভুলের জন্য আপশোস করেছিল?

১৪ লূক ১৫:১১-৩২ পদে হারানো ছেলের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। সেই ছেলে বাবার বাড়ি ছেড়ে “দূর দেশে” চলে যায় আর সেখানে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে। যখন সে বিভিন্ন কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হয়, তখন “চেতনা ফিরে” পায়। সে নিজের ভুল বুঝতে পারে। আর স্মরণ করে, সে তার বাবার বাড়িতে কত আনন্দে ছিল! সেই ছেলে সিদ্ধান্ত নেয়, সে বাড়ি ফিরে যাবে আর বাবার কাছে ক্ষমা চাইবে। এটা ভালো বিষয় ছিল যে, সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু, শুধু এটাই যথেষ্ট ছিল না। তাকে নিজেকে পরিবর্তনও করতে হত।

১৫. যিশুর তুলে ধরা দৃষ্টান্তে হারানো ছেলে এমন কী করেছিল, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, সে প্রকৃত অনুতপ্ত হয়েছিল?

১৫ সেই হারানো ছেলে নিজের ভুলের জন্য খুবই অনুতপ্ত হয়। তাই, সে দীর্ঘযাত্রা করে নিজের বাড়ি ফিরে আসে। এরপর, সে নিজের বাবার সঙ্গে দেখা করে আর তাকে বলে: “আমি স্বর্গের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে এবং তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। আমি আর তোমার ছেলে বলে ডাকার যোগ্য নই।” (লূক ১৫:২১) তার কথা থেকে বোঝা যায় যে, সে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তুলতে চায়। এ ছাড়া, সে স্বীকার করে, সে তার বাবাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। আর বাবার সঙ্গে পুনরায় তার সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সে তার বাবার কাছে মজুর হিসেবে কাজ করতেও ইচ্ছুক মনোভাব দেখায়। (লূক ১৫:১৯) যিশুর এই দৃষ্টান্ত কেবল একটা দৃষ্টান্তই ছিল না। এটা থেকে প্রাচীনেরা অনেক কিছু শিখতে পারেন, বিশেষ করে তখন, যখন কোনো ভাই কিংবা বোন গুরুতর পাপ করে ফেলেন আর তারা এটা জানতে চান যে, সেই ভাই কিংবা বোন নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত কি না।

১৬. প্রাচীনদের পক্ষে এটা জানা কেন কঠিন হয় যে, একজন ব্যক্তি প্রকৃত অনুতপ্ত কি না?

১৬ প্রাচীনদের পক্ষে এটা জানা সহজ নয়, যে-ব্যক্তি গুরুতর পাপ করেছেন, তিনি নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত কি না। কেন? কারণ তারা সেই ব্যক্তির হৃদয় পড়তে পারেন না। প্রাচীনদের প্রমাণের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কখনো কখনো এমনটা হয় যে, একজন ব্যক্তি পাপ করার সমস্ত সীমা পার করে দেন। এইরকম ক্ষেত্রে, তার কথার উপর বিশ্বাস করা প্রাচীনদের জন্য হয়তো কঠিন হয়ে পড়ে।

১৭. (ক) একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন, কেন নিজের ভুলের জন্য শুধু আপশোস করাই যথেষ্ট নয়। (খ) ২ করিন্থীয় ৭:১১ পদ অনুযায়ী প্রকৃত অনুতপ্ত হওয়ার জন্য একজন ব্যক্তিকে কী করতে হবে?

১৭ ধরুন, একজন ভাই কয়েক বছর ধরে বার বার ব্যভিচার করেছেন। তিনি এই বিষয়টা তার স্ত্রী, বন্ধুবান্ধব ও প্রাচীনদের কাছে গোপন করেন। পরে, তার ভুল প্রকাশ পায়। যখন প্রাচীনেরা তার সঙ্গে কথা বলেন, তখন তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং আপশোসও করেন। কিন্তু, অনুতপ্ত হওয়ার জন্য শুধু এতটুকু করাই কি যথেষ্ট? না। প্রাচীনদের অন্যান্য বিষয়ের উপরও মনোযোগ দিতে হবে। সেই ভাই এক বার নয় বরং বার বার পাপ করেছেন। তিনি নিজে থেকে এগিয়ে এসে তার ভুল স্বীকার করেননি। এর পরিবর্তে, অন্য কেউ তার ভুলের বিষয় প্রাচীনদের কাছে জানিয়েছে। এইরকম ক্ষেত্রে প্রাচীনদের লক্ষ রাখতে হবে যে, সেই ব্যক্তির চিন্তাভাবনা ও আচার-আচরণের মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৭:১১.) হয়তো সেই ব্যক্তির নিজেকে পরিবর্তন করতে অনেক সময় লাগবে। তাই, খুব সম্ভবত সেই ব্যক্তিকে কিছু সময়ের জন্য খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হবে, যতক্ষণ না সেই ব্যক্তি নিজেকে পুরোপুরিভাবে পরিবর্তন করেন।—১ করি. ৫:১১-১৩; ৬:৯, ১০.

১৮. (ক) একজন সমাজচ্যুত ব্যক্তি যদি নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হন, তা হলে তিনি কী করবেন? (খ) এমনটা করলে কী হবে?

১৮ একজন সমাজচ্যুত ব্যক্তি যদি নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হন, তা হলে তিনি প্রতিটা সভায় যোগ দেবেন। তিনি প্রাচীনদের দেওয়া পরামর্শ কাজে লাগিয়ে প্রার্থনা করবেন এবং বাইবেল অধ্যয়ন করবেন। তিনি এমন প্রতিটা বিষয় এড়িয়ে চলবেন, যেগুলোর কারণে তিনি আবারও পাপ করে ফেলতে পারেন। তিনি যদি যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তোলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন, তা হলে যিহোবা তাকে ক্ষমা করবেন এবং প্রাচীনেরা তাকে পুনরায় মণ্ডলীর অংশ হয়ে উঠতে সাহায্য করবেন। এটা ঠিক যে, পাপ করেছে এমন ব্যক্তিদের পরিস্থিতি সবসময় একরকম হয় না। তাই, প্রাচীনেরা প্রতিটা ক্ষেত্র মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করেন আর এই বিষয়টা লক্ষ রাখেন, তারা যেন কঠোরভাবে বিচার না করেন।

১৯. প্রকৃত অনুতপ্ত হওয়ার জন্য একজন ব্যক্তিকে কী করতে হবে? (যিহিষ্কেল ৩৩:১৪-১৬)

১৯ আমরা যেমনটা শিখলাম, পাপ করেছেন এমন একজন ব্যক্তির শুধু এটা বলাই যথেষ্ট নয়, তিনি নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত। তাকে নিজের চিন্তাভাবনা ও আচার-আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। তাকে নিজের খারাপ কাজগুলো ছাড়তে হবে আর যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৩:১৪-১৬.) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তাকে যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তোলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করুন

২০-২১. যখন আমাদের কোনো বন্ধু গুরুতর পাপ করে, তখন আমাদের কী করা উচিত?

২০ যিশু কেবলমাত্র প্রচার করতে নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে আরেকটা কারণেও পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি . . . পাপীদেরই ডাকতে এসেছি, যেন তারা অনুতপ্ত হয়।” (লূক ৫:৩২) আমরাও চাই, যারা পাপ করে, তারা যেন অনুতপ্ত হয়। কিন্তু, আমরা যদি জানতে পারি যে, আমাদের কোনো বন্ধু গুরুতর পাপ করেছে, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?

২১ আমাদের বন্ধুর ভুল গোপন করা উচিত নয় কারণ এমনটা করলে, তারই ক্ষতি হবে। আর গোপন করেও কোনো লাভ হবে না কারণ যিহোবা সমস্ত কিছু দেখতে পান। (হিতো. ৫:২১, ২২; ২৮:১৩) তাই, আমাদের বন্ধুকে বলা উচিত, সে যেন প্রাচীনদের কাছে গিয়ে সমস্ত কিছু খুলে বলে। কিন্তু, সে যদি তা না করে, তা হলে প্রাচীনদের কাছে গিয়ে আমাদেরই কথা বলা উচিত। এটা করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এটা করার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, আমরা সত্যিই তাকে সাহায্য করতে চাই।

২২. পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

২২ তবে, একজন ব্যক্তি যদি খুবই গুরুতর পাপ করেন এবং তা দীর্ঘসময় ধরে করে চলেন আর এর ফলে প্রাচীনেরা তাকে মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে? এর অর্থ কি এই, প্রাচীনেরা তার প্রতি করুণা দেখাননি? পরের প্রবন্ধে আমরা জানব, যিহোবা যখন কোনো অন্যায়কারী ব্যক্তিকে শাসন করেন, তখন সেটা থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, তিনি একজন করুণাময় ঈশ্বর। আর কীভাবে আমরা তাঁর মতো করুণা দেখাতে পারি।

গান ৪২ ‘দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর’

^ অনু. 5 প্রকৃত অনুতপ্ত হওয়ার জন্য শুধু আপশোস করাই যথেষ্ট নয়। আমরা রাজা আহাব ও মনঃশির উদাহরণ আর সেইসঙ্গে হারানো ছেলের দৃষ্টান্ত থেকে শিখব যে, প্রকৃত অনুতপ্ত হওয়ার অর্থ কী। আমরা এও জানব, যখন একজন ব্যক্তি গুরুতর পাপ করেন, তখন প্রাচীনেরা কীভাবে জানতে পারেন যে, সেই ব্যক্তি নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত কি না।

^ অনু. 60 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: বাজা আহাব রেগে গিয়ে তার রক্ষীদের বলেন, তারা যেন যিহোবার ভাববাদী মীখায়কে কারাগারে বন্দি করে।

^ অনু. 62 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: রাজা মনঃশি যিহোবার মন্দিরে যে-মূর্তিগুলো স্থাপন করেছিলেন, সেগুলো ভেঙে ফেলার জন্য তার লোকদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।

^ অনু. 64 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিশুর দৃষ্টান্তে তুলে ধরা হারানো ছেলে দীর্ঘযাত্রা করার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু, সে যখন দূর থেকে নিজের বাড়ি দেখতে পায়, তখন সে খুব খুশি হয়।